#যদিও_অসময়ে_এসেছো_তুমি
#লেখিকা_সুমাইয়া_সেহরিন_সুইটি
পর্ব-৯
সকাল হতেই স্নিগ্ধা কিচেনে রাফিয়া আহমেদ এর সাথে নাস্তা বানাতে লাগলো,,,
—হ্যা রে স্নিগ্ধা, গতো কাল কোথায় ছিলি,,,
স্নিগ্ধা সাফরানের কথামতো রাফিয়া আহমেদ কে বলে ফারজানার জন্মদিন ছিলো আর তাই ওর বাসায় পার্টি রাখছিলো,”সেখানেই গিয়েছিলাম সাফরান ভাইকে বলে গিয়েছি তো,,,,
—আচ্ছা আমি তো তোকে না দেখে চিন্তায় পড়ে গেছিলাম।
—চিন্তার কিছু নেই মামি।তোমরা থাকতে আমার ক্ষতি কখনো হবে না।
—হ্যা সাবধানে চলাফেরা করবি সব সময়,যা যুগ পরেছে। এখন যা সাহিল’কে ঘুম থেকে ডেকে তোল।সাফরান উঠে যদি দেখে এখনো ঘুমাচ্ছে তাহলে ওকে আজ আস্ত রাখবে না।
—আচ্ছা যাচ্ছি।
স্নিগ্ধা সাহিলের রুমে এসে দেখলো সাহিল ঘুমাচ্ছে।স্নিগ্ধা জগে রাখা পানি সাহিলের মুখে ঢেলে দিতেই।সাহিল ধরফর করে উঠলো।তারপর স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে রাগী চোখে বললো ” আপু তুমি,দাড়াও দেখাচ্ছি মজা” সাহিল স্নিগ্ধা কে ধরার আগে দৌড়ে পালালো।উঠানে দুজনে দৌড়াদৌড়ি করছে। সাহিল স্নিগ্ধা কে ধরার জন্যে তেড়ে আসছে তো স্নিগ্ধা অন্য দিকে ছুটে পালাচ্ছে।
—আম্মু দেখো,সকাল সকাল আপু আমার মুখে পানি ঢেলে দিছে।
—তো তোকে কী করবে,বেলা কয়টা বাজে জানিস।পরে পরে ঘুমাচ্ছিস সাফরান এসে শুনলে তোর বিচার করবে।
সাফরানের কথা বলতে না বলতেই সাফরান উঠানে এসে দাঁড়ায়।কিন্তু সেদিকে কারোরই নজর নেই।সাহিল পূর্বের ন্যায় স্নিগ্ধাকে ধরতে যাচ্ছে।আর স্নিগ্ধা সাফরানের পিছনে লুকাচ্ছে। সাহিল এসে স্নিগ্ধা কে ধাক্কা দেয়,সাথে সাথে সাফরান ও স্নিগ্ধা উঠানে পড়ে যায়।সাফরানের বুকের উপর পরে যায় স্নিগ্ধা।দুজনে চোখ বন্ধ করে ফেলে।এদিকে সাহিল ভয়ে পালিয়ে যায়।সাফরান স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে আছে। স্নিগ্ধাও মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে।দুজনের একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকা রাফিয়া আহমেদের কাছে শুভ মনে হয়।আড়াল থেকে দুজনকে লক্ষ্য করতে থাকে,আর মনে মনে বলে “কী সুন্দর মানিয়েছে দুজনকে” কয়েক মূহুর্ত কেটে যাওয়ার পর স্নিগ্ধা লজ্জা পেয়ে চোখ নিচু করে ফেলে,তারপর উঠে দাঁড়ায়।
সাফরানও নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
“আ,,,মি সাহিল কে খুজে আনছি ” কথাটা বলে স্নিগ্ধা দৌড়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে।সাফরান মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।যা রাফিয়া আহমেদের নজরে পরে।রাফিয়া আহমেদ ঠিক করে ফেলে স্নিগ্ধার মা আসলেই ব্যাপারটা শেয়ার করবে।সাফরানের বাবাও চায় দুজনের বিয়ে হয়ে যাক।তাই স্নিগ্ধার মা’কে জানিয়ে শুভ কাজ সেরে ফেলতে চায়।
সকালের নাস্তা করে সাফরান,সাহিল আর স্নিগ্ধা কে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যায়।স্নিগ্ধার কাছে এখন সাফরানের উপস্থিতি ভালো লাগে।যে সাফরানকে আগে সহ্য করতে পারতো না সে সাফরান এখন একটু চোখের আড়াল হলেই স্নিগ্ধার কেমন খালি খালি লাগে,একা একা লাগে।স্নিগ্ধা নিজের সাথে নিজের অনূভুতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চায়,কিন্তু বারবার ভুল যুক্তি প্রমানিত হয়।আগেও প্রেমে পড়েছে স্নিগ্ধা কিন্ত এতো অদ্ভুত ভালো লাগা অনূভব হয়নি আগে।রাহাত স্নিগ্ধা কে পটানোর জন্য কিছু বড় বড় কবিতার লাইন বলে দিয়েছে আর তা শুনেই মনে হয়েছে স্নিগ্ধা রাহাতের কাছে স্পেশাল। কিন্তু বাস্তবতা অন্য কিছু বলেছে। মুখের কথা কখনো অনভূতি হতে পারে না।অনভূতি তো তাই হয় যা মুখে প্রকাশ করা যায় না।
সাফরান স্নিগ্ধার সব ছোট ছোট বিষয় খেয়াল রাখে, প্রতিদিন গোসল করলো কিনা,স্নিগ্ধা আবার শীতকালে গোসলে অলসতা দেখায় যা সাফরান জানে,গোসল করতে বলায় তাদের মধ্যে আরো কয়েক দফা ঝগড়া হয়ে যায়,,,,
বাগানের ফুল গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছিলো স্নিগ্ধা। আর তখনি সাফরান আসে,,,
—শুধু ফুল গাছ কে গোসল করালে হবে,ক’টা বাজে এখন তুই গোসলে যাস’নি কেনো?
