#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_১২
আয়ান কোথাও থেকে ছুঁটে এসে ঝাপটে ধরলো আঁখিকে,আঁখি হতবাক হয়ে যায় আয়ানের এহেন কান্ডে,কিছুক্ষণ শক্ত পাথরের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে,তৎক্ষনাৎ আঁখির চোখে ধরা দেয় আয়ানের ওর সাথে করা সকল অন্যায় অবিচার,খনিকে আয়ানের জন্য ওর মনে খেলা করে যায় ঘৃণা আর তাচ্ছিল্যতা তাই আয়ানকে ধাক্কা দিয়ে নিজে থেকে সরিয়ে দেয় মুহুর্তেই,আয়ানও অনেকটা হতবাক হলো আঁখির এমন কান্ডে,তারপর আয়ান এসব হতবাক চিন্তা একসাইড করে আবারও পাগলপ্রায় হয়ে আঁখির কাছে এসে বলতে লাগলো।।
আঁখি তুমি ঠিক আছো?কোথায় চলে গেছিলে তুমি?কাল রাত থেকে পাগলের মতো খুঁজছি তোমায় আমি,জানো কতো চিন্তায় পড়ে গেছিলাম,তোমাকে আমি আগেই বলেছিলাম আমার কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে নিতে,আমি তোমার সব দায় ভার নিতে রাজি ছিলাম তো, তুমি কেনো জেদ করে সবকিছু নিজে করতে চাইলে?দেখলে তো কি হয়ে গেলো,ওই শয়তান লোকটা তোমার সাথে কি করতে চাইছিলো,আমি এজন্যই তোমায় বলেছিলাম আমার কথা শুনতে আজ আমার কথা শুনলে এমনটা হতোই না,তবে ছাড়ো এসব আজ থেকে তুমি আমার কাছেই থাকবে,মানে আমি অন্যত্র তোমার থাকা খাওয়ার ব্যাবস্থা করে দিবো,তোমার যা চাই তুমি তাই পাবে,আর ওই বজ্জাত লোকটার কথা ভেবে আর ভয় পেয়ো না আমি ওকে এমন শিক্ষা দিয়েছি যে ও আর কখনো কোনো মেয়ের দিকেই চোখ তুলে তাকাতে পারবে না।আর কেউ তোমার ক্ষতি করতে পারবে না আঁখি,আমি আছি তো,তুমি আমার সাথে চলো।
কথাটা বলে আয়ান আঁখিকে হাত ধরে নিয়ে যেতে চাইলে আঁখি নিজের জায়গা থেকে একচুলও নড়লো না ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো নিজের জায়গায়।
কি হলো আঁখি চলো।
আঁখি এবার মুখে তাচ্ছিল্য ভাব ফুঁটিয়ে এনে বললো।
লাইক সিরিয়াসলি মি.আয়ান।আপনার কাছে সবকিছুই সহজ মনে হয়?আপনি সবকিছুই নিজের মতো করে ভাবেন আর তাতে নিজের মন মতো রুপ দানও করতে চান,এখন এতে কারো ইচ্ছা, অনিচ্ছা, ভালোলাগা, খারাপলাগা,আত্মসম্মান কোনো কিছুরই কোনো মুল্য থাকে না আপনার কাছে,শুধু আপনি যেমনটা চান তেমনটাই হলে হয় তাই না?
