You_are_mine
season_2
Poly_Anan
part_23
প্রাপ্তির শহর ছেড়ে আজ বিদায়ের পালা ঈশান, ঈশার।গত কয়েক বছর জারিফের পরিবারের প্রতি অঘাত মায়া বসে যায় ঈশার।নিজের পরিবার যেখানে বোঝা হিসেবে গন্য করেছে সেখানে নিজের মেয়ের মতো যত্ন করেছে জারিফের বাবা, মা।তাই ইচ্ছা না থাকা শর্তেও তাদের ছেড়ে আগের জীবনে ফিরতে হবে ঈশাকে।জারিফের পরিবারকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ঈশা অনু।ডুকরে কাদেন জারিফের মা।এই দুটো মিষ্টি মেয়ে এতটা বছর তাদের পরিবারের সদস্য হয়েছিল কোন দিন কোন অভিযোগ তুলেন নি তিনি।অবশ্য অভিযোগ তোলার মত কোন কারন খুজে পাননি ।ঈশা অনু সেখান থেকে তাদের ব্যবহৃত সব কিছু নিয়ে আসে, কিছু স্মৃতি আকড়ে ধরে বাচতে হয়, তাই সেই বাড়িতে থাকা প্রতিটি টুকটাক জিনিসে তাদের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তাদের কাজে সাহায্য করে ঈশান আর রাসেল।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। সবকিছু গাড়িতে তুলে দিচ্ছে গাডরা।ঈশা ছাদের এক কোনে দাড়িয়ে পশ্চিম আকাশের লালভাব হওয়া সূর্যটির দিকে তাকিয়ে আছে।আজকের এই সূর্য এই সময়ের জন্য এই শহরের জন্য তাদের জীবন থেকে এখানেই সমাপ্ত।ঈশান ঈশার পেছনে নিঃশব্দে দাঁড়ায়।
“কি করছো ওয়াইফি…!
” দেখছি…!
“কি?
” সূর্যটা দেখুন। লাল, কমলা, কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন রঙের মেলা সাজিয়ে সে বিদায় নিচ্ছে।
“হুম।তুমি কি ভুলে গেছো এই সন্ধ্যার কথা, এই শহরের কথা?
“আমি কিচ্ছু ভুলিনি।এমন অন্ধকারেই আমি হারিয়ে গেছিলাম চা বাগানে আর তখনি আমায় উদ্ধার করে বিসস্ত দুটি হাত।আর এই শহরেই খুজে পাই আমার জীবনের আসল মানুষটিকে!
” আর দেখো আবারো দূরত্ব হয় আমাদের মাঝে কিন্তু এই শহরে আমাদের আবারো দেখা।
ঈশা এবার পিছনে ঘুরে ঈশানের দিকে তাকায়।মিষ্টি করে হেসে বলে,
“আমায় কি এখনো আগের মতো ভালোবাসেন গুন্ডা ঈশান..?
” উহুহ,আমার ভালোবাসা আগে যেমন ছিল এখনো তেমন আছে।আগে আমি যেমন তোমায় আমার সবটা দিয়ে ভালোবেসেছি এখনো আমি তোমায় আমার সবটা দিয়েই ভালোবাসি। শুধু…(ঢোক গিলে)
“শুধু?(ভ্রু কুচকে ঈশা)
” শুধু আগের চেয়ে তোমাকে হারানোর ভয়টা আমার মাঝে দ্বিগুন বেড়েছে।আগে বিশ্বাস ছিল আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবেনা কিন্তু এখন দেখো আমাদের আলাদা করার জন্য শত্রুর অভাব নেই তাই তোমাকে হারানোর ভয় আমার মাঝে ভীষন ভাবে গেথেঁ গেছে।
“চিন্তা করবেন না।শেষ ভালো যার সব ভালো তার।
” ভালোবাসি ওয়াইফি।(ঈশার কপালে চুমু দিয়ে)
“আমিও..!
