সেই আদুরে দিন পর্বঃ২৩

0
969

#সেই_আদুরে_দিন
#পর্বঃ২৩
#Arshi_Ayat

পাশাপাশি দুজনেই চুপচাপ বসে আছে। ক্ষণকাল পর রৌদ্রুপ ঘুরে বসলো শুদ্ধতার দিকে।ওর মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিরীহ গলায় বলল,’আমি জানি না তোমায় বিশ্বাস করাবো কি করে কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকেই কবুল বলিনি।এমনকি তোমার জায়গায় আর কাউকে ভাবিওনি কখনো।’এ পর্যন্ত বলে রৌদ্রুপ একটু থামলো।তারপর আবারো বলতে শুরু করলো,’এই দুইটা দিন অনেক কষ্ট পেয়েছি।ঠিকমতো খেতে পারি নি,ঘুমাতে পারি নি কোনো কাজও ঠিকমতো হয় নি।অসহায় লাগছিলো আমার।আমি বিদিশাকে জিগ্যেস করেছিলাম রেজিস্ট্রি পেপারে ওই সাইনটা ওর কি না!ও বলল ওর ই।আমি নাকি সিশাকে বিয়ে করেছি একবছর আগে।টমসকেও ফোন দিয়েছিলো সেও একই কথা বলল আর সিশাকে গত দুইদিন ধরে ফোনে পাওয়াই যাচ্ছে না।কিন্তু সত্যি বলতে আমি ওকে আমার ফ্রেন্ড ছাড়া কিছুই ভাবি নি।ও এটা কেনো করলো সেটাই বুঝতে পারছি না।আমি জানি তুমি হয়তো আমাকে বিশ্বাস করতে পারছো না তবে শীঘ্রই আমি প্রমাণ করে দেবো।’

শুদ্ধতা অপলক চেয়ে রৌদ্রুপের কথা শুনছিলো।কেনো যেনো বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে ওকে।মনে হচ্ছে ওইচোখ জোড়া মিথ্যা বলতে পারে না।রৌদ্রুপ হুট করেই শুদ্ধতার হাতটা নিজের গালে চেপে ধরে বলল,’আজকে রাতটা আমার কাছে থাকো প্লিজ।’

শুদ্ধতা মাথা নেড়ে সায় দিলো।সন্তুষ্টির হাসি হাসলো রৌদ্রুপ।প্রেয়সীকে পরম যত্নে বাহুতে আবদ্ধ করে শুয়ে পড়লো।প্রায় বেশ কিছুক্ষণ পর শুদ্ধতা বুঝতে পারলো রৌদ্রুপ ঘুমিয়ে গেছে।অতি সাবধানে ওর বাহুবন্ধনী আলগা করে উঠে বসলো শুদ্ধতা।খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে রৌদ্রুপ মাথাটা নিজের কোলে রাখলো।চোখবুঁজে মাথাটা এলিয়ে রেখে একহাতে ওর চুলে বিলি কাটতে শুরু করলো।আধভেজা চুলে হাত বুলাতে ভালোই লাগছে ওর।তবে মস্তিষ্কে একটা বিষয় ক্রমাগত ঘুরপাক খাচ্ছে তা হলো যদি সিশাকে রৌদ্রুপ বিয়ে না-ই করে তাহলে টমস আর বিদিশা কেনো মিথ্যা বলল?নাকি সিশাই ওদের বাধ্য করেছে?আর বাধ্য করা কি এতোই সহজ?কিভাবে বাধ্য করলো?তাও একসাথে দুজনকে!আরেকটা সম্ভবনা আছে হয়তো ওরা সত্যি বলছে রৌদ্রুপ মিথ্যা বলছে।

এসব ভাবতে ভাবতেই শুদ্ধতা ঘুমিয়ে পড়লো।যখন ঘুম ভাঙলো তখন ঘড়িতে সকল ছয়টা রৌদ্রুপ শুদ্ধতার কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে।অতি সন্তপর্ণে শুদ্ধতা রৌদ্রুপের কপালে হাত দিতেই আৎকে উঠলো।প্রচন্ড গরম হয়ে আছে।ঘাড়ে,গলায় হাত দিয়েই বুঝলো জ্বর এসেছে ওর।যত্নশীল হাতে মাথাটা বালিশের ওপর রেখে বিছানা থেকে নেমে একটা বাটিতে পানি এনে জলপট্টি দেওয়া শুরু করলো।তবুও জ্বর নামছে না।শুদ্ধতা একটা টাওয়াল ভিজিয়ে এনে শরীর মুছে দিতে লাগলো।এরমধ্যেই রৌদ্রুপের ফোনটা বেজে উঠলো।শুদ্ধতাই রিসিভ করলো।আরমান সাহরীফ চিন্তিত গলায় বলল,’শুদ্ধতা কি তোমার ওইখানে?’

