You_are_mine
season_2
Poly_Anan
part_16
একে একে আনন্দ সুখ, অনুভূতিরা যেন মরে গেছে ঈশা এবং ঈশানের পরিবারের মাঝে।জীবন্ত লাশ হয়ে বেচে আছে রাসেল আর অনু।অনুশূচনার আগুনে বার বার দগ্ধ হচ্ছে হাসি খুশি সেই মেয়েটি।বার বার ঈশার মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী করছে সে।যদি ঈশানকে সে খবর না দিতো আর ঈশান যদি ঈশাকে এই বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে না যেতো তবে তো ঈশার জীবনটা বেচেঁই যেতো।ঈশাকে ভালো রাখতে গিয়ে, সুখী করতে গিয়ে সে যেন তাকে মৃত্যু উপহার দিয়েছে।ঈশাকে হারানোর শোক তার মাঝে আগুনের মতো দাউ দাউ করে জ্বলছে..!অনেক বার অনু ঈশার রুমে গিয়ে প্রতিটি জিনিসে হাত বুলিয়ে চিৎকার করে কেদেঁছে।সবাই অনুকে নিয়তির ব্যাখ্যা দেখালেও অনু ঠিকি নিজের দোষটা দিয়েছে।এইতো সেদিন ঈশার রুমে ডুকে টুপ করে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।
তারপর ঈশার ব্যবহৃত প্রতিটি জিনিসে আলতো করে হাত বুলিয়ে যায়।পড়ার টেবিলের উপরে থাকা ঈশা আর অনুর হাসি মাখা দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরার ছবিটি দেখে অনুর আত্না কেপেঁ উঠে।আয়নার সামনে দাড়িয়ে মুখে হাত দিয়ে কাদঁতে থাকে।
“কেন চলে গেলি ঈশা..!তুই ছাড়া এই অনু বাচঁবে কি করে আমি তো কিছুতেই ভুলতে পারছি না তোকে।আমার প্রতিটি নিশ্বাসে তুই জড়িয়ে ছিলি সেই তোকে ছাড়া আমার সুস্থ ভাবে শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।
কিছুক্ষন পর চিৎকার দিয়ে কাদঁতে শুরু করে অনু। দরজার বাইরে থেকে হাসিন ঈশার মা বাবা অনুর বাবা মা সবাই তাকে ডাকলেও সে কেদেই যাচ্ছে।কিছুক্ষর পর অনুর সাড়াশব্দ কমে যায়। প্রায় আধা ঘন্টা ধরে ডাকলেও রুমের ভেতর থেকে অনুর কোন সাড়া পাওয়া যায় না।এইসব অবস্থা দেখে মাথায় হাত দিয়ে কাদতে শুরু করে অনুর মা। পরবর্তীতে হাসিন দরজা ভেঙ্গে দেখে অনুর ডান হাতে একটি ছোট্ট ছুরি আর বাম হাতের রগ কেটে গল গল করে রক্ত ঝরছে…!সে অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পরে আছে। দ্রুত তাকে নিয়ে হাসপাতালে বেরিয়ে যায় হাসিন।
সেদিন বড় কোন বিপদের হাত থেকে বেচেঁ যায় অনু।কিন্তু এরপর নিজের ভেতরের দগ্ধ আগুন তাকে শেষ করে দিতে থাকে।সারাদিন একা অন্ধকার রুমে দিন রাত এক করে নিজেকে বন্ধী রাখে। আরো ২ বার সুইসাইড করার চেষ্টা করে কিন্তু প্রতিবারি সে অল্পের জন্য বিপদের হাত থেকে বেচেঁ যায়। এককথায় সবাই ধরে নিয়েছে অনুর মানুষিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।দিনের পর দিন ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকে মেয়েটা। উঠতে বসতে একটাই কথা আমার ঈশাকে চাই….!ঈশা তুই কইরে…!চল আজকে আমরা ফুসকা খাবো..!
এইসব উদ্ভট কথা বার্তা নিজেকে নিজেই দিনের পর দিন বলতে থাকে অনু।এদিকে মেয়ের শোকে একদিকে ঈশার বাবা মা যেন পাথর হয়ে গেছে।কিন্তু অনুর অবস্থা দেখে সবার মাঝেই বিরহের আগুন আরো দিগুন করে জলতে থাকে।
সবাই বুঝতে পারে অনু নিসঙ্গতায় ভুগছে তাই সবাই মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে অনুর বিয়ে দেওয়ার।অনুর বাবার বন্ধুর ছেলে জারিফের সাথেই অনুর বিয়ে ঠিক। আর আজ অনুর বিয়ে…!
