সুখ পর্ব ২৩

0
325

#সুখ
#Part_23
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

সাকিব নীলিমাকে ধুম করে ফেলে দেয়। নীলিমা বলে,

-আপনি মানুষ না আর কিছু? পা টা বুঝি আমার গেলো!
-এখন আরো কত কিছু যাবে।
-এই কত কিছু যাবে মানে কি? আপনি তো অনেক খারাপ।
-হ আমি খারাপ জানি।
-দেখেন কালকে আমার ভার্সিটি আছে। পড়া টা শেষ করা লাগবে। এখন ছাড়েন। (উঠতে গেল নীলিমা কিন্তু সাকিব উঠতে দিল না)
-না পারব না। তোমার সব কিছুর দিকে নজর আছে। আমার দিকে নাই কেন?
-আপনার দিকে কি নজর দিব? আজব তো! আপনি না আমার চেয়ে কত্ত বড়। নজর দেওয়া লাগে নাকি?
-কতগুলো দিন হয়ে গেছে তোমাকে আমি কাছে পাই না? (নীলিমার চুলগুলো সরিয়ে)
-পান না কেন? নাকি আপনার সাথে থাকি না? (মুখ বাকিয়ে নীলিমা)
-ভাবি সারাদিন এত কষ্ট কর তারপরে আর তোমাকে জ্বালিয়ে লাভ নেই।
-হায় আল্লাহ! কি ভাবা যে ভাবে আমার জন্য। সরেন এখন। এখন রোমান্স করার সময় না।
-রাত দেড়টা বাজে। ও বলে সময় না। আর কত পড়বা?
-গিয়ে ঘুমান যান। আমি পড়াটা শেষ করে ঘুমাচ্ছি।
-এই মেয়ে তুমি এত আনরোমান্টিক হয়ে যাচ্ছো কেন? নাকি আমাকে এখন ভাল লাগেনা? (নীলিমাকে ছেড়ে দিয়ে সাকিব)
-না লাগেনা। ভার্সিটির ছেলেগুলো এত সুন্দর যে কি বলব! আপনার চেয়েও সুন্দর চুল ওদের। কি স্টাইল বাহ! (যদিও নীলিমা শয়তানি করে বলল কিন্তু সাকিব অনেক কষ্ট পেলো)

সাকিব উঠে বারান্দায় চলে গেলো। নীলিমা হাসছে। প্রায় অনেক সময় হয়ে গেছে কিন্তু সাকিব বারান্দা থেকে আসছে না। নীলিমা বই খাতা গুছিয়ে রেখে বারান্দায় যায়। গিয়ে দেখে সাকিব পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নীলিমা একটু উঁকি মেরে দেখে সাকিব মন খারাপ করে আছে। নীলিমা সাকিবকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। নীলিমার মাথা পুরোপুরি সাকিবের পিঠে হেলিয়ে দেয় নীলিমা। সাকিব মাথা ঘুরিয়ে দেখে নীলিমা।

-আমি আপনাকে মজা করে বলেছি ওইগুলো। আপনি কষ্ট পাবেন আমি জানতাম না। আপনি তো আমার মজা বুঝেন। আজ কেন বুঝলেন না? আমি কোনো ছেলের দিকে তাঁকাই না। কেন তাঁকাবো? আপনি আছেন তো। আমার রিয়েল হিরো। ইভেন আমি জানিও না আমার সেকশনে ছেলে কয়টা। ক্লাস করতে যাই করে আবার চুপচাপ আয়ানের সাথে চলে আসি।
-পড়া শেষ? (সাকিব মাথা ঘুরিয়ে)
-হুম।
-আসো ঘুমাবা। (নীলিমার হাত ছাড়িয়ে সাকিব ঘরে ঢুকে)
-আমি কি একটু বেশিই মজা করে ফেলেছি? আমি তো ওনাকে কষ্ট দিতে চাইনি। (নীলিমা)

নীলিমা ঘরে এসে দেখে সাকিব বিছানা ঠিক করছে। নীলিমা বারান্দার দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে ঘরে আসে। ওয়াশরুম থেকে মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। সাকিব ততক্ষনে শুয়ে পরেছে। নীলিমা এসে লাইট বন্ধ করে ওড়না রেখে সোজা সাকিবের উপরে উঠে যায়। ডান হাত দিয়ে বেড সাইডের ল্যাম্প শ্যাড টা অন করে।

