#Senior_life_partner
পর্ব——-8
Afrin Ayoni
Really?হাঁটুর উপর স্কার্ট পড়া কোনো Sunny Leone এর ফটোকপি তোর সামনে দিয়া গেলে তুই যেইখানে ফিরে ও তাকাস না ,সেখানে তুই কিনা একজনের ঠিক মাঝ পিঠের তিলের উপর ক্রাশ খাইছোস??—(শুভ)
শুভর কথায় ঠোঁট মিলালো নয়ন — ও ভাই মারো,মুজে মারো।তাও যে পিঠের মাঝখানের তিলটা Single না,,ডাবল সেটার বায়োডাটা অবধি নেওয়া হয়ে গেছে।
রবিন অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে।সে যেন মার্ডার করা আসামী।কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে রায়ের অপেক্ষায়।
শুভ রবিনের দিকে তাকিয়ে–দোস্ত,এতদিন তোর সাথে চলেও যখন আমরা অন্য মেয়েদের দিকে তাকাতাম তখন নিজেদের লুচ্ছা লাফাঙ্গা মনে হইতো।
রবিন চোখ গুলো বড় বড় করে শুভর কথাটা গিলে ফেলে।নয়ন রবিনের পিঠে ধুম করে কিল বসিয়ে বলে উঠলো— শালা motherfu**** তুই তো লুচ্ছা pro max…….???
রবিন এবার বলে উঠলো,,”দেখ এসব third class ভাষা use করবি না। রবিন চৌধুরী জীবনেও কোনো মেয়ের দিকে চোখ দেয় না।ওকে??”
নয়ন ভেঙ্গিয়ে বলে উঠলো— আইছে আমার ধোয়া তুলসী পাতা। রবিন চৌধুরী কোনো মেয়ের দিকে তাকায় না,কিন্তু চোখ বন্ধ করে মেয়েদের পিঠের তিল খোঁজে বেড়ায়।
শুভ — রবিন দোস্ত তোর কপাল টা এগিয়ে দে ভাই, একটু ঘষা মারি।
রবিন— What???
শুভ — না মানে তোর কপাল চান্দের লাহান।
নয়ন শুভর দিকে তাকিয়ে, “এই দাঁড়া দাঁড়া।আমরা যে এত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করছি মেয়ে টা কে ?সেটাই তো বললি না।”
রবিন এবার বড় একটা ঢোগ গিললো।কারণ,,এই মুহূর্তে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে দুটো ছেলের উপর বড় সড় একটা বজ্রপাত পড়বে।যার কোনো Sound হবেনা,ডিরেক্ট ব্লাস্ট হবে।
শুভ — কি রে বল ?কে সে মহীয়সী?
রবিন কিছুক্ষণ ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে বুকে ফু দিয়ে বলে উঠলো,,”ইসুয়া তালুকদার।”
শুভ আর নয়নের ইচ্ছা করছে মাথাটা 10 লিটার বরফ পানিতে ডুবিয়ে আত্মহত্যা করতে।।রবিন এক চোখ খুলে অন্য চোখ বন্ধ করে তার দুই কলিজার বন্ধুদের দেখার চেষ্টা করছে।
—————————————————-
সুরাইয়া খান আর দেলোয়ার খান সোফায় বসে চা পান করছিলেন। সিনথিয়া সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছিলো, একজন সার্ভেন্ট সিনথিয়ার নানুর জন্য দোতলায় খাবার নিয়ে যাচ্ছে। ঠিক সে সময় সিনথিয়ার পেন্সিল সু টা ফসকে পড়ে যেতে লাগে,সিনথিয়া সার্ভেন্টের হাতে থাকা খাবারের উপর হাত ঠেকিয়ে নিজেকে বাঁচায়।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সার্ভেন্টের হাতে থাকা খাবার গুলো সিনথিয়ার ড্রেসের উপর পড়ে,ড্রেস নষ্ট করে।
আকস্মিক ঘটনায় সিনথিয়া খুব রেগে যায়। স্বজোড়ে চড় বসায় সার্ভেন্টের গালে।লোকটা এই বাড়িতে অনেক দিনের পুরনো।চড়ের আঘাতে কেঁদে ওঠে লোকটা।
সিনথিয়া — ছোট লোকের বাচ্চা,,,দেখে শুনে চলতে পারিস না??দিলি তো আমার ড্রেস টা নোংরা করে??
