#দেবী
লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি(ছদ্মনাম)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
৯ঃ
ঘনিয়ে আসছে সেই শুভ মুহূর্ত। সিরাজী মঞ্জিলে বিয়ের জাকজমক সাজ দেওয়া চলছে। দেশ এর অভ্যন্তরে সকল আত্মীদের আমিন্ত্রণ করা হয়েছে।
শহর থেকে গ্রাম থেকে নানা আত্মীয় স্বজনরা এসেছে। ৩দিন পর বিয়ে। বিয়ের পরের দিন সকল সিরাজপুর বাসী কে খাওয়ানো হবে। পুর্বপুরুষের যুগ থেকেই যে ভাবে বিয়ে হয় সেই নিয়ম এই বিয়ে হচ্ছে।
দুলাল সিরাজীর মেয়ে আসমা তার স্বামী, সন্তান দের নিয়ে এসেছে। আলেয়া,রোকেয়া রাও স্বামী সন্তান নিয়ে এসেছে।
হেলালের মা আসমাকে বললো,” আসমা তোমার আসতে কোনো অসুবিধা হয় নাই তো। সেই সক্কালে আইছো অথচ এই এখন তোমার লগে কথা হইলো।বুঝোই তো বাড়ির বড়ছেলের বিয়া অনেক ব্যস্ত আছি। তোমার বড় ভাইরে ও দেখতে হয়। তাই তোমারে যত্ন করতে পারুম কি না।”
আসমা বললো,” আরে ভাবি যত্ন তো মেহমান গো করা লাগে। এইডা তো আমার নিজের বাড়ি, বাপের বাড়ি আপনাদের খেয়াল না রাখলেও চলবো।”
কিন্তু নিজের মায়ের অপমান সামিয়া সহ্য করতে পারলো না।তাই বলল,” হ্যাঁ ফুফুআম্মা ঠিক ই কইছেন। আমার ও বাপের বাড়ি। কিন্তু আফসোস আমার ও আপনার মতো কয়দিন পরেই চইলা যাওয়া লাগবো। শুধু থাইকা যাবে এই বাড়ির সদস্য মানে মা -চাচিরা। তাই না।” (লেখিকাঃ#Srotoswini_স্রোতস্বীনি)
আসমা চেতে উঠলো,” বড়দের মুখে মুখে কথা এই শিক্ষা দিতাছে তোর মা চাচিরা। আম্মা, আম্মা এক দিন হইলো আসি নাই তোমার নাতিন আমারে কথা শুনায়তাছে। ”
দাদিমা বললেন,” চুপ করো সবাই। আসমা তুইও চুপ থাক। ভাবি গো লগে মিলামিশা বাদ দিয়া কথা বাড়াস খালি। আমি অশান্তি চাই না। ”
আসমা বললো,” হ্যাঁ আমারেই তো কইবা। এতদিন আসি নাই কেউ একটু খোজ নিছে আমার।তাও তো কিচ্ছু কই নাই। আমার মাইয়া ডার লগে রুহুলের বিয়া দিতে চাইছিলাম তুমি কইছিলা তুমি নিজে বিয়া দিবা। কই গেলো তোমার দেওয়া কথা। বলো আম্মা ”
দাদিমা এবার ঠান্ডা স্বরে বললো,”তর আব্বা রে যায়া জিগা। যেইডা জানোস না তা কইস না। তর মাইয়ারে যখন এই বাড়ির বউ কইরা আনতে চাইছি আনমু। হেলাল আর মহী এখনো আছে।”
আসমা আবারো বললো, ” কিন্তু আমার তো পারুলের জন্য রুহুল রে জামাই করতে চাইছিলাম। তুমিও কথা দিছিলা।তয় আমি তোমার কথা মাইনা নিলাম। যদি পারুল এই বাড়ির বউ না হয় আমি সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করুম সিরাজী মঞ্জিলের লগে।”(বলেই হন হন করে রানু কে দিয়ে সুভাকে খবর পাঠানোর জন্য গেলো)
আসমার মেয়ে পারুল বললো,”পারুল নানিমা, তুমি আম্মার কথায় কিছু মনে করো না।জানোই তো কেমন। রুহুল দাদাভাই আমাকে বোন ই ভেবে এসেছে। আমিও তাই ভেবেছি। আম্মা শুধু শুধু কথা বাড়ায়। ”
দুলাল সিরাজী নাতনির গালে হাত রেখে বললো,”তর নানার দুলালি তো তাই এমন করে।তবে মন ডা ভালো।”
