সম্পর্কের বন্ধন পর্ব ১১

0
377

#সম্পর্কের_বন্ধন
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_১১

সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। অথচ বৃষ্টি নামার খবর নেই। আকাশের উপর অভিমান হয়েছে মেঘের। সেই অভিমানের রেশ ধরে কাঁদা উচিত মেঘের। সে কেনো কাঁদছে না? এ সময় মেঘের উপর বড্ড রাগ হলো তুহার। সকাল থেকেই বারবার ছুটে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে থাকছে। আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামবে আর সে বৃষ্টির পানিতে অবগাহন করবে। টপটপ করে পড়া বৃষ্টি নেত্রপল্লব বেয়ে ওষ্ঠ জোড়া ভিজিয়ে গতর স্পর্শ করবে।
বৃষ্টির বিন্দু মাত্র খবর নেই দেখে তুহা চুলায় রান্না চাপিয়েছে। বিরস মুখে গালে হাত দিয়ে রান্নাঘরের জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টি আবদ্ধ করলো। খানিক বাদেই ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হলো।
তুহার চেহারা ঝিলিক দিয়ে উঠেছে। দুপাটি দাঁত বের করে হাত বাড়িয়ে দিলে জানালার বাইরে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে হাত ভেজানোর প্রচেষ্টা। বৃষ্টির ফোঁটা হাতে পড়তেই শরীরে এক মৃদু শিহরণ বয়ে গেলো।
হঠাৎ নাক ছিদ্র দিয়ে কিছু পুড়ে যাওয়ার গন্ধ প্রবেশ করতেই তুহা তড়িৎ চুলার দিকে তাকায়। চুলায় বসানো তরকারি পাতিলের তলায় হালকা পুড়ে গেছে। ঝটপট আরেকটা পাতিলে তরকারি ঢেলে নিলো।
রান্নার পর্ব চুকিয়ে ভেবেছিলো বৃষ্টিতে ভিজবে। কিন্তু বৃষ্টিতো তার রূপের ঝলক দেখিয়েই পালিয়েছে। এতক্ষণ যে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো এখন সেটাও নেই। আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেছে। কালো মেঘের বদলে সাদা মেঘের ভেলা খেলা করছে।

রান্নাঘর পরিষ্কার করে নিয়ে বের হলো তুহা। আগে রান্না তেমন ভালো হতো না। রান্না করতে করতে এখন কিছুটা দক্ষ হয়ে উঠেছে। মা অসুস্থ থাকলে মাঝেমধ্যেই তুহা রান্না করতো। বাবা বা ছোট চাচা রান্না খারাপ হলেও কিছু বলতেননা। চুপচাপ খেয়ে উঠে যেতেন। মায়ের বদলে মেয়েটা রান্নার কাজে হাত লাগিয়েছে। উনারা তিনবেলা খাবার পেয়েছেন এটাই ঢের মনে করতেন। তুহা খাবার মুখে দিয়ে মন খারাপ করে বসে থাকতো। সবাই কিভাবে খাবারটা অকপটে খেয়ে নিলো।

তুহার মা বলতেন মন খারাপ করিসনা। আস্তে আস্তে রান্না ঠিক হয়ে যাবে। তখন প্রশান্তিতে সবাইকে রান্না করে খাওয়াবি। আস্তে আস্তে তুহার রান্নাও ঠিক হয়ে আসলো।

এখনকার মেয়েদের যদি প্রশ্ন করা হয়,’রান্না পারো?’
তখন অধিকাংশ মেয়েদের উত্তর হয় ‘না’।
এদের মধ্যে কিছু সংখ্যক আছে যারা কোনোদিন রান্নায় হাতই লাগায় নি। তবে পারবে কি করে?
পারিনা আর কোনোদিন করিনি শব্দ দুটো ভিন্ন। কোনো একটা কাজ আপনি কয়েকবার করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু ফলাফল শূন্য তখন আপনার উত্তর হবে আমি পারিনা। আর যেটা কোনোদিন আপনি করেও দেখেননি সেটা কিভাবে পারিনা হতে পারে? চেষ্টা করলে পারতেও পারেন।
চেষ্টা করলে কোনো কাজই অসম্ভব নয়। শুধু প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম আর প্রচেষ্টা। তবেই আপনি পারবেন।

