#দৃষ্টিনন্দনে_তুমি
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৪
চোখ খুঁলেই অচেনা পরিবেশে নিজেকে দেখে ঘাবড়ে গেলো হৈমন্তী। মাথার উপরে ঘটঘট শব্দ করে ফ্যান ঘুরছে। ওর হাত পায়ে ব্যান্ডেজ করা ব্যথাতে শরীর টনটন করছে। পা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে নড়াচড়া করতে কষ্ট হচ্ছে। হৈমন্তীর কেমন কান্না কান্না পাচ্ছে। হাটাচলা কিভাবে করবে ভেবেই ভয় করছে। কোথায় আছে দেখার জন্য আশেপাশে তাঁকিয়ে পাশ ফিরেই চমকে উঠলো। একটা চেনা চেনা মুখ ওর মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে। লোকটাকে ও কোথায় দেখেছে ভাবতে গিয়ে হৈমন্তীর বুক কেঁপে উঠলো। এই লোকটাই তো সেই লোক যার সঙ্গে ওর বিয়ে হয়েছিল। বেয়ে কথাটা মনে হতেই ওর চোখ দুটো নিভে আসলো। এতক্ষণ আবির ওর জ্ঞান ফেরার জন্য অপেক্ষা করছিল। নতুন রোগী এসেছে খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে দেখলো হাত পায়ে জখম নিয়ে একটা মেয়ে কেবিনের বাইরে পড়ে আছে। এটা সাধারণত প্রাইভেট ক্লিনিক।উপযুক্ত পেমেন্ট না পেলে কেবিন দেওয়া হয়না। জেনারেল ওয়াডে কেবিন খালি ছিল না। অপেক্ষা করলে রাতে খালি পাওয়া যাবে তাই ওকে বাইরে একটা সিটে রাখা হয়েছিল। আবির রোগীর মুখটা দেখে চমকে উঠেছিল। সেদিনের সেই মেয়েটাকে চিনতে ওর একটুও অসুবিধা হয়নি। কিন্তু মেয়েটা এখানে এই অবস্থায় কি করছে বুঝতে পারলো না। বাড়িতে খবর দিলে এখন ওর চৌদ্দ গোষ্ঠী সমেতো হাজির হবে। ওরা হৈমন্তীকে নিয়ে যাবে তারপর শুরু হবে যুদ্ধ। আবির আপাতত কোনো যুদ্ধ চাচ্ছে না। তাই দ্রুত ওকে কেবিনে নিয়েছে। এই ক্লিনিকটা ওর নিজের।যদিও বাবার থেকে টাকা নিয়ে ক্লিনিকটা করেছিল। আনোয়ার মির্জা চেয়েছিলেন ছেলে নিজের এলাকায় ক্লিনিক করুক তাতে উনার নামডাক আরও বৃদ্ধি পাবে আবির কথা শোনেনি। এখানেই তৈরী করে নিয়েছে নিজের স্বপ্নকে। বর্তমানে ও এই ক্লিনিকের মালিক। আর মালিকের বউ বাইরে পড়ে আছে বিষয়টা খুব অপমানজনক। আবির সবার উপরে উল্টোপাল্টা রাগ দেখিয়েছে। মেয়েটার কিছু হলে কাজীরা আবারও মির্জা বাড়িতে হানা দিবে। বলবে আমাদের বউকে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলেছে। নিজের বাবা আর চাচাকে ও হাড়ে হাড়ে চিনে। মেয়েটার পায়ে আর হাতে বেশ জখম হয়েছে। রক্ত পরিস্কার করতে গিয়ে বারবার ওর শুকনো মুখের দিকে তাঁকিয়ে মায়া হয়েছে। পেসার লো দেখে ওর রাগ হচ্ছে। মনে মনে ভাবলো তাঁরা বোনকে লুকিয়ে রাখতে গিয়ে কোন জাহান্নামে পাঠিয়েছে সবগুলোকে দেখে নিবে। আবিরের ধ্যান ভাঙলো চিৎকার শুনে। হৈমন্তী মুখটা চাঁদরে ঢেকে নিয়ে চিৎকার করে বলল,
> আম্মা ডাকাত, ভাইয়া বাঁচাও।
আবির ভ্রু কুচকে বলল,
> ডাকাত কোথায় আমি ডাক্তার।
হৈমন্তী ভয়ে তুতলে গিয়ে বলল,
> ওই একই হলো।
আবির বিরক্তি নিয়ে বলল,
> ডাকাত আর ডাক্তারের মধ্যে পার্থক্য বুঝো না মেয়ে? বয়স কত তোমার?
