#রক্তের বন্ধন
Part:- 09+10
সাথির কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম।  জানো সাথি আমার হৃদয়টা যে কথার স্মৃতিতে পূর্ন।  অামার হৃদয়ের আসনটাতে চাইলেই অন্য কাউকে বসাতে পারব না।
.
হঠাৎ রাইসা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আবারো সেন্সলেস হয়ে যায়।  মাথার পিছন থেকে অনবরত ব্লাড বের হচ্ছে।  বুকের ভেতরটা হু হু করে কেঁদে উঠল।
.
রাইসার প্রাথমিক চিকিৎসার পর। ঢাকায় ডাক্তার জিসিয়া জুইকে ফোন করলাম।  ম্যাডাম রাইসাকে নিয়ে ঢাকায় আসতে বলল।  তাই  ম্যানেজারকে  বলে রাইসাকে নিয়ে ঢাকার চলে আসলাম।  আমার সাথে সাথে সাথিও চলে আসল।
.
ডাক্তাররা পরীক্ষা করে বলল’ মিঃ রাজ এ মাসের মাঝেই,  রাইসার অপারেশন করতে হবে!  আর রাইসাকে বাসায় নিতে পারবেন না। কারণ কখন কী ঘটে যায় বলা যায় না।    আর অপারেশন করতেই প্রায় ১০ লাখ টাকা লাগবে। কারণ রাইসার একটি কিডনী ড্যামেজ।  আরেকটা ড্যামেজের পথে।
.
ডাক্তারের রুম থেকে বের হলাম রাজ্যের চিন্তা নিয়ে।  রাইসার মাথার কাছে সাথি বসে আছে। সাথির চোখ থেকে টুপটুপ করে জল পড়ছে।
.
পৃথিবীটা সত্যিই আজব। যে জন্মদিয়েছে,  সে একটিবার খবরো নিলো না।  অথচ যার সাথে কোন রক্তের বন্ধন নেই সেই মেয়েটাই মায়ের স্নেহ দিচ্ছে।
.
কি বলল ডাক্তার।
.
সাথির কথায় বাস্তবে ফিরলাম।
.
বুকের কষ্টটা চাপা রেখে বললাম ‘ সামান্য পেট ব্যাথা।  ভালো হয়ে যাবে।
.
তিনদির পর অফিসে যেতেই শর্ক খাই।  বুকের ভেতরটা কেমন করে ওঠে।
আফসার ভাই বলল’ আজ নাকি দু’বাই থেকে কথা ম্যাডামের বর আসবে।
.
ডেস্কে বসে কাজ করছিলাম এমন সময় পিয়ন এসে বলে গেল ম্যাডাম আমায় ডাকছে।
.
হাতের কাজটা শেষ করে ম্যাডামের রুমে গিয়ে বসতেই বলল’ মিঃ রাজ সাথিকে নিয়ে একই বাসায় থাকলে আপনাকে অফিস থেকে বহিষ্কার করা হবে।  এখন আপনি ভাবেন কি করবেন?
.
ম্যাডাম আপনি যা ভাবছেন সেটা ভুল।  আর আমি সাথিকে নিয়ে একই বাসায় থাকলে আপনার কী? আপনার তো হাসবেন্ড আছে।
.
সেটা আপনার বলতে হবে না। আমার হাসবেন্ড আছে কি নেই।  আমার এখানে চাকরি করলে সাথিকে নিয়ে একই ফ্লাটে থাকতে পারবেন না।  আমার সহ্য হয় না এসব কেন কথা বলেন ওই বাজে মেয়ের সাথে।
.
প্লিজ স্টপ,  সাথি বাজে না বাজে আপনি।
.
হুম জানতাম এটাই বললে।  যে স্ত্রী রেখে পতিতালয়ে রাত কাটায় তার কাছে আবার নীতি কথা।
প্লিজ ম্যাডাম।  আর না প্লিজ আর ওসব বলবেন না আমি সহ্য করতে পারি না।
.
