উপন্যাসের সারাংশ প্রহর পর্ব ৭ +৮

0
789

#উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর [৭]
#sadiya_jannat_sormi (লেখিকা)

ইশতিয়াক লাফ দিয়ে উঠে দাড়িয়ে পড়লো।যেই মেয়ে টা ওকে ভালোবাসে সে কিনা ওকেই বকাঝকা করেছিল। মাথার চুল গুলো টানতে টানতে নিচে যাচ্ছিল তখন আয়শি ওর হাত ধরে টেনে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল।আয়শির এমন কাজে যারপরনাই বিরক্ত হলো ইশতিয়াক,আয়শির থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে বলল,,,,,,
কি ব্যাপার আয়শি? এইভাবে হুটহাট ফালতু কাজ করা কিন্তু আমার মোটেও পছন্দ নয় তুমি তা জানো তারপরও এসব কি হ্যা?
আয়শি ইশতিয়াকের কথার কোনো উত্তর দিলো না, পায়ে পায়ে এগিয়ে আসতে লাগলো ওর দিকে। ইশতিয়াক পিছিয়ে না গিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল, এই উদ্ভট মেয়ে টা কি করতে চায় সেটাই সে দেখবে। আয়শি ওর দিকে এগিয়েছে অনেক টাই,আর একটুও ফাঁকা নেই ওদের দুইজনের মধ্যে,কিছু উল্টো পাল্টা করার মতলব নিয়ে আয়শি ওর মুখের দিকে মুখ এগিয়ে দিচ্ছিল তখনই ইশতিয়াক ঠাস করে থা’প্প’র বসিয়ে দিলো আয়শির গালে। থা’প্প’র দিয়ে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে কিছু টা দূরে সরিয়ে দিল ওকে তারপর বললো,,,,

এই টার জন্যই কি এইভাবে মুখ এগিয়ে দিচ্ছিলে আমার দিকে?দেখেছো আমি কি করে তোমার মনের কথাটা বুঝে গেছি, এরপর থেকে যদি আবার এইরকম মিষ্টি থা’প্প’র খাওয়ার ইচ্ছা করে তোমার তাহলে এইভাবে ই আমাকে নিয়ে রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ো বেইবি।

ঠোঁটের কোণে একটা বাঁকা হাসির রেখা টেনে ইশতিয়াক রুমের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে গেল। আয়শি গালে হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো, রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বললো,, এইভাবে আর কতদিন আমার থেকে দূরে সরে থাকবে ইশতিয়াক? একদিন না একদিন তো তোমাকে আমার কাছে আসতেই হবে আর সেইদিন খুব বেশি দুরে না। চেয়েছিলাম তোমাকে কিস করতে আর তুমি ভাবলে তোমার এই লোহার মত হাতের থা’প্প’র খেতে চেয়েছি।ভাবো বেইবি ভাবো, সময় আমারো আসছে, খুব শিঘ্রই তোমাকে আমি আমার সাথে করা প্রতিটি ব্যাড বিহেবিয়ার এর শাস্তি দিবো তখন তুমি কি করবে?গাল থেকে হাত টা সরিয়ে নিয়ে একটা ডেভিল স্মাইল দিলো আয়শি।

__________________________________

পুরো বাসা জুরে অহনা কে দৌড়িয়ে বেড়াচ্ছে মেঘা।আজ অহনার মুক্তি নেই মেঘার হাত থেকে, রাগে গজগজ করছে মেঘা।এই গাধা টাইপের মেয়ে টা ওই বদমাইশ ছেলে টা কে ওর রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছে।তার উপর এখন বলছে ও নাকি ছেলে টা কে রিপোর্ট টা দিতে চেয়েছিলো, ওর কি খেয়ে দেয়ে আর কোনো কাজ নেই যে নিজের রিপোর্ট অন্য কাউকে দান করতে যাবে। অহনা ও পড়েছে বিপদে, না বুঝে রিপোর্ট তো দিয়ে দিয়েছে কিন্তু এখন মেঘার হাত থেকে রক্ষা পাবে কি করে? এই ভর দুপুরে পুরো বাসা জুরে অহনা আর মেঘা কে ছুটাছুটি করতে দেখে শায়লা বেগম চিন্তায় পড়ে গেলেন। নিশ্চয়ই অহনা আজকেও মেঘার কথার অবাধ্য হয়েছে, ওর কথা শুনে নি তাই এখন মেঘা ওকে। তিনি এগিয়ে এসে দুই মেয়ে কে থামিয়ে দিয়ে বললেন,,,,

