#দেবী
লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি (ছদ্মনাম)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
১৮ঃ
সময়, জোয়ার এবং জীবন কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করে না। কেটে গেছে সাত দিন। এই সাত দিনে কাকন যেন পরিপূর্ণ সংসারী হয়ে উঠেছে। সংসারের প্রায় সকল কাজেই সাহায্য করে।যতই দু-তিনটে কাজের লোক থাকুক ঘরের বউ কাজ না করলে বউ কে কথা শুনতেই হয়। তবে এই ক’দিনে কাকন রুহুলের প্রতি দুর্বল হয়ে উঠেছে। স্বামীর যত্ন, ভালোবাসা, আচরণ সব কিছুতেই মুগ্ধ হয়েছে কাকন।লোকটাকে এখন বেশ ভালোই লাগে কাকনে।
আকাশে আজ সুর্যের দেখা নেই। হয়তো আজ মন খারাপ তাই এমন কালো মুখে ছেয়ে আছে ধরণীর বুকে। হয়তো বৃষ্টি হবে আবার নাও হতে পারে এ যেন প্রকৃতির খেলা মানুষকে জালানোর। দেখে মনে হয় বৃষ্টি হবে অথচ হয় না।
কাকনকে শাশুড়ি মা ছাদে শুকনো মরিচ, হলুদ আর জামা কাপড় তুলতে পাঠালেন। রানু কে সাথে নিয়ে কাকন চললো সেগুলো তুলতে।
যাওয়ার পথে রানু কাকন কে বললো, “ভাবিজান একখান কতা কই?
–” হ্যাঁ বলো, কথা বলতে কি অনুমতি লাগে নাকি ”
–“ই মানে আপনে গায়ে কি বাইটা দেন যার লিগা আপনে এত সুন্দর ”
রানুর কথায় কাকন হেসে দিলো। বললো,” কিছু বেটে দিলে বুঝি মানুষ সুন্দর হয়”
–“হ্যাঁ হয় তো আমি পত্যেক সপ্তা হলুদ বাইটা মুহে দেই। তাও সুন্দর হই না। সুন্দর হইলে আমারো একখান বিয়া হইতো ”
–” হাহাহা, তোমার বুঝি বিয়ে করার সখ হয়েছে খুব?”
–“হ হইছেই তো। জামাই এর আদর সুহাগ পামু। আচ্ছা দাদাভাই যে আপনেরে হারাদিন চোক্কে হারায় আপনারে মনে হয় মেলা আদর সুহাগ করে।”
রানুর কথায় কাকন কেশে উঠলো। এখন সে কি বলবে। রানু তো তার দুর্বল জায়গায় কথা ছুড়ে মারলো।এ বিষয় টা শুনলেই তার ভীষণ লজ্জা লাগে। কাকন চোখ বড় বড় করে বললো, “যাও তোমায় সাহায্য করতে আমার সাথে যেতে হবে না তুমি আম্মাদের কাছে যেয়ে সাহায্য করো।”
কাকনের ওমন কথা শুনে রানু কিছুটা ভয় পেলো তবে অবাক হলো। তার মনে হলো সয়ং সুভা তার দিকে এভাবে রেগে তাকাচ্ছে। তাই বললো, “ভাবিজান আপনে যেমনে তাকাইলেন জানেন বড়াম্মাও এমনেই তাকায় রাইগা গেলে।লেখিকা স্রোতস্বীনি। খোদার কসম আপনারে পুরাই বড়াম্মার মতো লাগলো। হাহাহাহা”।(লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)
রানুর কথায় ভড়কে গেলো কাকন।এর সাথে কথা বলাই বেকার। কিছু না বলে ছাদের দরজা দিয়ে ছাদে গেলো। শুকনো মরিচ আর হলুদ গুলো সুন্দর করে বাশের ডালায় রাখলো। রানুর হাতে দুটো ডালা দিয়ে নিজে সব জামা কাপড় রাখলো।রানু ডালা নিয়ে আগেই নেমে পড়লো। ছাদ থেকে বেরোবে ওমনি কাকনের কানে কাদার শব্দ এলো। মনে হচ্ছে কেউ ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে। কাকন শব্দ অনুসরণ করে বিপরীতে যেয়ে দেখলো সামিয়া হাটু ভাজ করে মুখ বুজে বসে আছে। হাসি খুশি সামিয়া কে কান্নারত অবস্থায় দেখে আৎকে উঠলো কাকন।
কাকন এগিয়ে সামিয়ার মাথায় হাত রাখলো। সামিয়া মুখ তুলে কাকন কে দেখেই চোখ মুখ মুছে ফেললো। কাকন সামিয়ার কাছে বসে বললো,” সামিয়া কি হয়েছে তোমার কাদছো কেন?”
