ভালোবাসায় বন্দিনী পর্ব ৩১

0
1750

#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৩১

মাহেরকে দেখে নয়ন এবং হৈমী দুজনই প্রচন্ড খুশি হলো। নয়ন ওঠে আসতেই মাহের গিটারটা রাখতে বললো।নয়ন গিটার নিয়ে হৈমীর পাশেই রাখলো।
তারপর চেয়ার টেনে স্টেজের সামনে বসতে বললো মাহেরকে। মাহের আশেপাশে চেয়ে জিগ্যেস করলো,

— নয়না কোথায়?

— আপুর শরীরটা ভালো নেই। সারাদিন ব্যাস্ততায় ছিলো। রুমে শুয়ে রেষ্ট নিচ্ছে।

মাহের আর কোন প্রশ্ন করলো না। হৈমী সকলের সাথে গল্পে মজে আছে। নয়ন আরেকটা চেয়ার টেনে মাহেরের পাশে বসলো। দুজনই টুকটাক কথা বলছে। হঠাৎ মাহেরের খেয়াল হলো বড়রা ছাড়া সকলেই আছে শুধু সূচনা বাদে। সে কি তাহলে সবকিছু থেকে এখনো নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে? পুরো বাড়ি জুরো যেখানে সকলের আনন্দের শেষ নেই সেখানে সে কি নিজের একাকীত্ব কে আপন করে নিয়েছে? বিষন্ন মনে মুখ গুজে বসে আছে রুমে? এ বাড়ির কেউ কেনো তাঁকে এখানে নিয়ে আসেনি? সকল প্রশ্নের উত্তর মেলাতেই নয়নকে বললো,

— সূচনাকে দেখছি না যে?

— সূচনা আপু তো সারাক্ষণ পড়ার টেবিলে বসে থাকে। আমি বলেছিলাম এখানে আসতে,হৈমীও বলেছিলো কিন্তু আপু বললো তাঁর এতো হৈ হট্টগোল ভালো লাগেনা৷ তাই আর জোর করিনি তাছাড়া আপুকে দেখে কেমন ভয় লাগে মনে হয় ভীষণ রাগি। হৈমীও সূচনা আপুকে খুব ভয় পায়।

মাহের হৈমীর দিকে তাকালো। মৃদু হেসে বললো,

— নিচে গিয়ে সূচনা কে বল আমি উপরে আসতে বলেছি। যদি না করে তাহলে বলবি খুব জরুরি কথা আছে।

নয়ন ভ্রু কুঁচকে তাকালো। মাহের নয়নের মাথায় টোকা মেরে বললো,

— ওভাবে তাকাস কেনো? বাড়ির সকলে মিলে এতো মজা করছে এই একটা মানুষ রুমে মুখ গুঁজে থাকলে কি ভালো দেখায়?

— কিন্তু ভাইয়া আপুতো,,,

বাকিটুকু বলার আগেই মাহের বললো,

— আপু তো কিছুই না৷ দেখ আমি যদি এখানে এসে তোদের আনন্দে ভাগ বসাতে পারি ও কেনো পারবেনা৷ তাছাড়া বাড়ির অনুষ্ঠানে বাড়ির মেয়ে রুমে বসে থাকলে বিষয়টা কিন্তু দৃষ্টি কটু নানারকম কথা ওঠবে। আর সত্যিটা যদি কোনভাবে সকলের কানে যায় অনেকে অনেক ধরনের মন্তব্যও করবে। সবদিক ভেবেই বলছি ওকে উপরে নিয়ে আয়। একজন কে রেখে এভাবে আমরা আনন্দ করতে পারিনা।

নয়ন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। ভাইকে যতো দেখছে ততোই অবাক হচ্ছে সে। এতো ভালো কেনো তাঁর ভাই? পরোক্ষনেই ভাবলো তাঁর ভাই কে তো ভালো হতেই হবে৷ তাঁর ভাই সবথেকে সেরা। মুখ ফুটে বলেও ফেললো,

— ইউ আর গ্রেট ভাইয়া। আমার খুব দুঃখ হয় হৈমীর জন্য ও তোমার মতো একজনকে হারালো।

মাহের চোখ রাঙিয়ে চুপ করতে বলে ফিসফিস করে বললো,

— আমি যদি হৈমীর জন্য পারফেক্ট হতাম তাহলে উপরওয়ালা হৈমীর ভাগ্যে আমাকেই লিখতো। যেহেতু হৈমীর ভাগ্যে আমাকে লিখেনি তাঁর মানে আমি ওর জন্য পারফেক্ট নই ওর জন্য রুদ্র আর রুদ্রর জন্য ওই পারফেক্ট এবার যা যে কাজ দিয়েছি সেটা কর।
.
স্টেজ থেকে ওঠে এসে মাহেরের পাশে বসলো হৈমী। দুহাত মাহেরের দিকে মেলে দিয়ে হাসি হাসি মুখে জিগ্যেস করলো,

— ভাইয়া দেখোতো কেমন হয়েছে?

