প্রিয়_পৃথিবী 6

0
461

#প্রিয়_পৃথিবী
|৬|
যে নারী একজন পুরুষের দেহ, মন উভয়তেই অনন্ত প্রেমের তুফান সৃষ্টি করে। সে নারীই আবার এক নিমিষে সে অনন্ত প্রেমের পতন ঘটায়৷ এমনই করে বিধ্বংসী এক প্রণয়ের উত্তাল ঢেউ আচম্বিতে নিশ্চল হয়ে গেল। রাগে, দুঃখে ক্ষিপ্ত হয়ে পৃথিবীতে বাস করা এক মানবী, পৃথিবী নামক পাষাণ নারীটাকে বুকের ওপর থেকে নিমিষেই বিছানায় ফেলে নিজের পুরুষোচিত, বলিষ্ঠ দেহটি দিয়ে পৃথিবীর নারীদেহটি আবৃত করে ফেলল প্রিয়। নিজের বলিষ্ঠ বক্ষপটে বহু আকাঙ্ক্ষিত, অনন্ত ভালোবাসাময় সে নারীটির কোমলীয় দেহটি পিষে দিতে শুরু করল৷ ছটফট করার জন্য বিন্দু স্পেসও দিল না। যেন আজ কোনকিছুতেই নিস্তার নেই এই পাষণ্ডময়ীটির!
পৃথিবীর বিরামহীন কান্নার সাথে এবার যোগ হলো উত্তপ্ত ভারি নিঃশ্বাসপ্রশ্বাসদের। সে উত্তপ্ত হাওয়ায় মিলেমিশে একাকার হয়ে পৃথিবীর কম্পিত অধরে দীর্ঘ একটি চুম্বন করল প্রিয়৷ সিক্ত অধর চুম্বনে সর্বাঙ্গ কাঁপতে শুরু করল তার৷ শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বইয়ে গেল প্রণয়ের ঘাত প্রতিঘাত। পৃথিবীর কম্পিত একটি হাত আপনাআপনিই চলে গেল প্রিয়র পৃষ্ঠদেশে৷ দুর্বল সে হাতটি কোনক্রমে খামচে ধরল ত্বকে। ওষ্ঠাঘাতের এক পর্যায়ে বলহীনতায় একেবারে মিইয়ে গেল পৃথিবী। শেষ পর্যন্ত বদ্ধ অক্ষিপুটে সিক্ততা, শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যতীত আর কোথাও কোন প্রতিক্রিয়া খুঁজে পেল না প্রিয়। সহসা মস্তিষ্ক থমকে গেল তার। শরীরের শক্তি ক্ষীণ হতে শুরু করল ক্রমশ। ধীরে ধীরে পৃথিবীর অধর ছেড়ে দিল সে। ছাড় পেয়ে গোলাপিবর্ণ ওষ্ঠদ্বয় থরথর করে কাঁপতে শুরু করল৷ আচমকাই প্রিয়র শরীর জুড়ে শীতল শিহরণ বইয়ে গেল। খেয়াল হলো তাদের দীর্ঘপ্রেমে আজি প্রথম লিপকিস নামক তকমাটা লেগেছে। আফসোস তার পার্টনার উষ্ণময় চুমু পেয়ে আবেশে আচ্ছন্ন না হয়ে থরথর করে কাঁপছে। আনমনে কিঞ্চিৎ হাসলো সে৷ পরোক্ষণেই ভ্রু কুঁচকে নির্নিমেষে তাকিয়ে রইল পৃথিবীর মলিনতায় ঘেরা মুখশ্রীর পানে। দুম করে ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ছাড়ল। তারপর প্রচণ্ড অবাক হয়ে গিয়ে বলে ওঠল,

-” আই কিসড ইউ! আই জাস্ট কিসড ইউর লিপ! আমি তোকে চুমু খেয়েছিরে পৃথি…ফাইনালি মাই লিপস সান্ক ইন্টু ইউর লিপস!!!”

