#Senior_life_partner
পর্ব——-33
Afrin Ayoni
কাল যাচ্ছিস তো !!(স্বাদ)
রিদীমা — কোথায়??
স্বাদ– কোথায় মানে?তোর মনে নেই??
রিদীমা– কিসের কথা বলছিস??
স্বাদ– Ohh god…. রিদ কাল আমাদের সেই govt. Organisation এর পক্ষ থেকে ইনভাইট করা হয়েছিলো যে!!
রিদীমা– ওহ আচ্ছা। কাল নাকি??
স্বাদ– হায় রে খোদা, তুই এটাও জানিস না!!
রিদীমা–???
স্বাদ– কাল বিকেলে,তৈরি থাকিস।আমি ড্রপ করে নিব তোকে।
রিদীমা– তার প্রয়োজন হবে না। আমি একা চলে যেতে পারবো।
স্বাদ– বেশি বুঝিস না। যা বললাম মনে থাকে যেন।
রিদীমা আর স্বাদের কথার মাঝেই নিশুয়া রবিন এসে হানা দিল।রবিন এগিয়ে এসে,,
রবিন– কি নিয়ে কথা হচ্ছে??
স্বাদ– দেখ তোমার বোন ভুলেই গেছে কাল সেই নিমন্ত্রণের কথা।
রবিন– সে কি!কাল ই নাকি??
স্বাদ — হুম??
রবিন– আপুনি তুমি যাবে তো??
রিদীমা– দেখি অফিস টাইমের ফাঁকে সুযোগ পাই কিনা??
স্বাদ– তুই যাচ্ছিস,আর কোনো অজুহাত না!
রিদীমা– বললেই হয়ে গেল নাকি??
রবিন– আরে যাও তো আপুনি।আমিও তো ……….
থেমে যায় রবিন। স্বাদ আর রিদীমা রবিনের দিকে তাকিয়ে– তুমি ও তো কী???
রবিন আমতা আমতা করে– আমি ও তো কাল ভার্সিটিতে যাচ্ছি। ভার্সিটি শেষ হলেই অফিসে জয়েন করে নিব।তুমি যাও আপুনি।
স্বাদ আর রবিন অনেক কষ্ট করে রিদীমাকে রাজি করায়।দিতী বেগম, সুরাইয়া খান আর রেহানা বেগম একসঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন।ইসুয়া তাদের দিকে সিঙ্গারা আর চা এগিয়ে দিলো।
ইসুয়া– এই নিন আন্টি, স্পেশাল সিঙ্গারা খান।
রেহানা বেগম– স্পেশাল সিঙ্গারা!!??
ইসুয়া– বাঁধাকপির সিঙ্গারা।
সবাই অবাক হয়ে সিঙ্গারা টা মুখে দিল। সিঙ্গারার মধ্যে আলুর পরিবর্তে বাঁধাকপি।ইসুয়া উৎসাহী হয়ে ফলাফল জানার জন্য তিনজনের দিকে তাকিয়ে ছিলো।
সুরাইয়া খান — অসাধারণ just…..??
দিতী বেগম– আমার বউমার এত গুণ??
রেহানা বেগম– আসলেই অনেক মজার।ধন্যবাদ একটা new item এর খাবার খাওয়ানোর জন্য। ??
ইসুয়া– আমার মায়ের রেসিপি। আজ প্রথম try করলাম। এত ভালো হবে আশা করিনি।
দিতী বেগম– বউমা সবাইকে দিয়েছো নাস্তা??
ইসুয়া– আপনাদের দিয়ে বিসমিল্লাহ্ করলাম।
তারপর ইসুয়া ছাদে রিদীমা রবিন স্বাদ আর নিশুয়াদের কাছে যায়। ইসুয়াকে দেখে রিদীমা এগিয়ে যায়,,,,
রিদীমা– ইসুয়া তোমার again ভার্সিটিতে জয়েন করা উচিত ??
ইসুয়া– ইয়ে মানে……………….
রবিন — কাল থেকে শুরু করবে আবার।
রিদীমা– Great decision
ইসুয়া— কিন্তু!!??