—আজ করবো না ভাইয়া,আমি শীতকালে একদিন পর পর গোসল করি।আর এই ফুল গাছ গুলোতেও এক দিন পর পরই পানি দেই যেন আমার মতো সুন্দর হয়।
—আজাইরা কথা বাদ দিয়ে এখন গোসলে যা।
—উহু ভাইয়া।প্রতিদিন গোসল করলে আমার ঠান্ডা লাগে,অসুখ হয়।
—অসুখ হলে আমি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।তুই এখন গোসলে যায়।
স্নিগ্ধা বাধ্য হয় সাফরানের কথা শুনতে,হাজার কথা বলেও গোসল থেকে বাচতে পারবে না। কিন্তু সাফরানকে একটা শিক্ষা দিতে ইচ্ছা করে স্নিগ্ধার হাতে রাখা পাইপ টা কৌশলে সাফরানের দিকে ঘুড়িয়ে দেয়।আর সাথে সাথে সাফরান ভিজে একাকার।
—What are you doing? Please stop. I’m telling you to stop.
সাফরান স্নিগ্ধার হাত থেকে পাইপ টা নিয়ে এবার স্নিগ্ধা কে ভিজিয়ে দেয়।হঠাৎই পা পিছলে পরে যেতে ধরে স্নিগ্ধা সাফরান নিজের বাহু তে ধরে ফেলে স্নিগ্ধাকে।স্নিগ্ধার ভেজা চুল,ভেজা ঠোঁট,সাফরান কে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে।নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সাফরান স্নিগ্ধার ঠোঁটের কাছাকাছি চলে আসে।ভয়ে স্নিগ্ধা চোখ বন্ধ করে ফেলে।অনেক্ক্ষণ কেটে যায় এভাবে।সাফরানের গরম নিশ্বাস অনূভব করছে স্নিগ্ধা।সাফরান স্নিগ্ধার ঠোঁটের অনেক কাছাকাছি এসে থমকে যায়।স্নিগ্ধার দিকে তাকায় স্নিগ্ধা চোখ বন্ধ করে আছে।নিজেকে সামলে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।স্নিগ্ধা ও বেশ লজ্জা পেয়েছে।স্নিগ্ধা ভেবেছে সাফরান স্নিগ্ধা কে কিস করবে।স্নিগ্ধা এক দৌড় দেয় বাড়ির ভেতর আর তখনি পানি’তে পা পিছলে পড়ে যায়।তা দেখে সাফরান হেসে উঠে।স্নিগ্ধা কোমড়ে হাত দিয়ে দাত চিবিয়ে বলে “হাসো হাসো,দিন আমারো আসবে”
সাফরান হোহো করে হেসে উঠে।
সাফরান ও স্নিগ্ধার একে অপরের কাছাকাছি আসা ফাহিমার নজর এড়ায় না। সহ্য করতে কষ্ট হয় ফাহিমার।একদিন তো ফাহিমা স্নিগ্ধার কাছে জিজ্ঞেস করে ফেলে
—তুমি এখানে আছো বেশ কয়েক দিন হচ্ছে,বাড়িতে ফুপি একা আছে না?
