#রক্তের_বন্ধন
Part_11
___কিন্তু আজকের পর থেকে আপনাকে যতটা ভালবাসতাম ততটাই ঘৃণা করব।  একদিন আপনার সব ভুল ভাঙবে সেদিন আর আমায় পাবেন না। সবার সামনে দাঁড়িয়ে আমি চরিএহীন বলছি,  এই রাজের জন্যই  আপনি কাঁদবেন। পায়ে পড়ে মাথা ঠুকরে ঠুকরে কাঁদবে। আরেকটা সত্যি যেন নাও সাথি আমার হবু বউ নয়।  মা মরা একটা এতিম মেয়ে কোথায় যাবে? আমি আজ মিথ্যা কলঙ্কের বুঝা নিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছি, তবে একদিন সত্যিটা প্রকাশ পাবেই।  এই ছোটলোককে একনজর দেখার জন্য তোমার কাঁদতে হবে। চোখের পানি মুছতে মুছতে রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম।  বুকের ভেতরটা আজ কাঁচের টুকরার মতো ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। হঠাৎ পকেটে থাকা ফোনটা বেজে উঠল।
.
ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে কে যেন বলল” মিঃ রাজ আপনার মেয়ে রাইসার কন্ডিশন আশঙ্কাজনক। আপনি তাড়াতাড়ি হসপিটালে আসেন।
.
ফোনটা রেখেই একটা সিনজি ধরে হসপিটালে চলে গেলাম।  হসপিটালর গিয়ে দেখি কলিজার টুকরা টা ব্যাথায় কাতরাচ্ছে।
.
বাবাই বাবাই তুমি আসছো বাবাই?জানো বাবাই আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে।  বাবাই তুমি কাঁদছো কেনো বাবাই? জানো বাবাই আজ রাতে স্বপ্নে দেখি আমাকে একটা ভয়ংকর লোক গলা চেপে ধরেছে। আমার না অনেক ভয় করছে।  বাবাই আমায় ছেড়ে কোথায় যেয়ো না।
.
হুম আমার কলিজার টুকরাকে রেখে কোথাও যাবো না।  আমার মামনির কাছে কিছুই হবে না।  আমার বুকে আসই মা! রাইসাকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।  অনগর্ল একটার পর একটা কথা বলেই যাচ্ছে কথা।  বাবাই আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না।  বাবাই আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।  আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো বাবাই।  রাইসা কথা বলতে বলতে হঠাৎ নিঃশব্দ হয়ে গেছে।  এই রাইসা মা আমার কথা বল মা কথা বল।  দেখ তোর বাবাই শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে। কথা বল না মা কথা বল তুই ছাড়া তোর বাবাইরের আর যে কেউ নেই।  ডাক্তার প্লিজ আসেন।  আমার মা যে আমার সাথে কথা বলছে না।  আমার কলিজার টুকরা চোখ খুলছে না।  পাশে দাঁড়িয়ে নার্স কাঁদছে আমার কান্না দেখে।
.
ডাক্তার এসে বলল ‘ ভয়ের কিছু নেই,  স্যান্সলেন্স হয়ে গেছে’। তবে মিঃ রাজ এ সপ্তাহের মাঝেই অপারেশন করতে হবে আপনার মেয়ের।  রাইসার প্রায় দু’টো কিডনীই ড্যামেজের পথে। ইমাজেন্সী অপারেশন করে কিডনী ডুনেট করা না গেলে পেশেন্টকে বাঁচানো সম্ভব না। আর রাইসার জন্য কিডনী পাওয়া গেছে। এখন অপারেশন করার উপযুক্ত সময়। আপনি এক কাজ করেন,  টাকাটা রেডি করে।  তিনদিনের মাঝেই জমাদেন।
.
জ্বি আচ্ছা,।  একসাথেই কি সব টাকা দিতে হবে?
.
হুম দশলাখের ভেতর আটলাখ অপারেশনের আগে পেমেন্ট করতে হবে।  আর বাকি দু’লাখ অপারেশনের পর পেশেন্ট রিলিজ হওয়ার সময়।
.
আচ্ছা আপনারা সব ব্যবস্থা করেন।  আমি যেভাবে পারি তিনদিনের মাঝে টাকাটা পেমেন্ট করবো।
.
ডাক্তার চলে গেলে,  মায়াবি মুখটার দিকে চেয়ে আছি।  জানি না কি করবো,  এতো টাকা কোথায় পাবো। আমার কাছে প্রায় লাখ খানেক টাকা আছে।  এ টাকা দিয়ে তো কিছুই হবে না।  রাইসার দিকে তাকাতেই কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছে। আমার শেষ সম্বলটাও কি আল্লাহ্ কেড়ে নিবে? আমার যে কেউ নেই রাইসা ছাড়া এতোটাকা কিভাবে জোগাড় করবো।
.
রাইসার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছি,  আর নিরবে চোখের জল ফেলছি।
.
মনে মনে ভাবছি,  রাইসাকে কি তার মায়ের হাতেই তুলে দিবো? থাকুক না তার মায়ের কাছে তবুও তো বেঁচে থাকবে। কিছু ভাবতে পারছি না।  পাশে তাকাতেই দেখি সাথি দাঁড়িয়ে আছে।
.
এই সাথি তুমি কাঁদছো কেন? আর কখন আসছো?
