#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
১৬.
#WriterঃMousumi_Akter
মনের মাঝে প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে।বড্ড কষ্ট হচ্ছে।আমাকে এতটা কাঁদতে দেখে বিহান ভাই যেন কেঁদে দেই দেই অবস্থা।
খুব মিহি কন্ঠে বলে ওঠেন বিহান ভাই “কেউ কি তোকে ভালবাসে না।?”
“না।।”
“রাগে নাকি অভিমানে বলছিস”
“কোনটাই না”
“বিহান ভাই খুব মায়াবী সুরে বলেন,আমার তো মনে হয় আমি বাদে সবাই তোকে খুব ভালবাসে।এত গুলা মানুষের ভালবাসা যার সাথে আছে আমার মতো এমন অপদার্থ এর ভালবাসা না পেলে কি হয়েছে।সবাই ভালবাসলে বাদর হবি আমি না হয় একটু শাষন ই করি।”
আমি উনার দিকে তাকিয়ে খুব জোরে আবার ও কেঁদে দিলাম।
বিহান ভাই আমার দুই গালে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিতে দিতে বলেন এভাবে কাঁদবি না একটুও।দেখ দিয়া তুই কাঁদছিস বলে ওয়ালের কালারফুল রং গুলা কেমন বেরঙিন লাগছে।ওদের ও মন খারাপ লাগছে।
আমি ওয়ালের দিকে একবার তাকিয়ে নিলাম।আবার ও কাঁদছি।
বিহান ভাই বলেন,এই নে ফুপি ফোন দিছে। ফুফি কে বল তোমার ভাতিজা আমার উপর খুব নির্যাতন করছে।নে বল।বলে দে আম্মু তোমার ভাতিজা খুব খারাপ।পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ খারাপ মানুষ টার হাতে তোমার পুচকিকে তুলে দিয়েছো।বললেই ফুফি এখান থেকে তোকে নিয়ে যাবে।আমার নামে তোর জাতগুষ্টির সবাই ইয়া লম্বা কেস জুড়ে দিবে।সেটা কি খুব ভালো হবে।তুই যদি চাস তোর বর এর নাম নারী নির্যাতন এর লিস্টে যাক তাহলে তাই কর।নালিশ দে ফুপ্পি কে।
আমি কেঁদে কেঁদে বললাম “আপনি খুব খুব পঁচা”
বিহান ভাই বলেন এই পঁচা কে পঁচা হতে বাধ্য করেছে তার প্রেয়সী।সাথে সাথে বুকের মাঝে কেমন একটা বাড়ি মেরে উঠলো।বিহান ভাই এর প্রেমিকার কথা মনে পড়লো।উনি একদিন তার নিঁখুত সৌন্দর্যের কথা বর্ণনা করেছিলেন।কেনো জানিনা খুব জানতে ইচ্ছা করছে বিহান ভাই এর ভালবাসার মানুষের কথা।
“বিহান ভাই একটা কথা জানতে চাইলে কি রাগ করবেন।”
“এই মুহুর্তে যা প্রশ্ন ই করিস রাগ করবো না।”
“আপনি কি কাউকে ভালবাসতেন।”
“হুম!প্রচন্ড”
“এখন বাসেন না।”
“এখন কেনো এই মুহুর্তে ও ভালবাসি।ভীষণ ভালবাসি দিয়া তাকে।”
“সে কি খুব সুন্দর বিহান ভাই।”
“সব প্রেমিকের কাছেই তার প্রেমিকা সুন্দর। ”
“একদিন পার্কে বলেছিলেন সে অপূর্ব সুন্দর ”
“সত্যি দিয়া সে অপূর্ব সুন্দর। আমার চোখে পৃথিবীর সব সুন্দর কে হার মানায়।ওর সৌন্দর্যে বারে বারে মুগ্ধ হচ্ছি আমি।আমার কাছে সুন্দরের আরেক নাম সে”
“সে জানে তাকে এত টা ভালবাসেন বিহান ভাই”
“হ্যাঁ জানে”
“তাহলে সে কোথায়?”
“আমার ভালবাসার কথা জানালে সে আমাকে ভীষণ ভাবে কষ্ট দিয়েছে। সে রিজেক্ট করেছে আমাকে।সে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে আমি তার যোগ্য না।সেদিন কয়েক হাজার টুকরো হয়ে গিয়েছিলো আমার হৃদয় ভেঙে চুরে”
“আপনি তার প্রেমে পড়েছেন তাইনা।”
“আমি প্রেমে পড়েছিলাম
একবার, দুবার, বহুবার।
কাউকে ভালোবাসিনি।
একজনকে ভালোবেসেছিলাম
প্রেম হলো না।
জানলাম-
শুধু ভালোবাসায় প্রেম হয়না।
যেমন শুধু পিলারে ঘর হয়না!