ঈশার মৃত্যুর কেটে গেছে একমাসের ও বেশি। অনুর জন্য নেওয়া সবার সিধান্তের পূর্নতা পাবে আজ। আজ বিকালেই অনুর সম্পূর্ণ ঘরোয়া পরিবেশে বিয়ে হবে।চার পরিবারের মানুষ জন ছাড়া, বাইরের কেউ যানবেনা অনুর বিয়ে।এত কিছুর মাঝেও অনু ভুলে যায়নি রাসেলের কথা।তাই একা একা ছাদে এসে রাসেল কে নিজের মনের বিরুদ্ধেই ফোন করে…!
“হ্যালো অনু…!(শীতল কন্ঠে)
…(নিশ্বব্দে কেদে যাচ্ছে)…
” অ..অনু কথা বলো কি হয়েছে…!
“…………….
” অনু প্লিজ,কথা বলো তুমি যানো না তোমার এই ভয়েজ শোনার জন্য কতটা অপেক্ষায় ছিলাম আমি।
“আমার বিয়ে রাসেল(কেদেঁ)
মূহুর্তে ই রাসেলের সব অনুভূতিরা থেমে যায়।বুকের ভেতরটায় যেন ভারী কোন পাথর চাপা দিয়েছে।
” রাসেল আমি যানি তোমাকে আমার পাওয়া হবেনা।নিয়তি আমাদের সাথে খেলছে। ঈশার মৃত্যু, ঈশান ভাইয়ের এই অবস্থা আমি কিছুতেই কিছু মেনে নিতে পারছি না। আমি তোমাকে ছাড়া কি করে থাকবো আমার জানা নেই।তবুও বলছি আমাদের এক হওয়া মানে ঈশান ভাইয়ার নিয়মিত মানসিক যন্ত্রনায় ভোগা।আমি যানি আমাকে দেখলেই ঈশান ভাই অতীতে ফিরে যাবে তখনি……..
” তুমি ভালো থেকো অনু।নিজের যত্ন নেবে! আরেকটা কথা আমাদের ভালোবাসার মৃত্যু হবে না…!দূর থেকেই না হয় ভালোবেসে যাবো(ঢোক গিলে)
“একটা কথা বলি রাসেল…?
” বলো..
“আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি.. আমাকে মাফ করে দিও..!
অনু ফোনটা কেটেই কাদতে শুরু করে। পৃথিবীর দুইপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আজ দুটি মানুষের একটি সপ্নের সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটলো।আসলেই কি বিচ্ছেদ ঘটলো..আড়ালে আবডালে নিত্যু নতুন ভাবে ভালোবেসে যাবে দুজন দুজনকে হয়তো যানবেনা বাইরের জগৎতের কেউ কিন্তু ভেতটায় প্রতিটি নিশ্বাস প্রিয় মানুষটার নাম জপতে থাকে।
রাসেল ফোন পকেটে পুরে আইসিউর কেবিনের সামনে দাঁড়ায়।দরজার ছোট্ট একটু স্বচ্চ কাচ দিয়ে দেখা যাচ্ছে ঈশানকে। মুখে অক্সিজেন মাক্স। কপালে ব্যান্ডেজ।দরজার বাইরে একটি চেয়ারে মাথা গুজে বসে আছে ঈশানের মা, আর বাবা।রাসেল তাদের দিকে এগিয়ে এসে বলে,
” আঙ্কেল আমি একটু বাসায় যাবো..?
