#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
১৭.
#WriterঃMousumi_Akter
সবাই খাচ্ছে হাত উঁচু করে বসে আছি আমি।কাউকে বলতেও পারছি না যে হাতে ব্যাথা খুব।হাত জ্বলেও যাচ্ছে খুব।সবার মাঝে একজন মাত্র ব্যাক্তির খেয়াল হলো যে আমি খেতে পারছি না।বিহান ভাই এর খেয়াল হলো আমি খেতে পারছি না।বিহান ভাই নিজেও খাচ্ছেন না আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।হাত ঘুরাচ্ছেন প্লেট এর মাঝে বার বার।অদ্ভুত উনি খাচ্ছেন না কেনো?বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছেন।
বিহান ভাই এর মামির ভাতিজি বিহান ভাই কে বলে উঠলেন বিহান ভাই ভালো থাকবেন নতুন বউ নিয়ে আমরা চলে যাচ্ছি।বিহান ভাই এর চোখে মুখে মারাত্মক বিরক্তি যেনো ওরা গেলেই উনি বেঁচে যান।বিহান ভাই এর মামির ভাতিজি আবার ও বলে উঠলেন বিহান ভাই আমরা এলাম ভালো থাকবেন।বিহান ভাই বিরক্ত হয়ে বলেন বার বার ভাল থাকবেন বলে ফরমালিটি করার কি আছে? কোন এঙ্গেল থেকে থেকে মনে হচ্ছে আমি খারাপ আছি।মেয়েটির মুখ টা কেমন চুপসে গেলো।
বিহান ভাই মামির দিকে তাকিয়ে আমাকে ইশারা করে আম্মু! তার মানে দিয়া কে খাইয়ে দাও, দিয়া খেতে পারছে না ওর হাতে ব্যাথা।মামিও ছেলের মন বুঝে আমাকে বলেন দিয়া তুই রুমে যা আমি তোর খাবার দিয়ে আসছি।আমি চুপচাপ বিহান ভাই এর রুমে চলে গেলাম।বিহান ভাই এর মামিদের বড্ড অসহ্য লাগছে আমার।সুযোগ বুঝে জায়গা ত্যাগ করে যেনো শান্তি পেলাম।
কিছুক্ষণেরর মাঝেই বিহান ভাই খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে রুমে প্রবেশ করলেন।
আমার দিকে তাকিয়ে বললেন খেতে পারতেছিলি না সেটা আমাকে মুখে না বলে হাত উঁচু করে বসে ছিলি কেনো?এমন গাধী থাকলে খাবার পেটে যাবে।দিয়া তুই কি একেবারেই শিশু।না মানে অবুঝ শিশুরাও তো খাবার না পেলে কাঁদে।তুই এমন চুপ হয়ে বসে থাকলে খাবার কিভাবে পেটে যাবে।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম সব কি আমাকে মুখে বলে দিতে হবে।আমার কষ্ট হলে মানুষ সেটা বুঝে না ক্যানো?
বিহান ভাই বলেন তুই মানুষের কষ্ট হলে বুঝিস।
বেশী কথা না বলে হা কর আগে।
বিহান ভাই এর হাতে এই প্রথম বার খাবার খাচ্ছি আমি।খাবারের স্বাদ যেনো অমৃত লাগছে আমার কাছে।এত যত্ন নিয়ে খাওয়াতে পারেন উনি জানা ছিলো না।
খাবার টা খাওয়ার পর পর ই তোহা আপুর ফোন এলো আমার ফোনে।
ফোন টা রিসিভ করলাম না জানি তোহা আপু আমাকে কি বলবে।ফোন টা লাউডে দিলাম।
তোহা আপু আমাকে বলে, দিয়া কি ভাবছিস আমি রেগে আছি।একটুও রেগে নেই।আমি বিহানের সাথে মজাই করতাম।আমি আগেই বুঝতাম বিহান তোকে ভালবাসে। আমি বিহানের চোখে তোর প্রতি ভালবাসা দেখেছি দিয়া।জানিস দিয়া সেদিন বিহান তোকে কি মেসেজ দিয়েছিলো আই লাভ ইউ দিয়া উইল ইউ ম্যারি মি!