ঘর হতে হলে ছাদ লাগে
প্রেম করতে হলেও ছাদ দরকার।
আমি ছাদ হতে পারিনি।
বড়জোর ছাতা হয়েছি, হালকা বৃষ্টিতে।
জোর ঝড়ে উড়ে গেছি,
ছাতা না থাকলে মানুষ অন্য ছাদের কার্নিশের তলে আশ্রয় নেয়।
আমি এতে দোষের কিছু দেখি না।
আমি জানলাম সবটা দিয়ে ছাতা হলেও প্রেম টেকে না
ছাদের কার্নিশ হতে হয়, ছোট হোক,
শক্ত সামর্থ্য হতে হয়।
আমি আকাশ হয়ে গেলাম।
আকাশ থেকে মেঘ।
মেঘ থেকে বৃষ্টি।
সে বৃষ্টি ভালোবাসতো।
বৃষ্টি হয়ে তাকে ছুঁয়ে যেতেই
সে কার্নিশের নিচে জড়সড় হলো।
আমার তাকে ছোঁয়া হলো না।
আমি রাস্তার ধারে নোংরা পানি হয়ে জমে রইলাম,
ভালোবাসার মতো।”
বিহান ভাই এর মনের মাঝে যে চাপা কষ্ট আছে সেটা উনার কথা গুলো শুনেই বুঝতে পেরেছি।আমি যদি আজ বলি বিহান ভাই সেদিন আমি কিছুই করিনি যা করার তোহা আপু ই করেছিলো বিহান ভাই কি আমায় বিশ্বাস করবেন।তাছাড়া উনি তো ক্লিয়ার ভাবে বলছেন ই না যে দিয়া সেই মানুষ টা তুই।
–এর ই মাঝে বিহান ভাই এর বন্ধু ফোন করে বিহান ভাই ফোন টা রিসিভ করেন।ফোনের ওপাশ থেকে বলে ওঠে কিরে শালা হুট করেই বিয়ে করে ফেললি আর আমরা জানতেও পারলাম না।
—তোদের বলার আগেই বিয়ের ফুল ফুটে গেছিলো তাই বলার সুযোগ হয় নি।
—শালা ডাফার আমরা হরতাল ডাকবো সিরিয়াসলি বিয়ে করলি আমরা দাওয়াত পেলাম না।
—বিহান ভাই বলেন,, মেডিকেল শেষ হোক তখন আবার বিয়ে করবো তখন দাওয়াত পাবি।
—-মানে কি তুই আবার বিয়ে করবি।
—বিহান ভাই বলেন,,শালা আমার জাত গুষ্টিতে কেউ দ্বীতীয় বিয়ে করে নি আর তুই আমাকে লুচ্চা প্রমান করতে চাইস যে আমি দ্বীতীয় বিয়ে করবো।একটাই সামলানো মুশকিল।
—কেনো কেনো ভাবি কি খুব জালাচ্ছে।
—বিহান ভাই বলেন,,উনি হাত পুড়িয়ে বসে আছেন।এখন তো আমাকেই সামলাতে হবে।এমনি তেই গ্লাসে পানি ঢেলে খান না তার উপর হাত পুড়েছে এবার বিহান বুঝবে।
—নতুন বউ এর হাত পুড়লো কেনো?শালা জালেম বউ বিয়ের পরের দিন রান্না ঘরে ক্যানো?..
—বিহান ভাই একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন আর বলিস না ভাই।
–বিহান মেডিকেল শেষ হলে বিয়ের দাওয়াত পাচ্ছি।
–হুম
–বিহান ভাই এর বন্ধু বলেন,আর ফুল সজ্জার।
—বিহান ভাই বলেন,মানে কি ফুলসজ্জার ও দাওয়াত লাগবে।আমি কি দুনিয়ার মানুষ জড়ো করে তাদের রাউন্ড আকারে রেখে তার মাঝে ফুল সজ্জা করবো।
—অবশ্যই করবি।আমাদের বন্ধুজাতির অধিকার আছে ফুলসজ্জা দেখার।
—বিহান ভাই বলেন,,ফুল দিয়ে খাট সাজিয়ে একটা সজ্জা সাজিয়ে নে।অন্যর তা দেখার এত উৎসাহ কেনো?..