লজ্জা করে না আপনার রাস্তার মধ্যে একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরতে ওকে নিজের সাথে নিয়ে যাবার কথা বলতে,যে জায়গাতে সেই মেয়েটিকে আপনি কয়েকদিন আগেই নিজের জীবন থেকে পুরাতন দ্রব্য হিসেবে ছুঁড়ে ফেলেছেন,আজকে সে মেয়েটিকে আবারও নিজের দায়িত্বে রাখতে চান,তবে বলেন কি নামে রাখবেন তাকে নিজের দায়িত্বে,……… বন্ধু,প্রেমিকা, স্ত্রী, না রক্ষিতা।
আঁখিিিিি।
চিৎকার করবেন না মি.আয়ান,চিৎকার আমিও করতে জানি,তবে আপনার সাথে আমি শুধু শুধু তর্কে জড়াতে ইচ্ছুক নই,শুধু এটা বলতে চাই মি.আয়ান যে কথাটা শুনে আজ আপনার মাথা এতো গরম হয়ে উঠলো সে কথার ট্যাগটা আজ আপনার অবদানে আমার কপালে বড় করে লিখা হয়ে গেছে,সমাজে ডিভোর্সি নারীকে যে সবাই ভালো চোখে দেখে না,সবাই ওদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করে মজা নেয়,ওদের ভোগ করতে চায়,আর আজকে সমাজে এমন অবস্থানে ঠিক আমিও দাঁড়িয়ে আছি,আর রইলো কথা কাল রাতের ঘটনা নিয়ে, সেটা আমার মতো মেয়ের সাথে ঘটা একদম স্বাভাবিক ব্যাপার,ওটা নিয়ে আপনি মাথা না ঘামিয়েও পাড়তেন।কোনো পুরুষেরই বিয়ের পর পরনারীর জন্য এতো দরদ দেখানো মোটেও ভালো দেখায় না মি.আয়ান।দেখেন আপনি বিবাহিত পুরুষ আর আমি এখন আপনার জন্য পরনারী, তাই নিজের স্ত্রীকে রেখে বার বার আমার আগ পিছন ঘোরাফিরা বন্ধ করুন,লোকে আমাকে নিয়ে তো অনেক কিছুই বলে বেড়াচ্ছে আমি চাই না লোকে আপনাকে নিয়েও খারাপ কথা বলুক,আপনি আপনার সুন্দর জীবন নিয়ে খুঁশি থাকুন আর আমাকে আমার হালে ছেঁড়ে দিন,প্লিজ।
লোকে কি না কি বলবে বলে আমি কি তোমাকে এভাবে অসহায় অবস্থায় ছেঁড়ে দিবো?
কথাটা শুনে তাচ্ছিল্য ভরা অট্টহাসি হাসতে শুরু করলো আঁখি,আয়ান হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর পানে।
অসহায়,হা হা হা হা,অসহায়।
দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করে লম্বা একটা দম নিলো আঁখি তারপর বললো।
আপনি এতো রুপ বদলাতে জানেন আমার তা আগে জানা ছিলো না,আমি তো এটাও ভেবে উঠতে পারছি না আপনি আমাকে সহায় করে কোনদিন ছেঁড়েছিলেন।
আচ্ছা ধরেন আমি আজকে সহায়তার লোভে আপনার সাথে গেলাম,আপনি আমার কোন নামে রাখবেন নিজের দায়িত্বে,আপনার স্ত্রীকে কি বলবেন।
হুম এমনও হতে পারে আপনি জিনিসটা আপনার স্ত্রীর কাছ থেকে লুকাবেন,স্ত্রী না জানতে পায় যার ফলে সমাজের সকলের কাছ থেকে লুকাবেন,তবে যেদিন সত্যটা সামনে আসবে তখন আপনার স্ত্রী আর সমাজ আমাকে কি বলবে মি.আয়ান জানেন?
রক্ষিতা,ড.আয়ান রাহমানের প্রথম স্ত্রী এখন উনার রক্ষিতা।
হা হা হা,আর হয়তো আপনিও আমাকে রক্ষিতার নজরেই দেখবেন,যেহেতু একা এক ঘরে রাখবেন, আমি আগে আপনার স্ত্রীও ছিলাম এমনটা স্বাভাবিক ভাবাই যায় না মি.আয়ান।
মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুইজ আঁখি,এসব কি বলছো তুমি?