সামিয়ার চোখের জলের বাধ যেন ভেঙে গেলো। কাকন কে জড়িয়ে কেদে ফেললো।
কাকন সামিয়ার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,”শান্ত হও এভাবে কাদছো কেন,বলো কি হয়েছে, কেউ কি বকেছে তোমায়?”
–“ভাবিজান আমার খুব কষ্ট হইতাছে।”
-“কেন কি জন্য তোমার কষ্ট হচ্ছে?
-” আমার ওনারে খুব দেখতে ইচ্ছা করতাছে”
–“কাকে দেখতে ইচ্ছে করছে? ”
–দাদাভাই এর শহুরে বন্ধু বকুল ওনারে আমি ভালোবাইসা ফালাইছি ভাবিজান আমার ভালো লাগতাছে না কিচ্ছু”
–“কিহ এ তুমি কি বলছো সবাই জানলে কি হবে ভেবে দেখেছো।বাড়িতে অশান্তি হবে, আর দাদাজান তো ভীষণ রাগ করবে।”
–“আমি জানি তো সেইটা। উনিওকইছে উনি আমারে ভালোবাসে। আমারে বিয়া করবো। কিন্তু আইজ আমার ওনার কথা খুব মনে পড়তাছে। আমি তারে ছাড়া বাচমু না ভাবিজান। ”
সামিয়ার মুখে এমন কথা শুনে কাকন কিছু বলার ভাষা হারিয়ে গেলো। কিন্তু তবুও সামিয়া কে শান্ত করতে বললো,”বেশ সে যখন বলেছে হয়তো সত্যিই তোমায় বিবাহ করবে,তাহলে কান্না করার কি দরকার?”
–“হুম, কিন্তু আমার ভালো লাগতাছে না। যাওয়ার আগে একটা বার দেখতেও পারি নাই। শুধু শুনলাম দাদাভাই নাকি ওনারে এগিয়ে দিতে গেছিলো। তুমি একটু জিগাও না যে উনি কিছু বলছে কি না?
–“আমি কিভাবে বলবো ওনাকে আর পরপুরুষ এর কথা শুনে যদি উনি রেগে যান।
–“না তোমার উপর রাগবো না। আমরা সবাই জানি দাদাভাই তোমারে চোখে হারায়। হাত জোর কইরা কই ভাবিজান তুমি দাদাভাই রে বুঝাও ওনার লগে বিয়া দিতে।”(লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)
কাকন এখন বেশ দিধায় পড়ে গেলো। রুহুল কে কি আদোও বলা যাবে। হাজার হোক বড় ভাই হয়ে তো ছোট বোনের এগুলো মেনে নাও নিতে পারে।তবে সামিয়ার মুখে হাসি ফুটানোর জন্য বলতেই হবে রুহুলকে। কাকন সামিয়ার চোখ মুছে নিজের সাথে করে ছাদ থেকে নেমে এলো। সামিয়া কে কক্ষে নিয়ে গিয়ে পানি দিলো। তারপর বললো, “আমি তোমার দাদাভাই কে বলতে পারি তবে একটা শর্ত আছে? ”
— “কি শর্ত?”
