#রঙ_বেরঙের_জীবন
পর্ব(১১)
#নুশরাত_জাহান_মিষ্টি
রাত্রী ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। কে জানে শান্তর শর্তটি কেমন হয়! রাত্রীকে প্রচন্ড ভয় পেতে দেখে শান্ত অট্টহাসিতে মেতে উঠলো। শান্তর হাঁসির শব্দে চোখ মেলে তাকালো রাত্রী। শান্ত কোন রকমের হাঁসি আটকে বললো,” আমার বন্ধু হিসাবে তোমাকে চাই”।
রাত্রী বিষ্ময় নিয়ে শান্তর দিকে তাকিয়ে রইলো। শান্ত পুনরায় বললো,” শর্ত দিলাম বলে মানতে হবে এমন নয়। তোমার মন যদি আমারে বন্ধু হিসাবে মেনে নেয় তবেই রাজি হইয়ো”।
শান্ত চলে গেলো। রাত্রী শান্তর চলে যাওয়ার দিকে দৃষ্টি দিয়ে ভাবলো বন্ধুত্ব করাটা কি খারাপ হবে!
পিংকির শেষ বিদায়ের পূর্বে রফিক একান্তে পিংকির সাথে কথা বলতে চাইলো। পিংকির ঘর থেকে সবাইকে বের করে দিয়ে রফিক দরজাটা বন্ধ করে পিংকির পাশে গিয়ে বসলো। রফিক সাহেব পিংকির হাতটি ধরে তার মুখশ্রীতে তাকালো। সন্তান সন্তানই হয়, কি বা কালো কি বা সুন্দর! বাবা-মায়ের কাছে সকল সন্তানই সমান। ভালোবাসা বা সৌন্দর্য যাই হোক না কেন, একদিন তার মোহে পড়ে নিজ সন্তানদের কালো বলে অবঙ্গাসূচক বাক্য নিজ কন্ঠ থেকে উচ্চারিত করেছিলাম। সে পাপ থেকে আজো আমার মুক্তি হলো না! সেই তো এতগুলো বছর ধরে শাস্তি পাচ্ছি। রফিক পিংকির হাত ধরে বললো,” আমারে ক্ষমা কইরা দে মা”।
পিংকি বেশ চমকালো৷ পিংকি রফিকের মুখশ্রীতে তাকিয়ে দেখতে পেলো তার চোখ বেয়ে অশ্রুকোনা গড়িয়ে পড়ছে। পিংকি বিষ্ময় নিয়েই বললো,” আব্বা তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছো কেন”?
রফিক সাহেব শান্তগলায় বললেন,” সেটা কইবো আগে ক তো তোর জ্ঞান হওয়ার পর তোর আব্বা কখনো তোরে অবহেলা করছে? কখনো তোর আর রাতের মধ্যে তফাৎ করছে”?
” এসব কথা কইতেছো ক্যান আব্বা। তুমি তো আমাদের কখনো আলাদা চোখে দেখো নাই। বরং বোনের থেকে আমার সাথে বেশি সময় কাটাইতা, আমার সব শখ পূরণ করতা”।
রফিক সাহেব কিছুটা ভয় নিয়ে বললেন,” আইজ তোরে একটা সত্যি কথা কইতে চাই। জানি না সেটা শুইনা তোর কেমন লাগবে, হয়তো নিজের আব্বারে ঘৃনা করবি। তাও আইজ সময় হয়েছে তোর সবটা জানার। চইলা যাওয়ার পূর্বে নাহয় ঘৃনাই করলি এই আব্বা নামের পাপীরে”।
” আব্বা তুমি এইভাবে কইতেছো ক্যান? কি হইছে আব্বা”?
