#দৃষ্টিনন্দনে_তুমি
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৫
আরাফাত হৈমন্তীর খবরটা শোনার পর থেকে অস্থির হয়ে উঠেছে। ঢাকা পৌঁছতে ঘন্টা পাঁচেক লেগে যাবে। বড় ভাইকে বললে ঘটনা উল্টোদিকে মোড় নিবে। তাছাড়া ছোঁয়ার কথাবার্তা ওর বিশ্বাস হয়না। মেয়েটা ওর পিছনে আঠার মতো লেগে থাকে। আরাফাত বুঝেতে পারে মেয়েটার মতিগতি। তাই এটা ওটা বলে দমিয়ে রাখে। রাকিবকে ফোন করেছিল ও বলেছে কিছু হয়নি। হৈমীর ফোনে সমস্যা হয়েছে আগামীকাল নতুন ফোন কিনে দেওয়া হবে। তবুও আরাফাত গাড়ি নিয়ে বের হলো। মেয়েটাকে আর বাইরে একা একা ফেলে রাখা ঠিক হচ্ছে না। আরাফাত ঠিক করলো এবার বোনকে নিয়ে নিজেদের বাড়িতে গিয়ে উঠবে। শুধু শুধু লুকোচুরির কোনো মানে নেই। ওর সবার উপরেই রাগ হয়। আগেই বলেছিল কাজীরা মানুষ সুবিধার না কেউ শুনেনি। আমেনা বেগম মেয়ের জন্য মাঝেমাঝেই অশান্তি করছে। হয় মেয়েকে শশুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হোক নয়তো তাঁকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হোক। এভাবে বোনের বাড়িতে মেয়েকে রাখতে উনার অসুবিধা হচ্ছে। চয়নিকা প্রতিদিনই হৈমন্তীর সঙ্গে কথা বলে। বাড়িতে ছোট্ট পিচ্চিটা বড় হচ্ছে। ওকে নিয়েই নানারকম কথাবার্তা হয়। চয়নিকার সঙ্গে আমেনা বেগমের সম্পর্ক বর্ষাকালের আকাশের মতো। এই ভালো তো এই খারাপ। থালাবাসন এক জায়গাই থাকলেও ঠোকাঠুকি হয়। আমেনা বেগমের গোড়ামি মার্কা আচরণ চয়নিকা সহ্য করতে পারেনা। উত্তর না দিলেও কাজকর্ম দিয়ে বুঝিয়ে দেয়। শাশুড়ির উপরে জমিয়ে রাখা রাগটা গিয়ে রাজীবের উপরে পড়ে। ছেলেটা মা আর চয়নিকার এই ঠান্ডা যুদ্ধকে ভয় পাই। কাউকেই চটাতে চাই না। তবুও তুফান ওর উপর দিয়েই যায়।
☆☆
হৈমন্তীর কেবিনের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে আবির। সন্ধ্যায় রাহেলা হক আর ছোঁয়া বাড়িতে চলে গেছে। হাসপাতালে এতগুলো মানুষ থেকে অসুস্থ হওয়ার দরকার নেই তাই আবির সবাইকে বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। ছোঁয়া আগেই রেগে ছিল ওকে কিছুই বলতে হয়নি। রাহেলা হক যেতে চাইছিল না আবির বলেছে হৈমন্তীর অসুবিধা হবে না। তাছাড়া উনি পেসারের রুগী রাত জাগলে অসুবিধা হবে রাকিব ফোন করে বলে দিয়েছে। এখানে অনেকেই আছে সবাই মেয়েটার খেয়াল রাখবে এই ভরসাতে উনি বাড়িতে গেছে। আবিরের ধ্যান ভাঙলো হৈমন্তীর কথা শুনে। মেয়েটা কাকে একটা ফোন করছে আবির আর অপেক্ষা করলো না দ্রুত গিয়ে ফোনটা কেড়ে নিয়ে কেটে দিলো। হৈমন্তী অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঝাঝালো কন্ঠে বলল,
> ফোন নিলেন কেনো?
আবির ফোন চেক করতে করতে উত্তর দিল,
> রুগী মানুষের কাছে ফোন থাকা উচিৎ না। তোমার না হাতে ব্যাথা। ড্রেসিং করতে হবে না?
