#Senior_life_partner
পর্ব—-27
Afrin Ayoni
রান্নার তোড়জোড় চলছে ঝুমা বেগমের কিচেনে।ঘরোয়া ভাবে হলেও অন্তত কিছু নাস্তা পানি দেওয়া তো এক ধরনের ভদ্রতা।তাই তিনি এই স্বল্প সময়ে যতটুকু পারছেন ততটুকু করার চেষ্টা করছেন।
নিশুয়া খুবই excited…. বোনের আর রবিনের বিয়ে নিয়ে। একমাত্র ইসুয়া ই এখন পর্যন্ত জানলো না যে তার বাসায় এত কিছু হয়ে যাচ্ছে। স্বয়ং কাজী সাহেব রেডি তার আর রবিনের বিয়ে পড়াতে।
ড্রয়িং রুমে বাবা আর শ্বশুরের সাথে দুই বন্ধুকে নিয়ে বসে আছে রবিন। আফজাল সাহেব, তারেক সাহেব আর কাজী সাহেব মিলে আড্ডা দিচ্ছে,,,তাদের বয়সী আলাপ যাকে বলে আর কী!!
শুভ আর নয়ন বন্ধুর বিয়েতে কি কি করতে হবে তার পরিকল্পনা করছে।শুধুমাত্র রবিন ই এদিক সেদিক তাকিয়ে ইসুয়াকে খোঁজছিলো।কিন্তু ইসুয়ার আধঘন্টাতে ও কোনো দেখা মেলেনি।বাধ্য হয়েই রবিন নিশুয়ার খোঁজে রান্নাঘরে যায়। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে রবিন শ্বাশুরী ঝুমা বেগমের চোখে পড়ে যায়।ঝুমা বেগম রবিন কে দেখে হাসিমুখে এগিয়ে আসেন।
ঝুমা বেগম– কিছু লাগবে বাবা??
নিশুয়া তখন রান্নাঘরে মাকে হেল্প করছিলো।ঝুমা বেগমের কথায় নিশুয়া ও পিছনে ফিরে।রবিন আমতা আমতা করে বললো– আন্টি ওয়াশরুমটা!!
ঝুমা বেগম নিশুয়ার দিকে তাকিয়ে– ওকে উপরের ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিয়ে আয় তো।
নিশুয়া মায়ের কথায় সম্মতি জানিয়ে রবিনকে নিয়ে উপরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে থাকে।
রবিন পিছন থেকে– ঐ শালি! তোমার বোন কই?একবার ও দেখলাম না যে।
নিশুয়া– ইসসিরে!! আপুকে তো ডাকাই হয়নি।
রবিন ভ্রু কুঁচকে– মানে????
নিশুয়া রবিনের দিকে তাকিয়ে– মানে তোমার বউ এখনো জানেই না যে তার বাসায় আবার বিয়ে হতে যাচ্ছে।
রবিন– বল কী????
নিশুয়া অসহায় মুখ করে– হুম।
রবিন– তোমার আপু কি রুমেই আছে??
নিশুয়া– আজ সারাদিন রুমেই আছে।দরজা ভিতর থেকে বন্ধ।
রবিন– এ মা কি বল!আমি কাজী নিয়ে বসে আছি আর তোমার বোন এখন অবধি দরজা বন্ধ করে ঘরে বসে আছে।
নিশুয়া– আম্মু আমাকে ডাকতে বলেছিলো,আমি তো ভুলে বসে আছি।
রবিন– আচ্ছা এই মহান দায়িত্ব তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও।
নিশুয়া– আপু রাজি হবে তো?তাছাড়া তুমি কিভাবে ওর ঘরে ঢুকবে?দরজা তো ভিতর থেকে লক।
রবিন– Extra চাবি নেই??