ঢাকায় ফিরে ঈশাকে ঈশান তার বাড়িতে নিয়ে যায় এখনো কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি ঈশার বাবা মায়ের।
রাত দুইটায় গভীর অন্ধকারে ঘুমিয়ে আছে নগরী কিন্তু কিছু নিশাচর জেগে আছে । বাড়ির সদর দরজা খুলে সবার আড়ালে বেরিয়ে যায় ঈশান। গাড়িতে উঠে দ্রুত ডাইভিং করে ছুটে আসে গোডাউনে।তার অপেক্ষায় ছিল ২৩ জন গাড। ঈশান তাদের ঈশারা করে গোডাউনের দরজা খোলার জন্য।দুইজন গাড এসে গোডাউনের বিশাল বড় গেটটি খুলে দেয়।
ঈশান বড়বড় পা ফেলে কিলার লুকে গোডাউনের ভেতর ডুকে তার পিছিনে দুইজন গাড এগিয়ে আসে।
“সব কিছু ব্যবস্থা করে রাখা আছে?(গাডদের উদ্দেশ্য করে)
” ইয়েস বস।
ঈশান দ্রুত একটি রুমে ডুকে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।দুটো ছেলেকে চেয়ারের সাথে বেশ শক্ত করে মোটা দড়ি দিয়ে বেধে রাখা হয়েছে।ঈশান তাদের সামনে বসে তারপর আবারো ডেবিল লুক নিয়ে বলে,
“কিরে সাপের লেজে পা দিয়ে খুব ভালোই নিজেকে সাহসি ভেবেছিলি।তোরা কি ভেবেছিস তোদের এইসব প্রকাশ পাবে না? নাকি আমি ফিরে আসবো না?
সাইফ আর নাজিম ঈশানকে দেখেই ঘেমে গেছে।
” আচ্ছা শোন তোরা একটা ভালো কাজ করেছিস। সেটা হলো ভালোবাসায় যে কষ্ট আছে,প্রিয় মানুষ হারানোর যে কষ্ট আছে আমি এইসব কখনো ফিল করিনি। কিন্তু তোরা আমাকে ফিল করালি। হায় রে ভাই কি যে কষ্ট ছিল সেই দিন গুলো তোদের বলে বুঝাতে পারবো না। তোদের ভাবির অভাবে আমি তো অর্ধেক পাগল হয়ে গেছিলাম। আচ্ছা যাই হোক কথা বাড়াবো না তোদের গিফট বরং আমি তোদের দিয়ে দি।
ঈশান দুজন গাডকে কি যেন ঈশারা করলো তারপর আবারো গোডাউন থেকে বেরিয়ে সেই ব্রিজের উদ্দেশ্য রওনা হলো।যেখানে ঈশান আর ঈশার এক্সিডেন্টা হয়।অতীতের বিষাক্ত স্মৃতি গুলো ঈশানের মাঝে পীড়া দেয়।তার বুকের ভেতরটায় কে যেন ব্লেট দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে।এত কষ্ট কেন? প্রিয় মানুষ ছাড়া থাকা!এত কষ্ট কেন? তোমাকে এক মূহুর্তের জন্য হারানোর কথাটা ভাবা।
ঈশান ব্রিজের সামনে পৌছে সেখানে কিছুক্ষন পাইচারি করে।তারপর সাহস নিয়ে সেই পাশটায় দাঁড়ায় যে পাশটায় ঈশা টাল সামলাতে না পেরে হোচট খেয়ে নিচে পরে যা।ঈশানের চোখের কোনে অশ্রু গুলো মুক্তার দানার মতো চিক চিক করছে।গভীর রাত হওয়ায় সব নিরিবিলি। শুধু কিছুটা দূরে একটি বাকা লেমপোস্ট দাঁড়িয়ে আছে।ঈশান বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে চোখের পানি মুছে মস্ত বড় আকাশটার দিকে তাকিয়ে বলে,
গল্পটি লেখনীতে পলি আনান
“আমি তোমার জন্য যেমন ভালোবাসার রঙিন তাজা ফুল হয়ে তোমার জীবনের রং এনে দিতে পারি, ঠিক তেমনি মস্ত বড় আকাশের সমান ভালোবাসা নিয়ে হাজির হতে পারি।তোমায় ছুয়ে দিতে বৃষ্টির ফোটা সেজে তোমার হৃদয়জমিনে জায়গা করে নিতে পারি।তোমার জন্য সকল দুঃখকে বির্সজন দিয়ে প্রান খুলে হাসতে পারি। সবটা যখন পারি। যারা তোমায় এত কষ্ট দেয় তাদেরো আমি শাস্তি দিতে পারি….!
