#senior_life_partner
পর্ব—25
Afrin Ayoni
রিদীমা অফিসের জন্য নিজেকে তৈরি করছিলো।আজ প্রথম দিন নিজেদের কোম্পানিতে জয়েন করার।হঠাৎ তার ফোনটা বেজে উঠল। ঠোঁটে লিপস্টিক চালাতে চালাতেই কল রিসিভ করে,,,,
রিদীমা– Hlw
স্বাদ– ঐ গুন্ডি কোনো খবর দিলি না যে আর।তোর দাদীমা কেমন আছে?
রিদীমা– আছেন এখন ভালোই।
স্বাদ– তাহলে তুই আবার ব্যাক করছিস নাকি রিদ?
রিদীমা– না রে,আমার এবার যেতে একটু সময় লাগবে।একটা ঝামেলার সম্পূর্ণ শেষ করে তবেই ফিরবো।
স্বাদ– ওহ্।
রিদীমা– আর কিছু বলবি?আসলে আমার অফিসে যেতে লেইট হয়ে যাবে।
স্বাদ– সে কি রে!তুই আজই অফিস জয়েন করছিস?
রিদীমা– আমার পক্ষে এক মিনিট নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।
স্বাদ– তা বটে।তুই যে …………
রিদীমা– আমার ব্যাপারে সকল description তোর কাছে পরে এসে শুনছি এখন রাখ।আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে বললাম না।
স্বাদ– Ok Ok ….. take care
স্বাদ কলটা রাখতেই রেহানা বেগম এসে পাশে বসলেন।
রেহানা বেগম– সত্যিই একদম অন্যরকম মেয়ে টা।
স্বাদ হেসে– মেয়ে বল না মা।তুমি যেচে তোমার ছেলেকে একটা জমের খাঁচায় ঢুকিয়েছো।
রেহানা বেগম– এমন জমের হাতে তোকে ছেড়ে যেতে পারলে আমি মরেও শান্তি পাব।
স্বাদ ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে– আগে এসব ফালতু কথা বলা বন্ধ করে আমাকে একটু শান্তি দাও।
রেহানা বেগম– কয়টায় ফ্লাইট?বললি না তো।
স্বাদ — 5:00 টায়।
রেহানা বেগম– তোর সব গোছানো আছে তো??
স্বাদ– হুম।
রেহানা বেগম– আচ্ছা আমি গেলাম,একটু ঘুম দেই।
প্লেনে উঠেই নয়তো মাথা ধরবে।
এদিকে রিদীমা পার্স নিয়ে মাত্র ই রুম থেকে বের হবে তখনই তার রুমের দরজায় এসে দাঁড়ায় দিতী চৌধুরী। রিদীমা মায়ের দিকে ভ্রু কিঞ্চিত করে তাকিয়ে বললো,,
রিদীমা– কিছু বলবে মম?
দিতী বেগম– হুম,রবিনের ব্যপারে…..
রিদীমা– এখন হাতে একদম সময় নেই,রাতে এসে শুনছি।
দিতী বেগম ভালো করেই জানেন তার মেয়ের কাছে কাজটা সবকিছুর উর্ধ্বে।তাই সংক্ষেপে তিনি বললেন,, “ততক্ষণে কি খুব বেশি দেরি হয়ে যাবে না?”
রিদীমা কপাল চুলকে বললো — আমার ধারণা আজকের মধ্যে দেরি নয় বরং সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার সাথে যেটা হয়েছে,আমি যেটা হারিয়েছি সেটা আমার ভাই হারাবে বলে আমার মনে হয় না।
দিতী বেগম– আজও তাকে ভুলতে পারিস নি??
রিদীমা তাগাদা দিয়ে বললো — ওপপ মম!তোমার জন্য আমার এবার সত্যিই দেরি হচ্ছে।
রিদীমা দিতী বেগম কে এড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। দিতী বেগম বুঝলেন যেখানে রিদীমা বলেছে ঠিক হয়ে যাবে সেখানে কিছু তো একটা হবে।তাই তিনি মাথায় আর চাপ নিলেন না।
রিদীমা ড্রয়িং রুম ফেরিয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে যাবে তখনই সোফায় বসে থাকা আফজাল সাহেব আর দেলোয়ার খান হাক ছাড়লেন,,
দেলোয়ার খান– রিদীমা মামণি কোথাও যাচ্ছো নাকি?
