#Senior_life_partner
পর্ব—-26
Afrin Ayoni
ইসুয়া সেই সকাল এগারোটায় এসে ঘরের দরজায় খিল দিয়েছে।এখন বাজছে বিকেল চারটা। দরজা খোলার কোনো নাম গন্ধ নেই। তার বাবা মা মেয়েকে নিয়ে চিন্তায় অস্থির হয়ে আছেন। সকালে তো সবকিছুই ঠিকঠাক ছিলো।এই হালকা কিছু সময়ের মধ্যে এমন কি হল যে মেয়ে বাড়িতে এসেই নিজেকে এমন ঘরবন্দি করে রেখেছে।
ইসুয়ার ঘরের দরজার সামনে সমানে পায়চারি করে চলছেন তারেক সাহেব। ঝুমা বেগম বারবার হাতের কাজ ফেলে মেয়ে দরজা খুলেছে কিনা খোঁজ নিতে আসছেন।একমাত্র নিশুয়ার ই কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।কারণ রবিনের কাছে ফোন করে সবটা জেনে নিয়েছে সে।
তাছাড়া সামনে এক্সাম।কত পড়া বাকি!!তাই নিজের ঘরে বসে পড়া তৈরি করছিলো নিশুয়া।
ইসুয়া বেডের উপর বসে সকালে রবিনের দেওয়া সেই কালো শাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে।কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ বনরুটির মত ফুলিয়ে ফেলেছে বেচারি।এভাবে জীবনের এত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে কেউ এমন প্রতারণা করবে কখনো ভাবতে পারে নি সে।
ইসুয়া নিজে নিজে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো — “আমি আপনার প্রতি একটু কোমল হতেই এতবড় একটা ভুল আমার সাথে আপনি করে ফেললেন Mr.রবিন।অনেক পস্তাতে হবে এজন্য আপনাকে।কখনোই ক্ষমা নেই আপনার।”
তারেক সাহেব এইবার অধৈর্য্য হয়ে মেয়ের ঘরের দরজায় নক করে বসলেন।
তারেক সাহেব– ইসুয়া মামণি!কি হয়েছে বলবে তো আমাদের।এভাবে নিজেকে ঘরবন্দি করে রাখার কি কোনো কারণ আছে??
ইসুয়া বাবার কথার কোনো জবাব দিলো না। সে ফোঁপাতে ফোঁপাতে কাঁদতেই ব্যস্ত।
————————————-
রিদীমার অফিসে তখন তাণ্ডব চলছিলো।আজ সারাদিনে সে শুধু কোম্পানির বড় বড় বাজেটের ফাইল গুলো দেখছিলো।কিন্তু একটা ফাইলের হিসাব ও ঠিকঠাক মতো নেই।সবকিছুতেই গড়মিল করে হিসাব মিলিয়ে স্টোররুমে রেখে দেওয়া হয়েছে।
এই নিয়ে সারা অফিসের কর্মচারীদের অফিসের হলরুমে একসঙ্গে জড়ো করে ভয়াবহ মিটিং বসিয়েছে সে।সকল কর্মচারী সামনের এই তুফানময়ী lady boss কে দেখে খানিকটা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে।
রিদীমা– আপনাদের এখানে কাজ করতে রাখা হয়েছে, অফিসে এসে নিশ্চয়ই আপনাদের math exam নেওয়া হয় না যে এভাবে হিসাবের খাতার শেষে গিয়ে কোন রকম ভাবে ফলাফল মিলিয়ে দিবেন।
ম্যানেজার– আসলে ম্যাডাম ….
