আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা♥ সিজন ১ পর্ব৫

0
661

#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#সিজন_১
#পর্ব_৫
#সাহেদা_আক্তার

নরম মনটা বলল, গাজরের হালুয়া বৌ ডাকো তবু আমার কাছে ফিইরা আসো। আমি মনরে ধমক দিয়া কইলাম, এখন পিরিতের সময় না। আগে আচ্ছা মতো ঝাঁটার বাড়ি তারপর পিরিত।

আমি গিয়াই কাপড়ের বালতিটা জোরে ছাদে রাখলাম। ওরা একবার আমার দিকে তাকালো। আমি না দেখার ভান করে কাউয়ার মতো গান গাওয়ার শুরু করলাম, কেউ কথা রাখেনি, ভালোবাসেনি……। আমি গান গাইতেসি আর কাপড় মেলতেসি। আমার গান শুনে হোক বা অনিচ্ছায় হোক, মেয়েটা কাছে এসে বলল, হাই, গাজরের হালুয়া। হোয়াটস আপ? আমি তাকে আগাগোড়া দেখলাম। মনে মনে কইলাম, নিজে তো শুঁটকি মাছের পোনা, আবার আমারে আসছে গাজরের হালুয়া ডাকতে। আমি বললাম, ফগরফ টগরফ গাট। মেয়ে আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে বলল, হোয়াট? আমি বললাম, জীবনে তিন গোয়েন্দা পড়নাই? মেয়েটা ক্রাশের দিকে তাকাল। আমি বললাম, বাঙালি?

– ইয়েস।

– তবে বাংলায় কথা বলো। অসব ঢঙের ইংলিশ এই দেশের খাঁটি মানুষ বোঝে না।

আমি কাপড় দিয়া নিচে নাইমা আসলাম। বাসায় ঢুকতে ঢুকতে কইলাম, ইংলিশ মারতেসে। তোর ভাগ্য ভালো যে ক্রাশ ওখানে ছিল, নাইলে বুঝতি এই ছোঁয়া কি জিনিস। আমার ক্রাশের লগে ঢলাঢলি বাইর করতাম। আমি বালতি রেখে মুখ গোমড়া করে বারান্দায় বসে রইলাম।

দুপুরে খাইতে গিয়া দেখি টেবিলে একটা বাটিতে টেংরা মাছের ঝোল। আমার আরেকটা বালুবাসা। আমি ভাত ছাড়াই খাইতে শুরু করলাম। আম্মা এসে আমার মাথায় চাটি মেরে বলল, আর কেউ খাবে না নাকি একাই সাবাড় করবি? আম্মাকে এডের স্টাইলে বললাম, এই স্বাদের ভাগ হবে না……। আম্মার আমার থেইকা বাটি কাইড়া নিয়া কইল, তোর স্বাদের খেঁতা পুড়ি। যা প্লেট নিয়ে ভাত বাড়। আমি মুখ কালো কারে ভাত বাড়তে বাড়তে বললাম, কখন রান্না করসো, দেখি নাই যে।

– দেখলে তো বিলাইর মতো আসি পাতিল খালি করে ফেলতি। আর দেখবি কেমনে আমি রানলে তো দেখতি।

– তাইলে?

– ভাবি দিয়ে গেল। আজকে নাকি কোন মেহমান এসেছে সে জন্য রান্না করেছে।

– ঐ শুঁটকি মাছের পোনার জন্য…

– কে?

– কেউ না। আমি মাছ খামু না। আমারে গোশত দাও।

– হঠাৎ তোর আবার কি হইল?

