আরোহী পর্ব ৩

0
279

#আরোহী
#পর্ব_০৩
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
__________
‘আমি তোমার সাথে এক রাত কাটাতে চাই। বিনিময়ে যত টাকা প্রয়োজন আমি তোমাকে দেবো। ‘

সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার মুখ থেকে এমন জঘন্য কথা শুনবার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

দুই আঙুলের মাঝ বরাবর সিগারেট ধরিয়ে রেখেছে মুখ থেকে ধোঁয়া বেরিয়ে তা আমার মুখের উপরে আঁচড়ে পরছে, এমন জঘন্যরকম গন্ধ নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে আমার কোনো কিছু ভাববার ও সময় পেলাম না হুট করে হাত ধরে টানতে শুরু করে। তার পুরুষালী শক্তপোক্ত হাতের টানে আমি তার দিকে হিঁচড়ে যাচ্ছি। রাস্তায় কিছু মানুষ তাকিয়ে আছে আমি সাহায্য চেয়ে চিৎকার করছি কেউ এগিয়ে আসছে না। আমি তার হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে আর্তনাদ করছি, ‘ প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন কে আপনি? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? ‘

সে আঁড়চোখে আমার দিকে আবারও মুখ থেকে দূর্গন্ধ সিগারেটের ধুঁয়া ছুঁড়লেম। টান দিয়ে মুখ দিয়ে সিগারেটের ধুঁয়া প্রবেশ করতে আমি কাশি দিতে লাগলাম। সে আমার হাত শক্ত করে ধরেছে, হাত আমার ব্যথায় টনটন করছে। অনেক জোরাজোরি করেও হাত ছাড়াতে পারিনি। ভয়ে আমার চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরছে। নিজেকে আজ অনেক অসহায় লাগছে, মনে মনে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসছে, আল্লাহ কে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে, ‘ কেনো একটা মেয়ে একটা ছেলের কাছে অসহায়? কেনো মেয়েদের দূর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে? কেনো একটা নরপশু পুরুষের কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতা একজন নারীর নেই? কেনো তারা এত দূর্বল? ‘

কান্নার কারণে মুখ দিয়ে টু শব্দ টিও বের হচ্ছে না। আমি তার সাথে যেতে চাই না। তবুও সে ভরা রাস্তায় আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। সকলে তাকিয়ে দেখছে কেউ আগ বাড়িয়ে সামনে আসছে না। তাদের দেখো আমার মানুষ নামক জাতির উপর ঘৃণা লাগছে। মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করছি আমাকে বাঁচাতে কাউকে পাঠিয়ে দাও আল্লাহ।
__________

বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে বের হয়েছি। হুট করে মিতার কলে একটা কল আসলো সে বিচলিতস্বরে বলল, ‘ আমাকে এখনই বাড়ি ফিরতে হবে আম্মার অবস্থা ভালো না। ‘

আমি মিতাকে আমার গাড়ি দিয়ে ড্রপ করতে চেয়েছিলাম তবে সে বলল, একাই যেতে পারবে। আমি আর নিপা রয়ে গেলাম। নদীর স্বচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। দক্ষিণা বাতাসে নদীর বুকে পানি ঢেউ খাচ্ছে আমি তা উপলব্ধি করে নিজেকে লাকি মনে করছি, নিপা অস্ফুটস্বরে বলল, ‘ তোর একা আসা কি ঠিক হয়েছে? আঙ্কেল মোটেও বিষয় টা ভালো চোখে নেবে না। আরোহী তোর আরাফকে সাথে নিয়ে আসা উচিত ছিল। যদি কিছু হয়ে যা,, ‘

