#উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর [বোনাস পর্ব]
#sadiya_jannat_sormi
ইশতিয়াকের রুম থেকে বেরিয়ে এসে আয়শি সোজা ওর মায়ের কাছে গেল। গিয়ে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বললো,,, মামনি এইভাবে আর কতো, আমার কিন্তু এইসব কিছুই আর সহ্য হচ্ছে না। ইশতিয়াক দিন দিন আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আমার উপস্থিতি ওর মোটেও ভালো লাগছে না এখন। তুমি হয় তাড়াতাড়ি তোমার ছেলের সাথে আমার বিয়ে দাও নাহলে আমি পাপা কে বলে তোমার এমন অবস্থা করবো যে তুমি স্বপ্নেও ভাবতে পারবে না। ইশতিয়াকের মা ইলিনা আহমেদ আয়শির কথা শুনে কিছু টা ঘাবড়ে গেলেন তারপর মুখে একটু হাসির রেখা টেনে আয়শি কে ওনার পাশে বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,,,
এইভাবে বলছিস কেন মা?ইশতিয়াকের সাথে তো তোরই বিয়ে হবে আর তোদের তো বিয়েও ঠিক হয়ে আছে। ইশতিয়াকের তো এখন কাজের খুব চাপ এইজন্য ই ও তোকে সময় দিতে পারছে না বলে তুই এরকম টা ভাবছিস।
ইলিনা আহমেদের কথা শুনে আয়শি ওনার বুকে মাথা এলিয়ে দিয়ে আদুরে গলায় বললো,, তারপরও আমার খুব ভয় হয় মামনি, ইশতিয়াক যদি আমাকে বিয়ে না করে তাহলে আমি বাঁ’চ’বো না মামনি, আমি ওকে খুব ভালোবাসি। ওকে ছাড়া তো আমি আর অন্য কিছু চিন্তাও করতে পারি না। তুমি একটু তোমার ছেলে কে বলে দিয়ো যেন আমাকে একটু হলেও ও সময় দেয়, তাহলেই আমি খুশি থাকবো।
আয়শির কথা শুনে ইলিনা আহমেদ মনে মনে বললেন, তুই ম’রে গেলেই তো আমার চিন্তা শেষ, ঝামেলা মুক্ত হই আমি।না পেরে শুধু মাত্র ইশতিয়াকের সাথে বিয়ে দিচ্ছি তোর,যদি পারতাম তাহলে নিজের হাতে মে’রে ফেলতাম। এইসব ভাবতে ভাবতেই ইলিনা আহমেদ আয়শির গলার কাছে হাত নিয়ে এলেন, তখনি আয়শি বললো,,,,
কি হলো মামনি, তুমি আমার গলায় হাত দিচ্ছো কেন?
ইলিনা আহমেদ একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন, একটুর জন্য ওনার ভাবনা টাকে সত্যি তে পরিনত করতে যাচ্ছিলেন তিনি।
কই নাতো,তোর গলার এই নেকলেস টা খুব সুন্দর লাগছে তাই হাত দিয়ে দেখছিলাম আর কি।(ইলিনা আহমেদ)
আয়শি আর কিছু বললো না। ইশতিয়াক কে ও নিজের করে পাবে এই ভাবনাতেই মগ্ন হয়ে গেছে এখন, ইশতিয়াক ওর ভালোবাসা নয় জেদ।ওর যা চাই তাই আদায় করে নেয় যে কোনো মূল্যেই হোক না কেন, বাবার পলিটিক্যাল পাওয়ারের জন্য কোনো সমস্যাই হয় না ওর। ইশতিয়াক কে যখন ওর বার্থডে পার্টি তে দেখেছিল তখন থেকেই ও ইশতিয়াক এর পিছনে লেগে রয়েছে। প্রপোজ করেছিল কিন্তু ইশতিয়াক রাজি হয় নি বরং ওর প্রপোজাল সবার সামনে রিজেক্ট করে দিয়েছিল। সেই কারণেই ওর জেদ চেপে গেল, ওর ইশতিয়াক কে চাই মানে চাই।ওর বাবার হু’ম’কি ধা’ম’কি তে ইশতিয়াকের মা ইলিনা আহমেদ বিনা বাক্য ব্যয়ে আয়শি আর ইশতিয়াকের বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেছেন। মায়ের জোরাজুরিতে ইশতিয়াক আয়শি কে বিয়ে করতে রাজি হওয়ার পর থেকেই আয়শি ইশতিয়াকদের বাসায় থাকে আর যখন তখন গিয়ে ইশতিয়াককে বিরক্ত করে।
____________________________________________
এই মুহূর্তে ইশতিয়াক হসপিটালের একটা আই সি ইউ এর কেবিনের সামনে বসে আছে। ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে এখন রাত দশটা বাজে, বাসায় মন টিকছিল না তার, ওর জন্য একটা লোক বিনা দোষে হসপিটালাইজ হয়ে আছে সেটা ও মানতে পারছিল না তাই এই রাত দশটার দিকে হসপিটালে এসে হাজির হয়েছে।ও আসার কিছুক্ষণ আগেই লোকটির জ্ঞান ফিরেছে, ওনার পরিবারের সদস্যদের সাথেও কথা হয়েছে ইশতিয়াকের। একটু শান্ত স্বরে লোকটিকে জিজ্ঞেস করল সে,,,,
এখন কেমন আছেন আঙ্কেল?
