Senior life partner পর্ব ৩

0
2411

#Senior_life_partner
Part —- 3
Afrin Ayoni

রিদীমা ম্যাম!!
পিছন থেকে নিজের নাম শুনে ভ্রু কিঞ্চিত করে দাঁড়িয়ে পড়ে রিদীমা চৌধুরী। লোকটি দৌড়ে এসে রিদীমার সামনে দাঁড়ায়।

— ম্যাম, আপনার কল এসেছে। Emergency….
রিদীমা কথাটা বলার সাথে সাথে লোকটার গাল ঠাস করে চড় বসিয়ে দিল।

রিদীমা– কতবার বলেছি পিছন থেকে কখনো রিদীমা চৌধুরী কে ডাকবে না। রিদীমা চৌধুরী শুধু সামনে এগোতে জানে, পিছনে ফিরে তাকায় না এই রিদীমা চৌধুরী।

লোকটা গালে হাত দিয়ে বেকুবের মত চেয়ে থাকে।এই ভুলটার জন্য রোজ একটা করে চড় খায় সে,তারপর ও এই একই ভুল বারবার করে বসে।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলেও এটা সত্যি যে রিদীমা কে হাজার বার পিছন থেকে ডাকলে ও সে কখনো ফিরে তাকায় না পিছনে। ভুল করে ও না।কি করে একটা মানুষ এতটা solid হতে পারে তা রিদীমাকে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না।
কত attitude 27 বছরের এই মেয়ের।

রিদীমা বিরক্ত নিয়ে, “দাও ফোনটা।” লোকটা রিদীমার ফোন টা এগিয়ে দেয় তার দিকে।

একটা private number থেকে কল এসেছে। রিদীমা কল টা রিসিভ করেই বললো ,,,,
হ্যাঁ Dad ……. বল।

আফজাল সাহেব– তোকে আমি কখনোই চমকে দিতে পারলাম না।

মানে?

আফজাল সাহেব– আমি কত শত নাম্বার দিয়ে কল করি , তারপর ও বুঝে যাস।আজ private number থেকে করলাম, তাও বুঝে গেলি।

ওপ Dad …. এত সামান্য বিষয়ে কেউ চমকায়?

আফজাল– এটা সামান্য??

Yeah Dad …. এটা সামান্য ই।আমার নাম্বার তুমি আর রবিন ছাড়া কারো কাছে নেই। রবিন কখনোই কল দিবে না আমাকে যখন তখন।এই কাজটা তোমার ছাড়া আর কারো নয়।যখন তখন কল দেওয়ার মত দুঃসাহস কারো হবেনা আমার ফোনে।একমাত্র আমার Dad ছাড়া।

আফজাল– আফসোস, বাবা হয়ে ও তোর মত হতে পারলাম না।

Anyway, তুমি কি কোনো প্রয়োজনে কল দিয়েছো।নাকি……??

আফজাল– Dad হয়ে যখন তখন call দেওয়ার অধিকার থাকলে ও অপ্রয়োজনে যে the great রিদীমা চৌধুরী কে কেউ কল দিতে পারে না, সেটা আমার জানা।

So , বলে ফেল । কি প্রয়োজন?বাড়িতে কোনো problem??

আফজাল সাহেব — তুই কি একটু দেশে আসতে পারবি?

Serious কিছু??

আফজাল সাহেব– তেমন কিছু না। আবার কিছু টা সে রকম ই।

হেঁয়ালি রেখে বলে ফেল।

আফজাল সাহেব রিদীমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বললেন।

রিদীমা– Seriously তুমি এই রকম ছোটখাটো কারণে আমাকে দেশে যেতে বলছো?

আফজাল সাহেব– কাঁটা গাছ গুলো ছোট থাকতেই উপড়ে ফেলা উচিত।

রিদীমা কিছু একটা ভেবে, “আজ monday …. আগামী friday ছাড়া আমার হাতে কোনো টাইম নেই। তবে গেলেও সেটা কেবল দুই তিন ঘণ্টার জন্য। আর আমি 2,3 ঘন্টার জন্য বাড়িতে যেতে পারবো না। যা করার বাইরে করতে হবে।”

আফজাল সাহেব– আসতে রাজি হয়েছিস সেটা ই অনেক। বাড়িতে না আসলে ,ভার্সিটিতে??

রিদীমা– আমি ও সেটা ই ভাবছি আমার কাজটা করার জন্য ভার্সিটি ই যথোপযুক্ত জায়গা। তবে…..

আফজাল সাহেব– বাকিটা আমি সামলে নিব।

রিদীমা– দিন দিন smart হয়ে যাচ্ছো,বলার আগেই বুঝে ফেল অনেক কিছু।

আফজাল সাহেব– তোর বাপ,এতটুকু smart না হলে চলে?

রিদীমা– Ok bye ….

