senior life partner পর্ব ৭

0
1931

#Senior_life_partner
পর্ব—7
Afrin Ayoni

রিদীমা একটা black শাড়ি পড়েছে। সাথে হাতকাটা ব্লাউজ।চুল গুলো খোলা।দু কানে মুক্তোর দুল।ব্যাস এটুকুই।

আজ স্বাদ আর তার মা রেহানা বেগম আসবেন।রিদীমা অনেক খুঁজে একটা রান্নার লোক ঠিক করেছে,যে সব বাঙালি রান্নার আয়োজন করবে।কোন রকম বিদেশী রান্না আজ হবে না। রান্নার লোকটাকে মোটা অঙ্কের টাকা ও দিতে হয়েছে। এতে রিদীমার কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু রিদীমা সবার কাছে পারফেক্ট থাকতে পছন্দ করে। তাই সে স্বাদের মায়ের জন্যই বাঙালি রান্নার ব্যবস্থা করেছে।

রিদীমা রান্না করা খাবার গুলো সার্ভ করার পর এগুলোর টেস্ট দেখছিলো।কলিং বেলের আওয়াজে দরজা খুলতে বলে তার বাড়ির সার্ভেন্ট কে।

দরজা খোলার পর স্বাদ আর তার মা ভিতরে আসে,,,

রিদীমা এগিয়ে গিয়ে, “আসসালামু ওয়ালাইকুম আন্টি।”

রেহানা বেগম মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে, “ওয়ালাইকুম ওসসালাম।”

রিদীমা– কেমন আছেন?

রেহানা বেগম– আমি ভালো আছি।তুমি??

রিদীমা– ভালো ই।

স্বাদ — আমি যে এখানে আছি সেটা কি কারো মনে নেই??

রিদীমা– তুই আছিস না কি?কই জানতাম না তো ।

স্বাদ — It’s not fear guy’s….

স্বাদ অসহায় মুখ করে সোফায় বসলো।রিদীমা রেহানা বেগমের দিকে এগিয়ে গিয়ে, “বসুন আন্টি।”

তারপর রিদীমা সার্ভেন্ট কে লেবুর শরবত দিয়ে যেতে বলে।

স্বাদ অবাক হয়ে, “তুই really শরবতের কথা বললি?”

রিদীমা ভ্রু কিঞ্চিত করে, “তুই কি কানে কম শুনিস?”

স্বাদ — তুই এসব খাস,I don’t believe রিদ।

রিদীমা– আমি খাই কে বলেছে??আজ সবকিছু আমি আন্টির পছন্দ মতো হ্যান্ডেল করেছি।সবকিছুতে বাঙালির ছোঁয়া।

স্বাদ — ওহ্ তাই বল।

রেহানা বেগম খুশি হয়ে, “দেখ দেখ।ও মেয়ে হয়ে আমার জন্য যা করেছে তুই ছেলে হয়ে কোন দিন করার চেষ্টা ও করেছিস?”

স্বাদ — মা , আমি রিদ নই।ওর মাঝে অনেক extraordinary আছে এটা ঠিক ,তাই বলে তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারো না!!

রেহানা বেগম– তা তুই কি ই বা করতে পারিস আমার জন্য??বিয়ে ও না , এসব ও না।

স্বাদ — আবার শুরু হলো।

রিদীমা– আচ্ছা আন্টি বাদ দিন।চলুন খেতে বসি,সবাই একসাথে লাঞ্চ করবো।

স্বাদ — তাই কর।নিয়ে যা খেতে। এখানে বসে বসে আমার মাথা খাচ্ছে।

রেহানা বেগম– এই তুই কি বললি , আরেকবার বল।

স্বাদ — কিছু না।যাও তো।

রেহানা বেগম– হতচ্ছাড়া।তোরে ডাক্তার কে বানিয়েছে তারে যদি পাইতাম।

স্বাদ — ওপপপপপ , শুরু আবার। হে খোদা রক্ষা করো।

রিদীমা রেহানা বেগম আর স্বাদের কান্ড কারখানা দেখে হাসতে থাকে।

রিদীমা রেহানা বেগম কে বলে,”চলুন আন্টি।”

