#সম্পর্কের_বন্ধন
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_১০
শেষ বিকেলের ঢলে পড়া সূর্যের তেজ কমে আসতেই অফিস থেকে বের হলো ইভান। কাঁধে অফিসের ব্যাগ ঝুলিয়ে গাড়ি দেখছে।
পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে আড়চোখে তাকালো। মাথা ঘুরালোনা।
তৃষা নাক চুলকে খানিক হেসে বলল,’গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছো বুঝি?’
আমিও গাড়ির জন্যই অপেক্ষা করছি।
ইভান প্রতিত্তোর করলোনা। ভ্রু উঁচিয়ে হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিলো।
তৃষা ভ্রু নাচিয়ে বলল,’এত ভাব?’
ইভান তৃষার দিকে ফিরে তাকালো। নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল,’কিছু বলার থাকলে সরাসরি বলুন। এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অযথা কথা বলা কোনো ম্যানার্সের মধ্যে পড়েনা।
ইভানের কথায় তৃষার রাগ তরতর করে বেড়ে গেলো। নাকের ডগা কেঁপে কেঁপে উঠছে। ছেলেটা আস্ত একটা বেয়া*দব। কোন কুলক্ষণে যে এই ছেলেকে পছন্দ হলো তৃষা ভেবে পায়না।
চাপা স্বর কিন্তু কন্ঠে তেজ পরিলক্ষিত। তৃষা কানের পাশে উড়ো চুল গুঁজে নিয়ে বলল,’বোকা সাজার চেষ্টা করছো?’
ইভান তাচ্ছিল্য হাসলো। কোনো ভনিতা না করেই সরাসরি কাঠকাঠ গলায় বলল,’আপনি যেটা চাইছেন সেটা একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ চাইতে পারেনা আপু।
তৃষার কপালে ভাঁজ পড়লো। চোখমুখ কুঁচকে নিয়ে বলল,’আপু?’
ইভান চোখ ছোট ছোট করে বলল,’বউয়ের বড়বোনকে আপু বলবো না তো কি বলবো?’বড়দের কিভাবে সম্মান দিতে হয় অন্তত এই শিক্ষা আমার আছে। অফিসে আপনি আমার কলিগ। আর এর বাইরে আপনি আমার বড় শালিকা। আর বড় শালিকা হিসেবে আপু বলে সম্বোধন করার মতো সম্মানটা আপনার প্রাপ্য। এই যে সম্পর্কে আমি আপনার ছোট,সেই হিসেবে আমাকে তুমি বলে সম্বোধন করছেন?ঠিক একইরকম ভাবে আমার আপনাকে আপু বলাটা কি ভুল কিছু?
তৃষা রেগে কটমট করে বলল,’আমি তোমার বয়সে বড় নই যে,তুমি আমাকে আপু ডাকবে। আর না আমি তোমাকে আপু ডাকার পারমিশন দিয়েছি। আমার কোনো বোন নেই। তাই আমাকে আপু ডাকা থেকে বিরত থাকো।
ইভান ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। মুহুর্তে অভিব্যক্তি কঠিন হয়ে উঠলো। চোয়াল শক্ত করে বলল,’আমি ও আপনাকে তুমি বলার পারমিশন দেইনি। একজন অপরিচিত ব্যক্তিকে তো কখনোই না।
ইভান হাতের ইশারায় একটা সিএনজি থামিয়ে উঠে চলে গেলো।
তৃষার রোষানল দৃষ্টি ইভানের যাওয়ার পথে। তোমাদের দুজনের শেষ দেখে ছাড়বো আমি। আমারতো হবেনা,তবে একে অপরের হয়েও শান্তি পাবেনা। মেসেজ গুলো দেখে এখনও তুহাকে বিশ্বাস করে নিজের সাথে রেখেছো? এতটুকু পরিমাণ সন্দেহ বাসা বাঁধেনি মনে?
