বিচ্ছেদময় সুখ পর্ব ৪

0
425

#বিচ্ছেদময়_সুখ — [৪]
মুনিয়া মিরাতুল নিহা
?(অন্য কোথাও পোস্ট নিষিদ্ধ)?
________________________

ঘুম থেকেই আজকের সকালটা যেনো রঙিন লাগছে। মনে বেশ আনন্দের রং লেগেছে। সে আনন্দের রেশ জুড়ে শুধু একটাই নাম রুহিন! অবচেতন মন কেবল সকাল থেকে তারই কথা ভেবে চলেছে এক মনে কি এমন বলবে সে? কথাটা কালকে বললে কি হতো? এতো ভেবে ভেবে আমার মা’থা নষ্ট হতো না নিশ্চয়ই? কিন্তু বলেছে যখন বিকেলে যেতে তো আমি যাবই যে করেই হোক! আপাততো কলেজটা সেড়ে আসি।

কলেজ থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে ঘড়ির কাটা টিকটিক করে জানান দিলো তিনটে বেজে গেছে, আমিও যাবার জন্য রেডি হতে লাগলাম। লাল রঙের একটা শাড়ি পড়েছি দু হাত ভর্তি লাল দু মুঠো চুড়ি। ঠোঁটে গাঢ়ো করে লাল লিপস্টিক, আর চুলগুলো খোঁপা করা, ব্যস আমার সাজ কমপ্লিট একেবারে। এবার শুধু সময় মতন জায়গায় পৌঁছে যাবার পালা।
————————–

আয়নায় বারংবার দেখে দেখে নিজেকে সুন্দর করে রেডি করে নিচ্ছে রুহিন। যতোই হোক সে আরো অনেকবার মিরাকে দেখেছে কথা বলেছে কিন্তু আজকের দিনটি তার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ! এতোদিন মিরাকে নিজের কাছ থেকে দুরে সরিয়ে রেখেছে এক পরিক্ষার কারনে সে পরিক্ষায় মিরা উর্ত্তীনও হয়েছে। এবার আর কোনো বাঁধা নেই বলতে সে-ও মিরাকে ভালোবাসে! শুধু তিশাকে দিয়ে মিথ্যা না’টক করেছিলো এটা বুঝতে মিরাকি তার ছেলেমানুষি? নাকি সত্যিই ভালোবাসা? মিরাও সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে সে রুহিনকে বড্ড ভালোবাসে, তাই তো রুহিনও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে বলে দিবে মনের অব্যাক্ত কথা,

-‘ কিরে ভাইয়া? কোথাও কারো সঙ্গে দেখা করবি বলে মনে হচ্ছে এতো সেজেগুজে রেডি হচ্ছিস যে?’

তন্ময়ের ডাকে পিছন ফিরে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে রুহিন তন্ময় কে জবাব দেয়,

-‘ হ্যাঁ রে ভাই আজকের দিনটি যে বড্ড স্পেশাল। আজকে আমি আমার প্রিয় মানুষটির সঙ্গে প্রথমবারের মতন দেখা করতে যাচ্ছি, তাকে মনের অব্যাক্ত কথা প্রকাশ করতে যাচ্ছি যে।’

-‘ তার মানে তুই কাউকে ভালোবাসিস! ‘

-‘ হুম তবে সেটা আজকে নয়, সে-ই আরো বছর খানেক আগে না চাইতেও তাকে ভুলতে পারিনি, মনের একটা বড়ো জায়গা সে দখল করে নিয়েছে। ‘

-‘ ঠিক আমার মতন! ‘

তন্ময়ের অর্ধেক কথা শুনতে পেলো রুহিন। তবে যা বলেছে সেটা বোঝার মতন ক্ষমতা রুহিনের আছে! সে বুঝতে সক্ষম হলো তন্ময় কিসের কথা বলছে!

-‘ তার মানে তোরও কেউ আছে?’

তন্ময়ের ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে ওঠলো, বোধহয় লজ্জা পাচ্ছে সে যতোই হোক বড়ো ভাই তো? তবুও মুখ থেকে যখন বেরিয়ে গেছে সেটা তন্ময়ও ভালো করেই জানে তার ভাই না জেনে শান্ত হবে না।

-‘ হ্যাঁ ভাইয়া তোর মতনই আমারও এক প্রেয়সী আছে! তবে সে না বলা প্রেয়সী। তাকে কখনো বলা হয়ে ওঠেনি ভালোবাসি তোমাকে তাকে বলবো কি? আমি তো নিজেও এতোদিন বুঝে ওঠতে পারিনি তাকে ভালোবাসি। তার সঙ্গে হাসি ঠা’ট্টা করতে করতে কখন যে তাকে মনের গভীরে জায়গা দিয়ে দিয়েছি সে বুঝিনি কখনো, উপলব্ধি করেছি আজ থেকে ছয় মাস আগে যখন তাকে দেখতে পাইনি তখন বুঝেছি তাকে না পেলে আমার ঠিক কি রকম অবস্থা লাগে। ‘