হৈমন্তী উঠতে গেলো কিন্তু হলো না আবির ওকে ধরে ফেলল। হৈমন্তী ওর হাতটা ঝাড়া দিয়ে ছলছল চোখে বলল,
> মারবেন না প্লিজ। আমি জানতাম না বর আপনি। ভাইয়া বলেছিল মাধ্যমিক ফেল রফিকের সঙ্গে নাকি আমার বিয়ে।তাই রাজি হয়েছিলাম। প্লিজ মারবেন না।
আবির অবাক হয়ে জিঞ্জাসা করলো,
> আচার্য মারবো কেনো? কাজীরা বউয়ের গায়ে হাত তুলেনা। খাঁনদানি বংশ আমাদের।
হৈমন্তী চাঁদর আটকে ধরে ভ্রু কুচকে বলল,
> ভাইয়া বলেছে কাজীরা পূর্বে ডাকাতি করতো। এতো অর্থসম্পদের মালিক তো আর এমনি এমনি হয়নি। ডাকাতের বংশধর বলেইতো বংশের ছেলেমেয়েদের ডিভোর্সের নিয়ম নেই। বউ মারা গেলে বিয়ের নিয়ম আছে। আপনি নিশ্চয়ই আমাকে খুন করে আবার বিয়ে করবেন। ভাইয়া এমনিই বলেছে। প্লিজ আপনি বউ জীবিত রেখে বিয়ে করে বংশের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়তে পারেন সমস্যা নেই। তবুও মারবেন না।
হৈমন্তী একদমে কথাগুলো বলে থামলো। নিজের বাপ চাচাদের সম্পর্কে এতগুলো অপবাদ দেওয়া হয়েছে যে নিজের বউ ওকে ডাক্তার না ভেবে ডাকাত ভাবছে। মেজাজ খারাপ হচ্ছে। চাচা ঠিক বলে মির্জা বাড়ির লোকজন আস্ত একটা খাটাস। আবির দাঁতে দাঁত রেখে বলল,
> ও আমরা ডাকাত তোমরা বুঝি ভালো? রাজীব মির্জা আর আরাফাত মির্জার কি পথে বসার অবস্থা হয়েছে যে পরের বাড়ির বউকে একটু যত্নে রাখতে পারেনি। ভিক্ষার দশা বুঝি?
হৈমন্তীর ভ্রু কুচকে ঝাঝালো ভাবে বলল,
> একদম বাজে কথা বলবেন না। কাজীরা যে বাসর রাতে বউ রেখে পালিয়ে যায় তারবেলা কিছু না? ডাকাত একটা। আপনার বাজে চিকিৎসা আমার লাগবে না। পা দিয়েছেন তো ঝুলিয়ে। খুলে দিন বাড়ি ফিরবো। খালামনি চিন্তা করছে।
আবির চোখ বন্ধ করে নিজের শান্ত করলো। বাচ্চা মেয়েটার সঙ্গে ঝগড়া করা ওর শোভা পাচ্ছে না। তাছাড়া তর্কাতর্কি করলে কথায় কথা বাড়বে তাই স্বাভাবিক হয়ে বলল,
> পায়ের হাড় চোটে গেছে কয়েকদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। রাস্তায় কি করছিলে ঘটনা কি বলবে একটু?
হৈমন্তী মুখ ভার করে বলল,
> কলেজ থেকে ফিরছিলাম। রাস্তা পার হতেই গাড়ি এসে ধাক্কা দিলো।
> কেউ নিতে আসেনি কেনো? আমি তো জানতাম তুমি গাড়িতে যাওয়া আসা করো। মির্জা বাড়ির ছোট মেয়েকে কত দরদে তাঁরা পালছে এই তাঁর নমুনা?
