#প্রিয়_পৃথিবী
|৫|
চারিদিকের পরিবেশটা তখন নিশীথিনী। শহরের পাকা রাস্তা পাড় করে এবার কাঁচা রাস্তায় ঢুকেছে
আটটা বাইক। মাত্র দু’মিনিটের পথই কাঁচা তারপরেই চেয়ারম্যান বাড়ি৷ এই দু’মিনিটেই ধুলো-বালিতে বেশ জব্দ হলো বাইকে থাকা প্রতিটি সদস্য। অনেকের চোখেমুখে ধুলাবালি গিয়ে চোখ বন্ধ হয়ে আসল। তবুও কেউ টুশব্দটি করল না৷ আপাতত একটি গুমোট পরিবেশের মধ্যে রয়েছে তারা। এই গুমোট ভাবটির পতন ঠিক কতটা ভয়াবহতার সঙ্গে ঘটবে তা ভাবতেই সকলের শরীর হিম হয়ে যাচ্ছে।
মাঝরাতে বাড়ির সামনে আটটা বাইক কিচকিচ শব্দ করে ব্রেক করল। সে শব্দ শুনা মাত্র বাড়ির প্রতিটি সদস্য নড়েচড়ে বসল৷ ফাতিহা বেগম ইশতিয়াক রহমানের দিকে ভয়াতুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কেঁদে ওঠল,
-” আপনি কিছু একটা করুন৷ ”
ফাতিহার বাবার বাড়ি কাছাকাছি হওয়াতে সে বাড়ির অর্ধেক লোকই সে মুহূর্তে উপস্থিত হয়েছে। এদের খবর দিয়ে এনেছে ফাতিহা নিজেই। ছেলের রাগ সম্পর্কে সে খুব ভালোভাবেই অবগত৷ এ মুহূর্তে পৃথিবীর পাশে তার বাবার বাড়ির লোকদের খুব প্রয়োজন। তাছাড়া একা একা প্রিয়কে কন্ট্রোলে নিয়ে আসাও বড্ড কঠিন হয়ে পড়বে৷ ফাতিহা যাদের নিয়ে এসেছে তারা প্রিয়র মামা, মামি আর মামাতো ভাই বোন, আর নানি৷ একমাত্র নানি ছাড়া বাইকের শব্দ শুনে প্রতিটি সদস্যেরই হৃৎস্পন্দন ঝড়ের গতিতে বেড়ে গেল৷ প্রত্যেকের দিকে একবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ইশতিয়াক রহমান মুচকি হাসলেন৷ হাঁক ছেড়ে বললেন,
-” বাড়িতে বউ এসেছে, এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও আমার বউ মা’কে নিয়ে এসো। ”
প্রিয়র বন্ধুরা বাইক থেকে নেমে আশপাশে ঘুরছে। চাচাতো ভাইদের মধ্যে রুবেল রয়েছে সেখানে৷ একমাত্র সেই সাহস করে প্রিয়কে বলল,
-” ভেতরে যাবে না? ”
প্রিয় চোয়াল শক্ত করে প্রচণ্ড গম্ভীর স্বরে বলল,
-” ও’কে নামতে বল। ”
রুবেলকে আর বলতে হলো না৷ এক ঢোক গিলে মাথা নিচু করে পৃথিবী নিঃশব্দে নেমে দাঁড়াল। প্রিয় সে অবস্থায়ই পকেট থেকে সিগারেট আর লাইটার বের করল৷ গত এক বছরে অনেক অভ্যেস তৈরি হয়েছে তার৷ সে অভ্যেসগুলোর প্রথম ধাপটিই পৃথিবীর সম্মুখে উন্মোচন করল মাত্র৷ এবং কুণ্ডলীর মতো করে পৃথিবীর মুখের দিকে ধোঁয়া ছাড়তে শুরু করল। প্রিয়র যে রূপটার সঙ্গে পরিচিত ছিল না সে রূপের সঙ্গে পরিচয় ঘটাতে বড়োসড়ো এক ধাক্কা খেল পৃথিবী। সিগারেটের ধোঁয়া যেন বিষাক্ত হয়ে তার হৃদয় জ্বালিয়ে দিল৷ চোখ,মুখ বিবর্ণ হয়ে ওঠল। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গলা চেপে ধরে কাশতে শুরু করল সে৷ প্রিয় এক লাফে বাইক থেকে নেমে দাঁড়ালো। আকাশ, মাটি কাঁপিয়ে চিৎকার করে ওঠল,
-” ফিয়ন্সি! ফিয়ন্সি! একটা বছর, একটা বছর এই বুকে যে বিষ ধারণ করেছি আমি সেই বিষে বিষাক্ত করে ছাড়ব তোকে আমি। ফিয়ন্সি? ফিয়ন্সি তাই না? হাহ তোর ফিয়ন্সির…”
