অন্তর্লীন প্রণয় পর্ব ২৩+ ২৪

0
418

#অন্তর্লীন_প্রণয়
সাদিয়া মেহরুজ দোলা
পর্ব-২৩

ঘড়ির কাটা দেড়টা ছুঁই ছুঁই! আয়ন্তিকা লম্বা হাই তুলে অহর্নিশের মুখশ্রীতে দৃষ্টি দেয়। বিরক্তিকর দৃষ্টি! অহর্নিশ সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে নিঃশব্দে হেঁসে বাহিরে তাকায়। আয়ন্তিকা তপ্তশ্বাস ফেলে! সেই কখন থেকে অহর্নিশ তাকে বারান্দায় দাঁড় করিয়ে রেখেছে। রুমে যেতে নিলেই উল্টোপাল্টা কাজ করে বসছে নয়তো ধমক দিচ্ছে। এমন বেহাল পরিস্থিতিতে পড়ে আয়ন্তিকা পরিশেষে বারান্দাতেই দাঁড়িয়ে থাকে। সময় বাদে বিরক্তি কেটে গেলো! জুড়ে এসে বসলো ভালোলাগা, প্রশান্তি! কতদিন পর সে অহর্নিশের সাথে একান্ত সময় কাটাতে পারছে। লোকটাকে একটু সময় নিয়ে কাছে পেয়েছে। আহ! এতো প্রশান্তি!

অহর্নিশ আয়ন্তিকার দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ ব্যাথা করে ফেলেছে। ব্যাথায় চোখদুটো নিশ্চিত ফুলে গিয়েছে। সামনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবারও মন নিশপিশ করছে আয়ন্তিকা কে দেখার জন্য। ইশ! কি এক জ্বালা! কেনো আসলো এই প্রাননাশিনী তার জীবনে?কেনো এসে তাকে এলোমেলো করে দিলো পুরোপুরি? অহর্নিশ ছটফট করে। মন চাচ্ছে তার আয়ন্তিকা কে আদর করার। একটু অদ্ভুত আদর! যে আদরে শুধু ভালোবাসা মিশ্রিত কষ্ট থাকবে। সেই কষ্টতে জর্জরিত হয়ে আয়ন্তিকা অহর্নিশ কে ভালোবাসি বলবে! বুঝতে পারবে অহর্নিশের মনের কথা, ব্যাথা, বিরহ যন্ত্রণা!

অহর্নিশ শেষে পারে না নিজেকে আটকাতে।এগিয়ে যায় আয়ন্তিকার সামনে। হুট করে অহর্নিশ আয়ন্তিকার সামনে এসে থম মেরে দাঁড়াতে একটু ইতস্তত হয়ে পড়ে আয়ন্তি! অহর্নিশ তার সন্নিকটে এসে দাঁড়িয়ে আছে। আয়ন্তিকা এবার নরমাল হয়ে বলল,

‘ কি চাই আবার?’

অহর্নিশ মৃদু কন্ঠে বলল,

‘ তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে। রুমে চলো! ‘

আয়ন্তিকা কিছু সময় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অহর্নিশের দিকে। বোঝার চেষ্টা করে ঠিক কি করতে যাচ্ছে এই লোক ভবিষ্যতে! তবে অনুমান করা হলো না। অহর্নিশ কে আয়ন্তিকা আজও পড়তে পারলো না। নিউটনের গতির সূত্রর মতো অহর্নিশ কে মনে হয় আয়ন্তিকার। নিউটনের গতীর সূত্র বেশ কঠিন লাগে তার কাছে। তার মতোনই অহর্নিশ কেও! আয়ন্তিকা উগ্র ভাব নিয়ে বলল,

‘ কি সারপ্রাইজ? ‘

অহর্নিশ বিরক্ত হয়ে বলে, ‘ আসো তো রুমে! কিছু বললেই ভাবনার সাগরে ডুবে হাবুডুবু খাও। এটা আমার নিকট প্রচন্ড বিরক্তিকর লাগে! অভ্যাস বদলাও। নয়তো ঠাটিয়ে কবে জানি চড় মেরে তোমার দাঁত ভেঙে ফেলি। ‘

আয়ন্তিকা অহর্নিশের কথার পরিপ্রেক্ষিতে চিবিয়ে বলল,

‘ এ্যাহ্…আসছে! আপনি মারলে আমি কি চুপ থাকবো নাকি?আসুন মারুন। ছুঁয়ে তো দেখুন। একদম মেরে ফেলবো আপনাকে। ‘

অহর্নিশ আগের থেকে দ্বিগুণ বিরক্তি নিয়ে তাকায় আয়ন্তিকার দিকে। বিড়বিড় করে সে বলল,

