তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা ২১.

0
1845

#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
২১.
#WriterঃMousumi_Akter

লক ডাউনে বিয়ে করেছি এটা নিয়ে বন্ধুজাতির অত্যাচারের শেষ নেই।”দিন রাত খেয়ে না খেয়ে কেউ না কেউ মেসেজ করেই যাচ্ছে।কিরে ঝোঁপ বুঝে কোপ মারছিস?কিরে চব্বিস ঘন্টা বর নিয়া চিপাই থাকিস।লক ডাউনে ক্যান বিয়ে করেছিস এটা কি বুঝি না।হ্যান্ডসাম বিহান ভাই কে পেয়ে কেমন ফিল হচ্ছে।দিয়া ফুল লক ডাউন ই হানিমুন হবে।আহা! দিয়া ইটিছি কমেন্টস”

এইভাবে বন্ধুজাতির অত্যাচার মূলক মেসেজ ফোন এসেই যাচ্ছে।মাত্র গোসল শুরু করেছিলাম ইস বর কি যত্ন নিয়ে চুলে শ্যাম্পু করিয়ে দিচ্ছিলেন এইদিকে সাড়ে বায়ান্ন বার কল এসেছে ফোনে। বিহান ভাই রাগ করে আমাকে বাথরুম থেকে বের করেই দিছেন। বাথ রুমের ঘটনা খুলেই বলি,,।সময় টা ছিলো মারাত্মক রোমান্টিক। রোমান্টিক টা সাবান শ্যাম্পুর ফেনার মতো ফেনা ফেনা তেনা তেনা হয়ে গিয়েছে।

“”বিহান ভাই আমাকে ওয়াশ রুমে নিয়ে শাওয়ার টা ছেড়ে দিলেন।চুলে সুন্দর করে শ্যাম্পু করে দিলেন।চুলের মাঝে সুন্দর ভাবে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে শ্যাম্পুর ফেনা বানাতে বানাতে বলছিলেন দিয়া একজনের চুলের প্রেমে পড়েছিলাম প্রথমবার।আমি সাথে সাথে রেগে গেলাম আর বললাম আপনি কার প্রেমে পড়েছিলেন তার চুল টেনে ছিড়ে ফেলবো।বিহান ভাই আমাকে বলেন আমি কি তোকে ছেড়ে দিবো নাকি আমার প্রেমিকার চুল ছিড়লে।তার চুল সুন্দর না হলে তো আর আপনি প্রেমে পড়তেন না।বিহান ভাই আমাকে বলেন,আহা দিয়া আগে শোন না।

