আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা♥ সিজন ১ পর্ব৪

0
770

#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#সিজন_১
#পর্ব_৪
#সাহেদা_আক্তার

আম্মা খাবার আর ঔষধ রেখে গেল। আমি নাক টানতে টানতে বাটিটা নিলাম। এক চামুচ মুখে দিতেই ক্রাসের কথা মনে পড়ল। সাথে সাথে লজ্জায় বিছানার সাথে মিইশা গেলাম। তাতেই ঘুম।

আম্মা আব্বার কথা শুনে ঘুম ভাঙল। চোখ খুলতে পারতেসি না। জ্বলতেসে। খুব ঠান্ডা লাগতেসে। শরীর কাঁপুনি দিতেসে। নড়তেই মনে হল গায়ে কম্বল দেওয়া। মাথা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাইতেসে। কানে আসল, আম্মা বলতেসে, একশ চার ডিগ্রি উঠে গেছে। তুমি ডাক্তার ডাকো।

– দাঁড়াও, আমি ফোন করতেসি। এত রাতে যাবো কি করে।

আব্বা ফোনে ডায়াল করল। আম্মা আবার বললেন, মেয়েটা আমার একটা কথাও শোনে না। এখন জ্বর একটা বাঁধাই আনসে। নিজের জামাটাও সামলাই আনতে পারে নাই। জর্জেটের জামা। কেমনে আনসে কে জানে। একেবারে উপর থেকে নিচে ছিঁড়ে ফেলছে। শুনেই আমি পিটপিট করে তাকালাম। তারপরই ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলাম। আমার কান্না শুনে আব্বা আম্মা কাছে আইসা বলল, কি হইসে? কোথায় কষ্ট হচ্ছে? আমি কাঁনতে কাঁনতে কইলাম, আমার এত সাধের জামা!!!!! আম্মা ধমক দিয়া চিল্লাই বলল, একদম কানবি না। জামা একটার দফারফা করে এখন জ্বর বাঁধাই শুই আছে। ঔষধ দিয়ে গেসি সেটাও খায় নাই। জ্বর আসবে না তো কি আসবে। আমি বকা খেয়ে ফোঁপাতে লাগলাম।

সারা রাত জ্বরে ভুগলাম, সকালে একটু কমল। ঘুম ভেঙে দেখি আন্টি পাশে বসে আম্মার সাথে কথা বলতেসে। এই একজ্বরে নেতিয়ে পড়ছি। তবে মনটা খুশি হই গেল। আমার শ্বাশুড়ি আম্মা তো দেখতে আইলো। কি জামাইটা… আমি তাকাতেই আন্টি হেসে বললেন, কেমন আছো? আমি হাসলাম। আন্টি বললেন, কালকে আমার ছেলেটাও বৃষ্টিতে ভিজে সর্দি বাঁধিয়েছে। ও বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আমি বললাম তোর জামা কাপড় গুলো তো ছাদে। বৃষ্টি আসলে ভিজে যাবে। দশ মিনিট পর দেখি কাকভেজা হয়ে আসছে। সাথে কাপড়গুলাও ভিজাই আনসে।

আমি তো খুশি। মনে মনে কইলাম, দেখতে হইবো না কার জামাই। মনের কতো মিল!!! কি কানেকশান!!!! আমার সাথে তারও সর্দি হইসে।

– আর বলিয়েন না ভাবি, কালকে একটা জামা ধুয়ে দিসিলাম, ছাদে। মেয়েটা বের হওয়ার সময় বললাম, আসার সময় নিয়ে আসিস। মনে হয় কানেই নে নাই। পরে দেখি পুরা ঘর পানিতে চপ চপ করতেসে। বুঝলাম, মেয়ের কান্ড। বৃষ্টিতে ভিজে আসছে। বারান্দায় জামাটা ঝুলতেসে। ওটাও ভিজা। মেলতে গিয়ে দেখি জামার কোমর থেকে নিচ পর্যন্ত ছিঁড়া।