–“তুমি আর কখনো কাদবে না। আমি আমার হাসি খুশি ননদ টাকে দেখতে চাই”
সামিয়া খুশিতে হেসে কাকনকে জড়িয়ে ধরলো।বললো,
–“তুমি খুব খুব খুব ভালো ভাবিজান,আমি আর কোনোদিনো কানমু না।”
_____________________
আজ রুহুলের কথামত বিশ্রামশালায় বসে আছে দুলাল সিরাজী, জামাল,হেলাল আর মহীবুল। সাথে আছে হিসাবের খাতা। যাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয় সেই হিসাব দিতে হবে। আর আজকের এই বৈঠকের আহবায়ক স্বয়ং রুহুল নিজে।
রুহুল নিজের হিসাবের খাতা নিয়ে উপস্থিত হলো বিশ্রামশালায়। সকলের কাছে থেকে খাতা নিলো। রাতে সে সব হিসেব মিলাবে।
রুহুল একপলক জামাল, হেলাল আর মহীবুল কে দেখলো। চাচা টা যে দিন দিন অধপতনে যাচ্ছে।আর ছোট ভাই দুটো তারা তো আরো। তবে সে তো ভাই দুটো কে কম ভালোবাসে না। সর্বদা মনে করে তারা আপন তিন ভাই এবং তিন বোন। অথচ রুহুল কে যে দু’ভাই সহ্য করতে পারে না ভালো তা রুহুল ভালো ভাবেই জানে। দুলাল সিরাজী কেশে উঠলেন।
বললেন, “কও রুহুল কি জন্য জরুরি তলপ তোমার ”
–“দাদাজান পুলিশ এখনো বের করতে পারে নি হাবিবুল্লাহ কে কে মেরেছে”
–” হ্যাঁ সে তো আমরা সক্কলেই শুনছি। তয় আমিও লোক লাগাইছি কে এই কামডা করলো “?
রুহুল দুই ভাই এর দিকে চেয়ে বললো, “তোরা কেউ জানিস হাবিবুল্লাহ সেদিন কোথায় গিয়েছিল?”
মহীবুল, জামাল, হেলাল তিনজন যেন এই ভয় টাই পেয়েছিল। হেলাল আমতা আমতা করে বললো,”আমরা কেমনে জানমু দাদাভাই। আমরা তো মঞ্জিলেই আছিলাম,আপনের বিয়ার কামে ব্যস্ত হইয়া। ”
(লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)
রুহুল এবার ভ্রুকুচকে জিজ্ঞাসা করলো, “ওহহ তাহলে আমি যে সাজুর থেকে শুনলাম তোরা আমার বিয়ের দিন থেকে হাবিবুল্লাহ কে খুজেছিস এটা কি মিথ্যা”
জামাল ঘামতে শুরু করলো। ইদানীং অল্প চিন্তাতেই তার শরীর ঘামে। কেপে ওঠে হৃদপিণ্ড সহ সারা শরীর। জামাল বললো, “বাপ রুহুল তুই তোর ভাই গো সন্দেহ করতাছা। আমিই ওগো কইছিলাম খুজতে। পায় নাই দেইখা খোজ লাগাইছিলাম তয় আমরা কেমনে জনতাম যে মইরা গেছে গা। ”
–“সেটা তো আমাদের ও জানানো যেতো। গোপনে কেন খুজেছিলেন চাচাজান?”