আচ্ছা আসুন এইবার।  আর আপনাকে তিনদিন সময় দিলাম।  ওই মেয়ের থেকে দূরে থাকবেন।  আর যদি না থাকেন তাহলে রিজািইন লেটার জমা দিয়ে যাবেন।
.
ম্যাডাম এর রুম থেকে বিষন্ন মনে বের হলাম।
সাথি আমার মুখ দেখেই বুঝে ফেলেছে তাকে নিয়েই কিছু হয়েছে। ডেস্কে এসে কয়েকবার জিজ্ঞেস করলেও কিছু  বললাম না।  সাথি চলে গেলে ভাবতে লাগলাম ‘ সাথীর মায়ের শেষ কথাগুলো।  সাথির মাকে কথা দিয়েছি, সাথিকে দেখে রাখবো। এভাবে মেয়েটাকে একা ছেড়ে যাওয়া কি ঠিক হবে। কিছু ভাবতে পারছি না।  এদিকে লাঞ্চ টাইমে অফিসের ক্যান্টিনে আমি আর সাথি একই টেবিলে বসে আছি।  হঠাৎ কথা  ম্যাডাম আমাদের সাথে এসে বলল।
.
আমি কিছু বুঝতে পারছি না।  কি চায় আর আমার কাছে। আর কত কষ্ট দিবে আমায়? কথা খাচ্ছে না আমার দিকে চেয়ে আছে। আমি জানি টেবিলে বসে থাকলে আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারবো না।  কারণ পুরনো সব স্মৃতি অশ্রু হয়ে ঝড়ে পড়বেই।  এমন একটা দিন ছিল কথা আমাকে খাইয়ে দিতো না।  আমি কথাকে খাইয়ে দেয়নি।  তাই খাওয়া আর শেষ করতে পারলাম না।  হাত ধুয়ে টেবিল থেকে উঠতেই কে যেন হাতটা ধরে ফেলল!
.
তাকিয়ে দেখি সাথি  হাতটা ধরে আছে!
.
খাওয়া শেষ না করে উঠতে হয় না। আপনি তো কিছুই খেলেন না।
.
আবারো খাবার  টেবিলে বসে পড়লাম। কথা অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে  আছে।  মনে হচ্ছে খেয়ে ফেলবে। অফিসের সবার সামনে  কিছু বলতেও পারছে না।  খাবার রেখে যখনি কথা উঠতে যাবে,  তখনি নিজের অজান্তে সাথির মতো কথার হাতটা ধরে ফেললাম।
.
ম্যাডাম আপনি তো কিছুই খেলেন না।
.
কথার হাতটা ছাড়িয়ে জুরে একটা ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে বললে লাগল’ আপনার কিভাবে সাহস হয় আমাকে টার্চ করার।  আপনাকে ভালো মনে করতাম।  বাট আপনি যে এতটা নীচ তা আজ জানতে পারলাম।  অফিসের সবাই হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কথা ম্যাডাম এক নাগাড়ে বলেই যাচ্ছে। সবাই ছিঃ! ছিঃ! করছে।
.
এতটা অপমানিত হবো কখনো ভাবতে পারিনি।  চোখ থেকে পানি পড়ছে। কথা চলে যাওয়ার আগে বলল’ কেমন দিলাম? আমাকে সামনে তোর হাত সাথি কেন ধরবে।  তাই প্রতিশোধ নিলাম।
.
আমি কিছু বুঝতে পারছি না।  কথা ম্যাডাম আর কী চাই।
.
আমি এক দৃষ্টিকে কথার চলে যাওয়ার দিকে  চেয়ে রয়েছি।
.
খাচ্ছেন না কেন? আমি খাইয়ে দিব?( সাথি)
.
