#বিচ্ছেদময়_সুখ — [৫]
মুনিয়া মিরাতুল নিহা
?(অন্য কোথাও কপি নিষিদ্ধ) ?
__________________________
-‘ কি হলো মিরা? এভাবে দূরে ছিটকে সরে গেলে কেনো তুমি? এইতো একটু আগে আমাকে ভালোবাসি বলছিলে তাহলে এখন এরকম আচরন করছো কেনো? ‘
রুহিনের রেশ কাটলো তন্ময় ভাইয়ার কথা শুনে! উনি এখানে এসেছে কেনো রুহিনকে না পাঠিয়ে? না-কি রুহিন ওনাকে পাঠিয়েছে! কিছুই বুঝতে পারছি না।
-‘ এই জায়গায় কি আদৌ আপনার থাকার কোনো কথা ছিলো তন্ময় ভাইয়া? ‘
-‘ তো আমার বাড়ি আমার সবকিছু আমি থাকবো না? রুহিন ভাইয়াই তো আমাকে এখানে পাঠিয়েছে। ‘
তন্ময়ের কথায় বুকের চা’পা কষ্টটা এবার আর বাধঁ মানলো না, অশ্রু কনারা গড়িয়ে পড়তে লাগলো গাল বেয়ে তার মানে রুহিনই তন্ময়কে এখানে পাঠিয়েছে! কিন্তু রুহিন কি জানতো না আজকে আমি ঠিক কি উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে এসেছি?
-‘ মানে রুহিন আপনাকে এই জায়গায় আসতে বলেছে তাই না? উনি নিজে না এসে। ‘
-‘ হ্যাঁ তাই তো। ভাইয়া যখন বুঝেছে আমি তোমাকে ভালোবাসি তো সে আমাকে এখানে তোমার কাছে পাঠিয়ে দিয়ে বললো চলে যা ওখানে মিরা অপেক্ষা করছে, আর আমিও চলে আসি। তারপর চলে আসার পর তুমি ভালোবাসি বললে আমাকে!’
যে মানুষটার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম তার বদলে অন্য কেউ এসে বলছে ভালোবাসি! এটা কি মেনে নেওয়া সম্ভব?
-‘ ভালোবাসি আমি আপনাকে? হুহ্ এটা কোনোদিনও না এই কথাটা ভালো করে নিজের মা’থা’য় ঢুকিয়ে নিন মিঃ তন্ময়। রুহিন আমার সঙ্গে বে’ঈ’মানি করলো তো কিন্তু আমি সেরকম না। একজনকে ভালোবেসেছি তো সেই একজনকেই নিয়ে থাকবো আমি। ‘
-‘ মিরা আমার কথাটা তো শোনো, আমি সত্যিই ভালোবাসি তোমাকে। আমার ভালোবাসা কোনো অংশে কম না। একটিবার বিশ্বাস করো। আমার চেয়ে সুখী আর কেউ রাখবে না তোমাকে। ‘
তন্ময়ের কোনো কথা শোনার প্রয়োজনবোধ করলাম না আমি। চলে এলাম সেখান থেকে। যাবার সময় ঘর জুড়ে সেই কালো গোলাপে সাজানো সবকিছু আরো একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। কি এমন হতো যদি আজকে সবটা ঠিক থাকতো? খুব কি খা”রা’প হতো? কত্তো আশা নিয়ে এই লাল রঙের শাড়ি, চুড়ি, পড়ে সেজে এসেছিলাম! নিজের টাকা জমিয়ে রুহিনের জন্য আজকে আংটি কিনেছিলাম শুধু উনার জন্য! এই সব কিছুর আনন্দ শুধু রুহিনকে ঘিরেই ছিলো অথচ রুহিন কি করলো আমার সঙ্গে? সকল আনন্দ এক মুহুর্তে বি’র’হের কষ্টে পরিনত করে দিয়ে আমাকে একলা রেখে উনি চলে গেলেন,
বাড়িতে এসেই দরজা বন্ধ করে বিছানায় বসলাম। গায়ের এই লাল রঙের টুকটুকে শাড়িটা দেখে বিরক্তিকর লাগছে! এই সাজসজ্জা তো রুহিনের জন্যই ছিলো কিন্তু সে আসেনি তাহলে এগুলা রেখেই বা কি হবে? গা থেকে শাড়িটা খুলে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিলাম। গায়ে বরন করে রঙহীন সাদা রঙের একটি থ্রিপিস! যেখানে সবকিছুই ধূসর সাদা রঙের! নেই কোনো উজ্জ্বলতা, নেই কোনো রঙ বে রঙের মিশ্রন! সাদাই রয়ে গেলো জীবনের পাতা টুকু। এই সাদাতেই যদি রুহিন এসে রঙিন করে দিতো কি হতো? সবটাই ভাগ্যের নিয়তি! আজকে রাত্রে ঘুমানোর খুব প্রয়োজন। প্রচুর ঘুমাতে হবে কিন্তু এরকম ভী’বি’ষীকা ময় দিন কাটিয়ে চোখজোড়ায় কি ঘুম নামক জিনিশ আসবে? হয়তো না তাই তো আপন করে নিলাম কয়েকটি ওষুধকে!