—বিহান ভাই এর বন্ধু বলেন,বুঝিস না তুই আমাদের কলিজার ভাই বলে কথা।তা ফুলসজ্জা হলো ভাই এত সকালে ঘুম থেকে উঠে গেলি যে
—বিহান ভাই বলেন ডাফার টাইম দেখ,কয়টা বাজে।এত সময় কয়েক হাজার বার ফুলসজ্জা হয়ে যায়।
–ওহ আচ্ছা!তাহলে কয়েক হাজার বার হয়েছে।
–বিহান ভাই আমার দিকে আড়চোখে তাকালেন।আমি মুখ ঘুরিয়ে হেসে দিলাম।
–ফোন রাখছি এখন।
–আরে শোন শোন
—কাকে বিয়ে করলি
–কলাগাছ
—ফাইজলামি না, বন্ধু সত্যি করে বল কাকে বিয়ে করলি।
–একটা মেয়েকে বিয়ে করেছি।
—ওহ আচ্ছা ফুফাতো বোনের উপর রাগ করে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিলি
–ফুফাতো বোনের উপর রাগ করে মানে।
–তা তোর বউ জানে তোর স্রোতোশিনী মানে তোর ফুফাতো বোন তোকে রিজেক্ট করার জন্য এক টানা ১৪ দিন সব কিছু ভাঙচুর করেছিস।৷
—বিহান ভাই আই লাভ ইউ ভয়েজ টা অসাধারণ কিন্তু তোর ফুফাতো বোনের।
বিহান ভাই এর তলে তলে এত শয়তানি।
ফ্লাশ ব্যাকঃ
তখন ছিলো শীত কাল।সকালের কুয়াশার মাঝে আমরা হাঁটতে বেরিয়েছিলাম।ঠান্ডায় আমি জমে যাচ্ছিলাম খুব।আমরা চিত্রা নদীর পাড়ে গিয়ে জড় হয়ে বসেছিলাম।বিভোর, ভাই আর রাফি কয়েক টুকরো কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালিয়েছিলো।সমস্ত কাজিনরা ছিলাম সেদিন।হঠাত বিভোর ভাই বলেন আসো একটা গেম খেলি।বিহান ভাই বলেন গেম খেলতে পারি একটা শর্ত আছে।সবাই অতি উৎসাহ নিয়ে জানতে চাইলো কি শর্ত। গেম এ যে হারবে তাকে যেটা বলা হবে সেটাই করতে হবে।সবাই রাজি হয়ে গেলো।বিহান ভাই এত শয়তান। সারা জীবন শুধু আমার সাথেই শয়তানি করেন উনি।গেম টা ছিলো ট্রুথ আর ডেয়ার।আমি ডেয়ার নিয়ে সেদিন ফেঁসে গেছিলাম।বিহান ভাই সবাই কে অতি সহজ সহজ কাজ দিলেন।আর আমাকে বললেন গায়ের সোয়েটার আর টুপি খুলে গলা পর্যন্ত পানি তে দুই ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।এমন অদ্ভুত ডেয়ার কোনো হৃদয়হীন মানুষ ছাড়া কেউ দিতে পারে।আমি তো কিছুতেই এমন ডেয়ার এ রাজি নাহ।এমনি আমার ঠান্ডা লাগে বেশী।
আমি বিহান ভাই বললাম আপনি মানুষ না কষাই।একটা মাত্র বোন কে পানিতে চুবিয়ে মেরে ফেলতে চান।
বিহান ভাই বলেন হুম আগামিকাল নিউজ পেপারে উঠবে ট্রুথ, ডেয়ার গেম খেলতে গিয়ে দিয়া নামের অবুঝ বালিকার মৃত্যু হয়েছে।কি সুন্দর তাইনা দিয়া।
আমি গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
বিভোর ভাই বলেন বিহান ডেয়ার চেঞ্জ কর।দিয়া পারবে না এমন কঠিন কাজ।আর তুই সব সময় ওকে জ্বালাস কেনো?
ওকে ডেয়ার চেঞ্জ!