রিদীমা ধমকে উঠলো– আপনি থামুন,কোনো কৈফিয়ত চাই না আমি কারো কাছ থেকে। এই ফাইল গুলো তে যত গড়মিল আছে সব ঠিকঠাক মত আমাকে কাল বুঝিয়ে দিবেন।নয়তো কোম্পানির পক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সবাই রীতিমতো ভয় পেয়ে গেল।এরকম কঠোরতা আফজাল সাহেব ও কখনো দেখাননি।এই একদিনে যতটা হেনস্থা হতে হচ্ছে রিদীমার কাছে।
রিদীমা আবারো বলতে লাগলো — একদিন…. just একদিনের মাঝে সব ঠিক ভাবে আমাকে বুঝিয়ে দিতে না পারলে অফিসের যতটা লস হয়েছে আপনাদেরকে তার দ্বিগুণ জরিমানা চুকাতে হবে।
হল রুমে এই রকম 100ডিগ্রি সেলসিয়াস মেজাজের মধ্যে হঠাৎ হলরুমের দরজায় আওয়াজ হল।দারোয়ান আবুল চাচা রিদীমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”ম্যাডাম ছোট সাহেব আইছে।”
রিদীমা– বসতে বলুন চাচা।আমি এখন ব্যস্ত।
আবুল — ভীষণ জরুরী কিছু হয়তো।
রিদীমা হলরুমে থাকা সিসি টিভি ফুটেজের মনিটরে চোখ রাখতেই রবিনকে বসে থাকতে দেখে।হাতে ব্যান্ডেজ। আর যাই হোক,একদিনে অফিসের সবকিছু ঠিক করা possible নয়।আর রবিনের বিষয়টা নিশ্চয়ই গুরুতর। তাই সে অফিসের স্টাফদের আরো কিছু কথা শুনিয়ে দিয়ে মিটিং শেষ করে হলরুম থেকে বেরিয়ে যায়।
রিদীমা নিজের চেম্বারের বাইরে রবিনকে বসে থাকতে দেখে তাকে ইশারা দিয়ে ভিতরে আসতে বলে।রবিন বড় বোনের পিছন পিছন ঢুকে।
রিদীমা– বস।
রবিন রিদীমার সামনের চেয়ারটায় বসে পড়ে। কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর রবিন বলে উঠলো — আপুনি!
রিদীমা– বল
রবিন– একটা ভুল করে ফেলেছি??
রিদীমা– কি করেছিস???
রবিন রিদীমা কে সবকিছু খুলে বললো।রিদীমা সবকিছু শুনে স্বাভাবিক ভাবেই বসে রইলো।
রবিন– কি করবো এবার তুমি বল?
রিদীমা– কাজটা কি তুই ঠিক করেছিস?
রবিন– আমি ইসুয়া কে হারাতে পারবো না আপুনি।
রিদীমা– Miss. অধ্যাপিকা থেকে ইসুয়া!!বাহ্…?
রবিন বিষন্ন মুখে– এখন সে আমার legally wife..
রিদীমা– তা ও তাকে ঠকিয়ে।এভাবে ঠকানোর কি দরকার ছিলো বলতো??
রবিন– তুমি কাল দাদীজানের কথা শুনোনি??
রিদীমা– শুনেছি তো।
রবিন– আমি সিনথিকে বিয়ে করতে পারবো না।
রিদীমা ভ্রু কুঁচকে– কেন??
রবিন– এত জেরা না করে বল এইবার কি করবো?হবু বউকে বাড়িতে আনার প্ল্যান দাও।
রিদীমা খানিকক্ষণ কিছু ভাবলো।তারপর রবিনের দিকে তাকিয়ে বললো — ড্যাডকে কল দে।বল যে immediately আমার সাথে দেখা করতে।
রবিন চোখ বড় বড় করে– তুমি এখন ড্যাড কে বলবে নাকি এসব??
রিদীমা– অবশ্যই। বাড়িতে কেউ ই তোদের বিয়ের কথা জানে না। এখন যদি ইসুয়া কে জোর জবরদস্তি করে নিয়ে ও যাস বাড়িতে গিয়ে তুই কি বলবি?মা ধরো তোমার জন্য কাজের মেয়ে নিয়ে এসেছি??
রবিন অসহায় মুখ করে বললো– আপুনি…..??