মিরা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে, ঘুমানোর আগে মা’কে বলে দিয়েছে যাতে ডির্স্টাব না করে সে প্রচুর ক্লান্ত। রুহিনও ছাঁদের খোলা আকাশের নিচে বসে আছে হাতে জ্ব’ল’ন্ত সি’গা’রেট নিয়ে! সে পারছে না চি’ৎ’কার করে কেঁদে মনের কষ্টগুলো হালকা করতে যার জন্য এই অন্ধকার রাত্রি আর বি’ষা’ক্তময় জিনিশকে আপন করে নিয়ে বি’ষা’ক্ত ধোঁয়া উড়াচ্ছে আকাশে! এই নীল আকাশে যেরকম বি’ষা’ক্ত ধোঁয়া ছেড়ে সে বি’ষা’ক্ত করে দিয়েছে তেমনি তার জীবনখানিও এরকম বি’ষা’ক্ত হয়ে গেছে! কবে কাটবে এরকম বি’ষা’ক্ততার রেশ! মিরার থেকে দূরে থেকেও তো তার এতোখানি কষ্ট হয়নি আজকের মতন।
কোন খেয়ালে ফোন দিলো মিরার ফোনে কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে। ঘন্টা খানেক পর পুনরায় চেষ্টা করলো কিন্তু প্রতিবারের ন্যায় এবারেও ফোন বন্ধ বলছে! এবার রুহিন বেশ ঘাবড়ে গেলো! মিরা বড্ড ছেলেমানুষ বয়সে বড়ো হলেও ছেলেমানুষী স্বভাব এখনো কাটেনি মিরার ভেতর। রুহিন বেশ ভালো করেই জানে সে স্কুলে থাকতে মিরা রুহিনের কাছে নানান রকম আবদার, কথা সবকিছু বলতো রুহিন তখন ছেলেমানুষী ভেবে পাত্তা দেয়নি কিন্তু এখনো এতোবছর পরেও যখন রুহিন দেখলো মিরার অনুভুতি ঠিক আগের মতনই আছে তখন রুহিনও উপলব্ধি করেছে মিরা তাকে ভালোবাসে। আর আজকে সবটা প্রকাশ করার কথা ছিলো কিন্তু রুহিন যায়নি তন্ময়ের কথা ভেবে তাহলে কি মিরা সেজন্য কিছু করে বসলো? রুহিনের চিন্তা ক্রমশো বেড়ে চলেছে। মিরাদের বাড়িতে ফোন দিয়ে জানতে পারলো মিরা ঘরে ঘুমাচ্ছে! কিন্তু রুহিন স্থির থাকতে পারলো না তাও। এই চিন্তায় চিন্তায় গোটা রাতটুকু পেরিয়ে গেলো যেনো চোখের নিমিষেই! ভোর হতেই রুহিন মিরাদের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলো।
-‘ আন্টি মিরা কোথায়? ‘
-‘ রুহিন তুমি এসেছো? বসো বসো, আমি মিরাকে ডেকে দিচ্ছি এর আগে তুমি কিছু খেয়ে নাও। ‘
-‘ না আন্টি আপনি আগে একটু মিরাকে ডেকে দিন ওর সঙ্গে আমার একটু কথা আছে। ‘
মিরার মা মিরাকে ডাকতে গিয়ে দেখে দরজা আপনা থেকেই খোলা, মিরা এলোমেলো চুলে কেমন শান্ত দৃষ্টিতে বসে আছে, যা মিরার মায়ের কাছে বোধগম্য হলো না। তিনি বরাবরই মিরাকে চঞ্চল দেখে আসছে আজকে এইরকম নিরবতা দেখে মোটেও সুবিধা বোধ করলো না!
-‘ তুই এভাবে আছিস কেনো? কলেজে যাবি না?’
-‘ আমি ঠিকআছি মা! চিন্তা করো না কেনো এসেছো?’
-‘ নিচে আয়।’
মিরাকে নিচে আসতে বলে মিরার মা রান্নাঘরে চলে গেলো রুহিনের জন্য খাবারের বন্দোবস্ত করতে।
মিরা ড্রয়িং রুমে যেতেই পা জোড়া যেনো থমকে গেলো! দৃষ্টি গিয়ে নিক্ষেপ হলো সেই কাঙ্ক্ষিত মারুষটির দিকে! অন্য সময় হলে মিরা কি করতো নিজেও জানতো না কিন্তু আজকে সে স্থির! সকল চঞ্চলতা যেনো তার হ্রাস পেয়েছে! রুহিন সরাসরি তার বাড়িতে চলে আসবে মোটেও ভাবেনি সে।
-‘ আপনি এখানে কেনো এসেছেন?’