প্লিজ আমাকে একা  থাকতে দাও।
বিকেল বেলা অফিস শেষ করে,  হসপিটালে চলে গেলাম।  হসপিটালে গিয়ে দেখি ‘ কলিজার টুকরাটা’ ঘুমিয়ে আছে।  মনে হচ্ছে পূর্ণিমার চাঁদটা কালো মেঘের আড়ালে পড়ে যাচ্ছে। রাইসার কপারে চুমু দিতেই জেগে গেল।  বাবাই বাবাই করে জড়িয়ে নিল আমায়।
.
বাবাই মম আসেনি? জানো বাবাই আমার না খুব কষ্ট হয়।  বাবা প্রতিদিন ঘুমালে, কে যেন আমাকে একটা সুন্দর বাগানে যেতে বলে।  জানো বাবাই বাগানটা অনেক সুন্দর।  বাগানো ছোট বাচ্চারা খেলা করে।  আমার না তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করে না।  আচ্ছা বাবাই মানুষ মরে গেলে কোথায় চলে যায়? তারা আর কি সেখান থেকে ফিরে আসতে পারে না।
রাইসার কথা শুনে,  চিৎকার দিয়ে কান্না করতে ইচ্ছে করছে।  রাইসাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললাম’ মারে এমন কথা আর কখনো মুখে আনবি না!  তুই যে আমার বেঁচে থাকার শেষ  অবলম্বন।
.
বাবাই তুমি কাঁদছো কেন?। তুমি কেঁদো না বাবাই।  তুমি জানো না তুমি কাঁদলে আমার খুব কষ্ট হয়।  তুমি আর কান্না করো না।  কথা বলতে বলতে রাইসা আমার বুকেই ঘুমিয়ে গেল।  রাইসা ঘুমিয়ে গেলে,  রাইসার কপালে আবারো ভালবাসার স্পর্শ একেঁ দিলাম।
.
রাতে বাসায় ফিরে দেখি বাসায় কেউ নেই।  রাত নয়টা বাজে।  বাসাতে পিনপিনে নীরবতা বিরাজ করছে! পাশের রুম থেকে ফিস-ফিস আওয়াজ আসছে। ভয় লাগছে,  সাথিকে তার রুমে নেই।  পাশের রুমে গিয়েই থমকে গেলাম।  সাথি নামায শেষ করে মোনাজাত ধরে কি যেন বলছে।  জানালার কাছে গেতেই স্পর্ষ্ট শুনতে পেলাম।  সাথি বলছে ‘ হে আল্লাহ,  বিশ্বজাহানের অধিপতি।  ছোটবেলার বাবা’কে কেড়ে নিলে।  বুঝতামই না বাবাকে সেদিন গরম পানিতে গোসল করিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে কোথায় নেওয়া হচ্ছে। সবাইকে বলেছি আমার বাবাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।  ছোটমানুষ বলে কেউ কথা বলেনি।  মামাকে বলেছি’ মামা বাবাইকে কোথায় নিয়ে যাও,  আমার বাবা আমার সাথে কথা বলে না কেন? বাবাই আমাকে রাজকুমারী ডাকে না কেন।  সেদিন মামা শুধু কেঁদেছে। মায়ের কাছে আসতেই।মা-ও জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়েছে আমায়।  বুঝেনি সেদিন সবাই কেন কেঁদেছে।  সবার সাথে সাথে আমিও কেঁদেছি। যখন একটু বড় হয়ে বুঝতে শিখেছি, সেদিন বুঝেছি আমার বাবাকর তুমি তোমার কাছে নিয়ে নিয়েছো।  প্রতিরাতে মা’কে বাবার কথা বললে মা আমাকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতো। তবুও তোমার কাছে কোন অভিযোগ করিনি। যেদিন প্রথম জানতে পারলাম আমি কখনো মা হতে পারবো না সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।  খুব কেঁদেছি। বিয়ের দিন পাএপক্ষ মা হতে পারব না জেনে,  পুড়ামুখী বলে বিয়ে ভেঙে দেয়।  আল্লাহ্ মা না হওয়ার জন্য কি আমি দায়ী? কেন সবাই আমাকে কষ্ট দেয়। সুখে, দুঃখে যে মা আগলে রেখেছিলে সে মা টাকেও কেড়ে নিলে।  আমাকে তোমার কাছে নিয়ে নাও।  তাহলে কেউ আর বলবে না পুড়ামুখী।  আল্লাহ আমি রাজকে ভালোবাসি।  রাইসাকে নিজের মেয়ে হিসেবে পেতে চাই। হে আল্লাহ্ রাইসা এবং রাজকে তোমার কাছে ভিক্ষা চাই।  আল্লাহ এতিমের দোয়া তো তুমি কবুল করো।  আমি একটা এতিম মেয়ে তোমার কাছে রাইসাকে ভিক্ষা চাই।  সাথি মোনাজাত শেষ করে রুম থেকে বের হওয়ার আগেই আমি আমার রুমে এসে পড়লাম।
.
