সুপ্ত বাসনা পর্ব ৭

0
1219

#সুপ্ত_বাসনা
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ৭

তার মুখে এবার কোনো শব্দ নেই,সে শুধু হাসতে হাসতে চলে যায় ইমানের ঘর থেকে।ইমান ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বোকাসোকা মুখ করে বলে,
– “সকাল সকাল এসব কি হচ্ছে আমার সাথে? আমি ওর বুকে হাত দিলেই বা কি? আমি দিনকে দিন বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি ওর মেয়েলিপনা দেখে,
আরে ভাই তুই একটা ছেলে,এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে তাতে? দিলাম নইলে হাত; এতো অসুবিধে কেন তোর আমার সাথে?” বাহিরে দাঁড়িয়ে ইলহান সাহেব ছেলের কথাবার্তা শুনে বলেন,
– “নিশ্চয়ই,তুমি উল্টো-পাল্টা কিছু করেছ তার সাথে? আরে বাবা! ওটা একটা ছেলে,তোমার সেটা ভুললে হবে? তুুমি আর যা করে বেড়াও,করো শুধু ‘গে’ টাইপের আচরণ করো না ওর সাথে।” ইমান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– “প্লিজ,ড্যাড! লেট ইট গো দ্যাট,আর ভাল্লাগছে না আমার কাছে।আচ্ছা তোমার কি মেয়ে বলে মনে হয় না,মিহ’কে!”
– “প্রশ্ন-ই ওঠেনা বাপ! তোমার কি মাথা ঠিক আছে? মাথায় কোনো সমস্যা থাকলে বলো বাংলাদেশের বেস্ট নিউরোসার্জনের ‘উৎপল রায়’র’ কাছে নিয়ে যাবো তোমাকে।” ইমান রাগে গজগজ করতে করতে তখন দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যায় নিজের ঘর থেকে।সকালে ও কিছু খায়নি,
তাই মিম নিজেই ওর জন্য, ওর প্রিয় চায়নিজ ডিস ‘রেমান’ রান্না করে অফিসে নিয়ে আসে কাজেই ইমান আর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারেনি মিমের সাথে।মিম ইমান’কে কথায় কথায় বলল,
– “স্যার! আমি আপনার বাবা’কে কিছু বলিনি।”
– “ব্যাপার না,ইট’স ওকে; তোমার শরীর ঠিক আছে মিহ! এতো ক্লান্ত লাগছে কেন তোমাকে?” মিম মনেমনে বিড়বিড় করে বলে,
– “কি করে বলি? নতুন মিউজিক ভিডিও জন্য দিন নেই রাত নেই ছুটতে হচ্ছে আমাকে সাথে আছে ব্রাইডাল ফটোশুট; উফফ,কেউ রেহাই দাও একটু আমাকে।” ইমান কোনো উওর না পেয়ে চুপচাপ তাকিয়ে থাকে মিমের দিকে তারপর কি ভেবে জিজ্ঞেস করে,
– “তুমি কি জানো? আমি কি করে মিমের ছবি পেতে পারি বা কার কাছ থেকে?” মিম মুখ ফসকে বলে ফেলে,
– “কেন আপনার বাবা? হয়তো তার কাছে আছে?” ইমান হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে মিমের কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– “ইউ আর মাই এ্যাসেট,এই…সিম্পল জিনিস টা কি করে আমার মাথা থেকে বেড়িয়ে গেছে? আমি নিশ্চিত,বাবার ফোনে সেই সুন্দরীর লেটেস্ট সব ছবি আছে ইনফ্যাক্ট মায়ের ফোন, সেটাও আমায় চেক করতে হবে।” মিম ঘামতে ঘামতে নিজেই নিজেকে গালাগাল দিতে থাকে,মনেমনে বলে,
– “গাধার ঘরের গাধা, না কি তুই একটা! এখন কি হবে?” ইমান সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত ভালো ছেলের মতো ঘুরঘুর করছে বাবার পিছে।তবে ইলহান সাহেব ছেলের অস্থিরতা দেখে মনেমনে বলেন,
– “লাভ নেই,বাবা! ফোন পাসওয়ার্ড লক করা আছে।তোমার বাবা আমি এমনি এমনি হইনি ‘বাবা’,ভুলে যাও কেন তুমি বাপের ও বাপ আছে?” ইমান অনেক চেষ্টা করে ফোন লক খুলতে না পেরে হাঁপিয়ে ওঠে,তারপর অধৈর্য্য হয়ে ইলহান সাহেব’কে বলল,
– “এটা খুলে দাও না বাবা! তোমার ফোনে ‘টম রান’ গেইম আছে।” ইলহান সাহেব মুচকি হেসে ছেলে’কে চকমকে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
– “আমি ভেবেছিলাম,হয়তো তোমার অন্য কোনো কাজ আছে?”
– “ওই…তেমন কিছু না ড্যাড! জাস্ট এমনই লক টা খুলে দাও না আমাকে?” ইমান মিমের কোনো ছবি না পেয়ে মুখ কালো করে বলে,
– “নাহ নেই,থেকে কি হবে?”
– “মানে?”
– “কিছুনা, ড্যাড! আমার কিছু জরুরী কাজ আছে।” ইমান যেতেই মিম ছুটে এসে হাঁফাতে হাঁফাতে ইলহান সাহেব’কে বলল,
– “মামা,আমার সব শেষ! সব শেষ হয়ে যাবে।”
– “কিচ্ছু শেষ হয়নি মা!”
– “উনি কি আসেনি তোমার ফোনের কাছে?”
– “এসেছিলো,তবে ধোঁকা খেয়ে চলে গেছে। কিছুক্ষণ পর, ইমান’কে দেখে মনে হচ্ছে যেন সে চুল ছিঁড়ছে নিজের কেবিনে বসে,বাসায় ফিরে এসে মায়ের ফোন ও চেক করা হয়ে গেছে তার,তবে সে মিম রিলেটেড কিছু পায়নি তাতে।স্বামী’র মুখে সবটা শুনে রাইমা বলেন,
– ” ভাগ্যিস! ফোন রি-স্টার্ট করিয়েছিলাম দু’দিন আগে,নয়তো মিমের যে কি অবস্থা করতো ও ভেবেই ভয়ে গা,হাত ও পা কাঁটা দিয়ে ওঠে।” ওদিকে ঘুম নেই ইমানের দু-চোখে,মিম’কে বললো,
– “মিহ! আজ রাতে তুমি আমার কাছেই ঘুমবে,নতুন মিউজিক ভিডিও’র প্রোমো দেখলে? খুব ভালো লেগেছে আমার কাছে।” মিম উওর না করেই হাসিমুখে বেরিয়ে যায় ইমানের ঘর থেকে,ইমান বইয়ের তাক থেকে একটা অংক নোটবুক বের করে মিটিমিটি হেসে বলে,
– “তোমার কি মনে আছে মিম! তুমি শুধু গণিত শিখতে চাইতে আমার কাছে? আমি বুঝিয়ে দিতাম,তবুও তুমি না বোঝার ভান করে তাকিয়ে থাকতে আমার দিকে,আর বলতে,
– ” এটা কি করে হলো? ওটা কেন হলো? একটু বুঝিয়ে দাও আমাকে।আমি চুপচাপ বসে বসে তোমার পাগলামো দেখতাম,আর বিরক্ত হতাম তোমাকে দেখে,
তুমি আমার আমার গলা ধরে ঝুলে থাকতে,বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই প্রশ্ন করতে আমার কাছে এরপর যুক্ত হয়েছিল তোমার নতুন দুই সাবজেক্ট বাংলা এবং ইংলিশ; দু’টোই নাকি ভ্যাজাল বলে মনে হতো তোমার কাছে।তুমি এই…বাহানা করে একরকম প্রাইভেট পড়তে শুরু করেছিলে আমার কাছে,প্রতিদিন এসে একবার না একবার জিজ্ঞেস করতে,
– “আপনি কি ভালোবাসেন আমাকে?” আমি বলতাম নাঃ! তুমি শুধু ছলছলে চোখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে আমার দিকে।তারপর আর আমি কিছু মনে করতে চাই না,আমি শুধু একবার বসে কথা বলতে চাই তোমার সাথে।”

