senior life partner পর্ব ৬

0
1962

#Senior_life_partner
পর্ব–6
Afrin Ayoni

রবিন আর নয়ন মাঠে বসে কোল্ডিংস খাচ্ছিলো।প্রচুর গরম পরছে।মাথার উপর সূর্য টা যেন আজ নিজের সকল রাগ ঝারছে।ঘেমেনেয়ে কি একটা অবস্থা।

নয়ন — সব assignment কি তোর complete হয়ে গেছে??

রবিন– কাল সন্ধ্যায় ই সব শেষ।

নয়ন — আমারে আজকে সবগুলো দিবি।

রবিন– সরি দোস্ত!শুভ সব কয়টা কাল রাতে বাসায় গিয়ে নিয়ে এসেছে।

নয়ন — যাহ্ বাবা। শুভ শেষ হতে না হতেই নিয়ে গেল?

রবিন– কল করে জিজ্ঞেস করলো কমপ্লিট কিনা!তারপর যেই শুনলো সব finished তখনই নিয়ে এসেছে।

নয়ন — আচ্ছা। ওর হয়ে গেলে আমি নিব।

রবিন– তোর ইচ্ছা।

কথাগুলো বলতে বলতে কোল্ডিংস এর বোতলে আবার চুমুক দিলো রবিন।পিছনে হঠাৎ মাথায় চড় পড়লো।

মাথা ঘুরিয়ে পিছনে ফিরতেই শুভ বলে উঠলো,”নে শালা।তোর assignment….”

Assignment এর কাগজ গুলো রবিন কে ছুঁড়ে মারে শুভ।

রবিন কপালে ভাঁজ ফেলে বলে উঠলো,,”কাম সারা তাই এখন এভাবে ছুঁড়ে মারছিস?”

শুভ — সব assignment ঠিক আছে।কিন্তু ইসুয়া ম্যামের সাবজেক্টে কি করেছিস??

রবিন– কি করেছি মানে?

শুভ — নয়ন তুই দেখ,assignment টা খোল।

শুভর কথা শুনে নয়ন বাংলা assignment টা খুললো।
Assignment খুলতেই নয়নের চক্ষু চড়কগাছ। রবিনের দিকে তাকিয়ে বললো,”এইগুলা কি?”

রবিন নয়নের হাত থেকে কৌতূহলী হয়ে assignment টা টেনে নিয়ে যায়, “কি দেখি?”

শুভ — হারামির বাচ্চা(..)ডট ডট দিয়ে ভরাই ফেলছোস কেন??

রবিন– আসলে_____

নয়ন — দোস্ত এটা বাংলা সাবজেক্ট, ইংরেজি না।যে তুই fullstop দিয়ে ভরাই রাখবি।

রবিন শুভর দিকে তাকিয়ে, “বাকি সাবজেক্ট গুলো ঠিকঠাক আছে?”

শুভ — সব ঠিকঠাক। শুধু এই সাবজেক্টেই গন্ডগোল।

রবিন– ওকে ।আমি সব টা ঠিক করে নিব।

নয়ন আর শুভ আড্ডায় মেতে ওঠে।রবিন চোখ দুটো বন্ধ করে মাঠের ঘাসগুলোর উপর শুয়ে পড়ে।
“ওগো ছলনাময়ী।আপনার চেহারা দেখলাম না,রূপ দেখলাম না।না দেখলাম আপনার কাজল কালো আঁখি। এই কি জিনিস দেখিয়ে আমার ভিতর লোভাতুর অনুভূতির কম্পন জাগিয়ে দিলেন।যার দেখা আর দ্বিতীয় বার পাবো বলে মনে হয় না। তবে কি আপনাকে আর কখনো খোঁজে ই পাব না?খোঁজার মত কোনো ক্লু ও তো নেই আমার কাছে।”

———————————————–

রিদীমা একটা মিটিং শেষ করে পানির গ্লাস টা মুখের সামনে ধরেছে কেবল,,তখনই ফোনটা বেজে উঠল।

Hlw….