তৃষা একটা সিএনজি ডেকে বাসার পথে রওনা দিলো।
পেছনেই আরো একজন ক্ষুব্ধ বাঘের ন্যায় র/ক্ত/চক্ষু নিয়ে তৃষার গাড়ির পেছনে আসছে।
ফ্ল্যাটের সামনে পৌঁছে বেল দিতেই কয়েক মুহূর্তের মাঝেই তুহা এসে দরজা খুলে দিলো। ইভান ক্লান্ত ভঙ্গিতে চমৎকার হাসলো।উত্তরে তুহা মিষ্টি হাসি দিলো।
দরজা থেকে সরে ভেতরে ঢুকে হাতের ব্যাগ গুলো রেখে ইভান জিজ্ঞেস করলো,’দুপুরে খেয়েছো?চোখ ঘুরিয়ে তাকাতেই তুহা কপাল কুঁচকে এগিয়ে গেলো ইভানের দিকে।
ইভানের চোখের দিকে আঙ্গুল তাক করে ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,’দেখি দেখি আপনার চোখে কি?’
ইভান পায়ের মোজা খুলতে হাত দিয়েছে। তুহার কথায় মাথা তুলতে গিয়ে তুহার আঙ্গুল তার চোখে গিয়ে লেগেছে।
ইভান মৃদু আওয়াজে “আহ” শব্দ করে চোখে হাত দিলো।
তুহা ভড়কে গেলো। হতবিহ্বল চাহনিতে চেয়ে থেকে আবার ইভানের দিকে এগিয়ে যেতে উদ্যত হতেই ইভান দু’পা পিছিয়ে হাত উঁচিয়ে তুহাকে থামিয়ে দিলো।
চোখ ডলে তিক্ত গলায় বলল,’আমার চোখে এটা তিল।এমনিতে দেখা যায়না। মাঝেমধ্যে চোখ ঘুরিয়ে বা আড়চোখে তাকালে এটা দেখা যায়।
মানুষের বর অফিস থেকে আসলে বউরা দেয় পানি,আর তুমি দিয়েছো চোখ ঘুটুনি।
তুহা আমতা আমতা করে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,’সরি।
আমি ভেবেছি চোখে ময়লা। আবার অসাবধানতা বশত চোখে আঙ্গুল লেগেছে।
ইভান ঠিক আছে বলে রুমে ঢুকে পড়লো। চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে বের হলো রুম থেকে। এখনো চোখের সাদা অংশ লাল বর্ণ ধারণ করে আছে।
তুহা ইভানের আনা বাজারগুলো জায়গামতো গুছিয়ে রেখে চা বসালো।
ইভান সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে টিভি ছাড়লো।
তুহা চা বানিয়ে দুটো কাপে ঢেলে নিয়ে আসলো। একটা ইভানের হাতে দিয়ে অন্যটা নিয়ে পাশের সোফায় বসলো। ইভান চায়ে টুকরো চুমুক বসাচ্ছে। তুহা ইভানের চোখ লাল হয়ে আছে দেখে অপরাধীর ন্যায় মাথানিচু করে চায়ে চুমুক বসালো।আর কথা বললোনা।
রাতের রান্না শেষ করে তুহা হাতমুখ ধুয়ে নিলো। ইভান আজ টিভি দেখেই যাচ্ছে। আশেপাশে তার মন নেই।
রাতে খাওয়ার সময় হুট করেই ইভান কথা তুললো।
“আমি আর তোমার বোন যে একই সাথে কাজ করি এতে তোমার খারাপ লাগছেনা?”
তুহা মাথা তুললো। ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলল,’খারাপ লাগবে কেনো?’
ইভান মুখের খাবার গিলে বলল,’না!মনে অনেক আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।’
তুহা মৃদু হেসে বলল,’কেউ একজনকে বিশ্বাস অন্তত করতে পারি,কি বলেন?’