রবিন– কিসের কিন্তু?কোনো কিন্তু ফিন্তু নয়।
স্বাদ– ইসুয়া, দেখ বিবাহিত জীবনের আঁচড় পড়তে দিয়ো না ক্যারিয়ার জীবনে।
ইসুয়া– আচ্ছা। সবাই যখন এত করে বলছেন আমি ভেবে দেখবো।
রিদীমা– নিশুয়া তুমি চুপ কেন????
নিশুয়া– আপনাদের কথা শুনছি।
ইসুয়া– ও চুপ থাকলেই ভালো।বকবক শুরু হলে আর বন্ধ হয় না সহজে।
নিশুয়া– তোমার মত গোমড়া মুখী হবো নাকি?
ইসুয়া– না বোন,তোর আমার মত হওয়া লাগবে না।
রবিন ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে– My শালিসাহেবা better than you???
ইসুয়া– হইছে,রতনে রতন চিনে।??
সবাই হা হা হা করে হেসে উঠে। সবাই অনেক মজা করে গল্প গুজব করে বিদায় নিয়ে বাড়িতে চলে যায়। রাতে ডিনার সেরে ইসুয়া রুমে এসে অস্বস্তিতে পড়ে গেল।রবিন শুয়ে আছে বিছানার মাঝ বরাবর। এই কয়দিন দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য একটু বেশি থাকাতে কেমন গেছে রাতের সময় গুলো সেটা একেবারে খেয়াল করেনি দুজনের কেউ ই।
ইসুয়া হালকা কেশে তার উপস্থিতির জানান দেয়। কিন্তু রবিন নাছোড়বান্দা। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে।
ইসুয়া– আরেকটু ডান দিকে সরে গেলে আমার জন্য সুবিধা হত।??
রবিন– কেন? তোমার কি কোনো ছোঁয়াচে রোগ আছে?
ইসুয়া– মানে??
রবিন– আছে নাকি তাই বল??
ইসুয়া– না নেই।
রবিন– আমার ও নেই।তাহলে কারোর ই যেখানে ছোঁয়াচে রোগ নেই সেখানে সরে সরে থাকতে যাব কোন দুঃখে??
ইসুয়া—?????
রবিন– পাশাপাশি শুয়ে পড়ুন Miss. অধ্যাপিকা
ইসুয়া কথা বাড়ালো না। রবিন আবারো বললো — আমার প্রতি ভালোবাসা মায়া থাকুক আর না থাকুক।বিশ্বাস টা রাখলে খুব খুশি হব।
ইসুয়া শুয়ে পড়ে একপাশ ফিরে।রবিন ও লাইট অফ করে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। অন্ধকারে দুটো মানুষ একই রুমে,একই বিছানায়।বিছানাতে দূরত্ব খুব একটা না থাকলেও মনে তাদের হাজার হাজার মাইলের দূরত্ব।
ইসুয়া আর রবিনের নিঃশ্বাসের আওয়াজে ভারী হয়ে আছে রুমের পরিবেশ।কোনো কথা নেই, শব্দ নেই।দুজনের নিঃশ্বাস যেন সারা রুম জুড়ে পায়চারি করছে।
ইসুয়া– একটা কথা জিজ্ঞেস করবো??
রবিন– হ্যাঁ বল।
ইসুয়া– ঐ ড্রেসগুলো পড়তে বারণ করেছেন কেন??
রবিন– সেটা আপনার না জানলেও চলবে।
ইসুয়া– আসলে আজ একটা ড্রেস পড়তে খুব ইচ্ছে করছিলো।পড়িনি আর,,আপনার কথাটা মনে হওয়াতে।
রবিন– কোন কালারের টা????
ইসুয়া– ব্ল্যাক রেড ।
রবিন– আচ্ছা কাল শপিং থেকে একটা নিয়ে আসবো।
ইসুয়া– আশ্চর্য, ঘরে ড্রেস থাকতে আপনি same ড্রেস আবার কিনে আনবেন??
রবিন– হ্যাঁ, তারপর ও ঐটা পড়া যাবে না এখন।
ইসুয়া– কিন্তু কেন??
রবিন– বলতে পারবো না, ঘুমাও এখন।
ইসুয়া– আগে বলুন।
রবিন দুষ্টু হেসে– শুনবে??সত্যি????
ইসুয়া– হুম বলুন।
রবিন– সত্যি বলবো??