লাবীব রহমান ইশতিয়াকের প্রশ্ন শুনে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো তার পর হাতের ইশারায় কি যেন একটা বললো। ইশতিয়াক সেটা বুঝতে না পেরে আবার জিজ্ঞেস করতে গিয়েও থেমে গেল, ওর মাথাতেই আসেনি যে উনি এখন কথা বলতে পারবেন না। মানুষ টা ওর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে ইশতিয়াকের খারাপ লাগলো খুব, আজ ও যদি ঠিক ভাবে ড্রাইভিং করতো তাহলে হয়তো মানুষটার এই দুরাবস্থা হতো না।ও মুখ কালো করে কেবিনের বাইরে বেরিয়ে এলো,ও বাইরে আসার পর একটা মেয়ে ওকে জিজ্ঞেস করল,,,
বাবা কেমন আছেন এখন?ডক্টর তো আমাদের কে ঢুকতে দিলেন না তাই প্লিজ আপনি বলুন আমার বাবা কি এখন সুস্থ আছেন?
ইশতিয়াক ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,, আপনি কি ওনার মেয়ে?
হ্যা আমি ওনার মেয়ে লিরা রহমান। বলুন না বাবার কি অবস্থা এখন (লিরা)
ওনার অবস্থা মনে হয় খুব একটা ভালো না, কথা বলার মতো অবস্থাতে উনি নেই। আপনি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করবেন, আমার জন্যই আজ আপনার বাবার এই অবস্থা হয়েছে। কিন্তু আপনি কোনো চিন্তা করবেন না, ওনার চিকিৎসার জন্য যতো টাকা লাগবে সব আমি দেবো, আল্লাহ চাইলে উনি আবার সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।(ইশতিয়াক)
কথা গুলো বলে ইশতিয়াক আর এক মুহূর্তও ওখানে দাঁড়ালো না, তাড়াতাড়ি করে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেল। ইশতিয়াকের কথা গুলো শুনে লিরা বসে পড়ল ওখানেই, বাবার এই অবস্থার কথা শুনে হু হু করে কেঁদে উঠলো লিরা। মাত্র কয়েক দিন হলো তার মা ক্যা’ন্সা”রে আক্রান্ত হয়ে মা’রা গেছেন,আর আজ আবার বাবার এই অবস্থা হলো। মায়ের চিকিৎসার জন্য খরচ চালাতে গিয়ে লিরা দের বিষয় সম্পত্তি যা কিছু ছিল সবকিছু শেষ হয়ে গেছে,লিরার ভালো ভাবে বাঁচার জন্য এখন বাবা এবং তার ছোট খাটো একটা চাকরিই ছিল একমাত্র ভরসা কিন্তু আজ তো সেটাও শেষ হয়ে গেছে।ওই ছেলেটার টাকায় নাহয় বাবা সুস্থ হয়ে উঠবেন কিন্তু লিরা আর তিনি চলবেন কিভাবে, সমস্ত কিছু হারিয়ে পথের ফকির বনেছেন তিনি আগেই।লিরা এইসব ভাবতে লাগলো আর আই সি ইউ এর সামনে বসে কাঁদতে লাগলো, মা চলে যাওয়ার শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বাবার চলে যাওয়ার আশঙ্কা মনের মধ্যে ঘিরে বসেছে লিরার।ও জানে না ওর পরবর্তী জীবন টা কিভাবে যাবে,এক ভয়াবহ ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে তার জন্য সেটা লিরার অজানা।
_____________________
এই রাতের বেলায় তুই আমাকে ছাদে নিয়ে বসে আছিস কেন মেঘু? আমার কিন্তু খুব ঘুম পাচ্ছে এখন, আমি ঘুমাতে যাই তুই একা বসে চন্দ্র বিলাস কর। অহনা ছাদ থেকে নেমে গেল আর মেঘা ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর আপন মনে বললো,,,,
তুমি কেমন আছো মা? আমি জানি তুমি তোমার এই অনুমেঘা কে ছাড়া একটুও ভালো নেই,জানো মা আমিও তোমাকে ছাড়া ভালো নেই।খালামনি আমাকে খুব আদর করে, একটুও কষ্ট দেয় না, আমি যা চাই তাই দেয় আমাকে কিন্তু তারপরেও আমি শুধু তোমাকেই চাই মা।জানো মা আমার না খুব ইচ্ছে করে মা বলে ডাকতে, মায়ের আদর পেতে, মায়ের গলায় নিজের নাম শুনতে কিন্তু আমার ইচ্ছে তো আর পুর্ণ হবার নয় তাই না মা?কারণ তুমি তো ওই আকাশের চাঁদের দেশে চলে গেছো যেখান থেকে তুমি আর কখনো আসবে না।আর তোমার চলে যাওয়ার জন্য দায়ী ওই লাবীব রহমান, আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি মা,ওই লাবীব রহমান কে আমি কখনো ক্ষমা করবো না। আগে ইচ্ছে হতো বাবা বলে ডাকার কিন্তু আমি এখন বাবা শব্দ টাকে ঘৃনা করি মা আর বাবা নামের মানুষটাকে ও।হ্যা আমি জানি পৃথিবীর সব বাবারা খারাপ হয় না কিন্তু আমার বাবা পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ বাবা। আমি কখনো আর ওই শব্দ টার সাথে পরিচিত হতে চাই না মা, তুমি ওপারে ভালো থাকো মা, তোমার এই অভাগা মেয়ে টা তোমার কাছে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকবে সবসময়।
[