রিদীমা– জ্বি!অফিসে….
আফজাল সাহেব– আজকেই??
রিদীমা– হ্যাঁ … কেন কোনো সমস্যা??
দেলোয়ার খানের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। হালকা কেশে বললেন, “তুমি দেশে ফিরেছো,দুটো দিন রেস্ট নাও।তারপর না হয় শুরু করবে।”
রিদীমা– আমি আর দুই দিন রেস্ট!!হাহাহাহা …
আফজাল সাহেব– কোনো সমস্যা তো নেই,তবু ও যদি।
রিদীমা ভ্রু কুঁচকে– তবু ও কি??
দেলোয়ার খান– আসলে মামণি তুমি এতদিন পর এসেছো,অফিস টা কে তোমার জন্য একটু সাজাতাম।তোমাকে স্বাগতম জানানোর জন্য।
রিদীমা– অফিস কর্মক্ষেত্র,ওটা স্বাগতম জানানোর জায়গা নয়।
আফজাল সাহেব– আচ্ছা মামণি তুই যা,আমরা ও অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হচ্ছি।
রিদীমা– Wait dad …. তোমরা এখনো বাড়ির জামা কাপড় ছাড়োনি,ড্রেস আপ করে অফিসে যেতে যেতে অফিসের half hour শেষ হবে।
আফজাল সাহেব আর দেলোয়ার খান রিদীমার কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। এমন স্ট্রিট নিয়ম তারা সত্যিই আজ অবধি মেনে চলেনি।
আফজাল সাহেব– ইয়ে মানে ….
রিদীমা– আজ অফিসটা আমি সামলাই,তোমাদের যেতে হবে না। তোমরা বরং কাল যেও।
দেলোয়ার খান– তুমি নতুন যাচ্ছো , আমরা গেলে তোমার একটু হেল্প হত।
রিদীমা সন্দেহের দৃষ্টিতে দেলোয়ার খানের দিকে তাকিয়ে– আমি সবটা ম্যানেজ করে নিতে পারবো।আপনাকে এত ভাবতে হবে না। আজ বরং আপনারা holiday উপভোগ করুন।
কথাটা বলেই রিদীমা বেরিয়ে গেল।আফজাল সাহেব দেলোয়ার খানের দিকে তাকিয়ে বললো– বুঝলে দেলোয়ার আমার পুঁচকে মেয়েটা সব সামলাতে শিখে গেছে।
দেলোয়ার খান তখন কপালের ঘাম মুছতে ব্যস্ত। কঠিন চিন্তায় আজ তার লাঞ্চ হারাম হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।
———————————————
ইসুয়া ভার্সিটির ক্যাম্পাসে অন্য মনস্ক হয়ে বসেছিলো।হঠাৎ ফোনের রিংটনের আওয়াজে ধ্যান ভাঙে তার।ইসুয়া চট জলদি ফোন রিসিভ করলো,,,,
ইসুয়া– Hlw
নয়ন — আপনি কোথায় ম্যাম?
ইসুয়া– আমি ভার্সিটিতে, রবিনের কোনো খোঁজ ফেলেন?
নয়ন — আমি আপনার ফোনে একটা লোকেশন দিচ্ছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে আসুন।
ইসুয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফোনটা কেটে গেল।বেশিক্ষণ সময় নিলো না সে।রবিনের দেওয়া সেই কালো শাড়ির কুঁচি গুলো হাত দিয়ে হালকা তুলে ফোন হাতে বেরিয়ে আসলো ভার্সিটি থেকে। তারপর নয়নের দেওয়া address এ পৌঁছাতে মনস্থির করলো।
নয়ন শুভ আর রবিনের অট্টহাসিতে ভেঙে পড়বে যেন দুই কামড়ার এই কাজী অফিসটা।রবিন নয়নের কাঁধে কিল মেরে বললো,,
রবিন– Good actors তোরা।
শুভ — তোর জন্য কলিজা কাটতে পারি দোস্ত …এ আর এমন কি?
রবিন — তাহলে কেটে ফেল।
শুভ নয়নের দিকে তাকিয়ে– যা তো পাশের বাজার থেকে এক কেজি আস্ত গরুর কলিজা আর একটা ছুড়ি নিয়ে আয়।
রবিন কপাল কুঁচকে– মানে?