কি হয়েছে তোদের? এইভাবে ছুটাছুটি করছিস কেন বলতো?

কি হয়েছে জিজ্ঞেস করছো,বলো কি হয় নি? তোমার এই গুনধর মেয়ে আমার সিটি স্ক্যান এর রিপোর্ট টা একটা বাজে উদ্ভট বদমাইশ ছেলে কে দিয়ে দিয়েছে আবার বলছে আমি না কি ওই ছেলে টা কে রিপোর্ট টা দিতে চেয়েছিলাম।(মেঘা)

মেঘার কথা শুনে শায়লা বেগম খানিকটা রেগে গেলেন।
এইসব কি সত্যি অহনা? তুই ওর রিপোর্ট টা ছেলে টা কে দিলি কোন বুদ্ধিতে, মাথায় কি শুধু গোবর সার নাকি তোর!যাকে তাকে রিপোর্ট দিয়ে বেরাচ্ছিস।(শায়লা বেগম)
অহনা কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।প্রায় পাঁচ মিনিট পরে বললো,,সরি মেঘু, আমি দুই দিনের মধ্যে তোর রিপোর্ট টা আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসবো। তাঁর পর একটু দাঁত গুলো বের করে দিয়ে বললো,, তুই কোন চিন্তা করিস না, আমি আছি তো না কি?

হ্যা তুই আছিস বলেই তো চিন্তা হচ্ছে আমার, কোন দিন না জানি তুই আমাকেই অন্য কারো কাছে বিক্রি করে দিস।(মেঘা)
অহনা কাচুমাচু হয়ে বললো,,,এই ব্যাপারে পরে কথা হবে,চল এখন আমরা কিছু খাবার খেয়ে নিই। রাতে তো আবার হসপিটালে যেতে হবে লিরার বাবা কে দেখার জন্য,চল।