শেষ বাক্যটা প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে বলল প্রিয়। ফলে শিউরে ওঠল পৃথিবী। প্রিয় টের পেয়ে কপাল কুঁচকে বলল,

-” আমি অন্যায় করেছি পৃথি? এতকিছুর পরও আমার এই পাগলামিগুলো তোর কাছে অন্যায় হচ্ছে? ”

আবদ্ধ দৃষ্টিতেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল পৃথিবী। শরীরটাকে আরেকটু নরম করে পৃথিবীকে বক্ষপটে আবদ্ধ করে রাখল প্রিয়। দুজনের শরীরের উষ্ণতা, নিঃশ্বাসের উত্তপ্ততায় পরিবেশটা চাঞ্চল্যকর প্রণয়ে ধাবিত হতে শুরু করল৷ কিন্তু প্রিয় বোধহয় একটু স্থির হলো। সকল অস্থিরতাকে এক ধাক্কায় দূরে সরিয়ে দিয়ে শান্ত কণ্ঠে আবার বলল,

-” আমার সাথে কী হয়েছিল জানিস? ধর, আমি তিনটা বছর একটি রেষ্টুরেন্টের সামনে ঘুরঘুর করেছি, এক প্লেট বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য৷ সে অনুযায়ী টাকাও জোগার করেছি৷ সব প্রিপারেশন শেষে বিরিয়ানি অর্ডার করে যখন সামনে পেয়েছি তখন রেষ্টুরেন্টের মালিক এসে বিরিয়ানির প্লেটটা ছিনিয়ে নিয়েছে। কেমন টা লাগে বল? সেই ছিনিয়ে নেওয়া বিরিয়ানিটা পুনরায় যখন এত ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে কাছে নিয়ে এলাম তখন আবার বিরিয়ানি থেকে আমাকে বঞ্চিত করা হলো! ভাব একবার, একটাবার ভেবে দেখ। কী বেকায়দায় ফেলেছিস তোরা আমাকে৷ ”

বেগতিক পরিস্থিতিটাকে কিঞ্চিৎ স্বাভাবিকতায় আনার জন্য প্রিয় এবার ভীষণ সিরিয়াস হয়ে পৃথিবীর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

-” তুই কোন কোম্পানির প্রডাক্ট মাথায় রাখা উচিৎ ছিল৷ আবার মিস্টেক। ”

প্রিয়র দুরন্তপনা কণ্ঠে বিস্মিত হয়ে তাকালো পৃথিবী। অসহায়, নির্লিপ্ত দৃষ্টিজোড়া নিক্ষেপ করল অধরকোণে বাঁকা হাসি মাখানো প্রিয়র দিকে। ড্রিম লাইটের আলোতে স্পষ্টই দেখতে পেল প্রিয় দুষ্টুমির ছলে হাসছে। মুহূর্তেই কিছুক্ষণ পূর্বের প্রিয়কে স্মরণ হলো তার। মুহূর্তেই চোখের কার্ণিশ বেয়ে জল গড়াতে শুরু করল। তা দেখে প্রিয়র মনটা আবার অস্থির হয়ে ওঠল৷ চট করে পৃথিবীর থেকে সরে গিয়ে বিছানা থেকেও ওঠে পড়ল৷ বিনিময়ে ভয়ে কুঁকড়ে গেল পৃথিবী। তা দেখে কিঞ্চিৎ রাগ মিশ্রিত কণ্ঠে প্রিয় বলল,

-” ভয় পাচ্ছিস আমাকে? হাহ কী দিন এলো আমার বল তো দেখি… যে রাতটা নিয়ে রাতের পর রাত দিনের পর দিন স্বপ্ন দেখতি আজ সে রাতটা নিয়ে কত ভয়!”

একটু থেমে আবার বলল,

-” আমি তোকে কোনদিন ক্ষমা করব না৷ যে পৃথি আমার স্পর্শে অশ্রু ঝড়ায় সেই পৃথিকে আমি কক্ষনও ক্ষমা করব না। ”

