#Senior_life_partner
পর্ব—16
Afrin Ayoni
এই নিশুর বাচ্চা!বের হ বলছি,তুই আর কতক্ষণ লাগাবি ফ্রেশ হতে???
ইসুয়া নিশুয়ার ওয়াশরুমের দরজায় জোরে ধাক্কা দিতে দিতে কথা গুলো বলে,,,
নিশুয়া ওয়াশরুমের ভিতর থেকে জবাব দেয়,”আহা, আর 2 মিনিট বসো তো।”
ইসুয়া বিরক্তি নিয়ে বসলো নিশুয়ার বিছানায়। প্রায় 15 মিনিট পর নিশুয়া বের হয়।ইসুয়া ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,,
ইসুয়া– এই তোর 2 মিনিট?কত লেট হল তোর জন্য।
নিশুয়া ভ্রু উচিয়ে,”আমার কথা ছাড়ো।বাহ্ এত সাজ কার জন্য?”
ইসুয়া– কার জন্য মানে?আজ কলেজে আমার performance আছে তাই একেবারে তৈরি হয়ে নিলাম।
নিশুয়া— ohhh god, I am so excited…
ইসুয়া– কেন?
নিশুয়া– কেন আবার?তোমার আর রবিন ভাইয়ার couple dance…. how cute??
ইসুয়া রেগে– উষ্টা খাইতে না চাইলে রেডি হয়ে নিচে আয়,আমি গেলাম।
নিশুয়া মুখ কালো করে,”ok আসছি”
ইসুয়া নিচে নেমে আসে।নিশুয়া কাবার্ড থেকে একটা কালো চুড়িদার বের করে পড়ে নেয়।ফর্সা চামড়ায় খুব মানায় কালো রঙের চুড়িদারে।
নিশুয়া রেডি হয়ে নিচে নেমে পরিবারের সাথে বসে একত্রে breakfast করে ।তারপর দুই বোন জলদি বের হয় ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
এইদিকে ট্রাফিক জ্যামে আটকে আছে শিলা আর শাহেদ। শাহেদের বাইকের পিছনে বসে আয়না দেখে লিপস্টিক ঠিক করে নিচ্ছে শিলা।
শাহেদ– ওপপপ just অসহ্য। তোর জন্য আমার আজ ক্লাস মিস হল,আর এখন ? জ্যামে আটকে আছি।
শিলা — একদিন ক্লাস না করলে কিছু হবেনা ভাইয়া।
শাহেদ– I am always ফাংচুয়াল…
শিলা — তাই বলে আজ ভার্সিটির first day তে আমাকে একা ছাড়তে পারতে?আমি কিছু চিনি ও না…. new student
শাহেদ– সে জন্য ই তো একটা দিন আমার ক্লাস miss হয়ে গেল।
শিলা — তুমি সেই ক্লাস নিয়েই পড়ে আছো??
শাহেদ– Ok ok … মন খারাপ করছিস কেন? তুই ধীরে ধীরে সব চিনে যাবি।আজ ভার্সিটির নবীনবরণে তোর মত আরো কত new student আসবে।আর আজ তোকে ভার্সিটির সবকিছু দেখিয়ে দিয়ে আসবো।হয়েছে এবার ??
শিলা — আমার লক্ষ্মী ভাইয়া টা।
শাহেদ– হয়েছে হয়েছে,আর দরদ দেখাতে হবেনা।
শিলা — রাগ করো না, আজ আমার handsome smart ভাইটার জন্য একটা সুন্দরী ভাবী খোঁজার ও chance পেয়ে যাব।
শাহেদ– এসব করতে ভার্সিটিতে যাচ্ছিস?মারবো এক চড়।
শিলা হেসে,,”এবার তো বাইক চালাও…traffic ছুটেছে।”
শাহেদ আর কথা বাড়ায় না, বোনকে নিয়ে ছুটে চলে তার নতুন ভার্সিটির পথে।
—————————————————
রবিন শুভ আর নয়ন অনুষ্ঠানের সকল arrangements ঠিক আছে কি না সেটাই দেখছিলো।ভার্সিটির গেটে ইসুয়াদের দেখে শুভ রবিন কে বললো,,
শুভ — দোস্ত!আজ ই তোর চল্লিশা খেতে পারবো মনে হচ্ছে।
রবিন তখন ও উল্টো দিকে ঘুরেছিলো,”রাবিশের মত কথা বলিস না শালা।”
নয়ন — দোস্ত তোর চল্লিশায় আমি বিরিয়ানি চাই।
রবিন– শালা তোদের দুটো কে এখন ফুটবলের মত কিক মেরে ভার্সিটির বাইরে ফেলে দিয়ে আসবো।
শুভ — পিছনে তাকা দোস্ত, তোর অধ্যাপিকা আসছে।
রবিন শুভর কথায় পিছনে ফিরলো,সত্যি ইসুয়া কে নীল শাড়িতে আজ অসাধারণ লাগছে।সাথে full হাতা ব্লাউজ,খোঁপায় সাদা কাঠগোলাপ,কপালে টিপ।ইসুয়ার শাড়ির আঁচলে সাদা রঙের ছোট ছোট ফুলগুলো দারুণ ফুটিয়েছে তাকে।
নিশুয়া রবিনদের দেখে ওদের দিকে ছুটলো,,,,
Hey ধুলাভাই ???