হুট করে সেদিনের মতো তুহার পেটে তীব্র ব্যথা শুরু হলো। যখন এই ব্যথা শুরু হয় তখন পানি মুখে তুললেও বমিভাব হয়। পেট থেকে শুরু করে কোমরের নিচের অংশ অসহনীয় ব্যথায় ছিঁড়ে পড়ে মনে হচ্ছে। শরীরটাকে দুটো খন্ডে বিভক্ত করতে পারলেই বোধহয় শান্তি মিলতো। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ব্যথা সহ্য করার চেষ্টা করছে তুহা। সোফার কুশন পেটের নিচে দিয়ে দাঁত মুখ খিঁচে উপুড় হয়ে পড়ে রইলো। ব্যথাটা পেট ছাড়িয়ে কোমরের নিচ অংশ পর্যন্ত ছড়ায় কেনো এটা ভেবেই তুহার মেজাজ খিটখিট করছে। তীব্র ব্যথায় চোখের কার্ণিশ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। যা কপল স্পর্শ করে গলায় গিয়ে পৌঁছালো।

বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হতেই তীব্র শব্দ মুঠোফোন ঝংকার তোলে। তুহা ফোন হাতে নিয়ে দেখে ইভানের ফোন। রোজ দুপুবেলা ফোন করে জিজ্ঞেস করবে খেয়েছে কিনা। তারপর ফোন রেখে নিজে খেতে যাবে।
তুহা কন্ঠ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো। ফোন ধরে গলা ঝেড়ে নিলো। কিন্তু দাঁত খিঁচড়ে ব্যথা হজম করতে গিয়ে গলার স্বর বারবার কম্পিত হচ্ছে।
তুহার কম্পিত কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে তরঙ্গিত হতেই ইভানের কপালে ঢেউ খেলানো ভাঁজ পড়লো। চিন্তিত সুরেই বলল,

‘কি হয়েছে তুহা? কন্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেনো? তুমি ঠিক আছো? কোনো সমস্যা হয়েছে? আমি কি আসবো?

তুহা লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,’নাহ আমি ঠিক আছি। কোনো সমস্যা হয়নি।

এবারে কন্ঠের কাঁপুনি আরো দৃঢ় হলো।

ইভানের চোয়াল থেকে চিন্তার রেখা সরলোনা বরং আরো স্পষ্টভাবে ফুটে উঠলো। কড়া কন্ঠে ইভান বলল,’আমার সাথে মিথ্যে কেনো বলছো? কিছু একটা হয়েছে। সত্যি করে বলো।

তুহা ভেবেছিলো ইভানকে চিন্তায় ফেলবেনা। একে তো অফিসের কাজের চাপ তার উপর উটকো চিন্তা মাথায় চাপিয়ে কি না কি করে বসে। কিন্তু এখন দেখছি বলতেই হচ্ছে। ব্যথাটা ও ঠিক হজম হচ্ছে না। আবার ইভান ও নাছোড়বান্দা। আজ না শুনে সে ফোন ছাড়বেনা। তাই চাপা স্বরে বলল,’সেদিনের মতো আজ আবার পেট ব্যথা করছে।

আমি আসছি। একটু অপেক্ষা করো বলেই ইভান লাইন কেটে দিলো। ছুটলো বসের কেবিনে।
ছুটি চাইতেই তিনি প্রশ্ন করে বসলেন,’এখন কি কারণে ছুটি চাইছে?

ইভান দ্বিধাহীনভাবে উত্তর দিলো,’আমার স্ত্রী অসুস্থ। এই মুহুর্তে আমার যাওয়াটা প্রয়োজন। বাসায় একা আছে সে।

বস মুছকি হেসে বললেন,’আচ্ছা যাও। স্ত্রীর অসুস্থতায় স্বামী পাশে থাকলে অন্তত তারা মনকে আশ্বস্ত করতে পারে।

ইভান এতকথা শুনলোনা। যাও বলার সাথে সাথেই সে হন্তদন্ত হয়ে ছুটলো। তুহার পেট ব্যথা হলে কি অবস্থা হয় সেটা সেদিনই স্বচক্ষে দেখেছে ইভান। সাধারণ কোনো ব্যথা হলে এমন হওয়ার কথা নয়। মেয়েটার তখন বিছানা থেকেই উঠতেই কষ্ট হয়ে যায়।