ক্রোধে জর্জরিত হয়ে রুম ত্যাগ করল প্রিয়। প্রিয় চলে যেতেই পৃথিবী ফুঁপিয়ে ওঠল। কাঁপা কাঁপা হাতে ঠোঁটের কোণায় স্পর্শ করল। জ্বলছে খুব, গলায় কামড়ের স্থানেও স্পর্শ করল কী বিষাক্ত যন্ত্রণা! অনুভব করল স্বচ্ছ এক ভালোবাসায় বিষ জন্ম নিয়েছে। স্নিগ্ধ এক স্পর্শে বিষাক্ত অনুভূতি হচ্ছে। ভাগ্য আর কতদিকে মোড় নেবে? কেউ কেন তাকে বুঝে না, কেউ কেন তাকে ভালোবাসে না? সেই বা কেন আগের মত মাথা উঁচু করে, প্রশান্তিভরা বুক নিয়ে বলতে পারেনা,

-” ভালোবাসি প্রিয় ভাইয়া। আমি আজো তোমাকে ঠিক আগের মত করেই ভালোবাসি। শুধু প্রকাশ করতে পারি না৷ কারণ আমি অপরাধী, ভয়াবহ এক অপরাধী! ”

সকাল সাতটার দিকে প্রিয়র ঘরের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে রুবিনা এলো। ঘরে ঢুকেই দেখল পৃথিবী বিছানায় কাতরাচ্ছে। বুকের ভিতরটা তার কেঁপে ওঠল৷ কাল রাতে প্রিয় যা রেগে ছিল, ভয়াবহ কিছু ঘটে যায়নিতো? উঁকি দিয়ে পুরো ঘরে চোখ বুলিয়ে দ্রুত পায়ে বিছানার কাছে এগিয়ে গেল রুবিনা৷ পৃথিবীর গা’য়ে হাত দিয়ে চমকে ওঠল সে। সে কী ভীষণ জ্বর! রুবিনা আঁতকে ওঠা কণ্ঠে বলতে লাগল,

-” পৃথি এই পৃথি তোর তো ভীষণ জ্বর প্রিয় কোথায়?”

পৃথিবী জবাব দিল না৷ রুবিনা শঙ্কিত হয়ে বিছানায় ওঠে বসল। পৃথিবীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

-” তোদের মধ্যে কী কিছু হয়েছে? ”

পৃথিবীর দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝড়তে শুরু করল। রুবিনা ব্যথাহত সুরে বলল,

-” আহারে কাঁদিস না, প্রিয় যে এমন করবে বুঝতে পারিনি৷ আসলে পুরুষ মানুষ জাতটাই খারাপ। বউয়ের সাথে মন কষাকষি হলে গায়ের জোরটাই দেখাবার পারে শুধু। ”

এ পর্যন্ত বলে রুবিনা আরেকটু কাছে ঘেঁষে নিচু স্বরে বলল,

-” তোর কী ব্লিডিং হয়েছে? লজ্জা পাস না, আমিতো ভাবি হই আমাকে সব বলা যায়৷ ”

পৃথিবী একই অবস্থায় শুয়ে রইল। রুবিনা চিন্তিত হয়ে পড়ল খুব। বলল,

-” চিন্তা করিস না ফার্স্ট নাইট তো এজন্যই জ্বর এসেছে বোধ হয়। ওঠ ওঠে ফ্রেশ হো আমি নাস্তার ব্যবস্থা করে মেডিসিন দিচ্ছি। ”

-” কীসের ফার্স্ট নাইট কীসের মেডিসিন! ”

ঘরে ঢুকেই ভাবির কথা শুনে বিস্ময়ে কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে বলল প্রিয়৷ রুবিনা চমকে ওঠে বিছানা থেকে নেমে চূড়ান্ত রাগ দেখাল প্রিয়’কে৷

-” তুমি কী মানুষ! মানুষ হলে এমন কাজ কীভাবে করতে পারলে? চেয়ে দেখো মেয়েটার কী অবস্থা করেছো? ছিঃ একেবারে কন্ট্রোল নেই ছিঃ ছিঃ। এই তোমাদের এত পিনিক কেন? কন্ট্রোললেস কোথাকার!”