____________________________________

রাত এখন এগারোটা বাজে। জানালার পাশে বসে আপন মনে ভাবছে মেঘা। আজকের দিনে যা কিছু হয়েছে সবকিছু কেমন জানি লেগেছে তার।লিরার বাবা কে যখন ও রক্ত দিতে যাচ্ছিল তখন কেমন জানি একটা অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছিল তার, একটা অদ্ভূত রকমের অস্বস্তি কাজ করছিল ওর মধ্যে। রক্ত দেওয়ার পর পরই তো বাসায় চলে এসেছে তখন আর ওর বাবাকে দেখতে যাওয়া হয় নি।তাই রাতে যখন লিরার বাবা কে ও দেখতে গেলো তখন ও লিরার বাবা কে দেখে চমকে উঠে ছিল।কারন ওর বাবার মুখের আদল টা ঠিক ওর মতই,কেউ যদি ওদের একসাথে দেখে তাহলে চোখ বন্ধ করে বলে দিবে ওরা দুজন বাবা মেয়ে।লিরার বাবা কে দেখে কেন জানি মেঘার প্রচুর পরিমাণে রাগ হচ্ছিল, রাগে সারা শরীর কাপতে শুরু করেছিল। কোনো মানুষ কে দেখে এর আগে এতো পরিমাণে ও কখনো রাগে নি তাও আবার কোনো কারণ ছাড়াই। বেশিক্ষণ কেবিনে ও থাকতে পারে নি, পাঁচ মিনিট পরই ও বেরিয়ে এসেছিল,যদি থাকতো তাহলে রাগের বশে কিছু একটা করে বসতো ও। লিরা মেয়ে টা কে ওরা হসপিটালে ই রেখে এসেছে,লিরা ওদের ওর সব সমস্যার কথা বলেছিল।লিরা রা যেই বাসায় ভাড়া থাকতো সেই বাসায় বেশ কিছু দিন ভাড়া না দেওয়ার কারণে ওদের আর থাকতে দিবে না।আর কোথাও ওর যাওয়ার জায়গাও নেই তাই মেঘার কাছে সাহায্য চাইছিল।মেঘা ওকে আশ্বাস দিয়ে এসেছে যে কালকে সকালে ও লিরার একটা ব্যাবস্থা করে দিবে। লেখিকা-সাদিয়া জান্নাত সরমি, এইভাবে হুটহাট করে তো আর কারো সাহায্য করা যায় না তাই ও কাল পর্যন্ত সময় নিয়েছে।মেঘা আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল, আকাশে আজ চাঁদ নেই মেঘাচ্ছন্ন আকাশ।আজ আর ওর মায়ের সাথে কথা বলা হলো না, মা হয়তো রাগ করবে ওর উপর কিন্তু ও কি করবে আজ তো চাঁদ কে দেখাই যাচ্ছে না। মনে মনে বললো সরি মা,আজ তোমার সাথে কথা বলতে পারলাম না। আকাশে চাঁদ না উঠলে মেঘার মন ভালো থাকে না, চাঁদের দিকে তাকিয়ে নিজের মনে কথা বলে সে আর ভাবে তার মা তার সব কথা শুনছে। মাকে নিয়ে সে নিজের একটা কাল্পনিক জগত বানিয়ে নিয়েছে যেটার মূলে হচ্ছে চাঁদ। কিছুক্ষণ চাঁদের দিকে মন খারাপ করে তাকিয়ে থেকে মেঘা ঘুমাতে চলে গেল।

___________________________________

পাংশুটে মুখ করে মায়ের সামনে বসে আছে মাহদী। একটু আগেই মা ধমক দিয়ে সবকিছু জেনে নিয়েছেন ওর থেকে, নিজের পেশেন্টের প্রেমে পড়ে গেছে তার ছেলে এই ব্যাপারটা আফরোজা চৌধুরী ঠিক কিভাবে নিবেন সেটা বুঝে উঠতে পারছে না মাহদী। বারবার হাত ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে,দশ মিনিট ধরে মা চুপচাপ বসে কি একটা যেন ভাবছেন, এই দেখে মাহদীর মনে হচ্ছে মা হয়তো বা ধ্যান ধরেছেন এই ভেবে যে ছেলেটা শেষে কি না পেশেন্টের প্রেমে পড়লো। একটু পরে মাহদীর ধৈর্যের অবসান ঘটিয়ে আফরোজা চৌধুরী মুখ খুললেন,,,,

মেয়েটার বাসা কোথায় আর ও দেখতে কেমন?
মায়ের প্রশ্ন শুনে মাহদী ঢোক গিললো, মা কি এখন ওর মেঘ পাখি কে ব’কা’ঝ’কা করবে না কি?মেঘ পাখির তো কোনো দোষ নেই,ও বেচারি তো জানতো ও না যে মাহদী ওকে ভালোবাসে। ভয়ে ভয়ে বললো,,

মা তুমি কি ওকে গিয়ে ব’ক’বে? দেখো ওর কিন্তু কোনো দোষ নেই এতে,ও আমাকে কোনো কিছু বলে নি, আমি নিজে থেকেই ওকে ভালোবেসে ফেলেছি তাই আর কি!(মাহদী)