” হ্যা যাও বাবা। আমরা এদিকটায় থাকতে পারবো। তুমি আর কয়দিন এখানে পড়ে থাকবে। তোমার নিজেরো জীবন আছে!(আবিদ)
” আমার জীবনটা ছিল ঈশানময়।আর এখন ঈশান ছাড়া আমি নিজেকে ভাবতে পারিনা।
আমি আসছি, কোন দরকার হলে আমাকে অবশ্যই ফোন করবেন।
“যাও বাবা।
রাসেলের দম বন্ধ হয়ে আসছে নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারছেনা।নিজেকে কাদতে হবে একটু হলেও কাদতে হবে। না হলে মনের দুঃখরা কিছুতেই হালকা হবেনা।
দ্রুত বাড়ি ফিরে রাসেল ওয়াশরুমে ডুকে শাওয়ার অন করে দেয়।গায়ের শাটটা খুলে ছুড়ে নিচে ফেলে।চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে সেইদিনের কথা।
ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে ছড়িয়ে যায় ঈশানের এই মর্মান্তিক দূর্ঘটনার কথা। তখনো রাসেল কিচ্ছু যানতে পারেনি।সে তার কাজ নিয়েই ব্যস্ত। তখন তাকে ফোন করে ঈশানের এক্সিডেন্টের খবরটা যানায় তাদের বাংলাদেশে থাকা সেই ব্যক্তি গত ডাক্তার।ঈশানের এক্সিডেন্টের কথা শোনার সাথে সাথে সে মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে পরে।কিন্তু যে করেই হোক বাংলাদেশে তাকে আবারো ফিরতে হবে। সেই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে ঈশানকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।রাসেল ইউএস থেকে তার বাবাকে নিয়ে আবারো বাংলাদেশে ফিরে আসে।
(গল্পটি লেখনীতেঃপলি আনান)
তখনি মনে পরে যায় ঈশার কথা।এদিকে অনু সবাইকে সত্যিটা বলে দেয়।ঈশানের সাথেই ঈশা ছিল..!কিন্তু এক্সিডেন্ট স্পটে কোন মেয়েকে পাওয়া যায়নি শুধু মাত্র একটি ছেলে পাওয়া গেছে।তবে ঈশা কোথায়…? চারিদিকে হইচই পড়ে যায়।কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ঈশার বাবা মা।এদিকে ঈশানকে দ্রুত অপারেশনের জন্য ওটিতে নেওয়া হয়।কিন্তু অপারেশন সাকসেস হলেও ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ঈশানের জ্ঞান না ফিরলে বুঝতে হবে ঈশান কোমায় চলে গেছে আর কোমায় থাকা ব্যাক্তিরা ভাগ্যর জোরে হয়তো অনেক সময় বেচেই যায়।অনেকেই বছরের পর বছর কোমায় থাকে কেউবা মৃত্যুর মুখে ঢোলে পড়ে।
কথা গুলো রাসেলের কানে গলিতো সীসার মতো লাগে কেউ যেন জোর করে তার কানে উত্তপ্ত গলিত সীসা ঢালছে।ঈশানের এমন করুন পরিস্থির কথা সপ্নেও ভাবেনি রাসেল।একের পর এক সময় কাটতে থাকলো।
ঈশানের অপারেশনের ঠিক ৪২ ঘন্টা পর খবর এলো নদীর পাড়ে গ্রাম বাসী ভেসে আসা একটি লাশ পেয়েছে।আর সেই লাশটির অবস্থাও করুন।এতটা সময় পানিতে থাকার কারনে চামড়ার কেমন যেন বিভৎস হয়ে গেছে।আর সবচেয়ে বড় কথা ঈশার মুখের আকৃতি ঠিক ভাবে বুঝা যাচ্ছেনা। তার মুখটা যেন থেতলে গেছে আগে থেকেই।তার সাথে এত ঘন্টা পানিতে থাকায় লাশটিকে আর বেশিক্ষন কবর না দিয়ে রাখাটা ঠিক হবেনা। সব ঝামেলার অবশান ঘটিয়ে পুলিশ ঘোষনা দেয় এটা ঈশার লাশ।