প্রিয়র চিৎকার শুনে হুড়মুড়িয়ে ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো সবাই। বকিটুকু বলার পূর্বেই ইশতিয়াক রহমান প্রিয়কে ধমকে ওঠল। প্রিয়, পৃথিবীর বড়ো মামা আব্দুল্লাহও ধমক দিল তাকে৷ মেজো মামার মেয়ে স্বর্ণা আর পূর্ণতা এসে কাঁধ চেপে ধরল পৃথিবীর। ওদের পেয়ে রুদ্ধশ্বাস ত্যাগ করল পৃথিবী না চাইতেও চোখ বেয়ে অঝড়ে অশ্রু ঝড়তে শুরু করল তার।
পুরো বাড়িটা থমথম করছে৷ পৃথিবীকে পূর্ণতার ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে ফাতিহা, পূর্ণতা,স্বর্ণা রয়েছে। ড্রয়িংরুমে প্রিয়কে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে সকলে৷ প্রিয়র নানি রিনুয়া সবাইকে ভিড় কমাতে বলল। কিন্তু সবাই প্রিয়কে বোঝালো, যা কিছু হয়েছে সব ভুলে যেতে। বউ যখন ঘরে ফিরেছে আর দু’কথা বলে লাভ নেই৷ নিজেদের মধ্যে এতো ঝামেলা আর নেওয়া যাচ্ছে না৷ এবার যেন সবটা স্বাভাবিক ভাবেই হয়৷ ইশতিয়াক রহমান বড়ো করে বউভাতের আয়োজন করবে বলে মনস্থির করলেন৷ বাঁধ সেধে প্রিয় বলল,
-” আমার আপত্তি নেই তবে শর্ত রয়েছে। ”
সকলে দম বন্ধ রেখে তাকিয়ে রইল প্রিয়র পানে। ইশতিয়াক রহমান কিছু নয় পুরোটাই আঁচ করতে পারলেন৷ প্রিয় বলল,
-” ও বাড়ি থেকে একটা পিঁপড়াও এ বাড়িতে আসতে পারবে না৷ ”
সকলেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। যা সব ঘটে গেছে এরপর প্রিয়র ওপর একটা কথাও কেউ বলতে পারল না৷ ধীরেধীরে ভিড় কমলো। প্রিয় গিয়ে শান্ত হয়ে সোফায় বসল৷ পিছন পিছন গিয়ে রেনুয়াও বসল তার পাশে৷ কাঁধে হাত রেখে বলল,
-” জানোসই তো পৃথি একটু বোকাসোকা। ”
উত্তেজিত হয়ে পড়ল প্রিয়। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-” এখন এটা বলো না ও দুধের শিশু। ”
নানি ঠোঁটটিপে হাসল বলল,
-” অল্প বয়স তার ওপর বুদ্ধি একটু কম। একেবারে সহজসরল। যেভাবে পারছে ঐভাবে ওরা ওর মাথা খাইছে। ”
-” ওর হয়ে সাফাই গাওয়া বন্ধ করো। অনেক রাত হয়েছে ঘুমাতে যাও। ”
রেনুয়া এবার একটু চেপে বসল প্রিয়র দিকে। প্রিয়র হাতে চিমটি কেটে বলল,
-” শোন অতো রাগ করিস না৷ রাগ কইরা কী পিরিত জমেরে? ঠাণ্ডা মাথায় এমন বাঁধনে ফালা যাতে আর কারো কুবুদ্ধিও কাজে না লাগে। ”
নানি কিসের ইঙ্গিত করল স্পষ্টই বুঝল প্রিয়। তবুও কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
-” এখান থেকে যাও তো ভাল্লাগতাছে না। ”
পূর্ণতার ঘর থেকে বেরিয়ে এলো রুবিনা। রুবিনা প্রিয়,পৃথিবীর বড়ো মামার ছেলে আরিয়ানের বউ। সম্পর্কে ওদের ভাবি সে৷ তার কথায় প্রিয় অন্তত মেজাজ দেখাবে না। সেই বিশ্বাসে সে এসে প্রিয়র পাশে বসল৷ শান্ত গলায় বলল,
-” দেখো ভাই মেয়েও আমাদের, ছেলেও আমাদের। দু’দিকেই তো ভাবতে হবে। তাছাড়া পৃথিকে তুমি ছোটো থেকেই জানো৷ তুমি নিশ্চয়ই ও’কে সঠিকই বুঝবে? ”
দুম করে নিঃশ্বাস ফেলল প্রিয়। একপাশে নানি আরেক পাশে ভাবি। মাঝখানে নিরীহের মত বসে রইল কতক্ষণ, তারপর দু’হাতে মাথা চেপে ধরে বলল,
-” ও’কে যদি খু/নও করে ফেলি তাও বোধহয় রাগ কমবে না আমার। ”
রুবিনা মৃদু হেসে বলল,