জামাল বললো,”কারন আমরা চাই নাই তর বিয়াতে অশান্তি হোক। আব্বাজান ও চিন্তা করতো তাই আরকি।”
রুহুল স্পষ্ট ভাবে বললো,”আমিও বিশ্বাস করি নিজেদের বিশ্বস্ত চাকরকে হত্যার মতো পাপ আপনারা করবেন না। তবে যে এই নিকৃষ্ট কাজ করে থাকুক না কেন আমি রুহুল সিরাজী তাদের ছাড়বো না”
রুহুলের হুশিয়ারি বার্তায় যেন কেপে উঠলো তারা।
রুহুল দুলাল সিরাজীর কাছে বসলেন তারপর বললো, “দাদাজান আমার একটা প্রস্তাব আছে। হাবিবুল্লাহ বরাবরই আমাদের লোক ছিল। তার আয়ের উৎস ও তাই সিরাজী মঞ্জিলই ছিল। ঘরে তার মা,স্ত্রী এবং ছোট একটি সন্তানও আছে। আমি চাচ্ছিলাম তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে। আল্লাহর রহমতে আমাদের কোনোকিছুর অভাব নেই। তাই তাদের যাবতীয় খরচ যদি সিরাজী মঞ্জিল বহন করে?”বলেই রুহুল দাদাজানের মুখপানে চেয়ে রইলো।
রুহুলের প্রস্তাব দুলাল সিরাজীর ভীষণ পছন্দ হলো।হ্যাঁ রুহুল তো ঠিক ই বলেছে। তার ই আগে ভাবা উচিৎ ছিল। দুলাল সিরাজী খুশি হয়ে বললেন,”উত্তম প্রস্তাব এইডা। আমার ই এইডা ভাবা উচিৎ আছিল। তুমিই আমার সিরাজী বংশের যোগ্য পাত্র এই জন্যই এত সুবুদ্ধি তোমার।”
রুহুলের প্রশংসা শুনে বাকি তিনজনের মুখে যেন আধার নেমে এলো। সর্বদা রুহুলই দুলাল সিরাজীর কাছে প্রিয় পাত্র আর তারা চেয়ে চেয়ে দেখে যায়।
দুলাল সিরাজী বললো, “মহি আর হেলাল কাইল ই যাবি তোরা দুইজন হাবিবুল্লাহর বাড়ি।যা যা লাগে সব দেওয়া হইবো।আর হাতে নহিদ কিছু টাকা পয়শা দিয়া আসিস।
হেলাল আর মহীবুল দাদার কথায় সম্মতি জানালো।
অন্যদিকে রুহুল ভাবছে সে তো এই প্রশংসার যোগ্য না। কারণ হাবিবুল্লাহর পরবারের দায়ভার নিতে বলেছে গতরাতে তার বিবিজান। সে নিজেও প্রশংসিত তার বিবিজানের এত সুন্দর চিন্তাভাবনা করার জন্য। বিবিজান না বললে বোধহয় হাবিবুল্লাহর পরিবারে দুর্ভোগ নেমে আসতো। ভাগ্যিস বুদ্ধিটা দিয়েছল।
তবে মাথায় একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে হাবিবুল্লাহ কে মারলো টা কে?
(লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)
____________________________
কাকন রাতের খাবার তৈরি করছে। সে এখন বেশ সংসারী হয়ে গেছে। বলা যায় শাশুড়ীর সাথে তাল মিলিয়ে সব কাজ করে।
সামিয়া খুশি হয়ে হেশেলের কাছে বসলো। সেখানেই রুটি ভাজছে কাকন। আর বাকিরা অন্য কাজ করছে। সবাই মিলে রুহুল, মহীবুল,হেলাল এদের ছোট বেলার গল্প বলা বলি করছে আর কাকন শুনে হাসছে। তার বেশ মজা লাগছে এগুলো শুনতে। দাদিমার সাথে রুহুলের ছোটবেলায় করা খুনশুটি গুলো বেশি বিনোদন দিচ্ছে কাকনকে। সামিয়া কাকন কে বললো,”ভাবিজান আপনে ছোটবেলায় কেমন আছিলেন, কি কি দুষ্টামি করছেন?”
কাকনের হাত এর খুন্তি যেন থেমে গেলো। সকলে কাকনের উত্তরের আশায়।কাকন যে চুলোয় রুটি দিয়েছে তার খেয়াল ই নেই। সে তার জগতে বিচরণ করতে ব্যস্ত। সামিয়ার ধাক্কায় হুশ ফিরলো। রুটি নামিয়ে মাথা নত করে আবার কাজে মন দিলো।
মালেকা উৎসুকভাবে বললো,”কি গো রুহুলের বউ ধ্যান ধইরা রইলা কেন। আমরাও শুনি তুমি কেমন আছিলা। আচ্ছা তোমার বাপ মা কি করতো গো?”
