রক্তের বন্ধন
Part_25
– বাবাই তুমি আর মমকে কষ্ট দিয়ো না। মমকে কেন মারলে। ক্ষমা করে তাও না। আমি না তোমার মা তুমি বলছ। মায়ের কথা রাখতে হয়।
– মনে মনে ভাবলাম অনেক হয়েছে। কথাকে ছাড়া যে আমিও বাঁচব না। সাথিকে সবকিছু বলার পর চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।
– আমি রাতেই কথাকে নিয়ে আসতে তাদের বাড়িতে যাই। বাসায় ঢুকতেই, আমি দেখি আকাশ কথার বাসায় যাচ্ছে। আকাশকে কথার বাসায় ঢুকতে দেখে বুকের ভিতরটা কেমন করে ওঠলো। কথার বাসার দিকে যতই যাচ্ছি ততই বুকের ভেতর অজানা কষ্ট এসে বাসা বাঁধছে। এদিকে কথার বাসায় ঢুকে যা দেখলাম তা আর সহ্য করতে পারলাম না। আকাশ কথার হাতটা ধরে বসে আছে। কথা বলছে আমি সত্যি বাঁচব না। তুমি কিছু একটা কর। আমি আর পারছি না। কেন আমার সাথে এএমন করে রাজ ? এত অবহেলা সইতে আর পারছি না। এদিকে আকাশ কথার হাতটা আরো শক্ত করে ধরছে। অন্য হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
– আমি আর এসব সহ্য করতে পারছি না। কেন যেন কষ্টের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। আমি কখনোই ভাবতে পারিনি আমার ভালবাসার মানুষ অন্যের প্রতি আকৃষ্ট।
– চোখের পানি বাধা মানছে না। শার্টের হাতা দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে যখনি বাসা থেকে বের হব। তখনি বাড়ির কাজের মেয়ে আমাকে দেখে ফেলে।
– আমি তাড়াহুড়া করে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
– এদিকে কাজের মেয়ে কথাকে গিয়ে বলে’ অাপা মণি আপনি যে লোকটার ছবি বুকে নিয়ে কাঁদেন। সে লোকটা বাসায় এসেছিল। কি যেন মনে করে শার্টের হাতা দিয়ে চোখের পানি মুছে বের হয়ে গেল।
what! তুই কি ঠিক বলছিস।
– আপা বিশ্বাস না হলে নিচে গিয়ে দেখেন।
– কথা দৌড়ে নিচে চলে যায়। নিচে গিয়ে দেখে আমি চলে যাচ্ছি। কথা আমার সামনে এসে যখন দাঁড়ায়, তখন মাথাটা নিচু করে ফেলি। কারণ কথার পাপ মুখটা আর আমার দেখতে মন চাচ্ছে না।
– জীবন তুমি বাসায় এসে চলে যাচ্ছ কেন?
– কে আপনার জীবন?
– কেন তুমি!
– প্লিজ পাপ মুখে আমায় জীবন ডেকো না। তুমি সত্যিই একটা থার্ড ক্লাস মেয়ে। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো তোমাদের বাসায় অসময়ে এসে তোমাদের রোমান্টিক মুহূর্ততাকে নষ্ট করার জন্য।
-কি বলছ এসব কিসের রোমান্টিক মুহূর্ত।
– প্লিজ ডামা করবেন না। পথ ছাড়েন রাইসা আমাকে না দেখতে পেলে কাঁদবে।
– প্লিজ তুমি আমাকে ভুল বুঝছ।
– বাহ্ ভালো তো নিজের চোখে দেখা জিনিস কেমন ভুল দেখি। ছিঃ আপনার লজ্জা করে না এসব করতে । প্লিজ আপনি আমার সামনে থেকে চলে যান। আপনার পাপ মুখটা আর আমার দেখতে মন চাচ্ছে না।
-রাজ তুমি আমায় ভুল বুঝছ। তোমার কথা ফুলের মতো পবিএ। প্লিজ বিশ্বাস করো।