নিশুয়া– বাবার রুমে দেখতে হবে।
রবিন– জলদি যাও,আমি অপেক্ষা করছি।
নিশুয়া তারেক সাহেবের ঘরে গিয়ে অনেক খোঁজে চাবি নিয়ে এল।
নিশুয়া হাঁপাতে হাঁপাতে– এই নাও,পেয়েছি।
রবিন চাবিটা হাতে নিয়ে– ওকে… এবার তুমি আসতে পারো শালিসাহেবা।
নিশুয়া হা করে তাকিয়ে আছে। তারপর রবিনের দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বললো– এখন আমাকে আর দরকার নেই বলে এভাবে তাড়িয়ে দিচ্ছো??
রবিন– আহা!রাগ করছো কেন?এখন তুমি যদি আমার সাথে থাকো,আন্টি তোমার খোঁজে এখানে চলে আসবে।আর আমার বউকে রাজি করানো মুশকিল হয়ে যাবে।
নিশুয়া নিচে যেতে যেতে– হয়েছে, আর বাহানা দেখাতে হবে না।
রবিন– Love u শালিকা??
নিশুয়া– গোষ্ঠী কিলাই এমন দুলাভাইয়ের।??
রবিন নিঃশব্দে ইসুয়ার রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো।উপুর হয়ে শুয়ে আছে ইসুয়া।চোখ মুখ ফুলে বার্গার হয়ে আছে। ফর্সা গাল গুলো লাল হয়ে আছে স্পষ্ট। ইসুয়া গভীর ঘুমে বিভোর।
রবিন ইসুয়ার মাথার কাছে বসলো। ইসুয়ার মুখপানে চেয়ে রইলো অপলক।তারপর ইসুয়ার মাথায় হাত রাখে।চুলে বিলি কেটে দেয়। ইসুয়া ঘুমের মাঝে যেন আরাম পাচ্ছে,,, এপাশ থেকে ওপাশে ফিরে আবার ঘুমিয়ে গেল।
রবিন ইসুয়ার কানের কাছে ঠোঁট লাগিয়ে বললো– Miss. অধ্যাপিকা!!
ইসুয়া ঘুমের মাঝেই জবাব দিলো– আপনি আমাকে ঘুমেও শান্তি দিবেন না?না?
রবিন– না। এইবার থেকে 24 hours অশান্তিতে জ্বলবেন আপনি,একবার খালি আমার বাড়িতে চলুন।
ইসুয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেল, হুট করে উঠে বসে।সামনে রবিনকে দেখে ভড়কে যায় সে।সকালের ঘটনা মনে পড়তেই চেঁচিয়ে উঠে।
ইসুয়া– এখানে কী চাই?আমার রুমে কি করছেন আপনি?কিভাবে ঢুকেছেন???
রবিন ইসুয়ার মুখ চেপে ধরে– আরে আস্তে আস্তে!তুমি কি আমাকে প্রথম দিনেই শ্বশুরবাড়িতে লজ্জায় ফেলবে না কি??
ইসুয়া রবিনের হাতের তালুতে কামড় বসিয়ে দিল। রবিন ব্যথা পেয়ে হাত সরিয়ে নেয়। ইসুয়া রেগে উঠে দাঁড়ায়।
রবিন ইসুয়া যেখানটায় কামড় দিয়েছিলো সেখানে চুমু খায়।তারপর ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে বলে — কবুল পড়ার আগেই love bite দিলে!!??
ইসুয়া হা করে দাঁত দেখিয়ে — আসুন আরেকটা দেই।
রবিন হেসে বললো — Miss. অধ্যাপিকা কে এখন পিচ্চি পিচ্চি মনে হচ্ছে।
ইসুয়া– ওপপপ! বিরক্তিকর??
রবিন– সবে তো শুরু হল ম্যাম।
ইসুয়া– এই বের হন তো আমার রুম থেকে। আপনাকে আমার আর সহ্য হচ্ছে না।
রবিন– বের তো হবোই।শত হোক বউ নিয়ে প্রথম রাত তো আর শ্বশুরবাড়িতে থাকা যায় না। একটা কাজ করো তো,জলদি রেডি হয়ে নাও।
ইসুয়া– রেডি হবো মানে??
রবিন– নিচে কাজী সাহেব অপেক্ষা করছে।জলদি তৈরি হয়ে এসে কবুল টা পড়ে নাও।
ইসুয়া– কী??