-” খু/ন করে কাজ নাই বাপু মাথা ঠাণ্ডা রেখে ভাবো। একটা মেয়ে মানুষকে যেভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে হয় সেইভাবে কাজ করো। পৃথি অত্যন্ত নরম মনের ভীতু স্বভাবের মেয়ে। আশা করি বুঝতে পেরেছো? ”
প্রিয় চুপ করে রইল। রেনুয়া কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল,
-” তোর বাপেতো আমার মেয়েরে একাই নিয়ন্ত্রণ করছে৷ আমরা রাজি না থাকলেও বিয়েসাদি করে সে বছরই তোর পেটে আসার খবর জানাইছে। তুই কেমন পোলা যে তোর বউরে চৌদ্দ গুষ্টিসহ নিয়ন্ত্রণ করে? ”
প্রিয়র মেজাজ এবার সপ্তম আসমানে ওঠে গেল। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-” ও’ঘর থেকে সবাইকে বের হতে বলো। ”
রুবিনা আঁতকে ওঠে বলল,
-” তুমি মথা ঠাণ্ডা করো। আমি যা বলি মন দিয়ে শোনো। ”
-” আমি কারো কথা শুনবো না ভাবি। ওর সঙ্গে আমার বোঝাপড়ার ব্যাপারে কারো হস্তক্ষেপ মানবোও না। ”
পূর্ণতার ঘর থেকে পৃথিবীকে নিয়ে যাওয়া হলো প্রিয়র ঘরে৷ যে ঘরে ফাতিহা বা পূর্ণতা কেউই প্রবেশ করল না৷ ছেলের মুখের ওপর আজ ফাতিহা একটা কথাও বলবে না৷ দীর্ঘ একটা বছর ছেলের কষ্ট দেখতে দেখতে বুকটা তার অতিষ্ট হয়ে ওঠেছে। মা হয়ে আর কত সহ্য করা যায়? সবশেষে প্রিয়র ওপর সম্পূর্ণ ভরসা আছে তার। তার ছেলে আর যাইহোক অমানুষ না৷ প্রিয়র কাছে পৃথিবী সুনিশ্চিত। অথচ ভয়ে ম্রিয়মাণ হয়ে যাওয়া পৃথিবী মামাতো বোন স্বর্ণার একটি হাত বুকে চেপে বসে আছে প্রিয়র রুমে। একটু পর পর ভীতু স্বরে বলছে,
-” আপু তুমি আমাকে ফেলে যেওনা। আজ তুমি আমার সাথে থাকো। ”
স্বর্ণা প্রচণ্ড উদগ্রীব হয়ে বলল,
-” তুই কেন ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে গেলি বলতো। এই একটা কারণের জন্য সবাই তোর ওপর রেগে আছে৷ প্রিয় ভাইয়ের মতো মানুষ তোর সাথে এমন আচরণ করছে ভাব তুই। কতটা আঘাত পেলে মানুষ এমন করে। ”
খট করে দরজা খোলার শব্দ হতেই চমকে ওঠে স্বর্ণাকে জড়িয়ে ধরল পৃথিবী। চোখ,মুখ খিঁচে বলতে লাগল,
-” তোর পায়ে ধরি আপু আমাকে রেখে যাস না। ”
প্রিয়র বিক্ষিপ্ত চেহেরা, গভীর, ছোটো ছোটো সাদা দৃষ্টিজোড়ার রক্তম বর্ণীয়তা দেখে জোরপূর্বক পৃথিবীর থেকে হাত ছাড়িয়ে ছুটে পালালো স্বর্ণা। সঙ্গে সঙ্গে ঠাশ শব্দ করে দরজা আঁটকে দিল প্রিয়। অস্থিরচিত্তে রুমে পায়চারি শুরু করল সে। ভয়ে ক্ষণে ক্ষণে শিউরে ওঠল পৃথিবীর পুরো দেহ। যা খেয়াল করে প্রিয় কিছুটা শান্ত হয়ে মেঝেতে ধপ করে বসে পড়ল। বদ্ধ উন্মাদের মত পকেট থেকে সিগারেট, লাইটার বের করে সিগারেট ধরালো। একের পর এক সিগারেট শেষ করতে করতে রুমটা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন করে ফেলল। যার ফলে নিঃশ্বাস নিতে প্রচণ্ড কষ্ট হলো পৃথিবীর ক্ষণে ক্ষণে মারাত্মক কাশি শুরু হলো তার। একঘন্টা সময় এভাবেই পার করল প্রিয়। সিগারেটের প্যাকেট শূন্য হতেই বাম দিক, ডান দিক ঘাড় বাঁকিয়ে বলল,
-” ফিয়ন্সি! ফিয়ন্সি। ”
দুবার শব্দটি উচ্চারণ করেই আচমকাই চিৎকার করে বলল,
-” ফিয়ন্সি!”
