রক্তের বন্ধন Part_27

0
670

রক্তের বন্ধন Part_27

– রাজ প্লিজ আর বলো না আমি ধমঃবন্ধ হয়ে মারা যাবো। তোমার মুখে অন্য কারো নাম শুনতে পারি না। কেন বল এসব আমায়। একটাবার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলোতো তুমি আমাকে নয় ওকে ভালবাসো?
– প্লিজ আমি এসব কিছু শুনতে চাই না। তুমি বের হয়ে যাও আমি তোমাকে দেখতে চাই না ।
কথা কাঁদছে মন চাচ্ছে কথার কান্না মাখা মুখটা বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।
– কথাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে সাথিকে বললাম’ সাথি আমি তোমাকে কোনদিন হৃদয়ে জায়গা দিতে পারব না। আমি কথাকেই ভালবাসি আর সারাজীবন ভালোবাসব। আমি চাই তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হও।
– প্লিজ চুপ কর, আমি মনে প্রাণে তোমাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেছি। এ হৃদয়ে আর কাউকে জায়গা দিতে পারব না। তুমি আমাকে না ভালোবাসলে। তবে রাইসার মা হওয়ার অধিকারটুকু দিয়ো।
– এটা কোনদিনই সম্ভব নয়।
-আচ্ছা এই গভীর রাতে তোমার কাছে একটা জিনিস চাইবো দিবে?
– হুম যদি দেওয়ার হয় দিবো।আগে বলো কি?
– তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরতে দিবে?
– সরি সাথি এটা সম্ভব নয়। অনেক রাত হয়েছে যাও শুয়ে পড়।
– সাথি পাশের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল। আমি রাইসাকে বুকে নিয়ে শুতেই আকাশ গর্জন করে ওঠলো। মেয়েটা আমার ভয়ে গুটিশুটি হয়ে মা মা করে আমাকে জড়িয়ে ধরল।
– এদিকে কথা বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। বিদ্যু চমকাচ্ছে। খুব খুব কষ্ট লাগছে। সাথিকে সে সহ্য করতে পারে না রাজের সাথে। কেন রাজ বুঝে না। ও আল্লাহ তুমি জানো না আমি পবিএ। হঠাৎ ঝুম করে বৃষ্টি নামল সাথে ধমকা হাওয়া। খুব ভয় লাগছে কথার । হঠাৎ মনে পড়ল বৃষ্টির সময় দো’আ নাকি আল্লাহ কবুল করেন।
তাই দু’হাত খানা আকাশের দিকে তুলে বলল’ হে আল্লাহ তুমি না’কি বৃষ্টির সময় দো’আ কবুল কর! হে আল্লাহ দেখ ফকিরের বেশে তোমার দরবারে দু’খানা হাত তুলে ধরেছি। আল্লাহ্ এ পৃথিবীতে আমি ছাড়া তোমার অনেক বান্দা আছে। কিন্তু আমার তো তুমি ছাড়া কেই নেই। ও আমার দয়াময় আল্লাহ তুমি তো জানো আমি পবিএ! কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ আমি আমার স্বামীর কাছে চরিএহীনা। তুমি তোমার বান্দীর সতিত্বের প্রমাণ দাও তোমার গায়েবি মদদ দ্বারা। ও আল্লাহ্ ইসলাম তো শান্তির ধর্ম। বাবার অপরাধের জন্য কোন মেয়ে কেন শাস্তি পাবে? ও আল্লাহ তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো?
– এদিকে হঠাৎ ধমকা হাওয়ায় রুমের জানালাটা খুলে যায়। রুমের জানালা দিয়ে রুমের ভেতরে পানি আসছে। রাইসার হাতটা আমার উপর থেকে সরিয়ে জানালা লাগাতে গিয়ে যা দেখলাম তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। বাহিরে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ বৃষ্টি চমকাতেও আর বাকি থাকল না এটা কথা। রুমে আর থাকতে পারলাম না। তাড়াহুড়া করে দরজা খুলে কথার কাছে যেতেই দেখলাম কথা মোনাজাতে কি যেন বলছে!