আফজাল সাহেব– দাঁড়া দাঁড়া,আমাদের London এর business কেমন চলছে?

রিদীমা– বাবা তুমি কি জানো,তুমি ঠিক কতটা irresponsible….. এই কথাটা শুরুতেই আমাকে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিলো তোমার।

আফজাল সাহেব– Sry my daughter… আমি irresponsible দেখেই তোমার দাদু স্বয়ং নিজের হাতে তোমাকে business টা তুলে দিয়েছেন।

রিদীমা — দাদু নিশ্চয়ই ভুল কিছু করেনি?

আফজাল সাহেব– Obviously না।

রিদীমা– So bye …. এমনিতেই অনেক time waste করে ফেলেছো তুমি।

আফজাল সাহেব– Ok,আগামী শুক্রবার তাহলে দেখা হচ্ছে?

রিদীমা– দেখা হবে কিনা Sure নই,, তবে তোমার কাজ হয়ে যাবে।Bye……….

কলটা কেটে দেয় রিদীমা।আফজাল সাহেব আর কথা বাড়ায় না। কারণ তিনি তার মেয়ে কে খুব ভালো করেই চিনেন।এই মেয়ে যা বলে,সেইটা ই করে।কোনো হেরফের হয় না। একরোখা, তবে ভুল সিদ্ধান্ত নেয় না কখনো। জীবনে পিছুটান বলতে কিছু নেই। সবকিছু টাইম মাফিক।এতে আফজাল সাহেবের কোনো অভিযোগ নেই, বরং উনি তার মেয়ে রিদীমা কে নিয়ে খুব গর্ববোধ করেন।

এইদিকে তালুকদার বাড়িতে,,,,,

হাসতে হাসতে খাটের উপর গড়াগড়ি খাচ্ছে ইসুয়ার বোন নিশুয়া। নিশুয়া খুব ই গম্ভীর টাইপ মেয়ে। কিন্তু ইসুয়া আজ চরম অবাক হল।যে মেয়ের সামনে স্বয়ং mr. Been কে বসিয়ে দিলেও মুখে হাসির রেশ অবধি পরবে না, সে কিনা এভাবে হাসছে?কিভাবে সম্ভব?

ইসুয়া– তুই এভাবে টাকি মাছের মত গড়াগড়ি করছিস কেন?নিশু…….

নিশুয়া — ভার্সিটির ম্যাম হয়ে তুমি কিনা নিজের অবুঝ student দের দ্বারা রেগিং এর শিকার হলে।তারপর আবার ঐ student এর মধ্যে কাউকে ভরা মাঠে চুমু খেলে?বাহ্ meri behen …… প্রথম দিনেই এতদূর?

ইসুয়া– বিষয় টা তেমন কিছু না।

নিশুয়া — তাহলে।

ইসুয়া বিরক্তি নিয়ে, “এসব ছাড়।তোর punishment আছে । তোর জন্য আজ কত বড় লজ্জা পাইছি জানিস?”

নিশুয়া — মানে?

ইসুয়া– তোর সিলেক্ট করা জামা পড়ে ভার্সিটি গেটে পা রাখতেই আমার সব মান সম্মান গেল।

তারপর ইসুয়া নিশুয়া কে জামার চেন খুলে যাওয়ার ঘটনা টা বললো।নিশুয়া সবটা শুনে রীতিমতো হা হয়ে আছে।

নিশুয়া — দেখি , পিছনে ঘুর তো।
ইসুয়া– কেন?
নিশুয়া — তোর পিঠের জোড়া তিলখানা দেখবো।
ইসুয়া— What ????

নিশুয়া — তুই বুঝতে পারছিস, আমি বোন হয়ে কখনোই তোর পিঠে তিল আছে সেটাই জানি না। আর একটা ছেলে কিনা সেটা নিয়ে বিশ্লষণ করে বলে দিল অবধি।ঐটা জোড়া তিল।

ইসুয়া রেগে,”নিশুর বাচ্চা। আজকে তো তোর খবর করেই ছাড়ব। একে তো তোর জন্য মান ইজ্জত ফালুদা হইলো।তার উপর আবার এইসব বলছিস?”

নিশুয়া দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে, পিছনে পিছনে দৌড়াতে থাকে ইসুয়া। দুই বোনের চিৎকারে পুরো বাড়িতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

রান্না ঘর থেকে ইসুয়ার মা ঝুমা বলে উঠলেন,”দুই বোন আবার শুরু করছোস?টম এন্ড জেরির মত।আমি আর পারি না। তোদের বাপ ও একটা অপদার্থ। মেয়েদের নিজেও মানুষ করলো না। আমাকে ও করতে দিল না।সবকটা অমানুষ ই রয়ে গেলি।”

নিশুয়া আর ইসুয়া মায়ের বকা খেয়ে ড্রয়িং রুমে এসে বসলো।ইসুয়া টিভি অন করলো আর নিশুয়া রান্না ঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়াল,,,,

নিশুয়া তার মায়ের দিকে তাকিয়ে, “মিসেস ঝুমা তালুকদার।আপনার কি আমাদের দেখে কোন ভাবে মনে হয় আমরা অমানুষ?”