রাতের খাবার নিয়ে সাথি আমার রুমে আসতেই।  মেঘলা আকাশ বাহিরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল।  হঠাৎ বাহিরে জোরে বিদ্যৎ চমকানোর সাথে সাথে কারেন্ট চলে গেল।  সাথি ভয় পেয়ে আমায় জড়িয়ে ””’
আমি  একটা এতিম মেয়ে তোমার কাছে রাইসাকে ভিক্ষা চাই।  সাথি মোনাজাত শেষ করে রুম থেকে বের হওয়ার আগেই আমি আমার রুমে এসে পড়লাম।
.
রাতের খাবার নিয়ে সাথি আমার রুমে আসতেই।  মেঘলা আকাশ বাহিরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল।  হঠাৎ বাহিরে জোরে বিদ্যৎ চমকানোর সাথে সাথে কারেন্ট চলে গেল।  সাথি ভয় পেয়ে আমায় জড়িয়ে  ধরল।  মনে হচ্ছে ছোট্ট বাচ্চা ভয় পেয়েছে।
.
আমি কি করবো ভাবতে পারছি না,  সাথিকে জড়িয়েও নিতে পারছি না।  আবার ছাড়িয়ে নিতেও পারছি না।  কেন জানি মায়া কাজ করছে।  বারবার সাথির কান্নামাখা  মুখটা ভেসে উঠছে।  সাথির মোনাজাতের প্রতিটা কথা কানে এসে বিঁধছে। কিন্তু না এটা ঠিক না।  আমি যে কথাকে কথা দিয়েছিলাম’ আমার যত দিন নিঃশ্বাস থাকবে ততদিনই তাকে ভালোবাসবো।  কারণ কথার তো কোন দোষ নেই।  সব দোষ আমার।  পৃথিবীর কোন মেয়েই চাইবে না তাঁর স্বামী পতিতালয়ে যাক।  আর কথা তো ছিল অন্তঃসত্ত্বা।  তাকে ওমন রেখেই রাতের পর পর পতিতালয়ে কাটিয়েছি।  কিন্তু কেন কাটিয়েছি সেটা আমি কাকে বলবো। সে যে এক করুণ সত্য।    আমি যে সব বলতে পারব না।  হঠাৎ আবারো বজ্র পড়ার শব্দে, কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরলাম।
.
সাথি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে আমায়।  আমার বিবেক জানান দিচ্ছে,  সাথি ভুলবশত যা করছে তা ঠিক না।  একটা রুমে ছেলে আর মেয়ে থাকা সত্যিই ঘৃণ্য একটি বিষয়।  যদিও বাড়িওয়ালা জানে আমরা স্বামী -স্ত্রী।  কিন্তু সত্যিটা তো আমরা জানি।  তাই সাথিকে ছাড়িয়ে নিলাম।  চার্জার লাইট টা জ্বালিয়ে দিয়ে সাথির থেকে কয়েক হাত দূরে গিয়ে দাঁড়ালাম।
.