আজকাল বিশ্বাস বিষয়টি অতি ঠুনকো হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাউকেই বিশ্বাস করা যায়না। চাইলেই সবার প্রতি মনে সন্দেহের বীজ বুনে ফেলা যায়।আবার চাইলেই কয়েক মুহূর্তের পরিচিত মানুষকে বিশ্বাস করা যায়। আমি নাহয় বিশ্বাস করেই দেখলাম।
ইভান প্রসন্ন হাসলো।
খাবার নেড়েচেড়ে মুখে লোকমা তুলে বললো,’রান্নাটা দেখছি বেশ ভালোই পারো।’
তুহা ভ্রু কুঞ্চিত করে তাকালো ইভানের দিকে। রগড় করে বলল,’প্রশংসা করার কারণটা কি আমার কথায় সন্তুষ্ট হওয়া?’
ইভান একই ভঙ্গিতে হাসলো।
এলোমেলো চুলে ওষ্ঠ কোনে মোহিত হাসিতে র/ক্ত ছলকে উঠছে তুহার। বিভোর ধারায় মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় নির্নিমেষ চেয়ে রইলো ইভানের মুখশ্রীতে। শীতলতা বয়ে গেলো গতর জুড়ে। নজরকাড়া হাসি দেখে তুহার মাঝেমাঝে বড্ড হিংসে হয়। ইভান কি অন্যদের সামনেও এমন করে হাসে?
আচ্ছা অন্য মেয়েরা ও কি তার মতো করে ইভানের হাসিতে এমন করে মুগ্ধ হয়? তবে ইভানের হাসাটা অন্যায়। ঘোরতর অন্যায়। অন্যদের সামনে হাসা তার একদমই উচিত নয়।
ইভানের নির্বিকার কন্ঠের সুর টেনেই তুহা ভাবনাচ্যুত হলো। খাবার শেষে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে তোয়ালেতে হাত মুছে নিয়ে ইভান স্বাভাবিক কন্ঠে জবাব দিলো,
আমি কারো মিথ্যা প্রশংসা করতে অভ্যস্ত নই। এখন কিন্তু তেলের দাম অনেক বেশি। শুধু শুধু তেল খরচ করতে কেই বা চাইবে?
তুহা ত্যাছড়া চোখে তাকালো। বাঁকা উত্তর না দিয়ে সুন্দরভাবে প্রশংসা করলেও পারতো। যতটা ভালো ভাবছে লোকটাকে ততটাও ভালো নয়। সব গুছিয়ে রাখতে রান্নাঘরে ঢুকলো।
ঘুটঘুটে অন্ধকারে আবৃত মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। রাস্তায় পড়ে থাকা শুকনো পাতার মড়মড়ে শব্দ। খনে খনে পায়ের আওয়াজ বেড়ে চলেছে। নিস্তব্ধ রাত্রি, পুরো দালানের মানুষ ঘুমে বিভোর। বিল্ডিং এর পাইপ বেয়ে কার্ণিশ ঘেষে তৃষার বারান্দায় এসে উঠেছে একটি মানব অবয়ব। অধরে বক্র হাসির রেশ খেলে চলেছে।
পকেট হাতড়িয়ে এক্সট্রা চাবি বের করে বারান্দার দরজা খুললো।
ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো তৃষার দিকে। গলায় ছু*রি চেপে ধরে হালকা চাপ প্রয়োগ করতেই তৃষা গলায় ব্যথা পেয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে।
ডিম লাইটের মৃদু আলোতে সামনে থাকা মুখাবয়ব দেখে আৎকে ওঠে তৃষা। দুপাটি দাঁত বের করে তাকিয়ে আছে তৃষার দিকে।
তৃষা ঢোক গিলে মুখ মুছে নিয়ে লাইট জ্বালিয়ে নিতে হাত বাড়ালো। হয়তো হ্যালুসিনেশন হতে পারে। আলো জ্বালিয়েও যখন সামনের ব্যক্তিকে একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকতে দেখলো তখন তৃষার শরীরে ঘাম ছুটে গেলো। দুহাতে ভর করে একটু পিছিয়ে গেলো। চোখে ভয়,কপালে চিকন ঘামের আভাস। বাকহীন,রুদ্ধশ্বাস করা পরিস্থিতি। চোয়াল র/ক্ত/শূণ্য।
