ভ্রমণ পর্বঃ৭

0
431

#ভ্রমণ
#পর্বঃ৭
লেখাঃসামিয়া খান

পুরো আস্ত একটা মিষ্টি মুখে দিয়ে তৃপ্তি সহকারে তা ভক্ষণ করলেন মারুফ।টেবিলে ইয়াদের পাশে বসে খাচ্ছেন সে।ইয়াদ আর তার সামনে বসে রয়েছেন ইয়াদের দাদু নূরেজাহান।

“আরো লাগবে মারুফ?”

“নাহ্ দাদু।কিন্তু তোমার হাতের কাঁচা গোল্লা খেতে অমীয়।”

“তাহলে খেয়ে নে ভালো করে।আবার কবে না কবে আসবি তা তো বলা যায়না।”

“হয়তো আর না ও আসতে পারে।”

ইয়াদের এমন কথায় মারুফ খাওয়া বন্ধ করে তার দিকে তাঁকালেন।আশ্চর্য চাহনী তার।

“কি বললি?”

“নাহ বললাম একমাস বা দুমাস না ও আসতে পারিস।”

ঠোঁটদ্বয় আলাদা রকম করে প্রশস্থ করলেন ইয়াদ।মারুফ তার এরকম প্রাণোচ্ছল হাসি দেখে একটা শুকনো ঢোক গিললেন কিন্তু আর মিষ্টি উঠিয়ে খেতে পারলেন না।তার মন কেন যেন এখন অন্য কিছু জানান দিলো।সে কোনরকম এক গ্লাস পানি খেয়ে উঠে পড়লেন।

“ইয়াদ,দাদু আমি আসছি।”

“আরে দাঁড়া মারুফ আমিও যাবো তোর সাথে।”

“তুই কেন যাবি ইয়াদ?”

“এমনে।দাদু আসি।”

ইয়াদের দাদুর থেকে বিদায় নিয়ে মারুফ ও ইয়াদ বাসা থেকে বের হয়ে আসলেন।মারুফ এক বার ভাবলো সে ইয়াদের সাথে যাবেনা।কিন্তু কি মনে করে আবার যাওয়া শুরু করলেন।

চারপাশে ভ্যাপসা গরম শুরু হয়েছে।তারমধ্যে কেমন যেন একটা গন্ধ।কালো অন্ধকার রুমে বসে রয়েছেন মারুফ।তার হাত পা দঁড়ি দিয়ে বাঁধা।তার সামনে চেয়ারে বসে রয়েছেন ইয়াদ।হালকা হালকা ঘাম তার সাদা শুভ্র মুখে ফুঁটে উঠেছে শিশিরদানার মতো।

“ছেড়ে দে ইয়াদ।আমি কি করেছি?”

নেশা জড়ানো এক কণ্ঠে কথাটা বললেন মারুফ।

“পাওয়ার অফ এটর্নির পেপারস গুলো কার কাছে মারুফ?”

“জানিনা আমি।”

শান্ত করে উঠে ইয়াদ মারুফের সামনে দাঁড়ালো।তারপর তার অন্ডকোষ বরাবর অনেক জোড়ে একটা লাত্থি বসালো।কঁকিয়ে উঠলেন মারুফ।

“আমি জানিনা মনে করছিস? তরু এতো সাহস পেলো কীভাবে আমার বিপক্ষে যাওয়ার যদি কেউ তাকে না উস্কায়?তুই ছিলি সবকিছুর পিছনে।”

কাতড়াতে কাতড়াতে জবাব দিলেন মারুফ।

“মাফ কর আমাকে ভাই।”

মারুফের সামনে পা ভাজ করে বসে পড়লেন ইয়াদ।

“একটা মজার ঘটনা বলি তোকে মারুফ।শুনবি?”