-কি হলো? আমার উপরে কেন? (চোখ মেলে তাঁকিয়ে সাকিব)
-আজকে আমি আপনার উপরেই ঘুমাবো। (সাকিবকে জড়িয়ে ধরে নীলিমা)
-এইভাবে ঘুম কোনোদিন ই আসবেনা। নামো এরপর বালিশে ঘুমাও।
-ঘুমাবো তার আগে……. (নীলিমা থেমে যায়)
-তার আগে কি?
-বুঝে না এখন। (মুখ বাঁকিয়ে নীলিমা)
-কি বুঝব? (হাল্কা হেসে সাকিব)
-ধুর আপনার বুঝতে হবেনা। আমি উঠে যাই। ঘুমাই এখন।

নীলিমা উঠতে যাবে তখন সাকিব ওর হাত ধরে টান দিয়ে আবার ওর উপরে ফেলে।

-কি সমস্যা তোমার? ভার্সিটির ছেলেদের উপর ক্রাশ খাও? ওদের চুল গুলো আমার থেকেও সুন্দর, ওরা দেখতেও সুন্দর। তাই না? (সাকিব)
-ওইগুলো তো আমি মজা করে বলেছি। আমি আমার চাওয়া পেয়ে গেছি। আর কোনো চাওয়া নেই আমার। (সাকিবের গালে চুমু দিয়ে নীলিমা)
-হায় হায় এইটা কি হলো? কে আমায় কিস করলো? সূর্য কোন দিকে অস্ত গিয়েছিলো? (মজা নিয়ে সাকিব)
-এইবার মজা নিলে মেরেই ফেলবো। (সাকিবের টি শার্টের নেক ধরে)
-গুন্ডি কোথাকার। আমায় থ্রেড করে। (নীলিমাকে জড়িয়ে ধরে সাকিব)

পরেরদিন সকালবেলা…

নীলিমা রেডি হয়ে সাকিবের সাথে বেরিয়ে যায় ভার্সিটির জন্য। সকালে উঠে তিশা আর তুলির জন্য টিফিন রেডি করে। সাকিবের জামা কাপড় আয়রন করে আর সাকিব ঘর গুছিয়ে ফেলে। দুইজন হাতে হাতে করে কাজ সেরে ফেলে। এরপর সাকিব রেডি হয়ে অফিসে যায় আর নীলিমা সাকিবের সাথে ভার্সিটি তে যায়। প্রতিদিন সাকিব নীলিমাকে নামিয়ে দিয়ে যায় আর আয়ান গিয়ে নিয়ে আসে। আয়ানের ভার্সিটির ক্লাস ও শেষ হয়ে যায় তখন। দুইজন একসাথেই বাসায় ফিরে।

-আজকে আমি গিয়ে নিয়ে আসব তোমাকে। (সাকিব ড্রাইভ করতে করতে)
-কেন? অফিস?
-চলে আসবো। তেমন কোনো কাজ নেই। শুধু শুধু বসে থাকার মানেই হয়না।
-আচ্ছা ভালই হবে। মেয়েরা বলছে অনেকদিন নাকি বাইরে কোথাও যায় না। আজকে বের হবেন?
-হ্যা হওয়াই যায়। আগামীকাল সুহাকে দেখতে আসবে। একটা ভাল সম্বন্ধ এসেছে ওর জন্য।
-কবে? আমাকে তো কিছু বললেন না?
-তোমাকেই আগে বললাম। আজকে বাসায় ফিরে জানাবো আম্মুকে আর সুহাকে।
-সুহার তো কোনো পছন্দ নেই। ঠিক মত খোঁজ নিয়েছেন তো ছেলের ব্যাপারে?
-আগে দেখে যাক তারপর খোঁজ নিব যদি সুহার আর আমাদের পরিবারের পছন্দ হয়।
-হ্যা তাই ভালো। ছেলেকে চিনেন?
-নাহ। সুহাকে কোথায় যেন দেখেছে ওনার ছেলে। এরপর বিয়ের জন্য প্রপোজাল পাঠিয়েছে। আমাকে কল করেই তো জানালো।
-ও।

সাকিব নীলিমাকে ভার্সিটি তে নামিয়ে দিয়ে আবার ক্লাস শেষ হলে ওকে নিয়ে আসলো। নীলিমার ছুটি হওয়ার ১৫ মিনিট আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিল সাকিব। নীলিমা ওর তিনটা ক্লাসমেট দের সাথে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে আসছিলো। ওর ক্লাসমেট রা সাকিবকে দেখেনি। নীলিমা দূর থেকে আঙুল দিয়ে দেখালো ওইটাই ওর বর। ওর ফ্রেন্ডরা সামনে এসে বলল,