আম্মা জামা আইনা সামনে মেইলা ধরল। আমার তো চোখে পানি চইলা আসলো। আমার সবচেয়ে ফ্যাবোরেট জামা ছিল। আমি উঠে হেলান দিলাম। আন্টি সাহায্য করলেন। আমি হাত বাড়িয়ে জামা নিলাম। এমন সময় আমার ক্রাশের গলা শুনলাম। আন্টি বললেন, আমি আসি ভাবি, ছেলে কলেজ যাবে। আমার দিকে ফিরে বললেন, ভালো হয়ে যাস তাড়াতাড়ি। আমি মাথা কাত করলাম। আন্টি যেতেই আমি দৌঁড়ে গিয়া দরজার কাচে চোখ লাগালাম। দেখলাম ক্রাশ বের হইতেসে। আম্মা ডাক দিয়া কইল, ওখানে কি করিস?

– আসি।

ক্রাশ চলে গেলে আমি ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসলাম। আম্মা আমাকে আদার রঙ চা এনে দিলো। আমি বললাম, চা খাইতে ইচ্ছা করতেসে। আম্মা চোখ রাঙাই কইল, চা না খাইলে নিম পাতার রস খাওয়াবো। সব একেবারে বাপ বাপ বলে পালাবে। শুনেই আমার মুখ বেঁকে গেল। একবার খাইসিলাম। সেই ট্যাশ ছিল। করলার আব্বা। আমি আর কিছু কইলাম না। চুপচাপ চা বিস্কুট খেয়ে রুমে চলে গেলাম। বিকালে বারান্দায় বসলাম। সেখান থেকে মাঠ দেখা যায় যেখানে আমার ক্রাশ খেলতে যায়। দূর থেকে দেখতে লাগলাম খেলা। আজকাল গাজর আমার বন্ধু হয়ে গেছে। এখনও হাতে দুইটা গাজর। একটার মাথায় কামড় দিয়ে চিবাতে চিবাতে ভাবতে লাগলাম, আরেকবার গাজরের হালুয়া বানাইয়া নিয়া যামু কিনা? নাহ্, এত বার গেলে সন্দেহজনক মনে হইবো। তাইলে কি করা যায়!!! এমন সময় আম্মা এসে বলল, তুই যাবি? আমি মাঠ থেকে চোখ না সরাইয়া গাজরে আরেক কামড় দিয়ে বললাম, কোথায়?

– তোর জ্বর ছিল দেখে বলি নাই। আজকে ভাবির ছেলের জন্মদিন। আমাদের যেতে বলেছে। তুই যাবি?

শুনেই আমি চিল্লাই কবললাম, তুমি এতক্ষণে বলতেসো! আরো আগে বলবা না? আমি আলমারির দিকে ছুটলাম। কোনটা পরমু, কোনটা পরমু করতে করতে পুরা বিছানা গোয়াল ঘর বানাই ফেললাম। আম্মা তো এসে কয়েকবার বকে গেলেন। আমি কান দিলাম না। আমি গাজর খাচ্ছি আর জামা চুজ করতেসি। শেষ পর্যন্ত আমার গাজর শেষ হইলো আর একটা ফ্রক চুজ করলাম। ফ্রকটার উপরের অংশে কালো মখমলের উপরে লাল কাজ করা। আর নিচের অংশ লাল জর্জেট কাপড়ের। জামাটা পরে চুল আঁচড়ে কোমর পর্যন্ত ছড়িয়ে দিলাম। ফ্রেন্ডরা বলে আমার স্ট্রেট চুলগুলা খোলা রাখলে নাকি সেই লাগে। তাই করলাম। একপাশে একটা লাল ফুলের ক্লিপ আটকে দিলাম। ফ্রকের গলায় কলার আর হাত পর্যন্ত ঢাকা। তাই কিছু পরা লাগলো না। কানে লাল ছোট ঝুমকার কানের দুল পরলাম। চোখে কাজল দিলাম। ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক দিলাম। তারপর আয়নায় নিজেকে দেইখা নিজেই ক্রাশ খাইলাম। আম্মা দরজার কাছে দাঁড়াই বলল, তোর সাজোন গুজোন হলে বের হবি?

– হ্যাঁ, আম্মু।

আমি রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। আম্মা আব্বা আমার দিকে তাকাই আছে। আমি কইলাম, কি হইসে? এভাবে তাকাই আছো কেন? আম্মা বলল, এত সাজচিস কেন? বার্থে পার্টিতে যাইতেছিস নাকি বিয়েতে?