মাহদীর কথা শুনে আফরোজা চৌধুরী বিরক্তি নিয়ে বললেন,,, তুমি বড় হয়েছ ঠিকই মাহদী কিন্তু তোমার আমার প্রতি ধ্যান ধারণা টা ঠিক আগের মতই রয়ে গেছে। বলছি কি আমার ছেলের বউ কে কি আমি জানতে পারবো না?ও দেখতে কেমন, ওর পরিবারের সদস্যরা সবাই কেমন, আশপাশের পরিবেশ কেমন ওদের সেইসব কিছু জেনে তারপরেই তো আমি ওই মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দেবো।

মাহদী তো মায়ের কথা শুনে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলো। মা মেনে নিয়েছে ব্যাপার টা, ভাবতেই ওর খুশি লাগছে, এখন শুধু অপেক্ষা মেঘ পাখির উত্তরের।

চলবে ইনশাআল্লাহ

[#উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর [৮]
#sadiya_jannat_sormi (লেখিকা)

এক সপ্তাহ পর,,,,,,,,,

এই এক সপ্তাহের মধ্যে অনেক কিছুই বদলে গেছে।মেঘা,লিরা, অহনা আর ইশতিয়াক এর জীবনের মধ্যে একটা ঝড় বয়ে গেছে। ইশতিয়াকের জীবনে এসেছে প্রেমের ঝড় আর লিরা,মেঘার জীবনে এসেছে অতীতের কালো সত্যির ঝড়। ওইদিন সকালে হসপিটালে গিয়ে লিরার বাবার নাম জেনে হতবাক হয়ে গিয়েছিল মেঘা,তাই কৌতুহল বশত ওর মায়ের নাম জিজ্ঞেস করতেই লিরা বলে যে ওর মায়ের নাম মিথি।মেঘা শুনে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল,যার জন্য ওর মা ওকে ছেড়ে চলে গেলো শেষে ও কি না তাকেই রক্ত দিয়ে বাঁচালো।তারপরে মেঘা ভাবলো যে যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে কিন্তু এখন তো ওকে রি’ভে:ঞ্জ নিতে হবে। ভুল করে বাবা নামের মানুষ টিকে ও ওর শরীরের বয়ে চলা রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছে কিন্তু তাই বলে তো আর এই পাপি লোকটাকে ছেড়ে দেওয়া যায় না।লিরা কে বাসায় নিয়ে এসে মেঘা ওর মায়ের ডায়েরি টা দেখায় আর ওর বাবার আর ওর মায়ের সমস্ত কালো সত্যি লিরার সামনে নিয়ে আসে। সবকিছু জানার পর লিরা কি করবে বুঝতে পারছিল না, নিজের বাবা মায়ের সম্পর্কে এতো বড় একটা জঘন্য সত্যি জানার পর লিরা একেবারে ভেঙে পরেছিল।লিরার এই কঠিন একটা সময়ে ওর পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই,যাকে বাঁচানোর জন্য সে এখানে ওখানে ছুটে বেড়াচ্ছিল সেই একটা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে আর সেটা হচ্ছে ওর ক্লাসমেট এর মা।মেঘা লিরা কে নিজের সাথে ওর খালামনির বাসায় নিয়ে আসে ও এই বাড়িতে থাকবে বলে। শায়লা বেগম এতে ঘোর আপত্তি করেছিলেন,যার জন্য তিনি বোন কে হাড়িয়েছেন তাকে এই বাসায় স্থান দিতে নারাজ তিনি। কিন্তু পরে মেঘার জেদের কারণে হার মানতে হয়েছে তাকে।মেঘার এক কথা সে তার বোন কে নিজের কাছেই রাখবে,এতে যদি খালামনির কোনো সমস্যা হয় তাহলে বলে দিতে পারে সে তার বোন কে নিয়ে এখান থেকে চলে যাবে।ওর এমন কথা শুনে শায়লা বেগম আর টু শব্দটি পর্যন্ত করলেন না, এই মেয়ে টা তার কলিজার টুকরা ।সে যদি বাসা থেকে চলে যায় তিনি কি নিয়ে বাঁচবেন, নিজের মেয়ের থেকেও যে মেঘার স্থান আগে।

?

