ভালোবাসার সন্ধিক্ষণ পর্ব ৫

0
305

#ভালোবাসার_সন্ধিক্ষণ
#গল্পছোঁয়া Jannatul Ferdous Mahi
#পর্ব_০৫

–ওফ সরি সরি,আচ্ছা আমি খাইয়ে দিচ্ছি

প্রতিভা সযত্নে ধীরেসুস্থে ইয়ামিনকে খাবার খাইয়ে দিলো।
হাত ধুয়ে খাবারের প্যাকেট বাইরে ফেলতে গিয়ে প্রতিভা দেখতে পেলো এক মহিলা মেঝেতে তার ২মাসের বাচ্চাকে নিয়ে কান্নাকাটি করছে
প্রতিভা প্যাকেট গুলো ডাস্টবিনে ফেলে মহিলাটির দিকে এগিয়ে গেলো।

–কি হয়েছে আন্টি

–আমার মেয়েটার গায়ে খুব জ্বর,ডাক্তার দেখাবো ডাক্তার আসেনি রে মা,আমার মেয়ে বারবার অজ্ঞান হয়া যাচ্ছে,মুখ দিয়ে ফ্যানা উঠছে,আমার মেয়েডা বাচবোনা

–আন্টি আপনি বাচ্চাটাকে নিয়ে কোনো প্রাইভেট ডক্টর দেখান,সিজন চেঞ্জের সময় এরকম জ্বর,সর্দি হয়,ঠিকমতো ওষুধ খাওয়ালেই ঠিক হয়ে যাবে

–পেরাইভেট ডাক্তার কি করে দেখাব কউ,টিকা কতি পাব আমি,স্বামী নেশা করে সব টিকা শেষ করছে,এখন আমার মেয়েটারে কি করে বাঁচাই

–আন্টি,আপনি আমার সঙ্গে আসুন,বাচ্চাটা আমার কাছে দিন

–নাও

–আসুন আমার সাথে,এই পাশেপাশে একজন ডক্টর রয়েছেন,আমার পরিচিত,খুব ভালো মেডিসিন সাজেস্ট করেন উনি

–কিন্তু টিকা?

–চিন্তা করবেননা,বাবুটা অনেক মিষ্টি
আমি টাকা দিব,ওকে আল্লাহ যেন সুস্থ করে তোলেন।

–আল্লাহ তোমার ভালো করুক মা,সুস্থ থাকো,স্বামি সোহাগ পাও

প্রতিভা কিছু বলে মহিলা আর বাচ্চাটাকে নিয়ে কিছু দূরে একটা প্রাইভেট ডক্টরের কেবিনে নিয়ে গেলো,বাচ্চাটার সাধারণ সর্দি-জ্বর হয়েছে,ওষুধ না খাওয়ানোর ফলে এই অবস্থা।
ডক্টর দেখিয়ে,মেডিসিন কিনে মহিলাটির হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে চলে আসলো প্রতিভা।এই টাকা টা রক্তকেনার জন্য ছিল,কিন্তু রক্তের জন্য তো কোনো টাকা লাগেনি,তাই এই কাজেই খরচ করলো ও।

প্রতিভা আবারও ম্যাডিকেলে ব্যাক করলো,এসে দেখে ইয়ামিন উঠে বসেছে।

–কি ব্যাপার,উঠে বসেছেন যে

–কোথায় ছিলে তুমি

–ওই একটু বাইরে ছিলাম,এনিওয়েস ঠিক আছেনতো এখন?

–হুম

–তাহলে আমার যাওয়া প্রয়োজন,চেক-আপ করিয়ে বাড়ি ফিরবো,ভালো থাকবেন

–প্রতিভা দাঁড়াও?

–কিছু বলবেন?

