#ভ্রমণ
#পর্বঃ৮
লেখাঃসামিয়া খান
কিছু কিছু আঘাত মস্তিস্ককে এমনভাবে পীড়িত করে যে তার রেশ জীবনের বহুকাল পর্যন্ত থেকে যায়।ঠিক তেমনি সাইরাহ্ এর দশ বছর বয়সে জীবনে ঘটে যাওয়া তার বাবার আকস্মিক মৃত্যু তাকে একা না থাকতে শিখিয়েছেন।মা এবং একমাত্র ভাইকে ছাড়া কোথাও যেতো না সে।এমনকি কলেজেও তার ক্লাসের বাহিরে তার মা বসে থাকতেন এবং সে ক্লাস করতো।অদ্ভুত আজ সেই সাইরাহ্ কে একা একা অন্য বাড়ীতে আসতে হলো বধূবেশে।অথচ বলা রয়েছে এটা নাকী তার নিজের বাড়ী।নিজের বাড়ীই বটে।কেন স্বামীর বাড়ী নিজের হয়না?
আয়নার সামনে বসে রয়েছেন সাইরাহ্।রাণী গোলাপি এক জামদানি পরিধান করেছে সাথে গয়না তে শরীর মুড়ে রয়েছে।কানে বড় বড় ঝুমকা,গলায় অনেক বড় সীতা হাড়,মানতাসা,কোমর বন্ধনী,দুহাতে বড় বড় বালা।চুলগুলো খোলা এবং তাতে বেলী ফুলের মালা বসিয়ে দিচ্ছে ইয়াদের দাদু।ইয়াদের বাসায় এসেছে সাইরাহ্ এখন মাত্র চার ঘন্টা।এই একটু সময়ে কেবল দুটো নারীকেই সে দেখতে পেয়েছেন। এক ইয়াদের দাদু আর একজন হয়তো কাজের লোক।বেশ সুন্দর বৃদ্ধাটা।সাইরাহ্ কে সে সাজিয়ে দিচ্ছে বড় একটা টুলের উপর বসে।এসেই সাইরাহ্ কথায় কথায় শুনেছে বৃদ্ধার এক পা নকল।তাকে সাজানো শেষ হলে থুতনীটা সাইরাহ্ এর মাথায় ঠেকালেন ইয়াদের দাদু।আয়না দিয়ে তার মুখের দিকে তাঁকিয়ে রয়েছেন।
“কি লো কমলা সুন্দরী।আজ রাতে কিন্তু মালা বদল হবে।”
সাইরাহ্ কে ছোট বেলা থেকে তার মা সব শিক্ষা দিয়েই বড় করেছেন।এজন্য ইয়াদের দাদুর কথার মানে বুঝতে তার সমস্যা হলো না।এবং কিছু মনেও করলেন না।তার আত্নীয়দের বিয়ের সময় দেখেছে নানী, দাদীদের এমন মজা।
“তুই তো দেখছি অনেক সুন্দরী।আমার ইয়াদের পছন্দ এতো সুন্দর কেন রে?বল তো!”
সাইরাহ্ মুচকি হেসে জবাব দিলেন–
“জানিনা।”
“তোর হাসি তো একদম চাঁদের মতো।আমার সূর্য যে একটা চাঁদ নিয়ে এসেছে।”
“আমার উপর তোমার সন্দেহ ছিল নাকী দাদু?”
সাইরাহ্ এবং ইয়াদের দাদু ঘুরে দেখেন ইয়াদ একটা ব্রিফকেস হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
“দুজন মানুষ কথা বললে তাদের কথা লুকিয়ে শোনা খারাপ অভ্যেস সূর্য।”
“জানি তো দাদু।”
ইয়াদ এগিয়ে এসে তার দাদুকে মোড়া থেকে ধরে নামালেন।
“আপনার কি এখন যাওয়ার সময় হয়নি দাদু?”