ঈশাকে যখন কবর দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ঠিক তখন আড়ালে উপস্থিত হয় রাসেল।জায়নামাজের সময় রাসেল সবার সাথে নামায আদায় করে।কবর দেওয়ার সময় আড়ালে দাঁড়িয়ে নিশব্দে কেদে গেছে সে।নিজের বোনের মতো ঈশাকে ভালোবেসে গেছে ।মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা।নাজিম আর সাইফের আসল প্লানিং বুঝতে; ঈশান যখন ঈশার সামনে সব ভাংচুর করছিলো তখন বেচারি ভীষন ভয় পেয়ে যায়।রাসেলের আড়ালে দাঁড়িয়ে তার শাট খামচে ধরে বলেছিল,
“রাসেল ভাই আমি বাড়ি যাবো।
সেদিন নিজ দায়িত্বে ঈশানের হাত থেকে ঈশাকে ফিরিয়ে আনে রাসেল।আর আজ সেই ফুটফুটে মেয়েটি নাকি কবরে শুয়ে আছে ভাবতেই রাসেলের চোখ আবারো অশ্রুতে ভরে যায়।
” তোর সাথে আর দেখা হবেনা ঈশা। তুই যানলিও না তোর ঈশান কেমন আছে।হয়তো বেচেঁ যাবে কিন্তু তোর মৃত্যুর কথা শুনলে ছেলেটি বাচবেনা। সত্যি বাচবেনা।
ফিসফিস করে কথা গুলো বলে হাসপাতালে ফিরে আসে রাসেল।যানতে পারে আরেক দুঃখের কথা।ঈশানের জ্ঞান ফিরেনি সে কোমায় চলে গেছে শরীর জুড়ে কোন রেসপন্স নেই। সেদিন ভেঙ্গে পড়েছিল রাসেল। তার বাবাকে জড়িয়ে ডুকরে কেদেছে কেন এমনটা হলো।
হসপিটালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ব্যস্ত শহর দেখে কাদছিল রাসেল তখন পেছন থেকে রাসেলের ঘাড়ে হাত দেয় কেউ একজন। পেছনে ঘুরে দেখে ডাক্তার আঙ্কেল।
“একদিন ঈশানকে কি বলেছিলাম আমি মনে আছে রাসেল?
রাসেল ভ্রু কুচকে তাকায়!
” বলেছিলাম, শেক্সপিয়র একটি কথা বলেছে ঈশান ” Love is merely madness!
দেখো সেই কথাটাই হলো।তুমি ভেঙ্গে পরোনা। কারন ঈশানের পরিবারকে তুমি ছাড়া কে সামলাবে।আমি সবকিছু ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য বরং ইউএসে নিয়ে যাও।
রাসেল মাথা নেড়ে সায় দেয়।মনে পড়ে যায় সেইদিনের কথা,…..
ডাক্তার ঈশান কে দেখে কিছুক্ষন পর ঈশার দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়।ঈশানের দিকে ভ্রু কুচকে বলে,
” উনি কে?উনাকে তো চিনলাম না মি.শাহরিয়ার(ঈশানকে উদ্দেশ্য করে)
” উনি মিসেস শাহরিয়ার (শান্ত কন্ঠে ঈশান)
ঈশানের কথা শুনে ঈশা আর অনু দুজনের চোখ বড় হয়ে যায়।কি বলছে সে।ডাক্তার মুচকি হেসে ঈশানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“লাভ ম্যারেজ নাকি?সত্যি, কি বিয়ে হয়েছে?
” আমি একাই ভালোবাসি ডাক্তার আংকেল আমাকে কেউ ভালোবাসেনা।(হতাশ কন্ঠে)।
বিয়ে হয়নি আমাদের তবে বলতে পারেন অর্ধেক বিয়ে হয়ে গেছে।(চোখ ইশারা করে ডাক্তারকে)
ডাক্তার ঈশানের কথা শুনে এবার আরো জোরে হেসে দেয়।গলা খাকিয়ে ঈশানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“শেক্সপিয়র একটি কথা বলেছে ঈশান ” Love is merely madness!