মাহের হৈমীর মেহেদী রাঙা হাতের দিকে চোখ বুলালো। মৃদু হেসে বললো,

— খুব সুন্দর হয়েছে হৈমী৷ খুব ভালো লাগছে।

হৈমী দাঁত কেলিয়ে মাথা দুলিয়ে হেসে বললো,

— হুম,,,দেখতে হবেনা কার হাত,,,এটা হচ্ছে হৈমীর হাত ভালো তো হতেই হবে। তুমি মেহেদী দিবে ওদের কাউকে বলবো দিয়ে দিতে। তুমি কি সুন্দর এখানে এসে বসে আছো আর ঐ গোমড়ামুখো টা একবারের জন্যও এখানে আসেনি জানো? কেনো বলোতো একটা বার আসলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো?

মাহের বুঝলো হৈমী রুদ্র কে মিস করছে। তাই এভাবে অভিমানী অভিযোগ গুলো করছে। হালকা কেশে ওঠে বললো,

— আমি মেহেদী দেবো না। মেহেদী দিলে গিটার বাজাবো কি করে? আর রুদ্র কে দেখলাম খুবই বিজি কালকে এতো লোকজনের আয়োজন করা হচ্ছে বুঝোইতো রাগ করো না।

— উমহ বয়েই গেছে আমার রাগ করতে। না আসলে ওনি না আসাতেই ভালো হয়েছে আমরা বেশী করে মজা করতে পারবো। ওনার ঐ গোমড়া মুখ দেখেই সব মজা বেহেশতে চলে যাবে। মুখ ভেঙচি দিয়ে বললো হৈমী

তা দেখে মাহের হেসে ফেললো। সূচনা ছাদে এসেই দেখতে পেলো মাহের হৈমীর সাথে বসে গল্প করছে। তাই সিদ্ধান্ত নিলো চলে যাবে। এখানে সবাই হৈমীকে নিয়ে বিজি কারো কি আর সময় হবে তাঁর সাথে কথা বলার? কিন্তু নয়ন যে বললো ওনি ডেকেছে জরুরি কথা বলবে।

— কি হলো আপু চলো।

চমকে তাকালো নয়নের দিকে। জোর পূর্বক হেসে এগিয়ে গেলো। হৈমী সূচনা কে দেখা মাএই ওঠে দাঁড়ালো। বললো,

— আপু এসেছো বসো এখানে বসো। এই দেখো আমার মেহেদী সুন্দর হয়েছে না?

সূচনা জোর পূর্বক হেসে বসলো। বললো,খুব সুন্দর হয়েছে। নয়ন,হৈমী শাম্মি আরো কয়েকজন মিলে স্টেজে গিয়ে বসলো। সকলে মিলে ভাবছে ফার্স্ট কি গান শোনাতে বলবে মাহেরকে।
.
— কি বলবেন বলুন আমার কিছু কাজ আছে। তারাতারি নিচে যেতে হবে।

মাহের তাকালো সূচনার দিকে। বিষন্ন মুখটা দেখে বড্ড মায়া হলো তাঁর। চোখের নিচের কালি পড়ার দাগও এড়ালোনা তাঁর চোখে। মৃদু হেসে বললো,

— এভাবে কেনো গুটিয়ে রাখছেন নিজেকে। স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করুন৷ আপনি পারবেন শুধু চেষ্টা করুন।

— আপনি কি এসব বলার জন্য ডেকেছেন। এসব নিয়ে এর আগেও অনেক কথা হয়েছে। আপনি চিন্তা করবেন না আমার জন্য আপনার ভালোবাসার মানুষের কোন সমস্যা হবেনা। আমি তাঁর থেকে দূরে থাকারই চেষ্টা করছি।

কথাটা শুনে মাহেরের খুব খারাপ লাগলো। হৈমীর ভালো থাকার জন্য সূচনাকে বোঝালেও মাহের চায় সূচনাও ভালো থাকুক। সে এতোটা সেলফিশ না যে একজনের সুখের জন্য আরেকজনের সুখ বিসর্জন দিতে বলবে তাই বললো,