শুভ — কলিজা বলেছি,কার কলিজা সেটা বলিনি।??
রবিন– শালা হারামির বাচ্চা ??
তিন বন্ধু আবারো উচ্চ হাসিতে মেতে উঠেছে। ততক্ষণে ইসুয়ার রিক্সা এসে দাঁড়ায় কাজী অফিসের সামনে।নয়নের নাম্বারে আবারো কল করলো ইসুয়া। নয়ন ইসুয়ার কল দেখে কাজী অফিসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।
রবিনের দিকে তাকিয়ে বললো — দোস্ত এসে গেছে। এবার কি করবো??
রবিন রা আগে থেকেই সবকিছু তৈরি করে রেখেছে।কাজী অফিসের বোর্ড পাল্টে,একটা ক্লিনিকের সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছিলো কাজী অফিসের বাইরের দেয়ালে।নয়ন ছুটে এলো বাইরে।নয়নকে এভাবে ছুটে আসতে দেখে ইসুয়া চটজলদি করে রিক্সা থেকে নামলো।
ইসুয়া– রবিন কোথায়?কোনো খোঁজ পেলেন?
নয়ন — ভিতরে আসুন তো আগে।
ইসুয়া ক্লিনিক দেখে আঁতকে উঠে। তারপর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে– সিরিয়াস কিছু??
নয়ন দুঃখীভাব করে– প্লিজ জলদি আসুন।
ইসুয়া আর নয়ন ছুটে আসে ক্লিনিকের ভিতরে।ইসুয়ার অজান্তেই তার সারা শরীর কাঁপতে থাকে।ভিতরে ভিতরে ভয় এসে বাসা বাঁধতে থাকে। ক্লিনিকে ঢুকেই রবিন কে রক্তাক্ত অবস্থায় বেডের উপর পড়ে থাকতে দেখে ঘাম ছুটলো ইসুয়ার।
ইসুয়া– কি হয়েছে ওনার?
শুভ কান্না জড়িত কন্ঠে– এক্সিডেন্ট করেছে।
ইসুয়া ছুটে এসে রবিনের পাশে বসে,”এখানে কেন এনেছেন ওনাকে?হসপিটালে নিয়ে চলুন।”
নয়ন আর শুভ,,,,,,ইসুয়ার কথায় আটকে গেল।অতঃপর আমতা আমতা করে শুভ বললো — জরুরী treatment দরকার। কাছেই ক্লিনিকটা ছিলো তাই নিয়ে এসেছি এখানে।
ইসুয়া আর শুভ নয়ন দের কথার মাঝেই একজন দাড়িওয়ালা হুজুর মত করে লোক এসেছেন কিছু পেপার নিয়ে, গায়ে সাদা এপ্রোন।লোকটাকে দেখে কেমন কেমন লাগছে।
লোকটা — এখানে পেশেন্টের কনে কে??
শুভ আর নয়ন দুজন দুজনের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।ইসুয়া লোকটার কথায় ক্ষেপে যায়।
ইসুয়া তেড়ে এসে– এখানে একজন মারা যাচ্ছে আর আপনি তার কনে খুঁজছেন?আপনি কি রোগী দেখতে এসেছেন নাকি বিয়ে পড়াতে?? হাতুড়ি ডাক্তার নাকি আপনি??
শুভ পরিস্থিতি সামলাতে এগিয়ে আসে।ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে বলে — ম্যাম আপাতত মাথা ঠান্ডা রেখে আগে কি বলতে চায় ,শুনুন।
লোকটা– আসলে আমি বলতে চাচ্ছি পেশেন্টের বাড়ির লোক কে আছেন?
ইসুয়া– জ্বি বলুন।
লোকটা — ফর্ম টা ফিল আপ করে নিচে একটা সই করে দিন তো।
ইসুয়া আর কথা না বাড়িয়ে ডাক্তার যেভাবে যেভাবে বললো সব ঠিকঠাক মতো পূরণ করলো।তারপর লোকটা,শুভ আর নয়ন একসঙ্গে আলহামদুলিল্লাহ্ বলে উঠলো।ইসুয়া ভ্রু কুঁচকে তিনজনের দিকে তাকিয়ে আছে।
ইসুয়া– মানে কী?