‘ এই আন্ডাবাচ্চাদের এই এক প্রবলেম! নরমাল কথায় অতিরিক্ত হাইপার হয়ে যায়। কাজের কথায় তো খবর নাই। উল্টা কথা ধরে ভাব দেখায়! ডাফার একেকটা! ‘

অহর্নিশ চারপাশ না দেখে আয়ন্তিকার হাত শক্ত করে ধরে রুমে নিয়ে আসে। রুমে আসার পর সে আয়ন্তিকার হাত ছেড়ে দিয়ে চলে যায় কার্বাডের নিকট। একেক করে তার এবং আয়ন্তিকার জামা- কাপড় নামিয়ে নিয়ে বিছানায় রেখে সে ব্যাগের ভেতর ঢুকিয়ে রাখা শুরু করে! পুরো সময়ে আয়ন্তিকা মৌনতা রূপে অহর্নিশের কাজকর্ম দেখতে থাকে। এক সময় পারে না শেষে মৌন রূপে অবস্থান করতে। অস্থির হয়ে উঠে বলল,

‘ কাপড় – চোপড় ব্যাগে ঢুকাচ্ছেন কেনো?আমরা কি কোথায় যাচ্ছি? ‘

অহর্নিশ ব্যাগে জামা – কাপড় ঢোকানো শেষে ললাটে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম শার্টের হাতা দিয়ে মুছে নেয়। পূর্ণ দৃষ্টি আয়ন্তিকার দিকে মেলে দিয়ে বলল,

‘ হ্যা! আমরা গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। ফুপি দেখতে চাচ্ছে তোমাকে। কাল সকালেই যাবো। এখন জলদি ঘুমিয়ে পড়ো। ‘

আয়ন্তিকার নেত্রে অশ্রু এসে জমে! মূর্হতেই সিক্ত হয়ে দুই আঁখিপল্লব। কাঁপা ওষ্ঠাধর কিছু বলার প্রয়াস চালালে সে ব্যার্থ রূপে কম্পমান অবস্থাতেই থাকে। হটাৎ পাওয়া বিরাট খুশির খবরটা আয়ন্তির হজম করতে কষ্ট হচ্ছে তা অহর্নিশ আয়ন্তিকার চেহারা দেখেই বুঝে যায়। সে হাসে আলত! তবে মনে কষ্টও অনুভূত হয়। আহারে! মেয়েটাকে এতদিন কতোটা কষ্টের মাঝে রেখেছে সে। ভাবতেই ইচ্ছে করে অহর্নিশের নিজেকে ছুরিকাঘাত করার! অহর্নিশ পদচারণা এসে বন্ধ করে আয়ন্তিকার সামনে দাঁড়িয়ে। নম্র কন্ঠে বলে,

‘ রিলেক্স আয়ন্তিকা! কান্নাকাটি করো না। আমি জানি তুমি খুশিতে কাঁদছো কিন্তু তবুও! থামো! আর হ্যা তোমাকে কাঁদলে পেত্নী পেত্নী লাগে ইউ নো? পরিশেষে দেখা যাবে আম্মু বা আব্বু এখন আসলে তোমায় দেখে পেত্নী বলে চিল্লিয়ে হার্ট অ্যাটাক ও করতে পারে। গড! কি সাংঘাতিক ব্যাপার না?থামো, থামো! ‘

অহর্নিশের কথা বলার ধরন দেখে আয়ন্তিকা কান্না করার মাঝে হেঁসে দেয়। এই মানুষটা সিরিয়াস টাইমে প্রচুর হাসাতে পারে। নিশ্চিত আয়ন্তিকা! অহর্নিশের সাথে যে থাকবে সে কখনোই মন খারাপ করে থাকতে পারবে না। কারণ তার সঙ্গে স্বয়ং একজন ‘জোকার ‘ ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে কথা। মন খারাপ করে থাকা যায়?উঁহু!

আয়ন্তিকা নাক টেনে বলল,

‘ আপনি সত্যি বলছেন তো?কাল আমাকে বাবা মার কাছে নিয়ে যাবেন?’

‘ অবশ্যই! আমি মিথ্যা কেনো বলতে যাবো?আরনাফ অহর্নিশ কখনো মিথ্যা বলেনা। গট ইট?’

অহর্নিশ বুক ফুলিয়ে ভাব নিয়ে বলল কিছুটা। আয়ন্তিকা তা দেখে এবার নিভৃতেই হাসে। চোখের কার্নিশে জমে থাকা পানি দু’হাত দিয়ে মুছে নেয়। অতঃপর উৎসাহ নিয়ে বলে,

‘ কখন, কয়টায় যাচ্ছি আমরা?’

‘ সকাল ৬ টায়! অলরেডি অনেক রাত হয়ে গেছে। যাও ঘুমাও। আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসছি। ‘

‘ এতো রাতে গোসল করবেন আবারও?’