সুভা এতক্ষণ ব্যস্ত থাকায় আসমা কে দেখে নি।রানুর থেকে শুনে আসমার কাছে গেলো। আসমা কে জড়য়ে ধরলো। (লেখিকাঃ#Srotoswini_স্রোতস্বীনি)
সুভা বললো, “আসমা, কেমন আছো তুমি”।
আসমা বলল,” বড়ভাবি,, ভালো আছি। আপনে কেমন আছেন,,ইশ কেমন হয়া গেছেন। বাড়িতে কি আর কেউ নাই বড়ভাই এর কাম এর জন্যে। আপনারে কি একা বিয়ে করছে নাকি।”
সুভা আসমা কে থামতে বললো, “আসমা এগুলা বলো না তো। আমি যতটুকু পারি করি বাকিরাও করে। তুমি বসো আমি তোমাকে শরবত এনে দেই।”
আসমা বললো,”তাইলে দুই গ্লাস আইনো।তুমিও খাইবা।”
এ বাড়িতে আসমা তার বাকি ২ভাবিকে দেখতেই পারে না। তবে সুভাকে সে তার মায়ের মতো ভালোবাসে। তাই তো নিশ্চিন্তে পারুল কে রুহুলের সঙ্গে বিয়ে দিতে চেয়েছিল।কিন্তু ভাগ্যে নেই এই আফসোস আজীবন থাকবে আসমার।
_____________________
বিয়ের জন্য শাড়ির বিক্রেতারা ডালা ভরে শাড়ি নিয়ে আসলো সিরাজী মঞ্জিলে। ভারতের বেনারস থেকে বেনারসি এছাড়াও নানা শাড়ি নিয়ে এসেছে। দেশী কাতান,সিল্ক,জামদানি ও আছে। কাকনের জন্য গায়ে হলুদ, বিয়ে, বৌভাত সকল দিনের জন্য শাড়ি পছন্দ করেছে। সাথে নিজেদের জন্য ও সবাই যার যার মতো শাড়ি পছন্দ করছে।
সুভা রান্না ঘরে কাজ করছিল। পিছন থেকে হালকা সুরমা রঙা শাড়ি জড়িয়ে দিলো রুহুল। তারপর বললো,”আম্মা,,আপনার জন্য এই শাড়ি টা। বিয়ের দিন এটা পড়ে আমার বউ কে নামাবেন আপনি।
সুভা শাড়ি সরিয়ে বললো,” আরে ছাড় তো খোকা। কাজ করছি জালাস না আমাকে।”
রুহুল আবারো বললো,”আমি আপনাকে সারা জীবন জালাবো আম্মা।”
সুভা হেসে দিয়ে বললো,” হইছে সর তো। তর আব্বারে দুধ ভাত খাওয়াইতে যামু।”
রুহুল বললো,”আমিও যাবো চলেন একসাথেই যাই।”
বিছানায় শুয়ে আছে বিলাল সিরাজী।বাবাকে দেখে
রুহুল বলল,”আব্বা আব্বা,,আমি আপনার খোকা।
কোনো ভাবান্তর নেই। বিলাল শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে।”
সুভা স্বামীর শিউরে বসে বললো,”রুহুলের আব্বা দেখেন আপনার রুহুল আসছে। আপনি কথা বলেন ওর সাথে। আপনার ছেলের বিয়ে শুক্রবারে। আপনি যাবেন না। বলেই কেদে দিল সুভা।”
রুহুল নিজের মাকে শান্তনা দিলো,”আম্মা কাদবেন না। আপনাকে কিন্তু শক্ত থাকতে হবে। আপনারা দুজন ই যদি এমন করেন কি নিয়ে থাকবো বলেন।”
(লেখিকাঃ#Srotoswini_স্রোতস্বীনি)
সুভা বললো,”তোর আব্বার কত সখ ছিল তোর বিয়ে নিয়ে। আর সবাই আনন্দ করবে আর তোর আব্বা এই ঘর টায় শুয়ে থাকবে আমার সহ্য হবো না রে খোকা।”
রুহুল মাউএর চোখের পানি মুছু দিয়ে বলল,”একদম কাদবেন না। বিয়ের ঝামেলা যাক দরকার হলে আব্বা কে বিদেশ নিয়ে যাবো। আমার আব্বা কে সুস্থ করেই ছাড়বো।
____________________
রাতে রুহুল কে দুলাল সিরাজী নিজ কক্ষে ডাকলেন। রুহুল গিয়ে দাদাজানের পাশে বসলেন।
দুলাল সিরাজী বললেন, “দাদুভাই তুমি হইলা আমার সবচেয়ে আদরের নাতি। তোমার মুখে প্রথম দাদা ডাক শুনছিলাম। কান্ধে চড়ায়া ঘুরছি এই মঞ্জিলে। দেখো যা ই হইছে এতে তোমার আমার কোনো হাত ছিলনা।তয় তুমি কি আমার সিদ্ধান্তের প্রতি অসন্তুষ্ট হইছো?”