সাথির দিকে চেয়ে দেখি,  লজ্জা না ভয়েই সুন্দর মুখটা লাল টকটকে হয়ে গেছে। মনে মনে স্থির করলাম সাথিকে সব বলা উচিত। এভাবে থাকলে যেকোন সময় ভুলবশত কিছু না কিছু হয়ে যেতে পারে।
.
আপনি খাবেন না?
.
আমি মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলাম।  হ্যাঁ খাবো।
.
সাথি খাবার নিয়ে টেবিলে সাজিয়ে রাখল।  আমি হাত ধুয়ে খেতে বসতেই অ্যাঁ করে চিৎকার দিয়ে উঠলাম।  কারণ আজ বিকেলে রাইসাকে ফল কেটে দেওয়ার সময় হাত কেটে যায়।  সেখানেই তরকারির ঝোল পড়ায় অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমার চিৎকার শুনে সাথি ভয় পেয়ে যায়।  কাঁপা কাঁপা গলায় বলল ‘ কি হয়েছ ?
না কিছু না,  কাটা হাতে  তরকারির ঝোল লাগায় ঝলতেছে।
.
আমি তোমায় খাইয়ে দেয়?
সাথি এটা ঠিক না।
.
আমি তো তোমার কাছে অন্য কিছু চাই নি।  শুধু তোমাকে খাইয়ে দিতে চেয়েছি। জানো রাজ তোমাকে কিভাবে বুঝাবো।  তোমার একটু কষ্টতে আমার বুকটা যে ফেঁটে যায়।  আমি তোমার কাছে কোন অধিকার চাই না।  তুমি চিন্তা করো না।  কথা আপু তোমারই হবে। কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলল সাথি।
.
সাথির মুখের দিকে তাকালে কেন জানি অজানা মায়া কাজ করে।
.
নাও হা করো।  বিকেলেও তো খাওনি।  নিজের চেহারার কি এমন হাল করেছো?
.
সাথি খাইয়ে দিচ্ছে আমায়।  আমি সাথির দিকে পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছি। খাওয়া শেষ করে,  রুমে এসে ঘুমিয়ে গেলাম।  রাতে অদ্ভূত এক স্বপ্নে ঘুম ভেঙ্গে যায়।  ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত প্রায় ৪ টা ছুঁই ছুঁই!  টেবিলে রাখা পানি ঢকঢক করে খেয়ে নিলাম।
.
পরের দিন অফিসে যেতে ক্ষানিকটা লেট হয়ে যায়।  অফিসের ডেস্কে বসে কাজ করছি,  এমন সময় পিয়ন এসে বলে গেল ‘ ম্যাডাম আপনাকে ডাকছে!
.
আমি হাতে থাকা ফাইলের কাজটা শেষ করেই  ম্যাডামের রুমে যাওয়ার সাথে সাথেই শর্ক খেলাম।  ম্যাডাম আর ছেলেটি হাত ধরে বসে আছে।
.
মিঃ রাজ এ আমার হাসবেন্ড আকাশ।  আজ থেকে অফিসের নতুন বস। তুমি ওকে সাহায্য করবে।
.
ম্যাডামের মুখে আকাশ নামটা শুনে বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠল।  মনে হচ্ছে কলিজাটা কেউ টেনে ছিড়ে ফেলছে।
.
কি হলো কিছু বলছেন না যে?
.
জ্বি ম্যাডাম,  আমার সবটা দিয়ে স্যারকে হেল্প করবো।
.
আমি আসি,  কথা আমার একটা কাজ আছে। ( আকাশ)
.
আচ্ছা যাও,  আর হ্যাঁ সাবধানে যেয়ো।
.
হুম অবশ্যই!
–
আকাশ স্যার চলে গেলে। কথা ম্যাডাম আমার বলল’ আপনাকে না বলেছিলাম সাথির সাথে একই ফ্ল্যাটে না থাকতে।  তারপরও আপনি থাকেননি কেন? সাথি আপনার কি হয়?
.
সাথি আমার হবু বউ, আমার রাইসার মম।
.
