সুখ পর্ব ২৪

0
361

#সুখ
#Part_24
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
সাকিব নীলিমাকে নিয়ে দুপুরে বাসায় ফিরলো। তিশা এত বড় টেডি পেয়ে কি খুশি! আর তুলিকে নীলিমা ওর জিনিসগুলো দিলো। সাকিব ঘরে যাওয়ার আগে আম্মুর ঘরে গিয়ে বলে,
-আম্মু কালকে সুহাকে দেখতে আসবে।
-কি বলিস হঠাৎ? (আম্মু)
-হ্যা আম্মু। দুইদিন ধরেই ওরা আসতে চাইছে। আমি ওতটা গুরুত্ব দেইনি কারণ সবেই ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছে। ওরা বলছে আমাদের সমস্যা হলে কাবিন করায় রাখতে পারি।
-ছেলে কেমন?
-আসলে দেখো। আয়োজন করতে হবে। কি কি কিনা লাগবে বলো তো। নয়ত তুমি বুয়াকে নিয়ে একটা লিস্ট কর। রাতে আমি আর আয়ান বাজারে যাব। বিকেলে একটু ওদের নিয়ে বের হব।
-আচ্ছা যা তাহলে।
সাকিব ঘরে চলে এলো। সুহানা আর আয়ান ও নাকি যাবে ওদের সাথে। নীলিমা তো মহাখুশি সবাইকে নিয়ে ঘুরতে যাবে। বিকেলে সবাই রেডি হয়ে বের হয়ে গেলো। কাজের মেয়েকে বলে গেলো আম্মুকে দেখতে। সাকিব ড্রাইভ করছিলো আর নীলিমা পাশে বসা। পেছনে তুলি,তিশা, আয়ান আর সুহানা মজা করছে। সাকিব নীলিমার সাথে টুকটাক কথা বলছে। একটা লেকের পাশে এসে সুহা বলল
-ভাইয়া রাখো। এইখানেই নামি।
সাকিব ও গাড়ি পার্ক করে নামলো। তুলি,তিশা,আয়ান আর সুহা ইচ্ছেমতো এঞ্জয় করছে। ওদের কে দেখে সাকিব বলে
-আয়ান টা আর বড় হলো না। ছোট ই থেকে গেলো।
-হ্যা আমিও তাই ভাবি।
-কিছু খাবে? ওপস তোমার তো আবার ফুচকা ছাড়া চলেনা। এইদিকে ফুচকা দেখছি না। সামনে গিয়ে দিব।
-আচ্ছা। (হাসতে আসতে নীলিমা)
সবাই মিলে ফুচকা খেয়ে এরপর রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনে সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরলো। আসতে আসতে সুহানা বলল,
-ভাইয়া অনেকদিন পর এত মজা করলাম। থ্যাংক্স তোমায়।
-ঠিক বলছিস। (আয়ান)
বাসায় এসে সাকিব আম্মুর ঘর থেকে লিস্ট টা নেয়। আয়ানকে জিজ্ঞেস করে,
-বাজারে যাবি?
-হ্যা যাব। কিন্তু এখন বাজারে কেন যাবা?
-ওহ নো! তোদের তো বলা হয়নি। আগামীকাল সুহানা কে দেখতে আসবে ছেলেপক্ষ।
আয়ানের চোখ তো চড়কগাছ সাথে সুহানা ও অবাক আর সাথে সাথে লজ্জা ও পেলো। আয়ান দৌঁড়ে সুহানাকে খোঁচানো শুরু করে।
-সুহা তুই বউ হবি? কিরে তুই এত বড় কবে হলি? দেখি তোর হাত মাপি? না তোর পা মাপি। হায়হায় মেয়ে বড় হয়ে গেছে।
-আয়ান তুই থামবি। যা এখান থেকে। (সুহা)
সাকিব আয়ানকে নিয়ে বাজারে চলে যায় বাড়ির সামনের থেকে একটা রিক্সা নিয়ে। সাকিব আয়ানকে বলে,
-কাল ভার্সিটি তে যাস না।
-আচ্ছা ভাইয়া।
দুইভাই বাজার করে রাত ১০ টায় বাসায় ফিরে। দেখে টেবিলে সুহা আর নীলিমা বসে আছে। নীলিমা বুয়াকে বলে বাজারগুলো গুছিয়ে রাখতে।
-যাও দুইজন তারাতারি ফ্রেশ হয়ে আসো। খেতে দেই। আমরাও খাইনি এখনো। (নীলিমা)
-দাঁড়াও আসছি। (সাকিব)
আয়ান আর সাকিব চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে এসে ডিনার করতে বসে। সুহা, নীলিমা, আয়ান, আর সাকিব একসাথে বসেই খাচ্ছে। কালকে কিভাবে কি করবে তার প্ল্যানিং করছে। কি রান্না হবে, না হবে সেসব নিয়েই কথা বলছে ওরা। সুহা চুপচাপ খাচ্ছে। ডিনার শেষ করে সাকিব ছেলেপক্ষের লোকদের বলে দুপুরের দিকে আসতে। তারা রাজি হয়। নীলিমা ঘরে গিয়ে সাকিবকে বলে,
-আপনি বাসায় থাকবেন না কাল?