নিপা একটু বেশি বেশি বলছে আর এখন তো ওর বলা কথা আমার কাছে একদম আমার আব্বুর কথার মতো বিষাদ লাগছে। আমাকে একা কোথাও বের হতেই দিতে চায় না বুঝিনা কেনো? আমারও তো বাহিরে স্বচ্ছ প্রকৃতি উপভোগ করতে ইচ্ছে করে নাকি সেটা কেউই বুঝে না। তবে আমারও মনে হচ্ছে আরাফকে নিয়ে আসা উচিত ছিল, সেও তো আমার বন্ধু। আমি মিনমিন করে বললাম,

‘ বেশি বকবক করিস না ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দেবো। ‘

নিপা আমার দিকে রাগী চোখে তাকালো কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর ফোন বেজে উঠল, ফোন কল রিসিভ করে বলল, ‘ আমরা নদীর ঘাটে বসে আছি আপনি এদিকেই আসুন। ‘

ফোনের অপরসাইডের কারো কথা শুনলাম না শুধু ওর কথা শুনে বুঝলাম কেউ একজন আসছে। ফোনের অপরপাশ থেকে সে কিছু একটা বলল, তার পর নিপা বলল, ‘ আচ্ছা আপনি ওয়েট করেন আমি আসছি আপনাকে রিসিভ করতে। ‘

বলে কল কেটে দেয়, আমি নিপার উদ্দেশ্য কোনো প্রশ্ন ছুঁড়ার আগে সে আমার অবাক করে দিয়ে বলল, ‘ তুই এখানেই বসে থাকবি আমি যাবো আর আসবো। ‘

বলে ছুটলো নিমিষেই মানুষের ভিড়ে তলিয়ে গেলো। আমি কিছুক্ষণ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে মাথা ঘুরিয়ে আবারও নদীর বুকে তাকালাম। ইচ্ছে করছে পানিতে নেমে নদীর বুকে ভাসতে থাকি। আমার ভাবনায় পানি ঢেলে কেউ একজন হুট করে আমার হাত ধরে টেনে দাঁড় করায় নিজের সামনে আমি তাকে দেখে চিনবার চেষ্টা করি। আমার মস্তিষ্ক আমাকে জানান দিচ্ছে এই লোকটাকে আমি চিনি না। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম,

‘ আপনি কে আর এভাবে আমার হাত ধরার সাহস কোথায় পেলেন? ‘

(তারপর উপরে ঘটে যাওয়া ঘটনা)

সে আমার হাত ধরে টেনে এনে একটা বড় কালো গাড়ির সামনে্ দাঁড় করালো। আমি ভয়ে চুপসে গেছি। আমার দুই বাহু চেপে ধরে গাড়িতে ঠেলেঠুলে উঠাতে যাবে তখন ছেলেটার কাঁধের উপর কেউ শক্ত করে হাত রাখল,

লোকটা আমাকে ছেড়ে দিয়ে পেছনে থুরে তাকাতেই তার নাক বরাবর কেউ একজন সর্বোচ্চ শক্তি দিয়েই ঘুষি মারল, সে দুি হাত দিয়ে নাক চেপে ধরল৷ নাক দিয়ে রক্ত পরতে লাগল। লোকটা মাটিতে ধপ করে বসে পরল আমি সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে দেখে, দূর্বল হয়ে পরি, কান্না করে দেই লোকটাকে এড়িয়ে গিয়ে তাকে আঁকড়ে ধরলাম। সেও আমাকে এক হাত দিয়ে আগলে নিয়ে পেছনে ঠেলে দেয়। পেছন থেকে কারো স্পর্শ পেয়ে পেছনে ঘুরে দেখি নিপা, করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে কান্না জুড়ে দেই। ওদিকে আরাফ মদ*মাইশ ছেলেটাকে মেরে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে ঘায়েল হয়ে ছেলেটা আরাফকে ও পাল্টা আঘাত করছে। কিন্তু তাতে বেশি লাফ হচ্ছে না ছেলেটা বেশি ঘায়েল হয়ে গেছে।
ছেলেটাকে মেরে আধামরা করল তার রক্তাক্ত দেহ রাস্তায় ফেলে দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলো৷ চোখ দুটো রাগে আগুন হয়ে রক্তবর্ণ ধারণ করেছে আমার সামনে দাঁড়িয়ে কর্কশকন্ঠে চেচিয়ে বলল, ‘ বুদ্ধি লোভ পেয়েছে তোমার একা একা কেন এসেছো এখানে? যদি আজ ঠিক সময়ে আমি না আসতাম ভাবতে পারছো কি হতো? তোমার এই বোকামির জন্য কি জবাব দিতাম আমি তোমার বাবার কাছে? ‘