এইতো এই মাএ।  আমি তোমার বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছি।  তাই দেখা করতে এসে যা দেখলাম তা কখনো কল্পনাও করতে পারিনি।  একটা মানুষ এতটা কষ্ট চাঁপা কিভাবে রাখে? নিজের ভালবাসার মানুষ যাকে এতটা কষ্ট দিলো। তবুও কিছু বলল না। আচ্ছা রাজ তুমি কোন মাটিতে তৈরি,  নিজের এতটা কষ্টের সময়ও কাউকে কিছু বলছো না? রাইসা যে এতবড় একটা রোগে ভুগছে আমায় কখনি বলো নি কেন? তুমি জানো না,  রাইসাকে আমি যে আমার মেয়ের মতো ভাবি।  রাইসা যে আমার শ্বাস- প্রশ্বাস।
.
সাথি আমি কি করবো? আমার যে শেষ সম্বলটাও আল্লাহ্ কেড়ে নিতে চাচ্ছে। আমি কাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদবো। নিজের ভালবাসার মানুষ অপমান করে বের করে দিলো অফিস থেকে। চরিএহীন সার্টিফিকেট ধরিয়ে দিল আমায়।  এতটা ভালবাসার পরও একবিন্দু বুঝলো না আমায়।  জানো সাথি তোমাকে সত্যি একটা কথা বলি’ আমার এ জীবনে আর কাউকে ভালবাসতে পারব না!  আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো। বড্ড বেশি ভালোবাসো। জানো সাথি ভালবাসলেই কারো সাথে ঘরবাধা যায় না।
.
রাজ প্লিজ চুপ করো,  আমি তোমার কাছে ভালোবাসা চায়নি।  চায় না স্বামীর অধিকার।  আমি তোমার পায়ের নিচে একটু জায়গা চাই,  যে জায়গাটা একটা নারীর জন্য পরম সৌভাগ্যের পরম গৌরভের।  আমি শুধু রাইসার মা হয়েই থাকতে চাই।  আমি রাইসাকে চাই রাজ তোমার কাছে রাইসার মা ডাকটা ভিক্ষা চাই।
সাথি এভাবে বলো না।  আমার মেয়েটা বাচাঁ – মরার সন্ধিক্ষণে।  আর জানো তো রাইসার জন্মদাত্রি কথা। আমি চাই রাইসাকে তার মায়ের হাতে তুলে দিতে।  কারণ আমি চাইনা আমার মেয়েটা অকালে হারিয়ে যাক।
.
চোখের পানি মুছে,  মনে মনে স্থির করে নিলাম।  রাইসার বিনিময়ে কথার কাছে দশলাখ টাকা চাইবো।  যে ভাবা সেই কাজ,  রাইসার কপালে,  চুমু দিয়ে বললাম’ মারে তোর বাবাকে ক্ষমা করে দিস। তোকে বুকে আগলে রাখতে পারলাম না।  আমি যে হতভাগ্য পিতা তোকে বাচাতে আমি তোকেই কুরবাণি দিয়ে দিলাম।
.
রাত আটাটায় কথার বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে আছি।  কিছুক্ষণ পর কথা এসে দরজা খুলেই বললো আমি না তোর মতো চরিএহীনের মুখ দেখতে চায়নি।  তারপরও কেন এসেছিস?
.
ম্যাডাম আমি আপনার মেয়েকে ফেরত দিতে এসেছি। তবে শর্ত আছে।
.
কিসের শর্ত?
আমার দশলাখ টাকা লাগবে।
–
হঠাৎ আকাশ বাড়িতে ঢুকেই আমাকে দেখে রাগ্বানিত ভাব নিয়ে বলল’ সুইট হার্ট ফকিরের বাচ্চা কেনো, তোমার বাড়িতে?
–
আমার মেয়েকে নিয়ে ব্যবসা করতে এসেছে। আমার মেয়েকে ফেরত দিয়ে টাকা নিতে এসেছে চরিএহীনটা।
.
কথার মুখে এমন কথা শুনে কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছে।  চোখের পানি মুছে কথা ম্যাডামকে বললাম’ ম্যাডাম আপনি আপনার মেয়েকে নিবেন?  আমার টাকাটা খুব প্রয়োজন।
.
আমার কথা শেষ না হতেই ‘ আকাশ বললো সুইট হার্ট,  তোমার মেয়ে তো মারা গিয়েছে।হসপিটালে আমি নিজের চোখে দেখছি  তোমার মৃত মেয়ে হয়েছে। এই চরিএহীনটা তোমার সাথে ব্যবসা করতে এসেছে। তুমি এই ছোটলোকটার কথা বিশ্বাস করলে?
.
কথা আমার কাছে এসে বলল’ ছিঃ! শেষ পর্যন্ত এমন ঘৃণ্য অভিনয় করতে পারলি? কার না কার জারজ সন্তানকে টাকার লোভে আমার মেয়ে বানাতে তোর লজ্জা করলো না? জানি না কোন পতিতার ঘরে এর জন্ম।  আর আমার ঘাড়ে তুলে দিতে চাচ্ছিস।  এই জন্যই তো বলি পতিতায় মেয়ে কেন আমায় মা ডাকবে।  পতিতার মেয়ে তো সাথীর মত নষ্ট মেয়েকেই মা ডাকবে।
– ঠাস,  ঠাস, ঠাস!  কথার গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বলতে লাগলাম”   এই তুই মেয়ে।  তোর লজ্জা করে না? নিজের মেয়েকে পতিতার মেয়ে বানাতে””””
চলবে””””””””””””