‘হ্যাঁ।বাবা আমি এখানে।বাবা তুমি একটু আসো প্লিজ।ওনার শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।আমি জলপট্টি দিচ্ছি তবুও কমছে না।’

‘ও কি জেগে আছে?’

‘না বাবা জ্বরে বেহুশ হয়ে আছে।তুমি একটু তাড়াতাড়ি আসো।’

‘আচ্ছা আসছি।ওর কাছেই থাকিস।’
ফোন রেখে শুদ্ধতা আবারও জলপট্টি দিতে শুরু করলো।একটু পরই রৌদ্রুপ আস্তে আস্তে চোখ মেললো।মুখটা কিছুটা বিকৃত করে বলল,’মাথাব্যাথা করছে প্রচন্ড।একটু মাথাটা মালিশ করে দিবে?’

শুদ্ধতা বিনাবাক্য মাথা মালিশ করা শুরু করলো।এরমধ্যেই রৌদ্রুপ আবার ঘুমিয়ে গেছে।খানিকবাদে দরজায় কেউ আসতেই শুদ্ধতা নিচে নেমে দরজা খুললো।বাবা আর ডাক্তার ইউনুস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শুদ্ধতা ভেতরে ঢোকার জন্য সরে দাড়ালো।তারপর ওনাদের নিয়ে ওপরে চলে গেলো।ডাক্তার ইউনুস চেকআপ করে বললেন,’অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ফলে এই জ্বর এসেছে।ঔষধ লিখে দিচ্ছি।এগুলো খেয়ে বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।’

তারপর ডাক্তার ইউনুস চলে গেলেন।শুদ্ধতার বাবা ঔষধ আনার জন্য গেলেন।আর শুদ্ধতা স্যুপ বানাতে।রৌদ্রুপ এখনো ঘুমাচ্ছে।

স্যুপ আর ঔষধ খেয়ে রৌদ্রুপ আবারও ঘুমিয়ে পড়লো।শুদ্ধতা কিছুক্ষণ পাশে বসে রইলো।তারপর কিচেনে গিয়ে দুপুরের রান্নার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলো।আর শুদ্ধতার বাবা আগেই চলে গেছেন।বিকেলের দিকে একবার এসে দেখে যাবেন।

জ্বর ছেড়ে দেওয়ায় রৌদ্রুপের ঘুম ভাঙলো পৌনে বারোটায়।ঘুম থেকে উঠে শুদ্ধতাকে রুমে না দেখতে পেয়ে রান্নাঘরে চলে এলো।ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা।রৌদ্রুপ পেছন থেকে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,’কি রাঁধছ বউ?’

হুট করে আসায় শুদ্ধতা চমকে গেলো।ঘাড় ঘুরিয়ে একবার ওর দিকে চেয়ে বলল,’এখন ভালো লাগছে?’

‘হ্যাঁ।খুব ভালো লাগছে।’

‘আচ্ছা।ঘরে যান।আমি আসছি।’

‘তোমাকে একটা জিনিস দেখাবো।’

‘কি?’

‘হাতের কাজটা সেরে ঘরে আসো।’
এটা বলেই রৌদ্রুপ চলে গেলো।শুদ্ধতা কৌতুহলী হয়ে পড়লো।তাই তাড়াতাড়িই রান্নাটা শেষ করে ঘরে আসলো।রৌদ্রুপ ওকে দেখে মুচকি হেসে ইশারায় পাশে বসতে বলল।শুদ্ধতা বসতেই ইয়ারফোনের একপাশ ওকে দিয়ে রেকর্ডিং অন করে দিলো।কেউ একজন হুমকির স্বরে বলছে,’তুমি রৌদ্রুপকে বলবে যে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইনটা তুমিই করেছো।যেনো ও কোনোভাবেই মিথ্যা প্রমাণ না করতে পারে।আর যদি তুমি আমাকে হেল্প না করো তাহলে তোমার বাচ্চার লাশটাও পাবে না।’

এই পর্যায়ে এসে রৌদ্রুপ রেকর্ডিংটা অফ করে শুদ্ধতার কান থেকে ইয়ারফোনটা খুলে নিয়ে বলল,’কি বুঝলে?’