লিরা আজ কয়েকদিন হলো মেঘার খালামনির বাসায়। এই কয়দিন সে চুপচাপ ছিল, কারো সাথে কোন রকম কথা বলে নি এমনকি মেঘার সাথে ও না।মেঘা ও কোনো রকম বিরক্ত করে নি তার বোন কে, মানসিক ভাবে সে এখন মেঘার সাথে কথা বলার জন্য প্রস্তুত নয়। সন্ধ্যার দিকে মেঘা ছাদে এসে এক কোনায় দুটো চেয়ার রাখা আছে, তার একটাতে বসলো। কোন কিছু ভালো লাগছে না তার,ওই বদমাইশ ছেলে টাকে নিয়ে যতো ধরনের চিন্তা ভাবনা সব এসে ঘিরে ধরছে তাকে।দুই দিন আগে ওই ছেলে টা এসে কি সব কথা বলে গেল ওকে,ও নাকি ওই ছেলে টা কে কিসের একটা চিরকুট দিয়েছিল। তা-ও ওর রিপোর্টের ভিতরে লুকিয়ে, ছেলে টা এসে রিপোর্ট টা তো ফেরৎ দিয়েছেই সাথে ছোট একটা চিরকুট হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেছে।এটা নাকি ফিরতি চিরকুট, ওর উত্তর লেখা আছে এই চিরকুট টাতে। অদ্ভুত ধাঁচের ছেলে টা তো ওকে কিছু বলার সুযোগ টুকু দিলো না, নিজের মতো কিছুক্ষণ বকবক করে চলে গেলো। ইশতিয়াকের দেওয়া চিরকুট টা মেঘা খুলেও দেখেনি অহনাকে দিয়ে বলেছে এটা যেন পুড়িয়ে ফেলা হয়। কিন্তু বেচারি অহনা সেটা না পুড়িয়ে নিজের কাছে লুকিয়ে রাখলো আর মেঘা কে বললো ও সেটা পুড়িয়ে দিয়েছে।এখন ভাবনার বিষয় টা হচ্ছে ওর রিপোর্টের ভিতরে চিরকুট টা গেল কি করে, একটু পরেই মেঘার ভাবনায় ছেদ পড়ল কারো ডাকে। ঘরে তাকিয়ে দেখে লিরা এসে পাশের চেয়ারে বসেছে। শুকনো গলায় লিরা বললো,,,,

কেমন আছো তুমি মেঘাপু?(লিরা)

ধুর পাগলি, আমাকে তুমি আপু বলছো কেন? আমরা তো সেম ক্লাস,সেম এজ আর আমি ভালো আছি।(মেঘা)

নাহ, আন্টির ডায়েরি পড়ে আমি যা বুঝেছি তুমি আমার থেকে কয়েক মাস হলেও বড় তাই আমি তোমাকে আপু বলেই ডাকবো। বাবা আমার দুশ্চরিত্রা মায়ের জন্য আন্টিকে আর তোমাকে ছেড়ে দিয়েছিল যার মূল কারণ হলাম আমি। আমি যদি তখন ওদের পাপের ফসল হয়ে মায়ের গর্ভে না আসতাম তাহলে হয়তো আজ আন্টি বেঁচে থাকতেন। তুমি ও কাউকে মা বলে ডাকতে পারতে কিন্তু সেটা আমার জন্য সম্ভব হলো না। তারপরও তুমি আমাকে তোমার বোনের স্থান দিলে, সবকিছু ভুলে আমাকে তোমার কাছে টেনে নিলে, আমার জন্য তুমি এতো দিনের ভালোবাসার খালামনির কে ছেড়ে দিতে চাইলে কেন আপু?(লিরা)