” কিছু কইস না পিংকি, শুধু শোন আমার কথা”।
পিংকি রফিকের কথামতো চুপ করে গেলো। পিংকি জানে না তার বাবা কি বলবে! তবুও বুঝতে পেরেছে যাই বলুক না কেন সেটা খুব কঠিন সত্যি হইবো! রফিক সাহেব আস্তে আস্তে সব বললেন।(শান্ত যতটুকু বলেছে তার পর থেকে)
” তোর আম্মার ধারনা আজও আমি রাইসারে ভালোবাসি কিন্তু তা সত্যি নয়। রাইসারে আমি কোনদিন ভালোবাসি নাই সেটা রাইসাই আমার কাছে পরিষ্কার কইরা দিছে”।
পিংকি অবাক নয়নে রফিকের দিকে তাকিয়ে আছে। রফিক পিংকির মুখশ্রীতে তাকিয়ে বললেন,” আমি মাঝেমাঝে রাইসার সাথে দেখা করতে যাইয়াও ফেরত আইছি কারন রাইসা আমার সাথে দেখা করতে চায় নাই। তবে একদিন খুব জোরাজুরি করায় সে আমার সাথে দেখা করতে রাজি হইলো”।
রাইসার সাথে দেখা হওয়ার পর আমি রাইসাকে বললাম,” বিশ্বাস করো রাইসা আমি তোমারে ভালোবাসি। আমি তোমারে ছাড়া বাঁচমু না”।
” মোহ আর ভালোবাসা এক নয় দুলাভাই। আপনার মনে আমার জন্য যেটা আছে সেটা মোহ। সৌন্দর্যের মোহ। সত্যি বলতে আপনি ভালোবাসতেই জানেন না”।
রফিক চমকে উঠলো। জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে রাইসার দিকে দৃষ্টি দিলো। রাইসা সে দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বললো,” আপনি যদি ভালোবাসতে জানতেন তবে আজ আপনি রহিমাকে নিয়ে সুখী থাকতেন। ভালোবাসা সৌন্দর্য দেখে নয় মন দেখে হয়। অবশ্যই মনটা সুন্দর হতে হয়। সেই সুন্দর মনটা রহিমার আছে। কিন্তু আপনি সেটা দেখতে পাননি কারন আপনি ভালোবাসতে জানেন না। আমি আপনার ভালোবাসায় কেন নিজেকে বেধেছিলাম জানেন? আমি ভেবেছিলাম আপনি আমার মনটাকে ভালোবাসেন। কিন্তু না আপনি আমার মনকে নয় আমার সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন। এক সময় আমি ভাবতাম আমাদের দু’বোনকে দু’ধরনের কেন বানানো হলো! আজ আর আমি ভাবি না। আজ আমি বুঝতে পেরেছি দুনিয়ার এত রঙ্গ দেখানোর জন্য আমাদের এভাবে বানানো হয়েছিলো। আমার সৌন্দর্য আমার বোনের জন্য কাটা হয়ে দাঁড়াতে পারে এই ভয়ে আমার আব্বা, আম্মা আমারে মামা, মামীর কাছে পাঠিয়ে দিলো। কিন্তু ভাগ্য! সে বড় নিষ্ঠুর হয়। তাই তো আমি না চাইতেও আমার বোনের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছি”।
একটু থেমে রাইসা পুনরায় বললো,” আপনি মোহে পড়েছেন। মোহ কেটে গেলে ভালোবাসাও হারিয়ে যাবে। এখন আপনি বলতে পারেন মোহে পড়লে এতবার কেন ছুটে আসছেন আমার কাছে! আপনার ছুটে আসা আপনার ভালোবাসার প্রমাণ দেয় না! না দেয় না। কারন ভালোবেসে নয় বরং আপনি মোহ এবং পাপবোধ দুটোর জন্য এখানে ছুটে আসছেন বারবার। তাই আপনার জন্য আমার একটি উপদেশ, পাপবোধ মেটাতে আমার কাছে নয় রহিমার কাছে যান। শুনে রাখুন রহিমা ভালো থাকলে আমিও ভালো থাকবো”।
