#Senior_life_partner
পর্ব ——— 35
Afrin Ayoni
ড্যাড আসবো??
আফজাল সাহেব– আরে তুই, আয় মা!
রিদীমা– কি করছো??
আফজাল সাহেব– কিছু না, বসে আছি। তোর মা কে পাঠিয়েছি চা করতে। কিছু বলবি??
রিদীমা– রবিন আর ইসুয়ার ব্যাপারে।
আফজাল সাহেব কপাল কুঁচকে– আবার কিছু করেছে নাকি হতচ্ছাড়াটা?
রিদীমা– No Dad……??
আফজাল সাহেব– তাহলে??
রিদীমা– এবার ওদের রিসেপশনের ব্যবস্থাটা করে ফেলা উচিত আমার মতে।
আফজাল সাহেব– ওদের না জানিয়ে রিসেপশনের ব্যবস্থা করা কি ঠিক হবে??
রিদীমা– জানাবে না কেন?ডিনারে সবাই থাকবে,তখন সবাইকে তুমি বলে দিও না হয়।
আফজাল সাহেব– সেখানে মা ও থাকবে।
রিদীমা– ঐটুকু আমি সামলে নিতে পারবো।
আফজাল সাহেব– ওকে আমি discuss করে নিব আজ সবার সাথে।
বাবার সাথে কথা শেষ করে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে রিদীমা। নিজের কক্ষে যাওয়ার সময় হঠাৎ mood change হয়ে গেল তার। সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠতে থাকে সে। তখনই ইসুয়া কোনো কারণে রুম থেকে বের হয়েছিলো। রিদীমাকে ছাদে উঠতে দেখে সে ও পিছু নিলো।
রিদীমা ছাদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে একমনে চেয়ে আছে আকাশের ঐ মেঘে ঢাকা চাঁদটার দিকে।কি অদ্ভুত এই পৃথিবী।একই রকম মানুষের কত ভিন্ন ভিন্ন জীবন।কেউ ঠকবাজ, কেউ বিশ্বাসঘাতক,কেউ ভালবাসার কাঙ্গাল, কেউ দুমুঠো খেতে পায় না এতটাই অভাবী।সবারই অভাব রয়েছে। কারো টাকার, কারো ভালবাসার।
হঠাৎ পিছন থেকে ইসুয়া জিজ্ঞেস করে,,,,,
ইসুয়া– মন খারাপ আপু????
রিদীমা পিছু ফিরে– তুমি??এসো এসো।
ইসুয়া এগোতে এগোতে– বললে না তো, মন খারাপ??
রিদীমা– কই?না তো।?
ইসুয়া– তাহলে এত কি ভাবছিলে??
রিদীমা– জানো ইসুয়া!তুমি একমাত্র ব্যক্তি যে কি না বিনা দ্বিধায় আমাকে সবকিছু জিজ্ঞেস করে ফেল। মনের মাঝে চেপে রাখো না কোনো কিছু।
ইসুয়া– ওমা চেপে কেন রাখতে যাবো,যেটা জানতে ইচ্ছা করবে ঐটা জেনে নেওয়াই better….
রিদীমা– একটা question করি তোমাকে??
ইসুয়া– হ্যাঁ অবশ্যই করো আপু।
রিদীমা– বলো তো এই দুনিয়াতে সবচেয়ে অভাবী কারা??
ইসুয়া– যাদের কে ভালবাসার মতো কেউ নেই।
রিদীমা– রাইট ??
ইসুয়া– হঠাৎ এই কথা কেন আপু??
রিদীমা– নিজেকে মাঝে মাঝে সবচেয়ে অভাবী মনে হয়। ভালবাসার মতো কেউ নেই। বৃথা জীবন। ??
ইসুয়া– মোটেও না। এটা একেবারে ভুল ধারণা। তোমার পরিবার আছে তোমাকে ভালবাসার জন্য, তোমার বাবা মা, তোমার ভাই আর তোমার friend রা ও আছে।
রিদীমা– তারপরও দিন শেষে আমাদের একটা নিজের মানুষ থাকা চাই। যার কাছে আমি মন উজার করে হাসতে পারবো, প্রাণ খুলে কাঁদতে পারবো, সবার নামে অভিযোগ করতে পারবো নির্দ্বিধায়।
ইসুয়া ভ্রু কুঁচকে– Life partner??