-‘ আচ্ছা হয়েছে হয়েছে, বুঝেছি ভাই আমার পুরোই দিওয়ানা হয়ে গিয়েছে তার প্রেয়সীর জন্য। তোর এই লাভ স্টোরি পরে শুনবো আপাততো আমি যাচ্ছি নইলে দেরি হয়ে যাবে। ‘

—————————

-‘ কিরে? এতো সেজেগুজে কোথায় যাওয়া হচ্ছে তোর? ‘

যাওয়ার সময়ই মায়ের ডাক পড়লো! এখন কি বলবো মা’কে? কিছু তো একটা বলে বেরোতেই হবে যে করে হোক।

-‘ মা কিচ্ছু না, ওই লিপির সঙ্গে একটু ঘুরতে যাবো শেষ। ‘

মা’কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তড়িঘকরে বের হয়ে আসলাম বাড়ি থেকে। আসার সময় গাড়ি করে আসলাম যাতে তাড়াতাড়ি হয়। অতঃপর পৌঁছে গেলাম সেই কাঙ্ক্ষিত স্থানে। রুহিনরা সবাই ওই বড়ো বাড়িতেই থাকে কারন ওখান থেকে কলেজে যাতায়াতের সুযোগ সুবিধা বেশি। এই বাড়িতে আসে মাঝেমধ্যে তবে না আসেই বলা যায়। বাড়ির সামনেটাই অনেকটা সুন্দর করে বাগান করা আছে যেটা দেখলেই দু চোখ যেনো জুরিয়ে যায়। ওদের বাড়িটা দেখাশোনা করার জন্য করিম চাচা দিনের বেলায় সবসময়ই গেটের বাহিরে থাকে আর রাত্রে বেলা কোনো সময় সে বাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়ে। বাড়িটাতে মানুষজন না থাকলে ভেতরে প্রচুর দামি দামি আসবাবপত্র রয়েছে। করিম চাচা নেই মানে পুরো বাড়িটা ফাঁকা, তাতে কি হয়েছে? পুরো বাড়ি ফাঁকা হলেও আমার বিন্দুমাত্রও ভ’য় করছে না! কারন আমি জানি রুহিন ঠিক কি রকম। তাই ভাবনা চিন্তা না করে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করার জন্য দরজা খুললাম!
যেই না দরজা খুলেছি ওমনি দেখে আমার পায়ের সামনে কতোগুলো কালো গোলাপের পাপড়ি দিয়ে কি সুন্দর ফুলের রাস্তা তৈরী করা হয়েছে! এক মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ নয়নে সেই কালো ফুলের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। এই কালো রঙের ফুল যে রুহিনের বড্ড প্রিয়! তারপর সেই ফুলের রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটু সামনে এগোলাম সেখানে একটা চিরকুট কুড়িয়ে পেলাম যাতে লেখা ছিলো “এক মিনিট অপেক্ষা করো”
আমিও সেই ঠায় দাঁড়াতেই কতোগুলো লাল রঙের গোলাপ ফুলের পাপড়ি এসে আমার সর্বাঙ্গে পরশ দিয়ে গেলো! আমি বিমোহিতো দৃষ্টি নিয়ে সবটা দেখে যাচ্ছি, পুরো বাড়িটায় কালো আর লাল রঙের লাভ শেইপের বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে আর অজস্র কালো গোলাপের পাপড়ি তো আছেই! এই এতো কিছু দেখে আর বোঝার বাকি রইলো রুহিন ঠিক আমাকে কেনো ডেকেছে। উফ এত্তো খুশি লাগছে যা বলে বোঝাতে পারবো না আমি!

ওদিকে প্রেয়সীর মুখের স্নিগ্ধ হাসি দেখে সেই পুরুষটিও হেসে যাচ্ছে আড়াল থেকে। অবশেষে সেই প্রতিক্ষীত মুহুর্তের অবসান ঘটতে চলেছে আজকে।