স্বাদের দিকে তাকিয়ে— তুই ও আয়।

স্বাদ মুখে হাসি টানে আর এগিয়ে আসে। খাবার টেবিলে বসে রেহানা বেগমের চক্ষু একেবারে কপালে গিয়ে ঠেকেছে। সত্যিই সব বাঙালি আইটেমের রান্না। সরষে ইলিশ, কলার মোচা বাটা বর্তা,তিল বেটে কুমড়ো শাকের তরকারি, লাউ চিংড়ির তরকারি, পাবদা মাছ ভাজা,কাঁচা আম দিয়ে ছোট মাছ, শুঁটকি ভর্তা । ইস দেখেই লোভ সামলানো যাচ্ছে না।

স্বাদ — তুই এত কিছু ম্যানেজ করলি কেমনে?

রিদীমা– আন্টির জন্য এটুকু করতেই পারি।

রেহানা বেগম– মা , সত্যি বলছি এদেশে এসে আমি বাঙালি মানুষ আর বাঙালি খাবার দুটোকেই ভীষণ মিস করেছি।

রিদীমা– আর no tension… চাইলেই আপনি মাঝে মাঝে আমার কাছে চলে আসবেন।

রেহানা বেগম– তা তো আসতেই হবে। আর আমার এই অকাল কুষ্মান্ড ছেলেকে বলেছিলাম একদিন কচুর লতি আনতে , দুবছর পেরোলো।এখনো সে লতি ই খোঁজে যাচ্ছে।

রিদীমা– আপনারা ডিনার টা এখানে করলে লতির আইটেম টা ও রাতে পেতে পারেন।

স্বাদ — সে কি তুই কি পুরো বাংলাদেশ বাজার তুলে এনেছিস নাকি??

রিদীমা আর রেহানা বেগম উচ্চ স্বরে হাসতে থাকে। সত্যি সত্যিই রেহানা বেগম আর স্বাদ ডিনার টা এখানে করেছে রিদীমার অনুরোধে।তারপর রিদীমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দুজনে গাড়িতে উঠে,,,,

রেহানা বেগম– আজকে আমার best দিন ছিল।

স্বাদ — Thnx দাও।

রেহানা বেগম– কেন?

স্বাদ — আমি ই তো তোমাকে এখানে নিয়ে এলাম।

রেহানা বেগম– শুধু thnx না , তোকে অনেক গিফ্ট দিব।যদি আমার একটা কথা রাখিস!!

স্বাদ — কি কথা??

রেহানা বেগম– এই মেয়েটা কে বউ করে নিয়ে আয়।

হঠাৎ গাড়িতে ব্রেক কষে স্বাদ। গাড়ি টা একটা ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে যায়।তারপর রেহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,,,,

স্বাদ– কোন মেয়ে টা??

রেহানা বেগম– রিদীমা।

স্বাদ — মা,তুমি এতদিন আমাকে বিয়ের নামে জমের কাছে ঠেলে দিচ্ছিলে। আর আজ তুমি আমাকে জ্যান্ত মাটিতে পুঁতে ফেলার ব্যবস্থা করছো??

রেহানা বেগম– মানে??

স্বাদ– আর কাউকে পেলে না।রিদীমার কথা বলছো??

রেহানা– মেয়ে টা ভারী মিষ্টি।

স্বাদ– হুম, বুঝলাম।প্রথম দেখা তো তাই।আস্তে আস্তে পরিচিত হও তবেই বুঝবেন,রিদীমা চৌধুরী কি জিনিস?