দেলোয়ার খান– Cool down মামণি।
সুরাইয়া খান– এটা কেমন অসভ্যতা,সিনথিয়া?ওনার একটু ভুল হয়েছে তাই বলে তুমি এভাবে …..??
সিনথিয়া — এই তুমি চুপ করো তো।এসেছো জ্ঞানের পাহাড় নিয়ে।
সিনথিয়া রেগে আবার উপরে উঠে যায় নিজের ড্রেস চেন্জ করতে।সুরাইয়া খান তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে,,
সুরাইয়া খান — আপনার কথা তো মেয়ে টা ফেলে না, ওরে সামলান।এত রাগ ভালো না।
দেলোয়ার খান– সিনথিয়া আমার মেয়ে, ওর কখনো খারাপ হতেই পারে না। আমি হতে দিব না।
সুরাইয়া খান আর কিছু বলে না,কারণ তিনি জানেন বলে কোনো বিশেষ লাভ ও হবে না।
আফজাল সাহেব পুরোটা বিষয় নিজের রুমের দরজার কাছ থেকে খেয়াল করেন ।নাহ্,এভাবে চললে বাড়িটা একটা অন্যায় করার কারখানা তৈরি হবে।নতুন কিছু ভাবতেই হবে।স্থায়ী কিছু,,, যেটা সরাসরি চৌধুরী বাড়িটাকে পাল্টে দিবে।
আরেকজন আড়ালে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে।সবকিছুর ছাড় আছে,,অন্যায়ের কোনো ক্ষমা তার কাছে নেই।সে তার মাথায় পুরোটা হিসাব কষে নিল,ঠিক কি করতে হবে??
রিদীমা খুব বিরক্ত হল আফজাল সাহেবের কল পেয়ে,,
রিদীমা— হ্যাঁ Dad বল।
আফজাল সাহেব আজকের পুরো ঘটনা রিদীমা কে বিস্তারিত খুলে বলে।রিদীমা তার সামনে থাকা টেবিলে জোরে আঘাত করে,,,,
রিদীমা— What ?ওর সাহস হয় কি করে আব্দুল চাচার গায়ে হাত তোলার?তুমি ওকে কিছু বলোনি?
আফজাল সাহেব— মামণি এভাবে আমার তোমার হুমকি ধামকি তে কদিন চলবে?এর একটা permanent বিহিত করতে হবে।
রিদীমা– Dad আগে তো আমাদের বাড়িতে এত বেয়াদবি অসভ্যতার কোনো জায়গা ছিলো না, তবে এখন কি করে??
আফজাল সাহেব– তোমার দাদাভাই যতদিন ছিলো ততদিন সবতো ঠিকই ছিলো,তারপর তুমি সামলিয়েছো।এখন তোমরা নেই শৃঙ্খলাবদ্ধতা হারিয়ে গেছে। আমি তো মায়ের জন্য কোনো step ও নিতে পারছি না।
রিদীমা–Ok Dad …. phone টা রাখো।আমি সবকিছুর একটা সমাধান বের করে তোমাকে জানিয়ে দিব। বাই..