রিদীমা– ?????
ইসুয়া– স্বাদ ভাইয়া তো আছেই।
রিদীমা– What?স্বাদ আছে মানে??
রিদীমার হালকা চেঁচিয়ে উঠা দেখে ইসুয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। আমতা আমতা করে বললো– আসলে আপু ……..??
রিদীমা– তুমি নির্ভয়ে বলতে পারো।
ইসুয়া চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে গড়গড় করে বলে ফেললো– আসলে আপু স্বাদ ভাইয়া তোমাকে খুব ভালবাসে।
ইসুয়ার কথা শুনে রিদীমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল যেন। ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে পুনরায় জিজ্ঞেস করলো– এটা তোমায় স্বাদ বলেছে????
ইসুয়া– না মানে ওনার চোখ দেখলেই বোঝা যায়।
রিদীমা– কথা ঘুরবে না একেবারে। স্বাদ নিজে তোমাকে এই কথা বলেছে কি না??
ইসুয়া– হুম।
রিদীমার শরীর টা থরথর করে কাঁপছে। নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে।ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো– নিচে যাও ইসুয়া। আমাকে একটু একা থাকতে দাও। ??
ইসুয়া রিদীমার আচরণে হকচকিয়ে গেল। তাই সে বিনাবাক্যে নিচে চলে গেল। রিদীমা তার লাল লাল চোখ দুটো দিয়ে আকাশ দেখছে।কিছুক্ষণ পর সে স্বাদের নাম্বারে কল দিলো। দুবার কল হওয়ার পর রিসিভ হলো না দেখে ,রিদীমা একটা এড্রেস দিয়ে সেখানে কাল বারোটার সময় দেখা করতে বলে।
স্বাদকে মেসেজ করার পর শাহেদের নাম্বারে কল দেয় রিদীমা।শাহেদ তখন newspaper পড়ছিলো। রিদীমার নাম্বার নিজের ফোনের স্কিনে দেখে রীতিমতো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সে।কলটা তাড়াহুড়ো করে রিসিভ করতেই,,,
শাহেদ– Hlw ??
রিদীমা– কাল দেখা করা যাবে??
শাহেদ– হুম, কোনো সমস্যা??
রিদীমা– এলেই জানা যাবে।
শাহেদ– কোথায় দেখা করতে হবে???
রিদীমা– Address আমি সেন্ড করে দিচ্ছি।
শাহেদ– ওকে।
রিদীমা কল কেটে। অন্য একটা নাম্বারে ডায়াল করলো,,
কলটা ধরার সঙ্গে সঙ্গে রিদীমা বললো–
“আমি একটা পিক আর তার সাথে এড্রেস দিচ্ছি, কালকের মধ্যে তাকে বাংলাদেশে আমার চাই যে করেই হোক।”??
ফোনের ওপাশ থেকে– কাজ হয়ে যাবে madam..
রিদীমা কথা বলা শেষ করে নিচে নেমে আসে। ডিনারের সময় হয়েছে। সবাই নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছে। তাই সে সোজা ডাইনিং রুমে চলে আসে।রাতের খাবার খেতে বসেছে সকলে।আফজাল সাহেব দেলোয়ার খানের দিকে তাকিয়ে বললো,,,,
আফজাল সাহেব– আজকাল তোমার কোনো হদিস পাওয়া যায়না দেলোয়ার। কোথায় থাকো??
দেলোয়ার খান– বিশেষ কাজে দুদিনের জন্য চট্টগ্রাম যেতে হয়েছে।
আফজাল সাহেব– ওহ্ তাই বলো।
সুরাইয়া খান স্বামীর দিকে আড়চোখে ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে একবার তাকালেন। রিদীমা চিকেনে কামড় বসাতে বসাতে বললো– এই কাজের জন্য কত জায়গায় যেতে হয় আপনাকে ফুফা??☺☺
দেলোয়ার খান হকচকিয়ে গেল। এই মেয়ে তাকে সন্দেহ করছে না কি!! গলা পরিষ্কার করে মিনমিনিয়ে বলেন,,
দেলোয়ার খান– মানে??