আমি আরো একটু এগিয়ে যেতেই একটা রুমে গিয়ে সেই গোলাপের পাপড়ি গুলো আর নেই। রুমটার ভেতর শুধু লাল রঙের কতোগুলো বেলুন দিয়ে সাজানো রয়েছে আর একটা গান বেজে চলেছে পুরো রুম জুরে! একটু এগোতেই লাল রঙের শার্ট পড়া একজন পুরুষের অবয়ব দেখতে পেলাম। নিশ্চয়ই এটা রুহিনই হবে কারন ও-ই তো আমাকে ডেকেছিলো এখানে! কিন্তু রুহিন তো লাল রঙের শার্ট কখনোই পড়ে না! ওর শার্টের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয রং হচ্ছে কালো আর ও লাল শার্ট একদমই পড়ে না, বলে চকচকে লাগে ওর কাছে তাহলে? বোধহয় আজকে আমিও লাল রঙের শাড়ি পড়েছি এই জন্য পড়েছে! উনি উল্টোদিক ফিরে রয়েছে আমার দিকে। আমারও আর এতোকিছু দেখে বোঝার বাকি রইলো না যে সে-ও আমাকে ভালোবাসে! এবার আমি চিৎকার করে বলবো ভালোবাসি! সে-ও বাঁধা দিবে না কারন মানুষটি তার ব্যাবহারে বুঝিয়ে দিয়েছে সে-ও আমাকে ভালোবাসে!

আমি ওনার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম,

-‘ ভালোবাসি, ভালোবাসি, অনেকটা পরিমান ভালোবাসি আপনাকে! নিজের চেয়েও বেশি। এবার আপনার শুধু মুখে বলার পালা আপনিও আমাকে ভালোবাসেন! অবশ্য এই সব দেখে আমিও বুঝে গেছি আপনি আমাকে ভালোবাসেন তবুও মুখে বলুন ভালোবাসি!’

মিরা সেই পুরুষ অবয়বটিকে রুহিন ভেবে জড়িয়ে ধরে কিন্তু সে রুহিনকে স্পষ্ট চিনে! ওর গায়ের গন্ধও বুঝতে পারে। এক নিমিষেই জড়িয়ে ধরা থেকে ছুটকে সরে এসে পড়ে মিরা!
সেই পুরুষটি পিছন ফিরে তাকায় মুখে এক গ্রাস হাসি নিয়ে!

-‘ আমিও তোমাকে ভালোবাসি মিরা মনি! নিজের চেয়েও বেশি। ‘

-‘ তন্ময় ভাইয়া!’

মিরা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না এখানে রুহিনের জায়গায় তন্ময় দাঁড়িয়ে আছে! এটা কি করে সম্ভব? যার জন্য এতো অপেক্ষা এতোকিছু অবশেষে আজকে যখন প্রকাশ করার পালা এসেছে অথচ সে নেই? তার বদলে দাঁড়িয়ে আছে তারই নিজের ভাই! এটা কি করে মেনে নিবে মিরা?

ওদিকে ভাইয়ের মুখে হাসি দেখে নিজের চোখর গড়িয়ে পড়া পানিটুকু হাতের উল্টোপিঠ দ্বাড়া সযত্নে মুছে নিলো রুহিন! কথায় আছে ছেলেদের তো কাঁদতে নেই আবার তন্ময় তো নিজের ভাই হয়! নিয়তি তে এটাই লেখা ছিলো? তার এতো বছরের সুপ্ত ভালোবাসা যেটা প্রকাশ করার দিন এসেছে সেদিনই সেই ভালোবাসাকে হারাতে হবে! এ যে এক বিষাদ ময় য’ন্ত্র’না এর ভার কি করে সইবে রুহিন? তবু সয়ে যেতে হবে আদৌকি কিচ্ছু করার নেই! বুক চি’ড়ে বেরিড়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। বাড়ির জানলায় দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিলো রুহিন! যেই মিরা তন্ময়কে জড়িয়ে ধরলো আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না রুহিন! চলে গেলো

রুহিনের জন্য কিনে আনা আংটির বাক্সটা হাত থেকে গড়িয়ে পড়লো! তন্ময় ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে? আর রুহিনের জায়গায় সে দাঁড়িয়ে আছে! এটা কি করে সম্ভব আমি তো কোনোদিনও এটা মেনে নিতে পারবো না! আমার মনে তো শুধু রুহিনই আছে। আর রুহিনই থাকবে। কালকে উনার কথা আজকে এই সাজানো সবটা দেখে বুঝে গেছিলাম উনিও আমাকে ভালোবাসে তাহলে এখন কোথায় তিনি? আমার রঙিন সকাল, বেরঙিন করে রুহিন কোথায় চলে গেলো? আমাকে অপেক্ষায় রেখে কোথায় হারিয়ে গেলো সে?

#চলবে?

[ নাম যখন #বিচ্ছেময়_সুখ তখন একটু বি’রহ, বিচ্ছেদ হবে তা কি করে হয়?? গল্পের মোড় ফিরবে, সেই পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরুন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করুন, আল্লাহকে স্মরন করুন আসসালামু আলাইকুম সবাইকে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here