সাট আপ মি.আয়ান,আমি ওটাই বলছি যেটা সত্য।আপনার কেরেক্টার সম্পর্কে যে ভালো কোনো ধারনা আমার রয়ে যায় নি,আপনার সাথে যাওয়ার থেকে রাস্তায় না খেয়ে মরাকেই আমি ভালো মনে করবো,অন্ততো সম্মানের সহিত মৃত্যুটাতো নসিব হবে।দেখেন আমি আপনার সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হতে চাই না,যা কখনো করি নি তবে আজ কেনো করবো,আপনি বরং এখান থেকে যান,আমার তো লোকের চোখে কোনো মান রয়ে যায় নি তবে আমি এটাও চাই না আমার সাথে রাস্তায় লড়াই করে আমার জন্য আপনার মানটাও যাক,আপনি প্লিজ আমাকে আমার হালে ছেঁড়ে দিন আর চলে যান এখান থেকে।
তুমি কিন্তু আমায় ফিরিয়ে দিয়ে আবারও ভুল করছো আঁখি।
জীবনে অনেক ভুল করেছি আজ আরেকটা করলে ক্ষতি কিসে তাতে,প্লিজ গো।
আয়ান হাতের মুঠো শক্ত করে নিয়ে নিজের রাগ অনেক কষ্টে আয়ত্তে এনে জায়গাটা ত্যাগ করে,এদিকে মুহুর্তটা অগোচরে যায় না আদৃতের চোখ ফাঁকি দিয়ে,আদৃত যে আঁখির ঠিক পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিলো এতোক্ষণ, আদৃত আঁখিকে যতই দেখছে ততোই অবাক হচ্ছে,কি করে আঁখি পারে একটা মেয়ে হয়েও সবকিছু সহজে মেনে নিতে,হয়তো আল্লাহ মেয়েদের মধ্যে এতোটা সামর্থ্য দিয়ে দেন যে ওরা অসাধ্যও সাধন করতে জানে তবে হয়তো সব নারী নিজেদের সে গুণ ফুঁটিয়ে তুলতে ব্যার্থ হয়,হয়তো পুরুষালি সমাজের নিম্ন মনের কিছু মানুষের জন্য,যেখানে একটা মেয়ের জন্মের পরই ওকে পুরুষের থেকে দূর্বল আর নিম্ন মানের সেই তিক্ত অনুভুতি দিয়ে বড় করা হয়,কিন্তু সেই মেয়েদের মধ্যে যে আল্লাহ পুরুষদের তুলনায় অনেকগুন বেশি ইচ্ছাশক্তি আর ধৈর্য্যশক্তি উপহার হিসেবে জন্মলগ্ন থেকে দিয়ে দেন সেটা কেউই আলাদা করে বিবেচনায় নেয় না,সমাজের এমন অবস্থা দেখে প্রায়ই নিরাশ হতো আদৃত,তবে আঁখিকে দেখার পর আলাদা এক ভালোলাগা কাজ করছে আদৃতের ভিতর,যদি আঁখির মতো মেয়ে আমাদের সমাজের প্রতিটা ঘরে একটা করে থাকতো তবে হয়তো আজ আমাদের সমাজ এতোটা নেতিয়ে পড়তো না,আজকের এই ঘটনায় আঁখির প্রবল সাহস আর প্রতিবাধী মনোভাব আঁখির জন্য আদৃতের মনে সম্মানের জায়গাটা আরও বড় করে দেয়।উক্ত অনুভুতি আদৃতের ঠোঁটের কোনে ফুঁটিয়ে তুলে তৃপ্তির হাসি।আঁখি এদিকে আবারও আগের মতো অটোর অপেক্ষায় মন দিলো,ওর এমন ভাব যেনো এখানে কিছুই হয় নি এতোক্ষণ। এবার আদৃত এলো আঁখির কাছে এসে বললো।
মিস আঁখি অটোর অপেক্ষা করে লাভ নেই আমার সাথে বাড়ি চলেন।
আমি আপনার সাথে কেনো বাড়ি যাবো?আমি অটোতে যাবো আপনি চলে যান।
আর আমার সাথে গেলে কি হবে?
দেখেন আমি আগেই বলেছি আমার কারও সাহায্য চাই না।আমি নিজেরটা নিজে দেখে নিবো।
আমিও আপনাকে সাহায্য করছি না মিস আঁখি, আপনি এখন আমার বাড়িতে থাকেন,আমার বাড়ির একজন সদস্য আপনি,সে হিসেবে আমি আপনাকে আমার সাথে করে নিয়ে যেতেই পারি,এটা সাহায্য কোথা থেকে হলো।
আপনার কাছে যেটা দায়িত্ব মনে হচ্ছে আমার কাছে সেটা সাহায্য ড.আদৃত, আপনি চলে যান প্লিজ।
আচ্ছা আপনি ওটোতে গেলে কি ওটোওয়ালার থেকে সাহায্য নেওয়া হবে না?
না। কারন আমি ওটোতে ভাড়া দিয়ে যাবো, উনি নিজের শ্রমের বদলে টাকা পাবেন এতে সাহায্য কিসের।
আচ্ছা ঠিক আছে আপনি ওটোতে যে ভাড়া দিয়ে যাবেন সে ভাড়া না হয় আমায় দিয়ে দিয়েন।এভাবে গেলে আপনার প্রবলেম হবে না তো?
হবে কারন একটা কারের ভাড়া তুলনামূলকভাবে বেশি,সে হিসেবে প্রতিদিন এতো বেশি ভাড়া আমি ম্যানেজ করতে পারবো না।
আচ্ছা একটা কথা বলেন তো আপনি জন্ম থেকেই এতোটা জেদি না বড় হয়ে হয়েছেন?