রিদীমা– তুই ড্যাড কে কল দে ,আমি সবটা সামলে নিচ্ছি।
রিদীমার কথামতো রবিন আফজাল সাহেবকে কল দিয়ে জরুরী ভাবে অফিসে আসতে বলে।রিদীমা রবিনকে পাঠিয়ে দেয় অন্য কাজে।
আফজাল সাহেব অফিসে এসেই রিদীমার কেবিনে যায়।
আফজাল সাহেব– আসবো মামণি।
রিদীমা– আসো ড্যাড।
আফজাল সাহেব কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে– প্রথম দিনেই অফিসের পরিবেশ এতটা পাল্টে গেছে। বিশ্বাস ই হচ্ছে না।
রিদীমা– তুমি নিজের বিজনেস টা কে ও একটু সামলাতে পারলে না?? লজ্জা হওয়ার প্রয়োজন নয় কী?
আফজাল সাহেব– মেয়ে হয়ে বাবাকে এভাবে বলছিস?
রিদীমা– না অফিস,না বাড়ি,আর না ভার্সিটি কোনটাই তোমার সামলানো হয়নি।তো আর কিভাবে বলবো??
আফজাল সাহেব — তাই তো তোকে কতবার বলি দেশের বিজনেসে বস,বাইরের বিজনেস দিয়ে কি হবে??
রিদীমা– ফালতু কথা রাখ ড্যাড। যে কারণে তোমাকে ডাকা……
আফজাল সাহেব– হ্যাঁ বল।
রিদীমা রবিনের আর ইসুয়ার পুরো ঘটনা টা খুলে বললো আফজাল সাহেব কে।আফজাল সাহেব সবটুকু শুনে হা করে রইলো।
রিদীমা– এবার কি করা উচিত তুমি বল।
আফজাল সাহেব– হতচ্ছাড়া এত বড় একটা কাজ করে বসলো কাউকে কিছু না জানিয়ে????
রিদীমা– যা হওয়ার হয়েছে , এখন কি করবে বল?
আফজাল সাহেব– ইসুয়া মেয়ে হিসেবে খুব ভালো, তারেক কে আমি সামলে নিতে পারবো।এমনিতেই আমার বন্ধু আর বন্ধুর বউয়ের রবিনকে খুব পছন্দ আমার মনে হচ্ছে। কিন্তু ইসুয়া কে আর আমাদের বাড়ির লোকদের বিশেষ করে মাকে কে সামলাবে??Impossible…..??
রিদীমা– ইসুয়ার ব্যপার টা রবিনের হাতে ছেড়ে দাও।যে মেয়ে কে এভাবে বিয়ে করে নিয়েছে তোমার ছেলে, সেই ই তার বউকে বাড়িতে আনার ব্যবস্থা করবে।আর বাদ বাকি বাড়ির লোক & দাদীজান!!ঐটা আমি দেখে নিব।
আফজাল সাহেব– তবে এই কাজটা আমার বাদর মার্কা বজ্জাত ছেলে টা ভালোই করেছে।মনের মত একটা ছেলের বউ পেয়েছি।?
রিদীমা– আগে আঙ্কেল কে রাজি করাও তো!!
আফজাল সাহেব– এটা আমার বা হাতের খেল।
রিদীমা– ওকে এবার তুমি আসতে পারো ড্যাড। আমি সময় মত বাড়িতে পৌঁছে যাব।
আফজাল সাহেব দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন– আমার অফিস থেকে আমাকেই বের করে দিচ্ছে। কি ভাগ্য!!
অফিস থেকে বেরিয়ে আফজাল সাহেব তার প্রাণ প্রিয় বন্ধু তারেক সাহেবের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন।আর মনে মনে বন্ধু কে কি করে মানাবেন সেই ছক কষতে থাকেন।
—————————————————–
স্বাদ আর তার মা রেহানা বেগম এয়ারপোর্টে বসে আছে ফ্লাইটের উদ্দেশ্যে। হঠাৎ এক অপরিচিত কন্ঠে চমকে উঠে স্বাদ—–
অপরিচিতা — আরে Mr.স্বাদ আহসান না??