সেদিন আমি না বুঝলেও রাইসার মৃত্যুর পর ঠিকই বুঝেছিলাম আমি তার সৌন্দর্যের মোহে আটকে পড়েছিলাম। তারে আমি সত্যি ভালোবাসলে তার মৃত্যুতে পাগল হয়ে যেতাম। তারপর থেকে রহিমার সাথে ভালো ব্যবহার করার চেষ্টা করি। তোদের গায়ের রঙ নিয়ে কটুক্তি করায় রহিমা আমার পাপরে কখনো ক্ষমা করার কথা ভাবেনি। আমি সেদিন সৌন্দর্যের মোহে এতটাই অন্ধ ছিলাম যে নিজ সন্তানদের গায়ের রঙ নিয়ে কটুক্তি করতেও বাঁধেনি। তবে আমার এই পাপের শাস্তি আমি পেয়েছিলাম, সেটা দিয়েছিলো আমার সন্তান পলাশ। আমার ছোট্ট পলাশ যেদিন থেকে আমারে আব্বা বইলা ডাকা বন্ধ করে দিয়েছি। সেদিন থেকে আমি উপলব্ধি করছি আমি কত বড় পাপ করেছি! আজও সেই পাপের শাস্তিস্বরূপ পলাশের কন্ঠে আব্বা ডাকটি আর শোনা হলো না।
তারপর থেকে সবসময় তোদের ভালো রাখার চেষ্টা করেছি। কত রাত রহিমার পায়ের কাছে ছিলাম তার হিসাব নেই! পলাশের মুখে আব্বা ডাক শোনার জন্য কত চেষ্টা করলাম কিন্তু হলো না! তারপর থেকে চলছে এরকম। রহিমা, পলাশের অবহেলা একটা সময় আমার মনেও সৌন্দর্যের প্রতি ঘৃনার জন্ম দিলো। সৌন্দর্যের মোহে পড়ে আমি কত বড় পাপ করেছি তা বুঝতে পারলাম তাদের ব্যবহারে। তবে পাপবোধ উপলব্ধি করে সবসময় তোদের ভালোবাসা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সমানভাবে না পারলেও রাতের থেকে বেশি ভালোবাসা তোদের দেওয়ার চেষ্টা করেছি। রাইসার মোহে পড়ে যে পাপ আমি করেছি তার মাসুল আজ সবাই দিচ্ছে।
পিংকি কান্নারত অবস্থায় রফিকের সাহেবের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ রফিক সাহেব কিছুটা ব্যঙ্গ করে হাঁসলেন তারপর বললেন,” আজ তুই আমারে আব্বা বলা ছাইড়া দিলে আমি কিছু মনে করমু না। আমি ভাইবা নিমু এইডা আমার পাপের শাস্তি”।
পিংকি কিছু না বলে রফিক সাহেবকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো। কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বললো,” আমারে সত্যিটা ক্যান কইলা আব্বা? আমি তোমারে কেমনে মাইনা নিমু আব্বা”?
বাক্যটি বলে পিংকি রফিক সাহেবকে ছেড়ে দিলেন। রফিক সাহেব বুঝলেন তার মেয়ে তার সঙ্গটা চাচ্ছে না। তাই তিনি চলে গেলেন।
পিংকির শেষ বিদায়ে পিংকি খুব কান্না করলো। পলাশ, রহিমা বেগম তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলো। রাত্রী দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো। পিংকি কয়েক মূহুর্ত রাত্রীর মুখশ্রীতে তাকিয়ে রইলো। তারপর সবাইকে বিদায় জানিয়ে পাড়ি দিলো নতুন ঠিকানায়। রফিক সাহেব দূর থেকেই পিংকিকে দোয়া করলো। মেয়ের কাছে যাওয়ার সাহস আর হলো না তার। এরপর রাত্রীর একদিন বিয়ে হবে, সেদিন তাকেও সব বলতে হবে। সেদিন হয়তো রাত্রীও তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন। রফিক সাহেব পূর্বেই ঠিক করে রেখেছিলেন মেয়েদের বিয়ের দিনই তাদের সব জানিয়ে দিবেন৷ বিয়ের পূর্বে জানালে দিবা-রাত্রী প্রতিটা মূহুর্ত তাদের ঘৃণাভরা দৃষ্টি সহ্য করতে হইবো, যেটা সহ্য করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। পিংকির বিদায়ের পর ধীরে ধীরে অতিথিরাও চলে যেতে লাগলেন। রাত্রীর নানা ভাই, মামা, মামী, শান্ত এবং সাথী থেকে গেলো। রুপমো আছে কিছুক্ষন পর চলে যাবে। রুপম রাত্রীর হাত ধরে তাকে একটু আড়ালে নিয়ে গেলো। খুব শান্তভাবে বললো,” সব ভুইলা যাও রাত”।
” চাইলেই কি সব ভোলা যায়? বাবা নামক মানুষটির মুখোমুখি দাঁড়াবো কিভাবে আমি এখন”?