“অবশ্যই।”
ইয়াদের দাদু যাওয়ার আগে কানে কানে সাইরাহ্ কে কিছু বলেন গেলেন।এতে সাইরাহ্ আরো লাল নীল সবুজ হওয়া শুরু করলেন কিন্তু কিছু বললেন না।ইয়াদের দাদু ধীরে ধীরে দরজা চাপিয়ে বাহিরে চলে গেলেন।
রুমের দরজা আঁটকে ইয়াদ সাইরাহ্ এর সামনে এসে দাঁড়ালো।অদ্ভুত সুন্দর মেয়েটা!মাথা ঝিম ধরানো?নাহ্ তো।এটা হচ্ছে সমস্ত চিন্তাশক্তি কেড়ে নেওয়ার দারুণ কলাকৌশল।সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত।
“এটা আপনার জন্য সাইরাহ্।”
ব্রিফকেস এগিয়ে দিলেন তার দিকে ইয়াদ।সাইরাহ্ হাতে নিয়ে তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে দেখছেন।তার চোখের ভাষা ইয়াদ কিছুটা উপোলব্ধি করে নিজ থেকেই জবাব প্রদান করলেন।
“এটা আপনার মোহরানা।আমি শোধ করে দিলাম।”
“ওহ।”
“ওদিকে লকার ওখানে রাখতে পারেন।”
লকারে সব ঠিকঠাক মতো রেখে সাইরাহ্ ও ইয়াদ বিছানায় গিয়ে বসলেন।
“আচ্ছা সাইরাহ্ এখনো তো আমরা পরিচিত হতে পারলাম না।হবেন?”
মাথা নাড়ালো সাইরাহ্।
“বলেন কি বলবেন।”
“তার আগে বলেন আপনি আমাকে কি বলে ডাকবেন।”
“আপনি যা বলবেন।”
“সত্যি তো?”
“হুম।”
“সময় আসলে বলবো কি বলে ডাকতে হবে।”
“ঠিক আছে।”
কিছুসময় ইয়াদ ও সাইরাহ্ দুজনেই নিরব ছিলেন।ইয়াদই প্রথমে মুখ খুললেন।
“আপনি এতো গাঁধা কেন? একটা কথা সত্যি বলেন সেদিন নয়ন ছেলেটার সাথে কথা বলতে এবং ওর একটু পর টাচ করা পছন্দ হচ্ছিলো? না তাইতো?”
“হুম।”
“তাও গাঁধার মতো হাসছিলেন কেন?”
“মা বলেছিলেন কেউ যাই বলুক তার সাথে হেসে হেসে কথা বলতে।”
সাইরাহ্ এর এমন কথায় বোকা বনে গেলেন ইয়াদ।হাত দিয়ে সাইরাহ্ এর কপালে হালকা ধাক্কা দিলেন।
“বোকা চাঁদ আমার।তাহলে কেউ যদি গালি দেয় আপনি তখনও হাসবেন?”
“আমার একথাটা অনেক ভালো লাগে।”
“কোনটা?”