আবির খোঁচা দিয়ে কথা বলবে না ভেবেও বলে দিলো। রাগ হচ্ছে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। হৈমন্তী একটা কড়া কথা শুনিয়ে দিবে তার আগেই হুড়মুড় করে রাকিব ভেতরে চলে আসলো। সেই সঙ্গে আসলো ছোঁয়া আর ওর মা। হৈমন্তী খালাকে পেয়ে কেঁদে ফেলল। রাকিব হৈমন্তীর দিকে তাঁকিয়ে ওর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে বিস্মিত হয়ে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,
> তুই দেশে এসেছিস অথচ আমি জানিনা কি অদ্ভুত!
আবির মলিন হেসে বন্ধুর পিঠে হাত রেখে বলল,
> একটা ঝামেলায় ছিলাম,সরি জানাতে পারিনি। তুই এখানে কেনো?
রাকিব মন খারাপ করে বলল,
> হৈমন্তী আমার কাজিন। কি দেখলি ঠিকঠাক আছে?
> হাড় চোটে গেছে বিশ্রাম নিতে হবে। তাছাড়া বেশ জখম আছে ইনফেকশন হলে সমস্যা আছে।
> ধন্যবাদ দোস্ত ওকে ভালো করে চিকিৎসার জন্য। ওকে তুই বোন বলতে পারিস।
আবিরের ভ্রু কুচকে গেলো। এটা কোন মগের মুল্লুক বুঝলো না। বউকে বোন বানানোর পাইতারা চলছে।
আবির বিরক্তি নিয়ে বলল,
> তোর বোন,আমার বোন কেনো হবে?বউ হবে অদ্ভুত কথাবার্তার বলছিস। ওকে আমি আগে থেকেই চিনি। বন্ধু হিসেবে আমি ওর সঙ্গে তোর পরিচয় করিয়ে দিতে পারি। ও হচ্ছে…..
আবির কথা শেষ করতে পারলো না। রাকিবের ফোন আসলো আর ও বাইরে বেরিয়ে গেলো। হৈমন্তী চুপচাপ দুজনের কথোপকথন শুনছিল। লোকটা ওর পরিচয় গড়গড় করে বলে দিচ্ছিলো। সামান্য জড়তাও নেই। লোকটার অনুশোচনা হচ্ছে না। আসলেই কাজীরা ডাকাত। রাকিব আরাফাতের সঙ্গে কথা শেষ করে রুমে ফিরে আসলো। হৈমন্তীকে সদর হাসপাতালে নেওয়ার চিন্তা করছে। রাকিব সেখানে চাকরি করে মেয়েটাকে নিয়মিত দেখতে পারবে। এখানে এসে চিকিৎসা করা একটা ঝামেলা। আরাফাত হৈমন্তীর কথা কিছুই জানেনা। হৈমন্তীর ফোন বন্ধ তাই ওকে ফোন দিয়েছিল। তিন ভাই এই নিয়ে কতবার করে ফোন দিয়েছে হিসেব নেই। ও সম্পূর্ণ মিথ্যা বললো। আরাফাত জানলে ঝামেলা করবে। হৈমন্তীকে নিয়ে যাবে সেই সঙ্গে ওদেরকে এক গাদা কথা শুনিয়ে দিবে। বাড়ির গাড়িটা পযর্ন্ত রেখে যাচ্ছিল কিন্তু ওর মা শুনেনি। এখন যদি শোনে বোনের হাত পা ভেঙে হাসপাতালে বসে আছে বিষয়টা জটিল হয়ে উঠবে। পরিস্থিতি ঠিক হলে বলা যাবে। আবির এখনো হৈমন্তীর পাশে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। ছোঁয়া আড় চোখে দেখছে আবিরকে। এর আগেও দেখেছে ভাইয়ের সঙ্গে তবুও লুকিয়ে লুকিয়ে দেখলো। রাকিব এসে আবিরের পাশের দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,