সামনের ব্যাক্তি এগিয়ে গিয়ে তৃষার হাত স্পর্শ করলো। তৃষা থরথর করে কাঁপতে লাগলো। ঝাড়া মে/রে হাত সরিয়ে দেওয়ার মতো সাধ্য তার নেই।
সামনের ব্যক্তি কর্কশ কন্ঠে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,’আমার ডিকশিনারিতে বেইমানদের জন্য “ক্ষমা” শব্দটি নেই। অতি বাড় ভালো নয়।
তৃষার হাতে ছু*রি চেপে ধরে পোঁচ দিতেই সিটকে কয়েক ফোঁটা র*ক্ত চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। হাত দিয়ে গলগলিয়ে র*ক্ত ঝরতে লাগলো।
তৃষা হাতের দিকে চেয়ে থেকে ক্রমশ হেলে পড়লো বিছানায়।
মানবটি কুটিল হেসে ছু*রির র*ক্ত তৃষার জামায় মুছে পকেটে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
খাটের উপর পড়ে রইলো জ্ঞানশূন্য তৃষার নিস্তেজ শরীর।
———————————————
ইভানের আসতে এখনো অনেক সময় বাকি। গোধূলি লগ্ন নিকটস্থ হওয়ার এখনো ঢের সময় পড়ে আছে। তুহা আজ দেরি করেই গোসল সেরেছে। ভেজা জামাকাপড় হাতে নিয়ে ছাদে পা বাড়ালো। জামাকাপড় মেলে দিয়ে আসার পথেই একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা তুহাকে জিজ্ঞেস করলেন,’তুমি কি এই বিল্ডিং এ নতুন?’কোন ফ্ল্যাটে থাকো?
তুহা ঈষৎ হেসে জবাব দিলো,’জি!আমি নতুন। পাঁচতলায় থাকি।
মহিলা ভাবুক হয়ে বললেন,’পাঁচতলায় কার বাসায় থাকো? সেখানে তো দুটো ফ্ল্যাট। একটাতে একজন পরিবার নিয়ে থাকে,অন্যটাতে একটা অবিবাহিত ছেলে থাকে।
তুহা বলল,’ইভান নামে যিনি থাকেন?আমি তার স্ত্রী।
মহিলা অবাক হয়ে বললেন,’ছেলেটা তো অবিবাহিত।স্ত্রী আসলো কোথা থেকে?’
তুহা লাজুক হেসে বলল,’নতুন বিয়ে হয়েছে আমাদের। কয়েকদিন আগেই এসেছি এখানে।
মহিলা একগাল হেসে বললেন,’তাই বলো। আমিতো জানতাম ছেলেটা অবিবাহিত। আমরা ছয়তলায় থাকি। আমাদের বাসায় গিয়ে ঘুরে এসো। ভালোলাগবে। তোমার বয়সী আমার একটা মেয়ে আছে। ইভান তো অফিসে থাকে। একা একা লাগলেই আমাদের বাসায় চলে আসবে।
তুহা মিষ্টি করে হাসলো। জবাবে মাথা নেড়ে বলল,’আচ্ছা।
ছাদ থেকে দ্রুত নেমে পড়লো তুহা।
ইদানীং অফিসে তৃষাকে কেমন অন্যমনস্ক থাকতে দেখা যায়। যেনো কারো ভয়ে তটস্থ থাকে। অফিসের কারো সাথে এখন আর তেমন কথা বলেনা।
ইভানের আশেপাশে ও এখন আর তৃষাকে দেখা যায়না। চোখদুটোতে অসহায়ত্ব। তেজী মেয়েটা কয়েক দিনের ব্যবধানে কেমন নেতিয়ে পড়েছে।
সবার কথায় আগে ফটাফট জবাব দিলেও এখন কেউ হাজার কিছু বললেও প্রতিত্তোর করেনা।
তৃষার এই আকস্মিক পরিবর্তনে কমবেশি সবাই অবাক হয়েছে।
নিজের কেবিনে বসে দুদিন আগের ব্যান্ডেজ করা হাতের দিকে তাকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো তৃষা। কান্না সংবরনের জন্য দুহাতে মুখ চেপে ধরেছে।
অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো,’আমার জীবনটাই কেনো এমন ছন্নছাড়া?’এর জন্য সম্পূর্ণ দোষটাই কি আমার?