সেদিন অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছিলো।আকাশ টা হালকা মেঘলা ছিলো।তবে খুব বৃষ্টি প্রথমে ছিলো না।মেঘ আর রোদের খুব খুনসুটি হচ্ছিলো।এই বৃষ্টি এই মেঘ।গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছিলো।হটাত আমাকে প্রেয়সীর আম্মু ফোন দিয়ে বললো বাবা আমার মেয়েকে একটু আসার সময় নিয়ে আসিস।ওর বিকালের শিফট এ এক্সাম।তার মায়ের আবদার রাখতেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বাইক নিয়ে ছুটেছিলাম তাকে আনতে।তাকে আনার সুযোগ টা হাত ছাড়া করতে চাইছিলাম না।আধাঘন্টা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তার স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম।অবশেষে দেখলাম ফাইল হাতে ঢুলতে ঢুলতে ক্লান্তি মাখা মুখ নিয়ে বের হয়েছে।আমি জিভ দিয়ে বার বার ঠোঁট ভেজাচ্ছিলাম আর তাকে দেখছিলাম
।আমাকে দেখেই চমকে উঠেছিলো সে।গেটের পিছনে গিয়ে লুকিয়ে ছিলো পাগলি টা ভেবেছিলো তার প্রশ্নপত্র দেখে আরেকবার এক্সাম নিবো আর কিছু ভুল হলে মাইর দিবো।স্কুলের গেটের পিছনে গিয়ে অঝর বৃষ্টিতে ভিজছিলো তবুও বাইরে আসছিলো না।আমিও কম জেদী না কতক্ষণ এ না এসে থাকতে পারে।আমিও এক আকাশ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তার মাথায় ছাতা হবো বলে দাঁড়িয়ে ছিলাম।ঝুম বৃষ্টিতে ভিজছিলাম আমিও দাঁড়িয়ে।মাগরিবের আজানের আগে দাঁরোয়ান গেট লাগিয়ে দিবে তখন সে বাধ্য হয়ে কাঁপতে কাঁপতে বাইরে বেরিয়ে এলো।চারদিকে বৃষ্টি নামছে অঝোরে রাস্তায় কোনো মানুষ নেই।ঠান্ডায় তার পাতলা ঠোঁট দুইটা কাঁপছিলো।বৃষ্টিতে ভিজে শ্যামলতার চুল দলা পাকিয়ে পাকিয়ে গেছিলো।চুল দিয়ে পানি ঝরছিলো।সেদিন ওর চোখ গুলো অনেক সুন্দর লাগছিলো।চোখের ভেজা পাপড়িতে চোখ আরো বেশী স্নিগ্ধ লাগছিলো।এতটুকু পিচ্চি একটা মেয়ে উইনিফর্ম পরে আমার সামনে কাক ভেজা ভিজে কাঁপছিলো।আমার মন সেদিন ই ও চুরি করে নিয়েছিলো।প্রথমবার সেদিন আমি লজ্জায় ওর দিকে তাকাতে পারছিলাম না।নিজের মনের প্রতি রাগ হচ্ছিলো আমি কেনো তাকে দেখে লজ্জা পাচ্ছি।আমার মন হারানোর ভয়ংকর দিনের বর্ণনা দিতে গেলে আমি এখনো কেঁপে উঠি।রাস্তার পাশ থেকে একটা বড় কচুর পাতা কেটে তার মাথার উপর ধরেছিলাম।কচু পাতার উপর বৃষ্টি পড়ছিলো কচু পাতার নিচে থর থর করে কাঁপছিলো সে।খুব বকেছিলাম তাকে এত টা ভেজার জন্য।তখন সে ক্লাস এইটে পড়তো।সেদিন তাকে বাইকে উঠিয়ে জীবনের শ্রেষ্ট বাইক ভ্রমন করেছিলাম।তাকে অনেক কাঁপতে দেখে বলেছিলাম চা খাবি।সে বলেছিলো আমি চা খাই না একটা চকলেট দিন।আর এই মুহুর্তে আমি আবার ও তার ভেজা চুল দেখছি।তার চুলের সৌন্দর্য এখনো আহত করছে আমাকে।মন চাই কিছু ভুল করি।””

এতক্ষণ যেনো আমি সেই দিনে ফিরে গেছিলাম।সেদিনের কথা বিহান ভাই এমন নিঁখুত ভাবে বর্ণনা দিলেন।

আমি বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে বললাম সেদিন ভালবাসি বলেন নি কেনো?

বললে তো বলতি আমি অন্য কাউকে বলবো তার প্রাক্টিস করছি।

আজ কে শোন”আই লাভ ইউ দিয়া। ”

উনার বলা আই লাভ ইউ যেনো কয়েক লক্ষ বার আমার কানে বাজছিলো।আমার মনের মাঝে আই লাভ ইউ দিয়া যেনো মনের রিংটোন হিসাবে বাজছিলো।

কিন্তু বন্ধুজাতির জন্য বিহান ভাই রোমান্টিক মুড পরিবর্তিত হয়ে অগ্নিদেব এ পরিনত হলো।

এতক্ষণ ফোন বাজছিলো।কানের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছিলো।বিহান ভাই রাগে বলেন তোর এইসব জঞ্জাল বান্ধবী দের আজ ই ব্লক দিবি।বলেই বাথরুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।কি আর করা হাফ গোসল করে বান্ধবীর সাথে কথা বলে আবার গোসলে গেলাম।