বাসার সামনে দাঁড়িয়ে বেল দিতেই তুহা ঢলে পড়া কলা গাছের ন্যায় মাথা ঝিমিয়ে দরজা খুলে দিলো।
ইভান উদভ্রান্তের ন্যায় তুহাকে জিজ্ঞেস করলো,’ব্যথা খুব বেশি?
তুহার মাথায় ওড়না জড়িয়ে দিয়ে বলল,’চলো ডাক্তারের কাছে যাই।’

তুহা মাথা নেড়ে বলল,’ব্যথা এখন কিছুটা কম আছে। ডাক্তারের কাছে যেতে হবেনা। ঔষধ আনলেই হবে। মিথ্যে বললো তুহা। সব কাজে ডাক্তার গুলে খাওয়া চরম বিরক্তিকর ব্যাপার তার কাছে।

ইভান শুনলোনা তুহার কথা। তুহাও নাছোড়বান্দা সেও যেতে নারাজ। শেষে বাধ্য হয়ে ইভান নিচে নেমে ঔষধ নিয়ে আসলো। তুহাকে জিজ্ঞেস করলো দুপুরে খেয়েছে কিনা?

তুহা না সূচক মাথা নাড়তেই ইভান ভালো করে হাত পরিষ্কার করে প্লেটে করে খাবার নিয়ে আসলে। ভাত মাখিয়ে লোকমা তুলে তুহার সামনে ধরলো। শান্তস্বরে বলল,’খাবারটা খেয়ে ঔষধ নাও। হা করো।

তুহা অবাক হলো। ইভান ওকে লোকমা তুলে খাইয়ে দিচ্ছে? ইভানের ইশারায় তুহা ভাবনাচ্যুত হয়ে হা করলো। ইভান সুন্দর করে মনযোগ দিয়ে ছোট ছোট লোকমা বানাচ্ছে তুহা চেয়ে চেয়ে দেখছে। হঠাৎ তার মনে পড়লো ইভান খেয়েছে? উনি তো আমার কথা শুনেই ছুটে আসলেন।

তুহা জিজ্ঞেস করে বসলো,’আপনি খেয়েছেন?
ইভান আরেক লোকমা খাবার তুহার মুখে তুলে দিয়ে বলল,’তেমার খাওয়া শেষ হলেই আমি খাবো।
কয়েক লোকমা খেয়ে তুহা আর খেতে চাইলোনা। ইভান ও আর জোর করলোনা। তুহাকে ঔষধ দিয়ে থালায় অবশিষ্ট অর্ধখাওয়া ভাত মেখে লোকমা তুললো নিজের মুখে।

তুহা চকিতে তাকালো। অবাকে পর অবাক হচ্ছে মানুষটার উপর। কিভাবে অকপটে তার আধখাওয়া ভাত খেয়ে নিচ্ছে। মনে হাজার প্রশ্ন উঁকি দিলেও রা করলোনা তুহা। মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় ধ্যান দিলো ইভানের পানে।মানুষটা তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন করছে। তার যত্নে কমতি রাখছেনা। মনে মনে তুহা এমন একজন জীবনসঙ্গীকেই চাইতো। আর পেয়েও গেলো।

নারীর রূপ বদলানোর পেছনে তার প্রেমিক পুরুষের হাত থাকে শতভাগ। আপনি যদি নারীর সাথে কোমল ব্যবহার করেন তবে তার কাছ থেকে আপনি দ্বিগুণ পরিমাণ ভালোবাসা পাবেন। তার সমস্ত আবেগ আপনার পদতলে সে উজাড় করে দিতে সদা প্রস্তুত। কোমল,মায়াবতী হয়ে সে ধরা দিবে আপনার সান্নিধ্যে।
যদি তার সাথে সামান্যতম রুষ্ট আচরণ করেণ তবে সে নারী হয়ে উঠতে পারে নিষ্ঠুর,নির্দয়।
যে নারী যত কোমল তার রাগ,অভিমান,কঠোরতা ততই প্রগাঢ়।