– আহা, মেয়েরা একটু সাজার শখ হইসে। থাক না। চলো।

আমরা নক করতেই কেউ একজন দরজা খুলল। আমি ঢুকে বেকুবের মতো দাঁড়াই আছি। এত মানুষ!!! পুরো রুম গিজগিজ করতেসে। আমি এদিকওদিক তাকাই আমার বার্থডে ক্রাশরে খুঁজতেসি। দেখলাম এক কোনায় বন্ধুদের সাথে দাঁড়াই গল্প করতেসে। আমার ক্রাশটারে তো হেব্বি লাগতেসে। সাদা শার্ট, হালকা নীল জিন্স, শ্যাম্পু করা চুলগুলো চোখের সামনে পড়ে আছে। ইচ্ছা করতেসে গিয়া সরাই দিয়ে আসি। আমি আগাই গেলাম। আমি যাওয়ার আগেই একটা মেয়ে দৌঁড়ে এসে ওকে জড়াই ধরলো। আমি থমকে গেলাম। মেয়েটা আসতেই আমার ক্রাশ একটা কিটকাট ধরিয়ে দিল। আমার যাইতে অস্বস্তি লাগতেসে। আমি ফেরত যেতে লাগলে আমার ক্রাশ ডেকে বলল, কি হলো, গাজরের হালুয়া। কই যাচ্ছো? আমি পিছন ফিরতেই দেখলাম সে দাঁত কেলাই হাসতেসে। একটা মানুষ এত কিউট হয় কেমনে? ও কাছে এসে বলল, আমার গিফট কই? আমি আমতা আমতা করে বললাম, আনিনি। আসলে জানতাম না। মনে মনে বললাম, আমি আসছি যে হয় নাই? আরও গিফট লাগবো? সে বলল, ওমা, না জানলে আসলে কি করে? ওর ফ্রেন্ডরা বলল, এ কে রে? ও হেসে বলল, গাজরের হালুয়া। মেয়েটা এসে জিজ্ঞেস করল, গাজরের হালুয়া মানে? তখন ক্রাশ রাঙিয়ে চাঙিয়ে আমার হালুয়ার কাহিনী বলতে লাগল। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। চোখ তুলতে ভয় লাগল যদি চোখের পানিটা কেউ দেখে ফেলে!!! এতটা অপমানিত আমি জীবনেও হই নাই। ওদের কথার মাঝেই ‘আমি যাচ্ছি’ বলে চলে আসলাম। একি কি করল আমার ক্রাশ!!! ক্রাশ!!!? আমি নিজেকে নিজে বিদ্রুপ করলাম। চোখ মুছে আন্টির কাছে গেলাম। আন্টি কয়েকজনের সাথে কথা বলছিল। আমি গিয়ে সালাম দিতেই আন্টি বললেন, আরে আমার ছোঁয়া মা যে। কি মিষ্টি লাগছে!!!! আমি বললাম, আন্টি আমার শরীর খারাপ লাগছে। আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।

– কি হয়েছে?