Good morning বাঘিনী।

আমাকে রিদ বলে ডাকুন,Doctor…

Ok … তো কেমন আছিস?(স্বাদ)

এই তো over ভালো। (রিদীমা)

একটা question করবো?(স্বাদ)

অবশ্যই। (রিদীমা)

আচ্ছা, আমি ডক্টর হয়ে ও তোর মত নিজেকে এত perfect happy রাখতে পারি না কেন?(স্বাদ)

আমার মতই কেন হতে হবে?(রিদীমা)

না এমনিই বলছিলাম।(স্বাদ)

জীবনে নিজের সাথে কাউকে compare না করলেই happy থাকা সম্ভব। (রিদীমা)

যেমন??(স্বাদ)

এই যেমন তুই ভাবছিস,আমি তোর চাইতে ও বেশি happy আছি।তাই তোর মধ্যে নিজের প্রতি confidence কমে আসছে।তুই যদি ভাবতি,এই পৃথিবীতে একমাত্র সুখী মানুষ তুই নিজেই আর কেউ নেই, তাহলে এমন মনে হত না।(রিদীমা)

100% right….(স্বাদ)

হ্যাঁ সেটাই।আর কিছু বলবি??(রিদীমা)

স্বাদ — তুই এত heartless কেন?

রিদীমা– কথাটা ভুল আমি heartless নই,hard mind এর।

স্বাদ হেসে জবাব দেয়, “তা যা বলেছিস।”

রিদীমা– আমি এটার সহজ স্বীকারোক্তি করি।

স্বাদ — জরুরী কারণে কল করা।

রিদীমা– বল।

স্বাদ — আমার বাসায় এক দিনের invitation গ্রহণ করার সময় হবে তোর?

রিদীমা– আমার সবকিছু সময়ের কাটায় কাটায় চলে।

স্বাদ — তাহলে আমার দাওয়াত গ্রহণ করছিস না?

রিদীমা– আসলে…………….

স্বাদ — আমার মা বাসায় একা একা বোর হয়ে গেছেন। এদেশে আসার পর থেকে শুধু বাঙালি খোঁজে যাচ্ছেন দুদণ্ড কথা বলবেন বলে।কিন্তু এই দেশে আমার নজরের মধ্যে তুই ছাড়া কোনো pure বাঙালি খোঁজে পাচ্ছিলাম না। তাই বলছিলাম।

রিদীমা– আন্টি ও এই দেশে নাকি?

স্বাদ — হ্যাঁ, আয় না একদিন। দেখা করে যা।

রিদীমা– না রে সময় নেই।

স্বাদ চুপসে যায়। নাহ্! এই মেয়ে কোনো গলানো ধাতুর মাঝেই পড়ে না।

রিদীমা কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ বলে উঠলো, “আমার যাওয়া সম্ভব না হলেও তুই আর আন্টি কিন্তু আমার বাসায় আসতেই পারিস।”

স্বাদ — তোর টাইম নেই।আমরা তোর বাসায় গিয়ে কি পাহারা দিব?

রিদীমা– মানে?

স্বাদ — তুই তো অফিসে থাকবি।আমরা খালি বাসায় কি করবো?

রিদীমা– তোরা আয় , একদিনের জন্য না হয় আমি বাসায় বসে কাজটা করলাম।

স্বাদ কিছু একটা ভাবে , তারপর বলে — আচ্ছা।পরশু আসছি মাকে নিয়ে।

রিদীমা– ওকে বাই।

স্বাদ — Take care …..

——————————————————–

সিনথিয়া আর তার বাবা দেলোয়ার খান নিজেদের ঘরে বসে কথা বলছিলো,,

সিনথিয়া — পাপা ,আজ রিদীমা আপু যা করেছে আমি কিন্তু সব মুখ বুজে সহ্য করবো না।

দেলোয়ার খান– সহ্য তো আমি ও করতে চাই না। শুধু একটা সুযোগের অপেক্ষায় আছি।ওদের বাপ বেটির খেল খতম করতেই তো চাই।

সিনথিয়া — মামা আর রিদীমা আপু এতটা dangerous কিন্তু রবিন কে দেখো!! মনেই হয় না ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে।

দেলোয়ার খান– বাপ বেটি ই তো আমাদের জীবন টা নরক করে দিল।ছেলেটা যেমন সাদাসিধে, রিদীমা আর আফজাল চৌধুরী না থাকলে সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়া ছুটকির কাজ আমার।

সিনথিয়া — মা আর ভাইয়ার দরদ দেখো। ওদের জন্য একেবারে জান দিয়ে দিবে যেন।

দেলোয়ার খান– ওদের কথা বলে লাভ নেই।দুটোই কালসাপ।তোমাকে যা বলেছি, চেষ্টা করেছো??