হ্যা আমি শাস্তি দেবো ঠিক তাদের প্লানিং মতো তাদের আমি শাস্তি দেবো।
কিছুক্ষন পরেই একটি কার আর একটি মস্ত বড় ট্রাক এসে দাঁড়ায়।কারের ভেতর সাইফ আর নাজিমের হাত পা বেধেঁ রাখা হয়েছে।ঈশান তাদের কাছে এগিয়ে গিয়ে জানলা দিয়ে উঁকি দিয়ে বলে,
” যানিস, আমি তোদের ক্ষমা করেছিলাম। তোদের অন্যায় গুলোর তুলনায় ঠিক কম শাস্তি দিতাম। কারন তোদের জন্য ঈশাকে ২য় বারের মতো খুযে পাই।কিন্তু শেষ বার যা করলি এটার মাফ নেই।তাই সিধান্ত নিয়েছি তোদের ঠিক তোদের মত করেই শাস্তি দেবো।তোরা ফিল কর সেই মূহুর্তে আমাদের কেমন লেগেছিল।গুড বায় ডিয়ার..!ওপারে ভালো থাকিস..!
ঈশান বাকা হেসে সরে আসে।এদিকে নাজিম আর সাইফ নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে যায়।ঈশান কিছুটা দূরে গিয়ে তার গাড়ির সাথে হেলাম দিয়ে দাঁড়ায়।ঈশানের ঈশারা করার সাথে সাথে ট্রাকটি নাজিম আর সাইফের কারটাকে জোরে আঘাত করে সঙ্গে সঙ্গে গাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে নদীতে পড়ে যায়। আর ঈশান তার চোখ বন্ধ করে নেয়।মুখ দিয়ে বিড়বিড় করে বলে,
” যেমন কর্ম তেমন ফল..!
ঈশান আশে পাশে পরখ করে দ্রুত গাড়িতে উঠে আবারো রওনা হয় নিজের বাড়ির উদ্দেশ্য।
…..কেটে গেছে এক সাপ্তাহ। এই এক সাপ্তাহ ঈশান হন্য হয়ে ঈশার পরিবারকে খুজেছে অবশেষে পেয়ে যায়।ঈশার নানার বাড়ির সাথে এখন ঈশাদের পরিবারের স্বাভাবিক সম্পর্ক।কিন্তু ঈশানের মা ফিরে পায়নি তার পরিবার।ঈশানের বড় খালামনি ঈশানের ২১ মাস থাকা কালিন গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা যায়। আর বাকি ছিল নানা নানি।কিন্তু তাদের কাছে পাওয়ার সময় পেলোনা ঈশান! তার আগেই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন তারা।
এই এক সাপ্তাহ সব কিছু কিছুটা আগের মতো ফিরে এসেছে।ঈশান আবারো সবটা ব্যবস্থা করে ঈশাদের আগের ফ্লাট ফিরিয়ে নেয়।সেই ফ্লাটে ঈশার ছোট বেলার স্মৃতি সেই ফ্লাট কি করে ছাড়বে ঈশান। ঈশার মা তার কাজের জন্য অনুতপ্ত কিন্তু ঈশা সবকিছু ভুলে সবাইকে আগের মতো মানিয়ে নিয়েছে।সব কিছু ঠিক ঠাক আগের রুপে ফিরে আসলেও ঈশান ফিরে আসেনি।সে ঈশাকে কিছুতেই কাছ ছাড়া করেনা।