— আমি আপনার সুখ কেড়ে নিয়ে ওকে সুখী করতে চাইনি৷

তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো সূচনা। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

— তবুও তো সে সুখী হয়েছে। আর আমি দুঃখী।

— উপরওয়ালাই ওদের জুটি মিলিয়ে এ দুনিয়ায় পাঠিয়েছে এখানে সত্যি আমাদের কিছু করার নেই। আপনার জন্য হয়তো রুদ্রর থেকেও ব্যাটার কেউ আছে। আমরা যদি মোনাজাতে কাউকে মন থেকে চেয়েও তাঁকে না পাই তাহলে বুঝতে হবে তাতে আমাদের মঙ্গল ছিলো না বিধায় উপরওয়ালা আমাদের চাওয়া পূরণ করেনি। যদি সেই চাওয়াতে মঙ্গল থাকতো তাহলে অবশ্যই সেই চাওয়া পূরণ করতেন।

— তারমানে হৈমীকে আপনি পাননি ওর থেকে ব্যাটার কাউকে উপরওয়ালা রেখেছে আপনার জন্য। সেই ব্যাটার কারো জন্য অপেক্ষায় আছেন?

নিরাশ হলো মাহের বুক চিঁড়ে এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো৷ আসলে মানুষ কে স্বান্তনা দেওয়া খুব সহজ। কিন্তু সেই সান্ত্বনা নিজের মধ্যে নেওয়াটা খুবই কঠিন। তবে কঠিন হলেও যা সত্যি তা সত্যিই তাই বললো,

— হ্যাঁ উপরওয়ালা যা ভাগ্যে রেখেছেন তাই মেনে নেবো। এবং তাতেই শুকরিয়া আদায় করবো।

সূচমা মৃদু হেসে বললো,

— আচ্ছা থাকুন আমি আসছি৷

ওঠে দাঁড়াতেই মাহের সূচনার হাত ধরে ফেললো। জোর করে বসিয়ে দিয়ে হাতের তালুর দিকে ইশারা করে বললো,

— মেহেদী পড়বেন না৷

সূচনা তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই মাহের ছেড়ে দিলো বললো, সরি।

সূচনা মনের বিরক্তি মনে চেপেই বললো,

— এতো সুখ আমার নেই যে আমি মেহেদী পড়ে অনুষ্ঠান উদযাপন করবো।

— যদি আমি পড়িয়ে দেই?

আশ্চর্য হয়ে তাকালো সূচনা। ভ্রু যুগল কুঁচকে বললো,

— আপনি মেহেদী পড়াবেন? ফান করছেন? ছেলেরা মেহেদী পড়াতে জানে? আমার তো বিলিভই হচ্ছে না।

আপনি পড়বেন কিনা সেটা বলুন তারপর ছেলেরা মেহেদী পড়াতে জানে কি জানে না বুঝতে পারবেন।কৌতূহলি হয়ে বললো,

— আচ্ছা পড়ান দেখি কেমন পারেন।

মাহের নয়নকে ইশারা করতেউ নয়ন এলো। সব শুনে নয়ন তো চেচিয়ে ওঠে বললো,

— ওহ মাই গড ভাইয়া তুমি মেহেদী পড়াবে তাও সূচনা আপুকে।

সূচনা ইতস্তত বোধ করতে লাগলো খুব। তা দেখে মাহের চোখ মেরে নয়নকে চুপ করতে বলতেই নয়ন চুপ হয়ে গেলো। হৈমী অন্যসময় হলে কথা বলে কান ঝালাপালা করে ফেলতো কিন্তু সূচনার মুড খেয়াল করলে টু শব্দটিও করলো না।