‘ হু! ‘

‘ ঠান্ডা লেগে যাবে তো। ‘

‘ উঁহু! আমার অভ্যাস আছে। ‘

অহর্নিশ টাওয়াল নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে। তা দেখে লম্বা শ্বাস ফেললো আয়ন্তিকা। বিয়ের পর হতেই সে দেখে আসছে অহর্নিশ রাতে গোসল করে সবসময়। রাতে এবং দিনে দুইবেলাই! এমন কর্মে আয়ন্তিকা মাঝেমধ্যে বিরক্তি পেশ করে। তো কখনো হু- হুতাশ! কিছুক্ষণ আশপাশে চোখ বুলিয়ে বিছানায় গিয়ে উল্টো হয়ে শুয়ে পড়ে। আজ কি ঘুম আসবে তার?মনে হয়না! কতদিন পরে বাবা মার কাছে যাচ্ছে। ছোট বোনটার সাথে ঝগড়া হবে কতদিন পর। ইশশ! ভাবতেই পরম শান্তিতে শিউড়ে ওঠে আয়ন্তিকা।

.

অহর্নিশ সিক্ত চুলগুলোকে টাওয়ালের সাহায্যে মুছতে মুছতে বেড়িয়ে আসে ওয়াশরুম হতে! চারপাশ অন্ধকার দেখে বুঝতে বাকি নেই আয়ন্তি ঘুমিয়ে পড়েছে। চটজলদি অহর্নিশ হাতের টাওয়াল সোফায় ছুঁড়ে মেরে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। আয়ন্তিকার ঠিক একহাত পাশে। লম্বা শ্বাস টেনে নিলে তার মনে হলো আয়ন্তিকার শরীরের গন্ধ নাকে এসে বাড়ি খেলো। অহর্নিশ আর কিছুক্ষণ অনুভব করে। পরিশেষে আয়ন্তিকার ওপর হাত পা তুলে দিয়ে ঘুমোনোর চেষ্টা করে!

এটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আয়ন্তিকার ওপর হাত পা তুলে না দিলে, মাঝরাতে আয়ন্তিকা কে কাতুকুতু দিয়ে ঘুম থেকে না উঠালে তার ঘুম পরিপূর্ণ হয়না। আয়ন্তিকা কয়েকদিন যেই রেগে গিয়েছিলো তার ওপর..! কিন্তু তারপর হতে সেও চুপ হয়ে গিয়েছে। বুঝে গিয়েছে এই লোককে কিছু বলে লাভ নেই।

অহর্নিশ আয়ন্তিকা কে জরীয়ে ধরে বিড়বিড় করে বলল,

‘ আমার শান্তির ঘুম কেঁড়ে নিয়ে নিজে এতো আরামে ঘুমাও কি করে?শরম করে না?উফফ! তোমার আবার লজ্জা করবে কি করে?মির্জাফর দের তো আবার লজ্জা টজ্জা নেই। ‘

অহর্নিশ নিজের আবুল মার্কা কথায় বকা বনে যায়। কিন্তু ব্যাপারটা বেশি আমলে না নিয়ে চেষ্টা করে ঘুমানোর। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হলো কই?আজও তার রাত কাটবে আয়ন্তিকা কে দেখে দেখে!

__________________

ভোরের হিম শীতল বায়ু! পূর্ব আকাশে হলদেটে সূর্যের কিরণ দেয়ার ব্যাস্ততা। পাখিদের উড়ে বেড়ানোর মোক্ষম সময়। ঘাসের ওপর শিশিরের কণা। সব মিলিয়ে চমৎকার এক ক্ষনের জন্য ‘ভোরবেলা’ কে বলা যায় পার্ফেক্ট! আয়ন্তিকা ড্যাবড্যাব করে চারপাশ দেখছে। বাস শো শো করে চলছে যাত্রীদের নিজ গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য। বাসের সবাই মোটামুটি ঘুমে বিভোর! শুধুমাত্র আয়ন্তিকা বাদে। সে প্রতিটা মূর্হত অনুভব করার চেষ্টা করছে। সেভ করে নিচ্ছে ম্যামরিতে। তার পাশেই অহর্নিশ ঘুমে মগ্ন।

দুপুরের রৌদ্দুরের আনাগোনা হতেই অহর্নিশের ঘুমের রেশ কেটে যায়। পাশে আয়ন্তিকা কে ক্লান্ত দেখে সে চিন্তিত কন্ঠে বলল,

‘ ঠিক আছো? ‘

আয়ন্তিকা পাশে তাকিয়ে মাথা নেড়ে বলল,

‘ হুম! আপনার ঘুম কখনল ভাঙলো?’