ইসুয়া– আরে বাবা হ্যাঁ।
রবিন তার মুখটা ইসুয়ার কানের কাছে নিয়ে আসে। অন্ধকারে রবিনের নিঃশ্বাসের গরম হাওয়া ইসুয়ার কানে লাগতেই শিউরে ওঠে সে।
রবিন– ঐ ড্রেসগুলোতে আপনার পিঠের জোড়া তিলখানা স্পষ্ট দেখা যাবে।??
ইসুয়ার চোখ দুটো মার্বেলের মত বড় বড় রূপ ধারণ করলো। রবিন আবারো বললো– এখন আপনি এমন পরিস্থিতিতে আমার সামনে ঘোরাঘুরি করলে I can’t control Miss. অধ্যাপিকা।
ইসুয়া– মানে!!
রবিন– Details এ বলতে হবে নাকি??
ইসুয়া– বেহায়া কথাবার্তা যাবে না কখনো।
রবিন উচ্চ স্বরে হেসে উঠে। ইসুয়া বিরক্ত হয়ে বললো– আপনি কি করে জানলেন আমার জোড়া তিলের কথা??
রবিন– আপনি প্রথম দিন ভার্সিটিতে পিঠ খোলা রেখে শিক্ষকতা করতে গিয়েছিলেন বিধায়।
ইসুয়া– ??আপনি সেই ছেলেটা!!
রবিন– কোন ছেলেটা??
ইসুয়া– যে আমাকে …………. বলেছিলেন!
রবিন– জ্বি দুর্ভাগ্যবশত আমিই সেই ছেলেটা।??
ইসুয়া রবিনের কথা শুনে চুপ মেরে গেল।কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর,,,,,
ইসুয়া— Thnx a lot & good night…..
রবিন– ধন্যবাদ কেন??
ইসুয়া– সেদিন হেল্প করার জন্য। ??
ইসুয়া আর রবিনের মাঝে নিস্তব্ধতা নেমে এল।রাতটা কাটতে থাকে নতুন সকালের আগমনের উদ্দেশ্যে।
———————————————————-
পরের দিন সকালে সবাই breakfast করে যে যার কাজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হল।রবিন আর ইসুয়া একসঙ্গে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরুতে যাবে তখনই সিনথিয়া এসে যোগ দিল।রবিন গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে যেই ইসুয়াকে গাড়িতে উঠতে বললো তখনই সিনথিয়া ইসুয়া কে হালকা ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে নিজে উঠে বসলো রবিনের পাশে।
সিনথিয়া ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে– সরি,আমি পিছনে বসতে comfortable নই।কিছু মনে করো না প্লিজ।
ইসুয়া মুখ গোমড়া করে– It’s ok…. no problem
সিনথিয়া– Thanks…..??
ইসুয়া যেই গাড়ির পিছনের সিটে উঠতে যাবে তখনই এই শহরের সবচেয়ে দামি গাড়িটা তার অন্য পাশে এসে দাঁড়ালো।গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসা রিদীমা তার মাথাটা গাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ইসুয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,,,,,
রিদীমা– কোনো সমস্যা না থাকলে আমি তোমাকে ড্রপ করে দিচ্ছি।
ইসুয়া কেন ,,, কারোর সাধ্য নেই রিদীমার মুখের উপর না করার।আজ পর্যন্ত কারো ভাগ্য ছিলো না রিদীমার পাশে বসার।আর আজকে রিদীমা নিজ থেকে কাউকে বলছে ড্রপ করার কথা!! ইসুয়া উঠে বসে রিদীমার পাশে।
রিদীমা রবিনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো– যে জিনিসটার দায়িত্ব নিতে পারবি না, সেটার দায়িত্ব নিতে আগ বাড়িয়ে যাস কেন? স্কাউনডেল……??
রবিন মিনমিনিয়ে — আমি কি করলাম????
রিদীমা– Bye take care guy’s…..??
ইসুয়া আর রিদীমার গাড়ির স্পিড বেড়ে গেল।রবিন একবার সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে রেগে full speed এ গাড়ি ছাড়লো।সিনথিয়ার যেন কোন কিছুই গায়ে লাগছে না। না বোঝার ভান ধরে রবিনের পাশে বসে আছে সে।
রিদীমা ইসুয়ার ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামালো।ইসুয়া নামতে যাবে তখনই রিদীমা বাঁধা দেয়।ইসুয়া আড়চোখে তাকায় রিদীমার দিকে।
ইসুয়া– কিছু বলবে আপু??