মাহের খুব যত্ন সহকারে একহাতে সূচনার হাতের পিঠ রেখে আরেক হাতে সূচনার হাতের তালুতে মেহেদী পড়িয়ে দিচ্ছে। নয়ন, হৈমী,উৎসুক হয়ে চেয়ে আছে। শাম্মি মেহেদী পড়ানো ভিডিও করছে। শোভন ও একটা চেয়ার টেনে তাঁদের পাশে বসে যোগ দিলো আড্ডায়৷ একে একে সবাই গোল করে বসে পড়লো মাহের সূচনার পাশে। আর ওরা মাঝখানে৷ এ দৃশ্য টের পেয়ে হঠাৎই সূচনা লজ্জা পেলো খুব। মাহের একটু পরপর সূচনার দিকে তাকাচ্ছে আর মেহেদী পড়াচ্ছে। মাহের যখন আবারো সূচনার দিকে তাকালো ঠিক তখনি সূচনাও তাকালো মাহেরের দিকে। দুজনের চোখাচোখি হতেই দুজন বেশ অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। এ দৃশ্য শোভন দেখে হাসি ঠাট্টায় মেতে ওঠলো। নয়ন আর হৈমীও খিলখিল করে হেসে ওঠলো। লজ্জা আর অস্বস্তি তে সূচনা হাত সরাতেই মাহের হাতটা চেপে ধরে বললো,

— সরাচ্ছেন কেনো এটুকুতে বাজে লাগবে। দাঁড়ান পুরোটা শেষ করে নেই। বলেই গভীর মনোযোগ দিয়ে আর্ট করতে লাগলো। মাঝে মাঝে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে নিচ্ছে। সূচনা লক্ষ করলো মাহের খুব যত্নসহকারে, গভীর মনোযোগ দিয়ে তাঁকে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে সারা দুনিয়া ভুলে গিয়ে কাজটা করছে সে। এমনটা কেনো মনে হচ্ছে তাঁর? সত্যি কি তাই? হৈমীকে এক সেকেন্ডের জন্যও কি ভুলেছে সে? পরোক্ষনেই চমকে গেলো সূচনা। মাহের হৈমীকে এক সেকেন্ডের জন্য ভুলেছে কিনা জানেনা কিন্তু সে ভুলেছে এক সেকেন্ডের জন্য হলেও রুদ্র কে ভুলেছে সে।
.
রাত এগারোটার বেশী বেজে গেছে হাত ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে সেই কখন রুমে এসে বসে আছে হৈমী। কিন্তু রুদ্রর কোন খবর নেই। বাড়ির সবাই বলেছে রুদ্র সন্ধ্যার আগে বেরিয়েছে। হৈমীর খুব খিদে পেয়েছে কিন্তু খেতে মন চায়নি তাই বলেছে রুদ্র আর তার খাবার রুমে দিতে দুজন একসাথে খাবে। কিন্তু রুদ্র এখনো বাড়িই এলো না। কয়েকবার ফোন করেছে কিন্তু রিসিভ করেনি৷ রাগে, দুঃখে পেটে চেপে শুয়ে পড়লো।
.
বারোটার দিকে রুদ্র বাড়ি ফিরলো। সাথে রেদওয়ান শেখ। রুদ্র কে ধরে গাড়ি থেকে নামাতে যেতেই রুদ্র বাঁধা দিলো। বললো,

— আমি পারবো। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

রেদওয়ান শেখ এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

— বাবার সাথে এতো ফর্মালিটি করতে হবে না চল অনেক হয়েছে আর একটা কথা বললে মার খাবি। বলেই কাঁধে ধরলো।

রুদ্র মৃদু হেসে বললো,

— বাবা ছাড়ুন। কেউ দেখলে সন্দেহ করবে। আমি চাইনা এখুনি সবটা সবাই জানুক প্লিজ।

রেদওয়ান শেখ বললেন,

— আমার মনে হয় তোর মা আর হৈমীর সাথে এই লুকোচুরি বন্ধ করা উচিত। বিশেষ করে হৈমী৷ বাচ্চা মেয়েটা এতো জটিলতা বুঝবেনা। হুট করে এসব সামনে আসলে ভুলও বুঝতে পারে৷ দেখ বাবা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে এতো গোপনীয়তা ভালো নয়৷ প্রত্যেকটা স্ত্রীরই তাঁর স্বামীর কর্ম সম্পর্কে জানার অধিকার আছে। তুই তো অন্যায় পথে কাজ করছিস না তাহলে কেনো লুকাচ্ছিস? দাম্পত্যে অতি গোপনীয়তা বিব্রতকর ও বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করে। তুই যথেষ্ট বুদ্ধিমান ছেলে আশা করি এতো বোঝাতে হবেনা তোকে৷

রুদ্র ছোট করে হুম বলে বললো,

— আপনি ভিতরে যান আমি যাচ্ছি কিছুক্ষণ পর।

রেদওয়ান শেখ চিন্তিত মুখে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো। তারপর বললো,