আমার জীবনটা ছিন্নমূলের মতো। দুহাতে মাথার চুল খামছে ধরে টেবিলে কপাল ঠেকিয়ে রেখেছে তৃষা।
টিভি দেখতে দেখতে সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছে তুহা। ঘুম ভাঙলো কলিং বেলের আওয়াজে। এলোমেলো চুলে ওড়না টেনে গায়ে জড়িয়ে নিলো। ত্রস্ত পায়ে হেঁটে গিয়ে দরজা খুললো।
ইভান পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তুহাকে পরোখ করে বলল,’ঘুমোচ্ছিলে?
তুহা মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানায়।
ইভান তুহাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় বিড়বিড়িয়ে বলল,’এমন এলোকেশে আর কারো সামনে যেওনা। সে তোমার এমন ভয়ঙ্কর রূপ দেখে নির্ঘাত বিধস্ত,র/ক্তা/ক্ত,অসুস্থ হয়ে পড়বে। ঔষধ খোঁজার জন্যে হন্যে হয়ে তোমার কাছেই ছুটে আসবে।
তুহা দরজা লক করে বলল,’কিছু বললেন?
ইভান বলল,’আপাতত মিনিট কয়েক তুমি কথা বলা বন্ধ রাখো।
তুহা হতবিহ্বল হয়ে বলল,’কিন্তু কেনো?’
ইভান রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। তুহা বেক্কলের মতো সোফার রুমেই দাঁড়িয়ে রইলো।
ইভান চেঞ্জ করতে গিয়ে গান ধরলো,
‘নেশা লাগিলো রে….
ও নেশা লাগিলো রে…’
পরোক্ষণে অবাক হয়ে নিজেই নিজেকে বলল,’আমি আবার কবে থেকে এসব গান গাওয়া শুরু করলাম?’
তুহা কফি করে সোফায় বসে রইলো।
ইভান চেঞ্জ করে ধূসর রঙা টিশার্ট টানতে টানতে রুম থেকে বের হলো। ইভানের দিকে কফি বাড়িয়ে ধরতেই তুহার উদ্দেশ্যে ইভান বলল,’এবার তুমি কথা বলতে পারো।’ আসলে ঘুম থেকে ওঠার পর তোমার ওই কর্কশ কন্ঠ শুনতে ইচ্ছে করছিলো না। তাই কথা বলতে না করেছি।
তুহা জলন্ত নেত্রে চেয়ে রইলো। ইভান ভাবলেশহীন ভাবে কফিতে একের পর এক চুমুক দিয়ে যাচ্ছে।
তুহা ইভানের কাছ থেকে কফির কাপ কেড়ে নিয়ে রাগ ঝেড়ে বলল,’তাহলে কর্কশ কন্ঠের অধিকারিনীর হাতে বানানো কফি পান করা আপনার প্রাপ্য নয়। এখন থেকে অফিস থেকে এসে আর চা,কফি পাবেননা। নিজে বানিয়ে খেয়ে নিবেন।
ইভান ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে বিড়বিড়িয়ে বলল,’এই জন্যই বোধহয় লোকে বলে বউকে রাগাতে নেই। এতে নিজেরই ক্ষতি। সব ঠিকঠাক পেতে হলে সারাদিন বউয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতে হবে। সুবিধা বঞ্চিত লোকের নামের পাশে গোটা গোটা অক্ষরে ইভান নামটি লিখে রাখা উচিত। কারণ আমিও চা কফি বঞ্চিত।
#চলবে……….