আমার বলার মতো কোনো ভাষাই সঞ্চয় করতে পারছি না। ঠাই মাথা নত করে দাঁড়িয়ে রয়েছি অনবরত কাঁপছে হাত পা আমার। চোখ দিয়ে অশ্রুপাত তো গোটছেই। নিপা আমাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে নিলো৷ আমরা আগের জায়গায় নদীর ধারে এসে দাঁড়ালাম। আরাফ গাড়ি নিয়ে এসে আমাদের সামনে ব্রেক করল, বারবার হর্ণ বাজিয়ে আমাদের গাড়িতে উঠতে বলছে। নিপা হাত ধরে টেনে গাড়িতে উঠে বসালো। আরোহী এখনো কুঁকড়ে কাঁদছে আরাফ স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে পেছনে না তাকিয়েই কন্ঠকঠোর করে বলল,

‘ নিপা ওকে চুপ করতে বলো আমি আসলে কিন্তু ঠাসিয়ে চড় বসাবো৷ ‘

এভাবে আরাফ আমার সাথে কখনো কথা বলেনি। আজ বলছে আমার কষ্টে বুক চিড়ে কান্না আসছে। দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে কাঁদছি। নিপা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, ‘ তখন আমার ফোনে আরাফ ভাইয়াই কল দিয়েছিল। আমি তাকেই রিসিভ করতে গিয়েছিলাম। আল্লাহর রহমতে ভাগ্যিস আরাফ ভাইয়া এসেছিল নয়তো কি হতো আরোহী? ‘

আমি বলার মতো কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছি না। দুই হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরি নিপাকে, বাড়িতে এসে পৌঁছালাম দৌঁড়ে ছুটে রুমে চলে আসি দরজা আটকে বাথরুমে চলে আসি, ত্রিশ মিনিট পর্যন্ত শাওয়ার নেই৷ চোখদুটো লাল হয়ে গেছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতেই রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। একটা ছেলে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকপ টাচ করেছে ছিহহ, শাওয়ার নেওয়ার সময় হাতের বাহু ঘষতে ঘষতে লাল করে ফেলেছি তবুও আমার শান্তি হচ্ছে না। এমন সময় এ্যানি দরজায় কড়া নাড়াচ্ছে, নিজেকে স্বাভাবিক করে দরজা খুলে দেই, এ্যানি এক নজর আমার দিকে তাকিয়ে পরক্ষণে বলল, ‘ ম্যাম আপনাকে স্যার হল রুমে ডাকছেন ‘

আমি ভ্রুকুটি কুঞ্চন করে প্রশ্ন ছুড়ি, ‘ কোন স্যার? ‘

‘ আরাফ স্যার। ‘

আমি এ্যানির অগোচড়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, ‘ তুমি যাও আমি আসছি। ‘

গলায় ওড়না জড়িয়ে রুম থেকে বের হলাম। হল রুমে এসে দাঁড়াতে সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে আমার দিকে তাকালো। সামনে এক বড় কাচের টেবিলের উপর একটা স্মার্টফোন ছুঁড়ে বলল, ‘ তুমি ছেলেটা কে আগে থেকেই চিনতে? প্রেম করতে ফেইক আইডি দিয়ে? ‘

কি বলল আরাফ সব কিছু জেনো ধোঁয়াশা ধোঁয়াশা।

‘ আরাফ আমাকে খুব ভালো করেই তুমি চেনো? আমি চিনি না তাকে আর না তার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ ছিল। ‘