রবিন– কেন??কি বলেছি শোনোনি??
ইসুয়া– বুঝলাম না।
রবিন– আমাদের দুই family আমাদের রেজিস্ট্রি মেনে নিয়েছে,এখন শুধু আমার আর তোমার কবুল বলে বাসর করার পালা।
ইসুয়া– ফালতু কথা কম বলুন।কিসের কাজী কিসের বিয়ে?????
রবিন– সিনক্রিয়েট করো না ইসুয়া।
ইসুয়া– সকাল থেকে সহ্য করছি সব,তাই বলে ভাববেন না আপনি যা বলবেন তাই হবে!!
রবিন– হ্যাঁ সেটাই হবে।
ইসুয়া– না হবে না, আমার লাইফ আমার মর্জি।
রবিন ইসুয়ার কথায় ক্ষেপে যায়। রেগে ইসুয়ার হাত চেপে ধরে– আমাকে রাগিও না ইসুয়া। অনেক ভালবাসি। হারাতে পারবো না তোমাকে।
ইসুয়া– ভালবাসার মানুষকে ঠকানো যায় না। আপনি তো আমাকে ঠকিয়েছেন।
রবিন এইবার হাত মুড়িয়ে পিছনে চেপে ধরে– এই মেয়ে ভালো করে বলছি যে বুঝতে পারছো না?নাকি বুঝতে চাইছো না???
ইসুয়া ব্যথায় কঁকিয়ে উঠে– আহ্…. ব্যথা পাচ্ছি আমি।
রবিন– আমার খারাপ রূপটা বের করে এনো না। জলদি তৈরি হয়ে নিচে এসো।
ইসুয়া রবিনকে স্বজোড়ে ধাক্কা মারে– মগের মুল্লুক নাকি?যা বলবেন তা করতে হবে?
রবিন– বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু ইসুয়া।??
ইসুয়া– আপনি তো লিমিট ছাড়িয়ে গেছেন।
রবিন রেগে যায় প্রচন্ড। না, এভাবে বুঝালে হবে না। অন্য টেকনিক use করতে হবে।হঠাৎ রবিনের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।
রবিন এগিয়ে গিয়ে দরজা লক করে।তারপর ইসুয়ার দিকে একপা একপা এগোতে থাকে। ইসুয়া রবিনের আচরণে শুকনো ঢোগ গিললো।
ইসুয়া– কি কি কি করছেন??
রবিন মুচকি হেসে– আপনি যখন আমার সাথে কবুল পড়ে আমার বাড়িতে যেতে চাচ্ছেন না,তাহলে আমাকে বাসরঘর টা এখানেই সেরে ফেলতে হচ্ছে।
ইসুয়া– ছিঃছিঃ!!??
রবিন– কি ছিঃ? আপনার কি মনে হয় আমি কাপুরুষ?বিয়ের দিন ই বউকে ছেড়ে বাড়িতে গিয়ে কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়বো???
ইসুয়া– কি বলছেন এসব??
রবিন বুঝতে পারছে ইসুয়া গলতে শুরু করেছে। তাই টেকনিক টাকে সে আরো ভালো ভাবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিলো।রবিন তার পাঞ্জাবির উপরের দুটো বোতাম খুলতে লাগলো।
ইসুয়া– দেখুন………..??
রবিন– দেখাও,দেখতেই তো চাচ্ছি।আমি তো রেডিই…
ইসুয়া– ইস!!কি বাজে কথাবার্তা!!
রবিন– আজ সকাল থেকে তুমি ই একমাত্র ব্যক্তি যার কাছে আমি পৃথিবীর সবচাইতে বাজে কথাবার্তা use করতে পারি।??
ইসুয়া– আমি বলতে চাচ্ছি……
রবিন– আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না, আমার এখন কিছু শোনার টাইম নেই। এখন আমি আমার বউকে আদর করবো। ??