রিদীমা– মানে হল কি এমন কাজ ছিলো হঠাৎ কাউকে না জানিয়েই চট্টগ্রাম চলে গেলেন হঠাৎ??
মমতা চৌধুরী– তোমাকে কৈফিয়ত দিবে না কি সে।তুমি ছোট হয়ে যেসব কাজ করো,আমাদের মুরব্বিদের তার কৈফিয়ত দাও কখনো????
রিদীমা– ঐটুকু আশাও করবেন না কখনো Misses. চৌধুরী ??
মমতা চৌধুরী– দিন দিন খালি অধপতন হচ্ছে তোমার।
রিদীমা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রবিন বলে উঠলো — দাদীমা তোমার favourite বেগুন ইলিশের তরকারিটা খাও।
তারপর বোনের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে আস্বস্ত করে।আফজাল সাহেব কেশে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো।
আফজাল সাহেব– তোমাদেরকে আমার কিছু কথা বলার ছিলো।
রবিন– কি বাবা????
আফজাল সাহেব– তোমাদের বিয়েটা তো ঘরোয়া ভাবে হয়েছে এবার রিসেপশন করে ধুমধাম করে ইসুয়া মামণিকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় হয়েছে।
ইসুয়া– ধুমধাম করে জানানোর কি আছে বাবা??
রিদীমা– অবশ্যই দরকার আছে।??
রবিন– তোমরা যেটা ভালো বুঝো করো।
সিনথিয়া ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ বেকিয়ে বললো– আদিখ্যেতা!!??
ঠিক তখনই পাশ দিয়ে ইসুয়া যাওয়ার সময় হাতে থাকা ডালের বাটিটা একেবারে উল্টে গিয়ে সিনথিয়ার পিঠ বরাবর কাঁধে পড়লো।সিনথিয়া জলদি করে উঠে দাঁড়ায়। ততক্ষণে সে ডাল দিয়ে এক প্রকার গোসল করে নিয়েছে।
সিনথিয়া– এটা কি করলে?দিলে তো সারা শরীর অপরিষ্কার করে।??
ইসুয়া– সরি সরি আমি দেখিনি।??
রবিন– সিনথি যা গিয়ে চেন্জ করে নে।
সিনথিয়া ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে যেতে যেতে বললো — অসহ্যকর।??
মমতা চৌধুরী কপাল ভাঁজ করে ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন — সবসময় তোমার হাত থেকে এটা সেটা ওর উপরেই কেন পড়ে??
ইসুয়া– সরি দাদীমা।??
রিদীমা– এতবার সরি বলার মত কিছু করোনি তুমি।
আফজাল সাহেব– মন খারাপ করার মত কিছু হয়নি।রবিন, তুমি ইসুয়াকে নিয়ে শপিং এ যাবে। দুদিন পর রিসেপশনের ডেট ফিক্সড করেছি।ওর যা যা লাগবে সবকিছুর ব্যবস্থা করে দিও।
রবিন– ওকে বাবা।??
সবাই ডিনার শেষ করে যে যার রুমে চলে যায়। ইসুয়া হাতের কাজ গুলো সেরে রুমে আসে। বিছানায় দপ করে বসে পড়ে। রবিন তখন বেলকনিতে ছিলো,ইসুয়ার উপস্থিতি টের পেয়ে রুমে আসে।
রবিন– Anything wrong??
ইসুয়া– হুম।
রবিন– কি হয়েছে????
ইসুয়া রবিনকে তার আর রিদীমার কথোপকথনের সব বললো। রবিনের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো — স্বাদ ভাইয়া কি সত্যিই আপুনিকে ভালবাসে??
ইসুয়া– সেটাই তো বললো আমাকে।
রবিন– Ok no tension…… ঘুমিয়ে পড়ো।
রবিন তার গায়ের গেন্জি টা পাল্টে একটা টি শার্ট পড়লো। ইসুয়া অবাক হয়ে বললো– এত রাতে কোথাও যাচ্ছেন নাকি??
রবিন– বন্ধু দের সাথে একটু আড্ডা দিব।
ইসুয়া– এত রাতে??
