#ভ্রমণ
#পর্বঃ১৬
লেখাঃসামিয়া খান
সাইরাহ্ কে খাইয়ে দিচ্ছেন ইয়াদ।রোজকার তার অন্যতম অভ্যেস হলো ইয়াদের হাতে খাওয়া।আজকেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।যদিও সাইরাহ্ এখন নিজের বাবার বাসায়।আজকে রাতে তারেকের বহু জোরাজুরিতে ইয়াদ সাইরাহ্ কে এখানে থাকার অনুমতি দিলেন।তা নয় কখনো সে সাইরাহ্ কে ছাড়া থাকেন না।
“আরো খাবেন?”
সাইরাহ্ নাবোধক জবাব দিলেন।
“কি হয়েছে আপনার?মুখ এতো শুকিয়ে আছে কেন?”
“না তো।কিছু হয়নি।এমনে ভালো লাগছেনা।”
সাইরাহ্ এর বড্ড কষ্ট হচ্ছে কথা বলতে কিন্তু সে নিজেকে যথাসম্ভব চেষ্টা করছেন স্বাভাবিক রাখার।ইয়াদ তার মুখে হাত বুলিয়ে দিলেন।
“রাজপুত্র আসার আগে আমার চাঁদকে এতো অসুস্থ করে দিলেন এটা বড় অন্যায় ছিল।”
“তাই।”
“জ্বী রে চাঁদ।”
সাইরাহ্ ক্ষণিকের জন্য মনে হয় ভুলেই গিয়েছিলেন ইয়াদের সমস্ত সত্য। কিন্তু যখন আবার মনে হলো তখন বড্ড বেশী ভয় পাওয়া শুরু হলো তার।
“ঠিক আছে চাঁদ এখন আমি চলে যাই।আজকে রাতে বড্ড মিস করবো আপনাকে।”
সাইরাহ্ এর থেকে প্রথমে বিদায় নিয়ে একে একে তারেক ও সাইরাহ্ এর মায়ের থেকে বিদায় নিলেন ইয়াদ।যাওয়ার আগে বলে গেলেন যদি কোন সমস্যা হয় তৎক্ষনাৎ যেন তাকে কল দেয় তারেক।
ইয়াদ চলে গেলে সাইরাহ্ নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে নিচে বসে পড়লেন।প্রচুর চিল্লিয়ে কাঁদতে মন চাচ্ছে তার।কিন্তু সেই অবকাশ তার নেই।গলা দিয়ে শব্দ বের হবে তাই নিজের দাঁত দিয়ে হাত কাঁমড়ে ধরলো সে।এখন কি হবে?ইয়াদের সাথে থাকাও হবে কীনা?তার বাচ্চাটা কি তবে বাবার ছায়া ছাড়া বড় হবেন।নাকী সে যে সব জানতে পেরেছে সেটা ইয়াদ জানলে তাকেও জেরিনের মতো মেরে ফেলবেন।কোন দিশে পাচ্ছেনা এখন সাইরাহ্।চারপাশে শুধুই অন্ধকার।
,
,
কফির মগে ধোঁয়া উড়ছে।সেদিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রয়েছেন ইনায়া।ল্যাপটপে তার আর ইয়াদের হাসৌজ্জল সব মুহুর্তের ভিডিও চলছে।ইনায়া ভেবে পায়না তার জীবনেই কেন বা এরকম হলো।ছোটবেলায় তার মা তার বাবার পরকীয়া ধরার পর তাদের প্রায় ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছিলো।কিন্তু ইনায়ার মুখের দিকে তাঁকিয়ে আর আলাদা হয়নি।পরে অবশ্য তার বাবা নিজেকে শুধরে নিলেও তার মা কখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি।সংসারর বিষিয়ে উঠেছিল।রোজ রোজ ঝগড়া, মারামারি এসব দেখে বড় হয়েছেন সে।মাঝেমধ্যে সে তার মা কে প্রশ্ন করতো বাবা কে মাফ করলে এমন কি হতো।মা জবাব দেননা।যদি ইনায়ার মা তার বাবাকে মাফ করতে পারতেন তবে সব ভালো থাকতো এটা ইনায়ার ধারণা।এজন্য ইনায়া ইয়াদের করা হাজারটা ভুল মাফ করে দিতো।যাতে সে ভালোভাবে সংসার করতে পারে।অথচ তার আড়ালে পাপ করছিলো ইয়াদ।এ ভুলের কি কখনো ক্ষমা আছে?
ফোন উঠিয়ে ইনায়া তারেক কে কল করলেন।
“হ্যালো তারেক।”
“জ্বী বলুন।”
“আমি ইনায়া।”
“চিনেছি।”
“সাইরাহ্ কেমন আছে?”
“ভালো না।একটু আগে ইয়াদ এখান থেকে গেলো সে সময় থেকে রুমের দরজা লাগিয়ে রেখেছে।”
“তাকে একটু দেখো তারেক।সাইরাহ্ এক্সপেক্ট করছেন।এসময় এতো প্রেশার নেওয়া সত্যিই তার জন্য সঠিক নয়।”
“এটা আমার বোনের ভাগ্য ছিল।কিছু করার নেই।”
“আছে করার অবশ্যই আছে।”
“কি?”