ভ্যাপসা গরমে জান পরাণ যায় যায় অবস্থা।কালো প্লাজু আর হালকা গোলাপি কালারের টি-শার্ট পরে মাথায় টাওয়াল পেচিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম।বিহান ভাই আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিলেন।জানিনা কি দেখলেন উনি।গোসলে ঢুকলেন। বাবারে বাবা ছেলে মানুষ এক টানা ৪০ মিনিট গোসল করলেন।মেয়েদের মতো নখ নেল ক্লিনার দিয়ে এভরিডে গোসলের সময় ২০ মিনিট ধরে ক্লিন করে।এমনি তো আর মেয়েরা ক্রাশড না উনার প্রতি।সাদা টাওয়াল পেচিয়ে বাথারুম থেকে বেরিয়ে এলেন।উনার চুল থেকে ঝর ঝর করে পানি পড়ছে। এসেই আমার মাথার তোয়ালে টান মেরে নিয়ে নিজের চুল ঝাড়তে শুরু করেন। উনার চুল মোছার ধরণ টা এত মারাত্মক সুন্দর বলে বোঝানো যাবে না।আমাকে বলেন কিভাবে চুল মুছলি এত পানি আছে কেনো এখনো?বলেই তোয়ালে দিয়ে সুন্দর করে চুল এর পানি মুছে দিলেন।পানি মুছতে মুছতে বলেন এত বড় চুল রাখার কি প্রয়োজন যা সামলাতে পারিস না।এত টুক মানুষ এত বড় চুল সামলাতে গিয়ে তো হাঁপিয়ে যাবি।আমিও সুযোগ বুঝে বলে দিলাম তার জন্য ই তো আপনি আছেন।বিহান ভাই ঘাড়ে আলতো একটা চুমু দিয়ে বলেন আমি শুধু চুল শুকানো না সব কাজেই আছি।এক্ষুনি বই পড়তে হবে।

বিহান ভাই আমার দিকে একটা ডংডং চিপস এগিয়ে দিয়ে বলেন,দেখি তোর লেখাপড়ার খবর কি?এত দিন কি কি শিখেছিস।আজ কে তোর একটা ক্লাস নিয়ে নেই।দোয়া দুরুদ পড়ছি যেনো হাইয়ার ম্যাথ টা আমায় করতে না দেন।উনি ম্যাথ এ অনেক এক্সাপার্ট।টপার ছাত্র উনার ডিকশেনারীতে না বলে কিছুই নেই।আমাকে চুপ থাকতে দেখে বলেন কিরে বই দে।আমি উনার হাতে ইসলাম শিক্ষা বই টা দিলাম।বই টা হাত দেওয়ার সময় ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলেন খানিক সময়।যার মানে এই বই টা কেনো দিচ্ছিস তোর প্রতি চরম রাগ হচ্ছে।উনি ইসলাম শিক্ষা বই টা রেখে দিয়ে হাইয়ার ম্যাথ বই টা নিলেন।বললেন বই থেকে অংক দেই।আমি বললাম দিন।জানি আজ আমার ম্যাথের টিচার বকা শুনবেন আমি অংক না পারলে।উনি উনার সিদ্ধান্ত ঘুরিয়ে বললেন না শিট থেকে দেই।

এক গাদা হাইয়ার ম্যাথ করতে দিলেন।উনি শিট নিয়ে এসেছেন সেখান থেকেই করতে দিয়েছেন।আমাকে বলেন এই ৩০ টা ম্যাথ ১ ঘন্টায় করবি।একটা যদি ভুল হয় খবর আছে। অনেক ইজি এগুলা।অথচ দুনিয়ার কঠিন গুলা বেছে বেছে রাখা আছে।যার জন্য আমার দুই দিন টাইম লাগবে সেখানে বলে ৬০ মিনিট।কারণ এত কঠিন এ গুলা সারাজীবনেও পারবো না।কপালে কি ছিলো তা বুঝতেই পারছি।

চলবে,,

(সুস্থ না হলে বড় পর্ব দেওয়া যাচ্ছে না।জানিনা কেমন হবে।কমেন্ট করবেন সবাই ভাল লাগা জায়গা টুকু।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here