‘ মাত্রই। আচ্ছা বাসে যেতে প্রবলেম হচ্ছে? হুট করেই গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেলো। টাকাও ছিলোনা ঠিক করার। তাই আরকি…! সরি! ‘

শেষোক্ত কথাটা মিনমিন করে বলল অহর্নিশ। তা দেখে আয়ন্তিকা রেগে গিয়ে বলল,

‘ এই আপনি সবসময় এক লাইন বেশি বুঝেন কেনো হ্যা? আজাইরা! আমি কি একবারও বলেছি আমার খারাপ লাগছে? আমার তো বাস জার্নি করেই অভ্যাস। গাড়িতে উঠলে বমি আসে! ‘

অহর্নিশ স্বস্তির শ্বাস ফেলে। এটলিষ্ট আয়ন্তিকা তো ঠিক আছে। এদিকে বাসে উঠে অহর্নিশের নাজেহাল অবস্থা প্রায়। কোনোরকম ইজ্জত বাঁচাতে স্বাভাবিক ব্যাবহার করছে। অতিষ্ঠ গরমে দুটো মাস্ক পড়ে আছে সে। এমপি মানুষ! বাসে উঠেছে লোকে দেখলে কি বলবে?তাছাড়া আয়ন্তিকা তার পাশে! তাই এই পথ অবলম্বন করা।

.

আয়ন্তিকা বাসায় এসে প্রায় আধাঘন্টা মায়ের গলা ধরে কেঁদেই কাটালো। অতঃপর বাবার সাথে তাদের বাগানে হওয়া বিভিন্ন ধরনের গাছের গল্প শুনে কেটে গেলো দুপুর। বিকেলে ছোটবোনের সাথে দুষ্টুমি করে মায়ের একটু আধটু বকুনি খেয়ে তার হাতে খাওয়া দাওয়া করে কাটলো। রাতে পুরে বাড়ির মিষ্টি ঘ্রাণ নিয়ে কাটিয়ে দিয়ে পরবর্তী দিনের অপেক্ষায় ঘুমে তলিয়ে গেলো সে রাত ১১ টাতেই!
এদিকে অহর্নিশের বেহাল, কুপোকাত দশা! পুরো দিন সে আয়ন্তিকা কে না দেখে কোনোরকম টিকে ছিলো। রাত হতেই ছটফট বেড়ে যায়। অহর্নিশ ভেবেছিলো আয়ন্তিকা রাতে হলেও তার সাথে ঘুমোবে। কিন্তু না! সে ঘুমিয়েছে তার মায়ের সাথে।

পরিশেষে পারে না অহর্নিশ নিজের অস্থিরতা কে দমন করতে। রুম থেকে বেড়িয়ে ফুপির রুমে গিয়ে আয়ন্তিকা কে ঘুমের মধ্যেই কোলে তুলে নিয়ে বাহিরে চলল! আয়ন্তিকার মা অহর্নিশ কান্ড দেখে মিটিমিটি হাসে। সে ঘুমায়নি। জেগে ছিলো।

হাওয়ায় ভাসছে বলে অনুভব করে আয়ন্তিকা! চট করে চোখ খুলে নিজেকে অহর্নিশের কোলে আবিষ্কার করে যেইনা চিৎকার দিতে যাবে তখনি অহর্নিশ চটজলদি নিজের ওষ্ঠদ্বয়ের সাহায্যে আয়ন্তিকার আগত চিৎকার দমন করে! অতঃপর মিনিট দুয়েক পর সরে এসে বলল,

‘ ফেলে দেবো কোল থেকে যদি চিল্লিয়েছো আয়ন্তিকা! ফাজিল মেয়ে! আমাকে কষ্ট দিয়ে ঘুমানো?আজ ছুটাবো তোমার ঘুম। অহর্নিশের স্পেশাল টর্চার দেখতে প্রস্তুত হও সাইরিশ আয়ন্তিকা! আজ আমার হাত থেকে তোমায় কে রক্ষা করে দেখি! ‘

চলবে…
#সাদিয়া_মেহরুজ_দোলা

#অন্তর্লীন_প্রণয়
সাদিয়া মেহরুজ দোলা
পর্ব-২৪

‘ ৪১,৪২, ৪৩…, এই মেয়ে এই! থামলে কেনো?কানে ধরো কুইক। ‘

অহর্নিশের হটাৎ ধমকে উঠাতে আয়ন্তিকা চমকে যায়। অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে সে। নিজেকে ধাতস্থ করে নম্র কন্ঠে বলল,

‘ আমি আর এমন করবো না। প্রমির করছি! প্লিজ আজকের মতো মাফ করে দিন। আমার পা ব্যাথা করছে খুব। ‘