দিয়া আমার সাথে ফাঁকা জায়গা চল! অতি সহজ একটি ডেয়ার দিচ্ছি।
বিভোর ভাই বলেন যা।
বিহান ভাই এর মনে মনে এই ছিলো তাহলে কান ধরে ১০ বার উঠবস কর আর বল আই লাভ ইউ বিহান ভাই।উনি বুকে হাত বেঁধে স্ট্রং হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
উপায় না পেয়ে সেদিন কান ধরে উঠেছিলাম আর বসেছিলাম সাথে বলেছিলাম আই লাভ ইউ বিহান ভাই।
সেদিন বিহান ভাই কে অসম্ভব সুন্দর লেগেছিলো।কালো জ্যাকেট আর কালো জিন্স পরা ছিলো।আমি চোখ ই সরাতে পারছিলাম না।বিহান ভাই কি আমার জন্য ই এতটা সুন্দর সুন্দর দেখতে।
আজ অনেক দিন পর সেই গেম এর কথা মনে পড়লো।বিহান ইচ্ছা করে আমাকে দিয়ে আই লাভ ইউ বলিয়ে তার ভয়েজ রেকর্ড করে রেখেছেন।।
ওইদিকে ফোনে কথা চলছে বিহান ভাই আর তার বন্ধুর।এতক্ষণ কি কথা হয়েছে জানিনা।আমি ভাবনার জগতে ছিলাম।
বিহান ভাই এর রাগ টা একটু কমেছে এতক্ষণে।দরজা খুলে দেখি বেলকনিতে রিয়া আর বিভোর ভাই।দুজন কে যা সুন্দর মানিয়েছে।ওদের মাঝে কি কিছু চলছে।বিভোর ভাই এর ছাই রঙের একটা শার্ট পরা, কালো জিন্স খালি পায়ে দাঁড়িয়ে আছে।চুল গুলো সোনালি কালারের কিছুটা।আমার ভাই জাতির মাঝে বিভোর ভাই বেশী হ্যান্ডসাম আমার কাছে।আমার ডান হাত আর বাম হাত বিভোর ভাই আর রাফি।
আমাকে দেখেই বিভোর ভাই বলে, বোন তোর ক্লাস মেট কাজিন কে পটাচ্ছিলাম।বিহান এর শালি মানে আমার বিয়াইন হয়।আমার এখন পূর্ণ হক আছে।রিয়া বলে বিভোর ভাই আপনি শুধু যাকে পান তাকেই পটানোর চেষ্টা করেন।আমি ভুলেও পটছি না।বিভোর ভাই রিয়ার মাথায় একটা গাট্টা দিয়ে বলে রিয়া একদিন কিন্তু তোমার মন হারাবে আমার মনের মাঝে।
মামি এসে আমাকে বলেন মা দিয়া বিহানের মামিরা বুঝতে পারে নি তুই ভুল বুঝিস না।আমি ওদের যা তা ভাবে বকে দিয়েছি চল খেতে হবে।আমি মামির সাথে খেতে গেলাম।ডায়নিং এ বিভোর ভাই রিয়া, রাফি আর বিহান ভাই আর মেহনুবা আপুর পাশে বসে পড়লাম।মামাদের আগেই খাওয়া হয়ে গিয়েছে।বিহান ভাই এর মামি এসে বললেন বাড়ির বড় সবাই কে খেতে দিতে হয়। এভাবে সবার আগে খেলে সংসার হবে কিভাবে।বিহান ভাই আড় চোখে আমার দিকে তাকালেন।আমি টেবিল ছেড়ে ওঠার চেষ্টা করলাম।বিহান ভাই আমার হাত চেপে ধরে চোখের ইশারা দিয়ে বলেন বস।
“মামি আপনারা বাড়িতে যাবেন কবে।”
“তুই কি আমাদের চলে যেতে বলছিস বিহান।”
“না মানে আমার এক্সাম।বাড়িতে এত মানুষ আমি পড়ার মতো উপযুক্ত পরিবেশ পাচ্ছিনা।তাছাড়া আমার সেমিষ্টার ফাইনাল এক্সাম।আপনাদের খাওয়া শেষ হলে চলে যান আমার এক্সাম শেষ না হলে এখানে আর আসবেন না প্লিজ।”
“তোর ফুফু বাড়ির এত গুলা মানুষ আছে তাতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।”
“না ওরা ওর বোনের সাথে এসছে। ”
“আমরা তো তোর বিয়ে শুনেই এলাম”
“আপনাদের কি দাওয়াত দেওয়া হয়েছে বিয়ে উপলক্ষে।যখন দাওয়াত দিবো তখন বিয়ে খাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আসবেন প্লিজ।”
হাত পুরে গিয়েছে কিভাবে খাবো কাউকে সে কথা বলতে পারছি না।
চলবে,,,
(সবাই ক মেন্ট করবা)