#আরোহী
#পর্ব_০২
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
________________
মিতাঃ কিছু না তুই আমাকে আমার বাড়িতে শুধু ড্রপ করে দে!
আরোহীঃ তাই তো দিচ্ছি!
আরোহীঃ আরাফ তুমি ঠিক আছো তো?
আরাফ: আমার আবার কি হবে আমি ফাস্ট ক্লাস আছি!
আরোহীঃ ভুলে যাচ্ছো আমি কে? মেডিকেল স্টুডেন্ট সো আমার চোখে নিজেকে সুস্থ করার বৃথা চেষ্টা করছো!
আরাফ: আ’ম ফাইন!
আরোহীঃ দেখি তো. (বলেই আরাফের কপালে হাত দিলো)
আরোহীঃ কোথায় ঠিক আছো জ্বরে কপাল পুরে যাচ্ছে.! ড্রাইবার আঙ্কেল মিতা কে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি হাসপাতালের দিকে নিয়ে চলো.!
ড্রাইবারঃ ঠিক আছে ম্যাডাম!
রাস্তার মোড়ে মিতার বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই মিতা নেমে যায় এখনো ঘাবড়ে আছে মিতা.!
_______
হাসপাতালে ডাক্তারের কেবিন..!
আরাফ আমি ঠিক আছি! ডাক্তার প্লিজ জাস্ট জ্বর শুধু ঔষধ দেন প্লিজ এত্তো বড় সুই দেওয়ার কি আছে। ওরে আল্লাহ গো কত্তো বড় সুই… (ইনজেকশন দেখে মাথা ঘুরে চেয়ার থেকে পরে যায় আরাফ)
আরোহীঃ আরা. আরাফ ঠিক আছো তো।
আরাফ: আরু আমি ঠিক আছি।
(আরাফ মাঝে মধ্যেই আরোহীকে আরু বলে ডাকে তাতে অবশ্য আরোহীর কোনো সমস্যা নেই)
আরোহীঃ হুম ভিতুর ডিম ইনজেকশন দেখে ভয় পেয়ে চেয়ার থেকে পরে গেছে আর বলছে আমি ঠিক আছি।
আরাফ: মোটেও আমি ভিতু না.!
আরোহীঃ ভিতু ভিতু ভিতু!
আরাফ: আরু.!
আরোহীঃ আরাফ..!
ডাক্তারঃ মিস্টার আরাফ..!
আরাফ: কিহহহ?
আরোহীঃ আমি নই এইবার ডাক্তার ডাকছে.! (আঙুল দিয়ে সামনে ডাক্তার কে ইশারা করে বলল)
আরাফ: জি ডাক্তার!
ডাক্তারঃ প্লিজ বসুন আর আমাকে আমার কাজ করতে দিন।
আরোহীঃ বসো.!
আরাফ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ.! (ইনজেকশন দেখে আরাফ ভয়ে কালেমা পরছে চোখ বন্ধ করে)
আরোহীঃ উফফ আরাফ..! (বলেই আরাফের কাঁধে হাত রাখলো আরোহী)
কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ খোলে তাকালো আরাফ.!
আরোহীঃ আমি আছি। (চোখ একবার বন্ধ করলো আরেকবার খুললো)
আরাফ আরোহীর দিকে তাকিয়ে রইল ওইদিকে ডাক্তারের ইনজেকশন দেওয়া কমপ্লিট।
ডাক্তারঃ এই যে ঔষধ গুলো লিখে দিয়েছি টাইম মতো খাবেন।
আরাফ: ইনজেকশন না দেওয়ার জন্য থ্যাংকস…!
ডাক্তারঃ আপনি যখন ম্যাডামকে দেখছিলেন তখনই ইনজেকশন দিয়ে দিছি কেনো আপনি টের পাননি।
আরাফ: কিহহ এত বড় ধোঁকা .. (আরোহীর দিকে তাকিয়ে)
আরোহীঃ ওই একটু আরটু চলে আরকি মুভিতে দেখেছিলাম। (৩২টা দাঁত কেলিয়ে মানে ফিক করে হাসি দিয়ে বলল)
তারপর হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পরে। দু’জনেই গাড়িতে উঠে বসলে ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়, গাড়ির মধ্যে দুজনেই বকবক করে, আরোহী আরাফকে খোঁচা দিচ্ছে ইনজেকশন ভয় পায় সেই বিষয় নিয়ে এতে আরাফ এর কিছুটা রাগ হচ্ছে সে রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে আরোহীর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ সামান্য একটা ইনজেকশন এই ভয় পাই আর কোনো কিছুকে ভয় পাই না। আর তুমি নিজের টা চোখে পরে না তাই না? ওই দিন তো ছোট্ট একটা তেলাপোকা দেখে লাফাচ্ছিলে, নিজে ১ইঞ্চ একটা তেলাপোকা দেখে ভয় পায় সেটা ভুলেই গেছে। ‘
আরোহী মুখ বাঁকা করে হতভম্ব হয়ে বলল, ‘ মোটেও না আমি তেলাপোকা দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার করিনি, আমি তেলাপোকা কে ভয় দেখানোর জন্য চিৎকার দিয়ে ছিলাম। ‘
আরাফ আরোহীর কথা শুনে পেছনে ঘুরে তাকায়। আরোহীর ফেসটা দেখে সে হাসতে হাসতে গাড়ি থেকে পরে যাওয়ার অতিক্রম। আরোহী চোখ জোড়া ছোটছোট করে নেয়। ভ্রু উঁচু করে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ এতে এত হাসার কি আছে আজিব? ‘ বলে মাথা গাড়ির উইন্ড এর দিকে ঘুরিয়ে নেয়। উইন্ড দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকে। আরোহী রাগ করেছে সে অনুমান করতে পেরে মিনতি স্বরে বলল, ‘ আচ্ছা বাবা সরি, আমার ওইভাবে বলা উচিত হয়নি। ‘