আয়ন্তিকার নম্র কন্ঠ, অসহায় চাহনি, ক্রন্দনরত চোখ যেনে এবার অহর্নিশকে গলাতে পারলো না। সে নিজের কথায় অটল! চোখের ইশারায় সে আয়ন্তিকা কে আবার কান ধরে উঠবস করতে বলল। হাতের স্কেলটাকে ইশারায় ছুঁড়ে মারার ইঙ্গিত দিলো। আয়ন্তিকা তৎক্ষনাৎ কানে ধরে উঠবস করা শুরু করে। মনে মনে নিজেকেই সে শ’খানেক গালি দেয়। ইশশ! কেনো যে মরতে সে মায়ের রুমে ঘুমোতে গেলো? কেনো যে আজ সারাটা দিন অহর্নিশ কে ইগনোর করলো। এসব না করলে হয়ত এই পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না কখনোই।

আয়ন্তিকার অবস্থা দেখে অহর্নিশ ওষ্ঠাধর প্রসারিত করে! মনে মনে আয়ন্তির অবস্থা দেখে সে বিরাট খুশি বলা চলে। আর দশটা প্রেমিকের মতো প্রেমিকাকে শাস্তি দেয়ার প্রতি মায়া জন্মায় নি তার। বরং শান্তি লাগছে! এই ত্যাড়া মেয়ের শাস্তি পাওয়া উচিত। করুন শাস্তি! অহর্নিশ কে ইগনোর করা।

৫০ বার কান ধরে উঠবস করা হলে আয়ন্তিকা ফ্লোরে বসে পড়ে। হাঁটুতে মুখ গুঁজে লম্বা লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে কোনোরকম উঠে দাঁড়িয়ে সে দৃষ্টিপাত স্থাপন করে অহর্নিশের দিকে। ক্লান্ত কন্ঠে বলল,

‘ হয়েছে! আমি এখন ঘুমাই?মাথা, পা ব্যাথা করছে খুব। ‘

অহর্নিশের ইচ্ছে হলো আরো কিছু শান্তি দিবে সে আয়ন্তিকা কে। কিন্তু আয়ন্তিকার বর্তমান নাজুক অবস্থা দেখে তার কঠিন মন গলে পানি হয়ে যায়। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সে এগিয়ে আসে আয়ন্তিকার দিকে। কোলে তুলে নিয়ে বিছানাতে শুইয়ে দিয়ে কোমল কন্ঠে বলল,

‘ ঘুনাও এখন! নেক্সট আমাকে ইগনোর করার সাহস দেখালে পা ভেঙে দিবো একদম। বুঝেছো?’

আয়ন্তিকা ঢুলুঢুলু চোখে তাকিয়ে ‘ হ্যা ‘ বলল!
তার কথা বলার মতো শক্তি নেই। পা দুটোর অবস্থা বেহাল। রাত জাগলে তার মাথা ব্যাথা হয় তীব্র। সব মিলিয়ে অতি কষ্টে একাকার অবস্থা তার। অহর্নিশ এর মতো স্বামী পাওয়ার দুঃখে তার এখন হাত- পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। ঘুমে মগ্ন হতে নিলেই আয়ন্তিকা অনুভব করে তার পায়ে কারো হাত। মাথাতেও এক হাত! আলত করে চেপে দিচ্ছে পা, মাথা। ব্যাথা নির্মূলের জন্য মূলত এমন করা হয়, আয়ন্তিকা চট করে চোখ খুলে! অহর্নিশ তার সামনে বসে পা চেপে দিচ্ছিলো আদুরে স্পর্শ নিয়ে। আকাশ -সম চমকানো অনুভূতি নিয়ে ঘুম উজার করে দিয়ে আয়ন্তিকা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল! পরিশেষে চুপ থাকাটা আর হলোনা। লাফিয়ে উঠে বসে সে পা গুটিয়ে নিয়ে বলল,

‘ এই কি করছেন? পায়ে হাত দিচ্ছেন কেনো? ‘

অহর্নিশ এবার বেশ খানিক বিরক্তি নিয়ে বলল,

‘ স্পষ্টত দেখতে পারছো পায়ে হাত দিচ্ছি কেনো, তবুও এমন বোকার মতো ইউজলেস কথা বলার মানে হয়?’