আরাফ জড়ানো কন্ঠে বলল, ‘ আমার তো এখন মনে হচ্ছে আমি তোমাকে চিনতেই পারিনি আরোহী ‘

‘ বিশ্বাস করো আরাফ আমি চিনি না তাকে? ‘

আরাফ কোনো কথা না শুনে চলে গেলো। এতবার পিছু ডেকেও সে ফিরে তাকালো না। সোফায় বসে থাকা নিপা ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেঞ্জারের কথোপকথন চেক করে স্বস্ত হয়ে গেলো। হাত কাঁপছে ওর কাপা গলায় ফোনটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আরোহী ‘

দৃষ্টি নত করে নিপার দিকে তাকালাম পরক্ষণে হাত থেকে ফোনটা নিলাম। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো কথোপকথন চেক করতে চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরল। হাত কাঁপতে কাঁপতে মাটিতে পরে গেলো। আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না মাথা ঘুরে ফ্লোরে বসে পড়লাম। সামনে থেকে ছুটে আসল নিপা আমাকে আঁকড়ে ধরে বলল, ‘ আরোহী ঠিক আছিস? ‘

আমি কথার কোনো প্রতত্ত্যর করলাম না। নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে আমার ভেতর ও বাহির জুড়ে, আমি এই মুহূর্তে নির্বাক কথোপকথনে কি জঘন্য কথা ভাবতেই গা ঘিনঘিন করছে। ফ্লোরে দুইহাত দিয়ে আছাড় মেরে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠল। আরোহী কে দুই হাতে আগলে নিলো নিপা।
___________

খাবার শেষ হলে সকলে উঠে যায়। দুজন স্টাফ ডাইনিং টেবিলের উপর থেকে এ্যঁটো থালাবাসন কিচেনে বেসিনে নিয়ে রাখল আরও দুজন স্টাফ টেবিল পরিস্কার করছে। সকলে এক সাথে বসে গল্প করছিল, তখনই এক বিকট শব্দে বজ্রপাত হলো। সঙ্গে সঙ্গেই পুরো বাড়িতে অন্ধকার ছেয়ে আসল। কারেন্ট চলে গেছে, কিছু স্টাফ হাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, দুইটা মোমবাতি নিয়ে নিলো আরোহী একটা তার বাবা কে দিয়ে রুমে চলে যেতে বলল, আরোহীর আব্বুর সকালে অফিসে তারাতাড়ি যেতে হবে কারণ তার খুবই গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে। মোমবাতি হাতে নিয়ে তারা স্বামী স্ত্রী তাদের রুমের উদ্দেশ্য রওনা দিলেন। আরাফ উঠে চলেই যাচ্ছিল তখন আরোহী এক হাত আরাফের সামনে ধরে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘ তুমি ওইদিকে কোই যাও? ‘

‘ কেন রুমে? ‘

‘ রুমে যেতে পারবে না এখন ‘

‘ কেন? ‘

‘ তুমি এখন আমার সাথে আমার রুমে যাবে ‘

‘ কিহহ কেন? ‘

‘ এত কেন কেন করছো কেন? ‘

‘ কই না তো?