—আম্মুই আমাকে বলেছে এখানে থাকতে এক্সাম শেষ হলেই বাড়িতে যেতে বলছে,কারণ বাড়িতে আমি পড়তে চাই না।আর এখানে সাফরান ভাইয়ার চাপে হলেও পড়তে বসবো এজন্যেই।
ফাহিমা স্নিগ্ধার জবাবে শুধু হেসেছিলো কিন্তু মনে মনে রাগে ফেটে পরে।সাফরানকে হারানোর ভয় এসে ঘিরে ধরে ফাহিমাকে।তাই ফাহিমা মনে মনে দুজনকে আলাদা করার পরিকল্পনা করতে থাকে। ফাহিমা এখন কারণে অকারণে সাফরানের কাছাকাছি থাকে,স্নিগ্ধা ও সাফরান কে নজরে রাখে,,,
সূর্য ডুবে যাওয়ার আগ মুহূর্ত সাফরানের কাছে অনেক দামী। এই সময়টায় ছাদে এসে,আকাশের দিকে তাকিয়ে অনেক কথা বলে। শান্তিময় মূহুর্ত এই সময়টা উপভোগ করতে সাফরান প্রতিদিন আসে।সাফরানকে চমকে দিয়ে ফাহিমা এসে সাফরানকে জড়িয়ে ধরে,কাদতে থাকে।সাফরান কিছু বুঝে উঠতে পারে না।ফাহিমা কান্না করছে কেনো।সাফরান ফাহিমা’কে শান্ত করার চেষ্টা করে।
—কী হয়েছে,কাদছিস কেনো।বল ভাই কে খুলে বল।
ফাহিমা কান্না থামিয়ে বলে, “বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে”
—তো এখানে কান্নার কি আছে,বড় হয়েছিস,বিয়ে দিতে হবে না।
—আমি এখন বিয়ে করবো না।
—কেনো তোর কোনো পছন্দ আছে?
সাফরানের কথায় ফাহিমা সাফরানের চোখের দিকে তাকায়,তারপর মনে মনে বলতে থাকে” আমার পছন্দ তো তুমিই,কেনো বুঝোনা,এতোদিন থেকে এতোভাবে বুঝানোর চেষ্টা করছি একটু বুঝো আমাকে,অনেক ভালোবাসি, তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না”
—কী রে,বলছিস না কেনো?পছন্দ আছে তোর?
—আমি এখন বিয়ে করবো না।তুমি প্লীজ বাবাকে বলো,,,।
—আচ্ছা আমি চাচার সাথে কথা বলবো।এখন কান্না থামা।সাফরান ফাহিমার চোখ মুছিয়ে দেয়।
তাদের কথার মাঝে স্নিগ্ধা চলে আসে ছাদে।দুজকে এক সাথে দেখে অবাক হলেও তা প্রকাশ করে না।
—ভাইয়া তোমার জন্য কফি।
সাফরান হাত বাড়িয়ে কফি মগ’টা নেয়।স্নিগ্ধা নিজের জন্য বানানো কফি’টা ফাহিমা কে এগিয়ে দেয়।
——খেয়ে বলো কেমন হয়েছে,,
সাফরান মুখ বাকিয়ে বলে “একেবারে খাওয়ার অযোগ্য হয়েছে,এতো বিস্বাদ!”
সাফরানের কথায় স্নিগ্ধা কফি মগ’টা নিয়ে ফেলে তারপর বলে” বিস্বাদ যেহেতু,খাওয়ার অযোগ্য যেহেতু,তাহলে আপনার খেতে হবে না”
কথাটা বলে স্নিগ্ধা হনহন করে নিচে চলে যায়।সাফরান স্নিগ্ধার নাম ধরে অনেক ডেকেও স্নিগ্ধা ফিরেও তাকায় না।ফাহিমা সাফরানের চোখে স্নিগ্ধার জন্য স্পষ্ট মায়া, ভালোবাসা দেখতে পায়।ভিতরে ভিতরে যা অনেক কষ্ট দেয় ফাহিমাকে।
—পাগলী একটা
—হ্যা,ছোট তো এখনো অনেক।শুনেছি রাহাত নামে একটা ছেলের সাথে রিলেশনে আছে স্নিগ্ধা।
ফাহিমার কথায় সাফরান কপাল কুচকে তাকায়।এই ব্যাপারটা তো ফাহিমার জানার কথা না।হয়তো কোনো ভাবে জানছে।
“আরেহ না,সম্পর্ক না ঠিক,বন্ধুত্ব ছিলো তবে ছেলেটা খুব একটা ভালো না এটা জানার পরেই স্নিগ্ধা সড়ে আসে”
—আচ্ছা।
—আয় নিচে যাই।
—চলো।
সাফরান আর ফাহিমা ছাদ থেকে নেমে যায়।সাফরান স্নিগ্ধা’কে খুজতে থাকে,।যেয়ে দেখে সাহিলের রুমে দুজনে ভিডিও গেমস খেলছে।সাফরান দুজনকে পড়তে বসতে বলে বাইক নিয়ে দোকানে চলে যায়।
(চলবে)
গল্পটা কেমন লাগছে সবার কমেন্টস করে জানাবেন। সবার গঠনমূলক মন্তব্য আশা করবো। দয়াকরে কেউ গল্প অনুমতি ছাড়া কপি করবেন না।ধন্যবাদ সবাইকে?