ঈশাকে তার বাড়িতে রেখে দিয়েছে।ঈশাকে নিয়ে ঈশানের ভয় যেন মন মস্তিষ্কে গেথেঁ গেছে।ঈশা অনেক বার বুঝিয়েছে তার বাবা মায়ের কাছে এবার ফিরে যাওয়া দরকার।আবার বিয়ে হলে তখন সম্পূর্ণ অধিকার নিয়ে ফিরবে এই বাড়িতে কিন্তু ঈশান এক কথার মানুষ। সে যে ঈশার ডান হাতটা ধরেছে আর ছাড়ার নাম নেই। তার কথা ঈশার সাথে তার বিয়ে হয়েছে এই বাড়িতে থাকতে তাহলে সমস্যা কি?আর ঈশা বেশির ভাগ সময় সুলতানাকে সঙ্গ দেয় কারন স্বামি দূরে যাওয়ার শোকে তিনি কাতর।ভালো হোক মন্দ হোক সংসার জীবনের এতটা সময় পার করে এসেছে সেই মানুষটার সাথে ভুলবে কি করে তাকে?
গল্পটি লেখনীতে পলি আনান।
সব মিলিয়ে ঈশান কিছুতেই ঈশাকে ছাড়ছেনা।সেদিন ঈশা যখন রাগ করে ঈশানের সাথে ইচ্ছে করে ঝগড়া করতে যায় কিন্তু ঈশান ঈশার ফন্দি বুঝতে পেরে সবটা উড়িয়ে দেয়।
” ঈশান!
“,হুম।
” আমার না কেমন কেমন লাগছে (চোখ ছোট করে)
“কেমন লাগছে তোমার শরীর খারাপ করছে, মাথা ব্যাথা নাকি পেটে ব্যাথা কি সমস্যা বলো(অস্থির হয়ে)
” আরে না, তুমি এত পাগল হয়ে যাচ্ছো কেন।আমি তো বুঝাতে চেয়েছি বিয়ের আগে এই বাড়িতে থাকতে আমার কেমন কেমন লাগছে। আমি আমার বাসায় ফিরে যাই প্লিজ।
“না হবে না,অন্য কোন কথা থাকলে বলো?
” তুমি আমার কথাটা একবার বোঝার চেষ্টা কর?
আমি আর অনু আজ চলে যাবো বিয়ের তো আর বেশিদিন নেই আমি না হয় পরিবারের সাথে কয়েকদিন থেকে আসি!এইভাবে থাকলে লোকে কি বলবে?
” লোকে কি বলবে মানে?তুমি যে আমার থেকে এতটা দূরে ছিল এতটা বছর তোমায় দেখিনি পুরো মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলাম। তখন কি তোমার লোকে এসে আমার সিমপ্যাথি দেখিয়েছে নাকি তোমায় খুজতে সাহায্য করেছে, তাহল আমি
লোকের কথা কেন ভাববো?আমি তাদের খাইও না পড়িও না সো আমাকে এইসব লেইম কথাবার্তা বলবে না।যদি আবারো হামলা করে যদি আমি আবারো তোমাকে হারাই!তোমাকে হারানোর ভয় যে আমার ভেতরটা ছিন্ন ভিন্ন করে দিচ্ছে তুমি কি বুঝনা?অনু অবিবাহিত মেয়ে এই বাড়িতে থাকতে তো তোমার মত প্যান প্যান করে না তাকে আমি একবার সবটা বুঝিয়ে দিয়েছি সে বুঝতে পেরেছে, আমাকে ভালো না লাগলে মায়ের কাছে যাও!
“মা ঘুমিয়ে গেছে!
“তুমি ঘুমবে আসো ঘুম পাড়িয়ে দি..!