‘ চলো আমার সাথে ‘

‘ কিন্তু কেনো? ‘

‘ আমি বলেছি তাই ‘

তৎপর জোর করেই আরোহী আরাফকে বেলকনিতে নিয়ে আসল, আকাশে হঠাৎ করেই মেঘ ডেকে উঠলো৷ সঙ্গে সঙ্গে আকাশ ভেদ করে নেমে আসলো বৃষ্টির পসরা৷ বৃষ্টির শব্দ বাড়ছে সেই সাথে বাড়ছে আরোহী উৎসাহিত হয়ে উঠছে, জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত বের করে বৃষ্টি তে হাত স্নাত করছে। আকাশে গর্জন শোনা যাচ্ছে সাথে বিদুৎ চমকাচ্ছে, বিদুৎের চমকানো আলোয় সবটা ক্লিয়ার দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু কোণা হাতের তর্জনী তে জমাট করছে আরোহী পরক্ষণে গ্রিলের ফাঁক থেকে হাত বের করে ছিটিয়ে দিলো আরাফের দিকে, প্রকৃতির ঠান্ডা বাতাসে গুটিশুটি হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল কাঁপছে সে তখন আবার ঠান্ডা পানির স্পর্শ যে কতটা শরীরে বরফের মতো হানা দেয় তা বলা মুশকিল। আরাফ হন্তদন্ত হয়ে গ্রিলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে সেও হাতে পানি জমাট করে আরোহীর দিকে ছুঁড়ে এতে আরোহী শীতে কেঁপে কেঁপে উঠে। দুজনেই পাল্লা দিয়ে পানি ছিটাছিটি করছে। বারান্দার মেঝে পানিতে চিপচিপে হয়ে গেছে আরোহী লাস্ট পানি আরাফের উপর ছিটিয়ে দিয়ে পালানোর জন্য ছুটলে পানিতে পা পিছলে যায়৷ আরাফ তার শক্তপোক্ত হাত দিয়ে আরোহীকে কভার করে নেয়৷ পরতে দেয় না তাকে। আরোহী আরাফের হাতের মধ্যে আবদ্ধ সে মিনমিন করে বলে, ‘ যখনই পরে যাবে এইভাবে আগলে নেবো। ‘

‘ দেখা যাবে ‘

বলে উঠে দাঁড়ালো আরাফের অবাধ্য চুলগুলো ধরে জোরে টান মারল। অস্ফুটস্বরে আরাফের মুখ দিয়ে ‘ আউচ ‘ সব্দটি বের হয়ে আসল। আরোহী হাত দিয়ে মুখ টিপে টিপে হাসছে। গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত আবারও বের করে দিলো। বৃষ্টির পানি তার হাত উপচে পরছে, ঠান্ডা শীতল জলে শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে হারিয়ে ফেলছে। গায়ের পশম দাঁড়িয়ে উঠছে মনের মধ্যে এক প্রশান্তি অনুভব করছে তবুও কিছু একটা মিসিং সেটা কি?

আরাফ খুব ভালো করেই জানে আরোহী বৃষ্টিবিলাসী সে বৃষ্টি পেলে আর কিছুই লাগে না। ভূত পেত্নীর মতো বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত এখানে দাড়িয়ে থাকবে এদিকে আরাফের চোখে পরছে বৃষ্টির হাল্কা বাতাসে শীত শীত ভাব ছড়াচ্ছে আরোহী হাত পা শীতে কাঁপছে। দুই দিকে মাথা দুলিয়ে আরাফ রুমে চলে গেলো। শীতে কাঁপবে তবুও এই মেয়ে রুমে আসবে না। আলমারীর কাভার্ড থেকে একটা জ্যাকেট বের করে নিয়ে আসল আরাফ।

পেছনে দাড়িয়ে আরোহীকে জ্যাকেট পরিয়ে কভার করে দেয়। আরোহী পেছন না তাকিয়ে জ্যাকেট আঁকড়ে ধরে বলল, ‘ জানো আরাফ, ‘

‘ কি? ‘

‘ এই বৃষ্টি ভেজা রাতে আমার এখন হালিম চাচার দোকানের খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করছে। ‘

‘ লাইক সিরিয়াসলি আরু? এই ঝড় তুফানে তোমার বাহিরে খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করছে। বাড়িতে বলো স্টাফ রান্না করে দিবে। ‘

‘ নাহহহ, আমার উনার দোকানের টা খেতে ইচ্ছে করছে। আর আমি ইচ্ছা প্রকাশ করেছি খেতেই হবে বলিনি। ‘