নারী হচ্ছে নারিকেলের মতো। বাইরের খোলসটা শক্তপোক্ত কিন্তু ভেতরটা নরম। রুষ্ট আচরন দিয়ে আপনি তার ভেতরটা স্পর্শ করতে গেলেই বাইরের শক্ত খোলসে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাবেন।
মাঝেমধ্যে স্ত্রীর কথায় প্রাধান্য দিন। তার হ্যাঁ তে হ্যাঁ আর না তে না বলুন। সেদিন আপনার জম্পেশ আপ্যায়ন হবে।

এতক্ষণে তুহা চোখ বন্ধ করে কুশন খামছে শুয়ে পড়েছে। ইভান খাওয়া শেষ করে দেখলো তুহার চোখ বন্ধ। তাকে আপাতত বিরক্ত করলোনা।
রুমে ঢুকে গায়ের জামাকাপড় ছাড়িয়ে নিলো।

অফিসের কাজ শেষে তৃষা বাসার সামনে এসে নামলো। ভাঁড়া মিটিয়ে লিফট এ উঠতেই ইমুর কল আসলো। ইমু তৃষার বান্ধবী। তৃষার হাতের অবস্থা জিজ্ঞেস করতেই তৃষার মুখ অমাবস্যার রাতের মতো অন্ধকারে ঢেকে গেলো। সেদিন ইমু এসে তৃষার হাত ব্যান্ডেজ করেছিলো। তৃষা নিজেই ইমুকে ফোন করে সব জানিয়েছে। টুকটাক কথা বলতে বলতে তুহা ফ্ল্যাটের সামনে এসে থামলো। দরজার নব ঘুরাতে গিয়ে দেখে দরজা আগে থেকেই হাট করে খোলা। দ্রুত ফোন রেখে দিলো। তৃষার স্পষ্ট মনে আছে সে দরজা যাওয়ার সময় লক করেছিলো। তবে কে খুললো দরজা? ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকলো। সবকটা জানালা বন্ধ,লাইট টা ও অফ তাই পুরো ঘর অন্ধকার হয়ে আছে। দরজা খোলা থাকার কারণে মৃদু আলো এসে ফ্লোরে আছড়ে পড়েছে। সোফার উপর এক মানব অবয়ব দেখে তৃষা থমকে গেলো। দু কদম পিছিয়ে গিয়ে অস্ফুট স্বরে বলল,’আবার ও এসেছে?
ঢোক গিললো তৃষা। পরমুহূর্তে চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস ফেললো। ভয় পেলে চলবেনা। এতে করে শ’ত্রু পক্ষ মাথায় চড়ে বসবে। ঘরের আলো জ্বালিয়ে কঠোর স্বরে তৃষা বলল,’এখানে কি করছো তুমি? কি চাই তোমার?

সোফায় বসে থাকা শামিম হো হো করে হেসে উঠলো। মুহুর্তেই চোয়াল শক্ত করে হি’ং’স্র বাঘের ন্যায় গর্জন করে উঠলে।

‘আমি কি চাই কেনো এসেছি সেটা তুই জানিসনা? ভয় পাচ্ছিস? এতে দরদর করে ঘামছিস কেনো? আমার সাথে প্রতা’রণা করার আগে মনে ছিলোনা শামিম জানলে কি হবে?

তৃষা নিজেকে যথেষ্ট শক্ত রাখার চেষ্টা করলো। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,’কিসের প্রতা’রণা? আমি কখনো তোমাকে ভালোইবাসিনি। আমাদের মধ্যে যা ছিলে সব জোরজবরদস্তি। তুমি আমাকে বাধ্য করেছো। তোমার মতো গু’ন্ডা’দের কাজই হলো মেয়েদের উ’ত্য’ক্ত করা। একবারও আমার মতামত জেনেছো?

শামিম তার হাতে থাকা পি’স্ত’লে চোখ বুলিয়ে বলল,’গলার স্বর এত উঁচু হচ্ছে কেনো পাখি? এই দেখো খেলনাটার দিকে তাকাও। আমার না খুব খেলতে ইচ্ছে করছে এটা দিয়ে। খেলবো? এই দেখো তুমি ওখানে আর আমি এখানে। তারপর আমি এই খেলনা তোমার দিকে তাক করবো। বিকট একটা শব্দ হবে তারপর খেলা শেষ। খুব সহজ খেলা তাইনা?