লিরার প্রশ্ন শুনে মেঘা হাসলো, তারপর বললো,,,,,

ওদের পাপের শাস্তি তুমি কেন পাবে বোন?পাপ ওরা করেছে, আমার মায়ের মৃত্যুর জন্য ওরা দায়ী, তুমি তো নয়। যেভাবেই হোক না কেন তুমি তো আমার বোন, ওদের জন্য আমি কি করে আমার বোন কে ছেড়ে দিতে পারি বলো!(লেখিকা- সাদিয়া জান্নাত সরমি)লাবীব রহমান যা করেছে তার জন্য ওনার কোনো ক্ষমা নেই আমার কাছে কিন্তু তুমি কোনো অপরাধ করো নি। শুধু ওদের অপরাধের ফল হয়েছো তুমি,তাই তোমাকে আমি আমার কাছে টেনে নিয়েছি।(মেঘা)
লিরা আর কিছু না বলে উঠে এসে মেঘা কে জড়িয়ে ধরলো।মেঘাপুর মতো ওরও এখন লাবীব রহমানের উপর রাগ আর ঘৃনা জন্মেছে, ওইদিন হসপিটাল থেকে আসার পর আর একটা বারের জন্যও লাবীব রহমান কে দেখতে যায় নি সে। হসপিটাল থেকে একটা নার্স ওকে ফোন করে বলেছিল যে ওর বাবার জ্ঞান ফিরেছে আর উনি নাকি ওকে খুঁজছে।ও নার্স কে মুখের উপর বলে দিয়েছিল যে ওনাকে বলে দিন যে ওনার মেয়ে মা’রা গেছে আর আপনিও ওনার আপডেট দেওয়ার জন্য আমাকে কখনো ফোন করবেন না।

______________________________________

এক সপ্তাহ হয়ে গেল কিন্তু মাহদী তার মেঘপাখির দেখা পেল না এখনো। ভার্সিটি তে কয়েক বার টহল দিয়ে এসেছে এই পর্যন্ত কিন্তু নাহ, তার মেঘ পাখি ভার্সিটিতে আসে নি। অস্থির অবস্থায় এই কয়েক দিন কেটেছে মাহদীর, কোনো কিছুতেই মন বসাতে পারেনি এই কয়েক টা দিন। অবশেষে আজ সকালে মেঘ পাখির সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে ভার্সিটির পথে আবার রওনা দিল মাহদী। আজকে যদি ও ভার্সিটি তে মেঘ পাখির দেখা না পায় তাহলে সে সোজা মেঘ পাখির বাসায় চলে যাবে। গিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে আসবে একজনকে এতো দিন অপেক্ষা করানোর ফল কি হয়! আচ্ছা মেঘ পাখি ওর চিরকুট টা পড়েছে তো, না আবার ফালতু কাগজ ভেবে ফেলে দিয়েছে ডাস্টবিনে।যদি এটা হয় তাহলে সে এইবার সরাসরি প্রপোজ করবে,মেঘার থা’প্প’র খাওয়ার আর ভয় পাবে না। এইসব ভাবতে ভাবতেই মাহদী গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো। আনমনে ড্রাইভ করছে সে, হঠাৎ করে ই সামনের দিকে চোখ চলে গেল তার। তাড়াহুড়ো করে গাড়ি ব্রেক করে তাকালো ওদিকে, দেখতে পেল,মেঘা একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে অন্য একটা ছেলের সাথে খুব রেগে রেগে কথা বলছে। গাড়ি থেকে নেমে এসে মাহদী সোজা ওদের দিকে এগিয়ে গেল, গিয়ে যা শুনলো তাতে ওর মনে হলো এই কথা গুলো শুনার আগে ওর ম’রে যাওয়া উচিত ছিল।কি লজ্জা কি লজ্জা, এতো ভালোবাসা দিয়ে লেখা চিরকুট টা কিনা শেষ পর্যন্ত একটা ছেলের হাতে পড়লো।যাকে লিখেছিল সেতো পেলোই না উল্টো আরেক টা ছেলে সেই চিরকুট টা পড়ে নিলো।কি লজ্জার ব্যাপার একটা মাহদীর কাছে, ছিঃ

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here