ছুটে যাওয়ার সময় ওড়নায় পেঁচিয়ে পড়ে যেতে নেয় নিশুয়া। পিছন থেকে ইসুয়া,,,
আরে আস্তে দৌড়া,পড়বি তো!!
রবিন এগিয়ে এসে, “ধীরে শালি সাহেবা,আরেকটু হলে তো….”
নিশুয়া– excitement এর ঠ্যালায় নিজেকে সামলাতে পারছি না।
রবিন বুকের বাম দিকটায় হাত রেখে,”শালি সাহেবা আজ আপনার বোন কে আমাকে খুনের দায়ে জেল হাজতে যেতে হবে।এভাবে সেজে আসার কি খুব দরকার ছিল?”
নিশুয়া রবিনের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে উঠে। ইসুয়া এতক্ষণ দূরে ছিলো,এগিয়ে এসে বলে….
চল…..
নিশুয়া– কোথায়??
ইসুয়া– কোথায় মানে?
রবিন– এই যে Miss অধ্যাপিকা, আমার ইনভাইট করা মেহমান কে নিয়ে যাওয়ার সাহস আপনার হয় কি করে?
ইসুয়া রবিনের দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিশুয়ার দিকে তাকালো,”তুই আমার সাথে যাবি কি না?”
নিশুয়া– No way , আজ সারাদিন আমি ধুলাভাই এর সাথে থাকবো।
ইসুয়া– Ok তুই থাক।আমি গেলাম….
রবিন নিশুয়াকে চোখ মেরে,”Miss অধ্যাপিকা আপনি যান।কিছুক্ষণ পর নিশুয়াকে আমি পাঠাচ্ছি।
ইসুয়া জানে নিশুয়া আর রবিন দুটো ই এক নৌকার মাঝি, বলেও লাভের লাভ কিছুই হবে না। তাই কথা না বাড়িয়ে চলে গেল স্টেজের দিকে।
রবিন নিশুয়ার দিকে তাকিয়ে, “তোমার এই বোনকে কি করে যে ভাগে আনবো ? আস্ত ….”
নিশুয়া– এই আমার বোনকে আজেবাজে কিছু বললে তোমার বিয়েতে আমি নাচবো না বলে দিচ্ছি।
রবিন হা হা করে হেসে উঠে, “ওকে বললাম না কিছু। তারপর ও তুমি নাইচো,,আমার একটামাত্র শালি বলে কথা।”
নিশুয়া রবিনের হাত থেকে ফোন নিয়ে গেম খেলতে শুরু করে। শুভ নয়ন আর রবিন তাদের কাজে মন দেয়। হঠাৎ করে তমা আর তুলি আসে ওদের দিকে এগিয়ে।
তমা আজ কালো হাতকাটা ব্লাউজের সাথে পিংক কালারের শাড়ি পড়েছে।এত পাতলা শাড়ির মধ্যে দিয়ে তমার সাদা পেটটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আর তুলি পড়েছে লাল রঙের ব্লাউজের সাথে লাল কালো mixed শাড়ি। দুজনের ভারী মেকআপে এক হাত নিচে চাপা পড়েছে তাদের চেহারা।
তমা এগিয়ে এসে রবিনের নজর কাড়ে, “এই রবিন।”
রবিন মনে মনে বিরক্ত হলেও মুখে প্রকাশ করে না।
রবিন– কি বল??
তমা শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে করতে,”আমাকে কেমন লাগছে bby?”
শুভ — তোকে আবার কেমন লাগবে,যেমনে আটার গোডাউন দিছোস??
নয়ন — হ একদম,তোদের দুটোর এত অপচয়ের কারণে কত ডায়াবেটিস রোগীদের রুটির অভাব হবে বুঝতে পারছিস??
তুলি — তোরা চুপ থাক।জীবনে ও তো কারো সুনাম করতে পারোস না,উল্টা insult করিস।
রবিন– দেখ তমা,লজ্জা নারীর ভূষণ।আজকে অন্তত শালীনতা বজায় রাখতে পারতি।
তমা — আমি তো…….
তমাকে কিছু বলার সুযোগ দিলো না রবিন, অন্য দিকে চলে গেল।
শিলা আর শাহেদ ভার্সিটির গেটে এসে দাঁড়ালো।শিলাকে বাইক থেকে নামিয়ে দিয়ে শাহেদ বাইক পার্কিং করতে গেল……
শিলা হাতের পার্স টা দুহাতে ধরে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।সামনেই ঝালমুড়ি ওয়ালা কে দেখে জিভে জল চলে এল শিলার।উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে উঠে,,
“ঝালমুড়ি”
দৌড়ে এগিয়ে যায় সেদিকে। ঝালমুড়ি ওয়ালার উদ্দেশ্যে বলে ,”মামা পটাপট দুটো দিন তো!”