– তেমন কিছু না। একটু মাথা ব্যাথা করছে।

– আচ্ছা যাও।

আমি চলে আসলাম। বাসায় ঢুকেই চোখের পানির বাঁধ ভাঙলো। আমি দৌঁড়ে গিয়া বাংলা সিনেমার নাইকাদের মতো নিজের রুমের বিছানায় ঝাঁপিয়ে পরলাম। টানা দুই ঘন্টা পার হইয়া গেল। আমি কাইন্দা কাইটা এক সার হইসি। কাজল লেপ্টে ফুলা চোখগুলো কালো হয়ে পেত্মী হয়ে গেসি। ওয়াশরুমে ঢুকে মুখে পানি দিলাম। সাবান দিয়ে ভালো কইরা ঘইষা মাইজা সব ক্লিন করে ফেললাম। আয়নায় তাকাই দেখি মুখটা ঝকঝক করতেসে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে একটা সুতি জামা পরে সবে শুবো, এমন সময় কলিং বেল বাজলো। আমি ভাবলাম আব্বা আম্মা চলে আসছে। আমি না দেখেই দরজা খুলে রুমের দিকে এগিয়ে বললাম, চলে আসছো? পার্টি শেষ? আমি রুমে যাইতেসি। রাতে খাবো না। আমাকে আর ডাকিও না। আমি রুমে ঢুকে লাইট অফ করে বিছানায় শুয়ে পরলাম। কান্না করায় নাক ভারি হয়ে আছে। নিঃশ্বাস নিতে পারতেসি না। কোনোমতে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে লাগলাম। হালকা আলো আসছে বাইরে থেকে। আমি চোখ বন্ধ করলাম। কতক্ষণ পর মনে হইল কেউ আমার দিকে তাকাই আছে। তারপর কপালে কারো ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই জেগে উঠলাম। আমি ডাকলাম, আব্বু… আম্মু… কোন সাড়া নাই। বিছানা থেকে নেমে পুরো ঘর ঘুরে দেখলাম ঘর ফাঁকা। দরজা খোলা। আমি মনে মনে বললাম, কি হইল ব্যাপারটা! আমি দরজা বন্ধ করে নিজের রুমে এসে লাইট জ্বালিয়ে দেখলাম বিছানার পাশের ছোট টেবিলটায় এক টুকরো কেক। তার উপরে লাভ ইমোজি। কেউ যেন আলাদা করে পিসটা কেটে দিয়েছে। আমি একটু ভাবতে বসলাম, কে এসেছিল!!! কে? আব্বু নাকি আম্মু না অন্য কেউ!!! কোনো ভুত আসছিল নাকি!!! খেয়াল হতেই দেখলাম আমি কেকটা খেয়ে ফেলসি। হায় হায়!!!! ভাবছিলাম একটা ছবি তুইলা রাখমু। ক্রাশের জন্মদিনের কেক। প্লেটের দিকে তাকাই আবার ভাবলাম, আমি খাইসি তো নাকি কোনো পেত্নী এসে খেয়ে চলে গেছে!!!
.
.
.
.
আবার শুক্রবার চলে আসলো। এই কয়দিন ঠিক মতো ঘুম হইতেসে না। ক্রাশের জন্মদিনের পর থেকে যতসব ভয়ানক ভয়ানক স্বপ্ন দেখতেসি। একবার তো দেখলাম, বাসর ঘরে আমার কাছে এসে ঘোমটা তুলে ক্রাশ বলতেসে, কি রে গাজরের হালুয়া বউ, আমার গিফট কই? দেখেই লাফাই উঠছি ঘুম থেকে। আম্মা আজকে আবার কাপড় ধুইসে। আমারে আবার ছাদে পাঠাইলো। আজকে না গান বাইর হইতেসে না বিরক্তি আসতেসে। মাথায় শুধু স্বপ্নটাই ঘুরতেসে। মনে মনে কইলাম, এত কিছু থাকতে গাজরের হালুয়া বউ? বাসর রাতে হালুয়া আমি যদি তোমারে গুইলা না খাওয়াইসি তাহলে আমার নামও ছোঁয়া না। আমি বিড়বিড় করতে করতে ছাদে উঠে টাসকি খাইলাম। ঐদিনের মেয়েটা আমার ক্রাশের গা ঘেঁষে দাঁড়াই আছে আর হেসে হেসে কথা বলতেসে। তাদের হাসি দেইখা আমার সারা শরীরের লোমে দাবানল লাইগা গেল। নরম মনটা বলল, গাজরের হালুয়া বৌ ডাকো তবু আমার কাছে ফিইরা আসো। আমি মনরে ধমক দিয়া কইলাম, এখন পিরিতের সময় না। আগে আচ্ছা মতো ঝাঁটার বাড়ি তারপর পিরিত।

চলবে…

বি.দ্র: অনেকেই গল্প কপি করে আসলে লেখকের নাম দেয় না। এই গল্পের ক্ষেত্রেও আমি এটা দেখেছি। ? কেউ কেউ নাম দিয়েছে। আর বাকিরা লেখকের নাম না দিয়েই ফেসবুকে পোস্ট করেছে। তাই আমার বিশেষ অনুরোধ, যদি কপি করতেই হয় তবে লেখকের নামসহ করবেন। ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here