মারুফ কোন জবাব দিলো না।চুপচাপ বসে রইলো।

“আমার বাবা অনেক সম্পদশালী ছিলেন।টাকা পয়সা ও মনের দুটো দিক দিয়েই।তার শুধু একটা কমতি ছিল।সে সন্তান জন্মদানে অক্ষম ছিলেন।আমার দাদু প্রাচীনকালের মানুষ।সে বাবাকে একটা বুদ্ধি দিলেন।ক্ষেত্রজ করার।মা অনেক ভালো মহিলা ছিলেন।সে কিছুতেই রাজী হলো না।বাবা তো আরো নয় তাদের প্রেমের বিয়ে ছিল।বাবা টেস্টটিউবে সন্তান নিতে চাইলেন।দাদু মানলেন না তো মানলেনই না।তার মন্তব্য এতে লাভ হবেনা।উল্টো কার না কার বাচ্চা দিয়ে দিবে।নিজেদের আরো রক্ত থাকবেনা।উল্টো বুদ্ধি দিলেন তার ছেলের সাথে ক্ষেত্রজে যেতে।বাবা মা কেউ মানলেন না।একদিন বাবা যখন বাসায় নেই তখন দাদু তার ছেলেকে দ্বারা মা কে ধর্ষণ করালেন।মা তখন অজ্ঞান ছিলেন।বাবা বাসায় আসার পর দাদু বললেন মা ক্ষেত্রজে রাজী তাই এটা করেছেন।বাবা কিছু বলেনি।সেদিন থেকে বাবা চুপ হয়ে গেলেন।এবং মায়ের থেকে আলাদা থাকা শুরু করলেন।এদিকে নিয়মিত মা কে ব্যবহার করছিলেন দাদু ও তার ছেলে।মা কিছু বলতে পারতেন না।প্রথমত বাবা ছিলেন না তার সাথে দ্বিতীয় তাকে মেডিসিন দিতে দিতে দূর্বল করা হতো। একসময় আমি হলাম।বাবা সব ভুলে আমাকে নিয়ে মেতে থাকলেন।ধীরে ধীরে আমি বড় হতে থাকলাম।এবং আমার মায়ের অবনতি হওয়া শুরু করলো।দাদু আর তার ছেলে মা কে একধরণের ঔষধ খাওয়াতেন।মা কি করতো না করতো হুঁশ থাকতো না।বাবা সেদিনের পর থেকে মায়ের সাথে যোগাযোগ করতো না।একটু আগে যে তোকে থ্রিল বললাম মায়ের ওই ঘটনা নিয়ে তখন মা ছিল অজ্ঞান এবং পুরোপুরি পাগল।ওখানের একজন ছিল দাদুর ছেলে।শুধু আমি নই বাবা ও সেই ঘটনা দেখে।মা আত্নহত্যা করেনি তাকে সেদিন রাতেই বাবা খুন করে যা আমি আড়ালে লুকিয়ে দেখি।কেন যেন বাবা মা কে বিশ্বাস করতে পারেনি। আর দশ বছর বয়সে আমি প্রথম খুন করি দাদুর ছেলেকে।দাদুকে মারিনি শুধু এতো বছর ধরে তাকে পঙ্গু করে রেখেছি। কারণ তার জন্য আমি অন্য শাস্তির ব্যবস্থা করেছি।মাত্র দশ বছর বয়সে বুঝেছিলাম।একটা মেয়ে একটা মেয়ের চরম শত্রু।আর এখন তো দেখছি ছেলেও বাদ যাইনি।”

কথাটা বলে এক কোঁপ বসালো মারুফের হাতে ইয়াদ।মারুফ জোরে একটা চিৎকার দিয়ে শুয়ে পড়লেন নিচে।

“আমাকে মাফ কর ভাই।মাফ কর।”

“ভাই?তোকে সত্যিই ভাইয়ের মতো দেখতাম আর তুই কীনা তরুলতার সাথে মিলে পাওয়ার অব এটর্নি অন্য কারো নামে করে নিলি?আমি বার বার ভাবছিলাম কে ছিল সাথে অবশেষে কালকে বুঝেছি কে ছিল।এখন তো আর তোকে বাঁচানো যায়না।”

“এরকম করিস না আমার মা তোকে ছেলের মতো দেখে।”

“আর আমার বাবা দেখতো না?যাকে তুই খুন করার জন্য উঠে পড়ে লাগছিস।আর নয় বাঁচানো তোকে।”

মারুফ হঠাৎ তেজী হয়ে উঠলো।

“তুই যদি আমাকে মারিস তবে সবকিছু একজন সাইরাহ্ ও পুলিশকে দিয়ে দিবে।তখন কি করবি?”

“কে তোর সহচারী।আরে কিছু বিশ্বাসঘাতক থাকেই সবসময়।ওই তো বলেছে আমাকে যে তুই এগুলো করেছিস।আর সাইরাহ্ কে বিয়ে করবি তাই নাহ?তোকে করাচ্ছি?”