আমি গোশত, তরকারি আর ভাত নিয়া রুমে চলে আসলাম। ওরে টেংরা রে… তুইও ঐ শুঁটকির হইয়া গেলি!!! আমার এখন কি হপ্পে। মনের দুঃখ আর শ্যাষ হইল না। ক্রাশ তো আমার হইল না, টেংরাও আমার থেইকা চইলা যাইতেসে। ঐ শুঁটকি রে আমি ভর্তা বানাই খামু। আমার ক্রাশ… আমার টেংরা… আমি হাড্ডি চাবাইতেসি আর কানতেসি। এমন সময় আম্মা উঁকি দিয়া বলল, কিরে, কি হইসে তোর, এমন কুই কুই করতেছিস কেন? আমি চুপ করে বললাম, কিছু না আম্মা, হাড্ডির শব্দ। এইযে দেখো। আমি চাকুষ তাকে হাড্ডির শব্দ দেখাইলাম। যদিও হাড্ডি কুই কুই শব্দে ভাঙে না। তো কি হইসে মড় মড় করে ভাঙলেও তো টপিক ঘুইরা যাইবো।

আমি আর আমার বন্ধু গাজর বিছানায় শুয়ে আছি। টপিক শুঁটকি। কে এই শুঁটকি, জানা দরকার। আমার ক্রাশে ভাগ বসাইতেসে। কতক্ষণ ভাবলাম। বাইরে তাকাই দেখলাম এখনও সন্ধ্যা হয় নাই। তার মানে ক্রাশ এখনও বাইরে খেলতেসে। আম্মা নিজের রুমে শুইসে। আমি গুটি গুটি পায়ে দরজা খুলে পাশের বাসায় নক দিলাম। আমি এদিক ওদিক উঁকিঝুঁকি মারতেসি এমন সময় দরজা খুলল। আমি কইলাম, আন…টি…। আমি চুপ করে গেলাম। আমার ক্রাশ আমার দিকে তাকাই আছে। আমি তো ভাবছি সে খেলতে চলে গেসে। আমার তার উপর প্রসুর অভিমান হইসে। মন চাইতেসে ওর দুই গালে চাইরটা চড় দিয়া আমি কাঁদি। আমি মুখ খোলার আগেই সে কইল, কেমন আছেন, গাজরের হালুয়া? আমি কইলাম, ভালো, চেরি ফল। সে মুখ সুচালো করে বলল, চেরি ফলটা আবার কে? আমি একটু উদাসভাব করে বললাম, আমার সামনে যে খাম্বা দাড়াই আছে সে। ক্রাশ কিছু বলার আগেই ভেতর থেকে মেয়েটা এসে বলল, কে এসেছে? আমি তাকে দেখে রাগে অন্ধ হই গেলাম। কইলাম, চেরির বউ গাজর আসছে৷ সরো। আমি দুইজনকে ঠেলে ভেতরে চলে গেলাম। ওরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা বলল, মেয়েটা কি সাইকো? আমি ওদের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাইলাম। খালি মন্ত্রটা জানতাম, পুইড়া ছাই হই যাইতো। আমি আন্টির রুমে গিয়া বললাম, আসবো?

– আরে ছোঁয়া যে, এসো।

– আন্টি আপনার রান্না সেই লেভেলের ভালো। আমি তো ফ্যান হয়ে গেলাম।

আন্টি হেসে বলল, এই জন্যই আমার কাছে আসা? আমি অভিমানী স্বরে বললাম, এমনিতে আসতে পারি না?

– তা পারো।

– তাহলে?

আন্টি বিছানায় বইসা ছিল। আমি গিয়া ওনার কোলে শুয়ে পড়লাম। বললাম, আন্টি, আম্মু বলছিল মেহমান এসেছে দেখে নাকি আপনি টেংরা মাছের ঝোল রান্না করেছেন। মেহমান কি ঐ মেয়েটা? আন্টি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, হুম। আমি জিগাইলাম, কে ও?