হৈমন্তী ভয় পেলো। ঢোক গিলে বলল,
> দরকার নেই আপনার ড্রেসিং করা। বাজে চিকিৎসা অন্য কাউকে করেন। দেখুন বিরক্ত করবেন না। আমি ঘুমাবো।
আবির চেয়ার চেনে বসতে বসতে বলল,
> ডাক্তারি ছেড়ে দিলেও বউ বাচ্চার চিকিৎসা কিন্তু ডাক্তাররা কিছুতেই ছাড়ে না। তোমার রেহাই নেই এই ডাকাত ডাক্তারের থেকে। আমার থেকেই তোমার চিকিৎসা নিতে হবে। ভেবো না খুব করে আদর যত্ন নিয়েই চিকিৎসা করবো। কাজীরা মির্জাদের মতো মিরজাফর না।
হৈমন্তীর রাগ হলো আবিরের কথা শুনে। লোকটা কথায় কথায় ওর ভাইদেরকে ছোট করে। করবে নাই বা কেনো ডাকাতের বংশধর যে। হৈমন্তী ভ্রু কুচকে বলল,
> মির্জারা আর যাইহোক বাসর ঘরে বউ রেখে পালিয়ে যায়না। শুনেন ভাইয়া জানলে কিন্তু ছাড়বে না। আমাকে যেতে দিন।
আবিরের রাগ হচ্ছে। পালিয়ে যাওয়াটা এখন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ও যদি সেদিন না যেতো কতটা অসুবিধা হতো সেটা শুধু ওই জানে। আবির দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
> বাজে কথা বলবে না। তোমাকে একটা চিঠি লিখেছিলাম সেটা পড়েছো? নাকি লাগেজ বন্ধি করে আমাকে দোষারোপ করছো? শুনো মেয়ে আমার সঙ্গে থাকার অভ্যাসটা তাড়াতাড়ি রপ্ত করে ফেলো তোমার মঙ্গলব হবে। তুমি সুস্থ হলে একবারে আমার বাড়িতে গিয়ে উঠবে। কাজীরা ফকির হয়ে যায়নি যে বউ পালতে হিমশিম খেয়ে পরের বাড়িতে রেখে দিবে।
> আপনার সঙ্গে আমি কিছুতেই যেতে পারবো না। আপনারা সত্যি সত্যি আমাকে খুন করবেন। ভাইয়া বলেছে ডাকাতদের হৃদয় নিষ্ঠুর।
আবির মুঠো শক্ত করে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলল,
> হৈমী তোমার ভাইয়াদের কথা যদি আর একবার বলো আমি সত্যি সত্যিই তোমাকে এখুনি গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাবো। কাজী বাড়িতে একবার পা পড়লে জীবনে আর বের হতে পারবে না। বরকে সাহায্য করবে কি না তার সঙ্গে ঝগড়া করছো?
আবির আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলে থামলো। হৈমন্তী ভ্রু কুচকে রেখেছে। এই লোকটার মতিগতি ঠিক বুঝতে পারছে না। লোকটা ভালো নাকি খারাপ এই নিয়ে ওর মনে সন্দেহ আছে। যতদুর শুনেছে কাজীরা প্রয়োজন ছাড়া এরকম ব্যবহার করে না। হৈমন্তী এলোমেলো চিন্তা করছে। আবির ততক্ষণে দুটো বালিশ ওর পায়ের নিচে ঠিকঠাক করে রাখছে। হঠাৎ লোকটা পা ছেড়ে ওকে সামান্য উঠিয়ে বসিয়ে দিয়ে বলল,
> শুয়ে শুয়ে ঝগড়া করতে তোমার অসুবিধা হচ্ছে এখন সুবিধা হবে। যেমন ভাই তাদের তেমনই বোন কি কপাল আমার।
> আক্ষেপ হচ্ছে? ছেড়ে দিন, কে বলেছে বউ বউ করে দুনিয়া মাথায় করতে?
> তোমার ছোট মাথায় এসব ঢুকবে না। চুপচাপ খেয়ে ঘুমিয়ে যাও। শোনো আমাদের বাড়িতে বউদের উপরে কোনো রকম অবিচার করা হয়না। ঝগড়া ঝামেলা তোমার ভাইদের সঙ্গে তোমার সঙ্গে না। তাছাড়া দেখছো না আমি কেমন তোমাকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছি।
হৈমন্তী অবাক চোখে আবিরের দিকে তাঁকিয়ে বলল,
> ভালোবাসা ছাড়া মানিয়ে নেওয়া সংসার বেশিদিন সুখের হয়না।
আবির ভ্রু কুচকে উত্তর দিল,
> আমি তো ভেবেছিলাম তুমি নেহাতই একটা পিচ্চি মানুষ। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ধারণা ভূল। ভালোবাসা কি তুমি বুঝো?