পাশের রড উঠিয়ে মারুফের মস্তিস্ক বরাবর ঢুকিয়ে দিলেন ইয়াদ।ছটপট করতে করতে মারুফ নিজের শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন।তার দিকে একটু থুতু দিয়ে ইয়াদ বললেন–

“শালা শূয়োরকা বাচ্চা।”
,
,

ইনায়ার এখন নিশ্বাস বন্ধ লাগছে।ইয়াদ তাকে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ব্লক করেছেন।আসলে কালকে রাতে ইয়াদ ওভাবে চলে গেলেন তা ইনায়া তখন নিরবে সহ্য করলেও পরে আর সহ্য করেননি।সকাল থেকে ইয়াদের সাথে বেশ কয়েকবার ঝগড়া হয়েছে।প্রথমত ওভাবে চলে যাওয়া নিয়ে এবং দ্বিতীয়ত চাঁদ কে সেটা নিয়ে।রাতে তখন ইনায়া কিছু বলেনি যদি ইয়াদ মারে তাই।ইয়াদ আগেও তাকে বহু কারণে মেরেছে।কফি হাতে নিয়ে দোলনায় গিয়ে বসলেন ইনায়া।অদ্ভুত একটা রঙ এসেছে কফির।গভীর কেশর রঙ।তাতে একটা চুমুক দিয়ে আর মুখে তুললেন না ইনায়া।বেশীই স্ট্রং হয়েছে কফিটা।কিছু সময় চুপচাপ বসে থেকে সে ফোন হাতে নিলেন।একটা ম্যাসেজ টাইপ করছেন।

“মা কেন আমার সাথেই এমন হলো?আমার সাথে তো ভালো কিছুও হতে পারতো।তুমি যে ভুল করেছিল আমি তা করতে চাইনি।এজন্য বার বার ওই লোকটার কাছে ছোট থাকি।আমার কোন কিছুর কমতি নেই অথচ ওই লোকের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমি ব্যক্তিত্বহীন হয়ে গিয়েছি?কেন মা কেন?”

পুরো ম্যাসেজটা লিখেও সেন্ড করলেন না ইনায়া।এরকম কতো ম্যাসেজ সে সেন্ড করতে চেয়েও করেনি।পারেনা আজ যদি তার বাবা-মা ঠিক থাকতো তবে ইনায়ার এমন হতো না।দোলনা থেকে নেমে ইনায়া জানলার সামনে গেলো।কিছুসময় বৃষ্টি দেখে ওখানে কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়লেন।নিস্তব্দ কান্না যার কোন শব্দ নেই এ জগতে।
,
,

একটু আগে ইয়াদ আর সাইরাহ্ এর বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে।সাইরাহ্ এর মা রুমা এখনও কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না।তার একটুও ইচ্ছা ছিল না সাইরাহ্ এর সাথে ইয়াদের বিয়ে দিতে কিন্তু ইয়াদের বাবাকে যখন দেখলেন তখন জানলেন সে তার বড় চাচার বন্ধু।এবং তৎক্ষনাৎ সাইরাহ্ এর বড় চাচা কে ডেকে এনে বিয়ে পড়িয়ে দেয় ইয়াদের বাবা।রুমা প্রথমে বেশ নয় অনেক বেশীই আপত্তি করে কিন্তু লাভ হয়না।সাইরাহ্ এর বড় চাচা শুধু একটা কথাই বলেছেন–

“আমি এতো কিছু করেছি তারেকের বাবা মারা যাওয়ার পর তার প্রতিদান নেই?”

এর উপর আর কোন কথা বলতে পারেনি রুমা।সত্যিই সাইরাহ্ এর বাবা মারা যাওয়ার পর তার অবদান অতুলনীয়।

এদিকে সাইরাহ্ কান্নাকাটি করে শেষ।সে কোনভাবে ইয়াদের সাথে যাবেনা।অনেক বুঝিয়ে তারেক ও তার মা পাঠালেন।রুমার শুধু মনে হলো এক ভ্রমণ শুরু হলো তার ভ্রমণকারিণীর।কারণ তার মেয়ের ভ্রমণের সহযাত্রী সঠিক তো?

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here