রুপম স্বাভাবিক ভাবে বললো,” পাপ কাউকে ছাড়ে না রাত। সময় হইলে তার পাপের শাস্তি সেই পাইবোই। তাই বইলা তুমি ভেঙে পইরো না। তুমি কাকি আম্মারে যেমন নিজের মা ভাবতা তেমনি ভাবো। কাকি আম্মা তোমার মা হতে চায় না তো কি হইছে তুমি তারে তোমার মা বানাইয়া লও রাত”।
রাত্রী জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে রুপের দিকে তাকালো। রুপ বললো,” পিংকির অভাবটা পূরণ কইরা দেও। কাকি আম্মা না চাইলেও তার কাছাকাছি থাকো। দেখবা সব ঠিক হইয়া যাইবো”।
রাত্রী ছোট্ট করে ‘আচ্ছা’ বললো। রুপম চলে যাওয়ার পূর্বে জিজ্ঞেস করলো,” শান্ত তোমারে কি শর্ত দিছে”?
রাত্রী চমকালো না। কারণ সে জানি রুপ তাদের সব কথা শুনেছিলো। তবে তখন শর্তটা না বলায় রুপের অজানা শর্তে কি ছিলো! রাত্রী শান্ত কন্ঠে বললো,” বন্ধু হতে চাইছে”।
” তো হও”।
রাত্রী জানতো রুপ তাকে এটাই বলবে। তবুও রুপের মুখ থেকে শুনতে পেয়ে ভালো লাগলো। রাত্রী হঠাৎ একটি আবদার করে ফেললো,” রুপ আমারে একটু জড়াইয়া ধরবা”।
রুপম মুচকি হেঁসে জড়িয়ে ধরলো। রাত্রীর মনে এখন অনেককিছু চলছে সেটা বুঝতে পারলো রুপ। রাত্রীকে জড়িয়ে ধরে রুপ আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মনেমনে বললো,” রাতের জন্য কাকি আম্মারে তো অনেক কথাই কইলাম৷ তবে সত্যি কি এরম পাপীরে ভালোবাইসা সব ভুইলা যাওয়া যায়! কিন্তু সারাজীবন যার সাথে কাটাতেই হইবো তার সাথে ভালোবাসাহীন জীবন কাটানোডাও কি ঠিক! সারাজীবন ভালোবাসাহীন কাটানোর চাইয়া একটা সুযোগ দিলে ক্ষতি কি! যহন তার সাথে কাটাইতেই হইবো তহন তারে ভালোবাসলে ক্ষতি কি”!
__________
রুপের কথা মতো রাত্রী রহিমার কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করছে। রহিমা মেয়ে চলে যাওয়া বেশ ভেঙে পড়েছেন। রাত্রী রহিমা বেগমকে বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পিংকি তো পুনরায় আসবে এখানে। কিন্তু মায়ের মন সে কি সহজে বুঝতে চায়! তবে রাত্রী একটা ঘটনা লক্ষ্য করলো, রাত্রী এত কথা বলছে কিন্তু রহিমা বেগম তাকে বকাবকি করছে না। এমনকি চলে যেতেও বলছে না! রহিমা বেগম মনেমনে একবার রাত্রীর মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতে চাচ্ছেন৷ কিন্তু দিতে পারছেন না! কোন একটা বাঁধা তাকে রাত্রীকে আপন করে নিতে বারবার আটকাচ্ছে।
মামী এসে রাত্রীকে পাঠিয়ে দিলো। আজকের রাতটা তিনিই রহিমা বেগমের সাথে কাটাবেন। মামীর কথা পরিপেক্ষিতে রাত্রী কিছু বললো না। চুপচাপ চলে গেলো। মামী বেশ কিছুক্ষন আম্মাকে বোঝালো।
রহিমা বেগম হঠাৎ করে মামীকে বললেন,” আমাগো সংসারডা নতুন কইরা শুরু করা কি ঠিক হইবো আমার”?