> বুঝবো না কেনো? এখনকার ছেলেমেয়েরা পঞ্চম শ্রেণি পাশ করার আগেই প্রেম ভালোবাসা সম্পর্কে টুকটাক বুঝে ফেলে। সেখানে আমি দুদিন পরে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিব। আমি বাচ্চা নয়। মফস্বলের জেলা শহরে যৌথ পরিবারের বড় হয়েছি অনেক কিছুই বুঝি।
> বাহ তাহলে তো দারুণ। তুমি আমি, আমি তুমি প্রেম ট্রেম হবে। কি বলো?
হৈমন্তী হতভম্ব হয়ে গেলো লোকটার কথা শুনে। লোকটা কি ওর সঙ্গে মজা করছে বুঝতে পারছে না। হৈমন্তী আবিরের দিকে তাঁকিয়ে দেখলো লোকটার মুখে কোনো হাসি নেই। গম্ভীর হয়ে পাশে রাখা বক্স থেকে প্লেটে খাবার রাখছে। হৈমন্তীর রাগ হচ্ছে। ও মুখটা কঠিন করে বলল,
> আমি আপনাকে ভালোবাসি না তাই আপনার সঙ্গে সংসার করবো না। ভাইয়াকে আমি বলে দিয়েছি। সকাল হলেই ভাইয়া আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে। বুঝেছেন?
হৈমন্তী চোখ বন্ধ করে কথাটা বলে থামলো। আরাফাতকে ও কিছুক্ষণ আগেই এখানকার ঘটনাগুলো বলে দিয়েছে। ও রাস্তায় আছে পৌঁছনো পযর্ন্ত হৈমন্তীকে স্বাভাবিক থাকতে বলেছে। হৈমন্তী কথাগুলো বলে দিয়ে আফসোস করছে। ওদিকে আবিরের চোখ দুটো জ্বলে উঠেছে। ওর ইচ্ছে করছে হৈমীর গালে ঠাটিয়ে দুটো থাপ্পড় লাগিয়ে দিতে। কিন্তু পারবে না। রাগে রাগে খাবার নিয়ে হৈমন্তীর মুখে সামনে ধরে বলল,
> উদ্ধার করেছেন এই জন্য চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবো। এবার খেয়ে আমাকে আরকটু উদ্ধার করেন। ঘটে বুদ্ধি জ্ঞানের ছিটেফোঁটাও নেই। আসছে ভালোবাসা বোঝাতে।
হৈমন্তী খাবে না বলে মুখ ফিরিয়ে নিলো কিন্তু আবির শুনলো না বলল,
> না খেলে কিন্তু সত্যি সত্যি খুন করে গুম করে দিব চিনো আমাকে?
আবির দরজার দিকে তাকিয়ে হালকা চিৎকার করে কাকে একটা ডেকে বলল,
> আমার ছুরিটা একটু দিয়ে যাবে কেউ? সঙ্গে বস্ত আনবে।
আবির থামতেই হৈমন্তী চুপচাপ খেয়ে নিলো। ভয় পাচ্ছে। ছোট থাকতে একবার লাইভ মারামারি দেখেছিল। সেই দৃশ্যটা আজও চোখের সামনে ভাসে। আবির কথাবার্তা বললো না। খাওয়া শেষ করে ওষুধ দিয়ে ওকে পূর্বের ন্যায় শুয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল। হৈমন্তী চুপচাপ চোখে বন্ধ করে সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
__________
ভোর হতেই হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতালের কেবিনে কেবিনে খোঁজ করছে আরাফাত। হৈমন্তীকে কোথাও না পেয়ে হাপিয়ে উঠেছে। খালার ফোন হৈমন্তীর কাছে ছিল কিন্তু এখন সেটা বন্ধ বলছে। টেনশনে গায়ের ঘাম ছুটে গেছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। সারা হাসপাতাল তন্ন তন্ন করে খুজেঁও মেয়েটাকে পাওয়া গেলো না। উপায়ন্তর না পেয়ে রাজীবকে সব বলে দিল। রাজীব সঙ্গে সঙ্গে লোকজন নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। আরাফাত ফোন রেখে আবিরের কেবিনে গিয়ে উপস্থিত হলো। আবির রোগী দেখছিল হঠাৎ আরাফাতকে দেখে ভ্রু কুচকে ফেলল। একই অঞ্চলে বেড়ে উঠার সুবিধার্থে দুজন দুজনাকে আগে থেকেই চিনে। আরাফাত সোজাসাপ্টা বলে উঠলো,
> হৈমী কোথায়? ওর কিছু হলে কিন্তু কাউকে ছাড়বো না। খুন করবো সবাইকে।
আবির ঘাবড়ালো না। চুপচাপ ফাইলে মুখ গুজে ফিসফিস করে বলল,
> বিয়ের পরে মেয়েদের সেখানে থাকার কথা সেখানেই আছে। অসুবিধা আছে কোনো?