রেহানা বেগম ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।স্বাদ দাঁড়িয়ে বললো — জ্বি , আপনি??
অপরিচিতা — আমি আপনাকে চিনি।
স্বাদ– কিন্তু আমি তো আপনাকে কখনো দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না।
অপরিচিতা — দেশে ফিরছেন নাকি?
স্বাদ– জ্বি।
অপরিচিতা — আমি ও।আপনাদের সমস্যা না থাকলে জয়েন হতে পারি?স্বদেশী বলে কথা।??
রেহানা বেগম যেন এতক্ষণ নিজের দেশের কোনো যাত্রীকে খুঁজছিলেন।হামলে পড়লো মেয়েটির দিকে।কথার জুড়ি নিয়ে বসলো।
স্বাদ তার মায়ের বাচ্চামিতে বেজায় বিরক্ত। নির্দিষ্ট সময়ে ফ্লাইট ছাড়া হল।আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজ দেশে আর নিজের প্রিয় মানুষটার কাছে পৌঁছে যাবে স্বাদ।
……………………………………………………
রিদীমা ক্লান্ত হয়ে অফিসের বাইরে এসে দাঁড়ালো।আজ রিক্সায় চড়তে ইচ্ছে করছে খুব।এই যন্ত্রমানবীর জীবনে সে হাঁপিয়ে উঠেছে। আজ যদি একবার বৃষ্টি হত।কিন্তু এই উত্তপ্ত রোদের দিনে এটা আশা করা নিছক বোকামি সেটা রিদীমা খুব ভালো করেই জানে।এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ এই যান্ত্রিক রিদীমা ভার্সিটির চঞ্চল কিশোরী তে ফিরে গেল।
পায়ের হিল গুলো খুলে হাতে নিল।উঁচু করে বাঁধা চুল গুলো খুলে দিলো।হাঁটতে লাগলো এই শহরের ফুটপাত ধরে।পাঁচ মিনিট এভাবে হাঁটার পর হঠাৎ ই মুখোশ পড়া দুজন লোক রিদীমা কে পিছন থেকে আক্রমণ করে। মুখ চেপে ধরে। একটা কালো মাইক্রো বাসে উঠায় জোর করে।
রিদীমা বেশ খানিকক্ষণ জোরাজুরি করে শান্ত ভঙ্গিতে বসে রইলো।তারপর পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে টম & জেরি চালু করলো।আপাতত এই মুহূর্তে মোবাইলে কার্টুন দেখা ছাড়া কোনো কাজ করা যায় বলে রিদীমার মনে হচ্ছে না।
কিডন্যাপার রা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রিদীমার দিকে।একজন বলে উঠলো — এটাও সম্ভব।
রিদীমা মোবাইলেই মনোযোগ রেখে বললো — Why not? তুমি অনেকটা বড় হয়ে গেছো শিলা,কিন্তু তুমি হয়তো ভুলে গেছো বয়সে আমি তোমার থেকেও বড়।আর তাছাড়া ……
শাহেদ– তাছাড়া কী??
রিদীমা– আমি এতটাও বোকা হয়ে যাই নি যে, শার্ট প্যান্ট পড়লে body structure দেখলে বুঝবো না কোনটা মেয়ে আর কোনটা ছেলে!!
শিলা — আচ্ছা বুঝলাম তুমি আমার শারীরিক গঠন দেখে বুঝেছো আমি মেয়ে। কিন্তু আমার আর ভাইয়ার তো মুখে মুখোশ পড়া। কি করে বুঝলে আমি শিলা ?? এতদিনে নিশ্চয়ই কন্ঠস্বর মনে রাখার কথাও নয়।
রিদীমা– জানো শিলা ! কিছু কিছু জিনিস আমাদের কাছে খুব স্পেশাল হয়।যা চাইলেও ভোলা যায় না।এই ধরো আমাদের প্রিয় মানুষদের গায়ের স্মেইল।
শিলা হা করে তাকিয়ে আছে। শাহেদ যেন রিদীমার কথায় কিছু টা ইতস্তত বোধ করছিলো।তারপরও এতদিন পর এই মেয়েটাকে কাছে পেয়েছে সে,,,আর হারাতে দিবে না বলে ঠিক করলো।
শাহেদ হালকা কেশে বললো — যেমন??