> সরি দোস্ত। গুরুত্বপূর্ণ ফোন কল ছিল । আচ্ছা বল কি বলছিলি?আর শোন না আমি ওকে আমাদের হাসপাতালে নিতে চাইছি। দেখাশোনা করতে পারবো।
আবির বিরক্ত হয়ে ওর হাত ধরে বাইরে টেনে নিয়ে বলল,
> হৈমন্তীর বরের এতো ভালো ক্লিনিক ফেলে ও সদর হাসপাতালে কি জন্য যাবে? শোনা বউয়ের সেবা যত্ন আমি ভালো করেই করবো। বোনকে নিয়ে তোর এতো চিন্তা করতে হবে না। মির্জা বাড়ির লোকজনকে বলে দিস তাঁরা আমানতের খেয়ানত করেছে। আমার বাপ চাচা যদি একবার খবরটা শুনে না দেখবি কি হয়।
রাকিব বিস্মিত হয়ে বলল,
> হৈমন্তীর বর মানে ঠিক বুঝলাম না। তুই ওকে চিনিস,
আবির মলিন মুখে বলল,
> বউকে চিনবো না এটা আবার কেমন কথা। বলেছিলাম না ভাইয়ের বিয়েতে যাচ্ছি। সেদিন ভাইয়ের না আমার সঙ্গে হৈমন্তীর বিয়ে হয়েছিল।
রাকিব চোখ বড়বড় করে বলল,
> তুই বিয়েটা মানিস না বলে পালিয়ে গিয়েছিলি?
আবির বিরক্তি নিয়ে বলল,
> অদ্ভুত পালিয়ে কেনো যাবো? সেদিন না ফিরলে সারাজীবনের সব পরিশ্রম শেষ হয়ে যেতো। তাছাড়া কাজীরা বউ ডিভোর্স দেয়না। বউ যেমনি হোক সংসার করে। মেয়েটাকে আমি বিয়ে করেছি ওকে মানিয়ে গুছিয়ে নেওয়া আমার ধর্ম। তোর কি মনে হয় বোকার মতো আমি সারাজীবন বউ ফেলে ঘুরে বেড়াবো?
আবিরের কথাবার্তা শুনে রাকিব বেশ ছ্যাকা খেলো। কি ভেবেছিল আর কি হলো। এই জন্যই নজর ঠিক রাখা উচিৎ। এক বছর চোখের সামনে মেয়েটাকে ঘুরতে দেখে কিভাবে জানি ভালো লাগতে শুরু করেছিল কিন্তু সেটা আর বেশিদূর পযর্ন্ত পৌঁছাতে পারলো না। ওকে চুপচাপ দেখে আবির গম্ভীর কন্ঠে বলল,
> ওর ভাইদের আছে বিষয়টা বলিস না। জানিস না দুই পক্ষের ঝগড়া ঝামেলা কতদূর পযর্ন্ত পৌঁছে গেছে। কেউ কারো ছায়াও সহ্য করে না। হৈমন্তীকে নিয়ে টানাটানি বেঁধে যাবে।
> তোদের বাড়ির নিয়মকানুন গুলো বড্ড সেকেলে। তুই এসব মানিস কি করে,অদ্ভুত। বিয়ে করলে ডিভোর্স দেওয়া যাবে না এটা কোন আইনের আছে? জোরজবরদস্তি করে বউ রাখবি তোরা?