রুহুল বললেন,” না দাদাজান আপনি তো আমার ভালোর জন্যই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
দুলাল আবারো বললেন,” কাকন বড্ড ভালো মাইয়া। তোমাগোর দাম্পত্য জীবন সুখের হইবো আশা করি।”
–” আপনি যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তখন আমি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করেছি।আর সবচেয়ে বড় কথা হলো সিরাজী বংশের মান-সম্মানের চেয়ে বড় আমার কাছে কোনো কিছুই নয়।”
দুলাল বলল,” জানি আমি। কেউ না বুঝলেও তুমি যে আমার বংশের জন্য আশীর্বাদ হেইডা আমি বুঝি।তুমি সর্বদা সিরাজী বংশের ভালো চাও। বিয়া ডা হোক তারপর শীতের শুরুতেই তোমারে সব দায়িত্ব দিয়া দিমু। আমার শরীর ভালো না। গায়ে জোর পাই না। তোমারে দায়িত্ব দিয়া নিশ্চিন্তে মরতে পারুম।”
রুহুল দাদার হাত ধরে বললো, “কিচ্ছু হবে না আপনার দাদাজান। আমি দায়িত্ব নিবো। তবে আপনাকেও আমার সাথে থাকতে হবে। আমি বেচে থাকতে সিরাজী মঞ্জিলের কারো কিছু হোক তা আমি মেনে নেবো না। সবার আগে এই সিরাজী মঞ্জিল।” (লেখিকাঃ#Srotoswini_স্রোতস্বীনি)
_____________________
পরের দিন ও সিরাজী মঞ্জিলে মেহমানের আগমন হচ্ছেই। বাড়ির কাজের লোক সহ প্রহরী দের কেও হেনেস্তা হতে হচ্ছে। বার বার সবাইকে গেইট খুলে সালাম দিয়ে প্রবেশ করাতে হচ্ছে। এর সাথে ও খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করতে করতে বাড়ির লোকের সাথে কাজের মেয়েদের অবস্থা দফারফা।
সুর্য যখন ঠিক মাথা বরাবর ঠিক তখন ই সিরাজী মঞ্জিলে আগমন হল এক ভদ্রলোকের। প্রহরী রা সালাম দিয়ে গেইট খুলে দিলো। ভদ্রলোকটি সিরাজি মঞ্জিলে প্রবেশ করলো।
বাগান থেকে বের হচ্ছিল সামিয়া। দাদাভাই এর বিয়ে উপলক্ষে হলুদের সাথে গোলাপের পাপড়ি বেটে মুখে লাগাবে।রুপচর্চা শুরু করেদিয়েছে সে। হঠাৎ কেউ ডাকলো, এই যে, শুনছেন,,? পিছন ফিরলো সামিয়া।
দেখলো একটি লোক দাঁড়িয়ে আছে। সামিয়া লোকটিকে পা অব্দি মাথা পর্যন্ত দেখল।শহুরে পোশাকে আসা এই লোক কে সে আগে দেখে নি।তার চেনা জানা আত্মীয়ের মধ্যেও তো পরেনা। তাই সে বললো, “জি,,,কি চাই,,,কার আত্মীয় আপনি হ্যাঁ,, সিরাজী মঞ্জিলে কি করছেন,,আপনারে তো আগে দেখি নাই?” ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে চোখ মুখ খিচে প্রশ্ন করলো সামিয়া।
বয়সে ছোট মেয়ের থেকে এমন কথা শুনে অবাক হলো বকুল। সে তো তার বন্ধুর বিয়েতে এসেছিল। বকুল বললো,” জি আমি বকুল আহমেদ। ঢাকায় আমি আর রুহুল একসাথে লেখা পড়া করেছি। ও আমাকে চিঠি দিয়েছিল। দাওয়াত দিয়েছে তাই এসেছি। তুমি তো আমাকে চিনবে না।”