ঝুমা — এখন আমার গরম খুন্তির দাগ যখন আপনার সাদা ধবধবে গালের উপর পড়ে লাল লাল রঙ ধারণ করবে তখন আপনি নিজে ও টের পাবেন আপনি সত্যি ই অমানুষ।

নিশুয়া চুপসে যায়, “মা।আমি তো মজা করছিলাম।”

ঝুমা– হ্যাঁ, আমি তো আপনার বেয়াইন লাগি।আমার সাথে মজা করেন।দূর হ , বেয়াদব মেয়ে।

নিশুয়া মায়ের ঝাড়ি খেয়ে ইসুয়ার পাশে গিয়ে বসে।ইসুয়া হা হা করে হেসে উঠে।

ইসুয়া– কি?ঝুমা তালুকদার বুঝি আপনাকে মানুষ অমানুষের বিশ্লষণ ব্যাখা সব বুঝিয়ে দিয়েছে।

নিশুয়া অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে রইল বোনের দিকে।

রাতের খাবারে বসেছে রবিন দের বাড়ির সবাই,,,,,,

আফজাল সাহেব কাউকে কল করলেন, ফোনটা রিসিভ করতেই বলে উঠলেন ….

আফজাল সাহেব– Hlw

অন্য পাশে — ( ………………..)

আফজাল সাহেব– আসলে আমি কাল ভার্সিটিতে যাব না, তাই কল করা বিশেষ প্রয়োজনে।

অন্য পাশে– (…………………..)

আফজাল সাহেব– কাল ভার্সিটিতে সব teachers আর students দের নোটিশ দিয়ে দিবেন সামনের Friday ভার্সিটি open থাকবে আর সবাই কে বাধ্যতা মূলক থাকতে হবে।

অন্য পাশে– (………………….)

আফজাল সাহেব– আপনার সাথে এই বিষয়ে আমি পরে আলোচনা করছি। bye…….

কল কেটে খেয়াল করতেই আফজাল সাহেব দেখলেন সবাই একদৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকিয়ে আছেন।

আফজাল সাহেব— কি ?

রবিন — Friday তে ভার্সিটি খোলা মানে?

সিনথিয়া — মামু , Friday তে কেন আবার?আমি যাব না।

আকাশ– মামা বিশেষ কিছু কি? না আসলে হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত ?কিছু জানালে না।

আফজাল সাহেব চোখে মুখে গাম্ভীর্য এনে আকাশ, সিনথিয়া আর রবিনের দিকে তাকালেন।

আফজাল সাহেব– সিদ্ধান্ত নিয়েছি হঠাৎ ই।আর আমার কাউকে কৈফিয়ত দেওয়া লাগবে না। আমি ভার্সিটির কর্তৃপক্ষ হয়ে পুরোপুরি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারি।আর ভার্সিটির অন্তর্ভুক্ত সকলকেই সেদিন থাকতে হবে। যেভাবেই হোক। আর সে যে ই হোক।না থাকলে সে ব্যবস্থা ও করা হবে কঠোর ভাবে।So mind it childs……

তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে, “আর তুমি একজন টিচার হয়ে এভাবে কথা বলছো দেখে সত্যি ই অবাক হলাম।”

আকাশ– আমি এমনি ই জিজ্ঞেস করলাম। আমার এতে কোনো আপত্তি নেই মামু।

আফজাল সাহেব রবিন আর সিনথিয়ার দিকে তাকালেন,,,

রবিন — আমি আমার study তে নিশ্চয়ই কখনো কমতি রাখিনি।নোটিশ পেলে I have no problem….

সিনথিয়া আমতা আমতা করে বললো, “সেদিন আমার একটা friend এর birthday party ছিলো।”

আফজাল সাহেব চোখ রাঙাতেই দেলোয়ার খান বললেন, “সিনথিয়া মামণি পড়াশোনার দিক থেকে কোনো ছাড় নেই। so……..”

সিনথিয়া অসহায় মুখ করে,”ok …… যাব।”

এই ঘটনায় পুরো নিরব দর্শক ছিল বাড়ির মহিলারা।

আফজাল সাহেব মনে মনে স্বস্তি ফেলেন। যাক এইদিকের ব্যবস্থা টা তিনি করে ফেলেছেন । এবার রিদীমা ঐদিক টা সামলাতে পারলেই কেল্লাফতে। যাক,একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন আজ তিনি।

______________________________(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here