আফজাল সাহেব– তুমি ই আমার শেষ ভরসা।
——————————————
ইসুয়া লাইব্রেরিতে বসে একটা বই দেখছিলো, আশেপাশে তেমন কোনো স্টুডেন্ট নেই। লাইব্রেরি টা ভার্সিটির স্টোর রুমের পাশে । কিছুটা ভিতরের দিকে হওয়ার কারণে লাইব্রেরি টা অন্ধকার থাকে।তাই দিনের বেলায় ও লাইব্রেরিতে লাইট জ্বালিয়ে রাখা হয় সবার সুবিধার্থে।
ইসুয়ার মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে হঠাৎ লাইব্রেরির লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায়।ইসুয়া বইটা অফ করে চারদিকে চোখ বোলায়।কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। আজ লাইব্রেরির দুদিকের জানালা দুটো ও বন্ধ।ইসুয়া ভাবে, হয়তো পিওন করিম চাচা আজ জানালা দুটো খুলতে ভুলে গেছেন। ইসুয়া অন্ধকারে আন্দাজ করে দরজার দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
হঠাৎ কেউ ইসুয়ার হাতটা পিছন থেকে টেনে ধরে।ইসুয়া ভয় পেয়ে যায়। চিৎকার করবে ভেবে ঠোঁট দুটো আলাদা করতে নেয়।তখনি অন্য এক জোড়া ঠোঁট এসে বসে তার ঠোঁট দুটোর উপর।অন্ধকারে ও যেন ইসুয়ার চোখ দুটো পুরো গোল গোল রসগোল্লা হয়ে গেল। কি হচ্ছে এসব।কিছুই মাথায় ঢুকছে না।
ইসুয়া যেন স্বপ্ন দেখছে সেরকমই মনে হচ্ছে। বাস্তবে এমন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আর যদি এমন কিছু হত তাহলে আক্রমণ করা ঠোঁট দুটো এভাবে স্থির হয়ে ইসুয়ার ঠোঁটের উপর বসে থাকতো না।
ইসুয়ার নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কিন্তু সে যেন কিছু করার মত ভেবে পাচ্ছে না। মস্তিষ্ক জমে বরফ হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। কোনো রকম প্রতিক্রিয়া করার আহ্বান দিচ্ছে না। ইসুয়া নিজেকে শান্ত করতে চোখ দুটো বন্ধ করে।পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে।
ততক্ষণে ঠোঁট দুটো একটু দূরে সরে যায়। তারপর ইসুয়া বুঝতে পারে কারো গরম নিঃশ্বাস তার কানের উপর পরছে।আবার সেই ঠোঁট জোড়া তার কানে স্পর্শ করে।থরথর করে ঘামতে লাগলো ইসুয়া। কেউ তখন বলে উঠলো——
“পাল্টা রিভেঞ্জ।আপনার ঐ জোড়া তিলখানা আমার বুকে মৃত্যুবাণ ছুঁড়ে মেরেছে,ছলনাময়ী।”
কথাটা বলার কিছুক্ষণ পর আবার লাইব্রেরি তে আলো জ্বলে ওঠে। দরজা টা ও খোলা।আশেপাশে কেউ নেই। লাইব্রেরি তে শুধু ইসুয়া রয়েছে। ইসুয়ার মাথা কাজ করছে না।তার এখন কি করা উচিত?রাগ দেখানো নাকি অবাক হওয়া??
লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে রবিন ক্যান্টিনের দিকে এগোয়। পিছনে পিছনে শুভ আর নয়ন দৌড়ে আসে। রবিন যেন ওদের কাছ থেকে বাঁচতেই তাড়াহুড়ো করছে। কিন্তু রবিন হয়তো ভুলে গেছে পৃথিবীর সবার কাছ থেকে রেহাই পেলেও হারামি বন্ধুদের কাছ থেকে কোনো রেহাই নেই।
শুভ — ঐ শালা।রবিনের বাচ্চা,খাঁড়া তুই।
নয়ন — ধরতে পারলে তোর কাবাব বানামু রবিননা!!
দুজনে মরি মরি করে দৌড়ে গিয়ে রবিনের সামনে দাঁড়ায়। রবিন ভ্রু কুঁচকে বলে,”কি?সমস্যা কি তোদের?”