আয়ন্তিকা গুটিয়ে নেয়া পা যুগল টেনে এনে আলত স্পর্শে ব্যাথা নির্মূল করার প্রয়াস চালায় অহর্নিশ। আয়ন্তিকা অস্বস্তি নিয়ে বলল,

‘ পায়ে হাত দিবেন না প্লিজ। আম্মা বলেছে স্বামীরা পায়ে হাত দিলে অমঙ্গল হয়! ‘

‘ আমার সাথে থেকে এমন অযৌক্তিক চিন্তাধারা নিয়ে ঘুরো তুমি? লাইক সিরিয়াসলি? নেক্সট যদি এসব শুনি তোমার মুখ থেকে। পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙ্গে ফেলবো। ‘

আয়ন্তিকা কেঁপে উঠে পা গুটিয়ে নিতে নিলেই অহর্নিশ ফের কর্কশ কন্ঠে বলল,

‘ আমার কাজে যদি আরেকবার বাঁধা প্রদান করো আয়ন্তিকা, ট্রাস্ট মি! তুলে এক আছাড় মারবো তোমাকে। ঘুমাও! ‘

আয়ন্তিকা শুয়ে পড়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে। অহর্নিশের ভরসা নেই। যেই লোক তার বউকে সামান্য এক ভুলের জন্য কানে ধরে উঠবস করাতে পারে, সে যে তুলে আছাড় মারবে না এটা বিশ্বাস করা কষ্টসাধ্য!

_______________________________

ভোরের দিকে ঘুম ভেঙে যায় আয়ন্তির! বরাবরের মতোই সে নিজেকে আবিষ্কার করলো অহর্নিশের উষ্ণ আলিঙ্গনের মধ্যে। অহর্নিশ ঘুমে কাবু! ঠোঁট উল্টে ঠিক বাচ্চাদের মতো করে ঘুমোচ্ছে। আয়ন্তি স্নান হাসে! আস্তেধীরে নিজেকে অহর্নিশের আলিঙ্গন হতে মুক্ত করে নিয়ে উঠে পড়ে। আজ রোজকার রুটিন এড়িয়ে সে নিজের ওষ্ঠাধর স্পর্শ করায় অহর্নিশের ললাটে! পরবর্তীতে নিজের কৃতকর্মে লজ্জায় লাল নীল হয়ে দৌড়ে রুম হতে বেড়িয়ে পড়ে।

ফ্রেশ হয়ে পরিপাটি হয়ে আয়ন্তিকা বেড়িয়ে পড়ে আম্মাকে রান্নার কাজে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে। জমিদার বাড়িতে যদিও বাড়ির বউরা কখনো রান্না করেনা। তবুও আয়ন্তিকার মা সকালের নাস্তা নিজ হাতেই করেন। কিচেনে আসতেই আয়ন্তি খেয়াল করে তার মা এবং ছোট বোন রান্নার কাজে তুমুল ব্যাস্ত। সে এগিয়ে যায় সেদিকে। আয়না মেয়েকে দেখামাত্রই হেঁসে জিজ্ঞেস করলো,

‘ ঘুম ভেঙেছে?’

‘ জি আম্মা! ‘

‘ তোর মুখ ওমন ফ্যাকাশে দেখাইতেছে ক্যানো?’

আয়ন্তিকা ইতস্তত বোধ করে বলল,

‘ পা ব্যাথা করতেসে আম্মা।’

আয়না ললাটে চামড়ায় ভাজ ফেলে চিন্তিত আভাস প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ব্যাস্ত হয়ে বললেন,

‘ সেকি! পায়ে ব্যাথা ক্যান?তোরা কি হেঁটে আসছস? গাড়িও তো দেখলাম না। গাড়ি কই?’

‘ হেঁটে আসতে যাবো ক্যান আম্মা? বাসে আসছিলাম। গাড়ি নষ্ট! উনি গাড়ি আর ঠিক করতে চান না। নতুন গাড়ি কিনবেন। কিন্তু অতো টাকা সঙ্গে ছিলো না। নির্বাচনে অনেক টাকা খরচ করে ফেলসে! ব্যাংক একাউন্টে তার কিছু ঝামেলা ছিলো তাই টাকাও তুলতে পারেনি সেই সময়। পরে এখানে এসে বিকাশ দিয়ে টাকা তুলছে। ব্যাংকের সমস্যা মিটমাট হয়েছিলো। উনি চেক লিখে দিয়ে আসছিলেন তার এক বন্ধুর কাছে। তারপর তার বন্ধু টাকা তুলে বিকাশে পাঠাইছে। ‘

আয়না এবার ধাতস্থ হয়ে স্বাভাবিক সুরে বলল,

‘ অহ! তা অহর্নিশ উঠছে ঘুম থেকে?ওর জন্য কফি বানাইছি নিয়া যা। ‘

‘ উঠেনি আম্মা। পরে নিবোনে রাখো। তোমাদের সাথে একটু কথা বলে যাই। ‘

আয়ন্তিকা আয়না এবং তার ছোটবোন তারার সাথে কথা বলায় ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। তবে ক্ষন বাদে রুম থেকে অহর্নিশের ডাক পড়ে কফি নিয়ে যাওয়ার জন্য। অত্যান্ত বিরক্তি নিয়ে আয়ন্তিকা হাতে কফির মগ তুলে নেয়। ইচ্ছে করছিলো না তার যাওয়ার। একবার ভাবলো তারাকে দিয়ে পাঠিয়ে দিবে কিন্তু পরে যদি আবার এর কারণে নতুন কোনো শাস্তি দিয়ে বসে অহর্নিশ? তখন?
শুষ্ক ঢোক গিলে গলা সিক্ত করার প্রয়াস চালিয়ে আয়ন্তিকা সিঁড়ি ধরে ওপরে উঠে আসে। রুমে ঢোকার পরপরই তার সামনে ভেসে ওঠে অহর্নিশের ঢুলুঢুলু অবস্থা। দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে বারংবার ঘুমে নুইয়ে পড়ছে সে।