“এই যে মিস কানী!আমরা already 10 টার অর্ডার দিয়েছি।একটু লাইনে দাঁড়ান”
শিলা পিছন থেকে কারো কথা শুনে ফিরে তাকালো।
শিলা — আপনি কাকে বললেন কথাটা??
নয়ন — আপনাকে ছাড়া কাকে??
শিলা — আমাকে অন্ধ বললেন কেন??
নয়ন — অন্ধ কখন বললাম?আমি তো বললাম মিস কানী!!
শিলা — ঐ একই
নয়ন — জি না, একই না।এখন তো আমার মনে হচ্ছে আপনি বয়রা ও…..
শিলা হালকা উচ্চস্বরে,”What?”
নয়ন — দেখুন আপনার সাথে ঝগড়া করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। So ……. সাইড কাটেন।
শিলা — অসভ্য।
নয়ন না শোনার ভান করে,”জি কিছু বললেন?”
শিলা — জি না।
শিলা রেগে চলে গেল।শুভ এতক্ষণ শিলা আর নয়নের ঝগড়া দেখছিলো দূর থেকে। শিলা যাওয়ার পর এগিয়ে এসে নয়নকে ঘুষি লাগায়।
“দোস্ত এভাবে হ্যারাস না করলেও পারতি!”
নয়ন হেসে–সবে তো আজ start করলাম দোস্ত।
শুভ — Crash এর সাথে ঝগড়া। সুপার দোস্ত, তোর দ্বারা হবে,চালিয়ে যা।
ততক্ষণে স্টেজের দিক থেকে আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে বোঝা যাচ্ছে। শুভ আর নয়ন জলদি স্টেজের দিকে এগিয়ে যায়।
সবাই সবার জায়গায় বসে,অনুষ্ঠানের প্রথম দিকে সকল টিচার গণ বক্তব্য রাখেন।নতুন শিক্ষার্থী দের ফুল দিয়ে অভিবাদন জানানো হয়। তাদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ তাদের মন্তব্য রাখে।তারপর শুরু হয় বিভিন্ন বিনোদন, নাচ গানের আয়োজন।
কয়েকজন টিচার খালি গলায় গান গেয়ে স্টুডেন্ট দের মাঝে জোয়ার তুলেন, স্টুডেন্ট দের কিছু একক নৃত্য দেখানো শুরু হয়।
নিশুয়া আর ইসুয়া স্টেজের দিকে মনোনিবেশ করে চিপস্ খাচ্ছিলো। হঠাৎ রবিন এসে নিশুয়ার দিকে চেয়ার ঘুরিয়ে বসে,,,
ইসুয়া একবার সেদিকে তাকিয়ে আবার স্টেজের dance দেখায় মনোযোগ দেয়। রবিন নিশুয়ার দিকে তাকিয়ে,,
রবিন — এই শালি! কিছু খাবা??
নিশুয়া– তোমাদের পারফর্মেন্স শেষ হোক,তারপর না হয় একসঙ্গে খাবো।
ইসুয়া রবিনের দিকে ফিরে,”আপনাকে খাদ্য বিতরণ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে?”
রবিন– আমি কি জনে জনে জিজ্ঞেস করেছি??
ইসুয়া– তাহলে এখানে কি কাজ??
রবিন– আপনার সমস্যা হচ্ছে কেন Miss অধ্যাপিকা?
ইসুয়া– আপনি এখানে এসে কথা বলায় আমার মনোযোগে বিঘ্ন ঘটছে।
রবিন– আমি তো আমার শালি সাহেবার সাথে কথা বলছি।আপনার কান না দিলেও চলে….
ইসুয়া আর কিছু বলে না। রবিন দাঁড়িয়ে পড়ে,,,ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে বলে…. “আর দুটো পারফর্মেন্স এর পর আমাদের পারফর্মেন্স, তৈরি থাকুন।”
নিশুয়া খুশিতে শিস বাজায়।রবিন হেসে উঠে। ইসুয়া রেগে বলে,,,”দিন দিন বেয়াদব হচ্ছিস তুই।মেয়ে হয়ে শিস বাজাচ্ছিস।”
রবিন– এটা ওর opinion
ইসুয়া– সে আর বলতে,সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে।সবার ই জানা ।
রবিন– যাক বাবা,এখন আমার দোষ?আমি আবার কি করলাম?
ইসুয়া কিছু বলে না,নিশুয়া বোনের কড়া শাসনে চুপ করে থাকে।রবিন ব্যপার টা বুঝতে পেরে নিশুয়া কে হেসে আস্বস্ত করে।
রবিন ইসুয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে, “অনেক সাহস বেড়ে গেছে, না??লাইব্রেরির কথা ভুলে গেলেন Miss অধ্যাপিকা?”
ইসুয়ার চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেল, রবিনের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় সে।
রবিন– Ok guy’s… আমি যাচ্ছি। একটু পর পারফর্মেন্স আছে, সেটার সব প্রস্তুতি হল কিনা দেখে আসি।
রবিন চলে যায়। নিশুয়া ইসুয়ার চেহারা খানা দেখে মিটিমিটি হাসে।
______________________(চলবে)