ইসুয়ার চোখ দুটো কোটর থেকে বেরিয়ে আসছে।রবিন কি সত্যিই কিছু করে বসবে নাকি??ভয়ে কলিজার পানি শুকিয়ে গেল ইসুয়ার। রবিনও ইসুয়ার ভয়টাকে বাড়িয়ে দিতে সামনে এগোতে থাকে।
ইসুয়া– Stop it…..???
রবিন— কি ??
ইসুয়া– আপনি কি চান বলুন,সেটাই হবে।
রবিন–এইতো আমার ভালো বউ।শোন,পাঁচ মিনিটের মধ্যে একটা সুতি শাড়ি পড়ে নিচে চলে আসো।আমরা অপেক্ষা করছি।
ইসুয়া– আমাকে রেহাই দিন।আমার ভালো লাগছে না এসব।
রবিন– আচ্ছা, তোমার শাড়ি পড়তে ভালো লাগছে না তো?আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।কোনো ব্যাপার না।
ইসুয়া রবিনের দিকে তাকিয়ে– কেন এমন করছেন?
রবিন– ভালবাসি তাই।যা বলছি তা কর।আর হ্যাঁ, আঙ্কেল আন্টির সামনে বিয়ে নিয়ে কোনো ধরনের অশান্তি করো না। তাদের সামনে দ্বিমত পোষণ করো না ভুলে ও।তারা যাতে মনে করে তুমি ও বিয়ে টা মেনে নিয়েছো।মনে থাকবে??
ইসুয়া– হুম???
রবিন ইসুয়া কে তৈরি হতে বলে ড্রয়িং রুমে চলে আসে।
ইসুয়া হালকা পিংক কালারের একটা শাড়ি পড়ে রবিনের কথামতো নিচে নেমে আসে। ঝুমা বেগম ও মেয়েকে কিছুক্ষণ বুঝিয়ে শান্তনা দেন।তারেক সাহেব যথাসাধ্য চেষ্টা করেন মেয়েকে বোঝাতে।
তারপর হালকা খাওয়া দাওয়া সেরে কাজী সাহেব ইসুয়া আর রবিনের বিয়ে পড়ান।খুব সুন্দর ভাবে ইসুয়া আর রবিনের বিয়ে সম্পন্ন হয়। তারপর রবিনদের বাড়ি ফেরার পর্ব এলো।
নিশুয়া আর মাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদলো ইসুয়া। আজ বাড়িটা সত্যিই ফাঁকা ফাঁকা লাগবে নিশুয়ার কাছে।ইসুয়ার বুকটাও ফেটে যাচ্ছে কষ্টে।কিন্তু কিছুই করার নেই।বিয়ের পর বাবার বাড়িতে ঠাঁই হয় না কোনো মেয়েরই।
আফজাল সাহেব অনেক বুঝিয়ে ইসুয়া কে নিয়ে বাড়ির পথে রওয়ানা দিলেন।
——————————————————
শাহেদ আর রিদীমা ডাইনিং টেবিলে মুখোমুখি দুই চেয়ারে বসে আছে।কি দিয়ে কথা শুরু করবে কেউ ই বুঝতে পারছে না।
রিদীমা– এভাবে এখানে নিয়ে আসার মানে কী?
শাহেদ– আমাদের সাথে কিছুটা time স্পেন্ড করুন।
রিদীমা– ???
শাহেদ– আর তাছাড়া আমার জানা মতে এ সময়টা আপনার কাজের সময়ের মধ্যে পড়ে না।
রিদীমা– আমার ব্যাপারে খোঁজ ও রাখেন দেখছি।
শাহেদ– গোয়েন্দা বিভাগের head বলে কথা।
রিদীমা– বুঝলাম না।
শাহেদ– বুঝিয়ে বলার জন্যই আজ এখানে নিয়ে আসা।
রিদীমা– কি বলবেন?একটু জলদি বলুন। আমার বাড়িতে খুব important কাজ আছে।সময় মতো পৌঁছাতে হবে।
শাহেদ– আমার জন্য আগের মত আলাদা করে এখন আর সময় রাখা হয় না বুঝি।
রিদীমা– না। রিদীমা তে অনেক change এসেছে।
শাহেদ– হুম জানি। এই রিদীমা কে ভাঙা ও যায় না, মচকানো ও যায় না।
রিদীমা– কাজের কথা বলুন।??