“এখন রাত নয়টা বাজে এই সময় ঘুমাবো(চোখে উল্টে)
” তো কি হয়েছে। তোমার তো এখন আর আমায় ভালো লাগে না শুধু পালাই পালাই করো?
ঈশা বুঝতে পেরেছে ঈশানের একটু হলেও বিষয়টা খারাপ লেগেছে তাই সে রাগ ভাঙ্গাতে ঈশানের কোলে শুয়ে পরে।
“আমার চুল গুলো টেনে দাও!
” কেন মাথা যন্ত্রনা করছে?
“না তো তুমি যন্ত্রনা করছো,বক বক করে মাথাটা খেয়ে দিয়েছো।
ঈশার কথার ভাব ভঙ্গি দেখে ঈশান হাসতে থাকে। আর আলতো করে ঈশার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মূহুর্তেই ঈশার চোখে নেমে আসে রাজ্যর ঘুম।ঈশান ঈশার দিকে তাকিয়ে থাকে অতীতের কিছু স্মৃতি।সত্যি অতীতটা মনে পড়লে ঈশানের কেন যেন কান্না পায়।
ছাদে দাড়িয়ে আছে অনু রাসেল।
” অনু আমাকে ছাড়া তোমার এতদিন কেমন লেগেছে?
“খুব ভালো একদম শান্তি, মন মেজাজ ফ্রি ছিল। তুমি তো আমাকে সব সময় বকা দাও!
অনুর থেকে এমন একটা উওর আশা করেনি রাসেল।চোখ ছোট করে অনুর দিকে তাকিয়ে বলে,
” এত বছরে আমাকে তাহলে ভুলে গেছো?ফিলিংস শেষ তোমার আমার প্রতি।
“হ্যা অবশ্যই শেষ। এত দিনে নতুন একজনকে কাছে টেনে নেওয়াটাই বেটার ছিল।তোমাকে হয়তো বিয়েটাও করবো না। দেখা যাক কি হয়।
অনু ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে যেতে নিলেই রাসেল পেছন থেকে হেঁচকা টেনে রেলিঙের সাথে অনুর হাত মুচড়ে ধরে।
” এত সোজা না জান! আমাকে ছেড়ে পালিয়ে যাবে। প্রয়োজনে হাত পা বেধে রেখে দেবো! দেখি কোথায় পালাও, তোমাকে হারানোর শোকে আমি পাগল হয়ে গেছিলাম।ঈশানের সামনে নিজেকে ঠিক রেখে বাইরে চিৎকার করে কেদেছি।ঘুমের ওষুধ ছাড়া একটা রাতো ঘুমাই নি! পাগলের মত তোমার মেসেজের অপেক্ষায় থাকতাম কিন্তু একটা নিদিষ্ট সময় পর আর আমাকে মেসেজ দিলে না।আর এখন পালিয়ে যাবি এত সোজা না। (চোখ রাঙ্গিয়ে)
অনু ড্যাবড্যাব করে রাসেলের দিকে তাকিয়ে আছে।ছেলেটা হুট হাট এত রাগ দেখায় অনু নিজেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।
“আমি তো ফান করছিলাম তুমি সিরিয়াস ভাবে নিলে কেন(ঢোক গিলে)
” ফান করো আর যাই করো কখনো আমায় ছেড়ে যাওয়ার কথা বলবে না আর যদি এমনটা শুনি অন্যকোন মেয়েকে বিয়ে করে এনে ঘরে তুলবো।
অনু তার হাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে রাসেলে কলার টেনে বলে,
“সেইদিন আমি তোর ঘরে আগুন লাগিয়ে সব ঝলসে দেবো(চোখ রাঙ্গিয়ে)
” তোমাতে তো আমি আগেই জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছি আর কত জালাবে তুমি?
“এত কিছু আমি যানি না, এত কিছু আমি মানিনা।তুমি বলো শুধু আমায় ভালোবাসো?