রেহানা বেগম– বাজে কথা না বলে গাড়ি start কর।

স্বাদ মায়ের কথা অনুযায়ী বাড়ির দিকে রওয়ানা হল।।

———————————————

ইসুয়া মাঠে বসে দীপ্তির সাথে কথা বলছিলো। এই কয়দিনে ওদের মধ্যে টিচার আর ছাত্রীর সম্পর্ক টা শেষ হয়ে তুই তে নেমে এসেছে। হাসাহাসি করছিলো দুজনে,,,

দীপ্তি— সামনে নবীনবরণ।
ইসুয়া– হুম শুনেছি।
দীপ্তি– তো কোন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করছিস?
ইসুয়া– only গানে।
দীপ্তি– সত্যি। তুই গান জানিস?
ইসুয়া– Something….বেশি না।
দীপ্তি– একটা গান ধর ।
ইসুয়া– এখন?মাঠের মাঝখানে?আশেপাশে কত স্টুডেন্ট দেখেছিস??
দীপ্তি– কোন সমস্যা নেই।

ইসুয়া কে অনেক জোরাজুরি করে রাজি করায় দীপ্তি।
ইসুয়া গাইতে শুরু করে,,,,
Mujko barsat banalo
Ak lombi rat balo
Apne jazbat banalo…… jana
Mujko alfaz banalo
Dil ki abwaz banalo
Gehra ca razz banalo ….. jana

Nesha ho main, behak ne dhooo
Mere katil, muje jinhe ka haq to dhooo

Mujko barsat banalo
Ak lombi rat banalo
Apne jazbat banalo…….jana

চারদিকে স্টুডেন্ট হয়ে জমা হয়েছে।ইসুয়া থামিয়ে দিয়েছে।তার মধ্যে ছেলে স্টুডেন্টের সংখ্যা ই বেশি।

ইসুয়া দীপ্তির দিকে চেয়ে, “Enough”

দীপ্তি– আরেকটু গা।প্লিজ।

ইসুয়া ফিসফিসিয়ে, “এই কি বলছিস?আমি একজন টিচার।মাঠে গান গাইবো এখন?কেমন দেখায় না।”

সবাই ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে, “জবাবহীন কন্ঠ।”

কেউ কেউ বললো — পুরাই রবিন ভাইয়ের lady copy

কেউ কেউ তো প্রশংসায় পঞ্চমুখ তাদের বাংলা অধ্যাপিকার।হঠাৎ ভিড় থেকে কেউ বলে উঠলো,,

Once more ম্যাম।

এবার সবাই চিল্লানি দিয়ে,,once more বারবার বলতে থাকে।ইসুয়া পড়লো বিপাকে। ভীড়ের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়া মুশকিল।

ইসুয়া– আমি খালি কন্ঠে গাইবো? তার চেয়ে ও ভালো আরেকদিন শুনাবো।

না ম্যাম, no excuse…. আমরা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

ভীড়ের দিক থেকে কেউ একজন একটা গিটার নিয়ে এগিয়ে এলো,,,”please once more…সবাই যখন এত করে বলছে।”

রবিনের করা অনুরোধ আর ভীড়ের দিক থেকে ভেসে আসা চিল্লাচিল্লি তে ইসুয়া নার্ভাস হয়ে গেছে।

শুভ আর নয়ন— রবিন তুই ও গলা মেলা তাহলেই ম্যাম আর অস্বস্তি বোধ করবে না । নার্ভাসনেস কেটে যাবে।

রবিন– Sure …. (তারপর ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে) R you ready??

ইসুয়া আর নিষেধ করলো না। শুরুটা রবিন ই ধরলো,,,

Na jiya jindegi….. ak pal bhi
Tujse ho ke judah…. shon jara(রবিন)

Ban tere mujse naraz tha dil
Tu mila he tu he keh rahaaaa….(ইসুয়া)

Main to teri rang me rang choka hooo
Bas tera ban choka hoo
Mera muj me kuch nahi…
Sab tera ……(রবিন)

Main to teri tang me tang choki hoo
Bus teri ban choki hooo
Mera muj me kuch nahi……
Sab tera,Sab tera,Sab tera,sab teraaa(ইসুয়া)

এর বেশি আর গাইল না ইসুয়া। রবিন ও থেমে গেল।দুজনে ই চোখ বড় বড় করে ফেলেছে। ইসুয়ার মাথায় যেন বজ্রপাত পড়লো।ভীড় থেকে কড়তালির আওয়াজ আসছে।সবাই দুজনের ডুয়েট গানের প্রশংসা করছে। রবিন ইশারায় শুভ আর নয়ন কে কিছু বলে।সবাই আগ্রহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ইসুয়া চোখ বন্ধ করে লজ্জা ডাকার চেষ্টা করছে।