শাহেদ– অনেক সময় নিয়ে বলতে হবে।আমি কি আপনার জীবনের একটা দিন ধার নিতে পারি??
রিদীমা– একটা দিন?? long time ……
শাহেদ– জানি আপনি ব্যস্ত লোক।??
রিদীমা উঠতে উঠতে– এখন আমাকে বেরোতে হবে, ফিরতে ফিরতে দেরি হয়ে যাবে।আপনাকে আমি জানিয়ে দিব ফোনে কখন দেখা করা সম্ভব।
শাহেদ– আরেকটু বসুন।শিলা আপনার জন্য কফি করতে গেছে।
রিদীমা– অন্য একদিন সব হবে। কথাও,কফিও।?
রিদীমা তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে আসলো শাহেদের বাড়ির ভিতর থেকে। এতক্ষণ যেন শ্বাস টা আটকে রেখেছিলো সে।এই একটামাত্র ব্যক্তি, চাইলেই রিদীমাকে ভিতর থেকে পুরো নাড়িয়ে দিতে পারে।তাই রিদীমা এখনই এত সহজে গলে যেতে চায় না। আজকের এই রিদীমাকে তৈরি করতে তার অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।
…………………………………………………
চৌধুরী বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে আছে ইসুয়া। রবিন, শুভ আর নয়ন বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে হাসি ঠাট্টা করছিলো।ইসুয়াকে দরজায় দাঁড় করিয়ে গেছেন আফজাল সাহেব। নতুন বউ বলে কথা।হালকা মিষ্টি মুখ করা ছাড়া কী আর গৃহপ্রবেশ করানো যায়!!
ইসুয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খুব bore হচ্ছিলো।তার ঠিক কয়েক হাত পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিলো রবিন শুভ আর নয়ন।
শুভ — হ্যাঁ রে দোস্ত!এখন ওনাকে কি বলে সম্বোধন করবো আমরা????
নয়ন — তাই তো!!
রবিন– সিম্পল, বাড়িতে ভাবী….. ভার্সিটিতে ম্যাম।
শুভ — ভার্সিটির চাকুরি টা করবে নাকি ??
রবিন– ইসুয়া চাইলেই করতে পারে। এভাবেই অনেক জোর জবরদস্তি করে ফেলেছি,ওর ইচ্ছের বাইরে আর কিছু করবো না রে।
নয়ন — এই সিদ্ধান্ত টা তুই ঠিক নিয়েছিস দোস্ত। মেয়েটা অনেক সহ্য করেছে।
শুভ — ওনাকে কয়টা দিন সময় দে নিজেকে সামলাতে।
রবিন– তা তো দিতেই হবে। না জানি কেমন ফিল করছে।সকাল থেকে যা যাচ্ছে ওর উপর দিয়ে।
আফজাল সাহেব বাড়িতে ঢুকে সবাইকে নিচে ডাকলেন।তারপর ইসুয়ার আর রবিনের বিয়ের কথা জানান।
রবিন ইসুয়ার বিয়ের সংবাদে বাড়ির সকলেই অবাকের সাথে সাথে খুশি ও হলেন।খুশি হতে পারলেন না কেবল দেলোয়ার খান আর মমতা চৌধুরী। সিনথিয়ার মাথায় বাজ পড়লো। মামার কাছে রবিনের আর ইসুয়ার বিয়ের কথা শুনে বদমেজাজি রূপটা তার বেরিয়ে এল।
আফজাল সাহেব তার মায়ের দিকে তাকিয়ে– দেখ মা!না জেনে হুট করেই আজ সকালে খাবার টেবিলে তুমি একটা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলে।কিন্তু এখন যা হবার রবিনের ইচ্ছেতেই হয়েছে।এখানে ইসুয়া মামণির কোনো দোষ নেই …. ওকে কোনো ধরনের হেনস্থা করো না।
মমতা চৌধুরী চিৎকার করে উঠলেন– আফজাল
দেলোয়ার খান– ভাইজান, এমনটা করার আগে আমার মেয়েটার কথা একবার ভাবলেন না??