কেঁপে ওঠল পৃথিবী। শরীরে থাকা জর্জেট উড়নার একপাশ পড়ে গেল বিছানায়। দ্রুত হাতে সে উড়না তুলে নিল সে৷ কিন্তু পুনরায় আবার পড়ে গেল। তার শরীরের ভয়ানক কম্পনের জন্যই উড়নাটা শরীর থেকে বার বার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। বার বার এমন হতে হতে শেষবার যখন উড়না পড়ল আর পৃথিবী ওঠিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসল। মেজাজ খিঁচে গেল প্রিয়র। অসহনীয় হয়ে ওঠে অধর কামড়ে এক লাফে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। বিধ্বংসী হাতে খাবলে ধরল পৃথিবীর উড়নাটা৷ তারপর একটানে সেটা ছিনিয়ে নিয়ে মেঝেতে আছড়ে ফেলল। সহসা শক্ত হাতে ওর কোমল গলা চেপেও ধরল । উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,
-” পরপুরুষকে ফিয়ন্সি বলতে বাঁধে না, আমার সামনে বুক থেকে উড়না সরলেই খুব বাঁধে তাই না?”
পৃথিবী ছটফটিয়ে ওঠল। আচমকাই ছেড়ে দিল প্রিয়। বড়ো বড়ো করে নিঃশ্বাস ছাড়তে শুরু করল পৃথিবী। ভয়ের চোটে নিঃশ্বাসের সঙ্গে অদ্ভুত এক শব্দ ভেসে আসছে তার। প্রিয় ছিটকে দূরে সরে গেল। দু’হাতে নিজের মাথার চুল নিজেই খামচে ধরল। চিৎকার করে ওঠল ক্ষণে ক্ষণে৷ কী এক ভয়ানক পরিস্থিতি! পৃথিবী সহ্য করতে পারল না৷ শব্দ করে কেঁদে ওঠল। তার কান্নার শব্দ বাইরে যেন না যায় তাই তর্জনী উঁচিয়ে প্রিয় বলল,
-” চুপ, শব্দ করবি না। ”
নিজেকে আটকাতে পারল না পৃথিবী। না চাইতেই ক্রমশ তার কান্নার শব্দ উচ্চ হতে শুরু করল। প্রিয় হিংস্রতার সঙ্গে আবারও কাছে এলো তার৷ ভীতিগ্রস্ত রক্তিম চোয়ালজোড়া শক্ত হাতে চেপে ধরল। বলল,
-” চুপ নো সাউন্ড, নো সাউন্ড। ”
কোনক্রমেই যখন পৃথিবীকে থামানো গেল না। অধৈর্য্য হয়ে নিজের হিংস্র, উত্তপ্ত ওষ্ঠাধর দিয়ে পৃথিবীর সিক্ত ওষ্ঠজোড়া আঁকড়ে ধরল। পৃথিবীর পুরো দেহ এবার ভয়াবহ এক উষ্ণতায় কাঁপতে শুরু করল। তার দুচোখের নোনাপানি ভিজিয়ে দিল প্রিয়র ললাটপট। বেসামাল হয়ে ওঠল প্রিয়, দু’হাতে খামচে ধরল পৃথিবীর পিঠ৷ অসহনীয় যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগল পৃথিবী। কীভাবে, কোন পর্যায়ে নিজের রাগ দমন করবে বুঝে ওঠল না প্রিয়৷ শেষে ওষ্ঠদ্বয় ছেড়ে গলার দিকে মুখ নিয়ে শক্ত এক কামড় বসালো৷ ব্যথায় মৃদু শব্দ করল পৃথিবী। যা কর্ণপাত হতেই ছিটকে সরে গেল প্রিয়। তর্জনী উঁচিয়ে পুনরায় বলল,
-” চিৎকার করবি না। হাত, পা, মুখ বেঁধে রাখব একদম। আমার স্বার্থে আঘাত লাগলে আমি ঠিক কতটা ভয়ংকর হয়ে যাই এবার টের পাবি তুই। ”