– একটু কাছে যেতেই শুনলাম ‘ হে আল্লাহ তুমি আমার স্বামীকে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও। তুমি জানো না আমি যে শুধু আমার স্বামীকে ভালবাসি। আমার মেয়েটা আমার দুধটা পর্যন্ত খেতে পারেনি। মেয়েটাকে বুকে নিয়ে পারিনি মায়ের মমতা দিতে। ও আল্লাহ আমার মেয়েটার জন্য হলেও রাজের বুকে আমাকে ফিরিয়ে দাও। আমি যে রাজকে ছাড়া বাঁচবো না। বড্ড বেশি ভালবাসি রাজকে। তুমি ইয়াতিমকে নাকি খালি হাতে ফেরত দাও না। ও আল্লাহ আমিও তো ইয়াতিম। আল্লাহ পৃথিবীতে কোন বাচ্চা যদি একবার কান্না করে দেয় তার মা দৌড়ে সন্তানের কাছে আসে । হে দয়াময় আল্লাহ তুমি তো তোমার বান্দাকে দুনিয়ার মায়ের চেয়ে লক্ষ কোটি গুণ বেশি ভালবাসো। ও আল্লাহ তুমি আমার স্বামীর বুকে আমাকে ফিরিয়ে দাও। আমি যে পবিএ। আমি যে রাজকে ভালবেসে পাওয়ার জন্য আকাশের কথা মতো এসব করেছি এসব যেন রাজ বিশ্বাস করে। সত্যটা যেন আমার স্বামী জানতে পারে যে তার স্ত্রী পুতঃপবিএ । ও আমার দয়াময় আল্লাহ আর কত কাঁদলে তোমার গোনাহগার বান্দীর দোয়া কবুল করবে? বলো না আল্লাহ আমি যে আর পারছি না সইতে। আজ আমারি ভুলের জন্য অন্য মেয়ে আমার স্বামীর ঘরে। একটা মেয়ের কাছে এর চেয়ে কষ্টের বিষয় আর কি হতে পারে। ও আল্লাহ রাজকে আমার জন্য কবুল করে নাও। এ কথা বলে কথা মোনাজাত শেষ করে হাটুগেড়ে বসে পড়ল মাটিতে।
– আমি কথার পিছনে দাঁড়িয়ে এসব শুনে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলাম না। কথা আমাকে এতটা ভালবাসে আর আমি কথাকে না বুঝে এতটা কষ্ট দিয়েছি। কথার সামনে অন্য একটা মেয়েকে এক ঘরে নিয়ে থেকেছি। যদিও খারাপ কিছু হয়নি। তবুও একটা মেয়ের কাছে এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে। বুকের ভেতরটা চিনচিনে ব্যাথা করছে। খুব করে মন চাচ্ছে কথাকে বুকে নিতে।
– কথাকে কি বলে আজ সম্বোধন করব জানা নেই! কথার পিছন থেকে কথার সামনে গিয়ে হাটুগেড়ে বসতেই কথা চমকে গেল! কিছু বলছে না। আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
বৃষ্টির ফোঁটার সাথে সাথে কথার চোখ দিয়ে এখন বৃৃষ্টি ঝরছে।
– এই কাঁদছে কেন তুমি?
– কই কাঁদছি নাতো? তুমি বৃষ্টির মাঝে আসছ কেন জ্বর আসবে তো ওই তুমি রুমে যাও !
– জ্বর আমার আসবে, তোমার কি আসবে না। কথা কোন কথা বলছে না। কি হলো কথা বলছ না কেন?
– কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো?আর বৃষ্টিতে না ভিজে বাসায় চলে যাও!
– আমার যে যাওয়ার মতো জায়গা নেই। কোথায় যাবো বলো?
– জায়গা আছে তো আসবে?
– হুম যাবো তো কবরে?
– ওই চুপ করবা! আমি বলছি কি সে কথা আরেকবার এমন কথা বললে তোকে খুন করবো।
– তাও ভালো তোমার হাতে মরতে পারবো।
– রাইসার মম আমার বুকে আসবে?