“আমার চাঁদ।”
সাইরাহ্ একটু ইয়াদের দিকে মুখ ঝুঁকালেন।
“আপনি তো আমার আমার এবং আমার চাঁদ।”
কথাটা বলে ফুঁ দিলেন সাইরাহ্ এর মুখে।ঝিম মেরে উঠলো সাইরাহ্ এর শরীর।
,
,
ইনায়া নিজের কেবিনে বসে রয়েছেন।এখন কোন কাজ না থাকায় বসে বসে এক আর্টিকেল পড়ছেন।
“ইনফেবুলেশন! এটি একটি এমন প্রক্রিয়া যেখানে মেয়েদের গোপনাঙ্গ সেলাই করে দেওয়া হয় , শুধু মাত্র প্রস্রাব করার অংশ টুকু ছেড়ে। আফ্রিকার কিছু কিছু অংশে এখনো এই অনুশীলনের প্রচলন আছে, এটি করার কারন হল বিয়ের আগে মেয়েটি যাতে কারো সঙ্গে সঙ্গম করতে না পারে ।
সেলাই করার দিন থেকে পনেরো কুড়ি দিন হাত পা বেঁধে রাখা হয় যাতে সেলাই সম্পূর্ণ ভাবে শুকিয়ে আসে এবং মেয়েটি সেলাই কাঁচা অবস্থায় নড়াচড়া করতে না পারে । তাকে চলতে বাধা দেওয়া হয় যাতে সেলাই ছিঁড়ে না যায়। প্রায় চল্লিশ দিন লাগে সেলাই সম্পুর্ন ঠিক হতে । সেলাই করা হয় শুধু উপরের চামড়া টুকু যাতে তার গোপন অঙ্গের গভীরতা ঢেকে দেওয়া যায় । তারপর সেই সেলাই খোলা হয় মেয়েটির বাসর রাতে । যাতে সে তার সঙ্গীর সাথে অ্যাটাচ হতে সক্ষম হয় । এতে মেয়েটি সম্পূর্ণ ভাবে ভার্জিন আছে এটাই প্রমান করার চেষ্টা করা হয়।
বাসর রাতে যৌনাঙ্গের সেলাই কেটে সেই রাতেই মিলন করা , মানে ঠিক কতখানি যন্ত্রণা কতখানি কষ্ট কতটা চোখের জল, শুধু একটা মেয়ের ভার্জিনিটি ঠিক রাখার জন্য তার প্রতি এতটা অন্যায় !এমনকি এটি মেয়েদের দ্বারা করা হয়ে থাকে । (পদ্মাবতী মন্ডল)”
পুরো রিচুয়ালটা পড়ে শরীর ঝিম করে উঠলো ইনায়ার।কি জঘন্য নিয়ম রীতি।অথচ এই আমরাই নাকী মা জাতি।
কেবিনে ইনায়ার এসিসটেন্টের প্রবেশে ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে নিলেন ইনায়া।
“ম্যাম একজনের এপোয়নমেন্ট ছিল।”
“সেন্ড হিম ওর হার ইনসাইড।”
একটু পর একজন অন্তঃস্বত্তা মেয়ে কেবিনে প্রবেশ করলেন।
“বসুন।”
সামনের মেয়েটি চেয়ার টেনে অতি সন্তপর্ণে বসলেন।
“আপনার নাম?”
“জেরিন আহমেদ।”
“আর ইউ এক্সপেক্টিং।”
“ইয়েস।”
“হাউ মান্থস?”
“তিন মাস।”
“আপনার মনে যা আছে আমাকে বিনা সংকোচে বলুন।”
জেরিন কিছু সময় চুপ থাকলেন।
“আসলে আমার বাসার অমতে আমি বিয়ে করেছি।প্রেমের বিয়ে।বাবা মায়ের এক সন্তান।খুব আশা ছিল বাবা মা ভালোবাসাটাকে মেনে নিবে।কিন্তু নেয়নি।বাসা থেকে বের হয়ে এসেছি।এমন নয় আমি সুখে নেই।এমন কোন কিছু নেই যে অভাব আছে আমার।সে আমাকে টাকা,পয়সা, সম্মান, সময়, এটেনশন সব সব দেয়।যদিও এখনো আমাদের পরিচয় হাইড।এতো সব বিষয় থাকার পরও একটা বিষয়ে খুঁত খুঁত রয়েছে।মনে হয় কিছু একটা ঠিক নেই।”
“কি নেই?”
“সেটা বলতে পারিনা।”
“আপনার ইনসোমিয়া মানে অনিদ্রা রয়েছে।”
“হ্যাঁ।এবং এসব বাচ্চা হবে তা জানার পর থেকেই।
” ঠিক আছে। ”
“আপনার হাজবেন্ড নেম কি?”
“ইউসুফ!”
চলবে,,,
সামনে কি হবে?এনি গেসিং?