রাইসার মম সাথি না আমি।
.
জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না।  আপনার তো স্বামী রয়েছে।  প্লিজ আমাদের মাঝে আসবেন না।
.
আমি তোমার মতো দুশ্চরিএের কাছে যাবো কি করে ভাবলে? আমি আমার মেয়েকে ফেরত চাই।
.
মেয়েকে আমার জীবন গেলেও ফেরত পাবেন না।  আর আপনি কেমন মা? যে হসপিটালে মেয়েকে মেরে ফেলার প্ল্যান করেন। আরে আমি না হয় অপরাধী ছিলাম।  কিন্তু আমার অপরাধের শাস্তি আমার মেয়েকে কেনে দিতে চেয়েছিলেন।  আপনি মা না মা জাতির কলঙ্ক। যে সুদর্শন স্বামী পাওয়ার আশায় নিজের সন্তাকে মেরে ফেলার প্লান করে।  তার মুখে রাইসার নাম শুভা পায় না।  সে কখনো মা হতে পারে না।
.
আমি তোমার মতো না।  বিশ্বাস করো,  আমি কিছুই জানি না।  যখন প্রসব ব্যাথা উঠে তখন আমাকে হসপিটালে নিয়ে যায়।    তারপর যখন জ্ঞান ফিরে তখন বাবা বলে আমার মৃত বাচ্চা হয়েছে। আমি তো তোমাকে হারিয়ে আমার গর্ভের সন্তানকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম।
.
প্লিজ ডামা বন্ধ করেন। কিভাবে পারেন গুছিয়ে মিথ্যা বলতে!
.
রাজ আমি আমার রাইসাকে ফেরত চাই।
.
রাইসা আপনাকে ঘৃণা করে।  রাইসার মম সাথি।
.
ঠাস, করে গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বলল’ আমার সামনে ওই নষ্টা মেয়ের নাম আর বলবে না।  রাইসা আমার মেয়ে,  যতকিছুর বিনিময়ে হোক আমার মেয়েকে আমি আমার কাছেই রাখবো।  আর তুই যদি আর নষ্টা মেয়ের সাথে মিশেছিস তাহলে,  তোকে বরখাস্ত করবো।
.
আমি কথার মুখের দিকে করুণ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বের হয়ে আসলাম।  বিকেল বেলা অফিস শেষে, সাথিকে নিয়ে হসপিটালে রাইসাকে দেখতে  যাচ্ছি।  সাথি রিক্সা থেকে নেমে অনেকগুলো গোলাপ ফুল কিনে আমার হাতে দিতেই পিছনে তাকিয়ে দেখি কথা ম্যাডাম।  ম্যাডাম কিছুকিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে গেলেন।
.
পরের দিন আমি আর সাথি একসাথে অফিসে আসি।  দুপুর বেলা লাঞ্চের সময়,  আমার হাত কাটা থাকায় আমি যখন খাবার হাতে নেই তখনি কাটা জায়গায় ব্যাথা লাগে। অ্যা করে ওঠলেই সাথি আমার আঙুলটা তার মুখে পুরে নেয়। আমি অল্প কিছু খেয়ে টেবিল থেকে ওঠে পড়ি। এসব আবার কথা ম্যাডাম দেখে।
.
লাঞ্চের পড়ে,  পিয়নকে দিয়ে আমাকে ম্যাডামের রুমে ডেকে পাঠায়।  আমি ম্যাডামের রুমে গিয়ে দেখি, ম্যাডাম আজ নীল শাড়ি পড়েছে। অপরুপ সুন্দরী লাগছে আজ।
.
কি হলো বসেন।
জ্বি ম্যাডাম।
– আপনাকে বলেছিলাম না সাথির সাথে না মিশতে।
.
হুম বলেছিলেন। তবে আপনি যা ভাবছেন তা নয়। আর আপনার ধারণা ঠিক হলেও আপনার তাতে কি আপনার তো বর আছে।
.