“সাইরাহ্ কে নিয়ে এক ঘন্টা পর ভিডিও কলে আসতে পারবে?”
“পারবো।”
“ঠিক আছে এখন রাখছি।এক ঘন্টা পর কথা হবে।”
“আপনার কি হলো হঠাৎ চাঁদ কেঁদেছেন আপনি?”
ইয়াদ সাইরাহ্ কে ভিডিও কলে দেখে বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
“কি হলো বলেন।কেউ কিছু বলেছে?”
“নাহ্ কেউ কিছু বলেনি।”
“তবে কাঁদছিলেন কেন?”
“খারাপ স্বপ্ন দেখেছিলাম একটা।”
“আমি কি আসবো?”
“উহু।সমস্যা নেই।”
“মুখের দিকে ধরে রাখেন তো ফোনটা।”
ইয়াদ বেশ কিছু সময় সাইরাহ্ কে পর্যবেক্ষণ করলেন।
“জানেন রাজপুত্রের মা।আমাকে দাদু কি বলে ডাকে?”
“সূর্য।”
“হুম।কারণ তার কথা আমার মধ্যে অনেক তেজ।”
“হুম।”
“আর আপনাকে আমি কি বলে ডাকি?”
“চাঁদ।”
“চাঁদ আর সূর্য তাদের অবস্থান কিন্তু এক আকাশেই।এই ইয়াদ ইউসুফের জীবনে হাজার তারা থাকলেও চাঁদ কিন্তু একটা।”
চমকে উঠলেন সাইরাহ্।ফোনের ওপাশ থেকে ইয়াদের হাসি হাসি মুখটা দেখা যাচ্ছে।ইশ! এ লোকটা এতোকিছু করতে পারে।এটা বিশ্বাসযোগ্য?
,
,
“সব মনোযোগ দিয়ে শুনবে।ইয়াদ হলেন ক্ষেত্রজ সন্তান।তার বর্তমান বাবা সন্তান দানে অক্ষম ছিলেন।তার ফুফাতো ভাইয়ের মানে ইয়াদের দাদুর ছেলের ঔরসজাত সন্তান হচ্ছেন ইয়াদ।আর তার মায়ের গর্ভজাত সন্তান হলেও তার মায়ের পরকীয়া চলতো বহু লোকের সাথে।এজন্য ইয়াদের বাবা তার স্ত্রীকে মেরে ফেলেন।যা পুলিশের কাছে আত্নহত্যা বলা হয় তারপরেই ইয়াদের বায়োলজিক্যাল ফাদারের মৃত্যু হয়।খুনটা করেন ইয়াদ।এটা বাড়ীর সকলে জানে।ইয়াদ তার বাবার আত্না।মাত্র দশ বছর বয়সে খুন করায় তার বাবা তাকে দেশের বাহিরে পাঠিয়ে দেয়।সেখানে ইয়াদ প্লে বয় হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন।নানান মেয়ের সাথে চলা,ডেট করা তার নিত্য দিনকার কাজ ছিল।বাবার অঢেল টাকা।সে যতোদিন তার কলেজে ছিল মোট তিনটে খুন হয় তার ক্লাসমেট ও সিনিয়র। মজার ব্যাপার খুন গুলো এতো অভিনভব কায়দায় করা হয় যে কেউ ধরতে পারেন না খুনটা আসলে কে করেছেন।কেস গুলো আনসলভ।সব মিলিয়ে ইয়াদের খুন সংখ্যা দশ+ হতে পারে।”
তারেক আর সাইরাহ্ কাঠ কাঠ হয়ে ইনায়ার সব কথা শুনছেন ভিডিও কলে।
“এগুলো পুলিশকে দিলে হবেনা?”
“নাহ।তোমার কি মনে হয় ইয়াদ এতো অপরাধ করে ব্যাকআপ প্ল্যান রাখেনি?ওর অনেক বেশী প্ল্যান আছে।এবং প্ল্যান বি,সি,ডি এমনকি যেট প্ল্যান পর্যন্ত তার রেডি।বিজনেস চালায় এতোগুলো মেয়েকে হ্যান্ডেল করে তার বুদ্ধি কতোটুকু ভেবে দেখেছো?”
“তাহলে উপায়?”
“তরুলতার প্রাক্তন স্বামী কে জানো?তার অধীনে তরুলতার কেস তাপস।কিন্তু শালা একটা কারাপ্ট অফিসার।টাকার কুত্তা।সব বললেও ইয়াদের কাছে বিক্রি হয়ে যাবে।”
সাইরাহ্ কোনকিছু বলছেন না।
“তাহলে অন্য পুকিশকে দিলে হবেনা?”
“নাহ তারেক।উল্টো বেঁচে যাবে তারপর আমাদের সকলকে মেরে ফেলবে একদম।”
“কোন উপায় কি নেই?”
“আছে।”
“কি?”
“সাইরাহ্ ইয়াদকে খুন করবে।ওর মৃত্যু হওয়া ছাড়া কোন উপায় অবশিষ্ট নেই।
চলবে,,,