রিদীমা– হুম।দুমিনিট বস।কথা আছে।
ইসুয়া– হ্যাঁ বল, কি বলবে।
রিদীমা– R u crazy ইসুয়া???
ইসুয়া– কেন আপু?আমি কি করলাম?
রিদীমা– দেখ বিয়েটা যেভাবেই হোক, হয়েছে তো!! তুমি অস্বীকার করলেও বাইরের দুনিয়াতে সবার সামনে এখন তুমি রবিন চৌধুরীর wife…. তাই বলছি,এখন সম্পর্কটাকে স্বীকৃতি দাও।নয়তো পরে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
ইসুয়া– আমার সময়ের প্রয়োজন।
রিদীমা– কত সময় লাগবে ? নাও…. তারপর ও একটা সলিড ডিসিশন জানাও রবিনকে।এভাবে অন্যের সাথে নিজের life partner কে ছেড়ে দিতে নেই।অধিকার দেখাতে চেষ্টা কর।
ইসুয়া– ????
রিদীমা– ভালোর জন্য বললাম।বাকিটা তোমার ইচ্ছা।
ইসুয়াকে বিদায় জানিয়ে রিদীমা চলে গেল।রিদীমার কথা গুলো বারবার বাজতে থাকে ইসুয়ার কানে।সত্যিই তো,নিয়তি কারোর হাতে নেই।এখন কি করবে ইসুয়া??
ভাবছে সে!মেনে নিবে সবকিছু?রবিনকে সুযোগ দেওয়া দরকার!!
ইসুয়া ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস নিচ্ছিলো। রবিন আর সিনথিয়া মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বাকি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। ইসুয়া ক্লাসরুমে আছে ঠিকই, কিন্তু চোখ দুটো রবিনকে যেন কড়া পাহারা দিচ্ছে।
রবিন মাঠের মাঝখানে একটা বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে বসে আছে শুভ।তার বরাবর সামনে নয়ন,তুলি আর সিনথিয়া। রবিন হেসে হেসে উঠে কিছুক্ষণ পর পর। এই হাসিটাকে আজ ইসুয়ার কাছে দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর হাসি মনে হচ্ছে।
হঠাৎ সিনথিয়া রবিনের কাঁধে হাত রাখে।ইসুয়ার কপালে ভাঁজ পড়ে। তারপর সিনথিয়ার হাত রবিনের শার্টের কলারে গেল।ইসুয়া দূর থেকে সবকিছু ভালো করে দেখতে লাগলো। রবিন কিছুই বলছে না সিনথিয়া কে।ইসুয়ার ভীষণ রাগ হল।সে তার রাগ দমন করতে পারছে না যেন আজ।
রবিন অনেকক্ষণ আড্ডা দিয়ে কোন একটা কাজে ভার্সিটির দোতলায় যাচ্ছে। ইসুয়া যেন এই সুযোগটাই খুঁজছিলো।রবিন লাইব্রেরিতে ঢুকলো।লাইব্রেরিটা একদম ফাঁকা। এখন প্রায় সব স্টুডেন্ট ই ক্লাস করছে বিধায় কেউ নেই আপাতত। রবিন কর্ণারে একটা বুকসেল্পের দিকে এগিয়ে গেল।
ধরাম করে দরজা লাগানোর আওয়াজ হতেই পিছনে ফিরলো রবিন।রীতিমতো ইসুয়াকে দেখে অবাক সে।
রবিন– তুমি????
ইসুয়া– কেন?অন্য কেউ আসার কথা ছিলো না কি??
রবিন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে– What??
ইসুয়া এগিয়ে এসে রবিনের কলার চেপে ধরে।রাগে ফর্সা গাল দুটো টমেটো হয়ে আছে।
রবিন– কি হয়েছে????
ইসুয়া– সিনথিয়ার সাথে এত ঘেঁষাঘেঁষি কিসের??