আয়ন্তিকার রাগ হয় প্রবল! ঘুমোচ্ছে যখন ঘুমাক না, তাকে ডাকার দরকার কি?হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে রাগের বসে আয়ন্তি বেড সাইড টেবিল রাখা জগ হতে পানি ঢেলে নেয় গ্লাসে। পুরোপুরি এক গ্লাস পানি ঢেলে নিয়ে সে ছুঁড়ে মারে অহর্নিশের মুখ বরাবর! হকচকিয়ে সটান হয়ে বসে অহর্নিশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় আয়ন্তিকা দিকে। আয়ন্তিকা স্বাভাবিক প্রায়। অহর্নিশ তেতে উঠে বলল,

‘ হোয়াট’স রং উইথ ইউ? কি করলে এটা ডাফার?’

আয়ন্তিকা নাক ফুলিয়ে উচ্চস্বরে বলল,

‘ আপনি যেহেতু ঘুমাচ্ছেনই তাহলে আমায় কফি নিয়ে আসতে বললেন কেনো? একটু শান্তিতে থাকতে দেয়া যায়না?’

অহর্নিশ আয়ন্তিকার হাত ধরে হেঁচকা টান মেরে তার সন্নিকটে নিয়ে আসে। একহাত আবদ্ধ করে আয়ন্তিকার পিঠে। অন্যহাত দিয়ে আয়ন্তির তুলতুলে গাল চেপে ধরে চিবিয়ে বলল,

‘ আমার যা ইচ্ছা তাই করবো। দরকার পড়লে তোমায় সবার সামনে ঠোঁটে চুমু খাবো। কোলে নিয়ে দশ গ্রাম ঘুরবো। যা মন চায় তাই-ই করবো! কার বাপের কি?তোমার সমস্যা এতে?তাহলে তো কাল রাতের করা কাজটা রিপিট করা উচিত রাইট?’

আয়ন্তিকা চুপসে যায়। অহর্নিশ খানিকটা জোরেই তার গাল চেপে ধরেছে। গাল দাঁতের সাথে লেগে গিয়ে ব্যাথাটা যেনো দ্বিগুণে রূপান্তর করছে। আয়ন্তিকা চেষ্টা করে অহর্নিশের দানবীয় হাত নিজ গাল হতে সরাতে। তীব্র ব্যাথায় আঁখিপল্লবে পানি এসে জমা হয়েছে তার। অহর্নিশ হটাৎ থেমে গিয়ে আয়ন্তিকার চোখের দিকে দৃষ্টি দেয়। চোখের কার্নিশে পানি দেখে সে চটজলদি আয়ন্তিকার গাল ছেড়ে দূরে সরে বসে।

আয়ন্তিকা ছাড়া পেয়ে লম্বা শ্বাস টানে। ব্যাথাতুর গালে হাত বুলিয়ে সে কাতর কন্ঠে বলল,

‘ এতো জোরে কেও ধরে? ব্যাথা পেয়েছি আমি! আপনি যদি আমায় কানধরে উঠবস করাতে পারেন তাহলে আমিও আপনাকে মুখে পানি ছুঁড়ে মারার অধিকার রাখি, হুহ্! ‘

অহর্নিশ মনে মনে ফিচেল হাসে! এইতো আয়ন্তিকা একটু একটু করে নিজের অধিকার বুঝে নিচ্ছে। এতদিন সে ভয়ে চুপসে থাকতো। অহর্নিশ কে দেখলেই কেমন গুটিয়ে নিতো নিজেকে যা অহর্নিশের নিকট একটুও ভালো লাগত না। নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হতো। পরিশেষে অহর্নিশ ফের কাছে টেনে নেয় আয়ন্তিকা কে। ললাটে নিজের ওষ্ঠাধরের স্পর্শ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

‘ যার যার অধিকার তার তার আদায় করে নিতে হয়! এটাই মিন করলে তুমি। তাই নিজের অধিকার নিজে বুঝে নিলাম জান!এখন থেকে প্রতেক সকালে তোমাকে আমায় চুমু খেতে হবে। আজ আমি খেয়েছি কাল হতে তুমি। মনে থাকবে তো?হু?আর না থাকলেও সমস্যা নেই। আমি আছিনা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য? ‘

কথা শেষে রুম হতে বেড়িয়ে যায় অহর্নিশ। আয়ন্তিকা সেদিকে বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে আছে। বাই এনি চান্স, এবারও সে নিজের পায়ে কুড়াল মারলো না তো?
প্রশ্নটা মনে আওড়ালে কেমন কান্নায় দম আঁটকে আসে তার। আচ্ছা! সে এতো বোকা কেনো?অহর্নিশের ফাঁদে পা দিলো কিভাবে?কি চালাক এই মানুষ!