–যদি কিছু মনে না করো,আমি তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দি?মানে আমার বাইক আছে

–কিন্তু

–প্লিজ না বলোনা,আমরাতো বন্ধু তাইনা

–আচ্ছা ঠিক আছে,আসুন

চেক-আপ করানোর পর ইয়ামিন বাইকে করে প্রতিভা কে ওর বাড়ির সামনে নামিয়ে দিলো,

–আসুন,আমাদের বাসায়

–আজ না,অন্যদিন
অফিসে কিছু কাজ আছে আজ,কালকে দেখা হবে পদ্মাপাড়ে,রিমঝিমদের নিয়াসবো

প্রতিভা মুচকি হেসে সম্মতি দিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলো,ইয়ামিন কিছু একটা ভেবে মাথা চুলকে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।
প্রতিভা বাড়িতে গিয়ে দেখে ওর মা ভাত চড়াচ্ছে চুলায়।

–আম্মু,এখানেনভাত চড়াচ্ছ যে?

–আর বলিসনা মা,খড়ি ছিলোনা,ক্যারিসিন তেলও শেষ তাই এখন রান্না করছি

–তো চাচির ফোন থেকে আমাকে কল করে বললেই পারতে,তেল কিনে নিয়াসতাম,এই শরীর নিয়ে এখন খরিতে রান্না করবে,না নাহ,সরো দেখি

–আরে মাত্রইতো আসলি তুই,আমি পারবো
তুই ক্লান্ত,ঘরে গিয়ে জিরিয়ে নে।
রক্তদাতার নম্বর নিছিস?

–হুম,লোকটা ভীষণ ভালো গো আম্মু
রক্ত দিলো কিন্তু একপয়সাও নিলোনা,উল্টো প্রতিমাসে আমার রক্ত পেতে যাতে কোনো প্রবলেম নাহয়,সেই ব্যবস্থা করেছেন,নিজে ডোনার এনে দেবে বলেছেন জানো,উনি নিজেই আমাকে পৌঁছে দিয়ে গেছেন।

–আসলেইতো মানুষটা ভালো, তো বাড়িতে নিয়াসলিনা,এতদূর আসলোই যখন

–অন্য একদিন আসবে বলেছে,আজ নাকি ওনার অফিসে কি একটা কাজ আছে তাই আসলেননা

–ওও,বিবাহিত নাকি?

–নাহ,ওনার বাবামা নেই,একাই থাকেন,বিয়ে করেনি তবে পাত্রী খুঁজছে

–আমার মেয়েটাকে যদি এ..

–আম্মু,দেখো তুমি যেটা ভাবছো সেটা সম্ভব নয়,অবান্তর ভাবনা বাদ দাও,আমি ফ্রেশ হয়ে এসে রান্না চাপাচ্ছি


পরদিন বিকেল ৫টা
সূর্য পশ্চিমাকাশে,নদীর পানির সঙ্গে সূর্যের এক অপরূপ দৃশ্য আলোড়িত হয়েছে।এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশে নৌকায় বসে পানিতে পা ডুবিয়ে সূর্য দেখতে ভীষনই ভালো লাগছে প্রতিভাবার,প্রতিভার পাশে বসে রয়েছে ইয়ামিন,সে এক দৃষ্টিতে প্রতিভা কে দেখতে ব্যস্ত।
রিমঝিম মজা করে আইসক্রিম খাচ্ছে,নাকে মুখে লাগিয়ে ফেলছে,রিমঝিমের বাবাও এসেছে আজ।নিজের মেয়েদের মুখে প্রতিভার এতো এতো কথা শুনে সেও ইচ্ছুক ছিল প্রতিভাকে দেখার জন্য।

–চরের ওপারে যাবে প্রতিভা?
পাশের নৌকাটা ওপারে যাবে,চলো ওটাতে গিয়ে বসা যাক (ইয়ামিন)

–না,এভাবেই ভালো লাগছে।
থেমে থাকা নৌকায় বসে সূর্যের অস্ত যাওয়া দেখবো,আর এই স্নিগ্ধ জলরাশি,মনোমুগ্ধকর ঠান্ডা বাতাশ,বেশ লাগছে বলুন