আফজাল সাহেব– দেখ দেলোয়ার আমি জানতাম না কিছু। পরে জেনেছি।
দেলোয়ার খান– ধরলাম আপনি কিছু জানতেন না।জানার পর বিষয়টাকে কি ধামাচাপা দেওয়া যেত না??
আফজাল সাহেব– মানে????
দেলোয়ার খান– যেভাবে ওরা না জানিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে,সেভাবেই আমরা ওদের ডিভোর্স টা করিয়ে নিতাম।কাজী ডেকে বিয়ে পড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে আসার কি কোনো দরকার ছিলো??
আফজাল সাহেব– মুখ সামলে কথা বল দেলোয়ার। আমার ছেলে…….
আফজাল সাহেব আর কিছু বলতে পারলো না। মমতা চৌধুরী রেগে বলে উঠলেন– এই বিয়ে আমি মানি না।
দিতী বেগম দৌড়ে আসেন শ্বাশুরীর কাছে — মা,বিয়েটা যখন হয়ে গেছে…….
মমতা চৌধুরী– বউমা তুমি চুপ করো।??
এবার এগিয়ে এলেন সুরাইয়া খান — আর কত!আর কত মন ভাঙবে মা??এবার তো নিজের সিদ্ধান্ত অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়া থেকে থাম,বয়স তো কম হলো না।
মমতা চৌধুরী– তুমি আমাকে জ্ঞান দিচ্ছো??
দেলোয়ার খান তার স্ত্রীর দিকে তেড়ে আসেন– ঘরে যাও,মায়ের উপর একটা কথাও শুনতে চাই না আমি।
সিনথিয়া ন্যাকা কান্না শুরু করে দিলো।এগিয়ে গেল মমতা চৌধুরীর দিকে,,,”নানু!এবার আমার কী হবে?রবিন কেন এমন করলো আমার সাথে?”??
মমতা চৌধুরী সিনথিয়ার মাথায় হাত রেখে বললেন– “কাঁদে না নানুভাই কিচ্ছু হয়নি।এইতো এখনি আমি সব ঠিক করে দিচ্ছি।”
মমতা চৌধুরীর কথায় বাপ বেটি যেন আশ্বাস ফেলেন।দেলোয়ার খান আর সিনথিয়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোরা হাঁসি দিলেন।
মমতা চৌধুরী এগিয়ে গেলেন আফজাল সাহেবের দিকে।
মমতা চৌধুরী– এই মেয়েকে বউ হিসেবে আমি মানি না। ওকে যেখান থেকে এনেছো সেখানে রেখে আসো।
এতক্ষণে মুখ খুললো সিনথিয়ার ভাই আকাশ। মমতা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে– নানু!!এটা কোনো মালপত্র নয়।একটা মানুষের জীবন নিয়ে আমাদের এভাবে খেলা করার কোনো অধিকার নেই। ??
দেলোয়ার খান ধমকে ছেলেকে চুপ করিয়ে দিলেন।দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ইসুয়ার কানে সবকিছু গেলেও, বাড়ির এই কথা কাটাকাটির পর্ব রবিনদের কানে এখনো পৌঁছায়নি।লজ্জায় ইসুয়া সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না।
আজকের দিনটা ইসুয়ার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন।সকাল থেকে কি সব ঘটে যাচ্ছে তার সাথে। এর উপর সারাদিন কিছু খায়নি বিদায় শরীর কাঁপছে। আর নিতে পারছিল না ইসুয়া। তারপরও দাঁড়িয়ে আছে লোকলজ্জায়।
ইসুয়া মনে মনে ভাবে,তার কি ভুল ছিলো?সে তো বিয়েটা করতে চায় নি।তাদের বাড়ির ছেলেই তো জোর করে তাকে ঠকিয়ে বিয়ে করেছে।অথচ এতগুলো কথা তাকে শুনতে হচ্ছে। ইসুয়ার মাথা ভন ভন করে ঘুরছে।কিন্তু বাইরে থেকে ইসুয়া কে দেখলে কেউ বলবে না এই মেয়ের শরীরটা ভালো নেই।
আফজাল সাহেব জোর দিয়ে কিছু বলতেও পারছেন না।মনে মনে তিনি রিদীমার অভাব ভোগ করছেন।মেয়েটা এখনো আসছে না কেন??