রবিন ব্যপার টা বুঝতে চেষ্টা করছে,,ইসুয়ার কপালে গলায় হাত দিয়ে বলে — জ্বর তো নেই!কিছু খেয়েছো নাকি??
ইসুয়া– আর একবার সিনথিয়ার সাথে দেখলে আপনাকে খাবো।একেবারে গিলে খাবো।??
রবিন দুষ্টু হেসে– Jealous??
ইসুয়া– So what? আমার বর আমি জেলাস হতেই পারি,এতে অসুবিধার কিছু নেই।
রবিন– ????
ইসুয়া রবিনের কলার চেপে ধরে কাছে টেনে এনে নাকে নাক ঘষে বললো — অন্য মেয়েদের সাথে মিশতে লজ্জা করে না?ঘরে বউ রেখে পরনারীতে ………..
আর কিছু বলতে দিলো না ইসুয়াকে রবিন। ইসুয়ার কোমড় জড়িয়ে কাছে টেনে এনে বললো — এরকম বউ বউ অধিকার দেখালেই হত আগে।??
ইসুয়া লজ্জায় নেতিয়ে পড়ে। রবিন ইসুয়ার কপালে একটা চুমু খেল। তারপর বললো — মহারাণীর আদেশ শিড়ধার্য।
ইসুয়া– ক্লাস রেখে এসেছি।এখন যাই।
রবিন ইসুয়ার হাত শক্ত করে ধরে– চলে যাবে? যাবে?
ইসুয়া হেসে– যেতে দিন,যেতে হবে।
রবিন হাত ছেড়ে দিল। ইসুয়া লাইব্রেরির দরজায় দাঁড়িয়ে পিছনে ফিরে তাকিয়ে বললো– নারী মন বুঝতে শিখ প্রিয়।হাত ছাড়তে বললেও ধরে রাখতে শিখ।
রবিন হেসে একটু জোরেই বলে উঠলো — Love u Miss. অধ্যাপিকা!! Love u so much….??
ইসুয়া হেসে বেরিয়ে গেল। রবিন যেন আজ পুরো আকাশটাই হাতে পেয়েছে।
মনে মনে বলে — এটা তুমি কি করলে অধ্যাপিকা??এবার যে শুধু জ্বলতে হবে তোমাকে।এতদিন অনেক জ্বালিয়েছো আমাকে???
———————————————————
বিকেল চারটা,,,,
রিদীমার অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে আছে স্বাদের গাড়ি। স্বাদ দুই বার কল করে রিদীমার নাম্বারে।রিদীমা দুমিনিট পর বেরিয়ে আসে অফিস থেকে।
রিদীমা–Sry for late…??
স্বাদ– Okkk….. জলদি উঠ
রিদীমা গাড়িতে উঠে বসে। স্বাদ ড্রাইভ করছে।পনের মিনিট পর কাঙ্ক্ষিত জায়গায় এসে পৌঁছায় স্বাদ রিদীমা। অতিথিদের আসনের দুই নাম্বার সারিতে এসে বসে দুজনে।শুরুতেই কিছু গণ্য মান্য ব্যক্তি বক্তব্য রাখেন।তারপর কিছু বিনোদন নাচ দেখানো হয়। সবশেষে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা প্রথম শ্রেণীর লোকদের কিছু সম্বর্ধনা দেওয়া হবে।এখন সবার নাম ঘোষণা করার পালা।
রিদীমা আর স্বাদ মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো স্টেজের দিক থেকে আসা কথাগুলো। হঠাৎ পাশেই কাউকে বসতে দেখে ফিরে তাকালো স্বাদ।
শাহেদ — কেমন আছিস দোস্ত??☺☺
শাহেদকে দেখে মাথা গরম হয়ে গেল স্বাদের।রাগ কন্ট্রোল করতে হয় কি করে এটা ডক্টর রা ভালো করেই জানে।তাই চুপচাপ সামনে তাকালো পুনরায় স্বাদ।
শাহেদ — কি রে কথা বলছিস না যে।??
রিদীমা এবার চোখ পাকিয়ে তাকালো শাহেদের দিকে।
রিদীমার দিকে তাকিয়ে শাহেদ বললো — কেমন আছেন প্রিয়দর্শীনি??