–হুম,আর এই পরিবেশে যদি জোড়ভ্রু ওয়ালা,কাজল কালো হিরিণি চোখের অধিকারী অপরূপা কোনো কন্যা বসে এই প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করে,তাহলে প্রকৃতিও তো লজ্জা পেয়ে যাবে (আনমনে)

–আমাকে কি মিন করে কিছু বললেন? (ভ্রু নাচিয়ে)

–না,মানে প্রকৃতির কথা বলছিলাম আরকি।
তুমি যেভাবে প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে নিচ্ছো,প্রকৃতির ব্যাখ্যা দিচ্ছেো,এতে তো প্রকৃতিও লজ্জা পাবে,তবে এক অপরূপা নারী তার সৌন্দর্য বিচরণে ব্যস্ত,এতে অবশ্য প্রকৃতির গর্ব হওয়া উচিত বলো

–আপনিকি সাহিত্য প্রেমি?

–একটুআধটু,কেন বলোতো?

–না এমনি,মনে হলো আরকি।
ভাইয়া,রিম ঝিমদের এদিকে নিয়ে আসুন,সূর্য অস্ত যাচ্ছে,ওদেরও এই দৃশ্য উপভোগ করে উচিত (রিম ঝিমদের বাবা রিয়াজকে উদ্দেশ্য করে)

–হুম আপু,ওরাতো আইসক্রিম খেতে ব্যস্ত।
তোমার ভাবিকে নিয়াসলে ভালো হতো,সত্যিই অপরূপ সুন্দর

–তো নিয়াসতে পারতেন ভাবিকে

–অন্য একদিন নিয়াসবো,এখন ওকে এখানে আনলে আমাকে মনে করো শান্তিতে থাকতে দিতোনা,মেয়ে মানুষতো সবসময়ই সন্দেহ টা বেশি করে।এই যদি জানতে পারে আমি এখানে এসেছি,কুরুক্ষেত্র বাঁধাবে,দুই বাচ্চার বাবা হয়েছি এখনও এমন সন্দেহ করা কি মানায় বলো

–ভুল বললেন ভাইয়া,ভাবি আপনাকে অতিরিক্ত ভালোবাসে তাই হারানোর ভয় পায়,ভাবিকে সময় দিবেন।আমাদের জীবনটা ক্ষনস্থায়ী,ভালোবাসার মানুষদের সঙ্গে কিছু বারতি মূহুর্ত একসঙ্গে উপভোগ করা উচিত,এমন একটা নিরিবিলি মনোরম পরিবেশ হলে তো কথাই নেই,আমাদের জীবনের #ভালোবাসার_সন্ধিক্ষণ গুলো স্বল্প,কিন্তু আমরা চাইলে সেই স্বল্প সময়টাই অনেক ভালোভাবে উপভোগ করতে পারি ভালোবাসার মানুষদের সাথে।

–ভালো বলেছ প্রতিভা

–হুম ভাইয়া,এই আমাকেই দেখুননা
আর কতদিনই বা বাঁচবো,খুব বেশি হলে ১১বছর,আগেও মৃত্যু হতে পারে আমার।আমার মতে যতদিন বাঁচবো মাথা উঁচু করে নিজের মতো বাঁচবো,কে কি বললো সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে নিজেকে সময় দিব,নিজের ইচ্ছে টাকে প্রাধান্য দিব,ভালোবাসার মানুষকে সময় দিব,তাকে নিয়ে বাঁচতে চাই আজীবন।

–ভালোবাসো কাউকে? (ইয়ামিন)

–হুম,আমার জীবনে একজনই আছেন যিনি আমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসেন,আমার জন্য চরম অপমান লাঞ্ছনা সহ্য করেও আমাকে দূরে ঠেলে দেননি,আমাকে আঁকড়ে এখনও পরে আছেন,যিনি আমাকে প্রতিদিন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখান,আমার মনোবল ধরে রাখতে আমার ভেতরে সাহসের সঞ্চার করেন,তিনি আর কেউ নন,তিনি হলেন আমার জন্মদাত্রী মা।
হ্যাঁ আমার মা,সে আমার ভালোবাসা,খুব ভালোবাসি আমি আমার মা’কে,আত্মীয়স্বজন সমাজ সবাই আমাকে দূরে ঠেলে দিলেও আমার মা আমাকে দূরে ঠেলে দেননি,চাইলে তিনি ২য় বিয়ে করতে পারতেন,কিন্তু না,তিনি সেটা না করে আমার জন্য,আমাকে বাঁচানোর জন্য সারাজীবন স্ট্রাগল করে গেছেন,ইভেন এখনও করছেন।
পৃথিবীতে মায়ের থেকে আপন,ভালোবাসা কেউ হয়না।