রবিন– Ok guy’s….এর বেশি আর না।সবাই যার যার কাজে যাও।

সবাই অনুরোধ করার জন্য আবার ঝাঁপিয়ে পড়ার আগেই শুভ আর নয়ন সব স্টুডেন্ট দের বুঝিয়ে এক রকম জোর করেই জায়গা টা খালি করলো।রবিন আর ইসুয়া এখনো আগের জায়গায় ই দাঁড়িয়ে আছে।

শুভ আর নয়ন এগিয়ে আসতেই রবিন বলে উঠলো, “যেখানে আছিস ঐখান থেকে চলে যা।আমি আসছি।”

শুভ — কী হইছে ?বলবি তো।

নয়ন — এভাবে হঠাৎ দুজনে স্টেচো হয়ে গেলি কেন?

রবিন চিৎকার করে ,”যেতে বলেছি যা।বেশি কথা বলিস না।”

রবিনের ধমকের কারণ দুজনের কারোর ই বোধগম্য হল না।দুজন দুজনকে ইশারায় কিছু বলে স্থান ত্যাগ করলো। রবিন এবার ইসুয়ার পিছনে এসে দাঁড়ায়। ইতস্তত করে বললো,”সরি সরি।আমি খেয়াল করিনি।হঠাৎ করেই গিটারের তারটা ছুটে গিয়ে আপনার জামায় বিঁধে গেছে।”

ইসুয়া নিচু স্বরে— এটা ইনসিডেন্ট ছিলো।সমস্যা নেই।

রবিন– আমি কি হেল্প করবো??

ইসুয়া কে চুপ করে থাকতে দেখায় রবিন বললো,”দেখুন পিছন দিক থেকে জামা টা একটু বেশি ছিঁড়ে গেছে। আমি তো দেখে নিয়েছি ইনসিডেন্টলি।আর কোনো সমস্যা থাকার তো কথা নেই। এখান থেকে আমি সরে গেলেই বরং আপনি লজ্জায় পড়বেন।তার চেয়ে ভালো আমার হেল্প টা নিন।”

তারপর আশেপাশে তাকিয়ে রবিন আবার বললো, “এখানে কোনো মেয়ে মানুষ ও দেখতে পাচ্ছি না।So কি বলেন ম্যাম?আমি কি হেল্প করবো?”

ইসুয়া লজ্জা পেয়ে— Ok…

রবিন ইসুয়ার জামা থেকে গিটারের তারটা বের করার চেষ্টা করতেই ইসুয়ার পিঠে হাত রাখে। তারটা টেনে বের করতে গেলেই জামা টা আরো খানিকটা ছিঁড়ে গিয়ে ইসুয়ার পিঠ উন্মুক্ত হয়ে গেল।ইসুয়ার সারা মুখ কান লাল হয়ে উঠে। নড়ে চড়ে উঠে ইসুয়া।রবিন বলে উঠলো,,”নড়াচড়া করলে তার টা পিঠে বিঁধে যাবে।একটু ধৈর্য্য ধরুন।”

রবিন তার টা খুলে সরিয়ে দিতেই বাদামি রঙের জোড়া তিলখানা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রবিনের চোখ দুটো চকচক করে ওঠে। রবিন যেন জমে গেছে। একি !দেখছে সে।।

ইসুয়া– হয়েছে??

রবিন নিজেকে ধাতস্থ করে বলে, “হুম হুম,,,হয়ে গেছে।”

ইসুয়া এবার নিজের পিঠ ঢাকতে ওড়না টা জড়িয়ে নেয়। রবিন এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।ইসুয়া ধন্যবাদ জানিয়ে ভার্সিটির মাঠ পেরিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। রবিনের মাথাটা ভন ভন করছে। এটা কি সত্যিই ছলনাময়ী ই ছিলো?নাকি তার ভ্রম??

রবিন মনে মনে– তবে কি উনিই??যদি উনি সে ছলনাময়ী হয়ে থাকে, তবে কি করে সম্ভব??

_____________________(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here