কাকন এক পলক মালেকার দিকে চাইলো। সুভা বুঝতে পারলো কাকন এর হয়তো বমন নষ্ট হয়ে গেছে। সুভা বললো, “থাক মালেকা ওকে এগুলো বলো না। মেয়েটা অল্প বয়সে বাপ মা হারা হয়েছে। ওর মনের অবস্থা ভিন্ন।”
মালেকা বলল,” হুম হেইডাই তো জানবার চাই রুহুলের বউ কেমনে হইলো এতিম।”
কাকন ছোট নিশ্বাস ত্যাগ করে বললো, “আমি এতিম ছিলাম তবে এখন আর এতিম নই আমি ছোটআম্মা। আমার চার টা মা আছে। ফাতিমা আপা, আম্মা, আপনি আর চাচিআম্মা আমার চারজন মা। আব্বা ও আছে। দাদা-দাদি, ভাই-বোন ও আছে।তাই আর এখন আমি এতিম নই। ”
কাকনের কথা সকলের ই হৃদয় স্পর্শ করলো। মালেকারও বেশ মায়া হলো। দাদিমা মালেকা কে স্পষ্ট ভাবে বললেল, “আইজকার পর নাতবউ রে কেউ আর এতিম কইবো না।আর যে ওরে এতিম কইবো মনে কইরো সিরাজী আম্মার সাথে লাগতে আইছো ”
দাদিমা কাকনের কাছে যেয়ে বললো,” তুই এতিম না। আমরা সক্কলেই আছি তাই না। তুই মন মরা কইরা থাকিস না ঠিক আছে”
সামিয়া মুখ ছোট করে বললো, “ভাবিজান আমি বুঝি নাই যে আপনার মন খারাপ হইবো। আমারে মাফ কইরা দেন।”
কাকন মিছে হেসে বললো, “তোমার কোনো দোষ নেই।আর আমার মন খারাপ ও হয় নি। তুমি আমার ছোট বেলা সম্পর্কে শুনবে?
সকলেই উৎসুক হয়ে চাইলো কাকনের পানে। যেন সকলেই জানতে চায়।
কাকন বললো,”আমার বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে ছিলাম আমি। বাবার চোখের মনি। আর মাও অনেক আদর করতো। বাবা-মা’র আদর ভালোবাসায় সারাদিন আনন্দে কেটে যেত। আমার সঈ ছিল ওদের সাথে কত খেলেছি। সাড়ে ১৩ বছর জীবনে আনন্দের কোনো অভাব ছিল না। কিন্তু তারপর ই সেই ভয়াবহ দুর্বিক্ষ জীবন থেকে সব আনন্দ কেড়ে নিয়ে গেলো। বাব -মা আমাকে ছেড়ে চলে গেলো না ফেরার দেশে। লেখিকা স্রোতস্বীনি। যখন আমার হুশ হলো তখন আমি মহিলা শালায়। আমাকে কখন মহিলাশালায় আনা হয় আমার মনেই নেই।আমি নাকি ওই যে পাশের গ্রামে নদীতে পড়ে ছিলাম। হয়তো পানির সাথে ভেসে এসেছিলাম, কিন্তু সেই দুর্বিক্ষ আমার সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, যা হয়তো আর কোনো দিন ফিরে আসবে না।”
সকলেই কাকনের কথা শুনে স্তব্ধ। এই টুকু বয়সে কতটা কষ্ট সয়েছে কাকন। কাকনের চোখ দিয়ে ধারা বইছে। কাকন হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে মুখে হাসি টানলো তারপর আবার রুটি ভাজতে শুরু করলো।
অথচ সকলেই নিরব হয়ে গেলো কাকনের আচরণ।আর কাকন এমন ভাব করলো যেন কিছুই হয় নি। কেউ আর কথা বাড়ালো না চুপ চাপ কাজ করে গেলো।
(লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)
___________________________
রাতে সব কাজ শেষে কাকন কক্ষে গেলো। দেখলো রুহুল চেয়ারে বসে খাতায় লেখালেখি করছে। কাকন রুহুলের কাছে দাড়ালো। মুখ ফুটে সামিয়ার কথা টা বলতে চায় কিন্তু বলতে পারছে না।
রুহুল হিসেব করছিল। কাকন কে দেখে চোখ খাতায় নিবদ্ধ রেখেই বললো, “কিছু বলবেন বিবিজান? ”
কাকন এর কথা যেন গলায় আটকে গেলো। রুহুল আন্দাজ করে বললো, “ভয় নেই যা ইচ্ছে বলতে পারেন”
কাকন আমতা আমতা করে বললো, ” আসলে সামিয়া মানে আপনার…”
কাকন এর কথা শুনে রুহুল খাতা বন্ধ করে রাখলো। তারপর কাকনের কোমড় জড়িয়ে নিজের কোলে বসিয়ে বললো, “সামিয়া আমার কি হুম?”