-‘ তুমি ফোন কেনো বন্ধ রেখেছিলে? আমি কতো চিন্তা করছিলাম জানো কি?’
-‘ আপনি কি কিছুই জানেন না?’
রুহিন অবস্থা বেগতিক বুঝে মিরার মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মিরাকে নিয়ে একটু বাইরে বেরিয়ে গেলো। বাইরে বলতে একটা ছোট্ট পার্কের কাছে নিয়ে গেলো মিরাকে! মিরার মা-ও বাঁধা দেয়নি রুহিনকে কারন জানে রুহিন কেমন।
-‘ এইবার বলো কি হয়েছে তোমার কালকে রাত্রে?’
-‘ যা হওয়াতে চেয়েছিলেন আপনি সেটাই হয়েছে। ‘
-‘ স্পষ্ট করে বলো মিরা ফোন কেনো বন্ধ করে ছিলে সারারাত?’
-‘ আপনি কি কিছুই বুঝতে পারছেন না!’
রুহিনের বাকশক্তি বোধহয় এবার যেনো বন্ধ হয়ে গেলো। কোনো কথা বলতে পারছে না, বলবে কি করে কোনো কিছুর বলার মতন পরিস্থিতি কিংবা মুখ কোনোটাই যে নেই তার। তাই চুপ করে রইলো। মিরা বেশ সুক্ষ্ম ভাবে রুহিনকে পর্যবেক্ষন করলো, একরাত্রেই চোখের নিচে কা’লি পড়ে গেছে! চোখগুলো কেমন লা’ল হয়ে গেছে যেনো সারারাত ঘুমায়নি। অথচ সত্যিতো এটাই রুহিন সারারাত ছটফট করেছে মিরার কথা ভেবে। আর মিরা সকল যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছিলো।
-‘ কেনো করলেন এরকম?’
মিরার কথা শুনে রুহিন মা’থা তুলে তাকালো মিরার দিকে । মিরার শান্ত দৃষ্টির ভাষা রুহিন বুঝতে পারছে না আপাততো।
-‘ তন্ময় তোমাকে ভালোবাসে মিরা! ওর ভালোবাসা সত্যি তুমি ওর সঙ্গে সুখী থাকবে। ‘
-‘ আর আপনি? আমার সুখী থাকার কারন তো কেবল আপনিই! সেটার কি হবে বলুন তো? আমার সুখী থাকার কারন ছিনি’য়ে নিয়ে এখন বলছেন সুখী থাকতে? কেনো করলেন?’
-‘ মাঝে মাঝে অন্যের জন্য নিজের সুখকে বিলীন করতে মিরা, তুমি সেটা পরে বুঝবে হয়তো একদিন। আর আমি যদি সত্যিই তোমার সুখী থাকার কারন হই তাহলে তুমি নিজের খেয়াল রাখবে আমিও ভালো থাকবো।’
রুহিনের কাছে দেবার মতন কোনো উত্তর নেই। আপাততো মিরাকে সামলানো তার কাছে কষ্টকর হয়ে ওঠবে। নিজেকেও কন্ট্রোল করতে পারবে না সব মিলিয়ে এরকম দম বন্ধকর অবস্থা রুহিন সামলাতে পারবে না! চলে গেলো মিরাকে ফেলে।
—————
চলে গেলেন রুহিন? আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই চলে গেলেন আপনি? কেনো করলেন এমন? এই প্রশ্নের উত্তর কি আদৌ মিলবে না? কিন্তু আমার এতো দীর্ঘ অপেক্ষা, ভালোবাসা এসব তো মিথ্যা হতে দিবো না আমি সে আপনি কারন না বললেও আমি ঠিক খুঁজে নিবো কি হয়েছিলো আপনার সেই সময়ে? বাড়িতে যাবার সময় চোখ গিয়ে পড়লো তিশার উপর! তিশাও এদিকে আসছে। তিশাকে দেখে আমার প্রশ্ন আরো এক ধাপ সামে এগিয়ে আসলো। এবার বুঝতে পারবো উনি কি তিশাকে ভালোবেসে এসব করলেন না-কি অন্য কিছু রয়েছে যা আমি জানি না!
#চলবে?
[ একটু ধৈর্য্য ধরুন গল্পের মোড় ফিরবে, এক পর্বেই সব সমাধান নয় একটু ধৈর্য্য ধরুন শুধু। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করুন, আল্লাহকে স্মরন করুন, আসসালামু আলাইকুম সবাইকে]