রবিন দুষ্টু হেসে– কেন?মিস করছো না কি????
ইসুয়া– অসভ্য,,,মন থেকে শয়তানি যাবে না কখনো।
রবিন আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। ইসুয়া বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।
শাহেদ ডিনার শেষ করে কেবল হাত ধুয়েছে তখনই বাড়ির কলিংবেল বেজে উঠল। শিলা আর শাহেদ একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।
শাহেদ– দেখ তো এত রাতে কে এলো??
শিলা দরজা খুলে দিতেই হুড়মুড়িয়ে রবিন ঢুকলো। শাহেদ এগিয়ে গেল তার দিকে।
শাহেদ– কি ব্যাপার, তুমি????
রবিন– আপুনি কিছু বলেছে আপনাকে ভাইয়া??
শাহেদ– রিদীমা??কই না তো।কিছু কি হয়েছে বাড়িতে?
রবিন– আসলে………??
শাহেদ– রিদীমা কাল দেখা করতে বলেছে আমাকে।
রবিন– ওহ আচ্ছা।
শাহেদ– কি হয়েছে বলবে তো!!
রবিন– কাল আপুনির কাছ থেকেই শুনবেন।
শাহেদ– সে না হয় হলো,তুমি শান্ত হয়ে বসো তো।
রবিন– না, অনেক রাত হয়েছে। বাড়িতে ফিরতে আরো লেইট হবে।তারচেয়ে বরং অন্য একদিন বসবো।
শাহেদ কে বিদায় জানিয়ে আবারো বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে রবিন।
……………………………………………………….
রিদীমা– বল আরিফ!!??
আরিফ — Madam আপনার দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী খোঁজ করতে গিয়েছি, কিন্তু কাউকে পাওয়া যায়নি।
রিদীমা– ভালো করে খোঁজ লাগাও।
আরিফ — তাকে পাওয়া না গেলে ও তার খোঁজ পাওয়া গেছে।
রিদীমা — কোথায় আছে সে??
আরিফ– দুর্ভাগ্য বলবো নাকি সৌভাগ্য বলবো!!
রিদীমা– What????
আরিফ– সে এখন বাংলাদেশে ই আছে।
রিদীমা মুখে হাসি ফুটিয়ে– Ohh I see……??
আরিফ– এবার কি করবেন ম্যাডাম?
রিদীমা– এর update তুমি পরে পেয়ে যাবে।রাখছি…..
আরিফ– ok madam ☺☺
রিদীমা কলটা কেটে বেডের উপর শুয়ে পড়ে। মাথাটা ধরেছে খুব। ঘুমানোর প্রয়োজন। চোখ জুড়ে ঘুম নেমে আসে তার।
রিদীমার দুটো Missed call নিজের ফোনের স্কিনে দেখে স্বাদ হতভম্ব। রিদীমা কল করেছে, অথচ সেটা মিস করে ফেললো সে!কপালটাই খারাপ।
রিদীমাকে কল দিতে যাবে তখনই মেসেজ টা চোখে পড়ে স্বাদের।একটা address দেওয়া। সেখানে কাল বারোটার সময় দেখা করতে বলেছে রিদীমা। তবে কী বিশেষ কিছু??
মেসেজ টা পড়ে স্বাদ হাতে কফির কাপে চুমুক দিল। কাপ হাতে নিয়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেল।রাতে খাওয়ার পর কফি না হলে যেন কিছু একটা মিস হয়ে যায় স্বাদের।একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।
বারান্দায় দাঁড়ানো স্বাদ খেয়াল করলো, তাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় সোডিয়ামের আলোতে হুডি পড়া কাউকে দেখা যাচ্ছে। যে কিনা স্বাদের বেলকনির দিকেই তাকিয়ে আছে।তার চেহারাটা স্পষ্ট দেখা না গেলেও রাস্তায় তার ছায়াটা গভীর অন্ধকারে আচ্ছন্ন।
স্বাদ চোখের চশমা টা ঠিক করে নিলো।চিনতে পারছে না সে।কে হতে পারে এই ছায়ামানব? নাকি ছায়ামানবী? এই দেশে তাকে ফলো করবে কে??তা ও আবার এত রাতে!!??
__________________________(চলবে)