– কি বললা তুমি আবার বল।
– রাইসার মম বুকে আসবে তুমি কথাটা বলতেই গলাটা কেমন যেন ধরে এলো।
– হুম যাবো তো, কথা আমাকে জড়িয়ে ধরল। মনে হল আমার প্রাণটা ফিরে এলো। কথাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছি। কথার প্রতিটা শ্বাসঃনিশ্বাস যেন আমার কথা বলছে। কথা আরো শক্ত করে আমায় জড়িয়ে ধরল।এভাবে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকার পর কথাকে ছাড়িয়ে কথার কপালে আলতো করে ভালবাসার স্পর্শ এঁকে দিলাম।
– কথা মাথাটা নিচু করে বলল’ আমাকে ছেড়ে যাবে না তো কখনো? তুমি আমায় আবার ছেড়ে গেলে সত্যি আমি মরে কথাটা আর শেষ করতে দিলাম না। কথার ঠোঁট টা নিজের ঠোঁটের দখলে নিয়ে গেলাম। কথা কিছুক্ষণ পর আমায় ছাড়িয়ে বলল ‘ অসভ্য’
– সত্যি কি তাই?
– না আমার দুষ্ট বলে কথা আবারো জড়িয়ে ধরল। আমার কাছে আজকের রাতটা শেষ্ট রাত মনে হচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর কথাকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করলাম। রাইসার দিকে তাকিয়ে দেখি রাইসা ঘুমাচ্ছে!
– কথার তার ব্যাগ থেকে শাড়ি নিয়ে চেন্জিং রুমে ঢুকে পড়ল।
– আমি ভেজা কাপড় সেড়ে কথাকে ডাক দিলাম। কথা এখনো রুম থেকে বের হচ্ছে না।
– এই কথা কি হলো বের হচ্ছো না কেন?
– এইতু তুমি দাড়াও আমি শাড়িটা ঠিকমতো পড়ে নেই।
-আচ্ছা। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর বললাম’ কি হলো রাইসার আম্মু শাড়ি পড়া হলো না আমার পড়িয়ে দিতে হবে?
– হুম তোমার পড়িয়ে দিতে হবে।
– কথা তার কথা শেষ করার আগে চেন্জিং রুমের দরজা ধাক্কা দিয়ে রুমে প্রবেশ করে নিলাম গিয়ে দেখি কথা এখনো শাড়ির কুচি ধরে আছে।
-হঠাৎ কথার দিকে তাকাতেই দেখি কথা লজ্জার লাল হয়ে গিয়েছে। আমি হাটি হাটি পা পা করে কথার কাছে এগিয়ে যাচ্ছে। কথার একদম কাছে গেতেই কথা তার চোখটা বন্ধ করে নিল! শাড়ির কুচিটা কথার হাত থেকে নিয়ে কথার কোমরে গুজে দিতে কারেন্ট শর্ক করার মত কথা আমার হাতটা ধরে ফেলল। টান দিয়ে কাছে টেনে নিল। আমি হারিয়ে গেলাম অনেক দিন আগে। এখনো মনে আছে কথার প্রতিদিনের সেই বোকামিগুলো। সে একহাতে সব কাজ করলেও পাগলীটার শাড়ির কুচি সবসময় আমায় গুজে দিতে হতো। এই জন্যই তো বলি পাগলীটা কেন লেট করছে।
– ওই এতো রোমান্টিক হয়ো না হু! অনেক দিন আমাকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলে। আমি সব শুধ নিবো।
– হিহি আমি আনরোমান্টিক।
– কথা আমার নাক টেনে দিয়ে বলল ‘ ওরে আমার গুমরোমুখো রে ! তাই বুঝি তুমি আনরোমান্টিক হলে, রোমান্টিকতা কী?
– কমু ক্যা”
– আচ্ছা! বলতে হবে না। রাইসা একা ঘুমাচ্ছে। চলো রাইসার কাছে।
– কথা আর আমি রাইসাকে মাঝখানে রেখে শুয়ে পড়লাম। দু’জনের বুকে দুজনের ভালবাসা আগলে রেখেছি।
– সকাল বেলা রাইসার ঘুম ভাঙতেই ঘুম ঘুম চোখে বলে ওঠে বাবাই তুমি লিপিস্টিক দিয়েছ?

চলবে””’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here