> শোন এটা আমাদের বাড়ির ঐতিহ্য। বিষয়টাকে আমি সাপোর্ট করি। নিকৃষ্টতম হালালের প্রতি লোকজনের একটু বেশিই আগ্রহ এটা ঠিক না। তাছাড়া আমাদের বিয়ে জোর করে হয়নি। ধুমধাম করে লোকজন জানিয়ে হয়েছে। একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে আমি ঠিক করে ফেলবো। এসে গেছি তো।
রাকিব উত্তর দিলো না। হৈমন্তীকে নিজের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা মাথা থেকে নামিয়ে ফেলল। প্রথমে ভেবেছিল মেয়েটার ভাগ্য বুঝি খুবই করুক কিন্তু এখন তেমন মনে হচ্ছে না। মেয়েটাকে নিয়ে ভাবার জন্য কতগুলো মানুষ আছে। ও দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ভেতরে গিয়ে টুকটাক কথাবার্তা বলে বেরিয়ে আসলো। ছোঁয়া আর রাহেলা হক হৈমন্তীর সঙ্গে থাকলো। ছোঁয়ার ইচ্ছে ছিল না কিন্তু কি একটা ভেবে থেকে গেলো। আবির হাসপাতালের সবাইকে হৈমন্তীর বিষয়টা তখনই জানিয়ে দিয়েছে। সত্য কথা গোপন করে জটিলতা বৃদ্ধি করার কোনো মানে হয়না। তাছাড়া এতো লুকোচুরি কিসের? এই মেয়েকে নিয়েই ওর সংসার করতে হবে। যথাসম্ভব বিষয়টাকে মানিয়ে না নিয়ে খারাপের দিকে এগিয়ে দিলে আরও জটিলতা বৃদ্ধি পাবে। ওর চাচা যে গ্রামের মেম্বার হওয়ার যোগতা রাখে না সেখানে এমপি হওয়ার জন্য লাফালাফি করছিল। মানুষকে বোকা বানাতে উস্তাদ।
______________
হাসপাতালে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে ছোঁয়া। কিছুক্ষণ আগে হৈমন্তীর সত্যিটা জানার পর থেকে ওর কেমন বিরক্ত লাগছে। এই মেয়েটাকে হিংসা করার মতো কিছু না থাকলেও কেনো জানি সহ্য হয়না। বিষয়টা আরও ভালো করে জানার জন্য আবিরের চেম্বারে গিয়ে উঁকি দিলো। লোকটা একটা ফাইল ধরে ঘাটাঘাটি করছে। ছোঁয়া উঁকি দিয়ে সামান্য হেসে বলল,
> আসবো?
আবির ভ্রু কুচকে মাথা তুলে তাকিয়ে ছোঁয়াকে দেখে বলল,
> আসুন। কোনো অসুবিধা হচ্ছে?
ছোঁয়া ধীরগতিতে আবিরের সামনের চেয়ারে বসে মিনমিনে কন্ঠে বলল,
> আপনার সঙ্গে একটা কথা ছিল একটু সময় হবে?
> নিশ্চয়ই বলুন কি বলবেন?
ছোঁয়া ঢোক গিলে বলল,
> হৈমন্তীর সঙ্গে আপনার ঘটনাটা কি সত্যিই?
আবির বিরক্তি নিয়ে উত্তর দিলো,
> মিথ্যা কেনো হবে? অবশ্যই সত্যি। কেনো বলুন তো?
> না আসলে আপনার মতো একটা ছেলের সঙ্গে হৈমন্তীর মতো একটা মেয়ের বিয়ে, কেমনে কি? নিশ্চয়ই আপনাকে জোর করা হয়েছিল বলেই আপনি পালিয়েছিলেন?
পালিয়েছিলেন কথাটা আবিরের কানে বিষাক্ত লাগলো। প্রথমবার মনে হচ্ছে সেদিন চলে গিয়ে কতবড় পাপ করে ফেলেছিল। যে শুনছে সেই পালিয়ে কেনো গিয়েছিল প্রশ্ন করছে। আবির ভেতরে ভেতরে জ্বলছে। তবুও মুখটা স্বাভাবিক রেখে উত্তর দিল,
> হৈমন্তীর মতো মেয়ে বলতে আপনি কি বুঝিয়েছেন?? যদি একটু বলতেন বুঝতে সুবিধা হতো। আমার যতদুর মনে পড়ে হৈমন্তীর চেহারা আপনার থেকেও ভালো। ওদের পরিবারিক অবস্থাও তেমন। আমাদের দুই পরিবারের হাড্ডাহাড্ডি লডাই চলে। অর্থসম্পদে কেউ কারো থেকে পিছিয়ে নেই। হৈমন্তীর বয়স কম এই যা। আমি মানিয়ে নিব। তাছাড়া আমার আম্মা আছেন বাড়িতে। উনি খুব দক্ষ হাতে ওকে নিজের মতো করে নিবেন। আপনি অযথাই চিন্তা করছেন মিস ছোঁয়া। আমি বিজি আছি অযথা আমার সময় নষ্ট করছেন। এখন আসুন।
আবির শেষের কথাগুলো খুব কড়াভাবে বলে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা করিম নামের ছেলেটাকে ধমক দিয়ে বলল,
> লোকজন আমার রুমে অযাচিতভাবে চলে আসে আর তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখো? এমনে চললে কিন্তু তোমার চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে।
করিম মাথা নিচু করে বলল,
> সরি স্যার।
অপমানে ছোঁয়ার চোখে পানি এসে গেলো। এতবড় অপমান ওকে কেউ কখনও করেনি। আরাফাত মাঝেমাঝে কয়েকটা কথা বলে এতেই ও জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যায়। সেখানে আবির ওকে রুম থেকে বের করে দিয়েছে তারপর আবার এতগুলো কথা শুনিয়ে দিলো। এটা ও কিছুতেই হজম করবে না। করবে না কি পারবে না করতে। ছোঁয়া গটগট করে বাইরে গিয়ে ফোনটা বের করে আরাফাতের নাম্বারে ডায়েল করলো। দুবারের পর ফোন রিসিভ করেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো,
> বারে পেত্নী, সাত সকালে কি খবর? বিবিসি নিউজের মতো কিছু শোনাবি নাকি?