আমি বিহান কে উল্টাপাল্টা মেসেজ করেছিলাম।আসলে আমি তোদের ভালবাসা পরীক্ষা করছিলাম।আমি বিহান কে সেদিন রিপ্লে দিয়েছিলাম আমি আপনাকে ভালবাসি না।আপনার লজ্জা করে না আমাকে ভালবাসার কথা বলতে। আর কোনদিন আপনার মুখ দেখতে চাই না।আমি ইচ্ছা করেই এমন অদ্ভুত মেসেজ করেছিলাম বিহান এর রিয়্যাক্ট টা বোঝার জন্য।
আসলে ১৪ তারিখ বিহান আমাকে বলেছিলো তোহা ডোন্ট মাইন্ড আমার সাথে আর এভাবে ফান করো না।তুমি এভাবে ফান করলে দিয়া আমাকে কোনদিন ই বুঝবে না।আমি দিয়াকে ভালবাসি। খুব ভালবাসি।আজ আমি দিয়াকে প্রপোজ করবো তোহা।আমি দিয়াকে ছাদে ডেকেছি আজ।
আমি জানতাম পার্সেল টা বিহানের ই। দিয়া ঝামেলা ছাড়া ভালবাসার গভীরতা পরিমাপ করা যায় না।
তোদের ভালবাসা একদম খাঁটি দিয়া।ভাল থাকিস অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো।
বিহান ভাই আমার হাত থেকে ফোন টা নিয়ে তোহা আপুকে বলে অনেক বড় উপকার করলে থ্যাংক্স বলেই ফোনটা কেটে দিলেন বিহান ভাই।
বিহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে সোজা রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
অদ্ভুত আজ ও কি রাগ করলেন উনি।উনি এভাবে বেরিয়ে গেলেন কেনো? আবার কি চলছে উনার মনে।
দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো।বিহান ভাই এর পাত্তা নেই।এই লক ডাউনে কোথায় গেলেন উনি।বিহান ভাই এর মামিরা ও যার যার বাড়িতে চলে গিয়েছেন।
মামি আর আমি রান্না ঘরে রান্না করছি।মামি আমাকে বলেন দিয়া আমার ছেলেটা ভীষণ পাগল।তোর জন্য পাগল।তুই একটু সামলে রাখিস ওই পাগল টাকে।আমার ছেলে তুই ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না।
আমি মামিকে বললাম মামি তোমার ছেলে কোথায়?মামি আমাকে বললো ওর ফিরতে আজ রাত হবে খেয়ে ঘুমিয়ে যেতে বলেছে।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত প্রায় দশ টা বাজে বিহান ভাই এর কোনো খবর নেই।এদিকে আমার চোখেও ঘুম নেই।কেনো জানিনা মনে হচ্ছে বিশেষ কিছু সারপ্রাইজ হতে চলেছে।বিহান ভাই আর আমার মাঝের সব দূরত্ব কেটে যাবে।আঁধার ঘনিয়ে এবার সূর্যের দেখা পাবো।
আলমারি খুলে সেদিনের তোহা আপুর ছুড়ে ফেলা পার্সেল টা হাতে পেলাম।
দিয়া,
আমি তোর ভূত।এই পৃথিবীতে একটাই ভূত আছে যে প্রেমিকার জন্য চিঠি লিখতে পারে।দিয়া আমি তোর সেই ভূত।দিয়া সবাই তোকে নাম ধরে ডাকে আর আমি তোকে পুচকি বলে ডাকি।তোকে পুচকি ডাকতে আমার খুব ভাল লাগে।দিয়া চিঠিটা পড়ে তোর অনুভুতি টা ঠিক কেমন হবে।তুই কি লজ্জা পাবি দিয়া।লজ্জা রাঙা মুখে নিজের ওড়নায় মুখ লুকাবি।না দিয়া মুখ লুকালে আমার বুকে লুকাবি।দিয়া তুই যখন সাদা ফুলের গাজরা মাথায় দিয়ে স্কুলে রবীন্দ্র জয়ন্তী তে নাচ করতি আমি সেই ঢাকা থেকে ছুটে আসতাম।শুধু তোকে দেখবো বলে।জানিস পুচকি তুই যখন আমাকে হার্টলেস বলিস তখন খুব ইচ্ছা করে হার্ট এ লেখা নাম টা দেখাতে।পিচ্চি আমার হার্ট এ তোর ই নাম লেখা।আচ্ছা আমি যদি আদর করে মাঝ রাতে ডেকে বলি ঘুমোতে হবে না, আমার চোখের সামনে বসে থাকতে হবে।কারণ যখন রাত নামবে তোকে একটা রাতপরী লাগবে।আর এই রাতপরী টার গালে মুখে চোখে আদর মাখিয়ে দিবো।তখন কি আমার আদরে চোখ বন্ধ করে আমাকে অনুভব করবি।দিয়া অনেক কিছু বলতে ইচ্ছা করছে ইচ্ছা করছে পৃষ্টার উপর পৃষ্টা লিখি।মনের অনুভূতি গুলো মনে আসছে কিন্তু লিখে বোঝাতে পারবো না।দিয়া আজ আসবি।রাস্তায় অপেক্ষা করছি এক আকাশ ভালবাসা নিয়ে।তোকে নিয়ে এই শহরে ভালবাসার কার্ফু জারী করবো।আমি অপেক্ষা করছি। এই শাড়ি আর চুরি পরে নিচে আয় জলদী।
ইতি তোর ভুত।
মনের মাঝে ভীষণ ছটফট করছে।বার বার দরজায় উঁকি দিচ্ছি কিন্তু উনাকে পাচ্ছি না।কি হলো উনার।আসছেন না কেনো?বার বার ফোন দিচ্ছি ফোন তুলছে না।
টুংটাং শব্দে মেসেজ এলো ফোনে।
দিয়া আমি আর কোনদিন বাড়িতে ফিরবো না।আমার জন্য আর অপেক্ষা করিস না।তোর আর আমার দেখা কোনদিন হবে৷ আ।ভুলে যা আমাকে।বিয়েটার কথা ও ভুলে যা।বিহান নাম টাও ভুলে যা।আমাকে আর ফোন দিস না।
চলবে,,
(সবাই কমেন্ট করবা)