– আমার ছেলের বান্ধবী।

এমন সময় ক্রাশ বসার রুম থেকে বলল, আম্মু আমি চাঁদনীকে এগিয়ে দিয়ে আসছি।

– আচ্ছা যা।

আমি গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালাম। একটু পরে ওদের দেখা গেল। ওরা হেসে কথা বলতে বলতে হাঁটছে। আমি মনে মনে ভাবলাম, ছোঁয়া রে… তুই সত্যিই বাপ্পারাজ হয়ে গেলি। আমি বললাম, আন্টি আমি আসি। আন্টি বলল, একটু কিছু খেয়ে যা। আমি বললাম, না, আন্টি। আরেক সময়। আমি আসি। আন্টির রুম থেকে বের হয়ে হঠাৎ ক্রাশের রুমের দিকে নজর পড়ল। ভাবলাম, একটু ক্রাশের জগতে ঘুইরা আসি। যেই ভাবা সেই কাজ। ঢুকে পড়লাম চোরের মতো। চারপাশ পরিপাটি। আহা কি সুন্দর আমার চেরি ফলের রুমখানা!!! ঠিক চেরি ফলের মতো। দেয়ালে দেখলাম হ্যাঙ্গারে ক্রাশের কলেজ ড্রেস ঝুলছে। আমি গিয়ে ওটার কাছে দাঁড়াইলাম। তারপর জাপটে ধরে বললাম, যদি পারতাম তোমারে এভাবে নিজের কাছে বাইন্ধা রাখতাম। কিন্তু কপালে কি আছে? আমার মাথায় একটা জিনিস আইল। আমি বহুত খুঁইজা একটা ছোট কেঁচি নিলাম। তারপর ঘ্যাচ ঘ্যাচ করে শার্টের শেষের বোতামটা কাইটা নিলাম। কি সুন্দর সোনালি বোতাম!!! রাগে ইচ্ছা করতেছিলো শার্টটাই কাইটা দি। কিন্তু দিলাম না। কেঁচিটা আগের জায়গায় রাইখা আমি তার টেবিল দেখতে লাগলাম। হঠাৎ একটা নীল ডায়রীর উপর নজর গেল। ভেতরে কলম রাখা। আমি ডায়রীটার ডালা খুইলা প্রথম পৃষ্ঠা উল্টাইলাম। ওখানের লেখা দেইখা আমার পুরা জগত থমকে গেল। একি লেখা!!!!!!

তুমি জানো না রে প্রিয়, তুমি মোর জীবনের সাধনা।
তোমায় প্রথম যেদিন দেখেছি, মনে আপন মেনেছি।

ফ্রার্স্ট লাভ♥

আমার ক্রাশেরও ফার্স্ট লাভ আছে! আমি কাঁপা হাতে পরের পেইজ উল্টাইলাম। সেখানে হেড লাইন, প্রথম দেখা। আমি মাত্র পড়মু এমন সময় ডায়রীটা উড়াইয়া নিয়া গেল। তাকিয়ে দেখি ক্রাশ দাঁড়াই আছে। আমি ধরা খাওয়া চোরের মতো আমতা আমতা করতেসি আর ও বলল, তুমি কোন সাহসে আমার ডায়রী ধরেছো? আমি পেছনে হাত রেখে বললাম, ইয়ে মানে……

– তোমার হাতে কি?

ও বলার সাথে সাথে হাতের মুঠা শক্ত কইরা কইলাম, কিছু না। তরপরই ভৌঁ দৌঁড় দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। সোজা নিজের রুমে। দরজা মাইরা চোখের কল ছেড়ে দিলাম। হায়রে!!! ক্রাশও কারো উপর ক্রাশ!!! ছোঁয়া তুই তো ফক্কা।
.
.
.
.
সন্ধ্যায় যখন রুম থেকে বাইর হইলাম তখন আব্বা আম্মা আমাকে দেইখা আঁতকে উঠলেন। আমারে চেনা যাইতেসে না। আমি তাদের দিকে তাকাই কইলাম, এভাবে কি দেখতেসো? তেঁতুল গাছের শাঁকচুন্নি? আম্মা বলল, কি হইসে তোর? কাঁদছিস কেন? আমি নাক টেনে বললাম, দুঃখে। আমার প্রিয় ফুল শুকিয়ে ঝরে গেছে। মৌচাক বানানোর আর মধু নাই। মৌচাক মধু শুদ্ধা কেউ চুরি কইরা নিয়ে গেছে। আব্বা আম্মা অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে তাকালেন। তাদের মাথায় কিছু ঢুকল না। আমার হেঁচকি উঠে গেল। আমি ঢক ঢক করে পানি খেয়ে গাজরের পুরো পলিথিনটা নিয়ে রুমের দরজা লাগাই দিলাম। ঢুকার আগে কইলাম, আমি ধ্যান করমু, রাতে ভাত খামু না। আমারে ডিস্টার্ব করবা না। তারপর দরজা বন্ধ। আম্মা আব্বারে কইল, মেয়েটার কি হইসে বুঝতেসি না। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে মেয়ে প্রেম করতেসে।