________________________

পড়ন্ত বিকেলে আয়ন্তিকা তাদের দীঘির পাড়ে পা ডুবিয়ে বসেছিলো। মন তার অজানা কারণে ভীষণ তিক্ত রূপ ধারণ করে আছে। একটু আগেই সে তারাকে ঠাটিয়ে এক চড় মেরে এসেছে অযথাই! তারা কাঁদেনি। অন্য সময় হলে কেঁদে ভাসাতো। কিন্তু বোনকে এতদিন পর কাছে পেয়ে তার হাতের দাবাং চড়ও যেনো মিষ্টি লাগছে। তারা চড় খেয়ে হেঁসেছিলো শুধু। তা দেখে আয়ন্তিকা রেগে চলে এসেছে দীঘিপাড়ে!

সময় অতিবাহিত হতেই তার পাশে ধপাশ করে এসে বসে অহর্নিশ। আয়ন্তিকা ডানে তাকায়! কালো শার্ট একদম এঁটে সেঁটে আছে অহর্নিশের শরীরের সাথে। ললাট হতে এখনো বিন্দু বিন্দু ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। অহর্নিশ পকেট হতে টিস্যু বের করে ঘাম মুছে নেয়। অতঃপর আয়ন্তিকার মুখশ্রীর প্রতি পূর্ণদৃষ্টি দিয়ে সে বলল,

‘ কি ব্যাপার? এখানে বসে আছো যে, ‘

আয়ন্তিকা দীঘিতে দৃষ্টি দেয়। পরিস্কার পানিতে তার আর অহর্নিশের প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে। নজরকাড়ার মতো! আয়ন্তিকা এবার ঠোঁট যুগল প্রসারিত করে বলল,

‘ আমার কিছু ভালো লাগছে না। ‘

‘ কেনো?’

‘ জানিনা। ‘

আয়ন্তিকার বিষন্ন কন্ঠ। অহর্নিশের বুকে কেমন ছ্যাত করে উঠলো! এই মেয়ের অকারণে মন খারাপ কেনো? সে নিজেকে ধাতস্থ করে গমগম সুরে বলল,

‘ অহ বুঝেছি কেনো তোমার মন খারাপ!’

আয়ন্তিকা কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করলো,

‘ কেনো?’

‘ কারণ আমি আজ তোমায় জাষ্ট একটা চুমু খেয়েছি। এরজন্য তোমার মন খারাপ! নটি গার্ল!বললেই তো পারো। আমি এখনি তোমাকে চুমু খাচ্ছি। বলো কোন গালে আগে দিবো?’

আয়ন্তিকা রাগে, দুঃখে অহর্নিশের হাত ধরে টেনে সজোরে এক কামড় বসিয়ে দেয়। অহর্নিশ তার পরিপ্রেক্ষিত শুধু হাসে, শব্দ করে! তা দেখে আয়ন্তি রেগে যায় দ্বিগুণ। রাগে গজগজ করে বলে,

‘ ফাজিল লোক! সারাক্ষণ উল্টাপাল্টা চিন্তা নিয়ে ঘোরে। সারাক্ষণ কি এসব চুমু, টুমু এসব নিয়েই ভাবেন। ছিঃ! ছিঃ! ভাবা যায়, এই লোক কিনা আবার এমপি হয়েছে। ‘

আয়ন্তিকার কথার পরিপ্রেক্ষিতে অহর্নিশ ফের শব্দ করে হাসে। আজব তো! আজ এতো অযথা কারণে তার হাসি পাচ্ছে কেনো?
সে আয়ন্তিকার কোমর ধরে টেনে নিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আয়ন্তিকা ছটফট করলে অহর্নিশ নম্র কন্ঠে বলল,

‘ হুঁশশ! নড়াচড়া করোনা। সূর্য অস্ত যাওয়ার মূর্হতটা ফিল করো। ‘

চুপ হয়ে যায় আয়ন্তিকা। দৃষ্টি সামনে! পশ্চিম দিকে, কমলাটে সূর্য ধীরে ধীরে পৃথিবী হতে বিদায় নিচ্ছে। ইশশশ! কি মোহনীয় দৃশ্য!

চলবে…
#সাদিয়া_মেহরুজ_দোলা

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here