“হ্যা তোমায় ছাড়া আমি আর কাকে ভালোবাসবো আজব! শুরু তুমি আর ইনশাআল্লাহ শেষটাও তুমি হবে।
রাসেল এক ঝটকায় অনুকে টেনে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।
” ভালোবাসি (ফিসফিস করে রাসেল)
“,আমি তোমার থেকেও বেশি ভালোবাসি তোমায়….!
ঈশা ঈশানের বিয়ে আর চারদিন বাদেই সকল ব্যস্ততার মাঝে ঈশান পরখ করে আজকের পরিবেশটা শীতল, হালকা বাতাস আকাশে মস্ত বড় গোল চাঁদ।তারাদের মেলা সব মিলিয়ে এমন একটা রাতের অপেক্ষায় ঈশান ছিল।
ঈশা অনুর সাথে কথা বলছি তখনি ঈশার ফোনে ঈশান মেসেজ করে, লেখাছিল!
” আমার রুমে এসো, জরুরি কথা আছে!
ঈশা তাড়াতাড়ি ঈশানের রুমের দিকে পা বাড়ায়।ঈশান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাটের হাতা ভাজ করছে ঈশাকে দেখেই তার দিকে ঘুরে দাঁড়ায় ভালো করে পরখ করে বলে,
“না চেঞ্জ করার দরকার নেই সব ঠিক ঠাক(বিড়বিড় করে)
” আমাকে ডেকেছো কেন আর কি বিড়বিড় করছো?
“আমরা বের হবো,চলো.
” মানে কি এত রাত, ঘড়ির দিকে তাকাও সাড়ে এগারোটা বাজে।
“তো?বের হবো মানে বের হবো। এত অবাক হওয়ার কি আছে।যত রাত হোক আজ বের হবো।
“কোথায় যাবো আমরা?
“এত প্রশ্ন করো কেন ঈশা রানী।আমি রেডি। চলো এবার।
” তো আমি রেডি হবো না?(অবাক হয়ে)
“তুমি যেমনটা আছো তেমনটাই ঠিক। এবার চলো।
ঈশা ঈশান গাড়িতে করে তাদের যাত্রা শুরু করে।কিছুক্ষন পর ঈশান হুট করেই ঈশার চোখ বেধেঁ দেয়।
” আরে চোখ বাধলেন কেন?
“সারপ্রাইজ?!
গল্পটি লেখনীতে পলি আনান।
ঈশান গাড়ি থামিয়ে ঈশাকে নামতে সাহায্য করে। ঈশার কানে আসে ঝি ঝি পোকার ডাক তার বুঝতে আর বাকি নেই সে কোথায় এসেছে।মূহুর্তেই তার সারা শরীরে একটা শিহরন বয়ে যায়।বুকের ভেতটায় ধুক ধুক শব্দ বেড়ে যায়।ফিরে আসে সেই সাড়ে তিন বছর আগের শেষ স্মৃতিতে।ঈশান তাকে মাঝ উঠানে দাড় করিয়ে চোখের বাধন খুলে দেয়।ঈশান লক্ষ্য করে ঈশার দুচোখ চোখের জলে ভেসে গেছে।মানে কি ঈশা কাদছে!
” ঈশা কি হয়েছে আমি কি বেশি জোরে রুমাল বেধেছি?কাদছো কেন?(অস্থির হয়ে)
ঈশা ঈশানকে চট করে জড়িয়ে ধরে আর ডুকরে কেদে উঠে।চারিদিকে স্তব্দ ঝি ঝি পোকার ডাক তার উপর ঈশার ডুকরে কান্নার শব্দ পরিবেশটা কেমন গা ছম ছমে হয়ে গেছে।ঈশান ঈশার মাথাটা তুলে,
“কাদছো কেন ঈশু বলো আমায়?