সামিয়া বললো, ” ওহ আপনে দাদা ভাই এর বন্ধু।আগে কইবেন না। আসেন আমার সাথে। হুদাই আপনেরে বিনা দাওয়াতের মেহমান মনে করছিলাম আমি।”
বকুল বললো,”বিনা দাওয়াতের মেহমান মানে।আমি যথেষ্ট ভালো ঘরের ছেলে বিনা দাওয়াতে আসতাম না।”
সামিয়া লাগামছাড়া ভাব নিয়ে বলল,” সে ভালো কথা। আমি শুনতে চাই নাই।”
সামিয়া বকুল কে নিয়ে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলো। তারপর রুহুল কে ডাক দিলো।
উপর থেকে রুহুল নেমে এলো। প্রাণপ্রয় বন্ধুকে বুকে জড়িয়ে নিলো। তারপর বললো,এসেছিস সা’লা। ”
বকুল জড়িয়ে ধরে বলল,” বন্ধু কি অবস্থা তর?”
রুহুল উত্তর দিলো,”এই তো আছি।তোর কি অবস্থা। কতদিন পর দেখা হলো। চল আমার সাথে বিশ্রাম নিবি।
আর সামিয়া তুই বকুলের জন্য শরবত দিয়ে যা আমার কক্ষে।”
সামিয়া বিরক্তিতে চ উচ্চারণ করলো। তবুও
বললো,” জি দাদাভাই।”
বকুল বললো,এই মেয়ে শুনো, “কম চিনি দিবে। এক চামচ চিনি। আর হালকা লবণ দিবে”
সামিয়া এবার বেশ বিরক্ত হলো। তার মনে হলো সে কোনো এক কামের বেটি।তবুও দাদাভাই এর খাতিরে মেনে নিলো।(লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)
_____________________
অন্যদিকে সিরাজী মহিলাশালায় ও বেশ ভালো ভাবেই সব কিছু সাজানো হচ্ছে। মহিলা শালায় যে এভাবে কারো অনুষ্ঠান হবে কেউ ভাবেও নি। সব মেয়েরা খুব খুশি।ফাতিমাও ব্যস্ত সময় কাটায়।
১৫ বছর বয়সী কিশোরী কাকনের ২৮ বছর বয়সী পুরুষের সঙ্গে বিয়ে। কাকন এখন নিজ কক্ষ থেকে বের হওয়া প্রায় বন্ধ করেই দিয়েছে।সবাই তাকে রুহুলের কথা শুনিয়ে বেড়ায়।কাকনের খুব লজ্জা করে। সেদিনের রুহুলের বলা কথা মনে হলেই কাকনের মুখ রক্তিম রঙ ধারণ করে।তারপর আরেকদিন বাসর রাতের কথা শুনে কাকনের চোখ বড় বড় হয়ে গিয়েছিল। তার পর থেকে তো মনে আরো ভয় সৃষ্টি হয়েছে। সত্যিই যদি তার সাথেও এমন হয়।সে তো মেনে নেবে না। না না সে যদি পারতো এই বিয়ে নামক বন্ধনে জড়ানোর আগেই পালাতো। কিন্তু সে যে নিরুপায়। কোথায় যাবে সে। একমন বলে যা হচ্ছে মেনে নিই আবার আরেক মন বলে পালিয়ে যা এই ভয়াবহ প্রনয়ে শিকলবন্দী হওয়া থেকে।
কাকন এখন কি করবে?
চলবে…..
#দেবী
#Srotoswini_স্রোতস্বীনি
বিদ্রঃ দয়া করে কেউ কপি করবেন না। ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।
®️ Srotoswini-স্রোতস্বীনি ✍️