সিনথিয়া — কি করবো আর?রবিন কোনো মেয়ের দিকেই তাকায় না।

দেলোয়ার খান– যেভাবে পারো,যা করা লাগে করো।তারপর ও রবিন কে হাতের মুঠোয় আনো।যত শীঘ্রই পারো।

সিনথিয়া — Ok পাপা।আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবো।

বাবা মেয়ে প্রসঙ্গ পাল্টে অন্য কথায় চলে যায়।দরজায় দাঁড়িয়ে দেলোয়ার খানের স্ত্রী সুরাইয়া খান নিঃশব্দে জল ফেলেন,,

“তোমরা ধ্বংসের খেলায় পা রেখেছো।আমার ভাইয়ের খেয়ে পড়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। সামান্য রিদীমা আর আফজাল চৌধুরী কে সামলাতে হিমসিম খাচ্ছো, আর সে এলে কি করবে??তার ভয়ানক মুখোশের মুখোমুখি হতে পারবে তো?সে যে কেউটে সাপ।গর্ত থেকে সহজে বেরুবো না।আর বেরুলে তোমাদের রক্ষা নেই। আর এগিয়ো না এই ধ্বংসলীলায়।”

কথাগুলো সুরাইয়া খান মনে মনে ই বলেন।সরাসরি বলার সাহস তার কোনো কালেই হবেনা হয়তো।দেলোয়ার খানের হিংস্রতা সে ভালো করেই জানে।

এদিকে অন্ধকার রুমে একটা লোককে চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে। দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে লোকটাকে। পাশ থেকে একজন বলে উঠলো,,,,
“এতটা বুকের পাটা না দেখালে ও পারতি।”

লোকটা ভয়ে ভয়ে বলে — ভাই ছেড়ে দিন,আর কখনো ভুল হবেনা।

লোকটার সামনে ছয় জন দাঁড়িয়ে আছে।একজন বলে উঠলো, “বেইমানির ক্ষমা নেই এখানে।”

লোকটা — ভাই মাফ করেন ।আর হবে না। আমার বউডার বাচ্চা হইবো।

আবার আওয়াজ আসে — নিজের কলিজার কথা ভাবছিস এখন খুব!!অন্যের কলিজাকে মারতে গেছিলি যে মনে ছিলো না??

আর কোনো কথা বলার সুযোগ পায় না লোকটা,,এক হাতের করাত টা ডিরেক্ট গলায় এসে পড়লো।লোকটা ছটফট করে মৃত্যুর দুয়ারে এগিয়ে যায়।

দলের লিডার টা এগিয়ে আসে,”আমার কলিজায় আঘাত দিতে গেছিলি।তবে তোর বউ বাচ্চার কোনো দোষ নেই,ওদের আমি দেখে রাখবো।বিদায়”

কথাটা বলেই লোকটার খোলা চোখ দুটো হাত দিয়ে বন্ধ করে দেয়।

পিছনের দিকে তাকিয়ে ,,,”একেবারে গুম করে দাও।ওর টিকিটির খোঁজ ও যাতে কেউ না পায়।”

ছয়জন একসঙ্গে বলে উঠে, “Ok boss……”

————————————————–

রিদীমা গাড়ি থেকে নেমে আসতেই পিছন থেকে তার personal PA বলে উঠলো,,”ম্যাম !আপনাকে দেশে যে মারার চেষ্টা করেছিলো তার সব বায়োডাটা এখানে আছে।”

রিদীমা পেপার টা হাতে নিয়ে এগিয়ে যেতেই আবার তার PA বলে উঠলো,”ম্যাম লোকটাকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”

রিদীমা– What ?

“জ্বি ম্যাম। আমি আমাদের দেশের সব গুলো hidden team কে লাগিয়েছি ,but তার কোনো খোঁজ ই কেউ দিতে পারছে না।”

রিদীমা– তোমরা থাকতে লোকটা উদাও হল কি করে??

