ভ্রমণ পর্বঃ১৫

0
440

#ভ্রমণ
#পর্বঃ১৫
লেখাঃসামিয়া খান

“ইয়াদ ইউসুফ,নামটা বেশ সুন্দর না?নামটার মতো মানুষটাও দেখতে অসাধারণ।এতো সুন্দর কোন পুরুষ আমি জীবনে আরো কখনো দেখেছি বা দেখতে সৌভাগ্য হবে কীনা জানা নেই।চেহারার সাথে ব্যবহার,ব্যক্তিত্ব সব মিলিয়ে অসাধারণ।কোন নারীকে সে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে।আমিও আকর্ষিত হয়েছিলাম।বাবা -মায়ের একমাত্র সন্তান হিসেবে কোনকিছুর কমতি ছিলনা ইনয়া আমার।যা আবদার করতাম বাবা আমাকে তাই এনে দিতো।তো একদিন ইয়াদকে আবদার করে ফেললাম।তখন আমার আর ইয়াদের প্রেম মাখোমাখো।প্রেমের এক পর্যায়ে ইয়াদ বললেন তারও কিছু শারীরিক চাহিদা রয়েছে কিন্ত সে আমাকে বিয়ে করতে চায়।বাবা,মা কে বললাম তারা কিছুতেই মানতে রাজী হলো না।এমনকি ইয়াদের সাথে দেখা করা তো দূরে থাক তার ছবিটুকু দেখারও প্রয়োজনবোধ করলেন না।উল্টো জিদ করার কারণে আমাকে প্রথমবার বাবা একটা চড় মারলেন।খুব অভিমান ও রাগ হলো আমার।বের হয়ে আসলাম ইয়াদের সাথে।তখুনি ইয়াদ আমাকে বিয়ে করে নিলেন।বিশাল একটা ফ্ল্যাটে নিয়ে রাখলেন আমাকে।এতো এতো সবকিছু আমি বুঝতে পারলাম না বাবা কেন মেনে নিলেন না।মনে হলো সে কখনো আমার খুশী চাইনি।সব কতো সুন্দর ছিল।ইয়াদের ভালোবাসা, কেয়ারিং কিছুর কমতি ছিলনা।উল্টো আরো বেশী করে ছিল সব।সংসার করাটা আমার জন্য কতো যে মধুর ছিল তা কল্পণা করার বাহিরে।

একদিন জানতে পারলাম আমি মা হবো।এর থেকে বেশী খুশীর সংবাদ কারো জন্য হতে পারো বলতে পারো?সব ঠিক ছিল আজ দুপুর পর্যন্ত।আজ যখন ইয়াদ বাহিরে গেলেন তখন মনে হলো তার পিছু নেই।তাকে সারপ্রাইজ দেবো কিন্তু কি হলো জানো?আমিই বকা বনে গেলাম।ইয়াদের বউ আছে মেয়েটা দেখতে অনেক মিষ্টি।নামটা হচ্ছে সাইরাহ্।কতো আদর করে ইয়াদ মেয়েটাকে শাড়ী কিনে দিলো।তার বাবাও সাথে ছিল।বাড়ীর বউ হিসেবে মেয়েটা খুব আদরের।সব দেখে আমি মরে গেলাম অর্ধেক।তখন মনে হলো তোমাকে একটু আগে বাজে মেয়ে বলেছেন ইয়াদ।এবং তুমিও বললে ইউসুফ নাম।তোমাকে কোনভাবে ফোনে পেলাম না।চলে আসলাম তোমার চেম্বারে।সেখানেও তুমি ছিলেনা।চেম্বার থেকে তোমার ঠিকানা নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।শুনলাম তুমি নাকী ঢাকার বাহিরে গিয়েছো।তোমার বেডরুমে তোমাদের ছবি দেখে বুঝে গেলাম ইয়াদকে তুমিও ভালোবাসো।ব্যাস হয়ে গেলো।তোমাকে জানাবো কীভাবে সব কারণ এখন না বললে পরে আমি না ও বলতে পারি কিছু।তাই সব লিখে রেখে গেলাম।আমার বাবুটাকে নিয়ে আমি কোথাও চলে যাবো।এরকম চরিত্রহীন লোকের ছায়াও পড়তে দেবো না ওর উপর।তোমাকে জানানো উচিত ছিল ইনায়া।কারণ একমাত্র সাইরাহ্ ছাড়া আমাদের কাউকে সে কারো সাথে পরিচয় করায়নি।তোমার যেনো ভুগতে না হয় ইনায়া।খেয়াল রেখো নিজের।