নাইস কাপল দোয়া রইলো তোমাদের জন্য। আশা করি খুব শীঘ্রই তোমাদের দুইহাত এক করে দেবে তোমাদের বাবা মা।
কথাটা ভেবেই একটু মুচকি হাসে রাসেল…
“দুই হাত আর চার হলো কই…বরং দুইহাত এখন ছিন্ন ভিন্ন হয়েগেছে।
পরের দিন সকালে ঈশার কবরের সামনে হাজির হয় রাসেল।শেষ বারের মতো ঈশার কবরটা দেখতে এসেছে সে কিন্তু এসে যা দেখলো তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না।অনু ঈশার কবরের উপর জড়িয়ে শুয়ে আছে আর বিড়বিড় করে কি যেন বলছে।রাসেল আরেকটু এগিয়ে এসে কথা গুলো শুনতে থাকে।
” আমার দোষ তাইনা আমার কারনেই ঈশান ভাই তোর বিয়ের খবর পেয়েছে আর তারপর তোকে নিয়েগেছে আর তুই আমাকে একা ফেলে আজ কবরে।আমি কি করে বাচবো ঈশু বল…..!তুই ছাড়া আমি সত্যি একা।
রাসেল বুঝতে পারে ঈশার মৃত্যুর জন্য অনু নিজেকে দায়ী করছে কিন্তু বোকা মেয়েটা বুঝলনা আল্লাহ যা করেন হয়তো ভালোর জন্যই করেন।ঈশার মৃত্যুতে কিছুতো একটা ভালো আছে। রাসেল অনুর কাছে এগিয়ে যায়। অনুকে কবরের পাশ থেকে টেনে তুলে।অনু ঝাপিয়ে পরে রাসেলের বুকে।
“রাসেল কি হয়ে গেলো আমাদের,কেন এমনটা হলো..!আমার দোষ তাই না বলো তুমি বলো?(কেদেঁ)
“, আহ অনু জন্ম মৃত্যু আল্লাহর হাতে এইসবে আমাদের হাত নেই তুমি নিজেকে দোষ কেন দিচ্ছো।
” আমি যানিনা। আমি ঈশাকে ছাড়া একা হয়ে যাবো রাসেল।
“চিন্তা করোনা আমি আছি সবটা ঠিক হয়ে যাবে।
রাসেলে কথা শুনেই ছিটকে দূরে সরে যায় অনু।
“,আমাদের কখনো মিল হবে না। না পরিবারের দিক থেকে আমাদের দিক থেকে।আমাদের জীবনের প্রতিটি ভাজেই আষ্টেপৃষ্টে ঈশান ভাই জড়িয়ে আছে।তাই আমাদের বিয়ে মানে বুঝতেই পারছো?
রাসেল মাথা নেড়ে সায় দেয়।অনু আবারো একবার রাসেলকে জড়িয়ে ধরে.
” এটাই আমাদের শেষ ছোয়া রাসেল।আর দেখা হবে না। আমি তোমায় খুব ভালোবাসি।হয়তো এত সুখ আমাদের কপালে নেই।ভালো থেকো প্রিয়।
অনু এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে রাসেলের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে চলে যায়।রাসেল বাকরুদ্ধ হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।
তারপর ঈশানকে নিয়ে আবারো ইউএসে ফিরে যায় তারা। ঈশানের ট্রিটমেন্ট এখনো চলছে কিন্তু এই কোমা থেকে বের হতে ঠিক কতটা সময় লাগবে,কিংবা বাচঁবে কি না কেউ যানেনা।এভাবেই সবার জীবনের এই একটি মাস অভিশাপ্ত ভাবেই কেটেছে।
কিন্তু ফাইনালি আজ অনুর বিয়ে।রাসেল ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে আয়নার সামনে নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে।
“আমি চাইলেই তোমায় আমার করে নিতে পারি অনু।আমার দিক কিংবা আমার পরিবারের দিক থেকে কোন বাধা নেই।কিন্তু এই মূহুর্তে আমার কাছে ভালোবাসার চেয়ে দায়িত্বটা সবচেয়ে বড়।ঈশানের দায়িত্ব ঈশানের পরিবারের দায়িত্ব আমার উপর।আমি যথা সাধ্য চেষ্টা করবো তাদের জন্য।ভালোবাসা নামক তুমি নাহয় সুখে থেকো।যার সাথে তোমার বিয়ে হবে সে যেনো তোমায় এক মূহুর্তের জন্য হলেও সব দুঃখ ভুলিয়ে দিতে পারে।
আমার ভালোবাসার মানুষটা ভালো থাকলে আমিও ভালো থাকবো….!ভালোবাসি অনুজান।
মেঝেতে হাটু মুড়ে আবারো কাদঁতে শুরু করে রাসেল।কেন এমনটা হলো খুব কি বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো ঈশা যদি বেচেঁ যেতো।
আড়ালে দাঁড়িয়ে ফোনে বেশ ফিসফিস করে কথা বলছে কেউ,
” হ্যালো..!
“হ্যা বলুন…(ফোনের অপর পাশে)
” তোমরা যা কাজটা ঠিক করলে না একদম না। তোমাদের বলা হয়েছে একদিক শেষ করতে কিন্তু তোমরা দুটো দিক শেষ করে দিলে?