– আমারও তাই মনে হয়। কিন্তু কে সেই ছেলে!!!!

আমি দরজা মেরে একটা গাজর ধুয়ে আবার ফ্যানের দিকে তাকাই আছি। ফ্যান ভন ভন করে ঘুরতেসে, তার সাথে আমার চিন্তার চাকাও। কি করা যায়? গাজরটা শেষ করে আয়নার সামনে দাঁড়াইলাম। নিজেকে বলল, না ছোঁয়া না, তুই এভাবে হারতে পারিস না। তোর চেরি কেউ চুরি করে নিয়ে যাবে আর তুই হা করে দেখবি এ হতে পারে না। কিন্তু কি করা যায়?

বৌয়ের মতো সেজে গুজে একটা বন্দুক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। পাশের বাসায় নক করতেই ক্রাশ দরজা খুলল। আমি বন্দুক তার দিকে ধরে বললাম, চল। ক্রাশ ভয়ে আমার সাথে কাজি অফিস চইলা আসলো। রেজিষ্ট্রি কাগজে জোর কইরা তারে সাইন করাইয়া নিজেও সাইন করলাম। তারপর সেই বিখ্যাত হাসি হু হা হা হা হা……

ধুর! নিজের মাথায় নিজে চাটি মাইরা কইলাম, কি ভাবনা!!! আমি বন্দুক পামু কই? নাহ্, এই বুদ্ধি বাদ। তাহলে কি করা যায়?

আমি ছাদের দরজা মাইরা রেলিং এর উপর দাঁড়াই আছি৷ নিচে ক্রাশ, আন্টি, আব্বা, আম্মা সবাই দাঁড়াই আছে। আমি চিল্লাই কইতেসি, তুমি যদি আমারে বিয়া না করো, তো আমি নিজেকে শ্যাষ কইরা দিমু। ক্রাশ নিচ থেকে কইতেসে, না না, ছোঁয়া এমন করিও না। আমি তোমারেই ভালোবাসি। তুমি নাইমা আসো। তার কথায় নাইমা আসতেই সে থাপ্পড় মাইরা কইল, সাধে কি তোমারে গাজরের হালুয়া বলি?

আমি মাথা নেড়ে কইলাম, নাহ্, বুদ্ধিতে জঙ ধরসে। কিচ্ছু মাথায় আসতেসে না। আমি টেবিল থেকে খুঁজে ক্রাশের বোতামটা বাইর করলাম। সেটা দেখেই আমি বরফের মতো গলে গেলাম। বোতাম টাকে কয়টা কিস কইরা নাচতে লাগলাম। হঠাৎ বাঁধ সাধল বিছানার পায়া। ফলে উস্টা খাই পড়লাম।
চলবে…

বি.দ্র: অনেকেই গল্প কপি করে আসলে লেখকের নাম দেয় না। এই গল্পের ক্ষেত্রেও আমি এটা দেখেছি। ? কেউ কেউ নাম দিয়েছে। আর বাকিরা লেখকের নাম না দিয়েই ফেসবুকে পোস্ট করেছে। তাই আমার বিশেষ অনুরোধ, যদি কপি করতেই হয় তবে লেখকের নামসহ করবেন। ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here