–জেরিন

রোবটের মতো ডায়েরিটা বন্ধ করলো সাইরাহ্।কফিশপের এতো লোক সমাগম এতো চেঁচামেচি কিছুই যেন শুনতে পাচ্ছেনা সে।পাশে তারেক তার হাত দুটো শক্ত করে ধরে রয়েছেন।

“এই মেমোরি কার্ডটাও ছিল ডায়েরি এর সাথে।এখানে ইয়াদ আর জেরিনের বহু ছবি, ভিডিও সব রয়েছে।”

ইনায়া সাইরাহ্ এর দিকে মেমোরি কার্ডটা বাড়িয়ে দিলেন।সাইরাহ্ নিলেন না কিন্তু হাত বাড়িয়ে তারেক ওটা নিলেন।

“খারাপ লাগছে তাই না সাইরাহ?গত ২২ দিন আগে আমি সব জানতে পেরেছি।তখন থেকে যে আমার কেমন লাগে তা আমি জানি শুধু।”

সাইরাহ্ এবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করলেন।তারেকও কান্নায় ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা।

“কাঁদিস না বোন।জেরিন মাইমুনার ফুফাতো বোন।তোরা যখন গ্রীসে ছিলি তখনই আমি সব জানি বোন কিন্তু তোর জন্য কিছু বলতো পারিনি।”

“তারেক আরো কিছু বলার আছে আপনাকে।”

“বলুন।”

“জেরিন যেদিন এসব লিখে যায় কাকতালীয় ভাবে সেদিনই তার মৃত্যু ঘটে।এবং তার লাশ পাওয়া যায়।এটা কখনো কাকতালীয় নয়।তার কয়দিন আগে ইয়াদের বন্ধু মারুফ আর তার ডান তরুলতার খুন হয়।তরুলতার বাড়ীতে আমি লুকিয়ে যাই।পুলিশ নাকী কোন ক্লু পাইনি কিন্তু আমি একটা জিনিস পাই।তরুলতার রুমে ফেইস ওয়াইপ ।নাইট রিলাক্সিং ক্লিন এন্ড ক্লিয়ার ব্রান্ডের যেটা ইয়াদ সবসময় ইউজ করে।তরুলতার মার্ডারও ইয়াদ করেছে।এমনকি মারুফেরও।জেরিন,মারুফ আর তরুলতা তিনজনকেই সে মেরেছে।”

সাইরাহ্ একটা আর্তনাদ করে উঠলেন।

“এমন হতে পারেনা।সে খুন কীভাবে করবে?”

“আমিও তাই ভেবেছিলাম।হুট করে সব করিনি।আগে সব দেখেছি বুঝেছি।তোমাকে জানানোতে সময় নিয়েছি মোট বাইশ দিন।এ কয়দিনে আমি সব খোঁজ নিয়েছি।”

“তাহলে বলতে চাচ্ছেন ইয়াদ খুনিও।”

“ইয়েস তারেক।এবং জেরিন সব জানায় ওকেও মেরে ফেলেছেন।নেক্সট টার্গেট হয়তো আমি কারণ আমিও সব জানতে পেরেছি।”

হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছলেন ইনায়া।

“জানো সাইরাহ্ আমার দুবার এবোর্শন করিয়েছে ইয়াদ।আবার জেরিনকে নিজ বাচ্চাসহ খুন করেছে।”

চমকে উঠে সাইরাহ্ নিজের পেটে হাত দিলো।সে নিজেও তো মা হতে চলেছে।তাহলে কি ইয়াদ যদি জানতে পারে সে সব জানে তবে কি তাকেও মেরে দিবে?করুণ স্বরে তারেকের উদ্দেশ্যে সাইরাহ্ বলল

“ভাই আমার কেমন যেন লাগছে আমাকে বাসায় নিয়ে চলো।”

“তাকে নিয়ে যান।সাইরাহ্ তো প্রেগনেন্ট।ভুলেও ইয়াদের সাথে থাকতে দিবেন না।তা নয় কি হতে পারে বলা যায়না।ও হ্যাঁ আরো একটা কথা ইয়াদ ক্ষেত্রজ।”

“ক্ষেত্রজ মানে?”