বলতে বলতে তৃষার দিকে এগিয়ে আসছে।তৃষা পেছাতে পেছাতে রান্নাঘরে গিয়ে ঠেকলো। আর পেছানোর জায়গা নেই। শামিমের অধরে বক্র হাসি খেলে যাচ্ছে। তৃষা দেয়াল ঘেষে দাঁড়িয়েছে। শামিম তার একেবারে কাছে।
হুট করে তৃষা ঝুড়ি থেকে তরকারি কা’টা’র ছু’রি নিয়ে শামিমের গলায় চেপে ধরলো।

শামিম ধূর্ততার সাথে ছু’রি নিতে যেতেই তৃষা চাপ প্রয়োগ করে। শামিমের গলার চমড়া কে’টে কয়েকফোঁটা র’ক্ত গড়িয়ে শার্টের বুকের দিকটা ভিজে ওঠে।
গলায় চিনচিনে জ্বলুনি অনুভব করছে শামিম।
তৃষা দাঁতে দাঁত পিষে বলল,’দ্বিতীয়বার আমার সামনেও আসবেনা। এবার ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু পরেরবার বুকে ছু’রি গেঁথে দেবো।
আমাকে আগের তৃষা মনে করে ভুল করোনা। ছু’রি গলায় ধরে রেখেই শামিমকে বের করে তৃষা দরজা বন্ধ করে দিলো। হাত থেকে ঝনঝন শব্দ তুলে ছু’রি নিচে গিয়ে পড়লো। দরজার পাশ ঘেষে তৃষা বসে পড়লো।

ভার্সিটি লাইফে বান্ধবীদের সাথে মিলে হোস্টেলে থাকা শুরু করে তৃষা। ভার্সিটির সিনিয়র ভাই ছিলো শামিম। শামিম ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা রাজ’নীতি করতো। রাজ’নীতি নামে ব’খা’টে’পনা, মা/রা’মা/রি এসব ছিলো তাদের নিত্তনৈমিত্তিক কাজ।
যে মেয়েকে একবার চোখে ধরতো তার মতামতের তোয়াক্কা করতোনা। সেই মেয়েটা যখন সম্পর্ক গড়তে চাইতোনা তখন তাকে রাস্তায় ইভ’টি’জি’ং করে, মা’রা’র ভয় দেখিয়ে না কে হ্যাঁ বানাতো।
হঠাৎ এক দমকা হাওয়া এসে তৃষার উপর পড়লো। শামিমের চোখ পড়লো তৃষার উপর। তৃষাকে ও ভ’য় দেখিয়ে বাধ্য করলো সম্পর্ক করতে। তৃষা তখন পরিবারে কিছু জানায়নি। জানালেই তার আর হোস্টেলে থাকা হতোনা। শামিমের সাথে মিথ্যে অভিনয়ে দিন পার করতো।

হঠাৎ একদিন শামিমকে তার বাবা বিদেশ পাঠিয়ে দেন। ছেলের কার্যকলাপে তিনি অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। তৃষা ভাবলো সে বুঝি মুক্তি পেলো? কিন্তু না কয়েকবছর আগের দমকা হাওয়া আবারও এসে তৃষাকে স্পর্শ করলো।

———————————

বসের মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে অফিসের সবাই আমন্ত্রণিত। সেই সাথে ইভানের নববধূ তুহাকেও আমন্ত্রণ করা হয়েছে। সকালের নাস্তা শেষে ইভান বলল,’ তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও তুহা।’
ছেলেদের অপেক্ষা মেয়েদের তৈরি হতে ঢের সময়ের প্রয়োজন হয়।

তৃষা একের পর এক জামা দেখে চলেছে। কোনটা পড়লে তাকে বেশি আকর্ষণীয় দেখাবে?
ইভানের চ’রি’ত্রে দা’গ লাগানোর খুব ইচ্ছে তার। ছেলেটার কি ইগো।
যেমন বউ তেমনি তার বর। দুইটাকেই তৃষার দৃষ্টিতে বেয়া’দব মনে হচ্ছে।

তুহা গোসল সেরে আয়নার সামনে বসলো। হুট করে মনে পড়লে আজ বিয়ের অনুষ্ঠানে তো তৃষা ও আসবে। তুহা আর ইভানকে পাশাপাশি দেখে তার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে? তুহার দেখার বড্ড ইচ্ছে জাগলো।
#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here