জন্ম থেকে,মা বলতেন এটাই নাকি আমার বড় ধরনের বদ অভ্যাস,তবে এটাকেই আমি আমার সবথেকে ভালো সাইড মনে করি।
আনবিলিভেবল,এমন মেয়ে আমি আমার জন্মেও দেখি নি,যেভাবেই হোক ও আমার দায়িত্ব আমি ওকে মেয়ে দেখে দূর্বল মনে করে এমনটা করছি না তবে ও আমার ঘরে থাকছে ওর দেখাশুনা করা আমার দায়িত্ব আর আদৃত রায়হান কখনো নিজের দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করে না,একটা কিছু তো করতে হবে।
কি হয়েছে বিড়বিড় করে কি বলছেন?
দেখেন মিস আঁখি,আপনার কাছে আপনার আত্মসম্মান যেমন বেশি প্রিয় আমার কাছে তেমনই আমার দায়িত্বশীলতা, তাই দুজনেরই দিক বিবেচনা করে আমি একটা উপায় বেড় করেছি।
কি?
আপনি রোজ আমার গাড়িতে আমার সাথেই আসা যাওয়া করবেন,আর মাস শেষে ঘর ভাড়ার সাথে আপনি পুরো মাসের গাড়িভাড়ার হিসেবে এক্সট্রা টাকা দিয়ে দিবেন।এবার আমার সাথে যেতে কোনো প্রবলেম নেই তো আপনার।
নেই,তবে।
তবে আবার কি?
না,আমি সবসময় আপনার গাড়িতে আসা যাওয়া করবো না,যখন আমার ইচ্ছে হবে তখনি,আপনি আমাকে নিজের সাথে আসতে জোর করবেন না।
ওকে, এবার চলবেন?
হুম।
আঁখি আর কিছু না বলে কারের পিছনের গিয়ে বসে পড়লো আর আদৃত গাড়িতে ঢুকে ড্রাইব করতে শুরু করলো।
_____________________
আয়ান চলে এলো বাড়িতে,হাসপাতালে অনেক কাজ থাকলেও কোনো কাজেই মন লাগছিলো না ওর,আঁখির বলা কোনো কথাই চিন্তা থেকে সরাতে পারছে না,চোখ বন্ধ করলেই বার বার আঁখির মায়াবী চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠে বড্ড বিরক্ত করছে ওকে,মাথাটাও বড্ড ধরেছে,বিছানায় শুয়ে আছে চিৎ হয়ে,এদিকে উনার সুন্দরী রমনী আয়নার সামনে বসে নিজের সাজগোছ নিয়ে ব্যাস্ত,স্বামীর হালচাল নিয়ে উনার কোনো মাথা ব্যাথাও নেই।
এবার আয়ান উনার সুন্দরী স্ত্রীকে ডাক দিলেন।
মাহি,অনেক মাথা ধরেছে,একটু টিপে দিবে প্লিজ।
কি যে বলো আয়ান,আমি কেনো তোমার মাথা টিপবো ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়ো কমে যাবে।
মাথা টিপটে বলেছি এটা তো আর অনেক বড় কোনো কাজ না,ভালোবেসে তুমি আমার এতটুকু সেবা তো করতেই পারো।
আমি তোমাকে তোমার সেবা করার জন্য বিয়ে করি নি আয়ান,বিয়ের আগে আমি কারো জন্যই এমন কিছু করি নি আর এখনও করবো না,ওসব সেবা যত্ন কাজ কর্ম আমার স্ট্যাটাস এর সাথে যায় না আয়ান।
কথাটা শুনে এবার অনেক রাগ হলো আয়ানের।
রিয়েলি মাহি? স্ট্যাটাস।যদি স্ট্যাটাসের কথা বলি তবে আখির স্ট্যাটাস এর ১০ ভাগের এক ভাগও তোমার নেই,কিন্তু আঁখিতো কখনো আমাকে এভাবে স্ট্যাটাস এর দম্ভ দেখায় নি।আমার সাথে আমার মতো করে থেকেছে,কখনো অসুখ হলে ওকে মুখ খুলে বলতেও হয় নি আমার, নিজে থেকে বুঝে নিয়েছে আর আমায় সুস্থও করে তুলেছেও।