–সেটা ঠিক,মায়ের থেকে তার সন্তান কে কেউ বেশি ভালোবাসতে পারেনা,কিন্তু অনেকেই থাকে যারা ভালোবাসে,হয়তো মায়ের থেকে কম,কিন্তু তাদের ভালোবাসাও কিন্তু কোনো অংশে কম নয়(ইয়ামিন)

–হ্যাঁ
তবে আমার জীবনে সেগুলো আশা করা নিছকই কল্পনা,দিবাস্বপ্ন ছাড়া কিছুইনা।আর আমি এসবের আশাও করিনা,যেমন আছি বেশ আছি,নিজেকে গুছিয়ে মানিয়ে নিয়েছি সবকিছুর সাথে,সব পরিস্থিতির সাথে।

–বিয়ে করতে পারো তুমি,এমনতো নয় যে এ রোগে আক্রান্ত মানুষেরা বিয়ে করেনা,তারাওতো বিয়ে করে,সংসার করে (রিয়াজ)

–হাসালেন ভাইয়া
আমি কারোর দয়ার পাত্রি হতে চাইনা,আগে আমিও এমন স্বপ্ন দেখতাম,কিন্তু এখন এসব বিষাক্ত লাগে।আমার মায়ের খুব ইচ্ছে,আমাকে বিয়ে দিয়ে সংসার করতে দেখার,অনেক পাত্রই নিয়েসেছিলেন,আমার বাহ্যিক টা দেখে পছন্দও করেছেন,কিন্তু যখনই জানতে পারে এই রোগের কথা তখনই নানান কটুক্তি করে চলে যায়।
এই কটুক্তি কখনও কখনও সহ্যসীমার বাহিরে,এটাই আমাদের সমাজ।কারোর কোনো দূর্বলতা পেলেই হলো,সেটা নিয়ে কানাঘুষা,তিল থেকে তাল করা,ভিক্টিমকে অবমাননা,লাঞ্ছনা,তাকে তিলেতিলে শেষ করে দেওয়াই তাদের কাজ।
কিন্তু আমাদের দূর্বল হলে চলবেনা,আমরাতো তাদের পশসায় চলিনা,কেন তাদের কথায় নিজেকে দূর্বল ভেবে অকালেই ঝরে পরবো,আমি নিজেকে শক্ত করেছি,আমি সবার সঙ্গে লড়াই করে নিজেকে শক্ত করেছি,আজ আমি মোটামুটি সফল নিজের ব্যক্তিত্বের ওপর,নিজের ওপর কনফিডেন্স আনার বরাবরই ছিল।
জীবনে কখনও সুযোগ পেলে আনার মতো অবহেলিত,রোগে আক্রান্ত,দূর্দশা গ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াবো,এটাই আমার জীবনের উদ্দেশ্য।
ওইসব বিয়ে,সংসার এগুলো আমাদের জন্য নয়,তিক্ত আমি এসবের ওপরে,আমাদের মতো মানুষদের জীবনে চলার পথে অনেক কিছুই ফেইস করতে হয়,কারণ সমাজের চোখে আমাদের নিচু করে দেখা হয়,ধিক জানাই এই সমাজব্যবস্থা,আর মানুষদের এই মানসিকতার ওপরে………

To be continue….

((জানিনা কতটা গুছিয়ে লিখতে পারছি,তবে চেষ্টা করব গুছিয়ে লেখার,ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন,গঠনমূলক মন্তব্য করুন))

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here