রিদীমা এতক্ষণ ধরে মোবাইলেই নজর রেখেছিলো।শাহেদের কথায় এবার শাহেদের চোখে চোখ রাখলো।
রিদীমা– যেমন!!যেমন আমাদের মায়ের গায়ের গন্ধ।
শাহেদ বেশ ভালো করেই বুঝতে পারলো রিদীমা তাকে এড়িয়ে গেল।শাহেদ মাইক্রো বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো।কিন্তু মনের চোখ যেন কোণচোখে তার প্রিয় মানুষটাকেই দেখছে।
রিদীমা পুনরায় মোবাইল ফোনে নজর দিলো।শিলা রিদীমা কে বললো –“ভাইয়া ঠিকই বলেছিলো।”
রিদীমা আড়চোখে একবার শাহেদের দিকে তাকিয়ে আবার শিলার দিকে তাকালো– কি বলেছে তোমার ভাইয়া??
শিলা হাত নেড়ে নেড়ে অভিনয় করে — The great business lady রিদীমা চৌধুরী কোনো কিছুতেই অবাক হয় না।
রিদীমা মুচকি হেসে শাহেদের দিকে তাকায়। শাহেদ বোনের কথায় লজ্জা পেয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে নিজের মুখ লুকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে যেন।
শিলা আবার বললো — আসলেই আপু।স্বয়ং আজরাইল এসে যদি তোমাকে ডিনারের ইনভাইট করে যায় তাও তুমি অবাক হবে না।
রিদীমা শিলার এমন বোকা বোকা কথায় হালকা হেসে ফোনে নজর দেয়।
———————————————————-
বন্ধুর মুখে সবটা শুনে তারেক সাহেব আর ঝুমা বেগম ধপ করে বসে পড়লেন ড্রয়িং রুমের সোফায়। আফজাল সাহেব বন্ধুকে আস্বস্ত জানাতে বললেন– “দেখ যা হবার হয়ে গেছে, এখন তোরা প্লিজ বাঁধা দিস না। আমার বউমা কে আমার বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা কর।”
তারেক সাহেব হা করে শুনছেন বন্ধুর কথা।তার মুখে যেন কেউ কসটেপ মেরে দিয়েছে।সেদিক থেকে ঝুমা বেগম এগিয়ে। আফজাল সাহেবের দিকে তাকিয়ে ঝুমা বেগম বললেন– কি বলছেন ভাইজান?এত বড় একটা অঘটন।না জানি আমার মেয়ের মনের অবস্থা টা কেমন?আর আপনি বলছেন একথা। মাফ করবেন ভাইজান। আমি আপনার বন্ধুর মত একেবারেই নই।
আফজাল সাহেব অসহায় মুখ করে– ভাবীসাহেবা জানি ভুলটা আমার ছেলের।কিন্তু এখন ওরা কাগজে কলমে স্বামী স্ত্রী।
ঝুমা বেগম– সেটা আমার মেয়ে কে ঠকিয়ে, চিট করে।এই বিয়ে…..না আমার মেয়ে মানে আর না আমি।
তারেক সাহেব স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে– এক মিনিট ঝুমা।
অতঃপর আফজাল সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন– এখন তুই আমাকে কি করতে বলিস।
আফজাল সাহেব– কবুল পড়া না হলেও কাগজ কলম এখন সাক্ষী যে,,রবিন ইসুয়া husband wife… আমার ইসুয়া কে পুত্রবধূ মানতে কোনো আপত্তি নেই।তোরা চাইলে এই মুহূর্তে ঘরোয়া ভাবে কাজী ডেকে কবুল পড়াটা হয়ে যাক।
তারেক সাহেব– রেজিস্ট্রি হয়েছে আমাদের অজান্তে,এখন কবুল পড়বে ঘরোয়া উপায়ে। তারপর আমার মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে যাবি।দুই বাড়ির লোক ছাড়া ইসুয়া আর রবিনের বিয়ের কথা কেউ জানবে না!!