-হ্যা অবশ্যই।
-ফোন রাখেন। ঘুমান। সারাক্ষণ পাইছে একটা ফোন। (সাকিবের হাত থেকে ফোন নিয়ে) কি করেন এত ফোন দিয়ে?
-চ্যাটিং করি।
-কার সাথে? (অবাক হয়ে নীলিমা)
-মেয়েদের সাথে।
-এইটা আপনি বুড়িগঙ্গায় নেমে বললেও আমি বিশ্বাস করবনা। সো আজাইরা বকবক না করে ঘুমান।
-তুমি আসো। তোমায় ছাড়া ঘুমাতে পারবনা।
-পারবেন ঘুমান।
-আসবা নাকি রাগ করব?
-কি আজব লোক! রাগ নাকি বলে বলে করে!
নীলিমা দরজা লাগিয়ে দিয়ে বাতি নিভিয়ে এসে শুয়ে পরে। সাকিব নীলিমাকে জড়িয়ে আছে আর নীলিমা সাকিবকে প্রশ্ন করে,
-আচ্ছা একটা কথা জানার ছিল?
-কি?
-আপনি যে রাতে আমার সাথে এমন করেন পরেরদিন সকালে আমাকে দেখে হাসি পায়না?
-হাসি কেন পাবে? (চোখ বন্ধ করেই সাকিব)
-মনেই হয়না রাতের কথা?
-আরে না। আর মনে হলেই বা কি এতে হাসি কেন পাবে?
-আমার পায়।
-পাগলের অনেক কিছুই পায়। ঘুমাও।
-হুহ
সাকিব তারাতারি ঘুম থেকে উঠে গিয়েছিলো। নীলিমা আগে থেকেই রান্নাঘরে। অনেক কাজ আজকে। সাকিব গিয়ে একটু হেল্প করলো। আয়ান বাড়িটা গোছাচ্ছে। সুহানা ওর ঘরটা গুছাচ্ছে। দুপুরের মধ্যে সব কম্পলিট হয়ে যায়। নীলিমা দ্রুত গোসল করে একটা সুন্দর লং ড্রেস পরে। সবাই একটু গর্জিয়াস ড্রেসই পরে সেদিন। নীলিমা সুহানাকে রেডি করাচ্ছে শাড়ি পরিয়ে।
-ভাবি আনইজি লাগছে। (সুহা)
-এখন একটু লাগবেই সুহা। বিয়ের পর তো ভাবির কথা মনে থাকবেনা। তখন আর আনইজি কি লাগবে?
-এহহ আসছে! কে বলেছে তোমাকে ভুলে যাব? তুমি তো আমার লক্ষী ভাবি। (নীলিমাকে জড়িয়ে ধরে)
-হইছে! এখন রেডি করাতে দাও।
ছেলে পক্ষের লোক চলে এসেছে। ছেলের মা বাবা আর ছোট বোন এসেছে সাথে ছেলে। সাকিব আর আয়ান ওইদিকে ওদের দেখছে। নীলিমা এসে সবাইকে লাঞ্চ সার্ভ করে দেয়। সাকিব এর মাঝে পরিচয় করিয়ে দেয় যে নীলিমা সাকিবের ওয়াইফ। ছেলের বোন বলে উঠে
-বাহ! আপু আপনি অনেক কিউট! অনেক সুন্দর দেখতে।
সাকিব আর নীলিমা হেসে দিল। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ড্রইংরুমে ওরা গল্প করতে বসলো। আম্মুকে ধরে এনে বসালো নীলিমা। আয়ান আর সাকিব দুইজনেই সাদা পাঞ্জাবি পরেছে। নীলিমা পাশে দাঁড়ানো। ছেলেকে দেখে ওদের পছন্দ হয়েছে। কুয়ালিফিকেশন ও ভালো। বাইরে সেটেল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। নীলিমা গিয়ে সুহানাকে নিয়ে আসলো। ছেলে তো আগেই সুহানাকে দেখেছে তাই নতুন করে দেখার কিছু নেই। ছেলের বাবা মায়ের ও পছন্দ হয়ে যায় সুহানাকে। সবকিছু জেনেশুনে মোটামোটি পাকা কথা হয়ে যায়৷ সুহানা ও আর ভাইয়ার উপরে কথা বলেনি। ছেলে দেখতে সুন্দর। অপছন্দের কারণ নেই। সুহানাকে আংটি পরিয়ে দিয়ে যায় আয়মান। হঠাৎ করেই ছেলের মা বলে উঠে,
-আচ্ছা সাকিব শুনলাম আসার সময় তোমার বউ নাকি রেপড?