” এএ এখানে আমাদের শেষ স্মৃতি ছিল এখানেই দাড়িয়ে আমি তোমার সাথে শেষ কথা বলেছিলাম নিজের অনুভূতি গুলো প্রকাশ করেছিলাম।
“আমি যানি তাই তো তোমাকে আবারো নিয়ে এসেছি।এবার শান্ত হও! এবার না হয় আবারো উপভোগ করো।
ঈশান আর ঈশা ঘরের সামনে বেলকোনিতে বসে পরে।ঈশা ঈশানের কাদে মাথা রেখে পরিবেশটা পরখ করতে থাকে। সেই ঝি ঝি পোকার ডাক সেই জোনাক সব আছে আকাশের চাঁদ টাও আছে ঈশা-ঈশান ও আছে। সব কিছুতে আজ আবারো পরিপূর্ণ পরিবেশটা।
” ঈশান..
“হুম.
” আচ্ছা আমাকে তুমি কি করে পেলে? মানে অনুকে কি করে খুজে পেলে সেই কথা গুলো এখনো বলো নি আমায়।
ঈশান ঈশাকে বিয়ে বাড়ির কথাটি বলে, তখনি ঈশা চমকে বলে,
“হ্যা আমি ঝোপের আড়ালে কিছুএকটা পড়ার শব্দ পেয়েছিলাম তারপর আমি দ্রুত নিকাব পড়ে সেখান থেকে সরে আসি।কিন্তু পরে খুজে পেলে কি করে?
” সেদিন অনুকে রাসেল কিডন্যাপ করে নিয়ে আসে সিলেটের সেই বাড়িটাতে।মেয়েটা সেদিন অনেক কেদেছে আমাদের আবার দেখতে পাবে কোন দিন ভাবেনি সে।আমি যখন তোমাদের আড়াল হওয়ার কারন যানতে চেয়েছি শুরু থেকে শেষ মেয়েটা শুধু একটাই কথা বলেছে,
“আমি শুধু ঈশাকে আপনাদের সামনে এনে দাড় করাবো আপনারা তার কাছে থেকেই যেনে নিবেন।
“তুমি বললে কি সমস্যা অনু?আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই। (ঈশান)
“আমি ঈশার কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কিছুতেই আমি বলতে পারবো না।
” আমার কসম তোমায় প্লিজ বলো!
“ঈশান ভাই আপনি আমাকে কেটে টুকরো টুকরো করে দিন তবুও আমি কিছুতেই সত্যিটা বলতে পারবো না।আমি শুধু ঈশাকে ফিরিয়ে দেবো যা যানার আপনি যেনে নিবেন।
“সত্যি যানো ঈশা, মেয়েটার মুখ থেকে আমি আর রাসেল কোন কথা বের করতে পারিনি সেদিন।তুমি খুব ভাগ্যবতী অনুর মতো বন্ধু নিজের জীবনে পেয়েছো!
” তা আমি যানি।অনুকে আমি সেই ছোট থেকে দেখে আসছি মেয়েটা আমার প্রতি ভিষন দূর্বল।তুমিও কম ভাগ্যবান না রাসেল ভাইয়ের মতো বন্ধু তোমার জীবনে আছে। যে ভালোবাসা ত্যাগ করে নিজের বন্ধুত্ব রক্ষা করেছে।
“যানো সে আমার জন্য নিজকে পাথর বানিয়ে ছেড়েছে।যেখানে আমি দিনের পর দিন ভেঙ্গে পরেছি সেখানে সে আমাকে আমার বিজনেসকে সমান তালে সামলে গেছে আমি তার ঋন কোন দিন শোধ করতে পারবো না।
গল্পটি লেখনীতে পলি আনান।
কিছুক্ষন পর ঈশান মুচকি হেসে আবারো মাঝ উঠানে দাঁড়ায়।ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
” দেখো ঈশা চারিদিকে জোনাকিরা কেমন খেলা করছে আর আজ আকাশে মন মরা সরু চিকন চাঁদ নেই আজকের আকাশে বিশাল মস্ত বড় চাঁদ।আজ তারার সংখ্যাও দ্বিগুণ।