স্বাদ– আমরা একটা ইভেন্টে এসেছি,ফালতু কথা বলার জায়গা এটা নয়।??
শাহেদ স্বাদের কাঁধে হাত রেখে– রিদীমার রাগের পিছনে না হয় কোনো কারণ আছে,তুই কেন কথা বলছিস না বলতো??
স্বাদ– রুচি নেই তোর সাথে কথা বলার।
শাহেদ — এভাবে রিয়েক্ট করছিস কেন?
স্বাদ– অন্তত তোর মত চিট তো করছি না। রিদের সাথে এভাবে চিট করতে লজ্জা করলো না তোর???
শাহেদ — ও এই একই ব্যাপারে দুজন ক্ষেপে আছিস আমার উপর??
রিদীমা দুজনের দিকে তাকিয়ে– Shut up … কি হচ্ছে টা কী??তোদের জন্য কিছু বুঝতে পারছি না।
তখন মঞ্চের দিক থেকে আওয়াজ এলো,”একটু আগে যাকে সম্বর্ধনা জানানো হলো তিনি R চৌধুরী। উনি special officer of ……..”
শাহেদ — শোন।তোদের বিষয়টা এক্সপ্লেইন করতে দে।
রিদীমা– ইস শুনতে পেলাম না। বাজে কথা না বললেই নয় এখানে????
স্বাদ– আমরা কেউ তোর কোনো অজুহাত শুনতে চাই না।
শাহেদ — কথা না শুনে judge করা ঠিক না।??
তখনই মঞ্চের দিক থেকে আওয়াজ আসে — স্বাদ আহসান….. best doctor….দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতে সম্বর্ধনা তুলে দিব আমরা।
স্বাদ announcement শুনে এগিয়ে গেল মঞ্চের দিকে।স্বাদ উঠে যাওয়ার পর রিদীমার পাশে এসে বসে শাহেদ।
রিদীমা আড়চোখে তাকায় একবার।তারপর আবার সামনে দৃষ্টি দিল।শাহেদ তার কাঁপা কাঁপা হাতে রিদীমার হাতে হাত রাখলো।
শাহেদ — তুমি ও একবার সুযোগ দিবে না আমাকে, প্রিয়দর্শীনি????
রিদীমা– এটা সঠিক জায়গা নয়, হাত ছাড়ুন।
হাত সরিয়ে নিলো শাহেদ।স্বাদ যথাস্থানে ফিরে এসে নিজের আসনে শাহেদকে দেখে মনে মনে খুব ক্ষিপ্ত হল।কিন্তু প্রকাশ করলো না।
স্বাদ বসতে বসতে বলে– তা হঠাৎ high school এর টিচার এই অনুষ্ঠানে??
শাহেদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই স্টেজ থেকে– “এখন সম্বর্ধনা নিতে মঞ্চে আসবে গোয়েন্দা বিভাগের head শাহেদ শাহরিয়ার।”
স্বাদ হা হয়ে গেল।রিদীমার কোনো হেরফের নেই।শাহেদ এগিয়ে যায় স্টেজের দিকে।স্বাদ রিদীমার দিকে তাকিয়ে,,,
স্বাদ– শাহেদ CID officer????
রিদীমা– হুম।
স্বাদ– তুই জানতিস??
রিদীমা– দুদিন আগে জেনেছি।
স্বাদ– Oh my God…….. pure চিটার।শালা গোয়েন্দা হয়ে লোক ঠকিয়ে বেড়াচ্ছে।??
সম্বর্ধনা হাতে ফিরে এসে নিজের আসনে বসে শাহেদ।মুখে আর কথা ফুটলো না তার।তিনজনই চুপ মেরে আছে।এ যেন একজন আরেকজনের অন্তরের সব লুকায়িত তথ্য জানার চেষ্টা চালাচ্ছে নীরবে।
“এখন সম্বর্ধনা নেওয়ার পালা London business টাইকন রিদীমা চৌধুরী। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে যার ভূমিকা ব্যাপক।”
একে একে সকলেই সম্বর্ধনা হাতে তুলে নিল।অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পালা।স্বাদ আর রিদীমা এগিয়ে যাচ্ছিলো গাড়ির দিকে।পিছন থেকে ডেকে উঠে শাহেদ।
__________________________(চলবে)