“আমাদের নজর এড়িয়ে যাওয়া লোকটার ক্ষমতার বাইরে।”

রিদীমা– তাহলে লোকটা গেল কোথায়, রাসকেল??

“সেটাই তো বুঝতে পারছি না ম্যাম।”– ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বললো PA

রিদীমা– ভালো করে খোঁজ লাগাও।এটা কোনো মশা মাছি নয় যে নাকের ডগা দিয়ে চলে যাবে?ওকে ধরতে পারলে main point এ চলে যাওয়া মুহূর্তের কাজ ছিলো।

“Ok ম্যাম।”

কথাগুলো বলেই রিদীমা বাসায় ঢুকে পড়ে। আর চিন্তা করতে থাকে, তাকে জানে মারতে চায় কে?দেশে যাবে এটা তো বাবা ছাড়া আর কারো জানার কথা নয়। কিছুই মাথায় ঢুকছে না রিদীমার।।

“বাবা ! মা কে বলে দাও,আমি এই মুহূর্তে বিয়ে করবো না মানে করবো না।”

ঝুমা বেগম– কেন?বিয়েতে তোর আপত্তি কোথায়?

“আপত্তি ও নেই, interest ও নেই।”

ঝুমা বেগম– ছেলে Doctor…. অনেক নামকরা।

“তো?”

ঝুমা বেগম– তো মানে??

“আমি বিয়ে করবো না বলে দিছি।”
কথাটা বলেই দরজায় খিল দেয় ইসুয়া। খুব বিরক্ত লাগছে। ইদানিং তার মা বিয়ের জন্য মাথাটা খারাপ করে দিচ্ছে।

তারেক সাহেব তার স্ত্রী কে বললেন, “মেয়েটাকে আর কিছু দিন নিজের মত থাকতে দাও।বিয়ে বিয়ে করে ওরে পাগল বানিয়ো না।”

ঝুমা বেগম– তোমার জন্য দুটো মেয়েই এমন অসভ্য হয়ে যাচ্ছে দিন দিন।

তারেক সাহেব– আর তোমার জন্য একদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে আমার মেয়েরা।

ঝুমা বেগম তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে, “তোমরা থাকো শান্তিতে,আমি ই বেরিয়ে যাব।”

তারেক সাহেব আর কিছু বলেন না।ঝুমা বেগমকে রাগানোর মত অপরাধ না করাই শ্রেয় মনে হয় ওনার কাছে।

—————————–

শাহেদ বোর্ডে science এর কিছু বিক্রিয়া করে ছাত্র ছাত্রীদের বললো ,”সবাই বুঝেছো?”

সামনের বেঞ্চিতে বসা নিশুয়া হঠাৎ চোখ মারলো।তা দেখে শাহেদের চোখ গুলো বড় বড় হয়ে যায়।

শাহেদ– এই মেয়ে দাঁড়াও।

নিশুয়া শাহেদের কথায় উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “জ্বি বলুন।”

শাহেদ– এটা কেমন অসভ্যতামি??

নিশুয়া– কোনটা??

শাহেদ– Science teacher কে চোখ মারা টা।

নিশুয়া —- সরি sir ….. ডেয়ার ছিলো।

শাহেদ— স্কুলে এসব করতে আসো?

নিশুয়া তার তিনজন friend কে দেখিয়ে বললো,”এরা বলেছিলো।আর নিশুয়া তালুকদার কোনো বাজিতে হারতে শিখেনি।”

শাহেদ নিশুয়া সহ বাকি 3 জনকে এক পায়ে দাঁড় করিয়ে রাখলো।

মুনিয়া নিশুয়ার দিকে তাকিয়ে, “হতচ্ছাড়ি। আমাদেরকে ও ফাঁসিয়ে দিলি।”

নিশুয়া — ডেয়ার দেওয়ার সময় মনে ছিলো না।

ইতু– আমরা কি জানতাম তুই সত্যি সত্যি এই জল্লাদ টা কে চোখ মেরে বসবি??

নিশুয়া—- এবার তো স্বীকার করবি,নিশুয়া সব পারে।

মিশু — ওকে বইন।তুই all rounder ……

নিশুয়া মুচকি হেসে ক্লাসে মনোযোগ দেয়।।

_______________________(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here