কাকন এর আবারো কাপা-কাপি শুরু হয়ে গেলো। তবুও বললো,”আসলে বিয়েতে আপনার যে একটা শহুরে বন্ধু এসেছিল তাকে সামিয়া বিয়ে করতে চায়।”
রুহুল কাকনের কাধে ধুতনি রেখে না জানার ভান করে বললো,”ওহ আচ্ছা, তো আমার কি করতে হবে?”
–“সামিয়া বললো আপনি চাইলেই ওদের বিয়ে হবে। দাদাজানসহ সকলেই আপনার কথা শোনে।জানেন সামিয়া আজ অনেক কেদেছিল আমার ভীষণ মায়া লেগেছে। আপনি ওর ইচ্ছে টা পুরণ করুন না”
রুহুল কাধে শব্দ করে চুমু খেয়ে বললো, “ভেবে দেখবো”
–” ন..না ভেবে দেখা যাবে না। সামিয়া আমায় বলেছে আপনাকে রাজি করাতে যেন আপনি বাড়ির সকলকে রাজি করাতা পারেন। ”
রুহুল কাকনকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। নিজে আধশোয়া হয়ে কাকনের গালে হাত রেখে বললো, “আমার আদরের ছোটবোন সামিয়া। ওর ভালো মন্দ দেখার বিষয় আমার। আমি চাই বকুল ওর পরিবার কে নিয়ে আসুক।আমি কখনো যেচে বোন দিতে যাবো না। বকুল যদি ওর পরিবার কে নিয়ে আসে তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই। ”
কাকন রুহুলের উত্তরে খুশি হলো। বললো,”বেশ আমি সামিয়া কে বলবো অপেক্ষা করতে।”
রুহুল হেসে নাকে নাক ঘেঁষে বললো,”হুম”।
কিন্তু রুহুলের হাসি গায়েব হয়ে গেলো। সে ভালো ভাবে খেয়াল করলো কাকনের চোখ লাল হয়ে আছে যা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় কাকন কেদেছে।
রুহুল চোখে হাত রেখে বললো, “আপনি কেদেছিলেন বিবিজান?”
কাকন এই কথা শুনে অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।
রুহুল আবারো বললো,”কি হলো বলুন বিবিজান?”
–“না মানে আসলে আমার বাবা-মার কথা মনে হয়েছিল। অনেক দিন হলো ফাতিমা আপা কেও দেখি না। ওদের কথা খুব মনে পড়ছিল। আর আমার মহিলাশালায় যেতে ইচ্ছে করছিল। ”
রুহুল কাকনের হাত নিজের হাতের মুষ্টিতে নিয়ে বলল,”আগামী কাল সকালে আপনাকে মহিলাশালায় দিয়ে আসবো সারাদিন থাকবেন সেখানে। এবার খুশি তো ।”
কাকন প্রচন্ড খুশি হয়ে গেলো। ২৭টা দাত বের করে হেসে মাথা নেড়ে জানালো সে খুব খুশি।লেখিকা স্রোতস্বীনি।
রুহুল কাকনের চোখে চুমু খেয়ে কাকনকে বুকে নিয়ে শুয়ে পড়লো। তারপর বললো, “আপনার সকল ইচ্ছে শুধু একবার আমাকে জানাবেন বিবিজান। সেই ইচ্ছে গুলো পুরণ করার দায়িত্ব আমার।আপনার মুখের হাসি আমি সব চাইতে বেশি ভালোবাসি বিবিজান।”
চলবে….
#দেবী
#Srotoswini_স্রোতস্বীনি
বিদ্রঃ দয়া করে কেউ কপি করবেন না। ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।
®️ Srotoswini-স্রোতস্বীনি ✍️