হতবাক হয়ে রুবিনার দিকে একবার, শয্যাশায়ীনি পৃথিবীর দিকে একবার দৃষ্টিপাত করল প্রিয়। রুবিনার অগ্নি চক্ষু যেন তাকে আজ ভস্ম করে ছাড়বে৷ হতভম্ব হয়ে এক ঢোক গিলে প্রশ্ন করল,

-” কোন সমস্যা ভাবি? ”

তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠল রুবিনা৷ চোখ কটমট করে বলল,

-” এ্যাহ মনে হয় ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানো না? অথচ সারারাত মাছ ভেজে একেবারে ঝুরঝুরে করে খেয়েছো! ”

প্রিয় হতবুদ্ধি হয়ে বলল,

-” কী সাংঘাতিক কথাবার্তা! খিদের জ্বালায় ঘুরঘুর করছি আম্মু এখনো খেতে দেয়নি। আর তুমি বলছো সারারাত ঝুরঝুরে করে ভাজা মাছ খেয়েছি? ”

চরম ক্ষেপে গেল রুবিনা। ধমক দিয়ে বলল,

-” মেয়েরার এই অবস্থা করে এখন মজা নিচ্ছ? আহারে কত জ্বর এসে গেছে। ”

বলেই পুনরায় আবার পৃথিবীর কাছে গিয়ে বসল। বিস্ফোরণ ঘটার মত করেই সহসা তার দৃষ্টি আঁটকে গেল পৃথিবীর গলায়৷ যেখানে স্পষ্ট কামড়ের দাগটি। তা দেখামাত্র আতঙ্কিত হয়ে মুখে হাত চেপে ধরল রুবিনা৷ প্রিয় আরেকদফা চমকে গেল। বিষয়টা ঠিক কী ঘটছে তখনো সে ক্লিয়ার হতে পারল না৷ রুবিনা মৃদু চিৎকার দিয়ে বলল,

-” হায় আল্লাহ গো এ কোন রাক্ষসের হাতে তুমি পড়ছিলা পৃথি? ক্যামনে কামড় দিছে আল্লাহ গো কী ভয়ংকর ছেলে! ”

প্রিয় হকচকিয়ে গেল৷ বিরবির করে বলল,

-” কাম সারছে। ”

তারপর চটপটে গলায় বলল,

-” ভাবি আপনি চুপ করুন ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করুন। ”

রুবিনা তেড়ে এসে বলল,

-” তুমি আসলেই মানুষ? ”

-” আরে বাবা হয়েছে টা কী? ”

প্রিয়র এই অল্প পরিসরে ধমকটাই যথেষ্ট ছিল রুবিনার চুপ করার জন্য৷ তাই সে চুপ করল। প্রিয় এবার শান্ত কণ্ঠে স্পষ্ট ভাষায় বলল,

-” আমাদের মধ্যে ওসব কিচ্ছু হয়নি। মানে ওর মেন্সট্রুয়েশন চলছে এই আর কী..”

প্রিয় জায়গায় অন্য কেউ হলে এ মুহূর্তে ভীষণ লজ্জা পেত, কথা বলতে ভীষণ জড়তা কাজ করতো। কিন্তু সে লজ্জা পাওয়ার মত ছেলে না৷ সে লজ্জা পেতে নয় দিতেই ভালোবাসে, কমফোর্ট ফিল করে তাই যা বলার বিনা সংকোচেই বলল। রুবিনা কিঞ্চিৎ লজ্জা পেলেও চেপে গিয়ে শান্ত গলায় বলল,

-” তাহলে ওর এই অবস্থা কেন? ”

প্রিয় উদগ্রীব হয়ে এগিয়ে গেল পৃথিবীর দিকে। হাত বাড়িয়ে কপাল স্পর্শ করতেই দেখলো জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। হাঁপ নিঃশ্বাস ছাড়ল সে। বিরবির করে বলল,

-” এ আর নতুন কী? এটাই তো হওয়ার ছিল। কিচ্ছু না করেও অপরাধী হয়ে যাব ৷ ”

রুবিনা ঠোঁটটিপে হেসে বলল,

-” এবার সবাই আমারি মতো করে ভুল বুঝবে তোমাকে। ”

প্রিয় কঠিন চোখে পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে বলল,

-” কাজের কাজ হলো না কিছুই হুদাই নাম হলো ধুর!!!”

চলবে….
®জান্নাতুল নাঈমা
( কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ। ব্যস্ততায় লিখেছি রিচেক করিনি ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here