মমতা চৌধুরী দরজায় এগিয়ে যান — এই মেয়ে বের হও বাড়ি থেকে।??
ইসুয়া– আমি আসলে আমি……….
ইসুয়া আমতা আমতা করতে থাকে।নানির আশ্বাসে এবার যেন সিনথিয়ার ও সাহস বাড়লো।তেড়ে আসে ইসুয়ার দিকে– তোকে নানু বের হতে বললো না?কানে যায় নি?স্টুপিড একটা।??
অন্য কোনো দিন হলে চুপ থাকতো না ইসুয়া,কিন্তু আজ কিছু বলা ঠিক হবে না তার।এমনিতেই অনেক ধৈর্য্যশীল এই মেয়ে। আজ ই প্রথম দিন এই বাড়িতে। আজকে কোনো প্রতিবাদ করা ঠিক বলে মনে হচ্ছে না তার।
সিনথিয়া আবারো রেগে — তুই কি নিজ থেকে বের হবে?নাকি চুলের মুঠি ধরে বের করবো??
ইসুয়া হা করে তাকিয়ে আছে। জীবনে কেউ ওর সাথে এমন আচরণ করেনি।কাউকে নিজের সাথে খারাপ আচরণ করার সুযোগ দেয় নি সে।
আফজাল সাহেব সিনথিয়াকে ধমকে উঠলেন — সিনথিয়া!!কি করছো তুমি????
সিনথিয়া ইসুয়ার দিকে তাকিয়েই মামার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন– মামু তুমি এসব ছোটলোকদের চিনো না, ওদের কি করে সোজা করতে হয় তা আমার ভালো করেই জানা আছে।
কথাটা বলেই সিনথিয়া ইসুয়াকে যেই একটা চড় মারতে যাবে তখনই সামনে থেকে কেউ ওর হাত ধরে ফেললো।ইসুয়ার সারা শরীর কাঁপছে।আর নিতে পারছে না এত অপমান। শেষ রক্ষা হলো না, ঢলে পড়লো পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রিদীমার উপর।
রিদীমা এখনো এক হাতে শক্ত করে সিনথিয়ার হাতের কব্জিটা ধরে আছে।ইসুয়া তার গায়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্য হাত দিয়ে তাকে ধরে ফেললো। ঠিক পিছনে চোখ লাল করে দাঁড়িয়ে আছে রবিন।তার চোখের আগুনে যেন ঝলসে যাবে পুরো চৌধুরী বাড়ি।
রিদীমা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে– ওকে উপরে নিয়ে যা, ওর বিশ্রামের দরকার।??
রবিন সিনথিয়ার দিকে এগোতে যাবে তখনই আবার বলে উঠলো রিদীমা — এদিকটা আমি সামলে নিচ্ছি তো!তুই ইসুয়া কে দেখ।উপরে নিয়ে শুইয়ে দে।
রবিন তার লাল চোখ দুটো দিয়ে যেন সিনথিয়াকে ওয়ার্নিং দিলো।বেচারি সিনথিয়া রিদীমা আর রবিন দুই বাঘের মুখে পড়ে,তার অবস্থা এখন হিরো আলমের প্রথম স্ত্রী!!??
রবিন ইসুয়াকে কোলে তুলে নিলো।দোতলায় নিজের রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো তার senior life partner নিয়ে। আজকে থেকে তাদের নতুন জীবন শুরু হতে চলছে।
রবিন আর ইসুয়া যাওয়ার পর রিদীমা সিনথিয়ার দিকে তাকালো — এবার বল!কি বলছিলি এতক্ষণ????