ও হ্যালো মি.আয়ান রাহমান,আমি প্রথমেই বলেছি আমি আঁখি না,আমি মাহি।আমাকে ওর সাথে তুলনা করতে যেয়ো না,এতোই যখন ওই আঁখিকে ভালো লাগতো তবে ওকে ছেঁড়ে দিলে কেনো?তোমার মনে আছে রাতের পর রাত তুমি আমার সাথে কাটাতে আর ওই আঁখি তোমার জন্য খাবার নিয়ে বসে থাকতো, তুমি তা জেনেও ওকে ইচ্ছে করে আসছি বলে আর আসতেই না,ও অপেক্ষা করতো আর তুমি আমার নিয়ে এনজয় করতে,তুমি নিজেই বলতে তোমার ওই সংসারি আঁখিকে একদম ভালো লাগে না,বরং ওকে তাচ্ছিল্য করতে মজা লাগে তবে এবার আমার কাছ থেকে তা আশা কেনো করছো তুমি?ভুলে যেয়ো না আয়ান তুমি আমাকে দেখে শুনেই নিজের জীবনে নিয়ে এসেছো আমি নিজে থেকে আসি নি,আর আমি যেমন আছি তেমনই থাকবো কারো জন্য চেঞ্জ হওয়ার মেয়ে মাহি না।আজকে বলেছো ভালো কথা আর কখনো আঁখিকে আমার সাথে মিলাতে এসো না।
তোমার সাথে কথা বলাই ভুল।
কথাটা বলে আয়ান উঠে গিয়ে পাশে থাকা একটা ফুলদানি হাতে নিয়ে অতিরিক্ত রাগে তা ছুঁড়ে মারে দেয়ালে তারপর হন হন করে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়,এদিকে মাহি মুখ মুড়ো দিয়ে নিজের ফোন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।
__________________
ছাঁদের প্রান্ত ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে আঁখি আকাশের পানে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে, চোখের পলকই যেনো পড়ছে না ওর,আজকে আকাশে অনেক তারা,আজকের ওই চাঁদটাকে আর একা মনে হচ্ছে না আঁখির,আকাশের ওই অজস্য তারাগুলো যেনো আঁখিকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে,রাতের আকাশের এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য যে আঁখির অনেক প্রিয়,বিয়ের পর প্রায় রাতেই আয়ানের কাঁধে মাথা রেখে এমন দৃশ্যে চোখ বুলাতো আঁখি,সবকিছুর বদলে আঁখির যে দিনশেষে একটাই চাওয়া ছিলো আয়ানের কাছ থেকে আর তা শুধু একফাঁলি ভালোবাসা আর জীবনভরের সঙ্গ যার কোনোটাই পুরন হয়ে উঠে নি আঁখির ক্ষেত্রে, দিন দিন আয়ান যতো উন্নতির দিকে পদার্পণ করলো আঁখির প্রতি ওর ভালোলাগা ততোই কমতে লাগলো আর আজ অবশেষে এই রাতের বিস্তর মনোমুগ্ধকর আকাশের নিচে একাই অবস্থান হলো আঁখির,কাঁধে মাথা রেখে মনের মাধুর্য মিশ্রিত ভালোবাসার দুটি কথা বলার জন্য যে আজ আয়ান নেই,থাকবেই বা কেমনে সে মানুষ আর সে কাঁধে মাথা রাখার অধিকার যে আজ অন্য কারো,মনে মনে তিক্ত এসব ভাবনায় মগ্ন ছিলো আঁখি হঠাৎই লক্ষ্য করলো কেউ একজন একটা কফি ভর্তি কাপ ওর সামনে এগিয়ে দিয়েছে আঁখি পিছন মুড়ে তাকালে সে হাতের মালিক রুপে আদৃতকে পেলো।
কফি,আমি বানিয়েছি,খেয়ে নিন।
আপনি কেনো কষ্ট করতে গেলেন,আমার দরকার হলে আমি নিজেই বানিয়ে নিতাম।
আমি জানি আপনি সব করতে সক্ষম, আপনার জন্য কারো কিছু করতে হবে না,নিজের জন্য আপনি একাই একশো এর সমান।
আসলে আমি আমার জন্য কফি বানাচ্ছিলাম,ভাবলাম আপনার জন্যও বানিয়ে নিই।
হুম,থ্যাংক্স।
কফিটা নিয়ে নিলো আঁখি।
দুজনই কফিতে চুমুক দিতে দিতে আকাশের দিকে নিজেদের দৃষ্টি প্রখড় করলো,হঠাৎ আঁখি নিরবতা ভেঙে বলে উঠলো।
আপনি আমার জন্য এতোকিছু কেনো করতে চান ড. আদৃত?এটা ভেবে যে আমি আপনার স্ত্রীর প্রতিরুপ?
দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করলো এবার আদৃত তারপর গম্ভীর স্বরেই বললো।
আপনি ওর প্রতিরুপ হতে পারেন,তবে এটাও সত্য যে আপনি আর ও এক না,আমি ওকে ভালোবাসতাম,হয়তো এখনও বাসি। কিন্তু আপনাকে নিয়ে আমার ভালো ভাবার পিছনে কোনোদিক থেকেই কারন আরোহী হতে পারে না,আপনি প্রতিবাধী আর আত্মসম্মান প্রিয় একজন নারী,আর নারীর সম্মান করা সকল পুরুষেরই দায়িত্ব, আর আমি আমার দায়িত্ব থেকে কখনো পিছুপা হয় নি আর হবোও না।হ্যাঁ আমি আপনার জন্য অনেক কিছু করতে চাই কারন আপনার মতো মেয়ে আমাদের সমাজে অনেক প্রয়োজন।
হুম।
তা আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?ঘুমাবেন না বুঝি?আসলে দিদু জানেন আমরা স্বামী স্ত্রী, তাই আমরা যদি আলাদা ঘরে থাকি আর দিদু তা জানতে পারেন তবে তো বুঝতেই পারছেন কি হবে।তবে আপনি চিন্তা করবেন না,আপনি যতোদিন এখানে আছেন ততোদিন আমি হাসপাতালে অথবা নিজের ফার্মহাউজে থেকে যাবো দিদু এতে মনে করবে আমি এমারজেন্সির কারনে হয়তো রাতে বাইরে থাকি,কারন প্রায়ই আমায় এমারজেন্সির কারনে রাতে হাসপাতালে থাকতে হয়,তাই আপনি নিশ্চিন্তে আমার রুমে থাকতে পারেন,আমি একটু পড়েই বেরিয়ে যাবো।
তার আর দরকার হবে না ড.আদৃত,হ্যাঁ আমার আপনার উপর অনেক সন্দেহ, আপনাকে আমার রহস্যময়ী মনে হয়,কিন্তু আপনার কেরেক্টারে কোনো সন্দেহ নেই আমার,আপনার সামনে কোনো মেয়ে আইটেম ডান্স করলেও আপনি চোখ তুলে তাকাবেন না এতোটুকু বিশ্বাস আমার আছে তাই আপনার সাথে এক রুমে থাকতে আমার কোনো সমস্যা নেই,তাছাড়া আপনার রুমের সোফা টা বেশ বড় ওখানে আমার মতো দুইটা মেয়ের জায়গাও আরামছে হয়ে যাবে,হা হা।তাই অযতা চিন্তা আপনি না করলেই পারেন ড.আদৃত।
কথাটা বলে আঁখি ফিক করে হেসে দিলো,আদৃতও মুচকি হাসলো তারপর বললো।
আপনি সবকিছু কি করে হাসিমুখে মানিয়ে নিতে পারেন মিস আঁখি?জিনিসটা কি এতোই সহজ?
আঁখি এবার দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে উত্তরে বললো।
প্রথমত সবকিছুর উপর একফালি হাসির ঝলক যে সবকিছু মানিয়ে নিতে অনেক সহায়ক ড.আদৃত,দুঃখ কষ্ট তো জীবনে আসবেই তাতে আমরা হাসতে ভুলে গেলে জীবনের কি মুল্য রয়ে যাবে বলেন তো?মনে শক্তি আর মুখে হাসি রেখে সবকিছু মোকাবিলা করতে পারলে সংগ্রামের পথটা বেশি না হলেও অল্প সহজ তো হয়ই।
আর দ্বিতীয়ত?
এবার খনিক রসিকতা করে বললো আঁখি।
দ্বিতীয়ত হাসতে টাকা লাগে না ড.আদৃত।তাই আমি মন খুলে হাসি ,কারন আমি আপনার মতো কৃপন না,যে ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুঁটাতেও ১০ বার ভাবে কমপক্ষে, হা হা হা।আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে তাই আমি তো ঘুমুতে গেলাম আপনিও চলে আসেন কেমন,আর হ্যাঁ কফিটা কিন্তু সেই ছিলো,ধন্যবাদ।
কথাটা বলে আঁখি আলতো হেসে চলে গেলো,আদৃতও আলতো হেসে আকাশের পানে তাকালো,খনিকে ওর মনে ধরা দিলো কিছু তিক্ত স্মৃতি, সাথে সাথে মুখের হাসিটা মলিনতায় পরিণত হলো।
চলবে…………..