বলে মুখ গুমরা করে রুমে চলে আসল। বিছানার উপর পায়ের উপর পা তুলে বসল। বারান্দা থেকে রুমে আসল আরাফ, আরোহীর দিকে এক নজর তাকিয়ে রুম ত্যাগ করল। আরোহী আরাফের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অভিমান নিয়ে বিছানায় ধপাশ করে শুয়ে পরল। ঘন্টাপর রুমের দরজার খটখট আওয়াজে উঠে বসল আরোহী কারেন্ট এখনো আসেনি বাহিরে এখনো বৃষ্টি হচ্ছে বেলকনির দরজা খোলা ও রুমের একটা জানালার থাই খোলা থাকায় রুমের মধ্যে শাইশাই করে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে, আরাফ চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর দরজা লক করে চাদর মুড়ো দিয়ে শুয়ে পরে। এখন শীত করছে তার মোটেও উঠতে ইচ্ছা করছে না তারউপর অন্ধকার৷ ফোনের ফ্লাশলাইট টা অন করে বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে দিলো। ফোনের ফ্লাশলাইট সামনে ব্যক্তির উপর আঁচড়ে পরতেই আরোহী দম্ভতম্ভি করে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,

‘ আরাফ তুমি ভিজলে কি করে? ‘

‘ শখে ‘ ত্যাড়া করে উত্তর দিলো আরাফ।

আরোহী দাঁত কটমট করে তাকিয়ে রইল তার দিকে। আরাফ রুমে ঢুকে একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিলো আরোহীর দিকে ভ্রুকুটি কুঞ্চিত করে প্রশ্নসূচন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরোহী। আরাফ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘ তোমার হালিম চাচার দোকানের খিচুড়ি নাও, খাও। ‘

মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গেলো। আমি হতবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আরাফের দিকে তাকিয়ে রইলাম অস্ফুটস্বরে মুখ থেকে বের হয়ে আসল,

‘ তুমি আমার জন্য খিচুড়ি আনতে গিয়েছিলে তাও এই ঝড়তুফান মাথায় বহন করে? ‘

‘ তুমি খেতে চেয়েছো আর আমি না করি কেমনে বলো। তোমার ইচ্ছার প্রাধান্য আমার কাছে অনেক বেশি তা তুমি জানো। এখন নাও ঠান্ডা হয়ে গেলে ভালো লাগবে না। ‘

আমি নির্বাক্য, কি বলবো আমি এখন আরাফের কথার পিঠে তা আমার জানা নেই। হারিয়ে গেলাম এক চিন্তাধারায়। হুঁশশ ফিরে পেলাম আরাফের হাচ্চির বিকট শব্দে, ঠান্ডায় নাক কষছে বেচারা। আমি চিন্তিত স্বরে বলে উঠলাম।

‘ এই ভেজা পোশাকে দাঁড়িয়ে থাকলে তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে আরাফ। ‘

আরাফ নিচু কন্ঠে বলল, ‘ আমার সাথে তো আর পোশাক নেই ভেজা গুলোই পরে থাকতে হবে। ‘

আরোহী এক আঙুল থুতনিতে রেখে বলল, ‘ দাঁড়াও কিছু করছি ‘

বলে আলমারির সামনে গেলো। কয়েকটা কাভার্ড খুঁজে কোমড় পর্যন্ত লম্বা একটা টপস বের করে নিয়ে আসে। সেটা আরাফের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে তাকে পরিধান করে আসতে বলল। রুমে ঘুটঘুটে অন্ধকার আরাফ সরল মনে তা নিয়ে চলে গেলো। জিজ্ঞেস ও করেনি এটা কি?

