#সুপ্ত_বাসনা
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১৩
ইমান ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইল কিছু বলতে পারলো না তাকে।মিম উঠে চলে গেলো,ইলহান সাহেব ছেলে’কে বলল,
– “তুমি অযথা সময় নষ্ট করছ ওর পিছে….।” ইমান কিছু বললো না,পায়ের ওপরে পা তুলে ম্যাগাজিন পড়ছিল আর ফটোশুট দেখছিল সোফায় বসে।ইমা হঠাৎ এসে মিম’কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
– “বোন আজ সম্ভব লাগছে তোকে।” মিম বললো,
– “তাই বুঝি? আমি ভাবলাম, একদম পেত্নীর মতো দেখতে লাগছে আমাকে।” ইমা হাসতে হাসতে বলে,
– “আরে না,ধুররর,কেউ যেন নজর না দেয় আমার বোনের দিকে! মিম মুচকি হেসে বলল,
– ” কে দেবে? মানুষের কি কোনো কাজকর্ম নেই? হুদাই তাকিয়ে থাকবে আমার দিকে?”
– “থাকতেই পারে,তুই চল না বোন আমার সাথে।” ইমান এগিয়ে এসে ওদের দু’জন কে জিজ্ঞেস করে,
– “কোথায় যাচ্ছ তোমরা?”
– “পার্লারে যাবো হেয়ার স্পা করাতে।” ইমান ভারী গলায় বললো,
– “তার কোনো প্রয়োজন নেই এখানে বসে করে নাও,অনেক মেক-আপ আর্টিস্ট আছে।”
– “কেন আমরা কি ছোটো নাকি? ইমান ভাইয়া! যে আপনার কথা শুনে চলতে হবে।” ইমান মিনিট খানেক মিমের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
– “একটু বোঝার চেষ্টা করো মিম! ভালোই হবে।”
– “আপনা’কে আমাদের ভালো বুঝতে হবে না ভাইয়া! সেটা বোঝার জন্য বড়মামু স্বয়ং এখানে উপস্থিত আছে।”
– “আমি আপাতত তোমাদের অভিভাবক মিম! তাই আমি যেটা চাইব,সেটাই হবে….! বলছিলাম,যে আমার সাথে কোনো সনামধন্য রেস্টুরেন্টে চলো….দুপুরের লাঞ্চ টা করে নেবে।” মিমের সোজাসাপ্টা উওর,
– “আমি কোথাও যেতে আগ্রহী নই, ভাইয়া! অন্তত আপনার সাথে,বড় মামার বারণ আছে।যদি যেতেই হয় ভাইয়া,আমি তাহলে যাবো বড়মামুর সাথে।” ইমান বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মিমের দিকে,সে ভাবতেই পারছেনা মিম কি করে এতো টা বদলে গেছে?
যে মেয়ে সারাক্ষণ তার সঙ্গ পাওয়ার চেষ্টা করতো,সামান্য বিষয় নিয়ে অনেক জ্বালাতন করতো তাকে,সেই মেয়ে কি করে অচিরেই এতো টা বদলে গেছে? তার জীবনে কি নতুন কেউ আছে? এই….মুহূর্তে মিহান’কে ইমানের খুব প্রয়োজন অথচ ছেলেটা নেই ওর পাশে….। ইমানের খুব রাগ হচ্ছে নিজের ওপর,কেন সে যাওয়ার সময় আটকে দিলো না ছেলেটা’কে…..। ইমান মিহান’কে মিস করছে খুব।ছেলেটা হয়তো তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গেছে,
তারপর একরকম বাধ্য হ’য়েই ইমান ফোন করে মিহানের কাছে,তবে ওপাশ থেকে উওর এলো,
– “আপনার কাঙ্ক্ষিত নাম্বার টি এই….মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না…..দুঃখিত।” ইমান যেন সর্বশান্ত হয়ে গেছে,মিম তাকে পাত্তা দিলো নাঃ! পুরো সময় টাই এড়িয়ে গেলো তাকে।মিম সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার সময় স্লিপ করে পরে যাচ্ছিলো,তখন ইমান ধরে ফেললো তাকে,জিজ্ঞেস করলো,
– “তোমার কোথাও লাগেনি তো?” উওর এলো,
– “আপনা’কে অসহ্য লাগে।” ইমান চুপসে গেলো,কোনো কথা বলতে ইচ্ছে হলো না তার কারো সাথে।মিম ইমান’কে রেখে বাথরুমে গেলো হাতে বারবার সাবান লাগিয়ে ঘষামাজা করছিল,যে জায়গা টায় ইমান স্পর্শ করেছিল ওকে।ইমান তাই দেখে ছুটে এসে মিম’কে বলল,
– “পাগল তুমি? দেখেছ? হাত লাল হয়ে গেছে?” মিম বললো,
– “আপনার তাতে কি? মিঃ? বললাম,যে আপনা’কে আমার অসহ্য লাগে।আমি আর পাঁচটি মেয়ের মতো নই ইমান ভাইয়া,তোমার গা ঢলাঢলি করতে হয় তো করো গিয়ে তাদের সাথে।” ইমান এতো অপমান নিতে না পেরে দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে যায় অফিস থেকে….বাসায় ফিরে এসে সে দেখল, তার মিহান হলে বসে গল্প করছে রাইমা’র সাথে,রাইমা ছেলে দেখে একটু হাসলো….,তারপর জিজ্ঞেস করলো,
– “বাবা! তোর কি দেখা হ’য়েছিল মিমের সাথে?” ইমান বললো,
– “মা এই….মিম আর সেই মিমের মধ্যে আকাশ-পাতালের পার্থক্য আছে,জানো তুমি ওই….মেয়ে টা অনেক বদলে গেছে? আমি একদম চিনতে পারছিনা ওকে,যে মেয়ে সবসময় ভেবেচিন্তে কথা বলতো…..সেই মেয়ের মুখে টাসটাস কথাবার্তা শুনতে বড়োই অদ্ভুত লাগে।”
– “সে লাগুক বাবা! মানুষ কি সারাজীবন এক রকম থাকে? তুই কেন মিম’কে বাসায়,নিয়ে এলেনি না নিজের সাথে?” ইমান বলল,
– “বলেছিলাম,মা! ম্যাডাম পাত্তা দেয়নি আমাকে।উনি এখন সেলিব্রিটি হয়ে গেছে না।গরীরের খাবার কি তার মুখে রোচে?” মিম বললো,
– “স্যার! আপনি গরীব? না মানে আমি তো জানতাম না আগে।এই…দূরাবস্থা কি করে হলো আপনার? যদি একটু খোলসা করে বলতেন আমাকে?”