আরাফাতের কথা শুনে ওর শরীর রাগে আরও জ্বলে উঠলো। মনে হলো হৈমন্তীর যেমন ভাই তেমনি তার বর। কেউ কারো থেকে কম যায় না। সব গুলো মহা বেয়াদব। ছোঁয়া রাগ কন্ট্রোল করে বলল,
> খুব তো বোনকে আমাদের বাড়িতে রেখে গিয়ে শান্তিতে বসে আছো এখানে কি হচ্ছে জানো?
আরাফাত চিন্তিত হয়ে দ্রুত প্রশ্ন করলো,
> কি হয়েছে? হৈমী ঠিক আছে?
> ঠিক না ছাই আছে। হৈমন্তীর পালিয়ে যাওয়া বর এসে হাজির হয়েছে। মেয়েটা এখন হাসপাতালে ভর্তি। রাখছি আমি।
ছোঁয়া অর্ধেক কথা বলে ফোন রেখে দিলো। ওপাশ থেকে উত্তরের অপেক্ষা করলো না। ওদিকে আরাফাত রাগে ফুলছে।
☆☆রাজীব চয়নিকার পাশে চুপচাপ বসে আছে। স্ত্রী লোক কতটা ভয়ংকর হতে পারে ও আজ বুঝতে পারছে। কতদিন হয়ে গেলো তবুও চয়নিকা ওকে সেই লতার বিষয়টা নিয়ে ওকে খোঁচাখুঁচি করে। কিছুই বলা যায় না। সকালবেলায় রাজীব খুব আল্লাদ করে বলেছিল,
> তুমি থ্রি পিচ পরা শুরু করো। শাড়ি পরে কাজকর্ম করতে অসুবিধা হচ্ছে। তোমাকে বেশ মানাবে।
চয়নিকা কিছুক্ষণ স্বামীর দিকে তাঁকিয়ে থেকে ভ্রু কুচকে উত্তর দিয়েছে,
> সোজাসাপ্টা বলে দিতে চয়নিকা শাড়িতে তোমাকে দেখতে দেখতে আমি বিরক্ত হয়ে গেছি। তুমি পুরাতন হয়ে গেছো। সব বুঝি আমি। তোমাদের পেটে পেটে শয়তানি। আবারও বিয়ে করার পাইতারা করছো তাইনা? ছিঃ ছিঃ তোমাদের চরিত্রের এই হাল?
রাজীব এক নিমিষেই নিভে গেলো। এই মেয়েটা এতো বুঝে কেনো আল্লাহ ভালো জানে । চয়নিকা সেই সকাল থেকে মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। ওর সঙ্গে কথা বলছে না। বলবেও না। যতবার ঝগড়া হয়েছে দুদিন করে নিরবতা পালন করে তারপর কথা বলেছে। রাজীব এমপি মানুষ। কতরকমের কাজকর্ম থাকে। তবুও এই সময়ে ওর নজর থাকে বাড়ির দিকে। দেশ সামলানোর চাইতে ঘর সামলানো আজকাল ওর কাছে কঠিন মনে হয়।
চলবে