ক্রন্দনরত কণ্ঠে পৃথিবী বলল,
-” মেরে ফেলো আমায়। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। সবশেষে সবার কাছে অপরাধী আমি। ”
পৃথিবীর কথাগুলো বিষের মত বুকে বিঁধল প্রিয়র।তাই কঠিন স্বরে বলল,
-” তোর কোন কথা শুনতে চাই না আমি। আমার কেবল তোকে চাই। ”
ক্ষণকাল চুপ থেকে আবার বলল,
-” প্রেম করলাম আমি, ভালোবাসলাম আমি, কাঠখড় পুড়িয়ে বিয়েও করলাম আমি। আর আজ ফিয়ন্সি হয়ে গেল অন্য কেউ? এত সহজ? ”
ডুকরে কেঁদে ওঠল পৃথিবী প্রিয় হাত উঁচিয়ে আবারও চুপ করতে বলে কিঞ্চিৎ নিচু কণ্ঠে বলল,
-” ভালোবেসে মায়া দেখিয়ে আমার জিনিস আমি যখন পাইনি। অধিকার খাটিয়ে যন্ত্রণা দিয়ে আমার জিনিস আমি হাসিল করব। ”
কথাগুলো বলে চট করে ওঠে রুমের বাতি অফ করে দিয়ে চটপটে গলায় বলল,
-” আমি কী বলতে চাচ্ছি, বা কী চাইছি আশা করি বুঝতে পেরেছিস? পাঁচ মিনিট সয়ম দিলাম, নিজেকে রেডি কর।”
বলেই গায়ের শার্ট খুলে বিছানায় গিয়ে শরীর ছেড়ে দিল৷ পৃথিবী ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। তার সে কাঁপাকাঁপি দেখে ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলল প্রিয়। উপরের দিকে নির্লিপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শান্ত কণ্ঠে প্রিয় বলল,
-” কী বলেছি বুঝিসনি আই ওয়ান্ট টু বি ইন্টিমেট উইথ ইউ। ভদ্র ভাষায় বলেছি বুঝেছিস? ওহ আচ্ছা তোরা তো আবার ভদ্র কথার মানুষ না।”
পৃথিবীর মাথাটা ঘুরতে শুরু করল। বুকফেটে আর্তনাদ বেরিয়ে আসতে চাইল। প্রিয় অধৈর্য্যের সহিত ঠান্ডা গলায় বলল,
-” কাম ফাস্ট পৃথি…আই ওয়ান্ট টু বি ইন্টিমেট।”
সহসা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে পৃথিবী জবাব দিল,
-” এইটুকুর জন্যই এতকিছু? ”
হো হো করে হেসে ওঠল প্রিয়। ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলল,
-” এভাবে আমাকে দমাতে পারবি না। এক বিন্দুও ছাড় দেবো না, আর না কোন সুযোগ! উমহ আর সময় নষ্ট নয় লেটস স্টার্ট। ”
বলেই একটানে নিজের বুকের ওপর ফেলল পৃথিবীকে। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে চোখ,মুখ শক্ত করে পৃথিবী বলল,
-” আমার মেন্সট্রুয়েশন চলছে প্লিজজ!”
চলবে..
®জান্নাতুল নাঈমা
( কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ)
[ আমার সকল পাঠকবৃন্দকে অগ্রীম ইদের শুভেচ্ছা রইল। সন্ধ্যার পর খুবই বিজি থাকব তাই সন্ধ্যার আগেই দিয়ে দিলাম। ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাইকে ইদ মোবারক ]