দেখতে দেখতে আজ ছয়দিন কেটে গেছে,মুবিন ইমানের জন্য কোনো টিকিট জোগাড় করতে পারেনি;
তাই শুনে ইমানের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।রাত আট’টা নাগাদ ইলহান সাহেবের ড্রাইভার মনির ইমান’কে ফোন করে বলে,
– “ছোটো সাহেব! আপনার বোনের গানের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।” ইমান বাসায় ফিরছিলো,মাঝরাস্তায় ও গাড়ি থামিয়ে নভোথিয়েটারের উদ্দেশ্যে ছোটে,তারপর ট্রাফিকজ্যামে আটকা পরে উদভ্রান্তের মতো গাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তা জুড়ে দৌঁড়াতে থাকে।অবশেষে ইমান নভোথিয়েটারে এসে পৌঁছালেও টিকিট ছাড়া ভেতরে ঢুকতে দেওয়ার হয়নি তাকে।এতে সে বেশ ক্ষুব্ধ হয়ে মারধোর করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গার্ডস গুলো’কে,
তারপর সে দ্রুত পায়ে নভোথিয়েটারে ঢুকে দেখতে পায় একে একে সবাই বেড়িয়ে আসছে হলঘর থেকে এবং তারা সবাই বলাবলি করছে,
– “মেয়েটির গানের গলা অনেক সুন্দর,তার চেহারায় অনেক মায়া জড়ানো আছে।” ইমান একজন’কে থামিয়ে জিজ্ঞেস করে,
– “ভাই,অনুষ্ঠানে কি শেষ হয়ে গেছে?” সে মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিতেই,ইমান ছুটে এসে হলঘরে ঢোকে আর তখন দেখতে পায় ইলহান সাহেব মিম’কে সবার থেকে আড়াল করে নিয়ে যাচ্ছে মেইন গেটের কাছে;
তার গলায় স্কার্ফ জড়ানো,চোখে সানগ্লাস পরে আছে,শীতের জন্য গায়ে ওভার কোর্ট জড়ানো আর ইলহান সাহেব ওর মুখ টা আড়াল করে বুকে জড়িয়ে ধরে আছে।স্পর্শ কাছেই দাঁড়ানো বোন’কে জিজ্ঞেস করছে,সে রেস্টুরেন্টে গিয়ে কি খাবে? মিম বলল,
– “কিছু খাবো না ভাইয়া! আমাকে প্লিজ বাসায় নিয়ে যাবে?”

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here