– কিসের বিশ্বাস, রাত এগারোটায় যার হাতটা অন্য পুরুষ ধরে রাখে তাকে বিশ্বাস? রাত এগারোটায় পর পুরুষেরর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বলে আমি আর পারছি না তাকে বিশ্বাস। যে মেয়েটা অন্য একটা পুরুষকে অফিসের সবার সামনে স্বামী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। নিজের স্বামীকে, বিনা অপরাধে চরিএহীন সাজিয়ে থাপ্পিয়ে বের করে দেওয়া হয় তাকে বিশ্বাস? নাকি মাঝরাতে অন্য পুরুষ যে মহিলার মাথায় হাত ভুলিয়ে দেয় তাকে বিশ্বাস? লজ্জা করে না এতোকিছুর পরও ফুলের মতো পবিএ দাবি করা। সত্যি বলতে আমি এতটাই অভাগা যে নিজের থেকেএ তোমাকে বেশি ভালবেসে পেয়েছি শুধু লাঞ্ছনা, অপমান, চরিএহীনের খেতাব। জানেন নিজের কলিজা করে রেখেছিলাম আপনাকে। আর আপনি বারবার ঠিক কলিজাটাতেই আঘাত করেছেন। খুব কষ্ট হয়, আঘাত পাওয়া কলিজার উপরের রাতে আবার আপনার পিকটা নিয়ে প্রতিরাতে কেদেছি। কি অপরাধ ছিল আমার? গরীব হয়ে আপনার মতো ধনীর দুলালীকে ভালোবাসা। আজকের পর থেকে কথা নামটা নিজের বুকের মাঝে দাফন করে দিতে চাই। আর না অনেক কষ্ট পেয়েছি। বাকিটা জীবন মেয়েকে নিয়েই কাটিয়ে দিব। আজকে যাবার আগে আরেকটা সত্যি কথা বলে যায়। আমি আপনাকে ডির্ভোস দেয়নি। আপনি যেদিন ডির্ভোস পেপার পাঠিয়ে ছিলেন। সেদিন সে পেপারটাকে নিয়ে অনেক কেঁদেছিলাম। কেঁদে কেঁদে ভাসিয়ে দিয়েছিলাম রাইসাকে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন। পারিনি ডির্ভোস পেপারে সাইন করতে। আজও সে ডির্ভোস পেপারটা তোমার দেওয়া প্রথম উপহার ডাইরির মাঝেই আছে। আজ সব সত্যি বলে দিলাম। ক্ষমা করে দিয়ো যদি কোন কষ্ট দিয়ে থাকি।
–
– রাজ কোথায় যাচ্ছ। যেয়োনা আমায় ছেড়ে আমি বাঁচব না তোমায় ছাড়া। আমি তোমাকে ভালবাসি। অন্য কাউকে না। তুমি যখন আমাকে তোমার বাসা থেকে তাড়িয়ে দাও। আমার খুব কষ্ট হয়। তাই সোফায় বসে বসে যখন কাঁদি তখন আকাশ এসে সাত্বনা দেয়। সত্যি আকাশের সাথে কোন কিছু নেই। আকাশকে বন্ধুর চোখে দেখি। জানো তোমাকে পাওয়ার জন্যই অফিসে আকাশকে বর সাজিয়ে নিয়ে যায়।
– প্লিজ আমি আর এসব শুনতে চাই না
– রাজ আমায় ছেড়ে যেয়ো না। আমি সত্যি তোমাকে ছাড়া বাচঁব না।
– ক্ষমা কিসের জন্য চাইছেন? আপনার তো কোন অপরাধ নেই। আমি চলে যাচ্ছি, হঠাৎ কথা পিছন থেকে এসে দু’টি পা ঝাঁপটে ধরল।
– আমি কথাকে পা থেকে তুলে বললাম, জানো কথা তোমার যেখানে বসবাস তুমি সেখানেই আঘাত করেছ। প্লিজ আমার পিছু এসো না । আমাকে আমার মতো থাকতে। কথাকে রেখে আমি একটা সিএনজি করে বাসায় রওয়ানা দিলাম। চোখ দু’টা থেকে এখনো অবিরাম বৃষ্টি ঝরছে।
-এদিকে কথা রাস্তায় হাটুগেড়ে বসে কান্না করছে।