ঝুমা বেগম আবারো কিছু বলতে যাবে তারেক সাহেব তাকে থামিয়ে দিলেন।
তারেক সাহেব– তার দুদিন পর না হয় আমার মেয়ের মনের অবস্থা ঠিক হয়ে যাবে ধরে নিলাম।সবকিছু স্বাভাবিক হবে।কিন্তু যখন তোর বাড়ি থেকে আমার মেয়েটা বের হবে তখন সমাজের লোকদের কি বলবে?
আফজাল সাহেব– তোদের পরিবার রাজি হলেই ইসুয়া মামণি কে আমার বাড়িতে নিয়ে যাই আজ। আমার বাড়ির পরিবেশ শান্ত হলেই না হয় বরং ইসুয়ার জন্য রিসেপশন রাখবো।
ঝুমা বেগম তারেক সাহেবের দিকে তাকিয়ে– একটু ঘরে চল।তোমার সাথে আমার কথা আছে।
আফজাল সাহেব– ভাবীজানের ও নিজের মেয়ের জীবন নিয়ে মতামত জানানোর অধিকার আছে।তোরা না হয় সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাকে জানা।আমি এখানেই ততক্ষণ অবধি অপেক্ষা করছি।
তারেক সাহেব আর ঝুমা বেগম পাশের ঘরে গিয়ে অনেক কথা কাটাকাটি করে অবশেষে ইসুয়ার আর রবিনের রেজিস্ট্রি না চাইতেও মেনে নিলেন।রবিন নিঃসন্দেহে ভালো ছেলে। মেয়ে দিতে আপত্তি থাকার কথা নয় কোনো বাবা মায়ের। কিন্তু এভাবে মেয়ের অনিচ্ছাতে বিয়ে টা তারা প্রথমে মেনে নিতে পারেননি।
অনেকক্ষণ স্বামী স্ত্রী যুক্তি পরামর্শ করার পর ড্রয়িং রুমে আসেন।আফজাল সাহেব গম্ভীর মুখে ইসুয়ার বাবা মায়ের সিদ্ধান্ত জানার জন্য অধীর আগ্রহে তাদের মুখপানে চেয়ে আছেন।
ঝুমা বেগম– দেখুন ভাইজান, জন্ম মৃত্যু বিয়ে আল্লাহর হাতে।কপালে যা হওয়ার থাকে,তাই হবে। এতে কারো হাত নেই।আমরা ওদের বিয়ে মেনে নিলাম।তবে ……
আফজাল সাহেব– তবে কী ভাবীসাহেবা??
তারেক সাহেব– তবে এখন আমরা আমাদের মেয়েকে জোর করে তোর বাড়িতে পাঠাতে পারবো না।ইসুয়া রাজি হলেই ও স্বইচ্ছায় যেতে পারে।
আফজাল সাহেব– ধন্যবাদ।
ঝুমা বেগম– আরেকটা কথা।এখানে ঘরোয়া ভাবে কাজী ডেকে কবুল পড়াটা হোক আগে।তারপর ইসুয়া চাইলে যাবে,নয়তো আমরা কেউ ওকে জোর করবো না।
আফজাল সাহেব রিদীমা কে কল করেন।ফোনটা বারবার কেটে দিচ্ছে রিদীমা। বাধ্য হয়ে রবিন কে কল করেন।বাবা ছেলে সবটা discuss করার পর রবিন সাদা রঙের একটা পাঞ্জাবি পড়ে শুভ নয়ন আর একটা কাজী নিয়ে ইসুয়াদের বাসায় উপস্থিত হয়।
_______________________(চলবে)