ঈশা গুটি গুটি পায়ে ঈশানের সামনে দাঁড়ায়।ঈশান একটি চাবি নিয়ে ঈশার সামনে হাটু ভেঙ্গে বসে।
“এই বাড়িটা এখন আমাদের ঈশা। আমি এই বাড়িটা তোমার জন্য উৎসর্গ করলাম।এই বাড়িটাতে আমাদের জীবনে কালো অধ্যায়ের মাঝে একচিলতে আলোর কিছু অসাধারন মূহুর্ত জড়িয়ে আছে।জড়িয়ে আছে দুজন দুজনকে ছেড়ে না যাওয়ার প্রতিজ্ঞা এই পরিবেশটা সাক্ষি আছে আমাদের নিঃশ্বার্থ ভালোবাসার।যানো ঈশা আমি আজ খুব খুশি আর নিজের মাঝে খুব প্রাউড ফিল হচ্ছে কারন তুমি আমার জীবনে ফিরে এসেছো। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করলেও কম হয়ে যাবে কারন তোমায় আমার জীবনে আবারো ফিরিয়ে দিয়েছে।
এখন থেকে এই মূহুর্ত থেকে এই পরিবেশটাকে আবারো সাক্ষি রেখে বলছি,
তুমি আমার!চিরদিনেই আমার!আর সব সময়েই আমার!
Im so happy, because you are in my life.please don’t leave me..!
ভালোবাসি তোমায় ঈশানের জীবন, আত্না, মন, হৃদয়হরনী ঈশা….।ভালোবাসি তোমায় বোকা জান….!
ঈশা স্তব্দ হয়ে তাকিয়ে আছে।সে হাটু মুড়ে ঈশানের সামনে বসে চাবিটি নিজের হাতে তুলে নেয়।তারপর দুই হাত আগলে ঈশানকে দাড় করায়।ঈশা নিজের পায়ের জুতো খুলে ঈশানকেও ঈশারা করে পায়ের জুতো খুলতে।ঈশান হতভম্ব হয়ে জুতা খুলে। ঈশা এবার সবচেয়ে অবাক করা কান্ডটি করে বসে।ঈশানের খালি পায়ের উপর দাঁড়িয়ে তার ঘাড় দুই হাত দিয়ে আকড়ে ধরে। তিরতির করে কাপতে থাকা ঠোট দুটো ঈশানের ঠোটে মিশিয়ে দেয়।ঈশান স্তব্দ হয়ে গেছে জমে গেছে।এই সহ দ্বিতীয় বার ঈশা নিজের থেকে ঈশানের সামনে নিজেকে সম্মোহন করেছে।ছেড়ে যাবার আগে একবার ছাদে শুধু জড়িয়ে ধরেছিল।এবার ঈশান বুঝতে পেরে ঈশাকে জড়িয়ে নেয়।জোনাকি পোকারা আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে, ঝি ঝি পোকারা ডেকে যাচ্ছে, চাঁদ তার আলো আলোকিত করে যাচ্ছে, শীতল বাতাস বয়েই চলছে শুধু দুটো মানুষের অনুভুতিরা থমকে গেছে।বুকের ভেতরটায় চলছে উথাল পাথাল ঢেউ।
ঈশা ঈশানকে ছেড়ে ঈশানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
“বুঝে নিও প্রিয়, আমিও ভালাবাসি……!
#চলবে…..
দুঃখিত গত কাল দিতে পারিনি তাই আজ বড় করে দিলাম।
এবারের মতো ঈশা ঈশানকে বিদায় দিতে প্রস্তুত হয়ে যাও। তোমাদের আর অপেক্ষায় থাকতে হবে ঈশা ঈশানের জন্য। কালকেই হয়তো you are mine season 2 এর শেষ পর্ব দেবো।
আজকে একটু গঠন মূলক মন্তব্য করবেন প্লিজ।নিরব পাঠকরা একটু সাড়া দিয়েন।
?গল্পটি কেমন হয়েছে অবশ্যই যানাবেন।
?হ্যাপি রিডিং….!