– “মিহ! তুমি আগে জানতে না, এখন জেনে নাও না,বকবক করো না প্লিজ আমার কানের কাছে।” মিম হাসতে হাসতে বলল,
– “বুঝতে পারছি স্যার! মিমের এই….ডোন্ট কেয়ার ভাব মোটেও ভালো লাগেনি আপনার কাছে? আসলে গরীবের কথা বাসি হলেও ফলে,দেখবেন আপনার মিম পাত্তাই দেবে না আপনা’কে।” ইমান দাঁত মুখ খিচিয়ে মিম’কে বললো,
– “ইউ আর ফার্য়াড নাও,মিহ! মানা করেছি না? একদম বাদ্য-বাজনা বাজাবে না আমার কানের কাছে বসে।” মিম ইমান’কে টিটকিরি মে’রে বললো,
– “আমার কথা ষোলো আনা সত্য, ষাঁড় থুড়ি স্যার! সে আপনি যতই রাগ করুণ আর ঝাল করুণ না কেন আমার সাথে,আপনার ফুফাতো বোন মনে হচ্ছে মারাত্মক ধানিলংকা আর সে বেশ বোঝাই যাচ্ছে আপনার থোবড়া খানা দেখে…।” ইমান মুখ কাঁচুমাচু করে মিম’কে জিজ্ঞেস করলো,
– “আরে ব্রো! ধানিলংকা মানে কি? যার ঝাল বেশি থাকে? জানো? আগে ও দৈ এর মতো মিষ্টি আর রসগোল্লার মতো নরম ছিলো আর এখন ও একদম বদলে গেছে।” মিম মনেমনে বলে,
– “আহা! নয়তো কি? দৈ এর মতো মিষ্টি আর রসগোল্লার মতো নরম থাকবো? তা ও তোর সাথে? মাথা ঠিক আছে তোর? ভালো ডক্টর দেখা, মনে হচ্ছে তোর মাথার তারতোর ছিঁড়ে গেছে।” ইমান আনমনে নিজের ঘরে এসে বসে আছে,কেন যেন কোনো কিছুই ভালো লাগছে না তার কাছে…এরি মধ্যে মিম এসে ইমান’কে বলল,
– “স্যার! এদিকে আসুন,ম্যাম খেতে ডেকেছে আপনা’কে।কি হলো স্যার! আপনার মন খারাপ কেন? কেউ কিছু বলেছে আপনা’কে” ইমান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
– “হয়তো,তুমি ঠিক ছিলে মিহ! সেও আমাকে চরিত্রহীন ভাবে।”
– “কার কথা বলছেন স্যার! নিচে চলুন ম্যাম খেতে ডেকেছে আপনা’কে।” ইমান নিজের ক্লান্ত,বিধ্বস্ত শরীর টা বিছানায় এলিয়ে দিয়ে মিম’কে অনুরোধ করে বলে,
– “একটু তুমি ভাত মেখে খাইয়ে দেবে আমাকে?” মিম মৃদু হেসে বলল,
– “কিন্তু স্যার! একটু আগে যে আপনার জন্য খাবার এলো ফুডপান্ডা থেকে?”
– “বাহিরের খাবার খেতে ইচ্ছে করছে না,মিহ! মা যা রেঁধেছে,তাই দিয়ে খাইয়ে দাও আমাকে।” মিম ইমানের অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলো,
– “স্যার,উপুর হয়ে শুয়ে আছেন কেন? কেউ কিছু বলেছে আপনা’কে? আমি বুঝতে পারছি আপনার মন খারাপ,কিন্তু কেন কি হয়েছে?” ইমান হঠাৎ মিম’কে পায়ে বাজিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে বলে,
– “তেমন কিছু না,মিহ! তবে আমি খুব খুশি হয়েছি।তুমি বাসায়,ফিরে এসেছ দেখে; আমার রাতে একটা পার্টি আছে,প্লিজ তুমি একটু বিকেলে ডেকে দিয়ো আমাকে।” মিম মনেমনে বলে,
– “বুঝতে পারছি,সোজা আঙুলে কাজ হবে না,এই…বার আঙুল বাঁকাতে হবে।”
চলবে,,,,,,,,