পিছন থেকে রবিন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ইসুয়ার কাছাকাছি এসে ওর মাথায় শাড়ির আঁচল তুলে দিতে দিতে বললো — মানে হচ্ছে এখন থেকে আপনি আমার রেজিস্ট্রি করা বউ Miss.অধ্যাপিকা!!
রবিন কে এভাবে দেখে রাগে ক্ষোভে বিস্ময় নিয়ে ইসুয়া রবিনের গালে একটা চড় বসিয়ে দিল। রবিন বেচারা কিছু ই হয়নি এমন ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ইসুয়া চিৎকার করে– ছিঃ!এভাবে চিট করবেন কখনো ভাবিনি। এতদিন যত পাগলামি করেছেন সব মেনে নিয়েছি।আর আজ তো লিমিট ক্রশ করেই ফেলেছেন।
রবিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইসুয়া বলে উঠলো — আর কখনো আমার সামনে আসবেন না।
রবিন শুভ আর নয়ন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ইসুয়া কাজী অফিস থেকে বের হতে নিলে রবিন পিছন থেকে বলে উঠলো– সন্ধ্যায় আসছি!তৈরি থাকুন বাড়িতে গিয়ে। এখন আমার জোর করার সম্পূর্ণ Wright আছে।
Soooooo বাড়াবাড়ি করবেন না। নয়তো হিতে বিপরীত হবে।
ইসুয়া পিছনে ফিরে– থ্রেড দিচ্ছেন??
রবিন– যা ই ভাবেন।
ইসুয়া রেগে বেরিয়ে গেল । বাড়িতে ফিরে টানা একঘন্টা শাওয়ার নিতে হবে।কি করে কেউ কারো জীবন নিয়ে এত বড় চিট করতে পারে ভেবে পাচ্ছে না ইসুয়া।
ইসুয়া চলে যাওয়ার পর শুভ আর নয়ন, রবিনের দিকে তাকিয়ে বললো –“দোস্ত এভাবে ঠকিয়ে বিয়ে করাটা কি উচিত হলো?”
রবিন– তোরা এত প্যারা নিস না, আমার উপর ছেড়ে দে সব।
নয়ন — দুই পরিবারের লোকদের সামলাতে পারবি তো?
রবিন– আমার বাম হাতের কাজ এটা।
শুভ — দেখ আগে,পানি কতটুকু গড়ায়??
———————————————–
রিদীমা কে দেখে প্রথম দিনেই অফিসের কর্মচারী গণ ভয়ে তটস্থ। রিদীমা তার চেম্বারে বসে ম্যানেজার আসিফ সাহেবকে দেখা করতে বললেন,,,
আসিফ সাহেব– আসবো ম্যাডাম??
রিদীমা– Yes come in….
আসিফ সাহেব– ডেকেছেন ম্যাডাম?
রিদীমা হাতের এক গাদা ফাইল আসিফ সাহেবের দিকে ছুঁড়ে মেরে চেঁচিয়ে বললো — এসব কী?হিসেবের এত গোলমাল। কত কোটি টাকা মেরে খেয়েছেন সবাই?
আসিফ সাহেব– আসলে ম্যাডাম ……
রিদীমা– কিচ্ছু শুনতে চাই না আমি,বিকেলের মধ্যে সব হিসাব হয়তো ঠিকঠাক করে বুঝিয়ে দিবেন নয়তো জব ছাড়ার প্রস্তুতি নিন।
আসিফ সাহেব কতগুলো অপমান নিয়ে রিদীমার চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসলেন।রিদীমার চেম্বার থেকে বেরিয়ে ই কল দিলেন দেলোয়ার খানের নাম্বারে,,,
“স্যার ….. ম্যাডাম তো হিসাব চাইছেন?”
দেলোয়ার খান– আর কিছু বলেছে?
আসিফ সাহেব — আমি বেশিক্ষণ সামলাতে পারবো বলে মনে হয় না। আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আসুন।
দেলোয়ার খান– আচ্ছা আমি আসছি।আর কিছুক্ষণ হ্যান্ডেল করো।
আসিফ সাহেব– জ্বি।
কল কেটে আসিফ সাহেব ব্যস্ত হয়ে পড়লেন হাতের ফাইল গুলো নিয়ে। আজ আর কারো রক্ষা নেই ভালো ই বোঝা যাচ্ছে।
_______________________(চলবে)