আমি কিছু জানতে চায় না।  আপনাদের দুজনকেই অফিস থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আপনারা আসতে পারেন!
.
ম্যাডাম দোষ যা ছিল সব আমার আর আমার দোষের জন্য সাথিকে কেন বরখাস্ত করবেন?
–
সেটা আমার বিষয়।
– কথার হাতটা ধরে বললাম’ প্লিজ সাথিকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করো না ‘।  তোমার রাগ- অভিমান- ঘৃণা সব আমার সাথে তার জন্য সাথি কেন কষ্ট পাবে। এমন সময় কথার হাসবেন্ড আকাশ রুমে হুট করে এসে পড়ে।  এসেই দেখে কথার হাত ধরে আছি আমি।  কথা হাত ছাড়াতে চাচ্ছে।  আমি,  কাকুতি -মিনতী করেই যাচ্ছি। হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন লাথি মারে।  তোর মতো দু’টাকার কর্মচারীর কেমন করে সাহস হয় আমার স্ত্রীর হাত ধরার। আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি কথার দিকে। কথা কিছুই বলছে না।  আকাশ যখন আবার থাপ্পর দিতে আসে তখন কথা আকাসের হাতটা ধরে ফেলে।
মনে মনে ভাবলাম,  ঘৃণা করলেও কথার হৃদয়ে আমি আছি!
. কি করছো আকাশ, এই চরিএহীনকে আমি শাস্তি দিচ্ছি বলেই,  গালে ঠাস- ঠাস করে গালে চড় বসিয়ে দিলো। এই ছোটলোকের বাচ্চা তোর কীভাবে সাহস হয়,  আমার গায়ে হাত দেওয়ার!  চরিএহীন লম্পট।  তোর মতো চরিএহীনকে চাকরি দেওয়াটাই আমার ভূল হইছে। অফিসের সবাই আমাদের দিকে  অদ্ভূতভাবে চেয়ে আছে। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। কথা তুমি  না পারলে আমায় বলো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিচ্ছি।  না তোমার লাগবে না,  আমিই বের করে দিচ্ছি।
.
সাথি দাঁড়িয়ে কাঁদছে। আমি অফিস থেকে বের হওয়ার আগে সবার সামনে কথা ম্যাডামকে বললাম’ জানেন ম্যাডাম বুকের ভেতরে ভালবাসার একটা পাহাড় গড়ে তুলেছিলাম আপনার জন্য! মনের মাঝে একটা ছবি এতোদিন লালন করেছিলাম। প্রতিরাতে আপনার ছবিটা বুকে নিয়ে ঘুমাতাম। আপনার আমানতটাকে নিজের জীবন দিয়ে আগলে রেখেছিলাম।  কিন্তু আজকের পর থেকে আপনাকে যতটা ভালবাসতাম ততটাই ঘৃণা করব।  একদিন আপনার সব ভুল ভাঙবে সেদিন আর আমায় পাবেন না। সবার সামনে দাঁড়িয়ে আমি চরিএহীন বলছি,  এই রাজের জন্যই  আপনি কাঁদবেন। পায়ে পড়ে মাথা ঠুকরে ঠুকরে কাঁদবে। আরেকটা সত্যি যেন নাও সাথি আমার হবু বউ নয়।  মা মরা একটা এতিম মেয়ে কোথায় যাবে? আমি আজ মিথ্যা কলঙ্কের বুঝা নিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছি, তবে একদিন সত্যিটা প্রকাশ পাবেই।  এই ছোটলোককে একনজর দেখার জন্য তোমার কাঁদতে হবে। চোখের পানি মুছতে মুছতে রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম।  বুকের ভেতরটা আজ কাঁচের টুকরার মতো ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। হঠাৎ পকেটে থাকা ফোনটা বেজে উঠল।
.
ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে কে যেন বলল” মিঃ রাজ আপনার মেয়ে রাইসা আর
চলবে””””””