“ওয়ান কাইন্ড অফ জারজ সন্তান তার মায়ের অবৈধ পরকীয়ার ফল।”

তারেকের মনে হচ্ছে এখন সব উগরে ফেলে দিবেন। আর শুনতে পারছেনা সে।সাইরাহ্ এর মনের অবস্থা সে বুঝতে পারছেন।এসময় এখান থেকে নিয়ে যাওয়াটা সমীচীন।
,
,

ইয়াদকে এসময় নিজের ফ্ল্যাটে দেখে মিষ্টি করে হাসলেন ইনায়া।ইয়াদও প্রতিত্ত্যুরে একটা হাসি ফেরত দিলেন।

“কোথায় ছিলেন আমার প্রজাপতি?”

ইয়াদের এই মিষ্টি কথায় বেশ খানিকটা জোরেই হেসে দেয় ইনায়া।কথাটা কতো বিদ্রুপের।আচ্ছা এ লোক কীভাবে এতো নাটক করতে পারে?

“একটু দরকার ছিল তাই বাহিরে গিয়েছিলাম।”

“আপনি কি ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করেন না?শুকিয়ে যাচ্ছেন তো।”

সত্যিই ইনায়া অনেক শুকিয়েছে গত বাইশ দিনে।মন ও শরীর দুটোই ভেঙে গিয়েছে একদম।

“আসুন বসুন এখানে।”

ইনায়াকে নিয়ে কাউচে গিয়ে বসলেন ইয়াদ।

“আপনি গোসল করেছেন?”

“নাহ।”

“তাহলে চটপট গোসল সেরে নেন তো।”

ইনায়া গোসল সেরে বের হয়ে দেখেন ইয়াদ নিজ হাতে খাবার বানিয়েছেন।

রাভিওলি!এটা অনেক প্রিয় পাস্তা ইনায়ার।

“সারপ্রাইজ!প্রজাপতি আমার।আপনার জন্য নিজ হাতে খাবার বানিয়েছি।এটা অনেক পছন্দ করেন আপনি তাই না?আসুন বসেন খেয়ে নিবেন।”

ইনায়াকে চেয়ারে টেনে নিজ হাতে মুখে তুলে দিলেন ইয়াদ।ইনায়া কান্না করে ইয়াদকে জরিয়ে ধরলেন।এমন কেন হলো তার সাথে?ভাগ্য তো অন্যরকমও হতে পারতো তাই না?

“কাঁদছেন কেন ইনায়া?”

“এমনে।”

“কাঁদবেন না। আমি আছি তো।”
,
,
,
তারেকের মা একবার ছেলের দিলে ভ্রু কুঁচকে তাঁকিয়ে আছেন তো একবার মেয়ের দিকে।এসময় তারেক কেন নিজের বোনকে নিয়ে আসলো আবার সাইরাহ্ বা কেন এতো অসুস্থ তা বুঝতে পারছেন না সে।

“মা একটু দুধ গরম করে এনে দাও তো।খাওয়াবো সাইরাহ্ কে।”

“ইয়াদ কি জানে যে ও এখানে?এ সময় নিয়ে আসলি যে ইয়াদের তো কড়া নিষেধ ছিল যে বাবু না হওয়া পর্যন্ত ও কোথাও যাবেনা।”

“মা ও আমার বোন।ওকে নিয়ে আসার জন্য কারো পারমিশন দরকার নেই আমার।”।

তারেকের মা কিছু না বলে চলে গেলেন।এদিকে সাইরাহ্ কাঁদছেন।তারেকের মনে হচ্ছে সে নিজ হাতে তার বোনের জীবন নষ্ট করে ফেলেছেন।তারেক আর কান্না সহ্য করতে পারলেন না।দুধ খাইয়ে সাইরাহ্কে ঘুমাতে বলে নিজের রুমে চলে গেলেন।

ইয়াদের গন্ধ তীব্র নাকে ভেসে আসছে সাইরাহ্ এর।ঘুমের মধ্যেও তো তা বেশ বুঝতে পারছেন সাইরাহ।হালকা চোখ খুলে দেখলেন সে ইয়াদের বুকে জড়িয়ে রয়েছেন।ইয়াদ তাকে ঘুম থেকে উঠতে দেখে নাকে নাক মিলিয়ে দিলেন।

” এভাবে আমাকে কষ্ট দিতে পারলেন চাঁদ?হঠাৎ এসে পড়লেন। রাজপুত্র আর আপনাকে ছাড়া আমি যে কতোটা ব্যাকুল হই তা আপনি কি জানেন না?”

চলবে,,

আমার গ্রুপে রোমান্টিক গল্প এক ঘন বর্ষায় চলছে।গ্রুপ লিংক কমেন্টে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here