আরোহী মুখ ভাড়ি করে বলল, ‘ ইট’স ওকে ‘
আরাফ: আমার বলা উচিত ছিল, তেলাপোকা তোমাকে দেখে ভয় পেয়ে পালিয়েছে। তোমার নিচে পরে মরার থেকে তার কাছে পালানো টা বেটার অপশন মনে হয়েছে। ‘
আরোহী রাগী গলায় বলল, ‘ আরাফ ‘ বলে তার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে মাথা দুইদিকে নাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পরে। আরাফ নিজেকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
__________
আরোহীর কোনো ছেলে বন্ধু নেই মিতা আর নিপার পর আরাফ যাকে আরোহী সব বলে সব কিছু আরোহী আরাফের সাথে শেয়ার করে। একবার তো আরোহী আরাফের সাথে নিজের ড্রেস অতএব জামা শেয়ার করেছিলো। (কেউ খারাপ মাইন্ডে নিবেন না আমি আপনাদের ঘটনাটা ক্লিয়ার করে খুলে বলছি)
আরাফ আরোহীর বডিগার্ড হয়েছে ২বছর ৩মাস আর ১বছর আগে আরাফ মা মারা যায়! আজ থেকে ১বছর ৬মাস আগের ঘটনা আরোহী সন্ধ্যের পর মার্কেটে যাবে শপিং করতে, আরাফ তার বডিগার্ড তাই তাকেও যেতে হবে।
শপিংমলে ২ঘন্টা যাবত দু’জনেই ঘুরছে কোনো কিচ্ছু ম্যাডামের পছন্দ হচ্ছে না.!
৩ঘন্টা পর ম্যাডামের একটা গোলাপি রঙের জামা পছন্দ হলো তাও আবার সেটা অন্য কেউ নিয়ে গেলো.!
মানে দূর থেকে দেখেই আরোহীর জামাটা পছন্দ হয় আর হেঁটে যেতে যেতে পাশের এক আন্টি জামাটা নিয়ে বিল দিয়ে চলে যায়.!
আরোহী চোখ মুখ লাল করে কপাল ভাজ করে আরাফের দিকে তাকিয়ে রয়।
আরাফ মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে থুতনিতে হাত রেখে গানের কন্ঠে বলল, ‘ ওই আন্টি যে জামাটা নিয়া যাইবো কেই বা জানতো ওওওওওওওওওও ‘
আরোহীঃ চুপ করো গান গাইতে বলছে কে তোমারে ধ্যাত ভাল্লাগে না কিচ্ছু কিনমুই না চলো বাড়ি যাবো।
আরাফ: এতক্ষণ ধরে তো তাই করলে.! (বিড়বিড় করে বলে)
আরোহীঃ কি বললে? (ভ্রু কুঁচকে তাকালো আরাফের দিকে)
আরাফ: হিহিহি, (মেচি হাসি দিয়ে বলল) কিচ্ছু না চলুন ম্যাডাম।
আরোহীঃ আমার নজর তোমার উপর.!
আরাফ: হুহহহহহহ. যেইভাবে বলছো মনে হচ্ছে ওই আন্টি টাকে আমি বলছি ওই জামাটাই নিতে.!
আরোহীঃ তুমি গিয়ে ওই আন্টিটার আগে জামাটা নিতে পারো নাই!
আরাফ: হো আমি তো স্পাইডার ম্যান!
তারপর দুইজন দু’জন কে মুখ ভেংচি দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে হাঁটতে থাকে গাড়ি উঠে বসে।
আরাফ আর আরোহী বেশিক্ষণ দু’জন দু’জনার সাথে কথা না বলে থাকতে পারে না।
দু’জনেই ফট করে কথা বলে ফেলে আর হাঁসতে থাকে।
বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় ৯টার বেশি বেজে যায়।
রাতে ডিনারের সময় হয়ে গেছে বলে আরাফকে মিস্টার আরমান উনাদের সাথেই ডিনার করতে বললেন আরাফ ও উনাকে না করতে পারেনি। ডাইনিং টেবিলে সবাই বসে খাচ্ছে এমন টাইমেই বাহিরে বাজ পরার শব্দ আসে।
একজন স্টাফ এসে বলে বাহিরের আবহাওয়া বেশ খারাপ ঝড় তুফান আসবে। প্রচুর বাজ পরছে আর উড়ন্ত বাতাস বইছে। বাড়ির সকল জানালা ভালো করে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বাকি স্টাফদের বলল। তার কথা আরাফ শুনে হম্বিতম্বি করে বলল,
আরাফ- তাহলে আমি বাড়ি যাবো কিভাবে? আমি এখন উঠি ‘
বলে উঠতে যাবো তখন তাকে থামিয়ে দিয়ে আরমান সাহেব বললেন,
‘ দাঁড়াও! এত ভয়ংকর আবহাওয়ার মধ্যে আমি তোমাকে যেতে দিতে পারবো না। তোমার কিছু হয়ে গেলে তোমার মা কে আমি কি জবাব দেবো? আজ রাত বরং এখানেই থেকে যাও, আর তোমার মা কে কল দিয়ে জানিয়ে দাও।
অসহায়ের মতো দু-চোখ ফেলফেল করে তাকিয়ে রইল। আরমান খানের উপরে তর্ক করা যাবে না। সে যা বলবে তাি মাথা পেতে মানতে হবে, মায়ের আদেশ। দুই দোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে আর হাত দিয়ে খাবারের লোকমা মুখে দিচ্ছে।
চলবে….?
(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)