এমন প্রশ্ন শুনে সাকিব সহ সবাই থতমত খেয়ে যায়। নীলিমা তো পুরোপুরি নিশ্চল হয়ে গেছে। আয়মান বলল,
-আম্মু এইটা কি ঠিক? কেন তুমি ভাইয়ার ওয়াইফ নিয়ে কথা বলছো? সবকিছু তো নিশ্চই জেনেছো। তাহলে এইভাবে আঘাত করার কি মানে আম্মু?
-আয়মান ঠিকই বলেছে। আয়মানের আম্মু সবকিছু জেনেশুনে এইভাবে ধুম করে একথা বলা তোমার উচিৎ হয়নি। (আয়মানের আব্বু)
-আচ্ছা স্যরি। স্যরি সাকিব। (আয়মানের আম্মু)
-না আন্টি ইটস ওকে। আসলে এইটা তো শুধুমাত্র একটা এক্সিডেন্ট সো আমরা ওইটা ভুলে গিয়েছিলাম। (সাকিব)
-আসলেই ভাইয়া আপনার মত মানুষ হয়না। এতকিছুর পরেও ভাবির সাথে সংসার করছেন, সুখে আছেন এইটাই তো অনেক। আজকাল আমরা কয়টা ছেলে এমন কিছু মেনে নেই? (আয়মান)
-নাহ আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি মাত্র, ভালবাসাও ছিল। যাইহোক, কাবিন কবে নাগাদ করাতে চাও?
-তুমি চাইলে আজই। (আয়মানের আব্বু)
-আজ তো আমাদের তেমন প্রস্তুতি নেই। নেক্সট উইকে তাহলে কাবিন করিয়ে রাখি। তুমি কি বলো আম্মু?
-তুই যা বলবি আমিও তাই মেনে নিব। (সাকিবের আম্মু) ও শুধু আমার বড় ছেলে না আমার পুরো সংসারের কর্তা। এই সংসারে ওর কথাই শেষ কথা মানে সবাই। ও বলেছে বলেই সম্বন্ধ করতে আমরা রাজি হয়েছি। আশা করি সেই সম্মানটুকু আপনাদের পরিবারে ও পাবে!
-এসব আপনি কি বলছেন বেয়াইন। সাকিবকে পার্সোনালি আমার খুব ভাল লেগেছে যখন অফিসের সবাই ওর সম্বন্ধে বলছিলো। ও আসলেই ভাল একটা ছেলে। (আয়মানের আব্বু)
-হ্যা আন্টি চিন্তা করবেন না আপনি। ভাইয়া কে আমি চিনি বাট ভাইয়া আমায় চিনেনা। আমি ভাইয়াকে আইডল মানি। (আয়মান)
-আচ্ছা আমাকে নিয়ে পরলে কেন সবাই? (সাকিব)
সাকিব কথা বলছে আর বারবার নীলিমার দিকে তাঁকাচ্ছে। হয়ত সবার সামনে কাঁদতে পারছেনা কিন্তু পরে অনেক কষ্ট পাবে। সবাইকে বিদায় দিয়ে নীলিমা ঘরে গেলো সবকিছু গুছিয়ে। সাকিব আর আয়ান গিয়েছে ওনাদের এগিয়ে দিয়ে আসতে। সাকিব ড্রইংরুমে এসে দেখে নীলিমা নেই। সাকিব ওর ঘরে যায়। গিয়ে দেখে নীলিমা পা ঝুলিয়ে খাটে বসে আছে মন খারাপ করে। সাকিব গিয়ে নীলিমার কাঁধের উপর হাত রাখে। নীলিমা দাঁড়িয়ে গিয়ে সাকিবকে জড়িয়ে ধরে।
-পুরোনো ঘটনার জন্য কি আমাকে বারবার কথা শুনতে হবে মানুষের কাছে?
-একটু আধটু তো মানুষ বলবেই। কিন্তু সেগুলো তে তোমার কান দিলে কি চলবে নীলু? হুম? (নীলিমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে) তোমায় তো মন খারাপ করলে চলবেনা। তুমি না আমার বউ? আমাকে দেখছো কোনো কথা শুনে মন খারাপ করতে? দেখো নাই তো। তাহলে তুমি তার বউ হয়ে কেন করবে? আমি যাতে আর তোমার মন খারাপ না দেখি। বুঝছো? তাহলে কিনতু মাইর দিব আমি।
-একদিন তো খুব জোরে থাপ্পর মেরেছিলেন। মনে আছে আমার হু? (চোখ মুছে নীলিমা)
-সেই জন্য এই যে কিসি দিয়ে দিলাম। (নীলিমার গালে চুমু দিয়ে)
-দিন দিন বুড়ো হচ্ছে আর রোমান্স বাড়ছে। ঢং যত্তসব!(হেসে দিয়ে নীলিমা)
-এই হাসিটাই দেখতে চাই।
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here