আবিরের কথা শুনে আরাফাত রাগে টেবিল চাপড়ে বলল,
> কাজীদের চিনতে আমার বাকি নেই। সবগুলো ডাকাত। আমার বোনের কিছু হলে সত্যি বলছি
কাউকে ছাড়বো না।
আবির ভ্রু কুচকে বলল,
> ও আচ্ছা হৈমীকে এই ভুলভাল ধারণাটা আপনার দেওয়া? শুনেন হৈমী কাজী বাড়ির বউ,ওদের ইজ্জত। আপনারা তাকে লুকিয়ে রেখেছেন। মেয়েটা কি অবস্থায় আমার এখানে ভর্তি হয়েছিল জানেন? আমার বাপ চাচা জানলে কি হবে বুঝতে পারছেন? আবারও দাঙ্গা বাধবে।
> আপনার বাপ চাচারা শুধু এটাই পারে। ভালো কাজের তো গুণ নেই। বিরল প্রজাতির প্রাণী।
> আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন। বোনের শশুর বাড়িকে অপমান করা কি আপনার উচিৎ হচ্ছে? আপনার বোন আমার কাছে আছে। তার সুখ শান্তির কথা ভেবে হলেও চুপচাপ বাড়িতে ফিরে যান। কথা দিচ্ছি ও আমার কাছে ভালো থাকবে।কথা দিচ্ছি অশান্তি কমলে ওকে সঙ্গে নিয়ে আপনাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা করবো।
আবির বেশ শান্ত হয়ে কথাগুলো বলে থামলো। আরাফাত বুঝে গেলো এভাবে হবে না। লোকটা বেশ চালাক। শান্ত মেজাজে ওকে হুমকি দিয়ে দিল। অন্য কিছু ভাবতে হবে। আরাফাত চোখ বন্ধ করে নিজেকে বুঝিয়ে নিয়ে বলল,
> চলে যাচ্ছি। তবে ওর কিছু হলে তখন বুঝবেন। সামান্য আঘাতেও আমরা কিন্তু ছাড় দিব না।
আবির তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
> তাই? কাজীরা আর যাইহোক মেয়ে বউ কে পরের বাড়িতে রেখে টর্চার করে না। বোনকে খুব ভালোবাসেন তাহলে সড়ক দুর্ঘটনাই পা ভাঙে কিভাবে? পেসার লো শরীর দুর্বল আরও না জানি কতটাগুলো সমস্যা আছে। শুনেন পরিবারকে বুঝান এভাবে এলাকায় কামড়াকামড়ি করলে সাধারণ লোকজনের সমস্যা হয়। আপনার ভাই না এমপি উনি ভদ্রলোক হয়ে কিভাবে ঝগড়া ঝামেলায় জড়াতে পারেন? সামান্য বিষয় নিয়ে তিল থেকে তাল বানানো হচ্ছে।
> নিজেদের দোষ কাজীরা কখনও স্বীকার করে না এটা আমার অজানা না। খামচা খামচি আমরা করি না বরং আপনার বাপ চাচা আর চাচার ছেলে করে। সামনে পেলে মুখ ভেঙে দিব ঘুষি দিয়ে দেখে নিবেন।
আরাফাত রাগে ফুলতে ফুলতে বেরিয়ে গেলো। আবির চেয়ার হেলান দিয়ে হাপ ছেড়ে বাঁচলো। যেমন বোন তার তেমনি ভাই। আরেকজন বাড়িতে যে কি করছে আল্লাহ্ ভালো জানে। আবির আর অপেক্ষা করলো না হন্তদন্ত হয়ে ছুটলো বাড়ির দিকে। গতকাল রাতে হৈমন্তী ঘুমালে ওকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওষুধের সঙ্গে আবির চালাকি করে ঘুমের ওষুধ মিসিয়ে দিয়েছিল। বেচারা ঘুমের জন্য কিছুই ঠিক পাইনি। আরাফাত যে ভোর হলেই এখানে হানা দিবে বুঝেই এই ব্যবস্থা করা।
☆☆☆