রহিমা বেগমের এই কথাটি মামী এই মূহুর্তে আসা করেননি। মামী শান্তভাবে বললো,” পাপ তোমরা দু’জনেই করছো। হয়তো তোমার সাথে যে অন্যায়টা হইছে তার যন্ত্রণা অনেক। তাই বইলা যন্ত্রণা দেওয়া লোকটারে তুমি কখনো শাস্তি দিতে চাওনি, কারন তুমি শত ভুলের পরো তার লগপ থাকতে চাইছো৷ তার লগপ থাকতে চাওয়ার আকাঙ্খায় নিজেও অপরাধ করছো। তাই তোমরা চাইলে নতুন কইরা সব শুরু করতেই পারো”।
রহিমা বেগম চমকে উঠলেন। তিনি পাপ করেছেন! রহিমা বেগম কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললেন,” আমি পাপ করছি মানে”?
মামী নিরব হাঁসলেন তারপর বললেন,” আমি সব জানি আপা। তয় কোনদিন কাউরে বলমু না৷ আমার শুধু একটাই চাওয়া আপনে রাতরে ভালোবাসেন, হয় মাইয়া ভাইবা নয় নিজের পাপবোধ থেইকা মুক্তি পাওয়ার উপায় হিসাবে”।
রহিমা বেগম ডুকরে কেঁদে উঠলেন। মামী তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো,” চিন্তা কইরেন এ কথা কেউ জানবো না। থাউক না কিছু কিছু পাপ সবার আড়ালে”।
অন্যদিকে,
রাত্রী নিজ রুমে বসে পিংকির সাথে কাটানো মূহুর্তগুলোর কথা ভাবছিলো। হঠাৎ শান্ত কোথা থেকে এসে বললো,” কি তোমার মন বন্ধু হতে চায় না বুঝি”?
রাত্রী চমকে পিছনে ঘুরে তাকালো। শান্ত পুনরায় বললো,” সমস্যা নাই। কাল আমরা চলে যাবো”।
রাত্রী এবার মুখ খুললো,” আমি আপনার বন্ধু হতে রাজি”।
শান্ত খুশিতে চিৎকার দিলো,” সত্যি”?
রাত্রীর থেকে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ানো পেয়ে শান্ত বলে উঠলো,” দুধের সাধ ঘোলে মেটানোই শ্রেয়। নাই বা হলাম প্রিয়জন, বন্ধু হয়েই রই”।
রাত্রী স্বাভাবিকভাবে বললো,” আপনি যা ভাবেন। তা কাল আপনারা চলে যাচ্ছেন বুঝি”?
শান্ত মন খারাপ করে বললো,” হ্যাঁ। তবে কাল সারাদিন বন্ধুর সাথে কাটিয়ে যেতে চাই। বলি বন্ধুর সময় হবে সারাটা দিন আমায় দেওয়ার? তার প্রিয়জন মানবে এটা”?
রাত্রী বুঝতে পারলো না। না বুঝেই জিজ্ঞেস করলো,” প্রিয়জন মানবে বলতে”?
” তোমার রুপ”।
রাত্রী বেশ চমকালো। রাত্রীর চমকানো দেখে শান্ত নিরব হাঁসলো তারপর বললো,” খুব ভালোবাসো তাকে তাই না”?
” হ্যাঁ”।
রাত্রীর স্বীকারোক্তি পেয়ে মনেমনে বেশ আহত হলো শান্ত। তবে তা প্রকাশ করলো না। সে তো জানতো এটাই সত্যি তবে কেন কষ্ট হচ্ছে সেটাই বুঝছে না সে! শান্ত মুচকি হেঁসে বললো,” তার সাথে পরিচয় করাবে”?
” আপনি তো রুপের সাথে বন্ধুত্ব করলেন”।
” সেটা তো পলাশের বন্ধু হিসাবে। এখন তো তোমার ভালোবাসা হিসাবে পরিচিত হতে চাই”?
একটু থেমে পুনরায় বললো,” পরিচয় করাবে সে হিসাবে”?
রাত্রী জানে রুপ এতে কষ্ট পাবে না। কারণ রুপ এমন নয়। তাই রাত্রী বললো,” আচ্ছা। কাল আমরা একসাথে ঘুরবো”।
শান্ত মুখে হাঁসি ধরে রেখে বললো,” আচ্ছা। তবে কালকের সারাদিন আমরা খুব ঘুরছি”।
রাত্রী খুশিমনে বললো,” হ্যাঁ”।
তারপর কিছুক্ষন বন্ধু হিসাবে রাত্রীর সাথে গল্প করে কাটিয়ে দিলো শান্ত।
চলবে,
[ভুলক্রটি ক্ষমা করবেন ]