সিনথিয়ার হাত এত শক্ত করে ধরে আছে রিদীমা,যেন হাতের হাড় ভেঙে পায়েস হওয়ার অবস্থা। রিদীমা হেচকা মেরে হাতটা ফেলে দিলো — হাত সামলে রাখবি এরপর থেকে, নয়তো হাতের জায়গায় আর হাত থাকবে না।ভেঙে গুঁড়ো করে দিব।??
দেলোয়ার খান এগিয়ে এসে মেয়েকে ধরলেন। মমতা চৌধুরী রিদীমার উদ্দেশ্যে বললেন– এটা তুমি কি করলে??
রিদীমা তখন ও সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো।দাদীকে উদ্দেশ্য করে বললো– আপনার সাথে আমি পরে কথা বলছি।আগে আমাকে এই চাপ্টার টা শেষ করতে দিন।
রিদীমা এগিয়ে যায় দেলোয়ার খান আর সিনথিয়ার দিকে।রিদীমা– তারপর কি যেন বলছিলি??ইসুয়া ছোটলোক??কি তাই তো??
দেলোয়ার খান– দেখ রিদীমা মামণি,তুমি কিছু জানো না। তাই এভাবে আমার মেয়েকে ভুল বুঝছো।
সিনথিয়া ভয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে রিদীমার দিকে।
রিদীমা– ফুফা সাহেব আমি এর শুরু থেকে শেষ অবধি সবটা জানি।আপাতত আমাকে আপনার এই গুণধর মেয়ের সাথে কথা বলতে দিয়ে আপনি চুপ থাকলে খুশি হব।নয়তো,তীর অন্য দিকে ঘুরাতে সময় লাগবে না আমার।??
রিদীমার কথায় সন্দেহের গন্ধ পেলেন দেলোয়ার খান। চুপ হয়ে গেলেন তিনিও।রিদীমা আবারো ফোকাস করলো সিনথিয়ার দিকে– তুই ইসুয়াকে ছোটলোক বলছিলি!না??আসল ছোটলোক তো তোরা।
সিনথিয়া নীরবে চোখের জল ফেলছে– আপু!!
রিদীমা– ইসুয়া মেয়েটা তো তাও নিজের বাড়ি থেকে এসেছে। তোদের বাপ বেটির তো সেটাও নেই।তো এখানে ছোটলোক কে হল বলবি??
কথাগুলো দেলোয়ার খান আর সিনথিয়ার গায়ে বিধলে ও…..সুরাইয়া খান আর আকাশের গায়ে লাগছে না।তারা ভালো করেই জানে রিদীমা যে যেমন,তার সাথে ঠিক তেমন আচরণ ই করে।
রিদীমা– Next time আমার ভাইয়ের বউয়ের সাথে এমন দুর্ব্যবহার করার মত দুঃসাহস দেখাবি না একদম।
মমতা চৌধুরী– আমি এই বিয়ে মানি না।??
রিদীমা– বিয়ে হয়েছে ইসুয়া আর রবিনের। ওরা দুজন মানলেই হল।আমি আর আপনি মানার কে??
মমতা চৌধুরী– আগের মতোই বেপরোয়া রয়ে গেলে তুমি!!??
রিদীমা– এই বংশের রক্ত শরীরে বইছে বলে কথা।পূর্ব পুরুষদের রক্তে এমন তেজ ই ছিলো।??
মমতা চৌধুরী জানে এই মেয়ের সঙ্গে আর যাই হোক তার পেরে ওঠার সাধ্য নেই।তাই তিনি স্থান ত্যাগ করলেন।সবাই সবার কাজে গেল।
সুরাইয়া খান আর দিতী চৌধুরী রান্নাঘরে আজ বিশাল আয়োজন রেখেছেন।সেই কাজ সামলাতে ব্যস্ত তারা।রিদীমা আর আফজাল সাহেব কিছু নিয়ে Discuss করতে বসেছে।দেলোয়ার খান এবং সিনথিয়ার প্ল্যান বেসতে যাচ্ছে একের পর এক।সে চিন্তায় তাদের রাতের ঘুম হারাম।
_______________________(চলবে)