শুদ্ধতা চিন্তিত গলায় বলল,’কে যেনো কার বাচ্চাকে মেরে ফেলবে আপনাকে মিথ্যা না বললে।’

‘হ্যাঁ।এটা বিদিশার কল রেকর্ড।ওর কল রেকর্ড শুনে যা বোঝা গেলো ওকে সিশা বাধ্য করেছে আমাকে মিথ্যা বলতে।আর না বললে ওর বাচ্চাকে মেরে ফেলবে।’

‘কি ভয়ানক!আচ্ছা সিশার কল রেকর্ড পাওয়া যাবে না?’

‘পেলেও লাভ নেই।ও চালাক।নিজের নাম্বার থেকে কল করবে না।করলেও কোনো প্রাইভেট নাম্বার থেকে করবে।’

‘তাহলে এখন কি করবেন?বাচ্চাটা তো বিপদে আছে।’

‘সমস্যা নেই কিছুই হবে না।ওর এই কাজের জন্য ভয়ানক শাস্তি দেবো ওকে।ভালোবাসা পাপ নয় কিন্তু সেই ভালোবাসা জোর করে আদায় করতে চাওয়াটা পাপ।’

এরপর গোসল শেষে দুজনেই দুপুরের খাবার খেয়ে নিলো।শুদ্ধতার মনে এখন আর খুঁতখুঁত নেই।সে এখন বিশ্বাস করতে পারছে রৌদ্রুপকে আর যখন থেকে এই বিশ্বাসটা করতে পারছে তখন থেকে মনে যেনো বিষাদের ছায়া কেটে এক পশলা স্বস্তি এসেছে।খাওয়া শেষে শুদ্ধতা সবকিছু গুছিয়ে এসে দেখলো রৌদ্রুপ তৈরি হচ্ছে কোথাও যাওয়ার জন্য।এটা দেখে শুদ্ধতা বলল,’কোথায় যাচ্ছেন এখন?’

‘কাজ আছে একটা।বেশি না একঘন্টার মধ্যেই ফিরবো।’

‘আপনি অসুস্থ।এই অবস্থায় কোথাও যেতে পারবেন না।’

‘আরে!আমি এখন ঠিক আছি।জ্বরও নেই।আর বেশিক্ষণ তো লাগবে না শুধু যাবো আর আসবো।প্লিজ!’

‘আচ্ছা।তাড়াতাড়ি আসবেন।ফোন যেনো বন্ধ না হয়।’

‘তাড়াতাড়িই আসবো।ফোনও খোলা থাকবে।তুমি সাবধানে থেকো।’

যাওয়ার আগে শুদ্ধতা জড়িয়ে ধরে কাপলে আলতো একটা চুমু খেয়ে হাসিমুখে বেরিয়ে পড়লো।রৌদ্রুপ বের হবার পর কেমন একটা আশংকার চোরাস্রোত গলা বেয়ে উঠে আসছিলো।
————————-
অফিসে এসেছিলো রৌদ্রুপ।যদিও ছুটি তার তবুও একটা বিশেষ কারণে এসেছে সে।সিশার বয়ফ্রেন্ডের নাম্বারটা জোগাড় করতে।অতিকষ্টে নাম্বারটা জোগাড় করে বের হয়ে গেলো।গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ির দিকেই যাচ্ছিলো সে।হঠাৎ কমিশনারের ফোন আসায় রৌদ্রুপ রিসিভ করলো।ওপাশ থেকে কমিশনার শফিকুল ইসলাম বললেন,’তুমি কোথায় রৌদ্রুপ?’

‘এই তো স্যার বাসায় যাচ্ছি।কোনো দরকার?’

‘মাত্র খবর পেলাম তোমার বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে।বাসায় কি কেউ ছিলো?’

চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

আর যারা যারা গল্পটি পড়বেন তারা অবশ্যই রিয়েক্ট করে যাবেন।আপনাদের রিয়েক্টের ফলে অন্যান্যদের নিউজফিডে গল্প যাবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here