-হ্যালো ভাইয়া।
-হাই! (সানগ্লাস খুলে সাকিব)
-আমরা নীলিমার ই ফ্রেন্ড। একসাথেই বসি। আপনার ব্যাপারে ও অনেক কিছু বলে তো তাই দেখার ইচ্ছা ছিল খুব। এখন দেখছি ভুল কিছু বলে না।
-কি বলে? (সাকিব)
-আপনি নাকি অনেক ভালো হাজবেন্ড। অনেক সাপোর্টিভ, অনেক বেশি কেয়ারফুল ওর ব্যাপারে। আর দেখতেও নাকি অনেক সুন্দর।
-এতগুলো মিথ্যে কথা একসাথে বলছো তুমি? (সাকিব নীলিমাকে জিজ্ঞেস করলো)
-হ্যা মিথ্যে কথা আসছে। চলেন এখন। বাই!

সাকিব গাড়ি চালাতে চালাতে নীলিমাকে বলছিলো,

-ক্লাস করতে যাও নাকি সাংসারিক প্যাচাল পারতে?
-দুইটাই। অফ পিরিয়ডে বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়। সেই থেকেই আর কি!
-হ্যা মেয়েদের কাজ ই তো এইটা।
-আপনার মত ইন্ট্রোভার্ট হয়ে তো থাকবেনা মানুষ। শুনেন আমার কিছু জিনিস লাগবে। টাকা আছে সাথে?
-আছে তো। ক্রেডিট কার্ড তো সাথেই থাকে। কি লাগবে?
-সেইটা জেনে আপনার লাভ নেই। শপিংমল এর সামনে গাড়ি পার্ক করুন।
-বলো কি লাগবে? আমাকে বলতে সমস্যা কই?
-আছে সমস্যা।
-আজিব মেয়ে।

নীলিমাকে নিয়ে সাকিব মলের ভেতর গেলো। নীলিমা খুঁজেই পাচ্ছেনা ওই দোকানগুলো কোথায়! এইবার তো মনে হচ্ছে সাকিবকে বলাই লাগবে। সাকিব বলল,

-তুমি কি মল ভিজিট করতে আসছো নাকি কিনতে?
-আরে দোকানই তো খুঁজে পাচ্ছিনা। (বিরক্ত হয়ে নীলিমা)
-কিসের দোকান?
-বলতে পারব না। (পুরো বিরক্ত) চলেন চলে যাই। আমি আমার ফ্রেন্ডদের নিয়ে আসব নে কিনতে।
-থাপ্পর মেরে দাঁত যা আছে ফালায় দিব। সে ফ্রেন্ডদের সাথে আসে কিনতে! আমি বুঝেছি চলো এখন। এতদিন হয়ে গেলো বিয়ে হয়েছে এখনো হাজবেন্ড কে বলতে লজ্জা পায়। আজিব চিজ তুমি ভাই!
-আমি আজিব চিজ?
-না আমি। সেকেন্ড ফ্লোরে চলো।
-আপনি জানেন কিভাবে সেকেন্ড ফ্লোরে আছে দোকান?
-তানহার সব জিনিস আমিই কিনতাম তাই জানি।
-লজ্জা নেই ছিঃ
-বাসায় যাই আজকে তারপর জবাব টা দিব। লজ্জা কি আমার থাকবে?
-না আমার।
-তোমার ও থাকা উচিৎ নয়।

নীলিমা তুলি আর ওর জন্য ব্যক্তিগত কিছু জিনিস কিনলো। সাকিব ই কিনে দিয়েছে। বেরিয়ে আসার সময় সাকিব জিজ্ঞেস করে,

-আর কিছু লাগবে?
-তুলি বলছিলো ওর কয়টা টি শার্ট লাগবে বাসায় পরার জন্য। তিশার জন্য একটা পুতুল নিয়েন তো। মেয়েটা অনেকদিন ধরেই আমাকে বলছে।
-আসো।

সাকিব তুলির জন্য নিজেই চয়েজ করলো চারটা টি শার্ট। তিশার জন্য পুতুল ও কিনলো। এরপর বেরিয়ে এলো।

-যখন যা লাগে আমায় বলবা। আমি এনে দিব। সেই কবের থেকে লাগত এইগুলো আর তুমি আজ বললা। আর ইন্ট্রোভার্ট নাকি আমি! (সাকিব)
-আসলে আপনাকে এইসব বলতে লজ্জাই লাগে। ভেবেছি ফ্রেন্ডদের নিয়ে যাব বাট আয়ান গিয়ে নিয়ে আসে তাই চান্স পাইনা। এখানে আমি কিছু চিনিও না তাই আসার সাহস ও পাইনা।
-পা কেটে ঝুলিয়ে রাখবো একা একা বের হতে চাইলে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here