– কথা প্লিজ আর কান্না করো না তোমার চোখের জল যে আমি সহ্য করতে পারছি না। আমি আগে জানলে কখনো তোমার বাসায় আসতাম না। আজ তোমাকে কিছু সত্যি কথা বলতে চাই। কথা আমি তোমাকে সেই ছোট থেকেই ভালবাসি। কখনো বলতে পারিনি। ভালবাসাটাকে সেই ছোটবেলা থেকেই বুকের ভেতর লুকিয়ে রেখেছি।
– কথা ঠাস করে আকাশের গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বলতে থাকে তোর লজ্জা করে না, আমাকে ভালবাসার কথা বলতে। তুই জানিস না আমার বর আছে আমার ফুটফুটে একটা বাচ্চা আছে। এই কথা শুধু রাজের। কথার শরীরের প্রতিটা রক্তকণিকাও রাজের। কথার হৃদয়ের প্রতিটা স্পর্দনও রাজের নাম বলে। আমি তোকে আর দেখতে চাই না। তুই কোনদিন আর আমার সামনে আসবি না।
– হুম আর কোনদিন আসবো না। কিন্তু আজ তোমায় যে কিছু বলা দরকার। কারণ আমি যে তোমার কষ্ট দেখতে পারি না। আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। জানো আজ থেকে পনের বছর আগে স্কুলে, পরীক্ষার দিন যখন কাঁচ দিয়ে আমার হাত কেটে যায়। তখন তুমি ব্যাকুল হয়ে যাও। তোমার স্কুল ড্রেসের বেল দিয়ে আমার হাত বেধে দাও সেদিন থেকেও তোমাকে ভালবাসি। তখন বুঝতাম না ভালবাসা কি। শুধু বুঝতাম তোমাকে এক মুহূর্ত না দেখলে আমার কষ্ট হয়। জানো যেদিন বাবা লেখাপড়ার জন্য বিদেশ পাঠিয়ে দেয় সেদিন খুব কেঁদেছিলাম। নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হয়েছিলাম। বিদেশে বারো বছর কাটিয়ে যখন দেশে ফিরে জানতে পারি তোমার ডির্ভোস হয়েছে। সবকিছু জেনে আমার পৃথিবীটাও উল্টা-পাল্টা হয়ে যায়। কত শতবার ভেবেছি তোমাকে বলব ভালবাসি সেটা বলতে পারিনি। আর রাজের সম্পর্কে তোমার মত আমারো খারাপ ধারণা ছিল। তাই অফিসে প্ল্যান করে তোমাকে দেওয়া কষ্টের জবাব দেয়। না জেনে ভুল করে ফেলেছি তুমি আমার ক্ষমা করে দিয়ো।
– কথা আকাশের মুখে প্ল্যান করার কথা শুনে আকাশকে আবারো কষে গালে চড় বসিয়ে দিল। তোর কি করে সাহস হয় আমার বরকে প্ল্যান করে অপমান করার। তোর ক্ষমা নাই। তোই বন্ধু নামে শত্রু।
– কথা প্লিজ বিশ্বাস কর। আমি শুধু তোমার হাসি মুখটাই যে দেখতে পারি। তোমাকে না হয় দূর থেকেই তাকিয়ে দেখব। তবুও তুমি সুখে থেকো। আমি যে তোমায় বড্ড বেশি ভালবাসি। তাই মনে মনে স্থির করে নিয়েছি এ জীবনে আর কাউকে বিয়ে তো দূরের কথা কাউকে ভালবাসার আসনেও বসাতে পারব না।
আর তুমি চিন্তা করো না, রাজ ভাইয়ার পা ধরে ক্ষমা চেয়ে নিবো। কারণ আমি জানি তুমি রাজকে ছাড়া বাঁচবে না। তোমায় কথা দিচ্ছি নিজের জীবন দিয়ে হলেও তোমার আর রাজের মিলন করিয়ে দিবো। এ আমার ভালবাসার কসম।
– আকাশ গাড়ি নিয়ে বের হল। পিছন পিছন কথা।
– এদিকে আমি বাসায় এসে দেখি সাথি রাইসাকে নিয়ে শুয়ে আছে। সাথির কাপড়টা ঠিক জায়গায় নেই। একবার তাকিয়েও চোখটা সরিয়ে নিলাম। হঠাৎ করে
চলবে”’