আরাফ বের হয়ে এসে দেখল আরোহী রুমে নেই। তবে বেলকনি থেকে টুকটাক শব্দ ভেসে আসছে।
আরাফ ধীর পায়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।
একটা মাঝারি সাইজের টি-টেবিলের উপর দুই প্লেট সাজানো সাথে একটা মোমবাতি। মোমবাতির হলুদপ রসনীতে হলুদ পরীর মতো লাগছে আরোহী কে আরাফের কাছে। বিষন্নতায় ডুবে যেতে ইচ্ছে করছে। মাঝেমধ্যে আরোহী কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের মধ্য খানে আড়াল করে রাখতে কিন্তু সেটা কি আধোও সম্ভব। আরাফ একটা চেয়ার টেনে বসল। আরোহী আরাফের সোজাসুজি চেয়ারে বসল। খিচুড়ি খেতে খেতে বারবার আরোহীর চোখ আরাফের উপরে গিয়ে আঁটকে যাচ্ছে। সাথে সাথে ফিক করে হেঁসে ফেলছে আরোহী। খেতে খেতে অর্ধেকের বেশি খেয়েই ফেলেছে কিন্তু এখন আর আরোহীর তার পেটের মধ্যে হাসি দমিয়ে রাখতে পারছে না৷ হাত থেকে প্লেট টা টেবিলের উপর করেই উচ্চ স্বরে ফিক করে হেঁসে দেয়। হাসির শব্দ শুনে মাথা তুলে তাকিয়ে রইল আরাফ, হাসির কারণ তার অজানা। প্রশ্নবাক্য ছুঁড়ে দিলো, ‘ হাসছো কেনো এমন করে? ‘

আরোহী এক হাত আরাফের বডির দিকে তুলে ধরল। হাসতে হাসতে বলল, ‘ খুবই সুন্দর লাগছে তোমাকে। ‘

আরাফের মাথায় কিছুই ঢুকলো না। মোমবাতির আলোয় নিজেকে পর্যবেক্ষণ করতেই লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো। রাগী গলায় বলল, ‘ তুমি শেষে কি না আমাকে লেডিস জামা পরতে দিলে? ‘

‘ আমি লেডিস তো লেডিস পোশাক দেবো না কি দেবো? ‘

‘ আরোহী ‘ দাঁতে দাঁত চেপে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে দুই হাত আরোহীর দিকে বাড়িয়ে দিলো। আরোহী সঙ্গে সঙ্গে উঠে রুমের মধ্যে ছুটে গেলো। অন্ধকারে কোথায় লুকিয়ে ছে তার ঠিক নেই। টপস দুই দিক দিয়ে ধরে বিড়বিড় করে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।
রুমের মধ্যে এসে টপস খুলে হাতে নিয়ে বিছানার উপর বসে পরল।

তারপর দুইদিন আরাফ রাগে মুখ ফুলিয়ে রাখে আরোহীর সাথে কথা বলে না। আর এদিকে আরোহী আরাফকে দেখলেি রাগানোর জন্য রাতের কথা তুলে নিজেই একা একা ফিক করে হেঁসে ফেলে। আরোহীর চোখের অন্তরালে সেই হাসি মন ভরে দেখে আরাফ।
_________

আরোহীকে দুই হাতে আগলে নিয়ে রুমের মধ্যে নিয়ে যায়। আরোহীর মনের অবস্থা করুণ তা নিপা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে। সে বাড়িতে কল দিয়ে বলে দেয় আজ সে আরোহীর সাথে থাকবে। এত বড় বাড়িতে একা থাকা ঠিক মনে করছে না নিপা।
সেই যে আরাফ বের হয়েছে আর ফিরে আসেনি। বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে অনবরত কেঁদে চলেছে আরোহী সে নিজের চোখ কে বিশ্বাসই করতে পারছে না এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা কিভাবে করতে পারল। রাতে জোরপূর্বক দুই লোকমা ভাত খাইয়েছিল নিপা। পানির সাথে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দেয়। যাতে করে আরোহী ঘুমেতে বিভোর হয়ে শুয়ে পরে।

নিপা মাথার কাছে বসে চুলগুলো তে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here