— ব্যান্ডেজ দেখে যখন বউ মা প্রশ্ন করবে আশা করি সত্যিটা বলবি।
.
রুমে এসে বিছানায় তাকাতেই দেখলো হৈমী পাশ ফিরে শুয়ে আছে। রুদ্র নিঃশব্দে কাবার্ডের সামনে গিয়ে কাবলী খুলে ফেললো। পকেটে যে পিস্তল আছে সে খেয়ালই নেই। কাবলী খোলার সাথে সাথে পিস্তল পড়ে গেলো মেঝেতো। শব্দ পেতেই শোয়া থেকে লাফিয়ে ওঠে বসলো হৈমী। ঘাড় উঁচু করে মেঝেতে পিস্তল দেখেই আঁতকে উঠল সে। চিৎকার করে বললো,

— পিস্তল কিসের পিস্তল? আপনি আপনি এটা কোথায় পেলেন? গুগুগুন্ডা ততার মানে আসলেই আপনি একটা গুন্ডা। ভয়ে তোতলাতে তোতলাতে বললো হৈমী।

রুদ্র চমকে গিয়ে হৈমীর দিকে একবার পিস্তলের দিকে একবার তাকালো। হৈমী ভয়ে যে এখন দৌড় দিবে রুমের বাইরে যাওয়ার জন্য বেশ বুঝলো রুদ্র। সত্যি তাই হলো হৈমী বিছানা থেকে দ্রুত নেমে দৌড়ে দরজা অবদি গিয়েছে অমনি খপ করে ধরে টেনে ভিতরে নিয়ে দরজা লক করে দিলো রুদ্র। হৈমী চিৎকার বাড়ির অর্ধেক লোকের কানে পৌঁছে গেলো।
রুদ্র হৈমীর মুখ চেপে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

— জাষ্ট স্টপ হৈমী বাড়াবাড়ি করো না শান্ত হও চুপ করে দুটো মিনিট সময় দাও আমায়।

বেশ ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে গেলো দুজনের। রুদ্রর পিঠে করা ব্যান্ডেজে চাপ পড়তেই ব্যান্ডেজ ভেদ করে রক্ত বেড়িয়ে এলো। যার ফলে মেজাজ প্রচন্ড মাএায় গরম হয়ে গেলো। এদিকে বাড়ির লোকজন দরজায় শব্দ করছে। সকলকে যদি হৈমী যা দেখেছে তা বলে দেয় সমস্যা হবে মারাত্মক সমস্যা। তাই শরীরের সর্বশক্তি খাটিয়ে হৈমীর গালে থাপ্পড় বসালো। টাল সামলাতে না পেরে মুখ থুবড়ে বিছানায় পড়লো হৈমী ৷ রাগে শরীর থড় থড় করে কাঁপছে রুদ্রর। এই মূহুর্তে মনে হচ্ছে নিজের জন্য সবচেয়ে অযোগ্য পাএীকেই বেছে নিয়েছে সে। বাইরের লোকদের উদ্দেশ্য বললো,

— কিছু হয়নি। তেলাপোকা দেখে ভয় পেয়ে গেছে। আমি আছি সমস্যা নেই।

কথাটা সকলে বিলিভ করলেও মাহের একটুও বিলিভ করলোনা। তবুও চুপচাপ চলে গেলো সেখান থেকে।

সকলের চলে যাওয়া টের পেতেই রুদ্র রক্তচক্ষুতে তাকালো হৈমীর দিকে। হৈমী ভয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছে বিরবির করে বকছে সমানে৷ আড় চোখে তাকাচ্ছেও একটু পরপর। নিজের আহত হওয়ার কথা ভুলে গিয়ে রাগে ক্ষোপে হৈমীর গলা চিপে ধরলো রুদ্র।

— বলেছিলাম না চুপ করতে। হ্যাঁ আমি গুন্ডা আমি মাস্তান তো কি হয়েছে কি করবি তুই? পালাবি আমার থেকে? এই পালাবি? কোথায় পালাবি বল? চিৎকার করে বললো রুদ্র।

কেঁপে ওঠলো হৈমী কাশি আসছে তবুও কাশতে পারছেনা এতো জোরে চিপে ধরেছে রুদ্র। নিভু নিভু চোখে রুদ্রর ভয়ংকর মুখের দিকে তাকালো। রুদ্রর ভয়ানক সে রূপ দেখে অন্তর আত্মা কেঁপে ওঠলো তাঁর। চোখ বেয়েও অঝড়ে পানি পড়তে লাগলো।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here