“আমরা নিজেরাও যানতাম না বিষটা এতো জটিল হয়ে যাবে..!আচ্ছা আমাদের এখন কিচ্ছু করার নেই না আপনাদের। সময়ের অপেক্ষা, সময় যেদিকে মোড় ঘুরাবে সবাই সেদিকেই যাবে…!(ফোনের অপর পাশে)
বিরক্ত হয়ে ফোনের এই পাশের লোকটি ফোন বন্ধ করে দেয়। দাতে দাত চেপে মনে মনে বলে,
” সবটা ডাফারের দল।
….. ” ২ বছর ” সময়টা কেটে গেছে সময়ের মতো করে।সবার জীবনে গতি ফিরে আসলেও আসলো না ঈশানের জীবনের এখনো কোমায় ঈশান। কোন রেস্পন্স নেই তার।রাসেল এই দুই বছর তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব বেশ ভালো করেই পালন করে গেছে।
তার চেহারা জুড়ে নেই কোন ক্লান্তির ছাপ। আজকেও রাসেল ঈশানের পাশে বসেছে তার দিকে তাকিয়ে বলে,
“ঈশান….আমার ভাই, তুই ফিরবি কবে বল।আমায় এখন আর কেউ তোর মতো করে একটু জড়িয়ে ধরেনা ভরসার হাত বাড়িয়ে দেয় না।তোকে ছাড়া যে কি করে বেচেঁ আছি দুই বছর আমি যানি না।তবে এইযে প্রতিদিন তোর সাথে বক বক করি, এটাই আমার শান্তি লাগে।মনে হচ্ছে তুই আমার উপর রেগে চুপ হয়ে গেছিস আর আমি কথা বলেই যাচ্ছি।
কথার মাঝখানেই রাসেলের ফোনে একটি মেসেজ এসেছে আর সেটা পাঠিয়েছে অনু।এই দুই বছরে অনু অনেক বার ফোন করেছে শুধু মাত্র ঈশানের খবর যানতে।রাসেল বার বার বারন করেছে কথা বলার দরকার নেই কিন্তু অনু বলেছে যেদিন ঈশান কোমা থেকে বেরিয়ে আসবে সেদিনের পর আর মেসেজ ফোন কিছুই করবেনা।। মেসেজটি ওপেন করতেই রাসেলের আবারো অতীতের কথা মনে পড়ে যায়…..
“আজকে ঈশার ২য় মৃত্যু বার্ষিকী।আর ঈশান ভাইয়ের কোমার দুই বছর।কেমন আছো তুমি?
ব্যস এই টুকুই।রাসেলের মুখের মাঝে যেন আষাঢ়ের মেঘ জমেছে।অনুর মেসেজ পেলেই সে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় তাই অনুকে বারন করেছে কোন যোগাযোগ না করতে কিন্তু পাগলিটা ঠিকি তাকে নিয়ম করে যোগাযোগ চালিয়ে যায়।
রাসেল ঈশানের আরেকটু পাশে ঘেসে বলে,
” দুই বছর হয়ে গেছে ঈশান। তোর এই অবস্থা আর ঈশাও নেই।ভাবীকে খুব মিস করিরে।মেয়েটা ভালো ছিল আল্লাহ যে কেন তাকে নিয়ে গেলো।
রাসেলের কথা মাঝেই ঈশানের একহাত কেপে উঠে,আঙ্গুল গুলো কেমন যেন নাড়ছে।
সঙ্গে সঙ্গে রাসেল চিৎকার দিয়ে বলে,
“ডাক্তার ঈশানের রেসপন্স ফিরে এসেছে…….!
ডাক্তার ছুটে এসে ঈশানকে চ্যাকাপ করে ।ডাক্তারের মুখে ফুটে উঠে একচিলতে হাসি।ঈশান রিকোভার করেছে থ্যাংস গড।
খুশিতে রাসেল কেদে দেয়।আবারো তবে দুই বন্ধু এক হবে কিন্তু ঈশার মৃত্যুর ঘটনা শুনলে কি করবে সে……!
#চলবে………
যাদের গল্পটা পড়ার মতো দৈর্য্য নাই তাদের পড়ার দরকার নাই।