রাজীব কাজী বাড়িতে গিয়ে হম্বিতম্বি করেছে। সেখানে বোনকে না পেয়ে আরাফাতকে ফোন করেছে। আরাফাত বিষয়টা বুঝিয়ে বলেছে এভাবে হৈমীকে বের করা যাবে না। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। সুযোগ আসবে সেই পযর্ন্ত। কাজীরা ফুলছে রাগে। আনোয়ার কাজী ছেলের কাছে বারবার ফোন করছে কিন্তু আবির ধরছে না। উনারা টেনশন করছে বাড়ির বউ নিখোঁজ। মান সম্মান নিয়ে এমন টানাটানি জীবনে হয়নি। দেলোয়ার কাজী রফিককে আচ্ছা করে ঝেড়েছে। এই ছেলেটার বুদ্ধিতেই সেদিন মির্জা বাড়িতে উনি বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন কিন্তু ফলাফল কিছুই হলো না। ভেবেছিল ও বাড়ির মেয়েকে বউ করে এই বাড়িতে আনলে ওরা বোনের জন্য হলেও কাজীদের পেছনে আর লাগবে না। সব দিক থেকে ছাড় দিবে। সমাজে তো এমনিই হয়ে আসছে। ছেলের পরিবারেরর কাছে মেয়ের পরিবার সব সময় মাথা নিচু করে চলে। মেয়ের সুখের জন্য ছেলের বাড়ির জুতা পযর্ন্ত মাথায় নিয়ে চলতে হয়। রফিক মহিলা কলেজের গেটে হৈমন্তীকে দেখে পছন্দ করেছিল। ও জানতো এই মেয়েকে প্রস্তাব দিলে কখনও স্বীকার করবে না তাই ছলেবলে কৌশলে বাবাকে রাজি করিয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল। যেই লোকটা সেদিন ওকে ধরে রেখেছিল ওকে রফিক কিছুতেই ছাড়বে না। শুধু একবার প্রামাণ হাতে আসলেই হয় খুন করে ফেলবে। হৈমন্তীকে নিজের ভাইয়ের সঙ্গে কিভাবে দেখবে ভাবলেই ওর রক্ত গরম হয়ে ফুঁটতে থাকে।
☆☆☆
মন খারাপ করে খালার বাড়িতে ফিরে আসলো আরাফাত। রাহেলা হক ওকে দেখে ছুটে আসলেন। আরাফাত সোফায় ধপাস করে বসে বিড়বিড় করে বলল,
> একটা রাত আমার বোনের কাছে থাকলে কি খুব একটা অসুবিধা হতো খালামনি?
রাহেলা হক বিস্মিত হয়ে বলল,
>জামাই বলল চলে আসতে। তাছাড়া ও তো ডাক্তার আর নিজের ক্লিনিক সেখানে হৈমীর অসুবিধা হবে না ভেবেই চলে আসলাম। কেনো বাবা কিছু কি হয়েছে?
আরাফাত সোফায় হেলান দিয়ে বলল
> যা হওয়ার তাই হয়েছে। খালামনি আমি কয়েকদিন এখানে থাকবো। আমাদের বাসা ঠিকঠাক করতে কয়েকদিন লাগবে।
> কয়েকদিন কেনো তোমার যতদিন ইচ্ছে হয় থাকো। মন খারাপ করো না বোন ভালো থাকবে। জামাইকে দেখলাম কত সুন্দর করে আমাদের মেয়েকে সেবা যত্ন করছে। শোনো বোনকে নিয়ে এমন টানাটানি করো না। বাচ্চা মেয়ে তোমাদের এমন ভুলভাল আচরণের জন্য নিজেও জামাইয়ের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে।
রাহেলা হক একদমে কথাগুলো বলে থামলেন। আরাফাত কিছুই বলল না শুধু মনে মনে বলল, “কতটা সেবাযত্ন করবে সে আমার জানা আছে। ওরা মানুষ না। মানুষ হলে কখনও আমার সঙ্গে এমনটা করতেই পারতো না। ওদের জন্য আরেকটা প্রাণ অকালে ঝড়ে গেলো। সেই প্রাণের দাম কে দিবে? ওদের থেকেই নিব।” কথাটা ভাবতে গিয়ে আরাফাতের চোখ ঝাপসা হয়ে আসলো। নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজ হাতে কবরে দাফন করার মতো কষ্ট কি আছে এই পৃথিবীতে? নেই, থাকতেই পারে না।
চলবে