শুভ — পালাস কই?
রবিন– মানে?আমি পালাবো কেন?
শুভ — তাহলে এভাবে কই যাচ্ছিস?মনে হচ্ছে তোর জন্য শেখ হাসিনা চা পানি নিয়ে wait করছে??
নয়ন চোখ মেরে — রবিন দোস্ত, first dating কেমন হল?
রবিন চোখ গরম করে ,”এখন তোরে আমি আমার ডেটিং এর বিস্তারিত বর্ণনা দিব?”
শুভ — তা তো দিতেই হবে।আমাদেরকে লাইব্রেরির দরজায় দারোয়ানের কাজে রেখে ভিতরে কি করলি সেটা না বলে তুই যাবি কই?
রবিন– দেখ,তোরা আমার কলিজার টুকরা।তোরা হেল্প করবি না তো কে হেল্প করবে আমাকে!!
নয়ন — ভাই তোর বাসর ঘরে আমি মশার কয়েল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকমু, দরকার হলে লোডশেডিং দেখা দিলে শুভ সার্জলাইট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো,কোনো problem না।এখন কথা হচ্ছে তোর first dating কেমন হল?অনুভূতি কি?এগুলো বল আমাদের।
রবিন দুই বন্ধুর চিপায় পড়ে অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।শুভ রবিনের দিকে তাকিয়ে বললো,”একটু আগে তুই না বললি আমরা তোর কলিজার টুকরা??তো কলিজা কষ্ট করে বলে ফেল।তোমার fillings আর তোমার সিনিয়র প্রেমিকার reaction কি ছিলো?”
রবিন বুঝতে পারে তার আর ছাড়া নেই। বলতেই হবে হারামি দুটাকে।নয়তো দেখা যাবে পুরো ভার্সিটিতে রবিনের নামে ব্যানার লাগিয়ে বসে আছে।
……………………………………….
নিশুয়া ছাদে বসে চিপস্ খাচ্ছিলো।পাশের বাসার ছাদ থেকে তারেক বলে উঠলো,,,,
তারেক — এই নিশু আপু!তুমি নাকি শাহেদ স্যার কে চোখ মেরেছো?
নিশুয়া — তোরে কে বললো?
তারেক — এটা তো পুরো স্কুলে published হয়ে গেছে। তুমি তো এখন famous…. কদিন পর থেকে স্কুলের সবাই তোমার সাথে সেলফি তুলবে।তোমার থেকে অটোগ্রাফ নিবে।
নিশুয়া — তাই নাকি??
তারেক — আমার পক্ষ থেকে তোমাকে হাজার হাজার কোটি কোটি ধন্যবাদ।
নিশুয়া — কেন ?
তারেক — এই জল্লাদ স্যার টা কে এভাবে লজ্জায় ফেলার জন্য।
নিশুয়া — তোরে আবার কি করলো??
তারেক — ঐদিন আমার girl friend সামিয়া কে পুরো ক্লাসের সামনে খুব বকেছে।ইচ্ছে তো করছিলো মাথাটা ফাটিয়ে দেই।
নিশুয়া হা করে আছে,তার মাথায় ঢুকছে না অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া তারেকের ও গার্লেফ্রন্ড থাকতে পারে।
————————————–
স্বাদ তার চেম্বারে বসে রোগী দেখছিলো।হঠাৎ তার চেম্বারের দরজা ঠেলে এক সাদা চামড়ার বিদেশী মেয়ে প্রবেশ করলো,,, শুদ্ধ ইংরেজি তে বলে উঠলো……
“Doctor Ahsan ….. will u marry me?”
স্বাদ রোগীর সামনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাইরের দেশ গুলোতে ও যে এমন অদ্ভুত কান্ড ঘটতে পারে তা যেন স্বাদের ধারণার বাইরে ছিলো।
___________________________(চলবে)